পাঠ ২৯
মারা যাওয়ার পর আমাদের কী হয়?
আমাদের কোনো প্রিয়জন যখন মারা যায়, তখন সেই কষ্ট সহ্য করা অনেক কঠিন হয়ে পড়ে। আপনিও কি কখনো এইরকম কষ্টের মধ্যে দিয়ে গিয়েছেন? তা হলে, আপনার মনে হয়তো এই ধরনের প্রশ্ন এসেছে যে, ‘একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার কী হয়? আমাদের যে-প্রিয়জনেরা মারা গিয়েছে, তারা কি আবারও বেঁচে উঠবে? আমরা কি আবারও তাদের দেখতে পাব?’ এই পাঠে এবং পরের পাঠে আমরা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর বাইবেল থেকে জানতে পারব আর এগুলো জেনে আপনি অবশ্যই সান্ত্বনা লাভ করবেন।
১. মারা যাওয়ার পর আমাদের কী হয়?
যিশু মৃত্যুকে গভীর ঘুমের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন। কেন? কারণ একজন ব্যক্তি যখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থাকে, তখন তার চারপাশে কী ঘটছে, সে কিছুই বুঝতে পারে না। ঠিক একইভাবে, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সে কিছুই জানতে অথবা বুঝতে পারে না আর তার কোনো কষ্টও হয় না। তাই, বাইবেল বলে: “মৃতেরা কিছুই জানে না।”—পড়ুন, উপদেশক ৯:৫.
২. মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানা কীভাবে আমাদের উপকৃত করে?
অনেক লোক মৃত্যুকে ভয় পায়। তারা এটা ভেবেও ভয় পায় যে, যারা মারা গিয়েছে, তারা এসে তাদের ক্ষতি করতে পারে। কিন্তু, বাইবেল মৃত্যু সম্বন্ধে আমাদের যা জানায়, তা জেনে আমরা আমাদের ভয় কাটিয়ে উঠতে পারি এবং সান্ত্বনা লাভ করতে পারি। যিশু বলেছিলেন: “সত্য তোমাদের মুক্ত করবে।” (যোহন ৮:৩২) অনেক ধর্ম শিক্ষা দেয়, মানুষের মধ্যে আত্মা রয়েছে, যা মারা যাওয়ার পরও বেঁচে থাকে। তবে, বাইবেল কখনোই এই শিক্ষা দেয় না। তাহলে চিন্তা করুন, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর কীভাবে কষ্ট পেতে পারে। আরও একটা বিষয় হল, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সে আর কিছুই জানে না। তাই, সে আমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারে না। তাহলে, তাদের খুশি করার জন্য তাদের খাবার দিয়ে, তাদের উপাসনা করে এবং তাদের জন্য প্রার্থনা করে কি কোনো লাভ হবে?
কিছু লোক বলে থাকে যে, তারা মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলতে পারে। কিন্তু, কীভাবে তা সম্ভব? আমরা যেমন দেখলাম, “মৃতেরা কিছুই জানে না।” তাহলে চিন্তা করুন, তারা যদি তাদের মৃত প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা না বলতে পারে, তা হলে তারা কাদের সঙ্গে কথা বলছে? তারা মন্দ স্বর্গদূতদের সঙ্গে কথা বলছে না তো? এটা সম্ভব, কারণ মন্দ স্বর্গদূতেরা লোকদের ভ্রান্ত করার জন্য মৃত ব্যক্তিদের কণ্ঠস্বরে কথা বলে। তাই, মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানার ফলে আমরা মন্দ স্বর্গদূতদের হাত থেকে রক্ষা পেতে পারি। যিহোবা আমাদের সাবধান করেন, যেন আমরা মৃত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা না করি, কারণ তিনি জানেন যে, মন্দ স্বর্গদূতেরা আমাদের ক্ষতি করতে পারে।—পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১২.
গভীরভাবে গবেষণা করুন
বাইবেল মৃত্যু সম্বন্ধে আর কী জানায়? ঈশ্বর যদি লোকদের ভালোবাসেন, তা হলে লোকেরা মারা যাওয়ার পর তিনি কি তাদের কষ্ট দিতে পারেন? আসুন তা জানি।
৩. মৃত ব্যক্তিরা কোন অবস্থায় রয়েছে?
মারা যাওয়ার পর একজন ব্যক্তির কী হয়, তা নিয়ে সারা পৃথিবীতে লোকদের মধ্যে আলাদা আলাদা ধারণা রয়েছে। কিন্তু, কীভাবে এই সমস্ত ধারণা সত্যি হতে পারে?
আপনি যে-এলাকায় থাকেন, সেখানকার লোকদের মধ্যে সাধারণত কোন কোন ধারণা রয়েছে?
বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে, তা জানার জন্য ভিডিওটা দেখুন।
উপদেশক ৩:২০ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
এই শাস্ত্রপদ অনুযায়ী, মারা যাওয়ার পর একজন ব্যক্তির কী হয়?
এই শাস্ত্রপদ কি এটা জানায় যে, দেহ মারা যায় কিন্তু আত্মা বেঁচে থাকে?
বাইবেল আমাদের জানায়, যিশুর একজন প্রিয় বন্ধু লাসার মারা গিয়েছিলেন। যোহন ১১:১১-১৪ পদ পড়ুন এবং লক্ষ করুন লাসার মারা যাওয়ার পর কোন অবস্থায় ছিলেন, সেই বিষয়ে যিশু কী বলেছিলেন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
মৃত্যুকে যিশু কীসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন?
মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে এখান থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?
মৃতদের অবস্থা সম্বন্ধে বাইবেল যা জানায়, তা কি আপনার সঠিক বলে মনে হয়?
৪. মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানা আমাদের উপকৃত করে
মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানা আমাদের মৃত ব্যক্তিদের ভয় না পেতে সাহায্য করে। উপদেশক ৯:১০ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
মৃত ব্যক্তিরা কি আমাদের ক্ষতি করতে পারে?
অনেক লোক বিশ্বাস করে যে, আমাদের উচিত মৃত ব্যক্তিদের খুশি করা এবং তাদের উপাসনা করা। আর তাই তারা বিভিন্ন রীতিনীতি পালন করে থাকে। কিন্তু, বাইবেল আমাদের এই সমস্ত কিছু থেকে মুক্ত করে। যিশাইয় ৮:১৯ এবং প্রকাশিত বাক্য ৪:১১ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
কেউ যখন মৃত ব্যক্তিদের উপাসনা করে কিংবা তাদের কাছ থেকে সাহায্য নেয়, তখন যিহোবার কেমন লাগে বলে আপনার মনে হয়?
৫. মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জেনে আমরা সান্ত্বনা লাভ করি
অনেক ব্যক্তিকে শেখানো হয়েছে, তারা খারাপ কাজ করলে মারা যাওয়ার পর তাদের কষ্ট দেওয়া হবে। কিন্তু, বাইবেল এই বিষয়ে আমাদের যা বলে, তা জেনে আমরা কতই-না সান্ত্বনা লাভ করি! এটি আমাদের জানায় যে, কোনো ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে কষ্ট দেওয়া হয় না, এমনকি কেউ যদি জীবনে অনেক খারাপ কাজও করে থাকে। রোমীয় ৬:৭ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন:
বাইবেল আমাদের জানায়, মারা যাওয়ার পর একজন ব্যক্তি তার পাপ থেকে মুক্তি পায়। তা হলে আপনার কি মনে হয় যে, একজন ব্যক্তি পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার পরও তাকে কোথাও কষ্ট দেওয়া হচ্ছে?
যিহোবা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারব যে, তিনি মৃত ব্যক্তিদের কষ্ট দেন না, এমনকি তিনি তা ঘটতেও দেন না। দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:৪ এবং ১ যোহন ৪:৮ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
যিহোবার কোন কোন গুণ সম্বন্ধে এই শাস্ত্রপদগুলোতে বলা হয়েছে? ঈশ্বরের মধ্যে যদি এই গুণগুলো থাকে, তা হলে তিনি কি চাইবেন যে, একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তাকে কোনো জায়গায় কষ্ট দেওয়া হোক?
বাইবেল থেকে মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জেনে আপনি কি সান্ত্বনা লাভ করেছেন? কেন?
কেউ কেউ বলে থাকে: “মানুষ মারা যায়, কিন্তু তাদের আত্মা বেঁচে থাকে।”
এই বিষয়ে আপনি তাদের কোন শাস্ত্রপদটা দেখাতে পারেন?
সারাংশ
মারা যাওয়ার পর একজন ব্যক্তির জীবন শেষ হয়ে যায়। মৃত ব্যক্তিরা কোথাও কষ্ট পাচ্ছে না আর তারা জীবিত লোকদের কোনো ক্ষতিও করতে পারে না।
পুনরালোচনা
মারা যাওয়ার পর আমাদের কী হয়?
মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জানা কীভাবে আমাদের উপকৃত করে?
মৃত্যু সম্বন্ধে সত্য জেনে কীভাবে আমরা সান্ত্বনা লাভ করি?
আরও জানুন
মানুষের মধ্যে কি আত্মা বলে কিছু রয়েছে, যা মারা যাওয়ার পরও বেঁচে থাকে? বাইবেল এই বিষয়ে কী বলে, আসুন তা জানি।
“আত্মা বলে কি এমন কিছু রয়েছে যা একজন ব্যক্তি মারা যাওয়ার পরও বেঁচে থাকে?” (অনলাইন প্রবন্ধ)
দুষ্ট ব্যক্তিদের কষ্ট দেওয়ার জন্য ঈশ্বর কি তাদের নরকে পাঠান? আসুন তা জানি।
আমাদের কি মৃত ব্যক্তিদের ভয় পাওয়া উচিত?
মৃত ব্যক্তিদের আত্মা কি আমাদের সাহায্য করতে কিংবা ক্ষতি করতে পারে? আত্মা বলে কি কিছু আছে? (ব্রোশার)
মারা যাওয়ার পর আমাদের কী হয়, তা একজন ব্যক্তি যখন জানতে পেরেছিলেন, তখন তিনি কীভাবে সান্ত্বনা লাভ করেছিলেন? আসুন তা পড়ি।
“বাইবেলে আমি আমার সমস্ত প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পাই” (প্রহরীদুর্গ, ফেব্রুয়ারি ১, ২০১৫, ইংরেজি)