“তোমরা আমার বন্ধু”
“আমি তোমাদিগকে যাহা কিছু আজ্ঞা দিতেছি, তাহা যদি পালন কর, তবে তোমরা আমার বন্ধু।”—যোহন ১৫:১৪.
১, ২. (ক) যিশুর বন্ধুরা কোন কোন ভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছে? (খ) আমাদের জন্য যিশুর বন্ধু হওয়া কেন গুরুত্বপূর্ণ?
ওপরের কুঠরিতে যিশুর সঙ্গে বসে থাকা ব্যক্তিরা বিভিন্ন পটভূমি থেকে এসেছে। দুই ভাই পিতর ও আন্দ্রিয় জেলে ছিল। মথি আগে একজন করগ্রাহী—যিহুদিরা ঘৃণা করত এমন এক পেশার একজন সদস্য—ছিলেন। কেউ কেউ যেমন, যাকোব ও যোহন সম্ভবত যিশুকে ছেলেবেলা থেকেই চিনত। অন্যেরা যেমন, নথনেল হয়তো মাত্র কয়েক বছর ধরে তাঁকে চিনতেন। (যোহন ১:৪৩-৫০) তা সত্ত্বেও, যিরূশালেমে সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ নিস্তারপর্বের রাতে উপস্থিত সকলে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী ছিল যে, যিশুই ছিলেন প্রতিজ্ঞাত মশীহ, জীবন্ত ঈশ্বরের পুত্র। (যোহন ৬:৬৮, ৬৯) তাদের প্রতি বলা যিশুর এই কথাগুলো শুনে নিশ্চয়ই তাদের হৃদয় উষ্ণ হয়ে উঠেছিল: “তোমাদিগকে আমি বন্ধু বলিয়াছি, কারণ আমার পিতার নিকটে যাহা যাহা শুনিয়াছি, সকলই তোমাদিগকে জ্ঞাত করিয়াছি।”—যোহন ১৫:১৫.
২ তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদেরকে বলা যিশুর ওই কথাগুলো মূলত বর্তমান দিনের সমস্ত অভিষিক্ত খ্রিস্টানের বেলায় ও ব্যাপক অর্থে তাদের “আরও মেষ” সহযোগীদের বেলায় প্রযোজ্য। (যোহন ১০:১৬) আমাদের পটভূমি যা-ই হোক না কেন, আমাদের যিশুর বন্ধু হওয়ার বিশেষ সুযোগ থাকতে পারে। তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ তাঁর বন্ধু হওয়া আমাদেরকে যিহোবারও বন্ধু করে তোলে। বস্তুতপক্ষে, প্রথমে খ্রিস্টের নিকটবর্তী না হলে, যিহোবার নিকটবর্তী হওয়া অসম্ভব। (পড়ুন, যোহন ১৪:৬, ২১.) তাহলে, যিশুর বন্ধু হওয়ার ও সেই বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য আমাদের কী করতে হবে? এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা আলোচনা করার আগে, আসুন আমরা একজন উত্তম বন্ধু হওয়ার বিষয়ে যিশুর নিজের উদাহরণ পরীক্ষা করি এবং দেখি যে, তাঁর শিষ্যরা তাঁর প্রতি যে-প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি।
একজন উত্তম বন্ধু হওয়ার বিষয়ে যিশুর উদাহরণ
৩. যিশু কীসের জন্য পরিচিত ছিলেন?
৩ “ধনবানের অনেক বন্ধু আছে,” বিজ্ঞ রাজা শলোমন লিখেছিলেন। (হিতো. ১৪:২০) এই পর্যবেক্ষণ অসিদ্ধ মানুষের এই প্রবণতা সম্বন্ধে উপসংহার করে যে, তারা কী দিতে পারে, সেটার চেয়ে বরং তারা কী লাভ করতে পারে, সেটার ওপর ভিত্তি করে বন্ধুত্ব করে থাকে। যিশু এইরকম কোনো দুর্বলতা দেখাননি। তিনি একজন ব্যক্তির আর্থিক অথবা সামাজিক পদমর্যাদা দ্বারা প্রভাবিত হননি। এটা ঠিক যে, একজন ধনী যুবক শাসকের প্রতি যিশু ভালোবাসা অনুভব করেছিলেন এবং তাকে তাঁর অনুসারী হওয়ার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। কিন্তু, যিশু সেই ব্যক্তিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন যেন তিনি তার সমস্তকিছু বিক্রি করে সেগুলো দরিদ্রদের দান করেন। (মার্ক ১০:১৭-২২; লূক ১৮:১৮, ২৩) যিশু সমৃদ্ধশালী ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে নয় বরং সামান্য ও অবজ্ঞাত লোকদের সঙ্গে বন্ধু হওয়ার জন্য পরিচিত ছিলেন।—মথি ১১:১৯.
৪. কেন বলা যেতে পারে যে, যিশুর বন্ধুরা ভুলত্রুটিপ্রবণ ব্যক্তি ছিল?
৪ নিশ্চিতভাবেই, যিশুর বন্ধুরা ভুলত্রুটিপ্রবণ ব্যক্তি ছিল। একবার পিতর বিভিন্ন বিষয়কে আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন। (মথি ১৬:২১-২৩) যাকোব ও যোহন এক উচ্চাকাঙ্ক্ষী মনোভাব প্রকাশ করেছিল, যখন তারা যিশুকে বলেছিল যেন তিনি তাঁর রাজ্যে তাদেরকে বিশিষ্ট পদ দান করেন। তাদের এইরকম মনোভাব দেখে অন্য প্রেরিতরা ক্রুদ্ধ হয়ে গিয়েছিল আর বিশিষ্ট হওয়ার বিষয়টা ক্রমাগত বিবাদের এক কারণ ছিল। কিন্তু, যিশু ধৈর্যের সঙ্গে তাঁর বন্ধুদের চিন্তাভাবনা সংশোধন করার প্রচেষ্টা করেছিলেন এবং তাদের সঙ্গে অল্পতেই উত্তেজিত হয়ে ওঠেননি।—মথি ২০:২০-২৮.
৫, ৬. (ক) কেন যিশু বেশিরভাগ প্রেরিতের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন? (খ) কেন যিশু যিহূদার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছিলেন?
৫ যিশু অতিরিক্ত প্রশ্রয়ী অথবা তাদের অসিদ্ধতার বিষয়ে অন্ধ ছিলেন বলে যে এই অসিদ্ধ মানুষদের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন, এমন নয়। বরং, তিনি তাদের উত্তম মনোভাব ও ইতিবাচক গুণাবলির ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, পিতর, যাকোব ও যোহন যিশুর সবচেয়ে কঠিন সময়ে তাঁকে সমর্থন করার পরিবর্তে ঘুমিয়ে পড়েছিল। যিশু যুক্তিযুক্তভাবেই তাদের দেখে হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, এই কথাগুলো বলার দ্বারা তিনি দেখিয়েছিলেন যে, তাদের মনোভাব ভালো ছিল: “আত্মা ইচ্ছুক বটে, কিন্তু মাংস দুর্ব্বল।”—মথি ২৬:৪১.
৬ অন্যদিকে, যিশু ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব শেষ করে দিয়েছিলেন। যদিও যিহূদা বাইরে দিয়ে বন্ধুত্বের বেশ ধারণ করে রেখেছিল কিন্তু যিশু এই বিষয়টা আবিষ্কার করতে পেরেছিলেন যে, এই প্রাক্তন ঘনিষ্ঠ সঙ্গী তার হৃদয়কে কলুষিত হতে দিয়েছিল। যেহেতু যিহূদা জগতের বন্ধু হয়ে উঠেছিল, তাই সে নিজেকে ঈশ্বরের শত্রুতে পরিণত করেছিল। (যাকোব ৪:৪) সুতরাং, যিশু যখন বাকি ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব সম্বন্ধে ঘোষণা করেছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই তিনি যিহূদাকে বাদ দিয়ে দিয়েছিলেন।—যোহন ১৩:২১-৩৫.
৭, ৮. কীভাবে যিশু তাঁর বন্ধুদের প্রতি প্রেম প্রকাশ করেছিলেন?
৭ যিশু তাঁর অনুগত বন্ধুদের ভুলত্রুটিকে উপেক্ষা করেছিলেন এবং তাদের মঙ্গলের জন্য কাজ করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি তাঁর পিতার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন যেন তিনি তাদের পরীক্ষার সময় সুরক্ষা করেন। (পড়ুন, যোহন ১৭:১১.) যিশু তাদের শারীরিক সীমাবদ্ধতার প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন। (মার্ক ৬:৩০-৩২) আর তিনি তাদেরকে কেবল নিজের চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বলতেই নয় বরং তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি শুনতে এবং বুঝতেও আগ্রহী ছিলেন।—মথি ১৬:১৩-১৬; ১৭:২৪-২৬.
৮ যিশু তাঁর বন্ধুদের জন্য বেঁচে ছিলেন ও মৃত্যুবরণ করেছিলেন। এটা ঠিক, তিনি জানতেন যে, তাঁর পিতার ন্যায়বিচারের মান পূরণ করার জন্য এক বৈধ চাহিদা হিসেবে তাঁকে তাঁর জীবন দান করতে হবে। (মথি ২৬:২৭, ২৮; ইব্রীয় ৯:২২, ২৮) কিন্তু, যিশু প্রেমের প্রকাশ হিসেবে তাঁর জীবন দান করেছিলেন। “কেহ যে আপন বন্ধুদের নিমিত্ত নিজ প্রাণ সমর্পণ করে,” যিশু বলেছিলেন, “ইহা অপেক্ষা অধিক প্রেম কাহারও নাই।”—যোহন ১৫:১৩.
যিশুর বন্ধুত্বের প্রতি শিষ্যরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
৯, ১০. যিশুর উদারতার প্রতি লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
৯ যিশু তাঁর সময় প্রদান করার, স্নেহ দেখানোর ও সম্পদ বিলিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে উদার ছিলেন। এর ফলে, লোকেরা তাঁর প্রতি আকৃষ্ট হতো এবং প্রতিদানে তাঁকেও দান করে আনন্দিত ছিল। (লূক ৮:১-৩) ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে যিশু বলতে পেরেছিলেন: “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।”—লূক ৬:৩৮.
১০ অবশ্য, কেউ কেউ কেবল যিশুর কাছ থেকে পাওয়ার জন্য তাঁর সঙ্গে মেলামেশা করার চেষ্টা করত। এই মিথ্যা বন্ধুরা যিশুকে সেই সময় পরিত্যাগ করেছিল, যখন তারা যিশুর বলা কিছু কথাকে ভুলভাবে বুঝেছিল। তারা যখন যিশুর বলা কিছু কথা বুঝতে পারেনি, তখন যিশুর ওপর নির্ভর করার পরিবর্তে তারা সত্বর ভুল উপসংহারে পৌঁছেছিল এবং তাঁকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অন্যদিকে, প্রেরিতরা অনুগত ছিল। খ্রিস্টের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্ব প্রায়ই পরীক্ষিত হয়েছিল কিন্তু তারা সুসময় ও দুঃসময় উভয় সময়ই তাঁকে সমর্থন করার জন্য তাদের যথাসাধ্য করেছিল। (পড়ুন, যোহন ৬:২৬, ৫৬, ৬০, ৬৬-৬৮.) পৃথিবীতে একজন মানুষ হিসেবে তাঁর শেষরাতে যিশু এই বলে তাঁর বন্ধুদের প্রতি উপলব্ধি প্রকাশ করেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ।”—লূক ২২:২৮.
১১, ১২. কীভাবে যিশু তাঁর শিষ্যদের আশ্বাস দিয়েছিলেন আর তারা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১১ যিশু তাঁর শিষ্যদের আনুগত্যের জন্য প্রশংসা করার কয়েক দিন পরেই, তারা তাঁকে পরিত্যাগ করেছিল। সংক্ষেপে বললে, মনুষ্যভয়ের কারণে খ্রিস্টের প্রতি তাদের ভালোবাসাকে তারা চাপা পড়ে যেতে দিয়েছিল। আবারও যিশু তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর তিনি তাদেরকে দেখা দিয়েছিলেন এবং তাদেরকে তাঁর বন্ধুত্বের বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন। অধিকন্তু, তিনি তাদেরকে আস্থা সহকারে এক পবিত্র দায়িত্ব—“সমুদয় জাতিকে” শিষ্য করার ও “পৃথিবীর প্রান্ত পর্য্যন্ত” তাঁর সাক্ষি হওয়ার দায়িত্ব—দিয়েছিলেন। (মথি ২৮:১৯; প্রেরিত ১:৮) শিষ্যরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
১২ শিষ্যরা রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য তাদের যথাসাধ্য করেছিল। যিহোবার পবিত্র আত্মার সমর্থনে তারা শীঘ্র তাদের শিক্ষা দ্বারা যিরূশালেম পরিপূর্ণ করেছিল। (প্রেরিত ৫:২৭-২৯) এমনকী মৃত্যুর হুমকিও তাদেরকে শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে যিশুর আজ্ঞার বাধ্য হওয়া থেকে বিরত করতে পারেনি। যিশুর আজ্ঞা পাওয়ার মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে প্রেরিত পৌল লিখতে পেরেছিলেন যে, সুসমাচার “আকাশমণ্ডলের অধঃস্থিত সমস্ত সৃষ্টির কাছে” প্রচারিত হয়েছে। (কল. ১:২৩) নিশ্চিতভাবেই, এই প্রেরিতরা প্রমাণ করে দেখিয়েছিল যে, যিশুর সঙ্গে তাদের যে-বন্ধুত্ব রয়েছে, সেটাকে তারা মূল্যবান বলে গণ্য করে!
১৩. কোন কোন উপায়ে যিশুর শিষ্যরা তাঁর শিক্ষাগুলোকে নিজেদের ওপর প্রভাব ফেলতে দিয়েছিল?
১৩ এ ছাড়া, যারা শিষ্য হয়েছিল, তারা যিশুর শিক্ষাগুলোকে নিজেদের ব্যক্তিগত জীবনের ওপর প্রভাব ফেলতে দিয়েছিল। অনেকের জন্য এর অর্থ ছিল তাদের আচরণ ও ব্যক্তিত্বে বড় বড় পরিবর্তন করা। কিছু নতুন শিষ্য পূর্বে সমকামী, পারদারিক, মাতাল অথবা চোর ছিল। (১ করি. ৬:৯-১১) অন্যদেরকে, আরেক জাতি থেকে আসা ব্যক্তিদের প্রতি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করতে হয়েছিল। (প্রেরিত ১০:২৫-২৮) তবুও, তারা যিশুর বাধ্য ছিল। তারা তাদের পুরোনো মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব পরিবর্তন করে নতুন ব্যক্তিত্ব পরিধান করেছিল। (ইফি. ৪:২০-২৪) তারা “খ্রীষ্টের মন” সম্বন্ধে জেনেছিল আর তাঁর চিন্তাধারা ও কাজের ধরন বুঝতে এবং উপলব্ধি করতে পেরেছিল।—১ করি. ২:১৬.
বর্তমানে খ্রিস্টের সঙ্গে বন্ধুত্ব
১৪. “যুগান্তের” বা বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে যিশু কী করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন?
১৪ প্রথম শতাব্দীর খ্রিস্টানদের অনেকে যিশুকে ব্যক্তিগতভাবে চিনত অথবা তাঁর পুনরুত্থানের পরে তাঁকে দেখেছিল। স্পষ্টতই, আমাদের সেই বিশেষ সুযোগ হয়নি। তাহলে, কীভাবে আমরা খ্রিস্টের বন্ধু হতে পারি? একটা উপায় হল, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণীর দ্বারা জোগানো নির্দেশনার বাধ্য হয়ে, যা পৃথিবীতে এখনও বেঁচে থাকা যিশুর আত্মায় অভিষিক্ত ভাইদের নিয়ে গঠিত। যিশু প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, “যুগান্তের” বা বিধিব্যবস্থার শেষ সময়ে তিনি এই দাসকে “আপন সর্ব্বস্বের” অধ্যক্ষ করবেন। (মথি ২৪:৩, ৪৫-৪৭) বর্তমানে, খ্রিস্টের বন্ধু হতে চায় এমন বিপুল সংখ্যক লোকের অধিকাংশই এই দাস শ্রেণীর সদস্য নয়। বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীর কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনার প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া, খ্রিস্টের সঙ্গে তাদের বন্ধুত্বের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে?
১৫. কোন বিষয়টা নির্ধারণ করবে যে, একজন ব্যক্তি ছাগ নাকি মেষ শ্রেণীর?
১৫ মথি ২৫:৩১-৪০ পদ পড়ুন। যাদেরকে নিয়ে বিশ্বস্ত দাস শ্রেণী গঠিত হবে, তাদেরকে যিশু তাঁর ভাই বলে অভিহিত করেছিলেন। ছাগ থেকে মেষকে পৃথক করার দৃষ্টান্তে যিশু স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, আমরা তাঁর ভাইদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করি, সেটাকে তিনি তাঁর প্রতিই করা হচ্ছে বলে ধরে নেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি বলেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি ‘তাঁহার ভ্রাতৃগণের’ মধ্যে এমনকী “ক্ষুদ্রতমদিগের” সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেটাই একটা ছাগ থেকে একটা মেষকে পৃথক করবে। তাই, পার্থিব আশাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যে-প্রধান উপায়ে খ্রিস্টের বন্ধু হওয়ার বিষয়ে তাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে, তা হল বিশ্বস্ত দাস শ্রেণীকে সমর্থন করার মাধ্যমে।
১৬, ১৭. কীভাবে আমরা খ্রিস্টের ভাইদের প্রতি আমাদের বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে পারি?
১৬ আপনি যদি ঈশ্বরের রাজ্যের অধীনস্থ পৃথিবীতে বাস করতে চান, তাহলে কীভাবে আপনি খ্রিস্টের ভাইদের প্রতি আপনার বন্ধুত্ব প্রকাশ করতে পারেন? আসুন, আমরা কেবল তিনটে উপায় বিবেচনা করি। প্রথমত, পূর্ণহৃদয়ে প্রচার কাজে অংশ নিয়ে। খ্রিস্ট তাঁর ভাইদের পৃথিবীব্যাপী সুসমাচার প্রচার করার আজ্ঞা দিয়েছিলেন। (মথি ২৪:১৪) কিন্তু, বর্তমানে পৃথিবীতে খ্রিস্টের ভাইদের অবশিষ্টাংশের পক্ষে তাদের আরও মেষ সহযোগীদের সাহায্য ছাড়া সেই দায়িত্ব সম্পাদন করা কঠিন হতো। সত্যিই, আরও মেষ শ্রেণী প্রতি বার যখন প্রচার কাজে রত হয়, তারা খ্রিস্টের ভাইদেরকে তাদের পবিত্র দায়িত্ব পালন করায় সাহায্য করে। বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস শ্রেণী তাদের বন্ধুত্বপূর্ণ এই কাজকে গভীরভাবে উপলব্ধি করে, যেমনটা খ্রিস্টও করে থাকেন।
১৭ দ্বিতীয় যে-উপায়ে আরও মেষ শ্রেণী খ্রিস্টের ভাইদের সাহায্য করতে পারে, তা হল প্রচার কাজে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। যিশু তাঁর অনুসারীদের উৎসাহিত করেছিলেন যে, তারা যেন “অধার্ম্মিকতার ধন” দ্বারা মিত্র লাভ করে। (লূক ১৬:৯) এর অর্থ এই নয় যে, আমরা যিশু অথবা যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কিনে নিতে পারি। বরং, রাজ্যের বিষয়গুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের বস্তুগত সম্পদগুলো ব্যবহার করার দ্বারা আমরা কেবল কথার মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “কার্য্যে ও সত্যে” আমাদের বন্ধুত্বের এবং প্রেমের প্রমাণ দিই। (১ যোহন ৩:১৬-১৮) আমরা যখন প্রচার কাজে অংশ নিই, আমাদের উপাসনা স্থান নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য টাকাপয়সা দান করি এবং বিশ্বব্যাপী শিক্ষামূলক কাজের জন্য অর্থ প্রদান করি, তখন আমরা এই ধরনের আর্থিক সমর্থন জুগিয়ে থাকি। আমরা যা দান করি, সেটার পরিমাণ ছোটো বা বড়ো যা-ই হোক না কেন, যিহোবা ও যিশু উভয়েই নিশ্চিতভাবেই আমাদের হৃষ্টচিত্তে প্রদত্ত দানকে মূল্যবান বলে গণ্য করে।—২ করি. ৯:৭.
১৮. কেন আমাদের মণ্ডলীর প্রাচীনদের দ্বারা জোগানো বাইবেলভিত্তিক নির্দেশনা মেনে চলা হওয়া উচিত?
১৮ তৃতীয় যে-উপায়ে আমরা সকলে প্রমাণ দিই যে, আমরা খ্রিস্টের বন্ধু, তা হল মণ্ডলীর প্রাচীনদের দ্বারা জোগানো নির্দেশনার সঙ্গে সহযোগিতা করে। এই ব্যক্তিরা খ্রিস্টের নির্দেশাধীনে পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত। (ইফি. ৫:২৩) প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) মাঝে মাঝে, স্থানীয় প্রাচীনরা আমাদেরকে বাইবেলভিত্তিক যে-নির্দেশনা প্রদান করে, তা মেনে চলাকে আমরা হয়তো কঠিন বলে মনে করি। আমরা সম্ভবত তাদের অসিদ্ধতাগুলো সম্বন্ধে জানি আর এটা হয়তো তাদের পরামর্শের প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিকে বিকৃত করে দিতে পারে। তা সত্ত্বেও, মণ্ডলীর মস্তক খ্রিস্ট এই অসিদ্ধ ব্যক্তিদেরকে ব্যবহার করতে পেরে আনন্দিত। তাই, তাদের কর্তৃত্বের প্রতি আমরা যে-প্রতিক্রিয়া দেখাই, তা খ্রিস্টের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। আমরা যখন প্রাচীনদের ভুলত্রুটিগুলো উপেক্ষা করি এবং আনন্দের সঙ্গে তাদের নির্দেশনা মেনে চলি, তখন আমরা খ্রিস্টের প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই।
যেখানে আমরা উত্তম বন্ধুদের খুঁজে পেতে পারি
১৯, ২০. মণ্ডলীর মধ্যে আমরা কী খুঁজে পেতে পারি আর এরপর আমরা কী বিবেচনা করব?
১৯ যিশু ক্রমাগত আমাদের যত্ন নেন আর তা কেবল প্রেমময় পালকদের তত্ত্বাবধানের মাধ্যমেই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে মণ্ডলীর মধ্যে আধ্যাত্মিক মা ও ভাই এবং বোনদের জোগানোর মাধ্যমেও। (পড়ুন, মার্ক ১০:২৯, ৩০.) আপনি যখন প্রথম যিহোবার সংগঠনের সঙ্গে মেলামেশা করতে শুরু করেছিলেন, তখন আপনার আত্মীয়স্বজন কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল? তারা হয়তো ঈশ্বর ও খ্রিস্টের নিকটবর্তী হওয়ার বিষয়ে আপনার প্রচেষ্টাকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু, যিশু সাবধান করে দিয়েছিলেন যে, মাঝে মাঝে “আপন আপন পরিজনই মনুষ্যের শত্রু হইবে।” (মথি ১০:৩৬) এটা জানা কতই না সান্ত্বনাদায়ক যে, মণ্ডলীর মধ্যেই আমরা সেই ব্যক্তিদের খুঁজে পেতে পারি, যারা একজন আপন ভাইয়ের চেয়েও আমাদের ঘনিষ্ঠ থাকবে!—হিতো. ১৮:২৪.
২০ রোমের মণ্ডলীর প্রতি লেখা তার চিঠির শেষে পৌলের ব্যক্তিগত শুভেচ্ছার দ্বারা ইঙ্গিত পাওয়া যায় যে, তিনি অনেক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। (রোমীয় ১৬:৮-১৬) প্রেরিত যোহন তার তৃতীয় চিঠিটি এই কথাগুলো দিয়ে শেষ করেছিলেন: “তুমি প্রত্যেকের নাম করিয়া বন্ধুদিগকে মঙ্গলবাদ কর।” (৩ যোহন ১৫) স্পষ্টতই, তিনিও অনেক স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তুলেছিলেন। আমাদের আধ্যাত্মিক ভাই ও বোনদের সঙ্গে গঠনমূলক বন্ধুত্ব গড়ে তোলার এবং তা বজায় রাখার মাধ্যমে কীভাবে আমরা যিশু ও প্রাথমিক শিষ্যদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি? আমাদের পরের প্রবন্ধে এই প্রশ্নের উত্তর বিবেচনা করা হবে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• একজন উত্তম বন্ধু হওয়ার বিষয়ে যিশু কোন উদাহরণ স্থাপন করেছেন?
• যিশুর বন্ধুত্বের প্রতি শিষ্যরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
• কীভাবে আমরা নিজেদেরকে খ্রিস্টের বন্ধু বলে প্রমাণ করতে পারি?
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিশু তাঁর বন্ধুদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতির ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
কীভাবে আমরা খ্রিস্টের বন্ধু হওয়ার ব্যাপারে আমাদের আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করতে পারি?