যিশুর প্রেমপূর্ণ প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করুন
“পিতঃ, . . . তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন পুত্র তোমাকে মহিমান্বিত করেন।”—যোহন ১৭:১.
১, ২. তেত্রিশ খ্রিস্টাব্দে নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করার পর, যিশু তাঁর বিশ্বস্ত প্রেরিতদের জন্য যা করেছিলেন, তা ব্যাখ্যা করুন।
সময়টা হল ৩৩ খ্রিস্টাব্দের ১৪ নিশান সন্ধ্যাবেলা। যিশু ও তাঁর সঙ্গীরা নিস্তারপর্ব উদ্যাপন করেছে আর এটা তাদেরকে কীভাবে ঈশ্বর তাদের পিতৃপুরুষদের মিশরের দাসত্ব থেকে উদ্ধার করেছিলেন, সেটা মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু, তাঁর বিশ্বস্ত শিষ্যরা আরও মহৎ “অনন্তকালীয় মুক্তি” লাভ করতে যাচ্ছে। পরের দিন, তাদের নিষ্পাপ নেতাকে তাঁর শত্রুরা মৃত্যুদণ্ড দেবে। কিন্তু, এই ঘৃণাপূর্ণ কাজ এক আশীর্বাদে পরিণত হবে। যিশুর পাতিত রক্ত, মানবজাতির জন্য পাপ ও মৃত্যু থেকে উদ্ধার লাভ করার ভিত্তি জোগাবে।—ইব্রীয় ৯:১২-১৪.
২ আমরা যেন এই প্রেমপূর্ণ ব্যবস্থা সম্বন্ধে ভুলে না যাই, সেজন্য যিশু এক নতুন বার্ষিক উদ্যাপন প্রবর্তন করেন, যা নিস্তারপর্বের পরিবর্তে পালন করা হবে। আর তা তিনি একটা তাড়িশূন্য রুটি ভেঙে সেটা তাঁর ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতের সামনে দিয়ে ঘোরানোর মাধ্যমে করেছিলেন, তিনি বলেছিলেন: “ইহা আমার শরীর, যাহা তোমাদের নিমিত্ত দেওয়া যায়, ইহা আমার স্মরণার্থে করিও।” একটা পানপাত্রে লাল দ্রাক্ষারস নিয়ে তিনি একই বিষয় করেছিলেন, তাদেরকে বলেছিলেন: “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম, যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়।”—লূক ২২:১৯, ২০.
৩. (ক) যিশুর মৃত্যুর পর কোন বিরাট পরিবর্তন হয়েছিল? (খ) যোহন ১৭ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ যিশুর প্রার্থনার বিষয়ে আমাদের কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করা উচিত?
৩ ঈশ্বর ও জন্মগত ইস্রায়েলীয়দের মধ্যে যে-পুরাতন ব্যবস্থা চুক্তি ছিল, সেটা শীঘ্র শেষ হতে চলছিল। এর পরিবর্তে এক নতুন চুক্তি স্থাপন করা হবে আর তা যিহোবা ও যিশুর অভিষিক্ত অনুসারীদের মধ্যে। যিশু তাঁর নতুন আধ্যাত্মিক জাতির মঙ্গলের বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন। জন্মগত ইস্রায়েল ধর্মীয় এবং সামাজিক দিক দিয়ে পুরোপুরিভাবে বিভক্ত হয়ে পড়েছিল আর এটা ঈশ্বরের পবিত্র নামের ওপর বিরাট নিন্দা নিয়ে এসেছিল। (যোহন ৭:৪৫-৪৯; প্রেরিত ২৩:৬-৯) এর বৈসাদৃশ্যে, যিশু চেয়েছিলেন যেন তাঁর অনুসারীরা সম্পূর্ণরূপে একতাবদ্ধ থাকে, যাতে তারা ঈশ্বরের নামের গৌরব নিয়ে আসার জন্য একত্রে কাজ করতে পারে। তাই, যিশু কী করেন? তিনি সবচেয়ে চমৎকার এক প্রার্থনা করেন, যা সর্বকালের যেকোনো মানুষ পড়ার বিশেষ সুযোগ পাবে। (যোহন ১৭:১-২৬; শিরোনামের পাশে দেওয়া ছবিটা দেখুন।) আমরা পিছনের দিকে তাকিয়ে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে পারি, “ঈশ্বর কি যিশুর প্রার্থনার উত্তর দিয়েছেন?” এ ছাড়া, আমাদের নিজেদেরও পরীক্ষা করা এবং এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত: “আমি কি এই প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছি?”
যিশুর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো
৪, ৫. (ক) যিশুর প্রার্থনার ভূমিকা থেকে আমরা কী শিখি? (খ) যিহোবা কীভাবে যিশুর ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে তাঁর ব্যক্তিগত অনুরোধের উত্তর দিয়েছিলেন?
৪ যিশু অনেক রাত পর্যন্ত কথা বলেন, তাঁর শিষ্যদেরকে ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রাপ্ত মূল্যবান জ্ঞান সম্বন্ধে জানান। এরপর তিনি স্বর্গের দিকে তাকিয়ে প্রার্থনা করেন: “পিতঃ, সময় উপস্থিত হইল; তোমার পুত্রকে মহিমান্বিত কর, যেন পুত্র তোমাকে মহিমান্বিত করেন; যেমন তুমি তাঁহাকে মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে কর্ত্তৃত্ব দিয়াছ, যেন, তুমি যে সমস্ত তাঁহাকে দিয়াছ, তিনি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দেন। . . . তুমি আমাকে যে কার্য্য করিতে দিয়াছ, তাহা সমাপ্ত করিয়া আমি পৃথিবীতে তোমাকে মহিমান্বিত করিয়াছি। আর এক্ষণে, হে পিতঃ, জগৎ হইবার পূর্ব্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় তোমার নিজের কাছে আমাকে মহিমান্বিত কর।”—যোহন ১৭:১-৫.
৫ যিশুর প্রার্থনার ভূমিকাতে তাঁর অগ্রাধিকারের বিষয়গুলো লক্ষ করুন। তাঁর প্রধান চিন্তার বিষয় হল, তাঁর স্বর্গীয় পিতার মহিমা আর এই বিষয়টা যিশুর আদর্শ প্রার্থনার প্রথম অনুরোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ: “পিতঃ, তোমার নাম পবিত্র বলিয়া মান্য হউক।” (লূক ১১:২) যিশুর পরবর্তী চিন্তার বিষয় হল, তাঁর শিষ্যদের প্রয়োজন সম্বন্ধে, যেন “তিনি তাহাদিগকে অনন্ত জীবন দেন।” এরপর, যিশু এই কথা বলার দ্বারা এক ব্যক্তিগত বিনতি জানান: “হে পিতঃ, জগৎ হইবার পূর্ব্বে তোমার কাছে আমার যে মহিমা ছিল, তুমি সেই মহিমায় তোমার নিজের কাছে আমাকে মহিমান্বিত কর।” যিহোবা তাঁর বিশ্বস্ত পুত্রকে স্বর্গদূতদের চেয়ে ‘উৎকৃষ্ট নাম’ দেওয়ার মাধ্যমে পুত্র যা চান, সেটার চেয়ে এমনকী আরও বেশি কিছু দিয়ে পুরস্কৃত করেন।—ইব্রীয় ১:৪.
‘একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে জানা’
৬. অমর জীবন লাভ করার জন্য প্রেরিতদের কী করতে হতো আর কীভাবে আমরা জানি যে, তারা সফল হয়েছিল?
৬ এ ছাড়া, পাপী হিসেবে অনন্তজীবনের অযাচিত দান লাভ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে হলে আমাদের কী করতে হবে, সেই সম্বন্ধেও যিশু প্রার্থনা করেন। (পড়ুন, যোহন ১৭:৩.) তিনি বলেন যে, আমাদের অবশ্যই ঈশ্বর ও খ্রিস্টকে “জানিতে” অথবা তাদের সম্বন্ধে জ্ঞান নিতে হবে। তা করার একটা উপায়ের সঙ্গে, যিহোবা এবং তাঁর পুত্র সম্বন্ধে আরও জানার জন্য আমাদের চোখ ও কান ব্যবহার করা জড়িত। ঈশ্বর সম্বন্ধে জ্ঞান নেওয়ার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, সেই আনন্দপূর্ণ অনুভূতি উপভোগ করা, যা তাঁর সম্বন্ধে আমরা যা শিখি, তা কাজে লাগানোর মাধ্যমে আসে। প্রেরিতরা এই জীবনদানকারী প্রক্রিয়া অনুসরণ করেছিল, কারণ যিশু প্রার্থনায় বলে চলেন: “তুমি আমাকে যে সকল বাক্য দিয়াছ, তাহা আমি তাহাদিগকে দিয়াছি; আর তাহারা গ্রহণও করিয়াছে।” (যোহন ১৭:৮) কিন্তু, অনন্তজীবন লাভ করার জন্য তাদের ঈশ্বরের বাক্যগুলো নিয়ে ধ্যান করে চলা এবং সেই বাক্যগুলো তাদের রোজকার জীবনে কাজে লাগানো প্রয়োজন ছিল। বিশ্বস্ত প্রেরিতরা কি তাদের পার্থিব জীবনের শেষ পর্যন্ত তা করে চলার ক্ষেত্রে সফল হয়েছিল? অবশ্যই হয়েছিল। আমরা তা জানি, কারণ তাদের প্রত্যেকের নাম স্বর্গীয় নতুন যিরূশালেমের দ্বাদশ ভিত্তিমূলে স্থায়ীভাবে লিখিত আছে।—প্রকা. ২১:১৪.
৭. ঈশ্বরকে ‘জানিতে পারার’ অর্থ কী এবং কেন তা অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
৭ আমরা যদি চিরকাল বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে আমাদের ঈশ্বর সম্বন্ধে “জানিতে” বা জ্ঞান নিয়ে চলতে হবে। এর অর্থ কী? এখানে যে-গ্রিক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটিকে “জানিয়া চলা উচিত” অথবা “ক্রমাগত জানা উচিত” হিসেবেও অনুবাদ করা যেতে পারে। তাই, ঈশ্বর সম্বন্ধে ‘জানা’ বা জ্ঞান নিয়ে চলার অর্থ হল, তাঁর সম্বন্ধে আরও বেশি করে শেখা। তবে, নিখিলবিশ্বের সবচেয়ে মহান ব্যক্তিকে জানার সঙ্গে কেবল ঈশ্বরের গুণাবলি ও উদ্দেশ্য সম্বন্ধে বুঝতে পারার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত। যিহোবাকে জানার অন্তর্ভুক্ত হল, তাঁর সঙ্গে এবং সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে প্রেমের এক ঘনিষ্ঠ বন্ধন থাকা। “যে প্রেম করে না,” বাইবেল ব্যাখ্যা করে, “সে ঈশ্বরকে জানে না।” (১ যোহন ৪:৮) তাই, ঈশ্বরকে জানার অন্তর্ভুক্ত, তাঁর বাধ্য হওয়া। (পড়ুন, ১ যোহন ২:৩-৫.) এইরকম একজন ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হওয়া কতই-না বিরাট এক সুযোগ যে, আমরা যিহোবাকে জানি! কিন্তু, ঈষ্করিয়োতীয় যিহূদার ক্ষেত্রে যেমনটা হয়েছিল, তেমনই এই মূল্যবান সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যেতে পারে। আসুন আমরা তা বজায় রাখার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করি। তাহলেই, পরিশেষে আমরা অনন্তজীবনের অযাচিত দান লাভ করার জন্য যোগ্য হয়ে উঠতে পারব।—মথি ২৪:১৩.
“তোমার নামে”
৮, ৯. তাঁর পার্থিব পরিচর্যার সময় যিশুর প্রধান চিন্তার বিষয় কী ছিল এবং তিনি কোন ধর্মীয় পরম্পরাগত বিধি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন?
৮ যোহন ১৭ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ যিশুর প্রার্থনা সম্বন্ধে পাঠ করার পর, এই বিষয়টা স্পষ্ট হয় যে, যিশুর কেবল তাঁর প্রেরিতদের জন্যই নয় বরং আমাদের জন্যও গভীর প্রেম ছিল। (যোহন ১৭:২০) একইসঙ্গে, আমাদের এও বুঝতে হবে যে, আমাদের পরিত্রাণই যিশুর প্রধান চিন্তার বিষয় ছিল না। তাঁর পার্থিব পরিচর্যার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, তাঁর পিতার নামের পবিত্রীকরণ ও মহিমার জন্য কাজ করা। উদাহরণ স্বরূপ, নাসরতের সমাজগৃহে তাঁর কার্যভার সম্বন্ধে ঘোষণা করতে গিয়ে, যিশু যিশাইয়ের পুস্তক থেকে এই কথাগুলো পাঠ করেছিলেন: “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] আত্মা আমাতে অধিষ্ঠান করেন, কারণ তিনি আমাকে অভিষিক্ত করিয়াছেন, দরিদ্রদের কাছে সুসমাচার প্রচার করিবার জন্য।” নিঃসন্দেহে, যিশু সেই সময় ঈশ্বরের নাম স্পষ্টভাবে ঘোষণা করেছিলেন, যখন তিনি এই কার্যভার সম্বন্ধে পাঠ করেছিলেন।—লূক ৪:১৬-২১.
৯ যিহুদি পরম্পরাগত বিধি অনুসারে, যিশু পৃথিবীতে আসার অনেক আগে থেকেই ধর্মীয় নেতারা লোকেদেরকে ঈশ্বরের নাম ব্যবহার করার ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করেছিল। আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিশু এই ধরনের এক অশাস্ত্রীয় পরম্পরাগত বিধি দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। তিনি তাঁর বিরোধীদের বলেছিলেন: “আমি আপন পিতার নামে আসিয়াছি, আর তোমরা আমাকে গ্রহণ কর না; অন্য কেহ যদি আপনার নামে আইসে, তাহাকে তোমরা গ্রহণ করিবে।” (যোহন ৫:৪৩) এরপর তাঁর মৃত্যুর মাত্র কয়েক দিন আগে যিশু এই প্রার্থনা করার দ্বারা তাঁর জীবনের প্রধান চিন্তার বিষয় সম্বন্ধে প্রকাশ করেছিলেন: “পিতঃ, তোমার নাম মহিমান্বিত কর।” (যোহন ১২:২৮) তাই, এতে আমাদের অবাক হওয়া উচিত নয় যে, আমরা এখন যিশুর যে-প্রার্থনা পরীক্ষা করছি, সেই প্রার্থনাজুড়ে তিনি তাঁর পিতার নাম সম্বন্ধে চিন্তা প্রকাশ করেছিলেন।
১০, ১১. (ক) যিশু যে তাঁর পিতার নাম জানিয়েছিলেন, সেটার সঙ্গে কী জড়িত ছিল? (খ) যিশুর শিষ্যদের কোন লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কাজ করা উচিত?
১০ “জগতের মধ্য হইতে তুমি আমাকে যে লোকদের দিয়াছ” যিশু প্রার্থনা করেছিলেন, “আমি তাহাদের কাছে তোমার নাম প্রকাশ করিয়াছি। তাহারা তোমারই ছিল, এবং তাহাদের তুমি আমাকে দিয়াছ, আর তাহারা তোমার বাক্য পালন করিয়াছে। আমি আর জগতে নাই, কিন্তু ইহারা জগতে রহিয়াছে, এবং আমি তোমার নিকটে আসিতেছি। পবিত্র পিতঃ, তোমার নামে তাহাদিগকে রক্ষা কর—যে নাম তুমি আমাকে দিয়াছ—যেন তাহারা এক হয়, যেমন আমরা এক।”—যোহন ১৭:৬, ১১.
১১ তাঁর শিষ্যদেরকে তাঁর পিতার নাম জানানোর সঙ্গে কেবল মুখে সেই নাম ঘোষণা করার চেয়ে আরও বেশি কিছু জড়িত ছিল। যিশু তাদেরকে ঈশ্বরের নাম যে-বিষয়টাকে চিত্রিত করে অর্থাৎ ঈশ্বরের অপূর্ব গুণাবলি ও আমাদের সঙ্গে তাঁর আচরণের উপায় সম্বন্ধে জানতেও সাহায্য করেছিলেন। (যাত্রা. ৩৪:৫-৭) অধিকন্তু, স্বর্গে তাঁর মহিমান্বিত অবস্থানে থেকে তিনি তাঁর শিষ্যদেরকে সারা পৃথিবীতে যিহোবার নাম জানানোর জন্য সাহায্য করে যাচ্ছেন। কোন লক্ষ্যের কথা মনে রেখে? এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ আসার আগে যাতে আরও শিষ্যকে একত্রিত করা যেতে পারে। এরপর, তিনি যখন তাঁর অনুগত সাক্ষিদের উদ্ধার করার জন্য পদক্ষেপ নেবেন, তখন যিহোবা নিজের অপূর্ব নামকে কতই-না মহিমান্বিত করবেন!—যিহি. ৩৬:২৩.
“যেন জগৎ বিশ্বাস করে”
১২. আমাদের জীবনরক্ষাকারী কাজে সফল হওয়ার জন্য কোন তিনটে বিষয় অবশ্যই প্রয়োজন?
১২ পৃথিবীতে থাকাকালীন, যিশু তাঁর শিষ্যদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাহায্য করার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করেছিলেন। যিশু যে-কাজ শুরু করেছিলেন, তা সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে তাদের জন্য এই বিষয়টা অপরিহার্য ছিল। “তুমি যেমন আমাকে জগতে প্রেরণ করিয়াছ,” যিশু প্রার্থনা করেন, “তদ্রূপ আমিও তাহাদিগকে জগতে প্রেরণ করিয়াছি।” এই জীবনরক্ষাকারী কাজে সফল হওয়ার জন্য তাদের প্রয়োজন এমন তিনটে অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের ওপর যিশু জোর দিয়েছিলেন। প্রথমত, তিনি প্রার্থনা করেন যে, তাঁর শিষ্যরা শয়তানের নোংরা জগতের অংশ হবে না। দ্বিতীয়ত, তিনি প্রার্থনা করেন যে, নিজেদের জীবনে ঈশ্বরের বাক্যের সত্য কাজে লাগানোর মাধ্যমে তারা যেন পবিত্র থাকতে পারে। তৃতীয়ত, যিশু বার বার অনুরোধ করেন, যেন তাঁর শিষ্যরা প্রেমের একই বন্ধনে একতাবদ্ধ থাকে, যা তাঁর ও তাঁর পিতার মধ্যে রয়েছে। এর জন্য আত্মপরীক্ষা করার প্রয়োজন। আমাদের প্রত্যেকের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘আমি কি যিশুর তিনটে অনুরোধের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করছি?’ এই বিষয়গুলোতে মনোযোগ প্রদান করার মাধ্যমে যিশু এই আশা প্রকাশ করেন, “যেন জগৎ বিশ্বাস করে যে, তুমি আমাকে প্রেরণ করিয়াছ।”—পড়ুন, যোহন ১৭:১৫-২১.
১৩. প্রথম শতাব্দীতে কীভাবে যিশুর প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছিল?
১৩ যিশুর প্রার্থনার যে উত্তর দেওয়া হয়েছিল, তা চারটে সুসমাচার বইয়ের পর প্রেরিতদের কার্য্য-বিবরণ নামে বাইবেলের যে-বই রয়েছে, সেটা অধ্যয়ন করার মাধ্যমে দেখা যেতে পারে। যিহুদি ও পরজাতি, ধনী ও দরিদ্র, দাস ও তাদের প্রভুদের নিয়ে গঠিত প্রাথমিক খ্রিস্টানদের মধ্যে দলভেদ হওয়ার যে-সম্ভাবনা ছিল, সেটা চিন্তা করে দেখুন। এই বিভিন্নতা সত্ত্বেও, সকলে এতটা একতাবদ্ধ ছিল যে, তাদেরকে একটা মানব দেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে, যার মস্তক হলেন যিশু। (ইফি. ৪:১৫, ১৬) শয়তানের বিভক্ত জগতের মধ্যেও কত অপূর্ব এক অলৌকিক কাজ! আর এর সমস্ত কৃতিত্ব পাওয়ার যোগ্য অবশ্যই যিহোবা, যিনি তাঁর শক্তিশালী পবিত্র আত্মার কাজের মাধ্যমে তা সম্ভবপর করেছেন।—১ করি. ৩:৫-৭.
১৪. আধুনিক সময়ে কীভাবে যিশুর প্রার্থনার উত্তর দেওয়া হয়েছে?
১৪ দুঃখের বিষয় হল, প্রেরিতদের মৃত্যুর পর এই অলৌকিক একতা টিকে থাকেনি। এর পরিবর্তে, ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ব্যাপক ধর্মভ্রষ্টতা দেখা দেয়, যার ফলে খ্রিস্টীয়জগতের বিভিন্ন দল গঠিত হয়। (প্রেরিত ২০:২৯, ৩০) কিন্তু, ১৯১৯ সালে যিশু তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীদের মিথ্যা ধর্মের বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করেন এবং তাদেরকে ‘সিদ্ধির যোগবন্ধনে’ একত্রিত করেন। (কল. ৩:১৪) তাদের প্রচার কাজ জগতের বাকি লোকেদের ওপর কোন প্রভাব ফেলেছে? “প্রত্যেক জাতির ও বংশের ও প্রজাবৃন্দের ও ভাষার” লোকেদের মধ্যে থেকে আসা ৭০ লক্ষেরও বেশি ‘আরও মেষকে’ ঈশ্বরের অভিষিক্ত ব্যক্তিদের সঙ্গে এক পালে একতাবদ্ধ করা হয়েছে। (যোহন ১০:১৬; প্রকা. ৭:৯) যিশুর এই প্রার্থনার কতই-না চমৎকার এক উত্তর, “যেন জগৎ জানিতে পায় যে, তুমি [যিহোবা] আমাকে প্রেরণ করিয়াছ, এবং আমাকে যেমন প্রেম করিয়াছ, তেমনি তাহাদিগকেও প্রেম করিয়াছ”!—যোহন ১৭:২৩.
এক হৃদয়গ্রাহী উপসংহার
১৫. যিশু তাঁর অভিষিক্ত শিষ্যদের জন্য কোন বিশেষ অনুরোধ করেছিলেন?
১৫ নিশান মাসের ১৪ তারিখ বিকেলে, যিশু তাঁর প্রেরিতদের সঙ্গে তাঁর রাজ্যে তাঁর সঙ্গে শাসন করার এক চুক্তি স্থাপন করার মাধ্যমে তাদেরকে মহিমা বা সমাদর প্রদান করেছিলেন। (লূক ২২:২৮-৩০; যোহন ১৭:২২) তাই, তাঁর অভিষিক্ত অনুসারী হবে এমন সকলের বিষয়ে যিশু প্রার্থনা করেন: “পিতঃ, আমার ইচ্ছা এই, আমি যেখানে থাকি, তুমি আমায় যাহাদিগকে দিয়াছ, তাহারাও যেন সেখানে আমার সঙ্গে থাকে, যেন তাহারা আমার সেই মহিমা দেখিতে পায়, যাহা তুমি আমাকে দিয়াছ, কেননা জগৎ পত্তনের পূর্ব্বে তুমি আমাকে প্রেম করিয়াছিলে।” (যোহন ১৭:২৪) এটা যিশুর আরও মেষের জন্য ঈর্ষা করার নয় বরং আনন্দ করার মতো বিষয় আর এটা বর্তমানে পৃথিবীতে সমস্ত খ্রিস্টানের মধ্যে যে-একতা রয়েছে, সেটার প্রমাণ দেয়।
১৬, ১৭. (ক) তাঁর প্রার্থনার উপসংহারে যিশু কোন দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছিলেন? (খ) আমাদের কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হওয়া উচিত?
১৬ তাদের ধর্মীয় নেতাদের অধীনে, জগতের বেশিরভাগ লোক এই স্পষ্ট প্রমাণ উপেক্ষা করা বেছে নেয় যে, যিহোবার এমন এক একতাবদ্ধ লোক রয়েছে, যারা প্রকৃতই তাঁকে জানে। যিশুর দিনেও একই বিষয় সত্য ছিল। তাই, তিনি এই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলো দিয়ে উপসংহার করেন: “ধর্ম্মময় পিতঃ, জগৎ তোমাকে জানে নাই, কিন্তু আমি তোমাকে জানি, এবং ইহারা জানিয়াছে যে, তুমিই আমাকে প্রেরণ করিয়াছ। আর আমি ইহাদিগকে তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব; যেন তুমি যে প্রেমে আমাকে প্রেম করিয়াছ, তাহা তাহাদিগেতে থাকে, এবং আমি তাহাদিগেতে থাকি।”—যোহন ১৭:২৫, ২৬.
১৭ যিশু যে তাঁর প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছিলেন, তা কি কেউ অস্বীকার করতে পারে? মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে তিনি ক্রমাগত আমাদেরকে তাঁর পিতার নাম এবং উদ্দেশ্য জানানোর ক্ষেত্রে সাহায্য করছেন। প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার বিষয়ে তাঁর আজ্ঞা উদ্যোগের সঙ্গে পালন করার মাধ্যমে আমরা যেন ক্রমাগত তাঁর মস্তকপদের প্রতি বশীভূত থাকি। (মথি ২৮:১৯, ২০; প্রেরিত ১০:৪২) এ ছাড়া, আমরা যেন আমাদের মূল্যবান একতা রক্ষা করার জন্যও প্রাণপণ চেষ্টা করি। এই বিষয়গুলো করার মাধ্যমে আমরা যিহোবার নামকে মহিমান্বিত করার জন্য এবং আমাদের অনন্ত সুখের জন্য যিশুর প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করব।