পাঠ ১৬
যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় কী করেছিলেন?
যিশুর বিষয়ে আপনি কতটা জানেন? আপনি হয়তো শুনেছেন, তিনি একজন ভাববাদী ছিলেন অথবা আপনি হয়তো কোনো ছবিতে তাঁকে জাবপাত্রে শোয়ানো একটা নবজাত শিশু কিংবা দণ্ডে ঝোলানো একজন ব্যক্তি হিসেবে দেখেছেন। কিন্তু, এগুলো ছাড়াও আপনি কি তাঁর সম্বন্ধে আরও কিছু জানতে পারেন? যিশু পৃথিবীতে থাকার সময় অনেক চমৎকার কাজ করেছিলেন। এই পাঠ থেকে আমরা তাঁর কিছু চমৎকার কাজ সম্বন্ধে জানব আর দেখব যে, সেগুলো কীভাবে আমাদের সাহায্য করতে পারে।
১. যিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী ছিল?
যিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছিল, ‘ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার ঘোষণা করা।’ (পড়ুন, লূক ৪:৪৩.) তিনি বলেছিলেন, ঈশ্বর একটা রাজ্য অর্থাৎ একটা সরকার স্থাপন করবেন, যেটা মানবজাতির সমস্ত সমস্যা দূর করে দেবে।a যিশু লোকদের এই সুসমাচার জানানোর জন্য সাড়ে তিন বছর ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন।—মথি ৯:৩৫.
২. যিশু কেন অলৌকিক কাজ করেছিলেন?
বাইবেল বলে, “তাঁর [যিশুর] মাধ্যমে ঈশ্বর” অনেক “অলৌকিক কাজ এবং আশ্চর্য কাজ” করেছিলেন। (প্রেরিত ২:২২) যিহোবার শক্তিতে যিশু ঝড় থামিয়েছিলেন, হাজার হাজার ব্যক্তিকে খাবার খাইয়েছিলেন, অসুস্থ ব্যক্তিদের সুস্থ করেছিলেন আর এমনকী মৃত ব্যক্তিদের জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। (মথি ৮:২৩-২৭; ১৪:১৫-২১; মার্ক ৬:৫৬; লূক ৭:১১-১৭) যিশুর অলৌকিক কাজগুলো প্রমাণ দিয়েছিল, যিহোবাই তাঁকে পাঠিয়েছিলেন। এ ছাড়া, এই কাজগুলো এটাও দেখিয়েছিল, আমাদের সমস্ত সমস্যা দূর করে দেওয়ার ক্ষমতা যিহোবার রয়েছে।
৩. যিশু যেভাবে জীবনযাপন করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
যিশু জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন। (পড়ুন, যোহন ৮:২৯.) অনেক লোক যিশুর বিরোধিতা করেছিল, তা সত্ত্বেও তিনি মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্তভাবে সেই কাজগুলো করে গিয়েছিলেন, যেগুলো তাঁর পিতা তাঁকে করতে বলেছিলেন। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছিলেন যে, অত্যন্ত কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও একজন মানুষ ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারে। এভাবে, যিশু আমাদের জন্য ‘এক আদর্শ রেখে গিয়েছেন, যেন আমরা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণ করি।’—১ পিতর ২:২১.
গভীরভাবে গবেষণা করুন
যিশু লোকদের সুসমাচার জানানোর জন্য যা-কিছু করেছিলেন এবং যেভাবে অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেখান থেকে আমরা যিশুর সম্বন্ধে কী শিখতে পারি, আসুন তা দেখি।
৪. যিশু লোকদের সুসমাচার জানিয়েছিলেন
যিশু ধুলোবালি ভরা রাস্তা দিয়ে শত শত কিলোমিটার হেঁটে লোকদের কাছে গিয়েছিলেন, যাতে তিনি যত বেশি সম্ভব লোকের কাছে সুসমাচার পৌঁছে দিতে পারেন। লূক ৮:১ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
যিশু কি শুধুমাত্র সেই ব্যক্তিদের সুসমাচার জানিয়েছিলেন, যারা তাঁর কাছে এসেছিল?
যিশু লোকদের সুসমাচার জানানোর জন্য কতটা পরিশ্রম করেছিলেন?
ঈশ্বর ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, মশীহ সুসমাচার প্রচার করবেন। যিশাইয় ৬১:১, ২ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
কীভাবে যিশু এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ করেছিলেন?
আপনার কি মনে হয়, বর্তমানে লোকদের এই সুসমাচার শোনার প্রয়োজন রয়েছে?
৫. যিশু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন
যিশু ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে সুসমাচার জানানোর পাশাপাশি কীভাবে জীবনে সফল হওয়া যায়, সেই বিষয়েও লোকদের কিছু মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন। এইরকম কিছু মূল্যবান পরামর্শ তিনি তাঁর একটা বিখ্যাত উপদেশে দিয়েছিলেন, যেটাকে পর্বতে দেওয়া উপদেশ বলা হয়। মথি ৬:১৪, ৩৪ এবং ৭:১২ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
এই শাস্ত্রপদগুলোতে যিশু কোন মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছেন?
আপনার কি মনে হয়, বর্তমানেও লোকেরা এই পরামর্শগুলো কাজে লাগিয়ে উপকার পাবে?
৬. যিশু অলৌকিক কাজ করেছিলেন
যিহোবার শক্তিতে যিশু অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। তাঁর একটা অলৌকিক কাজ সম্বন্ধে জানার জন্য মার্ক ৫:২৫-৩৪ পদ পড়ুন অথবা ভিডিওটা দেখুন। এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
সেই অসুস্থ মহিলা কী বিশ্বাস করতেন?
এই ঘটনার কোন বিষয়টা আপনার হৃদয় স্পর্শ করেছে?
যোহন ৫:৩৬ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
যিশু যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো তাঁর সম্বন্ধে কোন “সাক্ষ্য দেয়” অথবা কী প্রমাণ করে?
আপনি কি জানেন?
যিশুর বিষয়ে আমরা যা-কিছু জানি, সেগুলোর বেশিরভাগই বাইবেলের এই চারটে বইয়ে লেখা রয়েছে: মথি, মার্ক, লূক ও যোহন। এই চারটে বইকে সুসমাচারের বই বলা হয়। প্রত্যেক সুসমাচার বইয়ের লেখক যিশুর বিষয়ে আমাদের এমন কিছু তথ্য জানিয়েছেন, যেগুলো সুসমাচারের অন্য বইগুলোতে পাওয়া যায় না। আমরা যখন এই চারটে বই পড়ব, তখন যিশুর পুরো জীবন সম্বন্ধে ভালোভাবে জানতে পারব।
মথি
সুসমাচারের প্রথম বইটা লিখেছিলেন। তিনি এই বইয়ে যিশুর বিভিন্ন শিক্ষা, বিশেষভাবে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে যিশু যা শিখিয়েছিলেন, তা তুলে ধরেছেন।
মার্ক
সুসমাচারের সবচেয়ে ছোটো বইটা লিখেছিলেন। তিনি ঘটনাগুলো অল্প শব্দের মধ্যে সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। বইটা পড়ার সময় মনে হয় যেন চোখের সামনে ঘটনাগুলো তাড়াতাড়ি ঘটে যাচ্ছে।
লূক
আমাদের প্রার্থনা করার গুরুত্ব সম্বন্ধে জানিয়েছেন। আর তিনি বিশেষভাবে এই বিষয়টার উপর মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছেন যে, যিশু মহিলাদের সঙ্গে কীভাবে আচরণ করতেন।
যোহন
আমাদের যিশুর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করেছেন। কারণ তিনি যিশুর এমন অনেক কথাবার্তা সম্বন্ধে জানিয়েছেন, যেগুলো যিশু তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের এবং অন্য লোকদের সঙ্গে বলেছিলেন।
কেউ কেউ বলে থাকে: “যিশু শুধুমাত্র একজন ভালো ব্যক্তি ছাড়া আর কেউ নন।”
আপনার কী মনে হয়?
সারাংশ
যিশু লোকদের ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার জানিয়েছিলেন, অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন এবং জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে যিহোবার প্রতি বাধ্যতা দেখিয়েছিলেন।
পুনরালোচনা
যিশুর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ কী ছিল?
যিশু যে-অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, সেগুলো কী প্রমাণ করে?
যিশু জীবনে সফল হওয়ার বিষয়ে কোন মূল্যবান পরামর্শ দিয়েছিলেন?
আরও জানুন
যিশু কোন বিষয় নিয়ে সবচেয়ে বেশি কথা বলতেন?
“ঈশ্বরের রাজ্য—যিশুর কাছে এর অর্থ কী?” (প্রহরীদুর্গ, অক্টোবর ১, ২০১৪, ইংরেজি)
কেন আমরা বিশ্বাস করতে পারি, যিশু সত্যিই অলৌকিক কাজগুলো করেছিলেন, তা দেখুন।
“যিশুর অলৌকিক কাজগুলো—আপনি কী শিখতে পারেন?” (প্রহরীদুর্গ, জুলাই ১৫, ২০০৪)
একজন ব্যক্তি যখন জানতে পেরেছিলেন, যিশু নিজের জন্য নয় বরং সবসময় অন্যদের জন্য চিন্তা করতেন, তখন কীভাবে তার চিন্তাভাবনা পরিবর্তিত হয়েছিল, তা জানুন।
“আমি শুধু নিজের জন্য চিন্তা করতাম” (প্রহরীদুর্গ, অক্টোবর ১, ২০১৪, ইংরেজি)
যিশুর পরিচর্যায় কোন কোন বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল এবং সেগুলো কখন ঘটেছিল, তা জানার জন্য এই তালিকা দেখুন।
“যিশুর পার্থিব জীবনের প্রধান ঘটনাগুলো” (ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়নের জন্য এক সহায়িকা পুস্তিকার বিভাগ ৪)
a পাঠ ৩১ থেকে ৩৩-এ ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে আরও বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হবে।