যীশু—সেই শাসক যাঁর “প্রাক্কাল হইতে . . . উৎপত্তি”
দীর্ঘ দিন যাবৎ না দেখা একজন আত্মীয়ের আগমনের জন্য আপনি যখন অপেক্ষা করেন তখন উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়। পরিশেষে, তার সঙ্গে আপনার দেখা হয় এবং আপনি তাকে আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। আপনি মনোযোগের সঙ্গে তার কথা শোনেন যখন তিনি বলেন যে কেন তার বাবা আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য তাকে পাঠিয়েছেন। তারপর তার গৃহে ফিরে যাওয়ার সময় দ্রুত উপস্থিত হয়। দুঃখের সঙ্গে আপনি তাকে বিদায় সম্ভাষণ জানান। তিনি চলে যাওয়ায় যে ব্যথা আপনি অনুভব করেছিলেন তা কমে যায় যখন খবর আসে যে তিনি নিরাপদে গৃহে পৌঁছেছেন।
পরে, কিছু পুরনো কাগজপত্র ঘাটাঘাটি করার সময়ে আপনি সেই চিঠিগুলি সম্বন্ধে জানতে পারেন যেগুলিতে আপনার আত্মীয়ের কৃতিত্বপূর্ণ কাজগুলি সম্বন্ধে সংক্ষেপে উল্লেখ করা আছে যেগুলি আপনার সঙ্গে দেখা করার জন্য তার যাত্রা শুরুর বহু পূর্বের। সেই চিঠিগুলি আপনাকে তার পটভূমি সম্বন্ধে আগ্রহজনক অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে এবং তার সাক্ষাৎ ও বর্তমান কাজ উভয়ের জন্য আপনার উপলব্ধিবোধকে বৃদ্ধি করে।
“প্রাক্কাল হইতে”
প্রথম শতাব্দীর যিহূদীদের কাছে প্রাপ্তিসাধ্য প্রাচীন দলিলগুলির মধ্যে ঈশ্বরের ভাববাদী মীখার লেখাগুলি ছিল যা প্রায় সাতশো বছর আগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছিল। এটি মশীহের জন্মস্থানকে সঠিকভাবে চিহ্নিত করে। “তুমি, হে বৈৎলেহম-ইফ্রাথা, তুমি যিহূদার সহস্রগণের মধ্যে ক্ষুদ্রা বলিয়া অগণিতা, তোমা হইতে ইস্রায়েলের মধ্যে কর্ত্তা হইবার জন্য আমার উদ্দেশে এক ব্যক্তি উৎপন্ন হইবেন; প্রাক্কাল হইতে, অনাদিকাল হইতে তাঁহার উৎপত্তি।” (মীখা ৫:২) এই বাক্যগুলির সত্যতাস্বরূপ, যীশু বৈৎলেহমের যিহূদা গ্রামে সেই সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন যেটিকে এখন সা.কা.পূ. ২ সাল বলা হয়। কিন্তু কিভাবে তাঁর উৎপত্তি “প্রাক্কাল হইতে”?
যীশুর এক মানবপূর্ব অস্তিত্ব ছিল। কলসীর খ্রীষ্টানদের প্রতি লেখা তার পত্রে প্রেরিত পৌল যীশুকে “অদৃশ্য ঈশ্বরের প্রতিমূর্ত্তি, সমুদয় সৃষ্টির প্রথমজাত” হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—কলসীয় ১:১৫.
প্রজ্ঞার উৎস, যিহোবা তাঁর পুত্রকে তাঁর “কর্ম্ম সকলের পূর্ব্বে” সৃষ্টি করেছিলেন, যে অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিটি হিতোপদেশ পুস্তকে রাজা শলোমনের দ্বারা লিপিবদ্ধ হয়েছিল। পৃথিবীতে যীশুর সাময়িক বসবাস ও তাঁর স্বর্গে ফিরে যাওয়ার পর, তিনি প্রমাণ করেছিলেন যে তিনি বাস্তবিকই “ঈশ্বরের সৃষ্টির আদি।” প্রজ্ঞার মূর্ত রূপ হিসাবে, মানবপূর্ব যীশু ঘোষণা করেছিলেন: “যখন [যিহোবা] আকাশমণ্ডল প্রস্তুত করেন, তখন আমি সেখানে ছিলাম।”—হিতোপদেশ ৮:২২, ২৩, ২৭; প্রকাশিত বাক্য ৩:১৪.
শুরু থেকেই ঈশ্বরের পুত্র এক অদ্বিতীয় কার্যভার পেয়েছিলেন যা হল তাঁর পিতার সঙ্গে “কার্য্যকারী” হওয়া। এটি যিহোবার জন্য কতই না আনন্দ নিয়ে এসেছিল! “আমি দিন দিন [যিহোবার] আনন্দময় ছিলাম,” হিতোপদেশ ৮:৩০ পদ উল্লেখ করে, এটি আরও বলে, “তাঁহার সম্মুখে নিত্য আহ্লাদ করিতাম।”
যিহোবা পরে তাঁর প্রথমজাত পুত্রকে মানবজাতির সৃষ্টিতে অংশ নিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, “আমরা আমাদের প্রতিমূর্ত্তিতে, আমাদের সাদৃশ্যে মনুষ্য নির্ম্মাণ করি।” (আদিপুস্তক ১:২৬) যার ফলে, অন্য এক ধরনের অনুরাগ গড়ে উঠেছিল। মানবপূর্ব যীশু ব্যাখ্যা করেছিলেন, “মনুষ্য-সন্তানগণে আমার আনন্দ হইত।” (হিতোপদেশ ৮:৩১) তার সুসমাচারের শুরুতে, প্রেরিত যোহন সৃষ্টি কাজে যীশুর মানবপূর্ব ভূমিকাকে স্বীকার করেছিলেন: “সকলই তাঁহার দ্বারা হইয়াছিল, . . . কিছুই তাঁহা ব্যতিরেকে হয় নাই।”—যোহন ১:৩.
যিহোবার মুখপাত্র
যোহনের বাক্যগুলি অন্য একটি বিশেষ সুযোগের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করায় যা ঈশ্বরের পুত্র উপভোগ করেছিলেন, যেমন একজন মুখপাত্র হওয়া। শুরু থেকেই তিনি বাক্য হিসাবে কাজ করেছিলেন। সুতরাং, যিহোবা যখন আদমের সঙ্গে এবং পরে যখন একত্রে আদম ও হবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন, তখন সম্ভবত তিনি বাক্যের মাধ্যমে তা করেছিলেন। মনুষ্যজাতি যাদের তিনি ভালবাসতেন তাদের মঙ্গলের জন্য তিনি ছাড়া আর কেই বা ঈশ্বরের নির্দেশাবলি প্রদান করতে পারতেন?—যোহন ১:১, ২.
হবা এবং পরে আদমকে তাদের সৃষ্টিকর্তার প্রতি অবাধ্য হতে দেখা বাক্যের জন্য কতই না বেদনাদায়ক ছিল! আর তাদের অবাধ্যতা তাদের সন্তানসন্ততির উপর যে ক্ষতিকর পরিণতিগুলি এনেছিল তা নিরাময় করতে তিনি কতই না আকুল আকাঙ্ক্ষী ছিলেন! (আদিপুস্তক ২:১৫-১৭; ৩:৬, ৮; রোমীয় ৫:১২) যে হবাকে বিদ্রোহ করতে উৎসাহিত করেছিল সেই শয়তানের উদ্দেশে যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তোমাতে ও নারীতে এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব।” (আদিপুস্তক ৩:১৫) এদনে যা ঘটেছিল তার প্রত্যক্ষদর্শী হওয়ায়, বাক্য উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে নারীর “বংশে”-র মুখ্য অংশ হিসাবে তিনি অত্যন্ত ঘৃণার লক্ষ্যবস্তু হবেন। তিনি জানতেন যে শয়তান একজন নরঘাতক ছিল।—যোহন ৮:৪৪.
শয়তান পরে যখন ইয়োবের আনুগত্য সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল, তখন বাক্য অবশ্যই তাঁর পিতার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদমূলক অভিযোগগুলির কারণে অত্যধিক ক্রোধ অনুভব করেছিলেন। (ইয়োব ১:৬-১০; ২:১-৪) বাস্তবিকপক্ষে, প্রধান দূত হিসাবে তাঁর ভূমিকায়, সেই বাক্য মীখায়েল হিসাবে পরিচিত ছিলেন যাঁর নামের অর্থ “কে ঈশ্বরের তুল্য?” আর এটি ইঙ্গিত করে যে কিভাবে তিনি যিহোবার পক্ষে সেই সমস্তের বিরুদ্ধে লড়াই করেন যাদের ঈশ্বরের সার্বভৌমত্ব অধিকার করার উচ্চাকাঙ্ক্ষা রয়েছে।—দানিয়েল ১২:১; প্রকাশিত বাক্য ১২:৭-১০.
ইস্রায়েলের ইতিহাস যখন শুরু হয়, তখন বিশুদ্ধ উপাসনা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য শয়তানের প্রচেষ্টাগুলি বাক্য প্রত্যক্ষ করেছিলেন। মিশর থেকে যাত্রা করার পরে ঈশ্বর মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলকে বলেছিলেন: “দেখ, আমি পথে তোমাকে রক্ষা করিতে, এবং আমি যে স্থান প্রস্তুত করিয়াছি, সেই স্থানে তোমাকে লইয়া যাইতে তোমার অগ্রে অগ্রে এক দূত প্রেরণ করিতেছি। তাঁহা হইতে সাবধান থাকিও, এবং তাঁহার রবে অবধান করিও, তাঁহার অসন্তোষ জন্মাইও না; কেননা তিনি তোমাদের অধর্ম্ম ক্ষমা করিবেন না; কারণ তাঁহার অন্তরে আমার নাম রহিয়াছে।” (যাত্রাপুস্তক ২৩:২০, ২১) এই দূত কে ছিলেন? সম্ভবত, মানবপূর্ব যীশু।
বিশ্বস্ত বশ্যতা
মোশি সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সালে মারা গিয়েছিলেন আর তার দেহ “মোয়াব দেশে বৈৎপিয়োরের সম্মুখস্থ উপত্যকাতে” কবর দেওয়া হয়েছিল। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩৪:৫, ৬) স্পষ্টতই, শয়তান সম্ভবত প্রতিমাপূজা প্রসারিত করার জন্য মৃতদেহটিকে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। মীখায়েল এটির বিরোধিতা করেছিলেন কিন্তু তিনি তাঁর পিতা যিহোবার কর্তৃত্বের বশীভূত ছিলেন। ‘নিন্দাযুক্ত নিষ্পত্তি করার সাহস না করে’ মীখায়েল শয়তানকে সতর্ক করেছিলেন: “প্রভু [“যিহোবা,” “NW”] তোমাকে ভর্ৎসনা করুন।”—যিহূদা ৯.
পরে ইস্রায়েল প্রতিজ্ঞাত কনান দেশ জয় করতে শুরু করেছিল। যিরীহো নগরের কাছে, যিহোশূয় পুনরায় আশ্বাস পেয়েছিলেন যে বাক্য জাতিটির তত্ত্বাবধান করে চলেছেন। সেখানে তিনি একটি নিষ্কোষ খড়্গ বহনকারী একজন ব্যক্তির দেখা পেয়েছিলেন। যিহোশূয় সেই অপরিচিত ব্যক্তির কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আপনি আমাদের পক্ষ, কি আমাদের শত্রুদের পক্ষ?” যিহোশূয়ের বিস্ময় সম্বন্ধে কল্পনা করুন যখন সেই অপরিচিত ব্যক্তি তাঁর পরিচয় দিয়েছিলেন এই বলে: “না; কিন্তু আমি সদাপ্রভুর সৈন্যের অধ্যক্ষ, এখনই আসিলাম।” এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে যিহোশূয় যিহোবার এই মহিমান্বিত প্রতিনিধির সামনে ভূমিতে উবুড় হয়ে পড়ে প্রণিপাত করেছিলেন, নিঃসন্দেহে তিনি ছিলেন মানবপূর্ব যীশু যিনি পরে “অভিষিক্ত ব্যক্তি, নায়ক” হয়েছিলেন।—যিহোশূয় ৫:১৩-১৫; দানিয়েল ৯:২৫.
ঈশ্বরের ভাববাদী দানিয়েলের দিনে তিনি আরও একবার শয়তানের মুখোমুখি হয়েছিলেন। এই ঘটনায় মীখায়েল তাঁর সহদূতকে সমর্থন করেছিলেন যখন পারস্যের দুষ্ট অধ্যক্ষ তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ‘প্রতিকূলে দাঁড়িয়েছিলেন।’ দূত ব্যাখ্যা করেছিলেন: “দেখ, প্রধান অধ্যক্ষদের মধ্যে মীখায়েল নামক এক জন আমার সাহায্য করিতে আসিলেন; আর আমি সে স্থানে পারস্যের রাজগণের কাছে রহিলাম।”—দানিয়েল ১০:১৩, ২১.
মানবপূর্ব ও মানব মহিমা
সাধারণ কাল পূর্ব ৭৭৮ সালে যখন যিহূদী রাজ উষিয়ের মৃত্যু হয়, ঈশ্বরের ভাববাদী যিশাইয় দর্শনে তাঁর সুউচ্চ সিংহাসনে অধিষ্ঠিত যিহোবাকে দেখেছিলেন। “আমি কাহাকে পাঠাইব? আমাদের পক্ষে কে যাইবে?” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) যিহোবা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। যিশাইয় স্বেচ্ছায় এগিয়ে গিয়েছিলেন কিন্তু যিহোবা তাকে সতর্ক করেছিলেন যে তার সহইস্রায়েলীয়রা তার ঘোষণাগুলির প্রতি সাড়া দেবে না। প্রেরিত যোহন যিশাইয়ের দিনের লোকেদের সঙ্গে প্রথম শতাব্দীর অবিশ্বাসী যিহূদীদের তুলনা করেছিলেন ও উল্লেখ করেছিলেন: “যিশাইয় এই সমস্ত বলিয়াছিলেন, কেননা তিনি তাঁহার মহিমা দেখিয়াছিলেন।” কার মহিমা? যিহোবা এবং মানবপূর্ব যীশুর যিনি স্বর্গীয় আবাসস্থানে তাঁর সঙ্গে ছিলেন।—যিশাইয় ৬:১, ৮-১০; যোহন ১২:৩৭-৪১.
বেশ কিছু শতাব্দী পরে সেই সময় পর্যন্ত যীশুর সর্বমহৎ কার্যভারটি এসেছিল। যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রের জীবনীশক্তিকে স্বর্গ থেকে মরিয়মের গর্ভে স্থানান্তরিত করেছিলেন। নয় মাস পর তিনি শিশু যীশুকে জন্ম দিয়েছিলেন। (লূক ২:১-৭, ২১) প্রেরিত পৌলের কথায়: “কাল সম্পূর্ণ হইলে ঈশ্বর আপনার নিকট হইতে আপন পুত্ত্রকে প্রেরণ করিলেন; তিনি স্ত্রীজাত।” (গালাতীয় ৪:৪) অনুরূপভাবে, প্রেরিত যোহনও স্বীকার করেছিলেন: “সেই বাক্য মাংসে মূর্ত্তিমান হইলেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি অনুগ্রহে ও সত্যে পূর্ণ।”—যোহন ১:১৪.
মশীহ আবির্ভূত হন
মাত্র ১২ বছর বয়সে বালক যীশু উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে তাঁকে অবশ্যই তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাজে রত থাকতে হবে। (লূক ২:৪৮, ৪৯) প্রায় ১৮ বৎসর পরে, যীশু যর্দন নদীতে যোহন বাপ্তাইজকের কাছে এসেছিলেন ও বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। যীশু যখন প্রার্থনা করেছিলেন তখন স্বর্গ খুলে গিয়েছিল ও পবিত্র আত্মা তাঁর উপর নেমে এসেছিল। অজস্র স্মৃতিগুলির বিষয়ে কল্পনা করুন যা তাঁর মনে এসেছিল যখন তিনি প্রধান কার্যকারী, মুখপাত্র, ঈশ্বরের সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষ এবং প্রধান দূত মীখায়েল হিসাবে তাঁর পিতার সঙ্গে কাজ করার অগণিত হাজার হাজার বছরের কথা স্মরণ করেছিলেন। তারপর যোহন বাপ্তাইজককে বলা তাঁর পিতার স্বর শুনে তিনি শিহরিত হয়েছিলেন: “ইনিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, ইঁহাতেই আমি প্রীত।”—মথি ৩:১৬, ১৭; লূক ৩:২১, ২২.
যোহন বাপ্তাইজক নিশ্চিতভাবেই যীশুর মানবপূর্ব অস্তিত্বের বিষয়ে সন্দিহান ছিলেন না। যীশু যখন তাঁর নিকটে এসেছিলেন, তখন যোহন ঘোষণা করেছিলেন: “ঐ দেখ, ঈশ্বরের মেষশাবক, যিনি জগতের পাপভার লইয়া যান।” তিনি আরও বলেছিলেন: “উনি সেই ব্যক্তি, যাঁহার বিষয়ে আমি বলিয়াছিলাম, আমার পশ্চাৎ এমন এক ব্যক্তি আসিতেছেন, যিনি আমার অগ্রগণ্য হইলেন, কেননা তিনি আমার পূর্ব্বে ছিলেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যোহন ১:১৫, ২৯, ৩০) প্রেরিত যোহনও যীশুর পূর্ব অস্তিত্ব সম্বন্ধে জানতেন। “যিনি উপর হইতে আইসেন, তিনি সর্ব্বপ্রধান,” তিনি লিখেছিলেন এবং: “যিনি স্বর্গ হইতে আইসেন, তিনি সর্ব্বপ্রধান। তিনি যাহা দেখিয়াছেন, ও শুনিয়াছেন, তাহারই সাক্ষ্য দিতেছেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—যোহন ৩:৩১, ৩২.
প্রায় সা.কা. ৬১ সালে, প্রেরিত পৌল পৃথিবীতে মশীহের উপস্থিতি এবং মহাযাজকরূপে তাঁর কাজের সম্পূর্ণ গুরুত্বকে উপলব্ধি করতে ইব্রীয় খ্রীষ্টানদের পরামর্শ দিয়েছিলেন। মুখপাত্র হিসাবে যীশুর ভূমিকার প্রতি মনোযোগ আকৃষ্ট করিয়ে পৌল লিখেছিলেন: “ঈশ্বর . . . এই শেষ কালে পুত্ত্রেই আমাদিগকে বলিয়াছেন। . . . ইঁহারই দ্বারা যুগকলাপের রচনাও করিয়াছেন।” এটি সৃষ্টিতে “কার্য্যকারী” হিসাবে যীশুর ভূমিকা অথবা মানুষের সাথে পুনরায় সম্মিলনের জন্য ঈশ্বরের অগ্রগতিমূলক ব্যবস্থাগুলিতে তাঁর জড়িত থাকা, যাই নির্দেশ করুক না কেন, পৌল এখানে যীশুর মানবপূর্ব অস্তিত্ব সম্বন্ধে তার প্রামাণিক সাক্ষ্য প্রদান করেন।—ইব্রীয় ১:১-৬; ২:৯.
“প্রাক্কাল” হইতে নিষ্ঠা
ফিলিপীর প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের প্রতি পৌল এই পরামর্শ প্রদান করেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। ঈশ্বরের স্বরূপবিশিষ্ট থাকিতে তিনি ঈশ্বরের সহিত সমান থাকা ধরিয়া লইবার বিষয় জ্ঞান করিলেন না, কিন্তু আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন, মনুষ্যদের সাদৃশ্যে জন্মিলেন; এবং আকার প্রকারে মনুষ্যবৎ প্রত্যক্ষ হইয়া আপনাকে অবনত করিলেন; মৃত্যু পর্য্যন্ত, এমন কি, ক্রুশীয় মৃত্যু পর্য্যন্ত আজ্ঞাবহ হইলেন।” (ফিলিপীয় ২:৫-৮) যীশুকে পুনরুত্থিত করা এবং পরে তাঁকে গৃহে, স্বর্গে স্বাগত জানানোর দ্বারা যীশুর নিষ্ঠাপূর্ণ আচরণের প্রতি যিহোবা প্রেমের সঙ্গে সাড়া দিয়েছিলেন। যুগ যুগ ধরে আনুগত্যের কী এক অসাধারণ উদাহরণই না যীশু আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন!—১ পিতর ২:২১.
যীশুর মানবপূর্ব অস্তিত্ব সম্বন্ধে বাইবেল যে আভাসগুলি প্রদান করেছে তার জন্য আমরা কতই না কৃতজ্ঞ! সেগুলি নিশ্চিতভাবেই তাঁর নিষ্ঠাপূর্ণ পরিচর্যার উদাহরণ অনুকরণের জন্য আমাদের স্থিরসংকল্পকে শক্তিশালী করে, বিশেষভাবে এখন যখন তিনি ঈশ্বরের মশীহ রাজ্যের রাজা হিসাবে শাসন করছেন। আসুন আমরা “শান্তিরাজ” খ্রীষ্ট যীশু, আমাদের রাজ্যপাল ও শাসক যাঁর “প্রাক্কাল হইতে . . . উৎপত্তি” তাঁর প্রশংসা করি!—যিশাইয় ৯:৬; মীখা ৫:২.
[২৪ পৃষ্ঠার বাক্স]
মানবপূর্ব অস্তিত্বের প্রামাণিক সাক্ষ্য
নিম্নে প্রদত্ত যীশুর নিজ বাক্যগুলি তাঁর মানবপূর্ব অস্তিত্ব সম্বন্ধে ব্যাপকভাবে সাক্ষ্য দেয়:
◻ “স্বর্গে কেহ উঠে নাই; কেবল যিনি স্বর্গ হইতে নামিয়াছেন, সেই মনুষ্যপুত্ত্র, যিনি স্বর্গে থাকেন।”—যোহন ৩:১৩.
◻ “মোশি তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে সেই খাদ্য দেন নাই, কিন্তু আমার পিতাই তোমাদিগকে স্বর্গ হইতে প্রকৃত খাদ্য দেন। কেননা ঈশ্বরীয় খাদ্য তাহাই, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, ও জগৎকে জীবন দান করে। . . . আমার ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য আমি স্বর্গ হইতে নামিয়া আসি নাই, কিন্তু যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহারই ইচ্ছা সাধন করিবার জন্য।”—যোহন ৬:৩২, ৩৩, ৩৮.
◻ “এ সেই খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আইসে, যেন লোকে তাহা খায়, ও না মরে। আমিই সেই জীবন্ত খাদ্য, যাহা স্বর্গ হইতে নামিয়া আসিয়াছে। কেহ যদি এই খাদ্য খায়, তবে সে অনন্তকাল জীবিত থাকিবে।”—যোহন ৬:৫০, ৫১.
◻ “তবে মনুষ্যপুত্ত্র পূর্ব্বে যেখানে ছিলেন, সেখানে তোমরা তাঁহাকে উঠিতে দেখিলে কি বলিবে?”—যোহন ৬:৬২.
◻ “আমার সাক্ষ্য সত্য; কারণ আমি কোথা হইতে আসিয়াছি, কোথায়ই বা যাইতেছি, তাহা জানি; . . . তোমরা অধঃস্থানের, আমি ঊর্দ্ধ্বস্থানের; তোমরা এ জগতের, আমি এ জগতের নহি।”—যোহন ৮:১৪, ২৩.
◻ “ঈশ্বর যদি তোমাদের পিতা হইতেন, তবে তোমরা আমাকে প্রেম করিতে, কেননা আমি ঈশ্বর হইতে বাহির হইয়া আসিয়াছি; আমি ত আপনা হইতে আসি নাই, কিন্তু তিনিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছেন।”—যোহন ৮:৪২.
◻ “সত্য, সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, অব্রাহামের জন্মের পূর্ব্বাবধি আমি আছি।”—যোহন ৮:৫৮.
◻ “হে পিতঃ, জগৎ হইবার পূর্ব্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় তোমার নিজের কাছে আমাকে মহিমান্বিত কর। পিতঃ, আমার ইচ্ছা এই, আমি যেখানে থাকি, তুমি আমায় যাহাদিগকে দিয়াছ, তাহারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে, যেন তাহারা আমার সেই মহিমা দেখিতে পায়, যাহা তুমি আমাকে দিয়াছ, কেননা জগৎ পত্তনের পূর্ব্বে তুমি আমাকে প্রেম করিয়াছিলে।”—যোহন ১৭:৫, ২৪.
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোশূয় যিহোবার সেনাবাহিনীর অধ্যক্ষের দেখা পান