আপনার পরিবারে কি ঈশ্বর প্রথম স্থান গ্রহণ করেন?
“তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ . . . দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।”—মার্ক ১২:২৯, ৩০.
১. আমাদের যিহোবাকে প্রেম করা কত গুরুত্বপূর্ণ?
“সকল আজ্ঞার মধ্যে কোন্টি প্রথম?” এক অধ্যাপক যীশুকে জিজ্ঞাসা করেছিল। তাঁর নিজের অভিব্যক্তি ব্যক্ত না করে, যীশু দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪, ৫ পদে ঈশ্বরের বাক্য থেকে উদ্ধৃতি করে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন। তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “প্রথমটী এই, ‘হে ইস্রায়েল শুন; আমাদের ঈশ্বর প্রভু একই প্রভু; আর তুমি তোমার সমস্ত অন্তঃকরণ, তোমার সমস্ত প্রাণ, তোমার সমস্ত মন ও তোমার সমস্ত শক্তি দিয়া তোমার ঈশ্বর প্রভুকে প্রেম করিবে।’”—মার্ক ১২:২৮-৩০.
২. (ক) যীশুকে কোন্ বিরোধিতার সম্মুখীন হতে হয়েছিল? (খ) কোন্ বিষয়গুলি অনেক সময় হয়ত যিহোবাকে খুশি করা কষ্টকর করে তুলতে পারে?
২ যীশু যে প্রথম আদেশটি দিয়েছিলেন—যেটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—তার প্রতি বাধ্য হওয়ার অর্থ হল, যিহোবাকে যা খুশি করে তা যেন আমরা সবসময় করি। যীশু তা করেছিলেন যদিও এক সময়ে প্রেরিত পিতর যীশুর পথের প্রতি আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং আরেকটি সময়ে তাঁর নিজের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়েরাও তা করেছিল। (মথি ১৬:২১-২৩; মার্ক ৩:২১; যোহন ৮:২৯) আপনি নিজেকে যদি একই পরিস্থিতিতে পান তাহলে? ধরুন, আপনার পরিবারের সদস্যেরা আপনাকে বাইবেল অধ্যয়ন করা ও যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করতে বলছে। যা তাঁকে খুশি করে আপনি তা করে ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেবেন? এমনকি যখন পরিবারের সদস্যেরা হয়ত ঈশ্বরকে সেবা করার প্রচেষ্টাগুলিকে বাধা দেয় তখন কি ঈশ্বর আপনার কাছে প্রথম স্থান গ্রহণ করেন?
পরিবারের কাছ থেকে আসা বিরোধিতা এক ফাঁদ
৩. (ক) পরিবারের উপর যীশুর শিক্ষাগুলির কী ফল হতে পারে? (খ) কিভাবে পরিবারের সদস্যেরা দেখাতে পারে যে কাদের প্রতি তাদের বেশি স্নেহ রয়েছে?
৩ যখন এক ব্যক্তি তাঁর শিক্ষাগুলিকে গ্রহণ করে তখন পরিবারের অন্য সদস্যেরা যে বিরোধিতা করে তা যে কষ্টকর হতে পারে, সেই বিষয়টি যীশু ছোট করে দেখেননি। “আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে,” যীশু বলেছিলেন। তবুও, এই দুঃখজনক পরিণতি হওয়া সত্ত্বেও, যীশু দেখিয়েছিলেন যে কাকে প্রথমে রাখা উচিত যখন তিনি বলেছিলেন: “যে কেহ পিতা কি মাতাকে আমা হইতে অধিক ভাল বাসে, সে আমার যোগ্য নয়; এবং যে কেহ পুত্ত্র কি কন্যাকে আমা হইতে অধিক ভাল বাসে, সে আমার যোগ্য নয়।” (মথি ১০:৩৪-৩৭) আমরা তাঁর পুত্র, যীশু খ্রীষ্ট, যিনি হলেন “তাঁহার [ঈশ্বরের] . . . মুদ্রাঙ্ক,” তার শিক্ষাকে অনুকরণ করার দ্বারা যিহোবা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিই।—ইব্রীয় ১:৩; যোহন ১৪:৯.
৪. (ক) তাঁর অনুসরণকারী হওয়ার সাথে কী যুক্ত আছে বলে যীশু বলেছিলেন? (খ) কোন্ অর্থে খ্রীষ্টানদের তাদের পরিবারের সদস্যদের ঘৃণা করতে হবে?
৪ আরেকটি সময়ে যখন যীশু ব্যাখ্যা করছিলেন যে, তাঁর সত্য অনুসরণকারী হওয়ার সাথে কী যুক্ত আছে, তিনি বলেছিলেন: “যদি কেহ আমার নিকটে আইসে, আর আপন পিতা মাতা, স্ত্রী, সন্তানসন্ততি, ভ্রাতৃগণ, ও ভগিনীগণকে এমন কি নিজ প্রাণকেও অপ্রিয় জ্ঞান না করে, তবে সে আমার শিষ্য হইতে পারে না।” (লূক ১৪:২৬) অবশ্যই যীশু এই বুঝাতে চাইছিলেন না যে তাঁর উপাসকেরা আক্ষরিক অর্থে তাদের পরিবারের সদস্যদের ঘৃণা করবে, কারণ তিনি লোকেদের আদেশ দিয়েছিলেন যে তারা যেন তাদের শত্রুদেরও প্রেম করে। (মথি ৫:৪৪) পরিবর্তে, যীশু এই কথা বলার অর্থ ছিল যে তারা তাদের পরিবারের সদস্যদের ঈশ্বরের চাইতে কম প্রেম করবে। (তুলনা করুন মথি ৬:২৪.) এই বোধগম্যতার সাথে সামঞ্জস্য রেখে, বাইবেল বলে যে যাকোব লেয়াকে “অবজ্ঞতা” করতেন এবং রাহেলকে প্রেম করতেন, এর অর্থ ছিল যে, তিনি লেয়াকে তার বোন রাহেলের মত অতটা ভালবাসতেন না। (আদিপুস্তক ২৯:৩০-৩২) এমনকি আমাদের “প্রাণ,” অথবা জীবন সম্বন্ধে যীশু বলেছিলেন যে তা ঘৃণিত হবে অথবা তা যিহোবার চাইতে কম আকাঙ্ক্ষিত হবে!
৫. কিভাবে শয়তান কৌশলতার সাথে পরিবারের ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলে?
৫ সৃষ্টিকর্তা এবং জীবন-দাতা হিসাবে, যিহোবা তাঁর দাসেদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভক্তি পাওয়ার যোগ্য। (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) “স্বর্গস্থ ও পৃথিবীস্থ সমস্ত পিতৃকূল যাঁহা হইতে নাম পাইয়াছে,” প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “সেই পিতার কাছে আমি জানু পাতিতেছি।” (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) যিহোবা এমন সুন্দরভাবে পরিবার ব্যবস্থা করেছেন যে পরিবারের সদস্যদের একে অপরের প্রতি স্নেহ থাকে। (১ রাজাবলি ৩:২৫, ২৬; ১ থিষলনীকীয় ২:৭) শয়তান দিয়াবল, কিন্তু, ধূর্ততার সাথে এই স্নেহকে ব্যবহার করে, যার অন্তর্ভুক্ত হল যাদের আমরা ভালবাসি তাদের খুশি করা। সে পরিবারের দ্বারা বিরোধিতা বাড়িয়ে তোলে এবং অনেকে এর সম্মুখে বাইবেলের সত্যর প্রতি দৃঢ় হয়ে দাঁড়ানোকে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করে।—প্রকাশিত বাক্য ১২:৯, ১২.
চ্যালেঞ্জের সাথে মোকাবিলা করা
৬, ৭. (ক) কিভাবে পরিবারের সদস্যদের বাইবেল অধ্যয়ন এবং খ্রীষ্টীয় মেলামেশা উপলব্ধি করতে সাহায্য করা যেতে পারে? (খ) কিভাবে আমরা দেখাতে পারি যে আমরা প্রকৃতই আমাদের পরিবারের সদস্যদের ভালবাসি?
৬ ঈশ্বরকে খুশি করা অথবা কোন এক পরিবারের সদস্যকে খুশি করার মধ্যে যদি আপনাকে বাছাই করতে জোর করা হয় তাহলে আপনি কী করবেন? পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা এবং এর নীতিগুলি প্রয়োগ করা ঈশ্বর আশা করেন না, এইভাবে কি আপনি যুক্তি করবেন? কিন্তু এই বিষয় চিন্তা করুন। যদি এর বশীভূত হন এবং আপনি আপনার বাইবেল অধ্যয়ন অথবা যিহোবার সাক্ষীদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দেন তাহলে কিভাবে আপনার প্রিয়জন এই বিষয়টি জানবে যে বাইবেল সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান হল এক জীবন ও মৃত্যুর বিষয়?—যোহন ১৭:৩; ২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮.
৭ এইভাবে পরিস্থিতিটিকে চিত্রিত করা যেতে পারে: হয়ত পরিবারের কোন এক সদস্য অত্যধিক মদ্য পানের প্রতি আসক্ত। মদের সমস্যাটি অবজ্ঞা করা বা প্রশ্রয় দেওয়া কি সত্যই তার পক্ষে উপকারী হবে? শান্তি বজায় রাখতে তা প্রশ্রয় দেওয়া এবং তার সমস্যা সম্বন্ধে কিছু না করা কি উত্তম হবে? না, বরং আপনি হয়ত একমত হবেন যে, তার মদ্যপান সংক্রান্ত সমস্যা অতিক্রম করতে সাহায্য করা উত্তম হবে, এমনকি যদিও বা এর জন্য আপনাকে তার ক্রোধ ও দৌরাত্ম্যের মোকাবিলা করতে হতে পারে। (হিতোপদেশ ২৯:২৫) ঠিক একইভাবে, যদি আপনি সত্যই আপনার পরিবারের সদস্যদের প্রেম করেন, তাহলে বাইবেল অধ্যয়ন থেকে আপনাকে বিরত করার প্রচেষ্টার প্রতি আপনি বশীভূত হবেন না। (প্রেরিত ৫:২৯) শুধুমাত্র দৃঢ়ভাবে দাঁড়ানোর দ্বারাই আপনি তাদের উপলব্ধি করতে সাহায্য করবেন যে খ্রীষ্টের শিক্ষার সাথে জীবনযাপন করলে তারা জীবন পাবে।
৮. যীশু বিশ্বস্ততার সাথে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করেছিলেন তা জানার দ্বারা আমরা কিভাবে উপকৃত হতে পারি?
৮ ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেওয়া হয়ত অনেক সময় কঠিন হতে পারে। কিন্তু, মনে রাখবেন যে শয়তানও ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করাকে যীশুর জন্য কঠিন করে তুলেছিল। তবুও যীশু কখনও হাল ছেড়ে দেননি; এমনকি তিনি আমাদের জন্য যাতনাদন্ডের কষ্ট সহ্য করেছিলেন। “আমাদের ত্রাণকর্ত্তা যীশু খ্রীষ্ট,” বাইবেল বলে। “তিনি আমাদের নিমিত্ত মরিলেন।” (তীত ৩:৬; ১ থিষলনীকীয় ৫:১০) যীশু বিরোধিতার কাছে বশ্যতা স্বীকার করেননি তা জেনে আমরা কি কৃতজ্ঞ নই? যেহেতু তিনি বলিরূপ মৃত্যু সহ্য করেছিলেন, তাঁর পাতিত রক্তে বিশ্বাস স্থাপন করার দ্বারা আমাদের শান্তিপূর্ণ এক নতুন ধার্মিক জগতে অনন্ত জীবনের প্রত্যাশা রয়েছে।—যোহন ৩:১৬, ৩৬; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
সম্ভাব্য মহান পুরস্কার
৯. (ক) কিভাবে খ্রীষ্টানেরা অন্যদের বাঁচাতে অংশ নিতে পারে? (খ) তীমথিয়ের পারিবারিক অবস্থা কেমন ছিল?
৯ আপনি কি উপলব্ধি করেছেন যে আপনি নিজেও অন্যদের বাঁচানোর কাজে অংশ নিতে পারেন, যার অন্তর্ভুক্ত হল আপনার অত্যন্ত প্রিয় আত্মীয়েরা? প্রেরিত পিতর তীমথিয়কে উৎসাহ দিয়েছিলেন: “এ সকলে স্থির থাক; [যা তোমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে] কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (১ তীমথিয় ৪:১৬) তীমথিয় ধার্মিকভাবে বিভক্ত পরিবারে বাস করতেন, যেহেতু তার পিতা ছিলেন গ্রীক এবং একজন অবিশ্বাসী। (প্রেরিত ১৬:১; ২ তীমথিয় ১:৫; ৩:১৪) যদিও আমরা জানি না যে তীমথিয়ের পিতা কখনও বিশ্বাসী হয়েছিলেন কি না, সম্ভবত তার স্ত্রী, উনীকীর এবং তীমথিয়ের বিশ্বস্ত আচরণ দেখে অনেক উপকৃত হয়েছিলেন।
১০. খ্রীষ্টানেরা তাদের অবিশ্বাসী সাথীদের পক্ষে কী করতে পারে?
১০ শাস্ত্র দেখায় যে স্বামী এবং স্ত্রী যারা দৃঢ়ভাবে বাইবেলের সত্য ধরে থাকে তারা তাদের ন-খ্রীষ্টীয় সাথীদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে অংশ নিতে সাহায্য করার দ্বারা তাদের বিশ্বাসী করে তুলতে পারে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “যদি কোন ভ্রাতার অবিশ্বাসিনী স্ত্রী থাকে, আর সেই নারী তাহার সহিত বাস করিতে সম্মতা হয়, তবে সে তাহাকে পরিত্যাগ না করুক; আবার যে স্ত্রীর অবিশ্বাসী স্বামী আছে, আর সেই ব্যক্তি তাহার সহিত বাস করিতে সম্মত হয় তবে সে স্বামীকে পরিত্যাগ না করুক। কারণ, হে নারি, তুমি কি করিয়া জান যে, তুমি তোমার স্বামীকে পরিত্রাণ করিবে কি না? অথবা হে স্বামি, তুমি কি করিয়া জান যে তুমি তোমার স্ত্রীকে পরিত্রাণ করিবে না? (১ করিন্থীয় ৭:১২, ১৩, ১৬) প্রেরিত পিতর, প্রকৃত অর্থে স্ত্রীরা কিভাবে তাদের স্বামীদের বাঁচাতে পারে তার ব্যাখ্যা করেন এইভাবে উৎসাহ দিয়ে: “তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।”—১ পিতর ৩:১.
১১, ১২. (ক) হাজার হাজার খ্রীষ্টানেরা কী পুরস্কার পেয়েছে এবং তা পাওয়ার জন্য তারা কী করেছে? (খ) বিশ্বস্ততার সাথে সহ্য করার জন্য এক পরিবারের সদস্য কিভাবে পুরস্কৃত হয় সেই অভিজ্ঞতা বর্ণনা করুন?
১১ মাসের পর মাস এবং বছরের পর বছর ধরে তাদের সাক্ষী আত্মীয়দের খ্রীষ্টীয় কাজকর্মগুলি বিরোধিতা করার পর বিগত কয়েক বছরে অনেক হাজার এইধরনের ব্যক্তিরা যিহোবার সাক্ষী হয়েছে। খ্রীষ্টীয়রা যারা দৃঢ় হয়েছিল তাদের জন্য তা কতই না পুরস্কারস্বরূপ এবং একসময় যারা বিরোধী ছিল তাদের জন্য কতই না আশীর্বাদস্বরূপ প্রতীয়মান হয়! আবেগের সাথে একজন ৭৪ বছর বয়স্ক খ্রীষ্টীয় প্রাচীন বর্ণনা করেন: “যেসব বছরগুলিতে আমি তাদের বিরোধিতা করতাম, তখন আমার সাথে তারা থাকার জন্য আমি প্রায়ই আমার স্ত্রী এবং ছেলেমেয়েদের ধন্যবাদ দিয়ে থাকি।” তিনি বলেন যে তিন বছর ধরে আমি আমার স্ত্রীর সাথে বাইবেল সম্বন্ধে একগুঁয়েমির হেতু কথা বলতে পর্যন্ত অস্বীকার করি। “কিন্তু সে আমার উপর কৌশলতা প্রয়োগ করে,” তিনি বলেন, “আর আমার পা টিপে দেওয়ার সময় তখন সে আমার কাছে সাক্ষ্য দিতে আরম্ভ করে। সে আমার বিরোধিতার কাছে বশীভূত হয়নি তার জন্য আমি কতই না কৃতজ্ঞ!”
১২ আরেকজন স্বামী যে তার নিজের পরিবারকে বাধা দিয়েছিল লেখেন: “সে সত্য পায় বলে আমি আমার স্ত্রীর সবচেয়ে খারাপ শত্রু ছিলাম, আমি তাকে হুমকি দিতাম, আমরা প্রতিদিন ঝগড়া করতাম; আসল বিষয়টি হল যে আমি সবসময় ঝগড়া শুরু করতাম। কিন্তু সবকিছুই ব্যর্থ হয়; আমার স্ত্রী বাইবেলের সত্যকে ধরে থাকে। সত্যের বিরুদ্ধে, আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে এবং বাচ্চার বিরুদ্ধে আমার কঠোর বিরোধিতা বারো বছর ধরে চলে। তাদের দুইজনের কাছে আমি ছিলাম স্বয়ং দিয়াবল।’ পরিশেষে এই ব্যক্তিটি তার জীবনধারা সম্বন্ধে বিবেচনা করতে শুরু করে। ‘আমি কতই না রূঢ় ছিলাম,’ তিনি বলেন। ‘আমি বাইবেল পড়ি এবং এর উপদেশের জন্য আমি কৃতজ্ঞ, আমি এখন এক বাপ্তাইজিত সাক্ষী।’ স্ত্রীর সেই মহান পুরস্কারের বিষয় চিন্তা করুন, হ্যাঁ ‘তার স্বামীকে পরিত্রাণ’ পেতে সাহায্য করা, বিশ্বস্ততার সাথে ১২ বছর ধরে বিরোধিতা সহ্য করা!
যীশুর কাছ থেকে শেখা
১৩. (ক) যীশুর জীবনধারা থেকে স্বামী এবং স্ত্রীদের কী প্রাথমিক শিক্ষা পাওয়া উচিত? (খ) যে সব লোকেরা ঈশ্বরের ইচ্ছার অধীনে বশ্যতা স্বীকার করতে কষ্টকর মনে করে তারা কিভাবে যীশুর উদাহরণ থেকে উপকৃত হতে পারে?
১৩ যীশুর জীবনধারা থেকে যে প্রাথমিক শিক্ষা স্বামী এবং স্ত্রীদের নেওয়া উচিত তা হল ঈশ্বরের প্রতি বাধ্যতা। “আমি সর্ব্বদা তাঁহার সন্তোষজনক কার্য্য করি,” যীশু বলেছিলেন। “আমি আপনার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি না, কিন্তু আমার প্রেরণকর্ত্তার ইচ্ছা পূর্ণ করিতে চেষ্টা করি।” (যোহন ৫:৩০; ৮:২৯) এমনকি যখন যীশু এক বিশেষ বিষয়ে ঈশ্বরের ইচ্ছাকে রুচিকর বলে মনে করেননি তখনও তিনি বাধ্য ছিলেন। “যদি তোমার অভিমত হয়, আমা হইতে এই পানপাত্র দূর কর,” তিনি প্রার্থনা করেছিলেন। কিন্তু এর পরেই তিনি যোগ দেন: “তথাপি আমার ইচ্ছা নয়, তোমারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (লূক ২২:৪২) যীশু ঈশ্বরের ইচ্ছা পরিবর্তন করতে বলেননি; তাঁর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা যা ছিল তার প্রতি বাধ্যতার সাথে বশীভূত হয়ে তিনি দেখিয়েছিলেন যে তিনি সত্যই ঈশ্বরকে ভালবাসেন। (১ যোহন ৫:৩) সর্বদা ঈশ্বরের ইচ্ছাকে প্রথম স্থান দেওয়া ঠিক যেমন যীশু দিয়েছিলেন তা শুধুমাত্র অবিবাহিত জীবনেও নয় কিন্তু বিবাহিত এবং পারিবারিক জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এর কারণ কী তা বিবেচনা করুন।
১৪. কিছু খ্রীষ্টানেরা কিভাবে অনুচিত যুক্তি দেখায়?
১৪ আগে যেমন বলা হয়েছে, যখন বিশ্বাসীরা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেন ও অবিশ্বাসী সাথীদের সাথে থাকেন, তা প্রায়ই তাদের পরিত্রাণের পথে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। এমনকি যখন উভয় সাথী বিশ্বাসী হয় তখনও তাদের বিবাহিত জীবন আদর্শের হয়ে ওঠে না। তাদের পাপপূর্ণ প্রবণতার ফলে, স্বামী এবং স্ত্রী একে অপরের প্রতি সব সময় প্রেমপূর্ণ চিন্তা করে না। (রোমীয় ৭:১৯, ২০; ১ করিন্থীয় ৭:২৮) এমনকি কয়েকজন এতদূর পর্যন্তও যায় যে তারা ভিন্ন সাথী খোঁজে, যদিও তাদের কাছে বিবাহ বিচ্ছেদের কোন শাস্ত্রীয় ভিত্তি নেই। (মথি ১৯:৯; ইব্রীয় ১৩:৪) তারা যুক্তি করে যে তাদের জন্য এটাই উত্তম, স্বামী এবং স্ত্রীর জন্য ঈশ্বরের ইচ্ছা, যে তারা একে অপরের সাথে বাস করে, তা খুব কঠিন। (মালাখি ২:১৬; মথি ১৯:৫, ৬) এটি সন্দেহাতীতভাবে মানুষের চিন্তাধারা, ঈশ্বরের নয়।
১৫. ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেওয়া কেন এক সুরক্ষাস্বরূপ?
১৫ ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেওয়া কতই না সুরক্ষাস্বরূপ! বিবাহিত দম্পতি যারা তা চেষ্টা করে তারা এক সঙ্গে বসবাস করবে এবং ঈশ্বরের বাক্যের উপদেশ প্রয়োগ করার দ্বারা তাদের সমস্যা সমাধান করার চেষ্টা করবে। এর ফলে তারা সবপ্রকারের মনব্যথা এবং তার পরিণাম এড়াতে পারবে যা হয়ত তা অবজ্ঞা করার দ্বারা আসতে পারে। (গীতসংহিতা ১৯:৭-১১) এর উদাহরণস্বরূপ আমরা একটি দম্পতিকে নিই যারা প্রায় বিবাহবিচ্ছেদের পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছিল, কিন্তু তারা বাইবেলের উপদেশ অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। বহু বছর পরে সেই স্ত্রীটি তাদের বিবাহিত জীবনের আনন্দ সম্বন্ধে চিন্তা করতে গিয়ে বলেন: “আমাকে বসে কাঁদতেই হয়, এই সম্ভাবনা সম্বন্ধে চিন্তা করে যে, আমার স্বামী থেকে কত বছর আমাকে আলাদা থাকতে হত। তখন আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি এবং ধন্যবাদ দিই তাঁর উপদেশ এবং পরিচালনার জন্য যা আমাদের একত্রে এক সুখী সম্পর্কে নিয়ে এসেছে।”
স্বামীরা এবং স্ত্রীরা—খ্রীষ্টকে অনুকরণ করুন!
১৬. স্বামী এবং স্ত্রীদের জন্য কী উদাহরণ যীশু স্থাপন করেছেন?
১৬ যীশু, যিনি সর্বদা ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দিয়েছিলেন স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন এবং তারা এই বিষয় যত্নপূর্বক মনোযোগ দিলে ভাল করবে। যেভাবে যীশু তাঁর স্নেহপূর্ণ মস্তক ব্যবস্থা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর উপর প্রয়োগ করেছিলেন তা অনুকরণ করতে স্বামীদের উৎসাহ দেওয়া হয়। (ইফিষীয় ৫:২৩) আর খ্রীষ্টীয় স্ত্রীরা যীশুর ঈশ্বরের প্রতি নিখুঁত বশ্যতা স্বীকার থেকে শিক্ষালাভ করতে পারেন।—১ করিন্থীয় ১১:৩.
১৭, ১৮. কোন্ কোন্ দিক দিয়ে যীশু স্বামীদের জন্য এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
১৭ বাইবেল আদেশ দেয়: “স্বামীরা, তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন।” (ইফিষীয় ৫:২৫) একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায় যার দ্বারা যীশু তাঁর অনুগামীদের মণ্ডলীর প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন তা হল তাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার দ্বারা। “তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি,” যীশু বলেছিলেন, “কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি।” (যোহন ১৫:১৫) এই বিষয় সম্বন্ধে চিন্তা করুন যে সময় তিনি তাঁর শিষ্যদের সাথে কথা বলার জন্য ব্যয় করেছিলেন—বহু, বহু আলোচনা যা তিনি তাদের সঙ্গে করেছিলেন—এবং তাদের প্রতি যে আস্থা তাঁর ছিল! সেটি কি স্বামীদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ নয়?
১৮ যীশু তাঁর শিষ্যদের প্রতি প্রকৃত আগ্রহ এবং তাদের প্রতি অকপট স্নেহ দেখিয়েছিলেন। (যোহন ১৩:১) যখন তাঁর শিক্ষাগুলি তাদের কাছে অস্পষ্ট হয়ে উঠত তখন তিনি ধৈর্য সহকারে তাদের একাকী বিষয়গুলি পরিষ্কার করতে সময় ব্যয় করতেন। (মথি ১৩:৩৬-৪৩) স্বামীরা, আপনাদের কাছে আপনাদের স্ত্রীদের আধ্যাত্মিক উন্নতি কি একইরকম গুরুত্বপূর্ণ? আপনি কি তার সাথে সময় কাটান এবং নিশ্চিত হন যে আপনাদের দুজনেরই মন ও হৃদয়ে বাইবেলের সত্য স্পষ্ট আছে? যীশু তাঁর প্রেরিতদের সাথে পরিচর্যায় গিয়েছিলেন হয়ত তাদের ব্যক্তিগত শিক্ষা দিয়েছিলেন। গৃহ থেকে গৃহে পরিচর্যায় এবং বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনায় অংশ নিয়ে আপনি কি আপনার স্ত্রীকে সাহায্য করেন?
১৯. তাঁর প্রেরিতদের পুনরাবৃত্ত দুর্বলতাগুলিকে যেভাবে যীশু মোকাবিলা করেছিলেন তা কিভাবে স্বামীদের জন্য এক উদাহরণস্বরূপ?
১৯ বিশেষকরে তাঁর প্রেরিতদের অসিদ্ধতাগুলির সাথে মোকাবিলা করার বিষয় যীশু স্বামীদের জন্য এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ স্থাপন করেছিলেন। তাঁর প্রেরিতদের সাথে শেষ ভোজের সময়, যীশু প্রতিদ্বন্দ্বিতার আত্মার এক প্রভাব দেখতে পান। তিনি কি তাদের রূঢ়তার সাথে সমালোচনা করেছিলেন? না, তিনি নম্রতার সাথে প্রত্যেকের পা ধুইয়ে দিয়েছিলেন। (মার্ক ৯:৩৩-৩৭; ১০:৩৫-৪৫; যোহন ১৩:২-১৭) আপনি কি এইধরনের ধৈর্য আপনার স্ত্রীর প্রতি দেখিয়ে থাকেন? তাদের পুনরাবৃত্তিকর দুর্বলতার ফলে অসন্তোষ প্রকাশ না করে আপনি কি ধৈর্য সহকারে সাহায্য এবং উদাহরণ স্থাপন করার দ্বারা তার হৃদয়ে পৌঁছাবার চেষ্টা করছেন? স্ত্রীরা সম্ভবত এই প্রেমপূর্ণ করুণার প্রতি ইতিবাচক সাড়া দেবে ঠিক যেমন প্রেরিতেরা অবশেষে দিয়েছিলেন।
২০. খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের অবশ্যই কী ভুলে যাওয়া উচিত নয় এবং তাদের জন্য কে এক উদাহরণস্বরূপ?
২০ স্ত্রীদেরও উচিত যীশুকে বিবেচনা করা, যিনি কখনও ভুলে যাননি যে, “খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” তিনি সর্বদাই তাঁর স্বর্গীয় পিতার প্রতি বশ্যতা স্বীকার করেছিলেন। একইভাবে, স্ত্রীদের ভুলে যাওয়া উচিত নয় যে “স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ,” হ্যাঁ, তাদের স্বামী হল তাদের মস্তক। (১ করিন্থীয় ১১:৩; ইফিষীয় ৫:২৩) প্রেরিত পিতর প্রাচীনকালের খ্রীষ্টীয় স্ত্রীদের ‘পবিত্র নারীগণদের’ সম্বন্ধে বিবেচনা করতে উৎসাহ দেন, বিশেষকরে সারা সম্বন্ধে যিনি, “অব্রাহামের আজ্ঞা মানিতেন, নাথ বলিয়া তাঁহাকে ডাকিতেন।”—১ পিতর ৩:৫, ৬.
২১. অব্রাহাম এবং সারার বিবাহিত জীবন কেন সফল ছিল কিন্তু কেন লোট এবং তার স্ত্রীর জন্য তা অকৃতকার্য ছিল?
২১ সারা প্রামাণিকরূপে সমৃদ্ধশালী শহরের বিলাসবহূল গৃহ ত্যাগ করে বিদেশে তাঁবুতে বাস করা মেনে নিয়েছিলেন। কেন? তিনি কী সেই জীবনধারা পছন্দ করতেন বলে? সম্ভবত নয়। তার স্বামী তাকে যেতে বলেছিলেন বলে? সন্দেহাতীতরূপে এটি একটি কারণ ছিল, কারণ সারা অব্রাহামের ধার্মিক গুণাবলির জন্য তাকে প্রেম এবং শ্রদ্ধা করতেন। (আদিপুস্তক ১৮:১২) কিন্তু মুখ্য কারণ যার জন্য তিনি তার স্বামীর সাথে গিয়েছিলেন তা হল যিহোবার প্রতি প্রেম এবং ঈশ্বরের নির্দেশনার অনুসরণ করার আন্তরিক ইচ্ছা। (আদিপুস্তক ১২:১) ঈশ্বরের প্রতি বাধ্য হওয়াতে তিনি আনন্দিত বোধ করতেন। অপরদিকে লোটের স্ত্রী, ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করতে ইতস্ততঃ করেছিল এবং এর ফলে সে তার সদোমের গৃহেতে ফেলে আসা জিনিসগুলির প্রতি আকাঙ্ক্ষার সাথে ফিরে তাকিয়েছিল। (আদিপুস্তক ১৯:১৫, ২৫, ২৬; লূক ১৭:৩২) সেই বিবাহের কী মর্মান্তিক পরিণতিই না হয়—শুধুমাত্র ঈশ্বরের প্রতি অবাধ্য হওয়ার ফলে!
২২. (ক) বিজ্ঞতার সাথে পরিবারের সদস্যদের কী আত্ম-পরীক্ষা করা উচিত? (খ) পরের অধ্যয়নে আমরা কী বিবেচনা করব?
২২ তাই একজন স্বামী অথবা স্ত্রী হিসাবে এটি নিজেকে জিজ্ঞাসা করা গুরুত্বপূর্ণ যে, ‘আমার পরিবারে কি ঈশ্বর প্রথম স্থান গ্রহণ করেন? ঈশ্বর আমাকে পরিবারে যে ভূমিকা দিয়েছেন তা কি আমি পরিপূর্ণ করতে সত্যই প্রচেষ্টা করছি? আমি কি সত্যই আমার সাথীকে ভালবাসি এবং প্রেম সহকারে ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক অর্জন অথবা বজায় রাখতে সাহায্য করি?’ বেশির ভাগ পরিবারে ছেলেমেয়েরাও রয়েছে। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা পিতামাতাদের ভূমিকা এবং তাদের ছেলেমেয়েদের উভয়ের ঈশ্বরকে প্রথম স্থান দেওয়া সম্বন্ধে বিবেচনা করব।
আপনার কি মনে আছে?
◻ অনেক পরিবারের কাছে যীশুর শিক্ষার কী পরিণতি হতে পারে?
◻ হাজার হাজার দৃঢ় খ্রীষ্টানেরা কী পুরস্কার লাভ করেছে?
◻ অনৈতিকতা এবং বিবাহবিচ্ছেদ এড়াতে কী লোকেদের সাহায্য করবে?
◻ যীশুর উদাহরণ থেকে স্বামীরা কী শিখতে পারেন?
◻ কিভাবে স্ত্রীরা এক সুখী বিবাহের সফলতা বাড়াতে পারেন?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
কিভাবে সারা তাদের বিবাহের সফলতা বাড়িয়েছিলেন?