আপনার সৃষ্টিকর্তা—কেমন তা জানুন
“আমি তোমার সম্মুখ দিয়া আপনার সমস্ত উত্তমতা গমন করাইব, ও তোমার সম্মুখে সদাপ্রভুর নাম ঘোষণা করিব।”—যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৯.
১. কেন সৃষ্টিকর্তা সম্মান পাওয়ার যোগ্য?
বাইবেলের শেষ বইয়ের লেখক, প্রেরিত যোহন সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে এই গুরুত্বপূর্ণ কথাগুলো লিখেছিলেন: “তুমিই প্রতাপ ও সমাদর ও পরাক্রম গ্রহণের যোগ্য; কেননা তুমিই সকলের সৃষ্টি করিয়াছ, এবং তোমার ইচ্ছাহেতু সকলই অস্তিত্বপ্রাপ্ত ও সৃষ্ট হইয়াছে।” (প্রকাশিত বাক্য ৪:১১) আগের প্রবন্ধে যেমন দেখানো হয়েছে যে আধুনিক বিজ্ঞানের সব আবিষ্কারই আমাদের আরও আরও কারণ যোগায় যে সৃষ্টিকর্তা আছেন।
২, ৩. (ক) সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে লোকেদের কী জানা দরকার? (খ) সৃষ্টিকর্তাকে দেখা কেন সম্ভব নয়?
২ সৃষ্টিকর্তা আছেন এটা মেনে নেওয়া যেমন জরুরি তেমনই জরুরি এটা জানা যে তিনি কেমন, যে তিনি একজন ব্যক্তি এবং তাঁর ব্যক্তিত্ব ও পথ এমন যে আমরা তাঁকে ভালবাসতে শুরু করি। তাহলে আপনার কি মনে হয় না যে, সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে আমাদের আরও ভাল করে জানা দরকার? কিন্তু এর জন্য সৃষ্টিকর্তাকে দেখার বা তাঁর কাছে যাওয়ার দরকার নেই যেভাবে আমরা মানুষকে জানার জন্য করি।
৩ যিহোবা তারকারাজিও সৃষ্টি করেছেন আর আমাদের সূর্য হল তারা। সূর্য একটা ছোট তারা কিন্তু আপনি কি সূর্যের কাছাকাছি যাওয়ার কথা ভাবতে পারেন? একদম না! বেশিরভাগ লোকই সূর্যের দিকে এক ঝলক তাকাতে পারেন না বা সূর্যের কড়া রোদে একেবারেই থাকতে চান না। এর কেন্দ্রের তাপমাত্রা প্রায় ১,৫০,০০,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস (২৭,০০০,০০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট)। উচ্চ তাপসম্পন্ন এই চূল্লী প্রতি সেকেন্ডে চল্লিশ লাখ টন ভরকে শক্তিতে পরিণত করে। এই শক্তির শুধু এক ক্ষুদ্র অংশ তাপ ও আলো হিসেবে পৃথিবীতে আসে আর এই শক্তিই এখানকার জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। এই তথ্যগুলোই আমাদের বলে দেয় যে আমাদের সৃষ্টিকর্তার শক্তি কতই না অসীম। এইজন্য যিশাইয় “[সৃষ্টিকর্তার] সামর্থ্যের আধিক্য ও শক্তির প্রাবল্য” সম্পর্কে লিখেছিলেন।—যিশাইয় ৪০:২৬.
৪. মোশি কী চেয়েছিলেন আর যিহোবা কী উত্তর দিয়েছিলেন?
৪ কিন্তু, আপনি কি জানতেন যে সা.কা.পূ. ১৫১৩ সালে ইস্রায়েলীয়রা মিশর ছেড়ে আসার কয়েক মাস পর মোশি সৃষ্টিকর্তার কাছে অনুরোধ করেছিলেন: “বিনয় করি, তুমি আমাকে তোমার প্রতাপ দেখিতে দেও।” (যাত্রাপুস্তক ৩৩:১৮) ঈশ্বর সূর্যকে সৃষ্টি করেছেন তা মাথায় রেখে আপনি বুঝতে পারেন যে কেন তিনি মোশিকে বলেছিলেন: “তুমি আমার মুখ দেখিতে পাইবে না, কেননা মনুষ্য আমাকে দেখিলে বাঁচিতে পারে না।” সৃষ্টিকর্তা যখন সেখান দিয়ে ‘গমন’ করেছিলেন তখন তিনি মোশিকে সীনয় পর্বতের আড়ালে দাঁড়াতে বলেছিলেন। এরপর মোশি সৃষ্টিকর্তার “পশ্চাদ্ভাগ” দেখতে পেয়েছিলেন, যা আসলে সেই তেজ ছিল যা সৃষ্টিকর্তা সেখান থেকে চলে যাওয়ার পর থেকে গিয়েছিল।—যাত্রাপুস্তক ৩৩:২০-২৩; যোহন ১:১৮.
৫. কোন্ উপায়ে সৃষ্টিকর্তা মোশির ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন আর তা কী প্রমাণ করেছিল?
৫ সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভাল করে জানার জন্য মোশির ইচ্ছা অপূর্ণ থেকে যায়নি। স্পষ্টতই, ঈশ্বর মোশির পাশ দিয়ে গমন করেছিলেন এবং একজন দূতের মাধ্যমে এই ঘোষণা করেছিলেন: “সদাপ্রভু, সদাপ্রভু, স্নেহশীল ও কৃপাময় ঈশ্বর, ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্।” (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬, ৭) এটা দেখায় যে সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভাল করে জানার জন্য তাঁকে দেখার দরকার নেই কিন্তু বোঝার দরকার আছে যে তিনি কেমন ব্যক্তি, তাঁর ব্যক্তিত্ব কেমন এবং তাঁর কী কী গুণাবলি আছে।
৬. আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কীভাবে বিস্ময়কর?
৬ ঈশ্বরের গুণাবলি জানার একটা উপায় হল, তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার দিকে নজর দেওয়া। আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার কথা ভেবে দেখুন। সায়েন্টিফিক আমেরিকান পত্রিকার একটা সংখ্যায় এই ক্ষমতা সম্বন্ধে বলা হয়েছিল: “জন্ম হওয়ার আগে থেকে মৃত্যু পর্যন্ত রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা একনাগাড়ে কাজ করে চলে। আলাদা আলাদা রকমের অণু ও কোষগুলো . . . আমাদেরকে জীবাণু ও রোগ সৃষ্টিকারী ভাইরাস থেকে রক্ষা করে। এইরকম প্রতিরোধক ব্যবস্থা না থাকলে আমরা বেঁচে থাকতে পারতাম না।” কিন্তু আমাদের শরীর এই ক্ষমতা কোথা থেকে পেয়ে থাকে? ওই পত্রিকার একটা প্রবন্ধ বলেছিল: “গর্ভধারণের নয় সপ্তাহ পরেই এমন কিছু কোষ তৈরি হয় যার থেকে পরে দেহকে ক্ষুদ্র জীবাণু ও ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষাকারী কোষগুলো তৈরি হয়।” একজন গর্ভবতী নারী তার শরীরেই বেড়ে ওঠা ভ্রূণকে রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা দিয়ে থাকে। পরে, বুকের দুধের মাধ্যমেও তিনি তার শিশুকে প্রতিরোধক কোষ ও উপকারী কিছু রাসায়নিক পদার্থ দেন।
৭. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পর্কে আমরা কোন্ নিশ্চয়তা রাখতে পারি আর এর থেকে আমরা কোন্ উপসংহারে পৌঁছাতে পারি?
৭ তাই আপনি খুব ভালভাবেই জানেন যে আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আজ সবচেয়ে আধুনিক ওষুধপত্রও আপনাকে দিতে পারে না। তাই, নিজেকে জিজ্ঞাসা করুন, ‘রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে যিনি তৈরি করেছেন ও যিনি আমাদের তা দিয়েছেন তিনি কেমন হবেন?’ ‘গর্ভধারণের নয় সপ্তাহ বাদে তৈরি হওয়া’ এই ক্ষমতা জন্মের পর থেকেই শিশুকে রক্ষা করার জন্য সবসময় তৈরি থাকে আর তা নিশ্চয়ই এর সৃষ্টিকর্তার বুদ্ধি ও ভবিষ্যৎ চিন্তাকে প্রকাশ করে। কিন্তু আমাদের শরীরের এই ক্ষমতা থেকে আমরা কী সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আরও বেশি কিছু জানতে পারি? অ্যালবার্ট সুয়েটজার ও এইরকম আরও অন্যান্য লোকেদের সম্পর্কে আমরা কি বলব যারা দুঃস্থ ব্যক্তিদের চিকিৎসা করার জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছিলেন? লোকেদের মঙ্গলকারী এই ব্যক্তিদের বিষয়ে আমরা বলব যে তারা কতই না ভাল ও সজ্জন। তাহলে আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে কী বলতে পারি যিনি ধনী গরিব সকলের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়েছেন? তাই এতে কোন দ্বিমত নেই যে তিনি প্রেমময়, পক্ষপাতহীন, সহানুভূতিশীল এবং ন্যায়পরায়ণ। সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে মোশি যে বর্ণনা শুনেছিলেন এটা কি তার সঙ্গে মিলে যায় না?
তিনি নিজেই নিজেকে প্রকাশ করেন
৮. যিহোবা কোন্ বিশেষ উপায়ে আমাদের কাছে নিজেকে প্রকাশ করেন?
৮ কিন্তু, সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভাল করে জানার আরেকটা উপায়ও আছে—সেটা হল বাইবেল। এটা এই কারণে যে বাইবেলে এমন কিছু বিষয় আছে যা বিজ্ঞান এবং এই মহাবিশ্ব আমাদের বলতে পারে না। আবার অনেক কিছু বিষয় আমরা বাইবেল থেকে পড়েই আরও বেশি পরিষ্কার করে বুঝি। এর একটা উদাহরণ হল, সৃষ্টিকর্তার নাম। একমাত্র বাইবেলেই সৃষ্টিকর্তার নাম ও তার অর্থ রয়েছে। বাইবেলের ইব্রীয় পাণ্ডুলিপিতে তাঁর নাম প্রায় ৭,০০০ বার দেখা যায়, যেগুলোকে চারটে ব্যঞ্জনবর্ণ “ইয়োধ,” “হি,” “ওয়া,” “হি” দিয়ে লেখা হয়েছে। আর বাংলায় সাধারণত আমরা এটাকে যিহোবা উচ্চারণ করি।—যাত্রাপুস্তক ৩:১৫; ৬:৩.
৯. সৃষ্টিকর্তার নামের অর্থ কী আর এর থেকে আমরা কী বুঝতে পারি?
৯ সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভাল করে জানার জন্য আমাদের বোঝা দরকার যে তিনি শুধু নিরাকার “শক্তি” নন অথবা অস্পষ্ট “আমি” নন। তাঁর ব্যক্তিগত নাম তাঁর সম্বন্ধে আমাদের অনেক কিছু বলে। এটা ইব্রীয় ক্রিয়াপদের একটা রূপ যার অর্থ ‘হওয়া।’a (আদিপুস্তক ২৭:২৯ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) ঈশ্বরের নামের অর্থ “তিনি অস্তিত্বে আনেন” আর তা এই বিষয়ের ওপর জোর দেয় যে তিনি উদ্দেশ্য করেন এবং সেই মতো কাজও করেন। আমরা সেই নাম জেনে ও ব্যবহার করে আরও ভালভাবে বুঝতে পারি যে তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা এবং তাঁর উদ্দেশ্যগুলোকে পূর্ণ করেন।
১০. আদিপুস্তকের বিবরণ থেকে আমরা কোন্ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেতে পারি?
১০ বাইবেলে ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ও ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে বলা হয়েছে। আদিপুস্তকের বই বলে যে একসময় মানবজাতির ঈশ্বরের সঙ্গে সুন্দর শান্তির সম্পর্ক ছিল আর ঈশ্বরের উদ্দেশ্য ছিল যে তারা যেন চিরকাল বেঁচে থাকে আর তাদের জীবনে এক উদ্দেশ্য থাকে। (আদিপুস্তক ১:২৮; ২:৭-৯) আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে ঈশ্বর তাঁর নামের অর্থের সঙ্গে মিল রেখেই তাঁর উদ্দেশ্য পূর্ণ করবেন আর এই পৃথিবী থেকে দুঃখকষ্ট ও হতাশার শেষ আনবেন যা অনেক সময় ধরে মানুষেরা ভোগ করে চলেছে। তাঁর এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করা সম্পর্কে আমরা পড়ি: “এই জগৎ অসারতার বশীভূত হয়েছিল কিন্তু নিজের ইচ্ছাতে হয়নি বরং সৃষ্টিকর্তাই করেছিলেন যিনি আশা দিয়েছিলেন যে এটা এক সময় . . . ঈশ্বরের সন্তান হয়ে প্রতাপের স্বাধীনতা উপভোগ করবে।”—রোমীয় ৮:২০, ২১, জে. ডব্লু. সি. ওয়ান্ডের দ্যা নিউ টেস্টামেন্ট লেটারস।
১১. আমরা কেন বাইবেলের বিবরণে মন দেব আর এইরকম একটা বিবরণ কী?
১১ বাইবেলের সাহায্যে আমরা সৃষ্টিকর্তাকে আরও ভাল করে জানতে পারি কারণ বাইবেল আমাদের বলে যে প্রাচীন ইস্রায়েল জাতির সঙ্গে তিনি কেমন ব্যবহার করেছিলেন ও তাঁর মনোভাব কেমন ছিল। উদাহরণ হিসেবে ইলীশায় এবং ইস্রায়েলের শত্রু দেশ সিরিয়ার সেনাপতি, নামানের কথা ভেবে দেখুন। ২ রাজাবলি ৫ অধ্যায়ে আপনি যখন এই বিবরণটা পড়বেন আপনি দেখতে পাবেন যে বন্দি ইস্রায়েলীয় একটা ছোট্ট মেয়ে নামানকে বলেছিল যে ইস্রায়েলের ইলীশায় নামানকে কুষ্ঠরোগ থেকে শুচি করতে পারেন। নামান সেখানে গিয়েছিলেন এবং আশা করেছিলেন যে ইলীশায় তন্ত্রমন্ত্র প্রয়োগ করে অলৌকিকভাবে সুস্থ করবেন। কিন্তু তা না করে ইলীশায় তাকে যর্দন নদীতে স্নান করতে বলেছিলেন। যদিও ইলীশায়ের কথা মতো কাজ করার জন্য নামানের দাসেদের তাকে রাজি করাতে হয়েছিল যখন তিনি তা করেছিলেন, তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। নামান ইলীশায়কে অনেক দামি দামি উপহার দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু তিনি তা নেননি। কিন্তু পরে তার দাসী লুকিয়ে লুকিয়ে নামানের কাছে গিয়েছিল ও মিথ্যে কথা বলে কিছু দামি জিনিস নিয়ে এসেছিল। তার এই অন্যায় কাজের জন্য তার কুষ্ঠরোগ হয়েছিল। এটা মানুষের দুর্বলতার এক সুন্দর বিবরণ, যেখান থেকে আমরা অনেক কিছু শিখতে পারি।
১২. ইলীশায় এবং নামানের ঘটনা থেকে আমরা সৃষ্টিকর্তার বিষয়ে কোন্ উপসংহারে আসতে পারি?
১২ ওই বিবরণ খুব চমৎকার উপায়ে দেখায় যে মহাবিশ্বের মহান সৃষ্টিকর্তা একটা ছোট্ট মেয়ের ভাল কাজকে দেখেছিলেন আর খুশি হয়েছিলেন। আজকে লোকেরা এরকম মনোভাব দেখান না। এছাড়াও, এটা এও প্রমাণ করে যে সৃষ্টিকর্তা শুধু নির্দিষ্ট কোন জাতি অথবা দেশকেই অনুগ্রহ দেখান না। (প্রেরিত ১০:৩৪, ৩৫) আর আগ্রহের বিষয় যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা চান না যে লোকেরা তন্ত্রমন্ত্র ব্যবহার করে যা কিনা আগেকার দিনের ও আজকের দিনের কিছু “বৈদ্য” করে থাকেন। সৃষ্টিকর্তা জানতেন যে কুষ্ঠকে কীভাবে ঠিক করা যায় আর এতে তাঁর বিস্ময়কর প্রজ্ঞা দেখা যায়। এছাড়াও কোন ছলনাকে অনুমোদন না করে তিনি তাঁর অন্তর্দৃষ্টি ও ন্যায়বিচার দেখিয়েছিলেন। মোশি যিহোবার ব্যক্তিত্ব সম্পর্কে যা জেনেছিলেন তার সঙ্গে ঈশ্বরের এই গুণগুলোও কি মিলে যায় না? বাইবেলের সেই বিবরণ যদিও ছোট কিন্তু আমাদের সৃষ্টিকর্তা কীধরনের সে বিষয়ে আমরা এর থেকে কত কিছুই না শিখতে পারি!—গীতসংহিতা ৩৩:৫; ৩৭:২৮.
১৩. বাইবেলের বিবরণ থেকে আমরা কীভাবে মূল্যবান শিক্ষা পেতে পারি তা উদাহরণ দিয়ে বলুন।
১৩ বাইবেলে এইরকম অনেক বিবরণ আছে যা দেখায় যে ইস্রায়েল জাতি অকৃতজ্ঞ ছিল কিন্তু ঈশ্বরের ব্যবহার দেখায় যে এই যিহোবা সত্যিই তাদের খেয়াল রাখতেন। বাইবেল বলে যে ইস্রায়েলীয়রা বার বার তাঁর পরীক্ষা করেছিল আর এতে তিনি খুবই দুঃখ ও ব্যথা পেয়েছিলেন। (গীতসংহিতা ৭৮:৪০, ৪১) অতএব, সৃষ্টিকর্তার অনুভূতি আছে এবং মানুষের কাজ তাঁকে দুঃখ দেয় বা তাঁকে আনন্দিত করতে পারে। বাইবেলের কিছু সুপরিচিত ব্যক্তিদের বিবরণ থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। দায়ূদকে যখন ইস্রায়েলের রাজা করার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল তখন ঈশ্বর শমূয়েলকে বলেছিলেন: “মনুষ্য প্রত্যক্ষ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি করে, কিন্তু সদাপ্রভু অন্তঃকরণের প্রতি দৃষ্টি করেন।” (১ শমূয়েল ১৬:৭) হ্যাঁ, আমাদের অন্তরে কী আছে সৃষ্টিকর্তা তা দেখে থাকেন, আমাদের বাইরের চেহারা নয়। আর এটা জেনে আমরা কতই না পরিতৃপ্তি পাই!
১৪. ইব্রীয় শাস্ত্র পড়ে আমরা কীভাবে উপকার পেতে পারি?
১৪ বাইবেলের উনচল্লিশটা বই যীশুর জন্মের আগে লেখা হয়েছে আর সেগুলো পড়া আমাদের জন্য খুবই উপকারী। কিন্তু এটাকে শুধু বাইবেলের গল্প বা ইতিহাস হিসাবে পড়া ঠিক নয়। আমরা যদি সত্যিই জানতে চাই যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা কেমন ব্যক্তি, তাহলে আমাদের এই বিবরণগুলো নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করা দরকার আর ভাবা দরকার যে, ‘এই বিবরণ থেকে ঈশ্বরের ব্যক্তিত্বের কোন্ দিকটা আমি জানতে পারি? এখানে তাঁর কোন্ গুণটা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে?’b এইরকম করলে ঈশ্বরের অস্তিত্বে সন্দেহ করেন এমন লোকেরাও এটা দেখতে পাবেন যে বাইবেল ঈশ্বরের কাছ থেকে এসেছে। আর এটাই তাদেরকে এর প্রেমময় রচয়িতাকে আরও ভাল করে জানার কারণ যোগাবে।
সৃষ্টিকর্তাকে জানতে মহান শিক্ষক আমাদের সাহায্য করেন
১৫. যীশুর কাজ ও শিক্ষা থেকে কেন শেখা যেতে পারে?
১৫ এটা স্বীকার করতেই হবে, যে যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন অথবা যারা ঈশ্বর সম্পর্কে ঠিক করে জানেন না তারা হয়তো বাইবেল সম্বন্ধেও অল্পই জানেন। আপনি হয়তো এমন লোকেদের চেনেন যারা মোশি মথির আগে ছিলেন না পরে ছিলেন তা বলতে পারেন না আর যারা যীশুর কাজ ও শিক্ষা সম্বন্ধেও কিছুই জানেন না। এটা খুবই দুঃখজনক কারণ মহান শিক্ষক যীশুর কাছ থেকে একজন সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে অনেক কিছু শিখতে পারেন। ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকায় যীশু বলতে পারতেন যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা কেমন ব্যক্তি। (যোহন ১:১৮; ২ করিন্থীয় ৪:৬; ইব্রীয় ১:৩) আর তা তিনি করেও ছিলেন। আর যীশু একবার বলেছিলেন: “যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে।”—যোহন ১৪:৯.
১৬. একজন শমরীয় নারীর সঙ্গে যীশুর কথাবার্তা কী দেখায়?
১৬ এর একটা উদাহরণ দেখুন। একবার যীশু চলতে চলতে ক্লান্ত হয়ে শূখর নামে এক জায়গায় একজন শমরীয় নারীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। তিনি সত্যের গভীর বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেছিলেন, “আত্মায় ও সত্যে পিতার ভজনা” করার প্রয়োজনের ওপর জোর দিয়েছিলেন। সেই সময়ে যিহূদীরা শমরীয়দের এড়িয়ে চলত। কিন্তু যীশু দেখিয়েছিলেন যে ঈশ্বর সমস্ত জাতির ভাল লোকেদেরকে গ্রহণ করতে চান, যেমন আমরা ইলীশায় ও নামানের ঘটনা থেকে দেখেছি। এর থেকে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে যিহোবা আজকের জগতের নিচ-মনা লোকেদের মতো নন যারা ধর্মের নামে লোকেদের মধ্যে বিভেদ জন্মায়। এছাড়াও, আমরা দেখতে পাই, যীশু সেই নারীকেও শিক্ষা দিতে চেয়েছিলেন আর এই নারী যে লোকের সঙ্গে থাকতেন তিনি তার স্বামী ছিলেন না। তাকে নিন্দা করার বদলে, যীশু সম্মান দিয়ে কথা বলেছিলেন, এমন ব্যবহার করেছিলেন যা সত্যিই তাকে সাহায্য করেছিল। পরে, অন্যান্য শমরীয়রাও যীশুর কথা শুনেছিলেন ও এই কথা বলেছিলেন: “আমরা . . . জানিতে পারিয়াছি যে, ইনি সত্যই জগতের ত্রাণকর্ত্তা।”—যোহন ৪:২-৩০, ৩৯-৪২; ১ রাজাবলি ৮:৪১-৪৩; মথি ৯:১০-১৩.
১৭. লাসারের পুনরুত্থান থেকে কোন্ সিদ্ধান্তে পৌঁছানো যায়?
১৭ আসুন আমরা আর একটা উদাহরণ দেখি যে কীভাবে আমরা যীশুর কাজ ও শিক্ষা থেকে সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে শিখতে পারি। যীশুর বন্ধু লাসার যখন মারা গিয়েছিলেন সেই ঘটনাটা একবার ভেবে দেখুন। যীশু আগেই প্রমাণ দিয়েছিলেন যে মৃত ব্যক্তিদের জীবিত করার শক্তি তাঁর আছে। (লূক ৭:১১-১৭; ৮:৪০-৫৬) কিন্তু, লাসারের বোন মরিয়মকে শোক করতে দেখে তিনি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? যীশু “আত্মাতে উত্তেজিত হইয়া উঠিলেন ও উদ্বিগ্ন হইলেন।” তিনি দেখাননি যে তাঁকে কোন কিছুই স্পর্শ করে না কিংবা তিনি একেবারে আলাদা; বরং তিনি ‘কাঁদিয়াছিলেন।’ (যোহন ১১:৩৩-৩৫) আর তা লোক দেখানোও ছিল না। যীশু এই দুঃখকে দূর করার জন্য কাজ করেছিলেন—তিনি লাসারকে পুনরুত্থিত করেছিলেন। কল্পনা করুন যে এই ঘটনা থেকে যীশুর প্রেরিতেরা সৃষ্টিকর্তার অনুভূতি ও কাজ সম্বন্ধে কত ভালভাবে অনুভব করেছিলেন। এটা আমাদের ও সেইসঙ্গে অন্যদেরও বুঝতে সাহায্য করে যে সৃষ্টিকর্তা কেমন ব্যক্তি ও তাঁর পথগুলো কেমন।
১৮. বাইবেল অধ্যয়নের বিষয়ে লোকেদের কেমন বোধ করা উচিত?
১৮ বাইবেল অধ্যয়ন এবং সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানতে আমাদের লজ্জা পাওয়ার কোন কারণ নেই। বাইবেল সেকেলে বই নয়। যোহন ছিলেন একজন যিনি এই বই অধ্যয়ন করেছিলেন ও যীশুর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে মিশেছিলেন। পরে তিনি লিখেছিলেন: “আমরা জানি যে, ঈশ্বরের পুত্ত্র আসিয়াছেন, এবং আমাদিগকে এমন বুদ্ধি দিয়াছেন, যাহাতে আমরা সেই সত্যময়কে জানি; এবং আমরা সেই সত্যময়ে, তাঁহার পুত্ত্র যীশু খ্রীষ্টে আছি; তিনিই সত্যময় ঈশ্বর এবং অনন্ত জীবন।” (১ যোহন ৫:২০) লক্ষ্য করুন যে আমাদের সৃষ্টিকর্তা যিনি ‘সেই সত্যময়’ তাঁকে জানার জন্য যদি আমরা “বুদ্ধি” কাজে লাগাই, তাহলে আমরা “অনন্ত জীবন” পাব।
সৃষ্টিকর্তা সম্বন্ধে জানতে আপনি অন্যদের কীভাবে সাহায্য করতে পারেন?
১৯. সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে সন্দেহ করেন এমন লোকেদের সাহায্য করার জন্য কোন্ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে?
১৯ কিন্তু এমন কিছু লোকেরা আছেন যারা মানতে চান না যে এমন একজন দয়ালু সৃষ্টিকর্তা আছেন যিনি আমাদের জন্য চিন্তা করেন আর তারা এও জানেন না যে তিনি কেমন ব্যক্তি। এরজন্য তাদের এখনও অনেক সাক্ষ্যপ্রমাণ চাই। এমনও লাখ লাখ লোকেরা আছেন যারা সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন অথবা তাঁর সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি বাইবেলের সঙ্গে মিলে না। আপনি তাদেরকে কীভাবে সাহায্য করতে পারেন? যিহোবার সাক্ষিদের ১৯৯৮/৯৯ সালের জেলা ও আন্তর্জাতিক সম্মেলনগুলোতে অনেক ভাষায় একটা নতুন আর কার্যকারী হাতিহার দেওয়া হয়েছিল—আর সেই বইটা হল, এমন একজন সৃষ্টিকর্তা কি আছেন যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন? (ইংরেজি)
২০, ২১. (ক) কীভাবে সৃষ্টিকর্তা বইটা আমরা ভালভাবে ব্যবহার করতে পারি? (খ) সৃষ্টিকর্তা বই পড়ে লোকেরা ইতিমধ্যেই কেমন বোধ করেছেন তা বর্ণনা করুন।
২০ এটা এমন একটা বই যেটা সৃষ্টিকর্তার ওপর আপনার বিশ্বাসকে আরও বাড়াবে আর আপনি আরও ভালভাবে বুঝতে পারবেন যে তিনি কেমন ব্যক্তি ও তাঁর পথগুলো কেমন। আমরা কেন এতখানি বিশ্বাস নিয়ে এটা বলছি? কারণ এমন একজন সৃষ্টিকর্তা কি আছেন যিনি আপনার জন্য চিন্তা করেন? বইটা তাদের কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। পুরো বইয়ের একটা বিশেষ বিষয় হল “কী আপনার জীবনে নতুন অর্থ এনে দিতে পারে?” এই বইয়ে বিষয়গুলোকে এমনভাবে বলা হয়েছে যে শিক্ষিত লোকেদেরও এটাকে খুবই আকর্ষণীয় বলে মনে হবে। এছাড়াও এটা সেই বিষয় নিয়েও আলোচনা করে যার আকাঙ্ক্ষা আমাদের সবার মধ্যে আছে। সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ করেন এমন পাঠকদের জন্য এতে অনেক আকর্ষণীয় ও বিশ্বাস জন্মানোর মতো বিষয়বস্তু দেওয়া হয়েছে। বইটা এই ভেবে লেখা হয়নি যে পাঠক সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেন কিন্তু যারা সৃষ্টিকর্তাকে মানেন না তাদের এই বইয়ে বিজ্ঞানের সাম্প্রতিক আবিষ্কার ও ধারণাগুলো পড়তে ভাল লাগবে। এই তথ্যগুলো যারা ঈশ্বরে বিশ্বাস করেন তাদের বিশ্বাসকে আরও মজবুত করবে।
২১ এই নতুন বইটা পড়ার সময় আপনি দেখবেন যে এর কিছু জায়গায় বাইবেলের ইতিহাসকে সংক্ষেপে এমনভাবে তুলে ধরা হয়েছে, যার থেকে ঈশ্বরের বিভিন্ন গুণ স্পষ্টভাবে নজরে আসে আর এটা পড়ে লোকেরা ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে জানতে পারবেন। অনেকে যারা এরমধ্যেই বইটা পড়ে ফেলেছেন তারা এরকমই মনে করেছেন। (২৫-৬ পৃষ্ঠায় পরের প্রবন্ধটা দেখুন।) আপনি যখন বইটা পড়ছেন তখন এটা আপনার বেলায়ও সত্যি হোক আর অন্যদেরকে আরও ভাল করে সৃষ্টিকর্তাকে জানতে সাহায্য করার জন্য আপনি এটাকে ব্যবহার করুন।
[পাদটীকাগুলো]
a জেসুইট পণ্ডিত এম. জে. গ্রুয়েনথানার যখন দ্যা ক্যাথলিক বিবলিক্যাল কোয়াটারলি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক ছিলেন তিনি বলেছিলেন যে ইব্রীয় ভাষার এই ক্রিয়াপদ “এমন কিছু জিনিসকে বোঝায় আসলে যার অস্তিত্ব রয়েছে, যার আকার রয়েছে আর এটা কখনও এমন কিছুর জন্য ব্যবহার করা হয়নি যা নিরাকার।”
b বাবামারা যখন তাদের ছেলেমেয়েদের বাইবেলের গল্পগুলো বলেন তখন তারা তাদেরকে এইরকম প্রশ্ন করতে পারেন। এভাবে ছোট ছেলেমেয়েরা ঈশ্বরকে আরও ভালভাবে বুঝতে পারবে এবং তাঁর বাক্য নিয়ে ধ্যান করতে শিখবে।
আপনি কি লক্ষ্য করেছিলেন?
◻ সীয়োন পর্বতে মোশি কীভাবে যিহোবাকে আরও বেশি করে জানতে পেরেছিলেন?
◻ কেন বাইবেল অধ্যয়ন করলে ঈশ্বর কেমন তা জানা যায়?
◻ বাইবেল পড়ার সময় আমাদের সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ হওয়ার জন্য আমরা কী করতে পারি?
◻ সৃষ্টিকর্তা বইটা কীভাবে ব্যবহার করবেন বলে আপনি ভাবছেন?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে কী বলে?
[২১ পৃষ্ঠার চিত্র]
ডেড সী স্ক্রোলের একটা অংশে (ইব্রীয় ভাষায় ঈশ্বরের নামের) চারটে অক্ষর স্পষ্টভাবে দেখা যায়
[সজন্যে]
Courtesy of the Shrine of the Book, Israel Museum, Jerusalem
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
মরিয়মের শোক দেখে যীশুর প্রতিক্রিয়া থেকে আমরা কী শিখতে পারি?