অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১২
অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখান
“তোমরা সকলে . . . পরদুঃখে দুঃখিত . . . হও।”—১ পিতর ৩:৮.
গান সংখ্যা ৫৩ একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা
সারাংশa
১. প্রথম পিতর ৩:৮ পদ অনুযায়ী কেন আমরা এমন লোকেদের মাঝে থাকা উপভোগ করি, যারা আমাদের অনুভূতি ও মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করে?
আমরা এমন লোকেদের মাঝে থাকা উপভোগ করি, যারা আমাদের অনুভূতি ও মঙ্গলের বিষয়ে চিন্তা করে। তারা নিজেদের আমাদের জায়গায় রেখে কল্পনা করে, যাতে তারা আমাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি বুঝতে পারে। তারা আমাদের প্রয়োজনের বিষয়ে লক্ষ রাখে আর আমরা সাহায্য চাওয়ার আগেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়। আমরা সেই ব্যক্তিদের কাজকে উপলব্ধি করি, যারা “পরদুঃখে দুঃখিত”b হয়।—পড়ুন, ১ পিতর ৩:৮.
২. কেন সহানুভূতি দেখানোর জন্য আমাদের হয়তো প্রচেষ্টা করতে হবে?
২ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা সবাই সহানুভূতি দেখাতে চাই। তবে, সহানুভূতি দেখানো সবসময় সহজ নয়। কেন? এর একটা কারণ হল আমরা অসিদ্ধ। (রোমীয় ৩:২৩) আমরা স্বাভাবিকভাবেই নিজেদের বিষয়ে বেশি চিন্তা করি। তাই, অন্যদের বিষয়ে চিন্তা করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। আরেকটা কারণ হল আমরা যেভাবে বড়ো হয়ে উঠেছি অথবা অতীতের কোনো ঘটনার কারণে আমাদের মধ্যে কারো কারো জন্য হয়তো সহানুভূতি দেখানো কঠিন হয়। শেষ কারণটা হল আমরা আমাদের চারপাশে থাকা লোকেদের মনোভাবের দ্বারা প্রভাবিত হতে পারি। এই শেষ কালে, অনেকে অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখায় না। তারা হল “আত্মপ্রিয়।” (২ তীম. ৩:১, ২) অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখানোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা কাটিয়ে ওঠার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
৩. (ক) কীভাবে আমরা বিবেচনা দেখানোর ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
৩ আমরা যিহোবা ঈশ্বর ও যিশু খ্রিস্টকে অনুকরণ করার মাধ্যমে বিবেচনা দেখানোর ক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারি। যিহোবা হলেন প্রেমময় ঈশ্বর এবং তিনি অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানোর বিষয়ে সবচেয়ে উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (১ যোহন ৪:৮) যিশু নিখুঁতভাবে তাঁর পিতার ব্যক্তিত্বকে অনুকরণ করেছেন। (যোহন ১৪:৯) পৃথিবীতে থাকাকালীন তিনি দেখিয়েছেন, কীভাবে একজন মানুষ সমবেদনা দেখাতে পারেন। এই প্রবন্ধে আমরা প্রথমে আলোচনা করব, কীভাবে যিহোবা ও যিশু অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছেন। তারপর, আমরা আলোচনা করব, কীভাবে আমরা তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি।
যিহোবা যেভাবে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছেন
৪. কীভাবে যিশাইয় ৬৩:৭-৯ পদ দেখায় যে, যিহোবা তাঁর দাসদের অনুভূতির বিষয়ে চিন্তা করেন?
৪ বাইবেল শিক্ষা দেয়, যিহোবা তাঁর দাসদের অনুভূতির বিষয়ে চিন্তা করেন। উদাহরণ স্বরূপ, প্রাচীন ইস্রায়েলীয়রা যখন বিভিন্ন পরীক্ষা ভোগ করেছিল, তখন যিহোবা কেমন অনুভব করেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। ঈশ্বরের বাক্য বলে: “তাহাদের সকল দুঃখে তিনি দুঃখিত হইতেন।” (পড়ুন, যিশাইয় ৬৩:৭-৯.) পরবর্তী সময়ে ভাববাদী সখরিয়ের মাধ্যমে যিহোবা জানিয়েছিলেন, তাঁর লোকেদের সঙ্গে যখন খারাপ আচরণ করা হয়েছিল, তখন সেটা এমন ছিল যেন তাঁর সঙ্গে খারাপ আচরণ করা হয়েছে। যিহোবা তাঁর দাসদের বলেছিলেন: “যে ব্যক্তি তোমাদিগকে স্পর্শ করে, সে [আমার] চক্ষুর তারা স্পর্শ করে।” (সখ. ২:৮) যিহোবা তাঁর লোকেদের প্রতি কতটা বিবেচনা দেখান, সেটা বোঝানোর জন্য কতই-না জোরালো এক দৃষ্টান্ত!
৫. যিহোবার যে-দাসেরা কষ্ট ভোগ করে, তাদের সাহায্য করার জন্য তিনি কীভাবে পদক্ষেপ নেন, সেই বিষয়ে একটা উদাহরণ দিন।
৫ যিহোবার যে-দাসেরা কষ্ট ভোগ করে, তাদের প্রতি তিনি কেবল সমবেদনা অনুভব করার চেয়ে আরও বেশি কিছু করেন। তিনি তাদের সাহায্য করার জন্য পদক্ষেপ নেন। উদাহরণ স্বরূপ, ইস্রায়েলীয়রা যখন মিশরে দাসত্বের কারণে কষ্ট ভোগ করছিল, তখন যিহোবা তাদের কষ্ট বুঝেছিলেন এবং তাদের কষ্ট থেকে মুক্তি দেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন। যিহোবা মোশিকে বলেছিলেন: “সত্যই আমি . . . আপন প্রজাদের কষ্ট দেখিয়াছি, . . . তাহাদের ক্রন্দনও শুনিয়াছি; ফলতঃ আমি তাহাদের দুঃখ জানি। আর মিস্রীয়দের হস্ত হইতে তাহাদিগকে উদ্ধার করিবার জন্য . . . নামিয়া আসিয়াছি।” (যাত্রা. ৩:৭, ৮) যিহোবা যেহেতু তাঁর লোকেদের প্রতি সমবেদনা অনুভব করেছিলেন, তাই তিনি তাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করেছিলেন। এর শত শত বছর পর, ইস্রায়েলীয়রা প্রতিজ্ঞাত দেশে শত্রুদের আক্রমণের শিকার হয়েছিল। যিহোবা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? তিনি “উপদ্রব ও তাড়নাকারিগণের সমক্ষে তাহাদের কাতরোক্তি প্রযুক্ত . . . করুণাবিষ্ট” হয়েছিলেন। আবারও সহানুভূতি যিহোবাকে তাঁর লোকেদের সাহায্য করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। তিনি শত্রুদের হাত থেকে ইস্রায়েলীয়দের রক্ষা করার জন্য বিচারকর্তাদের পাঠিয়েছিলেন।—বিচার. ২:১৬, ১৮.
৬. কীভাবে যিহোবা সেই ব্যক্তির প্রতি বিবেচনা দেখান, যার চিন্তাভাবনা ভুল? একটা উদাহরণ দিন।
৬ যিহোবা তাঁর লোকেদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখান আর তা এমনকী তাদের চিন্তাভাবনা ভুল হলেও। যোনার কথা বিবেচনা করুন। ঈশ্বর এই ভাববাদীকে নীনবীয়দের কাছে বিচারের বার্তা ঘোষণা করার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তারা যখন অনুতপ্ত হয়েছিল, তখন ঈশ্বর তাদের ধ্বংস না করা বেছে নিয়েছিলেন। তবে, যোনা এতে খুশি হননি। তিনি “ক্রুদ্ধ হইলেন” কারণ নীনবী ধ্বংসের বিষয়ে তার ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়নি। কিন্তু, যিহোবা যোনার প্রতি ধৈর্য ধরেছিলেন এবং তার চিন্তাভাবনায় রদবদল করতে সাহায্য করেছিলেন। (যোনা ৩:১০–৪:১১) কিছু সময় পর, যোনা যিহোবার শিক্ষা বুঝতে পেরেছিলেন এবং তিনি এমনকী এই বিবরণ আমাদের উপকারের জন্য লিখে রাখার উদ্দেশে যিহোবার দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছিলেন।—রোমীয় ১৫:৪.c
৭. যিহোবা তাঁর দাসদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেটা আমাদের কোন বিষয়ে আশ্বস্ত করে?
৭ যিহোবা যেভাবে তাঁর লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, সেটা আমাদের আশ্বস্ত করে যে, তাঁর দাসদের প্রতি তাঁর সহানুভূতি আছে। তিনি আমাদের প্রত্যেকের কষ্ট ও যন্ত্রণা সম্বন্ধে অবগত আছেন। যিহোবা ‘মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণের’ বা ‘হৃদয়ের বিষয়ে জ্ঞাত’ আছেন। (২ বংশা. ৬:৩০) তিনি আমাদের সমস্ত চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও সীমাবদ্ধতা বোঝেন। আর “তিনি [আমাদের] প্রতি [আমাদের] শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না।” (১ করি. ১০:১৩) এই প্রতিজ্ঞা কতই-না সান্ত্বনাদায়ক!
যিশু যেভাবে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছেন
৮-১০. কোন ক্ষেত্রগুলো যিশুকে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে সাহায্য করেছিল?
৮ মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে থাকাকালীন যিশু অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন। অন্ততপক্ষে তিনটে ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলো যিশুকে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে সাহায্য করেছিল। প্রথমত, আগে যেমনটা উল্লেখ করা হয়েছে, যিশু নিখুঁতভাবে তাঁর স্বর্গীয় পিতার গুণাবলি প্রতিফলিত করেছিলেন। তাঁর পিতার মতোই যিশুও লোকেদের ভালোবাসতেন। যদিও যিশু সমস্ত কিছু তৈরি করায় যিহোবাকে সাহায্য করতে পেরে আনন্দিত হয়েছিলেন কিন্তু তিনি বিশেষভাবে ‘মনুষ্য-সন্তানগণে আনন্দিত হইতেন।’ (হিতো. ৮:৩১) প্রেম যিশুকে অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখাতে অনুপ্রাণিত করেছিল।
৯ দ্বিতীয়ত, যিহোবার মতো যিশুও হৃদয় পড়তে পারেন। তিনি লোকেদের মনোভাব ও অনুভূতি জানতে পারতেন। (মথি ৯:৪; যোহন ১৩:১০, ১১) তাই, যিশু যখন লক্ষ করতেন যে, লোকেরা অনেক দুঃখের মধ্যে রয়েছে, তখন তাঁর বিবেচনাবোধ তাঁকে তাদের সান্ত্বনা দিতে অনুপ্রাণিত করত।—যিশা. ৬১:১, ২; লূক ৪:১৭-২১.
১০ তৃতীয়ত, যিশুর চারপাশের লোকেরা যে-সমস্ত সমস্যা ভোগ করেছিল, সেগুলোর কিছু যিশুও ভোগ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিশু সম্ভবত এক গরিব পরিবারে বড়ো হয়ে উঠেছিলেন। তাঁর পালক পিতা যোষেফের সঙ্গে কাজ করার সময়ে যিশু শিখেছিলেন, কীভাবে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। (মথি ১৩:৫৫; মার্ক ৬:৩) এমনটা মনে হয় যে, যোষেফ যিশুর পরিচর্যা শেষ হওয়ার আগে কোনো এক সময়ে মারা গিয়েছিলেন। তাই, যিশু মৃত্যুতে প্রিয়জনকে হারানোর যন্ত্রণা অনুভব করেছিলেন। আর যিশু জানতেন যে, এমন এক পরিবারে থাকার অর্থ কী, যার সদস্যদের ভিন্ন ভিন্ন ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। (যোহন ৭:৫) এই পরিস্থিতিগুলো আর সেইসঙ্গে অন্যান্য পরিস্থিতি যিশুকে সাধারণ লোকেদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করেছিল।
১১. কখন যিশুর বিবেচনা বিশেষভাবে প্রকাশ পেয়েছিল? ব্যাখ্যা করুন। (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
১১ যিশুর বিবেচনা বিশেষভাবে সেইসময়ে প্রকাশ পেয়েছিল, যখন তিনি বিভিন্ন অলৌকিক কাজ করেছিলেন। যিশু কেবল কর্তব্যের খাতিরে অলৌকিক কাজ করেননি। তিনি দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের প্রতি “করুণাবিষ্ট” হয়েছিলেন। (মথি ২০:২৯-৩৪; মার্ক ১:৪০-৪২) উদাহরণ স্বরূপ কল্পনা করুন, যিশু যখন একজন বধির ব্যক্তিকে সুস্থ করার জন্য জনতার কাছ থেকে দূরে নিয়ে গিয়েছিলেন অথবা একজন বিধবার একমাত্র পুত্রকে যখন পুনরুত্থিত করেছিলেন, তখন তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন। (মার্ক ৭:৩২-৩৫; লূক ৭:১২-১৫) যিশু লোকেদের প্রতি সহমর্মিতা বোধ করেছিলেন এবং তাদের সাহায্য করতে চেয়েছিলেন।
১২. কীভাবে যোহন ১১:৩২-৩৫ পদ দেখায়, যিশু মার্থা ও মরিয়মের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন?
১২ যিশু মার্থা ও মরিয়মের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন। তাদের ভাই লাসারের মৃত্যুর কারণে যিশু যখন তাদের শোক করতে দেখেছিলেন, তখন “যীশু কাঁদিলেন।” (পড়ুন, যোহন ১১:৩২-৩৫.) তিনি কেবল তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে মৃত্যুতে হারানোর জন্য কাঁদেননি কারণ তিনি জানতেন, তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করতে যাচ্ছেন। এর পরিবর্তে, তিনি কেঁদেছিলেন কারণ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর বন্ধুরা লাসারের মৃত্যুর ফলে কতটা কষ্ট ভোগ করছিলেন।
১৩. কেন আমরা যিশুর দেখানো বিবেচনা থেকে উপকার লাভ করি?
১৩ আমরা যিশুর দেখানো বিবেচনা থেকে অনেক উপকার লাভ করি। এটা ঠিক যে, আমরা যিশুর মতো সিদ্ধ নই। তারপরও, আমরা তাঁকে ভালোবাসি কারণ তিনি অন্যদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছিলেন। (১ পিতর ১:৮) আমরা এটা জেনে উৎসাহিত হই যে, তিনি এখন ঈশ্বরের রাজ্যের রাজা হিসেবে শাসন করছেন। শীঘ্রই তিনি সমস্ত দুঃখকষ্ট দূর করবেন। যেহেতু যিশু একজন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে জীবনযাপন করেছিলেন, তাই তিনি শয়তানের শাসনের কারণে আসা চরম দুঃখকষ্ট ও যন্ত্রণা থেকে মানুষকে রেহাই দেওয়ার জন্য সবচেয়ে উত্তম অবস্থানে রয়েছেন। সত্যিই, আমরা এমন একজন শাসক পেয়ে আশীর্বাদ প্রাপ্ত হয়েছি, যিনি “আমাদের দুর্ব্বলতাঘটিত দুঃখে দুঃখিত” হতে পারেন।—ইব্রীয় ২:১৭, ১৮; ৪:১৫, ১৬.
যিহোবা ও যিশুর উদাহরণ অনুকরণ করুন
১৪. ইফিষীয় ৫:১, ২ পদ অনুযায়ী আমরা কী করার জন্য অনুপ্রাণিত হই?
১৪ আমরা যখন যিহোবা ও যিশুর উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করি, তখন আমরা অন্যদের প্রতি আরও বেশি বিবেচনা দেখাতে অনুপ্রাণিত হই। (পড়ুন, ইফিষীয় ৫:১, ২.) এটা ঠিক যে, আমরা তাদের মতো হৃদয় পড়তে পারি না। তারপরও, আমরা অন্যদের অনুভূতি ও প্রয়োজনগুলোর বিষয়ে বোঝার জন্য চেষ্টা করতে পারি। (২ করি. ১১:২৯) আমাদের চারপাশে থাকা স্বার্থপর লোকেদের বিপরীতে আমরা ‘আপনার বিষয়ে নয়, কিন্তু পরের বিষয়েও লক্ষ্য রাখিবার’ জন্য যথাসাধ্য করি।—ফিলি. ২:৪.
১৫. বিশেষভাবে কাদের অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানো প্রয়োজন?
১৫ বিশেষভাবে মণ্ডলীর প্রাচীনদের অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানো প্রয়োজন। তারা যিহোবার মেষদের যেভাবে যত্ন নেন, সেটার জন্য তাদের তাঁর কাছে নিকাশ দিতে হবে। (ইব্রীয় ১৩:১৭) সহবিশ্বাসীদের সাহায্য করার জন্য প্রাচীনদের সমবেদনাময় হতে হবে। কীভাবে প্রাচীনরা অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে পারেন?
১৬. একজন সমবেদনাময় প্রাচীন কী করেন এবং কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৬ একজন সমবেদনাময় প্রাচীন তার খ্রিস্টীয় ভাই-বোনদের সঙ্গে সময় ব্যয় করেন। তিনি বিভিন্ন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেন আর তারপর মন দিয়ে ও ধৈর্য ধরে তা শোনেন। এটা বিশেষভাবে সেইসময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যখন কোনো মেষ মন খুলে কিছু বলতে চান কিন্তু ভেবে পান না যে, কীভাবে তা বলবেন। (হিতো. ২০:৫) একজন প্রাচীন যখন স্বেচ্ছায় নিজের সময় ব্যয় করেন, তখন তার উপর ভাইদের আস্থা বৃদ্ধি পায় এবং বন্ধুত্ব ও ভালোবাসার এক দৃঢ় বন্ধন গড়ে ওঠে।—প্রেরিত ২০:৩৭.
১৭. প্রাচীনদের যে-গুণটা অনেক ভাই-বোন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে করে, সেটা কী? একটা উদাহরণ দিন।
১৭ মণ্ডলীর প্রাচীনদের যে-গুণটা অনেক ভাই-বোন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান বলে মনে করে, সেটা হল অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখানো। কেন? আ্যডালেড নামে একজন বোন বলেন: “তাদের সঙ্গে সহজেই কথা বলা যায় কারণ আপনি জানেন যে, তারা আপনাকে বুঝবে।” তিনি আরও বলেন: “আপনি যখন তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখান, সেটা থেকে আপনি বুঝতে পারেন যে, তারা আপনাকে বোঝেন।” একজন ভাই কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করে বলেন: “আমি যখন আমার পরিস্থিতি সম্বন্ধে প্রাচীনদের বলছিলাম, তখন একজন প্রাচীনের চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। সেই ছবি আজও আমার মনে ভেসে ওঠে।”—রোমীয় ১২:১৫.
১৮. কীভাবে আমরা অন্যদের প্রতি আরও বেশি বিবেচনা দেখাতে পারি?
১৮ অবশ্য, প্রাচীনদেরই যে কেবল অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখাতে হবে, এমন নয়। আমরা সবাই এই গুণটা গড়ে তুলতে পারি। কীভাবে? বোঝার চেষ্টা করুন যে, পরিবারের সদস্য ও সহবিশ্বাসীরা কোন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেখান যে, মণ্ডলীর কিশোর-কিশোরী আর সেইসঙ্গে অসুস্থ, বয়স্ক এবং যারা মৃত্যুতে প্রিয়জনদের হারিয়েছে, তাদের জন্য আপনি চিন্তা করেন। জিজ্ঞেস করুন, তারা কেমন আছে। তারা যখন নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করে, তখন মন দিয়ে তা শুনুন। তাদের অনুভব করতে সাহায্য করুন যে, আপনি তাদের পরিস্থিতি সত্যিই বোঝেন। আপনার সাধ্যমতো সাহায্য করার প্রস্তাব দিন। আমরা যখন তা করি, তখন আমরা প্রকৃত ভালোবাসা দেখাই।—১ যোহন ৩:১৮.
১৯. অন্যদের সাহায্য করার সময়ে কেন আমাদের নমনীয় হতে হবে?
১৯ অন্যদের সাহায্য করার সময়ে আমাদের নমনীয় হতে হবে। কেন? কারণ লোকেরা কঠিন পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে প্রতিক্রিয়া দেখায়। কেউ কেউ ইচ্ছুক মনে নিজেদের সমস্যার বিষয়ে বলে আবার অন্যেরা তা পছন্দ করে না। তাই, সাহায্য করার জন্য আমাদেরই প্রস্তাব দিতে হবে, তবে এক্ষেত্রে কোনো অস্বস্তিকর প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত নয়। (১ থিষল. ৪:১১) অন্যেরা যখন নিজেদের অনুভূতি সম্বন্ধে বলে, তখন আমরা হয়তো সবসময় তাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারি। তা সত্ত্বেও, আমাদের মনে রাখতে হবে, তারা যা অনুভব করে, সেটাই বলছে। আমরা শ্রবণে সত্বর ও কথনে ধীর হতে চাই।—মথি ৭:১; যাকোব ১:১৯.
২০. পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে আলোচনা করব?
২০ আমরা মণ্ডলীতে অন্যদের প্রতি বিবেচনা দেখানোর পাশাপাশি পরিচর্যায় এই গুণটা দেখাতে চাই। শিষ্য তৈরি করার সময়ে কীভাবে আমরা এই গুণটা দেখাতে পারি? পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা তা নিয়ে আলোচনা করব।
গান সংখ্যা ৩৫ ঈশ্বরের ধৈর্যের জন্য কৃতজ্ঞতা
a যিহোবা ও যিশু অন্যদের অনুভূতির প্রতি বিবেচনা দেখান। তাদের উদাহরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি, এই প্রবন্ধে তা বিবেচনা করা হবে। এ ছাড়া, আমরা আলোচনা করব, কেন আমাদের সহানুভূতি দেখাতে হবে এবং কীভাবে আমরা তা দেখাতে পারি।
b এর অর্থ কী?: “পরদুঃখে দুঃখিত” হওয়ার অর্থ হল অন্যদের অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করা এবং তাদের মতো অনুভব করা। (রোমীয় ১২:১৫) এই প্রবন্ধে “পরদুঃখে দুঃখিত” হওয়া ও “বিবেচনা” দেখানো একই অর্থ প্রকাশ করে।
c যিহোবা অন্যান্য বিশ্বস্ত ব্যক্তিদের প্রতিও সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, যারা নিরুৎসাহিত হয়েছিল অথবা ভয় পেয়েছিল। হান্না (১ শমূ. ১:১০-২০), এলিয় (১ রাজা. ১৯:১-১৮) ও এবদ-মেলক-এর (যির. ৩৮:৭-১৩; ৩৯:১৫-১৮) বিবরণ নিয়ে চিন্তা করুন।
d ছবি সম্বন্ধে: কিংডম হলে অনুষ্ঠিত হওয়া সভাগুলো আমাদের গঠনমূলক মেলামেশা উপভোগ করার অনেক সুযোগ করে দেয়। (১) একজন প্রাচীন একজন অল্পবয়সি প্রকাশক ও তার মায়ের সঙ্গে সদয়ভাবে কথা বলছেন। (২) একজন বাবা ও তার মেয়ে একজন বয়স্ক বোনকে গাড়ির কাছে যেতে সাহায্য করছেন। (৩) দু-জন প্রাচীন মন দিয়ে একজন বোনের কথা শুনছেন, যিনি সাহায্য চাইতে এসেছেন।