“আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ”
“তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।”—যোহন ১৩:৩৫.
১. যিশু তাঁর মৃত্যুর কিছু আগে কোন গুণের ওপর জোর দিয়েছিলেন?
“বৎসেরা।” (যোহন ১৩:৩৩) এই কোমল সম্বোধনের মাধ্যমেই যিশু তাঁর মৃত্যুর আগের সেই সন্ধ্যায় তাঁর প্রেরিতদের ডেকেছিলেন। যিশু এর আগে কখনও তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় এইরকম করুণাপূর্ণ অভিব্যক্তি ব্যবহার করেছেন বলে এমন কোনো নথি আমাদের কাছে নেই। কিন্তু, সেই বিশেষ রাতে, তাঁর অনুসারীদের প্রতি তিনি যে-গভীর প্রেম অনুভব করেছিলেন, তা প্রকাশ করার জন্য এই স্নেহময় অভিব্যক্তিটি ব্যবহার করতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। বস্তুতপক্ষে, সেই রাতে যিশু প্রায় ৩০ বার প্রেমের বিষয়ে কথা বলেছিলেন। এই গুণটির ওপর কেন তিনি এত জোর দিয়েছিলেন?
২. প্রেম দেখানো খ্রিস্টানদের জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ কেন?
২ যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কেন প্রেম এত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেছিলেন, “তোমরা যদি আপনাদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখ, তবে তাহাতেই সকলে জানিবে যে, তোমরা আমার শিষ্য।” (যোহন ১৩:৩৫; ১৫:১২, ১৭) খ্রিস্টের একজন অনুসারী হওয়া এবং ভ্রাতৃপ্রেম দেখানো একটা অন্যটার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। সত্য খ্রিস্টানদের কোনো অদ্ভুত ধরনের পোশাক বা কোনো অস্বাভাবিক রীতিনীতির দ্বারা শনাক্ত করা হয় না কিন্তু একে অন্যের প্রতি তারা যে-উষ্ণ ও কোমল প্রেম দেখায়, সেটার দ্বারা করা হয়। এই অসাধারণ প্রেমই হল, আগের প্রবন্ধের শুরুতে আলোচিত খ্রিস্টের একজন শিষ্যের প্রধান তিনটে চাহিদার মধ্যে দ্বিতীয় চাহিদা। কী আমাদের এই চাহিদা পূরণ করে চলতে সাহায্য করবে?
‘আরও অধিক উপচিয়া পড়া’
৩. প্রেমের বিষয়ে প্রেরিত পৌল কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?
৩ খ্রিস্টের প্রথম শতাব্দীর অনুসারীদের মধ্যে যেমন ছিল, তেমনই এই উল্লেখযোগ্য প্রেম আজকে খ্রিস্টের প্রকৃত শিষ্যদের মধ্যে দেখা যায়। প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের উদ্দেশে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “ভ্রাতৃপ্রেম সম্বন্ধে তোমাদিগকে কিছু লেখা অনাবশ্যক, কারণ তোমরা আপনারা পরস্পর প্রেম করিবার জন্য ঈশ্বরের কাছে শিক্ষা পাইয়াছ; আর বাস্তবিক . . . সমুদয় ভ্রাতৃগণের প্রতি তাহা করিতেছ।” এমনকি পৌল আরও বলেছিলেন: “আরও অধিক উপচিয়া পড়।” (১ থিষলনীকীয় ৩:১২; ৪:৯-১১) আমাদেরও পৌলের পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেওয়া এবং একে অন্যের প্রতি প্রেম দেখানোর ক্ষেত্রে ‘উপচিয়া পড়িতে’ যথাসাধ্য চেষ্টা করা দরকার।
৪. পৌল এবং যিশুর কথা অনুসারে, কাদের প্রতি আমাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত?
৪ একই অনুপ্রাণিত চিঠিতে পৌল তার সহ বিশ্বাসীদের উৎসাহ দিয়েছিলেন, যাতে তারা ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করে’ এবং ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করে।’ (১ থিষনলীকীয় ৫:১৪) আরেকবার, তিনি খ্রিস্টানদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, যারা ‘বলবান্ তাহাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করে।’ (রোমীয় ১৫:১) দুর্বলদের সাহায্য করার ব্যাপারে যিশুও নির্দেশ দিয়েছিলেন। গ্রেপ্তার হওয়ার রাতে পিতর যিশুকে পরিত্যাগ করবে এই বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করার পর তিনি পিতরকে বলেছিলেন: “তুমিও একবার ফিরিলে পর তোমার ভ্রাতৃগণকে সুস্থির করিও।” কেন? কারণ তারাও যিশুকে ছেড়ে যাবে আর তাই তাদের সাহায্যের দরকার হবে। (লূক ২২:৩২; যোহন ২১:১৫-১৭) তাই, যারা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল এবং যারা হয়তো খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে সেই ব্যক্তিদের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করার জন্য ঈশ্বরের বাক্য আমাদের নির্দেশ দেয়। (ইব্রীয় ১২:১২) কেন আমাদের তা করা উচিত? যিশুর দেওয়া দুটো সুস্পষ্ট দৃষ্টান্ত এর উত্তর দেয়।
এক হারানো মেষ এবং একটি হারানো সিকি
৫, ৬. (ক) যিশু সংক্ষেপে কোন দুটো দৃষ্টান্তের কথা বলেছিলেন? (খ) এই দৃষ্টান্তগুলো যিহোবার সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
৫ যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে, তাদেরকে যিহোবা কোন দৃষ্টিতে দেখেন সে বিষয়ে তাঁর শ্রোতাদের শিক্ষা দিতে গিয়ে যিশু সংক্ষেপে দুটো দৃষ্টান্তের কথা বলেছিলেন। একটা ছিল একজন মেষপালক সম্বন্ধে। যিশু বলেছিলেন: “তোমাদের মধ্যে কোন্ ব্যক্তি—যাহার এক শত মেষ আছে, ও সেই সকলের মধ্যে একটী হারাইয়া যায়—নিরানব্বইটা প্রান্তরে ছাড়িয়া যায় না, আর যে পর্য্যন্ত সেই হারাণটী না পায়, সে পর্য্যন্ত তাহার অন্বেষণ করিতে যায় না? আর তাহা পাইলে সে আনন্দপূর্ব্বক কাঁধে তুলিয়া লয়। পরে ঘরে আসিয়া বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসীদিগকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমার যে মেষটী হারাইয়া গিয়াছিল, তাহা পাইয়াছি। আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, তদ্রূপ এক জন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে; যাহাদের মন ফিরান অনাবশ্যক, এমন নিরানব্বই জন ধার্ম্মিকের বিষয়ে তত আনন্দ হইবে না।”—লূক ১৫:৪-৭.
৬ দ্বিতীয় দৃষ্টান্তটি ছিল একজন স্ত্রীলোক সম্বন্ধে। যীশু বলেছিলেন: “কোন্ স্ত্রীলোক, যাহার দশটী সিকি আছে, সে যদি একটী হারাইয়া ফেলে, তবে প্রদীপ জ্বালিয়া ঘর ঝাঁটি দিয়া যে পর্য্যন্ত তাহা না পায়, ভাল করিয়া খুঁজিয়া দেখে না? আর পাইলে পর সে বন্ধু বান্ধব ও প্রতিবাসিনীগণকে ডাকিয়া বলে, আমার সঙ্গে আনন্দ কর, কারণ আমি যে সিকিটী হারাইয়া ফেলিয়াছিলাম, তাহা পাইয়াছি। তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এক জন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।”—লূক ১৫:৮-১০.
৭. হারানো মেষ ও হারানো সিকির বিষয়ে দৃষ্টান্তগুলোর মধ্যে আমাদের জন্য কোন দুটো শিক্ষা আছে?
৭ এই সংক্ষিপ্ত দৃষ্টান্তগুলো থেকে আমরা কী শিখতে পারি? এগুলো আমাদের দেখায় (১) যারা দুর্বল হয়ে গেছে তাদের প্রতি আমাদের কেমন অনুভূতি থাকা উচিত এবং (২) তাদের সাহায্য করার জন্য আমাদের কী করা উচিত। আসুন আমরা এই বিষয়গুলো বিবেচনা করে দেখি।
হারিয়ে গেছে কিন্তু মূল্যবান
৮. (ক) মেষপালক এবং স্ত্রীলোক তাদের হারানো বিষয়গুলোর প্রতি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? (খ) হারানো জিনিসের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া তাদের দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?
৮ দুটো দৃষ্টান্তেই কিছু হারিয়ে গিয়েছিল কিন্তু মালিকদের প্রতিক্রিয়া লক্ষ করুন। মেষপালক বলেননি যে: ‘একটা মেষ গেছে তো কী হয়েছে কারণ আমার তো এখনও ৯৯টা মেষ আছে? সেটা ছাড়াও আমার চলবে।’ সেই স্ত্রীলোক বলেননি যে: ‘একটা সিকির জন্য দুশ্চিন্তা করে কী লাভ? আমার কাছে এখনও যে-নয়টা সিকি আছে, তাতেই আমি খুশি।’ এর পরিবর্তে, মেষপালক তার হারানো মেষের জন্য এমনভাবে খোঁজ করেছিলেন যেন তার শুধু একটাই ছিল। আর স্ত্রীলোকটি সেই হারানো সিকির জন্য এমন বোধ করেছিলেন যেন তার কাছে আর কোনো সিকিই নেই। দুটো ঘটনাতেই হারিয়ে যাওয়া বস্তুটি মালিকের মনে মূল্যবানই থেকে গিয়েছিল। এর থেকে কোন বিষয়টা স্পষ্ট হয়?
৯. মেষপালক এবং স্ত্রীলোকের চিন্তা থেকে কোন বিষয়টা স্পষ্ট হয়?
৯ দুটো ক্ষেত্রেই যীশুর উপসংহার শুনুন: “তদ্রূপ এক জন পাপী মন ফিরাইলে স্বর্গে আনন্দ হইবে” এবং “তদ্রূপ, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, এক জন পাপী মন ফিরাইলে ঈশ্বরের দূতগণের সাক্ষাতে আনন্দ হয়।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) তাই, মেষপালক এবং স্ত্রীলোকের চিন্তা কিছুটা হলেও যিহোবা ও তাঁর স্বর্গীয় প্রাণীদের অনুভূতিকে প্রতিফলিত করে। হারানো জিনিসগুলো মেষপালক ও স্ত্রীলোকের চোখে যেমন মূল্যবান রয়ে গিয়েছিল, ঠিক একইভাবে যারা সরে গেছে এবং ঈশ্বরের লোকেদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, তারা যিহোবার চোখে মূল্যবান রয়ে গেছে। (যিরমিয় ৩১:৩) এই ব্যক্তিরা হয়তো আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল হতে পারে কিন্তু সেটার মানে এই নয় যে, তারা বিদ্রোহী। তাদের দুর্বল অবস্থা সত্ত্বেও, তারা হয়তো এখনও যিহোবা তাদের কাছ থেকে যা চান সেগুলোর কিছুটা পূরণ করে যাচ্ছে। (গীতসংহিতা ১১৯:১৭৬; প্রেরিত ১৫:২৯) তাই, অতীতের মতো এখনও যিহোবা তাদের ‘আপনার সম্মুখ হইতে নিক্ষেপ করিবার’ ক্ষেত্রে ধীর আছেন।—২ রাজাবলি ১৩:২৩.
১০, ১১. (ক) যারা মণ্ডলী থেকে সরে গেছে তাদের আমরা কীভাবে দেখতে চাই? (খ) যিশুর দৃষ্টান্ত দুটো অনুসারে, তাদের জন্য আমরা কীভাবে আমাদের চিন্তা প্রকাশ করতে পারি?
১০ যিহোবা ও যিশুর মতো, আমরাও সেই ব্যক্তিদের জন্য গভীরভাবে চিন্তিত যারা দুর্বল এবং যাদের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে আর দেখা যায় না। (যিহিষ্কেল ৩৪:১৬; লূক ১৯:১০) আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল একজন ব্যক্তিকে আমরা এক হারানো মেষ হিসেবে দেখি—অকর্মণ্য হিসেবে নয়। আমরা এইরকম যুক্তি দেখাই না যে: ‘দুর্বল ব্যক্তির সম্বন্ধে কেন চিন্তা করব? তাকে ছাড়া মণ্ডলী তো বেশ ভালই চলে যাচ্ছে?’ এর পরিবর্তে, যারা সরে গেছে কিন্তু ফিরে আসতে চায় তাদের আমরা যিহোবার মতো মূল্যবান হিসেবে দেখি।
১১ কিন্তু, কীভাবে আমরা আমাদের চিন্তার অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি? যিশুর দুটো দৃষ্টান্ত ইঙ্গিত করে যে আমরা তা করতে পারি (১) নিজে থেকে এগিয়ে গিয়ে, (২) মৃদু মনোভাব দেখিয়ে এবং (৩) আন্তরিক হয়ে। আসুন আমরা এই বিষয়গুলো একটা একটা করে দেখি।
নিজে থেকে এগিয়ে যান
১২. ‘হারাণটির অন্বেষণ করিতে যায়’ কথাগুলো মেষপালকের মনোভাব সম্বন্ধে আমাদের কী জানায়?
১২ দুটো দৃষ্টান্তের মধ্যে প্রথমটায় যিশু বলেন যে, মেষপালক ‘সেই হারাণটীর অন্বেষণ’ করবেন। মেষপালক নিজে থেকে এগিয়ে যান এবং হারিয়ে যাওয়া মেষকে খুঁজে বের করার জন্য স্বেচ্ছায় প্রচেষ্টা করেন। কষ্ট, বিপদ এবং দূরত্ব তাকে দমন করতে পারে না। এর পরিবর্তে, মেষপালক ‘যে পর্য্যন্ত তাহা না পান’ তাতে লেগে থাকেন।—লূক ১৫:৪.
১৩. কীভাবে প্রাচীনকালের কিছু বিশ্বস্ত ব্যক্তি দুর্বল ব্যক্তিদের প্রয়োজনে সাড়া দিয়েছিল এবং কীভাবে আমরা বাইবেলের এই উদাহরণগুলো অনুকরণ করতে পারি?
১৩ একইভাবে, উৎসাহের প্রয়োজন আছে এমন একজন ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য প্রায়ই সবল ব্যক্তিকে নিজে থেকে এগিয়ে যেতে হয়। প্রাচীনকালের বিশ্বস্ত ব্যক্তিরা এই বিষয়টি বুঝেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, রাজা শৌলের পুত্র যোনাথন যখন লক্ষ করেছিলেন যে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু দায়ূদের উৎসাহের দরকার আছে, তখন যোনাথন “উঠিয়া বনে দায়ূদের নিকটে গিয়া ঈশ্বরেতে তাঁহার হস্ত সবল করিলেন।” (১ শমূয়েল ২৩:১৫, ১৬) কয়েকশ বছর পর, দেশাধ্যক্ষ নহিমিয় যখন দেখেছিলেন যে তার কিছু যিহুদি ভাই দুর্বল হয়ে পড়েছে, তখন তিনি ‘[“সঙ্গে সঙ্গে,” NW] উঠিয়াছিলেন’ এবং ‘যিহোবাকে স্মরণ করিতে’ তাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন। (নহিমিয় ৪:১৪) আজকে, আমরাও ‘উঠিতে’ অর্থাৎ যারা দুর্বল তাদের শক্তিশালী করতে নিজের থেকে এগিয়ে যেতে চাইব। কিন্তু মণ্ডলীতে কাদের তা করা উচিত?
১৪. খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে দুর্বল ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য কাদের এগিয়ে যাওয়া উচিত?
১৪ বিশেষ করে, খ্রিস্টান প্রাচীনদের ‘দুর্ব্বল হস্ত সবল করিবার, কম্পিত জানু সুস্থির করিবার’ এবং যারা উদ্বিগ্ন তাদের এই কথা বলার দায়িত্ব: “সাহস কর, ভয় করিও না।” (যিশাইয় ৩৫:৩, ৪; ১ পিতর ৫:১, ২) কিন্তু, লক্ষ করুন যে, ‘ক্ষীণসাহসদিগকে সান্ত্বনা করিবার’ এবং ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিবার’ বিষয়ে পৌলের উপদেশ কেবল প্রাচীনদের উদ্দেশেই দেওয়া হয়নি। বরং, পৌলের কথাগুলো “থিষলনীকীয়দের” পুরো ‘মণ্ডলীর’ উদ্দেশে দেওয়া হয়েছিল। (১ থিষলনীকীয় ১:১; ৫:১৪) তাই, যারা দুর্বল তাদের সাহায্য করার জন্য এগিয়ে যাওয়া সমস্ত খ্রিস্টানের দায়িত্ব। দৃষ্টান্তের মেষপালকের মতো, প্রত্যেক খ্রিস্টানের উচিত ‘হারাণটীর’ জন্য এগিয়ে যাওয়া। অবশ্যই, প্রাচীনদের সহযোগিতায় এটা সবচেয়ে কার্যকারীভাবে করা হয়। আপনার মণ্ডলীর কোনো দুর্বল ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য আপনি কি কয়েকটা পদক্ষেপ নিতে পারেন?
মৃদু হোন
১৫. মেষপালক যে-কাজগুলো করেছেন, সেগুলোর পিছনে হয়তো কোন কারণ ছিল?
১৫ শেষ পর্যন্ত মেষপালক যখন হারানো মেষটি খুঁজে পান, তখন তিনি কী করেন? “সে . . . কাঁধে তুলিয়া লয়।” (লূক ১৫:৫) কত মর্মস্পর্শী এবং ফলপ্রদ বর্ণনা! মেষ হয়তো অপরিচিত এলাকা জুড়ে কয়েক দিন ও রাত এদিক-ওদিক ঘুরে বেড়িয়েছে, এমনকি হয়তো ওত পেতে থাকা সিংহের হুমকির সম্মুখীনও হয়েছে। (ইয়োব ৩৮:৩৯, ৪০) কোনো সন্দেহ নেই যে, খাবারের অভাবে মেষ দুর্বল হয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবেই এটা এত দুর্বল হয়ে পড়ে যে, খোয়াড়ে ফিরে আসতে যেসমস্ত বাধার মুখোমুখি হবে সেগুলো নিজের শক্তিতে মোকাবিলা করতে পারবে না। তাই, মেষপালক নত হন, মৃদুভাবে মেষটাকে ওপরে তোলেন এবং খোয়াড়ে ফিরে আসার পথে সমস্ত বাধার মধ্যে দিয়ে এটাকে কোলে করে বয়ে নিয়ে আসেন। এই মেষপালকের দেখানো যত্ন আমরা কীভাবে প্রতিফলিত করতে পারি?
১৬. পথভ্রষ্ট মেষের প্রতি মেষপালক যে-কোমলতা দেখিয়েছেন, আমাদের কেন সেই কোমলতা প্রতিফলিত করা উচিত?
১৬ যে-ব্যক্তি মণ্ডলীর সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে, তিনি হয়তো আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে পরিশ্রান্ত বোধ করতে পারে। মেষপালকের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া মেষের মতো এই ধরনের একজন ব্যক্তি হয়তো জগতের প্রতিকূল এলাকায় উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরে বেড়িয়েছেন। খোয়াড় অর্থাৎ খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর জোগানো সুরক্ষা ছাড়া তিনি আগের চেয়ে এখন আরও বেশি করে দিয়াবলের আক্রমণের মুখে পড়েন, যে কিনা “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) এ ছাড়াও, আধ্যাত্মিক খাদ্যের অভাবে তিনি দুর্বল হয়ে পড়েছেন। তাই, তিনি এতটাই দুর্বল যে, মণ্ডলীতে ফিরে আসার পথে যেসমস্ত প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি তিনি হবেন, সেগুলো তার নিজের শক্তিতে মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। তাই, আমাদের নিচু হওয়া দরকার, বলতে গেলে দুর্বল ব্যক্তিকে মৃদুভাবে উঠিয়ে, তাকে বহন করে ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। (গালাতীয় ৬:২) আমরা কীভাবে তা সম্পন্ন করতে পারি?
১৭. দুর্বল কোনো ব্যক্তির কাছে গেলে কীভাবে আমরা প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করতে পারি?
১৭ প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “কেউ যদি দুর্বল হয়, তা হলে আমিও কি তার দুর্বলতার অংশী হই না?” (২ করিন্থীয় ১১:২৯, দ্যা নিউ ইংলিশ বাইবেল; ১ করিন্থীয় ৯:২২) দুর্বল সহ অন্যান্য ব্যক্তিদের প্রতি পৌলের সমবেদনা ছিল। যারা দুর্বল তাদের প্রতি আমরাও একইরকম সমবেদনা দেখাতে চাই। আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল একজন খ্রিস্টানের কাছে গেলে তাকে আবারও আশ্বাস দিন যে, তিনি যিহোবার চোখে মূল্যবান এবং তার সহ সাক্ষিরা প্রচণ্ডভাবে তার অভাব বোধ করে। (১ থিষলনীকীয় ২:১৭) তাকে জানান যে, তারা তাকে সাহায্য করার জন্য প্রস্তুত এবং তার জন্য এমন একজন হতে ইচ্ছুক, যে “ভ্রাতা দুর্দ্দশার [“দুর্দশার সময়ের,” NW] জন্য জন্মে।” (হিতোপদেশ ১৭:১৭; গীতসংহিতা ৩৪:১৮) আমাদের আন্তরিক অভিব্যক্তি হয়তো মৃদুভাবে এবং ধীরে ধীরে তাকে এমন অবস্থায় তুলে ধরতে পারে যে তিনি পালের কাছে ফিরে আসতে সমর্থ হবেন। এরপর আমাদের কী করা উচিত? স্ত্রীলোক ও হারানো সিকির দৃষ্টান্ত আমাদের নির্দেশনা দেয়।
আন্তরিক হোন
১৮. (ক) দৃষ্টান্তের স্ত্রীলোকটি কেন নিরাশ বোধ করেননি? (খ) স্ত্রীলোকটি কোন আন্তরিক প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং এর ফল কী হয়েছিল?
১৮ যে-স্ত্রীলোক সিকিটি হারিয়ে ফেলেছেন তিনি জানেন যে, পরিস্থিতিটা খুবই কঠিন কিন্তু নিরাশাজনক নয়। সিকিটী যদি কোনো বড়, ঝোপঝাড়পূর্ণ মাঠে বা কোনো গভীর, কাদাটে হ্রদে পড়ত, তা হলে সম্ভবত তিনি সেই হারানো জিনিসটার ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিতেন। কিন্তু, সেই সিকিটি তার ঘরেরই কোথাও অর্থাৎ তার নাগালের মধ্যেই আছে জেনে তিনি পুঙ্খানুপুঙ্খ এবং আন্তরিকতার সঙ্গে সেটার অন্বেষণ করেন। (লূক ১৫:৮) প্রথমে, তিনি প্রদীপ জ্বেলে তার অন্ধকার ঘরকে আলোকময় করেন। এরপর, তিনি ঝাড়ু দিয়ে মেঝে ঝাঁড় দেন এই আশায় যে, সিকির ঝনঝন শব্দ তিনি শুনতে পাবেন। শেষ পর্যন্ত তিনি ঘরের প্রতিটি কোণা পর্যন্ত খুঁজে দেখেন, যতক্ষণ না সেই প্রদীপের আলোয় রুপোর সিকিটি চকচক করে ওঠে। স্ত্রীলোকটির আন্তরিক প্রচেষ্টা পুরস্কৃত হয়!
১৯. হারানো সিকির দৃষ্টান্তে স্ত্রীলোকের কাজগুলো থেকে দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করার ব্যাপারে আমরা কোন শিক্ষা লাভ করতে পারি?
১৯ এই দৃষ্টান্তের বিস্তারিত বর্ণনা আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, একজন দুর্বল খ্রিস্টানকে সাহায্য করার বিষয়ে শাস্ত্রীয় দায়িত্ব আমাদের সাধ্যের বাইরে নয়। একই সময়ে আমরা উপলব্ধি করি যে, এর জন্য প্রচেষ্টার দরকার। তাই, প্রেরিত পৌল ইফিষীয় প্রাচীনদের বলেছিলেন: “এই প্রকারে পরিশ্রম করিয়া দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিতে হইবে।” (প্রেরিত ২০:৩৫ক) মনে রাখবেন যে, সেই স্ত্রীলোক যেনতেনভাবে তার ঘরের চারদিক দেখেননি বা হঠাৎ করে এমনিই সেই সিকিটি খুঁজে পাননি। না, তিনি সফল হন কারণ তিনি ‘যে পর্য্যন্ত তাহা না পান’ সেই পর্যন্ত সুশৃঙ্খলভাবে খুঁজেছিলেন। একইভাবে, যখন আমরা আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে দুর্বল একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করে তোলার চেষ্টা করি, তখন আমাদের প্রচেষ্টা আন্তরিক এবং উদ্দেশ্যপূর্ণ হওয়া দরকার। আমরা কী করতে পারি?
২০. দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য কী করা যেতে পারে?
২০ কীভাবে আমরা একজন দুর্বল ব্যক্তির বিশ্বাস এবং উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারি? হয়তো উপযুক্ত কোনো খ্রিস্টীয় প্রকাশনা দিয়ে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার দরকার হতে পারে। বস্তুতপক্ষে, একজন দুর্বল ব্যক্তির সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করা আমাদেরকে এক সংগতিপূর্ণ এবং পুঙ্খানুপুঙ্খ উপায়ে তাকে সাহায্য করার জন্য সুযোগ করে দেয়। খুব সম্ভবত পরিচর্যা অধ্যক্ষই সবচেয়ে ভালভাবে নির্ধারণ করতে পারবেন যে, কে প্রয়োজনীয় সাহায্য জোগাতে পারে। তিনি হয়তো পরামর্শ দিতে পারেন যে, কোন বিষয়গুলো অধ্যয়ন করানো যেতে পারে এবং কোন প্রকাশনাটি সবচেয়ে ভালভাবে সাহায্য করবে। দৃষ্টান্তের স্ত্রীলোকটি যেমন তার কাজ সম্পাদন করার জন্য সাহায্যকারী হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করেন, ঠিক তেমনই আজকে আমাদের সেই সমস্ত হাতিয়ার রয়েছে, যা যারা দুর্বল তাদের সাহায্য করার জন্য ঈশ্বর দত্ত দায়িত্ব সম্পাদন করতে আমাদের সাহায্য করে। এই প্রচেষ্টায় আমাদের দুটো নতুন হাতিয়ার বা প্রকাশনা এই ক্ষেত্রে বিশেষ সাহায্যকারী হবে। সেগুলো হল একমাত্র সত্য ঈশ্বরের উপাসনা করুন এবং যিহোবার নিকটবর্তী হোনa (ইংরেজি)।
২১. যারা দুর্বল তাদের সাহায্য করা কীভাবে সকলের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে?
২১ যারা দুর্বল তাদের সাহায্য করা সকলের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে। যে-ব্যক্তিকে সাহায্য করা হয়েছে তিনি প্রকৃত বন্ধুদের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে পেরে সুখী হন। আমরা আন্তরিক আনন্দ উপভোগ করি, যা একমাত্র দান করার মাধ্যমেই পাওয়া যায়। (লূক ১৫:৬, ৯; প্রেরিত ২০:৩৫খ) যখন প্রত্যেক সদস্য অন্যদের প্রতি প্রেমময় আগ্রহ দেখায়, তখন পুরো মণ্ডলী উষ্ণতায় বৃদ্ধি পায়। আর সর্বোপরি, আমাদের যত্নবান পালক যিহোবা ও যিশুর প্রতি সম্মান দেখানো হয়, কারণ পৃথিবীতে তাঁদের দাসেরা দুর্বল ব্যক্তিদের সমর্থন করার জন্য তাঁদের দুজনের আকাঙ্ক্ষাকে প্রতিফলিত করে। (গীতসংহিতা ৭২:১২-১৪; মথি ১১:২৮-৩০; ১ করি. ১০:৩৪; ইফিষীয় ৫:১) তাই ‘নিজেদের মধ্যে পরস্পর প্রেম রাখিবার’ কত উত্তম কারণই না আমাদের রয়েছে!
[পাদটীকা]
a যিহোবার সাক্ষিদের দ্বারা প্রকাশিত।
আপনি কি ব্যাখ্যা করতে পারেন?
• প্রেম দেখানো আমাদের প্রত্যেকের জন্য কেন অপরিহার্য?
• যারা দুর্বল তাদের প্রতি কেন আমাদের প্রেম প্রসারিত করা উচিত?
• হারানো মেষ ও হারানো সিকির দৃষ্টান্ত থেকে আমরা কোন কোন শিক্ষা পাই?
• দুর্বল ব্যক্তিকে সাহায্য করার জন্য আমরা কোন বাস্তবসম্মত পদক্ষেপগুলো নিতে পারি?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করার ক্ষেত্রে, আমরা নিজে থেকে এগিয়ে যাই এবং মৃদু ও আন্তরিক হই
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যারা দুর্বল তাদের সাহায্য করা সকলের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসে