“তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই”
“কেহ তাঁহার উপরে হস্তক্ষেপ করিল না, কারণ তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই।”—যোহন ৭:৩০.
১. কোন্ দুটো বিশেষ বিষয় মনে রেখে যীশু তাঁর কাজ করেছিলেন?
“মনুষ্যপুত্ত্র পরির্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন,” যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদের এ কথা বলেছিলেন। (মথি ২০:২৮) রোমীয় রাজ্যপাল পন্তীয় পীলাতকে তিনি বলেছিলেন: “আমি এই জন্যই জন্মগ্রহণ করিয়াছি ও এই জন্য জগতে আসিয়াছি, যেন সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিই।” (যোহন ১৮:৩৭) যীশু জানতেন যে কেন তাঁকে মারা যেতে হবে আর মারা যাওয়ার আগে তাঁকে কোন্ কোন্ কাজ করতে হবে। তিনি এও জানতেন যে কতখানি সময়ের মধ্যে তাঁকে তাঁর সব কাজ শেষ করতে হবে। পৃথিবীতে মশীহ বা অভিষিক্ত ব্যক্তি হিসেবে তিনি মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পাবেন। দানিয়েলের করা ভবিষ্যদ্বাণী দেখায় যে ৭০ সপ্তার শুরুতে অর্থাৎ সাধারণ কালের ২৯ সালে তিনি যখন যর্দন নদীতে বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন তখন তাঁর কাজ শুরু হয়েছিল। আর সত্তর সপ্তার মাঝখানে, সাধারণ কালের ৩৩ সালে যখন তিনি যাতনাদণ্ডে মারা যান তখন তাঁর কাজ শেষ হয়। (দানিয়েল ৯:২৪-২৭; মথি ৩:১৬, ১৭; ২০:১৭-১৯) তাই বলা যায় যে পৃথিবীতে থাকার সময়ে যীশু দুটো বিশেষ বিষয়কে মনে রেখে তাঁর কাজ করেছিলেন: এক তিনি কি জন্য এসেছেন আর দুই তাঁর হাতে কতখানি সময় আছে।
২. সুসমাচারের বইগুলো পড়লেই যীশুর বিষয়ে কী জানা যায় আর তিনি কীভাবে দেখিয়েছিলেন যে তাঁর সময়ের মূল্য তিনি বোঝেন?
২ সুসমাচারের বইগুলো পড়লেই জানা যায় যে যীশু একজন উদ্যোগী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি পুরো প্যালেষ্টাইন দেশে ঘুরে লোকেদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করেছিলেন আর অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন। যীশু যখন তাঁর প্রচার কাজ শুরু করেছিলেন তাঁর বিষয়ে বাইবেল বলে: “তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই।” যীশু নিজে বলেছিলেন: “আমার সময় এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই।” কিন্তু পৃথিবীতে তাঁর কাজ শেষ হয়ে আসার কাছাকাছি সময়ে তিনি বলেছিলেন: “সময় উপস্থিত।” (যোহন ৭:৮, ৩০; ১২:২৩) যীশু তাঁর সময়ের মূল্য বুঝতেন। আরেক কথায় বলা যায় যে তিনি জানতেন তাঁর কাজ শেষ করার জন্য তাঁর কাছে কতখানি সময় আছে আর তিনি কখন মারা যাবেন। তাই সময়কে তিনি যেভাবে দেখতেন তা তাঁর কথা ও কাজের মধ্যে দিয়ে ফুটে উঠত। আমরা যদি তাঁর এই দেখার ধরণকে বুঝতে পারি, তাহলে আমরা তাঁর ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে ও তিনি কীভাবে চিন্তা করতেন তা আরও ভাল করে বুঝতে পারব আর আমরা আরও নিখুঁতভাবে “তাঁরই মত চলতে’ পারব।—১ পিতর ২:২১, প্রেমের বাণী।
ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য অটল
৩, ৪. (ক) কান্না নগরের একটা বিয়ে বাড়িতে কী হয়েছিল? (খ) কেন যীশু তাঁর মা যা চেয়েছিলেন তা করতে চাননি ও এর থেকে আমরা কী শিখি?
৩ সাধারণ কালের ২৯ সাল। যীশু তাঁর নতুন শিষ্যদের সঙ্গে যাদের তিনি মাত্র অল্প কিছুদিনই হল বেছে নিয়েছেন, গালিলের কান্না নগরে একটা বিয়ে বাড়িতে এসেছেন। যীশুর মা মরিয়মও সেখানে এসেছেন। ভোজবাড়িতে দ্রাক্ষারস ফুরিয়ে গিয়েছে। তাঁর মা চান যে যীশু কিছু করুক আর সেইজন্য তিনি তাঁকে বলেন: “উহাদের দ্রাক্ষারস নাই।” কিন্তু উত্তরে যীশু বলেন: “হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি? আমার সময় এখনও উপস্থিত হয় নাই।”—যোহন ১:৩৫-৫১; ২:১-৪.
৪ “হে নারি, আমার সঙ্গে তোমার বিষয় কি?” যীশুর এইভাবে উত্তর দেওয়া দেখায় যে মরিয়মের কথা শোনায় বা মরিয়মের নির্দেশ মানায় তাঁর আপত্তি ছিল। কিন্তু কেন? যীশুর বয়স এখন ৩০ বছর আর মাত্র কয়েক সপ্তা আগেই তিনি বাপ্তিস্ম নিয়েছেন। ঈশ্বর তাঁকে পবিত্র আত্মা দিয়ে অভিষিক্ত করেছেন আর যোহন বাপ্তাইজক তাঁর বিষয়ে বলেছেন: “ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” (যোহন ১:২৯-৩৪; লূক ৩:২১-২৩) তাই বোঝা যায় যে যীশু এখন পৃথিবীতে যে কাজ করবেন তাতে নির্দেশনা দেওয়ার অধিকার শুধু যিহোবা ঈশ্বরেরই আছে যিনি তাঁকে পাঠিয়েছেন। (১ করিন্থীয় ১১:৩) যীশু পৃথিবীতে কী কাজ করবেন তা বলার কোন অধিকার এখন কারোরই নেই এমনকি তাঁর মায়েরও নয়। মরিয়মকে যীশু যে উত্তর দিয়েছিলেন তা কত স্পষ্টভাবেই না দেখায় যে শুধুমাত্র যিহোবার ইচ্ছা পালন করার জন্য তিনি কতখানি অটল! তাই আসুন আমরাও ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত “কর্ত্তব্য” করার জন্য তাঁর মতোই অটল হই।—উপদেশক ১২:১৩.
৫. কান্না নগরে যীশু কোন্ অলৌকিক কাজ করেছিলেন আর শিষ্যদের উপর এটা কেমন ছাপ ফেলেছিল?
৫ যীশুর উত্তর শুনে মরিয়মও বুঝতে পারেন যে তিনি কী বলতে চাইছেন। তাই মরিয়ম তার পুত্রকে আর কিছু না বলে পরিচারকদের বলেন: “ইনি তোমাদিগকে যাহা কিছু বলেন, তাহাই কর।” তখন যীশু পরিচারকদের জালাগুলোতে কানায় কানায় জল ভরতে বলেন। এরপর তিনি জলকে উত্তম দ্রাক্ষারস বানান। কান্না নগরে জলকে দ্রাক্ষারস বানিয়ে যীশু প্রথমবার অলৌকিক কাজ করেন ও দেখান যে তাঁর উপর ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা আছে। যীশুর এই অলৌকিক কাজ দেখে তাঁর নতুন শিষ্যদের বিশ্বাস মজবুত হয়।—যোহন ২:৫-১১.
যিহোবার গৃহের জন্য উদ্যোগ
৬. যিরূশালেম মন্দিরে যীশু যা দেখেছিলেন তাতে তিনি কেন খুবই রেগে গিয়েছিলেন ও তিনি কী করেছিলেন?
৬ এখন সা.কা. ৩০ সালের বসন্ত কাল। যীশু ও তাঁর শিষ্যরা নিস্তারপর্ব পালন করার জন্য যিরূশালেমে যাচ্ছেন। সেখানে তারা তাদের গুরুকে এমন ব্যবহার করতে দেখেন যা তারা আগে কখনও দেখেননি। লোভী যিহুদি পোদ্দাররা মন্দিরের ভিতরে বসে পশুপাখি বিক্রি করছে। আর তারা বিশ্বস্ত যিহুদিদের কাছ থেকে অন্যায়ভাবে আকাশছোঁয়া দাম নিচ্ছিল যারা বলি দেওয়ার জন্য সেগুলো কিনছিল। এসব দেখে যীশু খুবই রেগে যান। তিনি এক গাছা কশা তৈরি করে পোদ্দারদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেন। পোদ্দারদের মুদ্রা ফেলে দিয়ে তিনি তাদের মেজ উল্টে দেন। “এ স্থান হইতে এ সকল লইয়া যাও,” যারা পায়রা বিক্রি করছিল তাদের তিনি আদেশ দেন। শিষ্যরা যখন যীশুকে এরকম ব্যবহার করতে দেখেন তখন তাদের ঈশ্বরের পুত্রের বিষয়ে করা সেই ভবিষ্যদ্বাণীর কথা মনে পড়ে যায় যেখানে বলা ছিল “তোমার গৃহনিমিত্তক উদ্যোগ আমাকে গ্রাস করিবে।” (যোহন ২:১৩-১৭; গীতসংহিতা ৬৯:৯) এইরকমই আজকে আমাদেরও ঈশ্বরের সেবায় উদ্যোগী হওয়া উচিত যাতে আমরা জগতের হাওয়ায় গা ভাসিয়ে না দিই।
৭. (ক) নীকদীম কেন যীশুর কাছে আসেন? (খ) যীশু এক শমরীয় স্ত্রীলোকের কাছে প্রচার করেন, এই ঘটনা থেকে আমরা কী শিখি?
৭ যিরূশালেমে যীশু অনেক অলৌলিক কাজ করছেন আর অনেকে তাঁর উপর বিশ্বাস করছে। যীশুর কাজ মহাসভা বা যিহুদি উচ্চ বিচারালয়ের সদস্য নীকদীমের উপর এতখানিই ছাপ ফেলেছিল যে তিনি তাঁর কাছ থেকে আরও শেখার জন্য রাতের অন্ধকারে লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁর কাছে আসেন। যীশু ও তাঁর শিষ্যরা প্রায় আট মাস “যিহূদিয়া দেশে” আছেন, প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ করছেন। কিন্তু যোহন বাপ্তাইজককে জেলে দেওয়ার পর তারা যিহূদিয়া থেকে গালীলে চলে যান। তারা যখন শমরিয়ার ওপর দিয়ে যাচ্ছিলেন, যীশু এক শমরীয় স্ত্রীলোককে কুয়োর কাছে দেখতে পেয়ে তার কাছে প্রচার করেন। ফলে সেই স্ত্রী ও অন্য অনেক শমরীয় যীশুর উপর বিশ্বাস করে। তাই আসুন এই ঘটনা থেকে আমরা শিখি যে যেখানেই লোকেদের আমরা দেখতে পাই না কেন আমাদের তাদের কাছে ঈশ্বরের রাজ্য প্রচার করা উচিত।—যোহন ২:২৩; ৩:১-২২; ৪:১-৪২; মার্ক ১:১৪.
গালীলে বড় আকারে প্রচার
৮. গালীলে যীশু কোন্ কাজ করেন?
৮ মারা যাওয়ার “সময়” আসার আগেই যীশুকে তাঁর পিতা ঈশ্বরের সেবায় অনেক কিছু করতে হবে। যিহূদিয়া ও যিরূশালেমে তিনি যতখানি প্রচার করেছিলেন গালীলে তিনি তার চেয়ে অনেক বেশি প্রচার করেন। যীশু “সমুদয় গালীলে ভ্রমণ করিতে লাগিলেন; তিনি লোকদের সমাজ-গৃহে সমাজ-গৃহে উপদেশ দিলেন, রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করিলেন, এবং লোকদের সর্ব্বপ্রকার রোগ ও সর্ব্বপ্রকার পীড়া ভাল করিলেন।” (মথি ৪:২৩) যীশুর এই কথাগুলো সারা গালীলে ছড়িয়ে পড়ে: “‘মন ফিরাও, কেননা স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল’।” (মথি ৪:১৭) কিছু মাস পরে যোহন বাপ্তাইজকের দুজন শিষ্য যখন তাঁর কাজ সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করে তখন উত্তরে তিনি তাদের বলেন: “তোমরা যাও, যাহা দেখিলে ও শুনিলে, তাহার সংবাদ যোহনকে দেও; অন্ধেরা দেখিতে পাইতেছে, খঞ্জেরা চলিতেছে, কুষ্ঠীরা শুচীকৃত হইতেছে, বধিরেরা শুনিতেছে, মৃতেরা উত্থপিত হইতেছে, দরিদ্রদের নিকটে সুসমাচার প্রচারিত হইতেছে; আর ধন্য সেই ব্যক্তি, যে আমাতে বিঘ্নের কারণ না পায়।”—লূক ৭:২২, ২৩.
৯. লোকেরা কেন যীশু খ্রীষ্টের কাছে ভিড় করে আসত আর এর থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৯ ‘যীশুর কীর্ত্তি চারিদিকের সমুদয় অঞ্চলে ব্যাপিল।’ গালীল, দিকাপলি, যিরূশালেম, যিহূদিয়া ও যর্দনের পরপার থেকে অনেক অনেক লোকেরা ভিড় করে তাঁর কাছে আসতে থাকে। (লূক ৪:১৪, ১৫; মথি ৪:২৪, ২৫) তারা যে শুধুমাত্র সুস্থ হওয়ার জন্যেই যীশুর কাছে আসছিল তা নয়, যীশুর শিক্ষাও তাদের ভাল লেগেছিল। তাঁর কথা তাদের হৃদয় ছুঁয়েছিল, তাদের উৎসাহ দিয়েছিল। (মথি ৫:১–৭:২৭) যীশুর কথা বলার ধরণ তাদের মন জয় করেছিল। (লূক ৪:২২) তিনি শাস্ত্র থেকে ক্ষমতাপন্ন ব্যক্তির মতো কথা বলতেন বলে লোকেরা ‘তাঁহার উপদেশে চমৎকার জ্ঞান করিয়াছিল।’ (মথি ৭:২৮, ২৯; লূক ৪:৩২) এইরকম একজন ব্যক্তির কাছে কেই বা আসতে চাইবে না? তাই আসুন আমরাও লোকেদের এমনভাবে শেখানোর চেষ্টা করি যাতে যে লোকেরা সত্য খুঁজছে তারা সহজেই সত্যে আসেন।
১০. কেন নাসরতের লোকেরা যীশুকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল ও কেন তারা তা করতে পারেনি?
১০ কিন্তু একথা ঠিক যে যারা যীশুর কথা শুনত তারা সবাই যীশুর শিষ্য হতো না। যেমন নাসরতের কথাই ভাবুন। তাঁর প্রচার কাজের প্রথমদিকে যখন তিনি সেখানকার সমাজ-গৃহে প্রচার করছিলেন লোকেরা তাঁকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। যদিও লোকেরা তাঁর ‘মধুর বাক্যে’ আশ্চর্য বোধ করত, তবুও তারা তাঁর কাছ থেকে অলৌকিক কাজ দেখতে চেয়েছিল। যেহেতু এই লোকেরা স্বার্থপর ছিল ও তাদের বিশ্বাসের অভাব ছিল তাই যীশু তাদের সামনে কোন অলৌকিক কাজ করেননি। বরং তিনি তাদের কপটতাকে সবার সামনে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। এতে এই লোকেরা এতই রেগে গিয়েছিল যে তাঁকে নগরের বাইরে পাহাড়ের চূড়া পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল যেন তারা তাঁকে নিচে ফেলে দিতে পারে। কিন্তু তিনি তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে সেখান থেকে চলে গিয়েছিলেন। কারণ তখনও পর্যন্ত তাঁর মারা যাওয়ার “সময়” আসেনি।—লূক ৪:১৬-৩০.
১১. (ক) কেন কিছু ধর্মগুরুরা যীশুর কাছে আসত? (খ) কেন তারা যীশুর উপর বিশ্রামবার ভাঙার দোষ চাপায়?
১১ যীশুর কথা শোনার জন্য প্রায়ই অধ্যাপক, ফরীশী ও সদ্দূকীদের মতো ধর্মগুরুরা ও আরও অন্যেরা আসত। তাদের অনেকেই যীশুর কাছ থেকে শুনতে ও শিখতে নয় বরং তাঁর দোষ ধরার জন্য ও তাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্য আসত। (মথি ১২:৩৮; ১৬:১; লূক ৫:১৭; ৬:১, ২) যেমন সা.কা. ৩১ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমে যীশু বিশ্রামবারে একজন রোগীকে সুস্থ করেছিলেন যে প্রায় ৩৮ বছর ধরে রোগে ভুগছিল। ধর্মীয় নেতারা যীশুর উপর বিশ্রামবার ভাঙার দোষ চাপায়। কিন্তু তিনি উত্তর দেন: “আমার পিতা এখন পর্য্যন্ত কার্য্য করিতেছেন, আমিও করিতেছি।” এবার যিহুদিরা তাঁর উপর ঈশ্বর নিন্দার দোষ দেয় কারণ তিনি ঈশ্বরকে পিতা বলে ডেকে নিজেকে ঈশ্বরের পুত্র বলেন। তারা যীশুকে মেরে ফেলার সুযোগ খুঁজতে থাকে। কিন্তু তিনি ও তাঁর শিষ্যরা যিরূশালেম ছেড়ে গালীলে চলে যান। তাই আমরাও যখন প্রচার ও শিষ্য তৈরির কাজ করি তখন যারা আমাদের বিরোধিতা করে, আমরা অযথা তাদের সঙ্গে তর্ক করব না। যীশুর মতো সেখান থেকে চলে আসাই আমাদের জন্য বুদ্ধির কাজ হবে।—যোহন ৫:১-১৮; ৬:১.
১২. গালীলে যীশু কত বড় আকারে প্রচার করেছিলেন?
১২ এর পরের দেড় বছরে বেশিরভাগ সময়ই যীশু গালীলে প্রচার করেন। শুধুমাত্র তিনবার পর্বের জন্য তিনি যিরূশালেমে আসেন। পুরো গালীলে তিনি তিনবার প্রচার করেন। প্রথমে তাঁর চারজন শিষ্যকে নিয়ে, তারপর ১২ জন প্রেরিতকে নিয়ে তিনি সেখানে প্রচার করেন আর তারপর তিনি তাঁর প্রেরিতদের পাঠান যাদের তিনি প্রচার করতে শিখিয়েছিলেন। গালীলে কত বড় আকারেই না প্রচার করা হয়েছিল!—মথি ৪:১৮-২৫; লূক ৮:১-৩; ৯:১-৬.
যিহূদিয়া ও পিরিয়ায় সাহসের সঙ্গে প্রচার করা
১৩, ১৪. (ক) কোন্ সময়ে যিহুদিরা যীশুকে ধরার সুযোগ খুঁজতে থাকে? (খ) কেন পদাতিকেরা যীশুকে ধরতে পারেনি?
১৩ এখন সা.কা. ৩২ সালের শরৎকাল আর যীশুর “সময়” এখনও আসেনি। কুটীরবাস পর্ব্ব এগিয়ে আসছে। যীশুর সৎ ভাই যাকোব তাঁকে বলেন: “এখান হইতে প্রস্থান কর, যিহূদিয়াতে চলিয়া যাও।” তারা চেয়েছিল যে যারা যিরূশালেমে পর্বের জন্য এসেছে তাদের কাছে যেন যীশু অলৌকিক কাজ দেখান। যীশু জানতেন যে সেখানে গেলে তাঁর বিপদ হতে পারে তাই তিনি তাঁর ভাইকে বলেন: “আমি এখনও এই পর্ব্বে যাইতেছি না, কেননা আমার সময় এখনও সম্পূর্ণ হয় নাই।”—যোহন ৭:১-৮.
১৪ আরও কিছু সময় গালীলে থেকে যীশু যিরূশালেমে আসেন “প্রকাশ্যরূপে নয়, কিন্তু এক প্রকার গোপনে।” যিহুদিরা নিশ্চয়ই পর্বের সময় তাঁকে খুঁজছিল আর জিজ্ঞেস করছিল: “সেই ব্যক্তি কোথায়?” পর্বের মাঝামাঝি সময়ে যীশু মন্দিরে যান ও সাহসের সঙ্গে লোকেদের শিক্ষা দিতে শুরু করেন। ধর্মীয় নেতারা তাঁকে ধরার সুযোগ খুঁজতে থাকে। কারণ তারা তাঁকে কারাগারে দিতে চায় বা মেরে ফেলতে চায়। কিন্তু তারা তা করতে পারে না কারণ “তখনও তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই।” এখন অনেকেই যীশুতে বিশ্বাস করে। আর ফরীশীরা যীশুকে ধরার জন্য যে পদাতিকদের পাঠিয়েছিল তারাও খালি হাতে ফিরে এসে বলেছিল “ও ব্যক্তি যেরূপ কথা বলেন, কোন মানুষে কখনও এরূপ কথা কহে নাই।”—যোহন ৭:৯-১৪, ৩০-৪৬.
১৫. যিহুদিরা কেন যীশুকে পাথর ছোঁড়ে ও এরপর তিনি কোথায় প্রচার শুরু করেন?
১৫ পর্বের সময় যীশু যখন মন্দিরে তাঁর পিতার বিষয়ে শিক্ষা দিতে থাকেন, তখনও যিহুদিরা তাঁর বিরোধিতা করতে থাকে। পর্বের শেষ দিনে যীশু যখন বলেন যে মানুষ হয়ে পৃথিবীতে আসার আগেও তিনি ছিলেন তখন সে কথা শুনে যিহুদিরা তাঁকে পাথর ছোঁড়ে। কিন্তু তিনি লুকিয়ে পড়ে তাদের হাত থেকে বেঁচে যান। (যোহন ৮:১২-৫৯) এখন যিরূশালেমের বাইরে যীশু যিহূদিয়ায় প্রচার শুরু করেন। তিনি তাঁর ৭০ জন শিষ্যকে প্রচার করতে শিখিয়ে, দুজন দুজন করে তাদের যিহূদিয়ায় পাঠান। যিহূদিয়ার যেসব জায়গা ও শহরে তিনি নিজে যাবেন সেখানে আগে থেকেই তাঁর শিষ্যরা যান।—লূক ১০:১-১৪.
১৬. মন্দির প্রতিষ্ঠার পর্বের সময় যীশু কোন্ বিপদ থেকে নিজেকে বাঁচান ও পরে তিনি কোন্ কাজের জন্য বেরিয়ে পড়েন?
১৬ সাধারণ কাল ৩২ সালের শীতকাল আর যীশুর “সময়” এগিয়ে আসছে। তিনি মন্দির প্রতিষ্ঠার পর্বের জন্য যিরূশালেমে আসেন। যিহুদিরা তাঁকে মেরে ফেলার জন্য এখনও সুযোগ খুঁজে বেড়াচ্ছে। যীশু যখন মন্দিরের বারান্দায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন এমন সময় তারা এসে তাঁকে ঘিরে ধরে ও তাঁর উপর ঈশ্বরনিন্দার দোষ দিয়ে তাঁকে মারার জন্য পাথর তোলে। কিন্তু আগের মতো এবারও যীশু তাদের হাত থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে অন্য জায়গায় চলে যান। এরপর শীঘ্রিই তিনি আবার নগরে নগরে ও গ্রামে গ্রামে প্রচার করতে বেরিয়ে পড়েন আর এবার যিহূদিয়া থেকে যর্দন নদী পার হয়ে তিনি পিরিয়া জেলায় যান। সেখানে অনেকে তাঁর উপর বিশ্বাস করে। কিন্তু তখন তাঁর প্রিয় বন্ধু লাসারের বিষয়ে এক জরুরি খবর পাওয়ায় তাঁকে যিহূদিয়ায় ফিরে যেতে হয়।—লূক ১৩:৩৩; যোহন ১০:২০-৪২.
১৭. (ক) পিরিয়া জেলায় যীশু কোন্ জরুরি খবর পান? (খ) কী দেখায় যে তাঁর সময় ও তিনি কী করতে চলেছেন সে বিষয়ে যীশু জানেন?
১৭ এই জরুরি খবর লাসারের বোন মার্থা ও মরিয়ম পাঠিয়েছিল যারা যিহূদিয়ার বৈথনিয়ায় থাকত। “প্রভু, দেখুন, আপনি যাহাকে ভাল বাসেন তাহার পীড়া হইয়াছে,” যে ব্যক্তি খবর নিয়ে এসেছিল সে বলে। যীশু শুনে বলেন, “এ পীড়া মৃত্যুর জন্য হয় নাই; কিন্তু ঈশ্বরের গৌরবের নিমিত্ত, যেন ঈশ্বরের পুত্ত্র ইহা দ্বারা গৌরবান্বিত হন।” আর ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করার জন্য যীশু ইচ্ছা করেই আরও দুদিন পিরিয়ায় থাকেন। তারপর তিনি তাঁর শিষ্যদের বলেন “আইস, আমরা আবার যিহূদিয়াতে যাই।” শিষ্যেরা অবাক হয়ে তাঁকে বলেন, “রব্বি, এই ত যিহূদীরা আপনাকে পাথর মরিবার চেষ্টা করিতেছিল, তবু আপনি আবার সেখানে যাইতেছেন?” কিন্তু যীশু জানেন যে দিনের আলো ফুরিয়ে আসছে অর্থাৎ পৃথিবীতে তাঁর সেবার জন্য ঈশ্বর যে সময় ঠিক করেছেন তা ফুরিয়ে আসছে। তিনি জানেন যে তাকে ঠিক কী করতে হবে ও কেন।—যোহন ১১:১-১০.
যে অলৌকিক কাজ কেউ উপেক্ষা করতে পারে না
১৮. যীশু যখন বৈথনিয়াতে পৌঁছান তখন সেখানকার অবস্থা কেমন ছিল আর তিনি পৌঁছানোর পর কী ঘটে?
১৮ বৈথনিয়াতে পৌঁছানো মাত্রই সবচেয়ে প্রথমে মার্থা দৌড়ে তাঁর কাছে আসে ও বলে: “প্রভু, আপনি যদি এখানে থাকিতেন, আমার ভাই মরিত না।” মরিয়ম ও যারা তাদের ঘরে এসেছিল তারাও তাই বলে। তারা সবাই কাঁদছে। “তাহাকে কোথায় রাখিয়াছ?” যীশু জিজ্ঞেস করেন। তারা বলে: “প্রভু, আসিয়া দেখুন।” কবরের কাছে পৌঁছে তারা দেখে যে একটা পাথর দিয়ে কবরের মুখ ঢাকা আছে। আত্মায় উত্তেজিত হয়ে যীশু বলেন: “তোমরা পাথরখান সরাইয়া ফেল।” যীশু কী বলতে চাইছেন তা না বুঝে মার্থা বলে: “প্রভু, উহাতে দুর্গন্ধ হইয়াছে, কেননা আজ চারি দিন।” কিন্তু যীশু তাকে বলেন: “আমি কি তোমাকে বলি নাই যে, যদি বিশ্বাস কর, তবে ঈশ্বরের মহিমা দেখিতে পাইবে?”—যোহন ১১:১৭-৪০.
১৯. লাসারকে বাঁচানোর আগে যীশু কেন সবার সামনে জোরে জোরে প্রার্থনা করেন?
১৯ লাসারের কবরের উপর থেকে পাথর সরানো হলে, লাসারকে বাঁচানোর আগে যীশু সবার সামনে জোরে জোরে প্রার্থনা করেন যাতে লোকেরা বুঝতে পারে যে এখন তিনি যা করতে যাচ্ছেন তা ঈশ্বরের শক্তিতে করবেন। তারপর তিনি খুব জোরে ডেকে বলেন: “লাসার, বাহিরে আইস।” হাত পা বাঁধা ও মুখে কাপড় জড়ানো অবস্থায় লাসার করব থেকে বেরিয়ে আসে। “ইহাকে খুলিয়া দেও, ও যাইতে দেও,” যীশু বলেন।—যোহন ১১:৪১-৪৪.
২০. যীশুর এই অলৌকিক কাজ যারা দেখেছিল তারা কী করেছিল?
২০ এই অলৌকিক কাজ দেখে অনেক যিহুদিরা যারা মার্থা ও মরিয়মকে সান্ত্বনা দিতে এসেছিল তারা যীশুর উপর বিশ্বাস করেছিল। অনেকে ফরীশীদের কাছে গিয়ে এই ঘটনার কথা জানিয়েছিল। তারা একথা শুনে কী করেছিল? সঙ্গে সঙ্গে তারা ও মহাযাজক মিলে মহাসভায় এক সভা ডেকেছিল। তারা চিন্তিত হয়ে বলেছিল, “আমরা কি করি? এ ব্যক্তি ত অনেক চিহ্ন-কার্য্য করিতেছে। আমরা যদি ইহাকে এইরূপ চলিতে দিই, তবে সকলে ইহাতে বিশ্বাস করিবে; আর রোমীয়েরা আসিয়া আমাদের স্থান ও জাতি উভয়ই কাড়িয়া লইবে।” কিন্তু মহাযাজক কায়াফা তাদের বলেন: ‘তোমরা বিবেচনা কর না যে, তোমাদের পক্ষে এটী ভাল, যেন প্রজাগণের জন্য এক ব্যক্তি মরে, আর সমস্ত জাতি বিনষ্ট না হয়।’ তাই সেইদিন থেকে তারা যীশুকে মেরে ফেলার জন্য মন্ত্রণা করতে থাকে।—যোহন ১১:৪৫-৫৩.
২১. লাসারকে আবার বাঁচিয়ে তোলা কীভাবে যীশুর সময়কে বদলে দিয়েছিল?
২১ যীশু বৈথনিয়ায় দেরি করে এসেছিলেন যেন তিনি সেখানে অলৌকিক কাজ করতে পারেন আর যে অলৌকিক কাজের কথা কেউ উপেক্ষা করতে পারে না। ঈশ্বরের কাছ থেকে শক্তি পেয়ে যীশু চারদিনের মরা ব্যক্তিকে আবার বাঁচিয়ে তুলেছিলেন। এমনকি মহাসভাকেও একথা স্বীকার করে নিতে হয়েছিল আর সেইজন্যই সেই ব্যক্তি যিনি এই অলৌকিক কাজ করেছিলেন তাঁকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার কথা ঠিক করতে হয়েছিল! এতদিন পর্যন্ত “তাঁহার সময় উপস্থিত হয় নাই” কিন্তু এই অলৌকিক কাজের ফলে এখন তাঁর “সময় উপস্থিত।” সত্যিই এই অলৌকিক কাজ পৃথিবীতে যীশুর জীবনের এক গুরুতর মোড় ছিল যা তাঁর সময়কে বদলে দিয়েছিল।
আপনি কী উত্তর দেবেন?
• কীভাবে যীশু দেখান যে ঈশ্বর তাঁকে যে কাজ দিয়েছিলেন তা তিনি জানতেন?
• কেন যীশু তাঁর মা যা চেয়েছিলেন তা করতে চাননি?
• বিরোধীদের সঙ্গে যীশু বেশিরভাগ সময়ই যেমন ব্যবহার করতেন তার থেকে আমরা কী শিখি?
• কেন যীশু লাসারের অসুখের কথা শুনে সঙ্গে সঙ্গে সেখানে যাননি?
[১২ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যীশু তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে ঈশ্বরের দেওয়া কাজ করেছিলেন