ঈশ্বরের নিকটবর্তী হোন
ক্ষমা করতে ইচ্ছুক একজন ঈশ্বর
“হেপ্রভু, [“যিহোবা,” NW] তুমি মঙ্গলময় ও ক্ষমাবান্” বা ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত। (গীতসংহিতা ৮৬:৫) এই হৃদয়গ্রাহী কথাগুলোর দ্বারা বাইবেল আমাদেরকে আশ্বাস দেয় যে, যিহোবা ঈশ্বর ক্ষমা করার ব্যাপারে উদার। প্রেরিত পিতরের জীবনের একটা ঘটনা স্পষ্টভাবে দেখায় যে, যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করেন।—যিশাইয় ৫৫:৭.
পিতর ছিলেন যিশুর সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গীদের মধ্যে একজন। তা সত্ত্বেও, পৃথিবীতে যিশুর জীবনের শেষরাতে, পিতর ভয়ের কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন এবং এক গুরুতর পাপ করেছিলেন। যেখানে অবৈধভাবে যিশুর বিচার করা হচ্ছিল, সেই জায়গার কাছে একটা প্রাঙ্গনে, পিতর যিশুকে চেনেন না বলে জনসমক্ষে অস্বীকার করেছিলেন আর তা একবার নয় কিন্তু তিনবার। পিতরের জোরালোভাবে তৃতীয়বার অস্বীকার করার পরই, যিশু “মুখ ফিরাইয়া পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করিলেন।” (লূক ২২:৫৫-৬১) আপনি কি কল্পনা করতে পারেন যে, যিশু যখন পিতরের দিকে দৃষ্টিপাত করেছিলেন, তখন পিতরের কেমন লেগেছিল? তার পাপ কতখানি গুরুতর তা বুঝতে পেরে, পিতর “ক্রন্দন করিতে লাগিলেন।” (মার্ক ১৪:৭২) অনুতপ্ত প্রেরিত হয়তো ভেবেছিলেন যে, যেহেতু তিনি তিনবার যিশুকে অস্বীকার করেছিলেন, তাই ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করবেন কি না।
তাঁর পুনরুত্থানের পর, যিশু পিতরের সঙ্গে কথোপকথন করেছিলেন যা নিঃসন্দেহে পিতরের ক্ষমা লাভ করা সম্বন্ধে যেকোনো সন্দেহকে দূর করেছিল। যিশু কোনো রূঢ় কথা বলেননি, নিন্দা করেননি। পরিবর্তে, তিনি পিতরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি আমাকে প্রেম কর?” পিতর উত্তর দিয়েছিলেন: “হাঁ, প্রভু; আপনি জানেন, আমি আপনাকে ভালবাসি।” যিশু উত্তরে বলেছিলেন: “আমার মেষশাবকগণকে চরাও।” যিশু দ্বিতীয়বার সেই প্রশ্নের পুনরাবৃত্তি করেছিলেন আর পিতর একই উত্তর দিয়েছিলেন, সম্ভবত আরও জোরালোভাবে। যিশু বলেছিলেন: “আমার মেষগণকে পালন কর।” এরপর যিশু তৃতীয়বার সেই একই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছিলেন: “তুমি কি আমাকে ভালবাস?” তখন “পিতর দুঃখিত হইলেন” এবং বলেছিলেন: “প্রভু, আপনি সকলই জানেন; আপনি জ্ঞাত আছেন যে, আমি আপনাকে ভালবাসি।” যিশু উত্তর দিয়েছিলেন: “আমার মেষগণকে চরাও।”—যোহন ২১:১৫-১৭.
কেন যিশু সেই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করেছিলেন, যেগুলোর উত্তর তিনি ইতিমধ্যেই জানতেন? যিশু হৃদয় পড়তে পারেন, তাই তিনি জানতেন যে, পিতর তাঁকে ভালবাসেন। (মার্ক ২:৮) এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করার দ্বারা যিশু পিতরকে তিনবার তার ভালবাসার বিষয়টাকে নিশ্চিত করার এক সুযোগ দিয়েছিলেন। উত্তরে যিশুর এই কথাগুলো: “আমার মেষশাবকগণকে চরাও . . . আমার মেষগণকে পালন কর . . . আমার মেষগণকে চরাও,” সেই অনুতপ্ত প্রেরিতকে পুনরায় আশ্বাস দিয়েছিল যে, তখনও তার ওপর নির্ভর করা যায়। সর্বোপরি, যিশু পিতরকে সবচেয়ে মূল্যবান এক সম্পদের—যিশুর প্রিয় মেষতুল্য অনুসারীদের—যত্ন নিতে সাহায্য করার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছিলেন। (যোহন ১০:১৪, ১৫) পিতর নিশ্চয় এটা জেনে স্বস্তি পেয়েছিলেন যে, যিশুর দৃষ্টিতে তিনি তখনও নির্ভরযোগ্য ছিলেন!
স্পষ্টতই, যিশু তাঁর অনুতপ্ত প্রেরিতকে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। যেহেতু যিশু তাঁর পিতার গুণাবলি ও পথ নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন, তাই আমরা এই উপসংহারে আসতে পারি যে, যিহোবাও পিতরকে ক্ষমা করেছিলেন। (যোহন ৫:১৯) ক্ষমা করতে অনিচ্ছুক হওয়ার পরিবর্তে, যিহোবা হলেন দয়াময় ঈশ্বর, যিনি একজন অনুতপ্ত পাপীর ক্ষেত্রে “ক্ষমাবান্।” সেটা কি এক সান্ত্বনাদায়ক বিষয় নয়? (w০৮ ৬/১)