অধ্যয়ন প্রবন্ধ ১০
যিহোবার প্রতি ভালোবাসা ও উপলব্ধিবোধ বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করে
“আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?”—প্রেরিত ৮:৩৬.
গান সংখ্যা ১০ “এই আমি, আমাকে পাঠাও”
সারাংশa
১-২. প্রেরিত ৮:২৭-৩১, ৩৫-৩৭ পদ অনুযায়ী কী সেই ইথিওপীয় উচ্চপদস্থ আধিকারিককে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল?
আপনি কি খ্রিস্টের একজন শিষ্য হিসেবে বাপ্তিস্ম নিতে চান? প্রেম ও উপলব্ধিবোধ অনেক ব্যক্তিকে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করেছে। একজন উচ্চপদস্থ আধিকারিকের বিষয়ে বিবেচনা করুন, যিনি ইথিওপিয়ার রানির অধীনে কাজ করতেন।
২ সেই ইথিওপীয় ব্যক্তি শাস্ত্র থেকে যা-কিছু শিখেছিলেন, সেই অনুযায়ী দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (পড়ুন, প্রেরিত ৮:২৭-৩১, ৩৫-৩৭.) কী তাকে অনুপ্রাণিত করেছিল? নিশ্চিতভাবেই তিনি ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলেছিলেন; তিনি রথে চড়ে যাওয়ার সময়ে যিশাইয় পুস্তকের একটা অংশ পড়ছিলেন। আর যিশু তার জন্য যা করেছেন, সেই বিষয়ে ফিলিপ যখন তাকে বলেছিলেন, তখন তিনি সেটার প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু, কেন সেই উচ্চপদস্থ আধিকারিক যিরূশালেমে গিয়েছিলেন? কারণ তিনি ইতিমধ্যেই যিহোবার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলেছিলেন। কেন আমরা তা বলতে পারি? কারণ তিনি যিহোবার উপাসনা করার জন্যই যিরূশালেমে গিয়েছিলেন। সম্ভবত, তিনি তার নিজের ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন এবং তিনি সত্য ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত লোকেদের সঙ্গে উপাসনা করতে শুরু করেছিলেন। যিহোবার প্রতি এই ভালোবাসাই তাকে আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিতে অনুপ্রাণিত করেছিল আর সেটা হল বাপ্তিস্ম নেওয়ার মাধ্যমে খ্রিস্টের একজন শিষ্য হয়ে ওঠা।—মথি ২৮:১৯.
৩. কী একজন ব্যক্তিকে হয়তো বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দিতে পারে? (“আপনার হৃদয়ে কী রয়েছে?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
৩ যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আপনাকে বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে। কিন্তু, অন্য এক ধরনের ভালোবাসা হয়তো বাপ্তিস্ম নেওয়ার ক্ষেত্রে আপনাকে বাধাও দিতে পারে। কীভাবে? কয়েকটা উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। আপনি হয়তো আপনার ন-সাক্ষি পরিবারকে ও বন্ধুদের খুব ভালোবাসেন আর আপনি হয়তো এই ভেবে ভয় পান যে, বাপ্তিস্ম নিলে তারা আপনাকে ঘৃণা করবে। (মথি ১০:৩৭) অথবা আপনার হয়তো এমন কিছু অভ্যাস রয়েছে, যেগুলোকে আপনি ভালোবাসেন। তবে, আপনি জানেন, যিহোবা সেগুলোকে ঘৃণা করেন। আপনি হয়তো সেই অভ্যাসগুলো কাটিয়ে ওঠাকে কঠিন বলে মনে করেন। (গীত. ৯৭:১০) কিংবা আপনি হয়তো ছোটোবেলা থেকেই মিথ্যা ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রথাগুলো পালন করে আসছেন। আপনি হয়তো আজও এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত স্মৃতিগুলো নিয়ে চিন্তা করতে ভালোবাসেন। এর ফলে, আপনি হয়তো এমন প্রথাগুলো পালন করা বন্ধ করাকে কঠিন বলে মনে করেন, যেগুলোকে প্রভু যিহোবা ঘৃণা করেন। (১ করি. ১০:২০, ২১) তাই, আপনাকে অবশ্যই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে, “কোন বিষয়টা আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি অথবা কাকে আমি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি?”
যে-ব্যক্তিকে আমাদের সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা উচিত
৪. প্রধানত কী আপনাকে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করবে?
৪ আপনার বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত এমন অনেক বিষয় রয়েছে, যেগুলোকে আপনি ভালোবাসেন এবং উপলব্ধি করেন। উদাহরণ স্বরূপ, যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করার আগে আপনি হয়তো বাইবেলের প্রতি গভীর সম্মান গড়ে তুলেছিলেন। আর আপনি হয়তো যিশুর প্রতিও ভালোবাসা গড়ে তুলেছিলেন। এখন আপনি যিহোবার সাক্ষিদের সম্বন্ধে জেনেছেন এবং তাদের সঙ্গে হয়তো মেলামেশা করতে ভালোবাসেন। কিন্তু, এই বিষয়গুলো ভালোবাসলেই যে আপনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত হবেন, এমন নয়। যিহোবার প্রতি ভালোবাসাই প্রধানত আপনাকে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করবে। আপনি যখন অন্য যেকোনো বিষয়ের চেয়ে যিহোবাকে বেশি ভালোবাসবেন, তখন আপনি কোনো কিছুকেই অথবা কোনো ব্যক্তিকেই যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে বাধা হতে দেবেন না। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা আপনাকে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করবে আর সেইসঙ্গে বাপ্তিস্মের পর তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে সাহায্য করবে।
৫. এই প্রবন্ধে আমরা কী নিয়ে বিবেচনা করব?
৫ যিশু বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই সমস্ত অন্তঃকরণ বা হৃদয়, মন, প্রাণ ও শক্তি দিয়ে যিহোবাকে ভালোবাসতে হবে। (মার্ক ১২:৩০) কীভাবে আপনি যিহোবার প্রতি গভীর ভালোবাসা ও সম্মান গড়ে তুলতে পারেন? যিহোবা আমাদের কতটা ভালোবাসেন, তা নিয়ে আমরা যদি গভীরভাবে চিন্তা করি, তা হলে আমরা প্রতিদানে যিহোবাকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হব। (১ যোহন ৪:১৯) এই প্রবন্ধে আমরা একাধিক পরামর্শ নিয়ে বিবেচনা করব, যেগুলো আমাদের যিহোবাকে ভালোবাসতে সাহায্য করবে। এ ছাড়া, আমরা এই বিষয়টা নিয়ে বিবেচনা করব যে, একবার যিহোবার প্রতি সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা গড়ে উঠলে অন্য কোন বিষয়গুলোর প্রতি ভালোবাসা আপনা-আপনি গড়ে উঠবে।b
৬. রোমীয় ১:২০ পদ অনুযায়ী যিহোবা সম্বন্ধে শেখার একটা উপায় কী?
৬ যিহোবার সৃষ্টি থেকে তাঁর সম্বন্ধে শিখুন। (পড়ুন, রোমীয় ১:২০; প্রকা. ৪:১১) যিহোবার সৃষ্ট গাছপালা ও পশুপাখির বিষয়ে আর সেইসঙ্গে কীভাবে সেগুলো প্রমাণ করে যে, যিহোবা একজন বিজ্ঞ ঈশ্বর, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। আপনার দেহ যে-চমৎকার উপায়ে সৃষ্ট হয়েছে, সেই বিষয়ে শেখার চেষ্টা করুন। (গীত. ১৩৯:১৪) আর যিহোবা সূর্যের মধ্যে যে-শক্তি সঞ্চয় করে রেখেছেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। আমরা জানি, সূর্য হল কোটি কোটি তারার মধ্যে কেবল একটা।c (যিশা. ৪০:২৬) আপনি যখন তা নিয়ে চিন্তা করবেন, তখন যিহোবার প্রতি আপনার সম্মান আরও গভীর হবে। যিহোবা যে বিজ্ঞ ও শক্তিশালী, সেটা জানা গুরুত্বপূর্ণ। তবে, যিহোবার প্রতি ভালোবাসাকে বৃদ্ধি করার এবং তাঁর সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য আপনাকে তাঁর সম্বন্ধে আরও বেশি কিছু জানতে হবে।
৭. যিহোবাকে গভীরভাবে ভালোবাসার জন্য আপনাকে কোন বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে?
৭ আপনাকে নিশ্চিত হতে হবে যে, যিহোবা সত্যিই আপনাকে ভালোবাসেন। স্বর্গ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা যে আপনাকে লক্ষ করেন এবং আপনার জন্য চিন্তা করেন, এটা বিশ্বাস করাকে কি আপনি কঠিন বলে মনে করেন? যদি তা মনে করেন, তা হলে এটা ভুলে যাবেন না যে, যিহোবা “আমাদের কাহারও হইতে দূরে নহেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬-২৮) তিনি “সমস্ত অন্তঃকরণের” বা হৃদয়ের “অনুসন্ধান করেন” এবং আপনার কাছে প্রতিজ্ঞা করেন, “তুমি যদি তাঁহার অন্বেষণ কর, তবে তিনি তোমাকে আপনার উদ্দেশ পাইতে দিবেন।” (১ বংশা. ২৮:৯) সত্যি বলতে কী, “পিতা” আপনাকে “আকর্ষণ” করেছেন বলেই আপনি এখন বাইবেল অধ্যয়ন করছেন। (যোহন ৬:৪৪) যিহোবা আপনার জন্য যা-কিছু করেছেন, সেগুলোর প্রতি আপনার উপলব্ধিবোধ যতবেশি বৃদ্ধি পাবে, তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা ততবেশি গভীর হবে।
৮. কীভাবে আপনি যিহোবার ভালোবাসার প্রতি সাড়া দিতে পারেন?
৮ যিহোবার ভালোবাসার প্রতি সাড়া দেওয়ার একটা দিক হল প্রার্থনায় তাঁর সঙ্গে কথা বলা। আপনি যখন আপনার চিন্তার বিষয়গুলো ঈশ্বরকে জানাবেন এবং আপনার প্রতি করা উত্তম বিষয়গুলোর জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানাবেন, তখন তাঁর প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। আর আপনি যখন যিহোবাকে আপনার প্রার্থনাগুলোর উত্তর দিতে দেখবেন, তখন তাঁর সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বের বন্ধন আরও শক্তিশালী হবে। (গীত. ১১৬:১) আপনি এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারবেন যে, তিনি আপনাকে বোঝেন। কিন্তু, যিহোবার আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপনাকে যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে বুঝতে হবে। আর আপনাকে জানতে হবে যে, তিনি আপনার কাছ থেকে কী আশা করেন। একমাত্র তাঁর বাক্য বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমেই আপনি এই জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।
৯. কীভাবে আপনি বাইবেলের প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখাতে পারেন?
৯ ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে শিখুন। একমাত্র বাইবেলেই যিহোবা এবং আপনার জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্বন্ধে সত্য লিপিবদ্ধ রয়েছে। আপনি প্রতিদিন বাইবেল পড়ার, আপনার বাইবেল শিক্ষকের সঙ্গে অধ্যয়ন করার আগে ব্যক্তিগতভাবে প্রস্তুতি নেওয়ার এবং শেখা বিষয়গুলো কাজে লাগানোর মাধ্যমে বাইবেলের প্রতি আপনার উপলব্ধি দেখাতে পারেন। (গীত. ১১৯:৯৭, ৯৯; যোহন ১৭:১৭) আপনার কি ব্যক্তিগত বাইবেল পাঠের তালিকা রয়েছে? আপনি কি প্রতিদিন বাইবেল পড়ার মাধ্যমে সেই তালিকা অনুসরণ করেন?
১০. বাইবেলের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটা কী?
১০ বাইবেলের অদ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটা হল প্রত্যক্ষদর্শীরা যিশুর বিষয়ে যা-বর্ণনা করেছে, তা এটিতে লিপিবদ্ধ রয়েছে। একমাত্র এই বইটি সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করে যে, যিশু আপনার জন্য কী করেছেন। আপনি যখন যিশুর কথা ও কাজগুলো সম্বন্ধে শিখবেন, তখন আপনি তাঁর সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে অনুপ্রাণিত হবেন।
১১. কীভাবে আপনি যিহোবার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে পারেন?
১১ যিশুর প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলুন, এমনটা করলে যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে। কেন? কারণ যিশু তাঁর পিতার গুণাবলিকে নিখুঁতভাবে প্রতিফলিত করেছিলেন। (যোহন ১৪:৯) তাই, আপনি যিশুর বিষয়ে যতবেশি শিখবেন, যিহোবার প্রতি আপনার বোধগম্যতা ও উপলব্ধিবোধ ততবেশি বৃদ্ধি পাবে। অন্যেরা দরিদ্র, অসুস্থ ও দুর্বল ব্যক্তিদের নীচু চোখে দেখা সত্ত্বেও যিশু যেভাবে এই ব্যক্তিদের প্রতি সমবেদনা দেখিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। এ ছাড়া, তিনি আপনাকে যে-ব্যাবহারিক পরামর্শগুলো দেন এবং সেগুলো কাজে লাগানোর ফলে আপনি যেভাবে উপকৃত হন, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন।—মথি ৫:১-১১; ৭:২৪-২৭.
১২. যিশু সম্বন্ধে জানার ফলে আপনি হয়তো কী করতে অনুপ্রাণিত হবেন?
১২ আমরা যাতে পাপের ক্ষমা লাভ করতে পারি, সেইজন্য যিশু যে-বলিদান দিয়েছেন, সেই বিষয়ে আপনি যখন গভীরভাবে চিন্তা করবেন, তখন যিশুর প্রতি আপনার ভালোবাসা সম্ভবত আরও দৃঢ় হবে। (মথি ২০:২৮) আপনি যখন এটা বুঝতে পারবেন যে, যিশু আপনার জন্য মৃত্যুবরণ করতে ইচ্ছুক ছিলেন, তখন হয়তো আপনি অনুতপ্ত হতে এবং প্রভু যিহোবার কাছে ক্ষমা চাইতে অনুপ্রাণিত হবেন। (প্রেরিত ৩:১৯, ২০; ১ যোহন ১:৯) যিশু ও যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা যতবেশি বৃদ্ধি পাবে, ততবেশি আপনি সেই লোকেদের নিকটবর্তী হতে চাইবেন, যারা যিশু ও যিহোবাকে ভালোবাসে।
১৩. যিহোবা আপনাকে কী দিয়েছেন?
১৩ যিহোবার পরিবারের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলুন। আপনার ন-সাক্ষি পরিবার এবং প্রাক্তন বন্ধুরা হয়তো এটা বুঝতে পারে না যে, কেন আপনি যিহোবার কাছে নিজেকে উৎসর্গ করতে চান। তারা হয়তো এমনকী আপনার বিরোধিতাও করে। তবে, যিহোবা আপনাকে এক আধ্যাত্মিক পরিবার দিয়ে সাহায্য করবেন। আপনি যদি এই আধ্যাত্মিক পরিবারের নিকটে থাকেন, তা হলে আপনি প্রয়োজনীয় ভালোবাসা ও সাহায্য লাভ করবেন। (মার্ক ১০:২৯, ৩০; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) একসময়ে, আপনার পরিবারের সদস্যরাও হয়তো আপনার সঙ্গে যিহোবার সেবায় যোগ দেবে এবং তাঁর মান অনুযায়ী জীবনযাপন করবে।—১ পিতর ২:১২.
১৪. প্রথম যোহন ৫:৩ পদ অনুযায়ী যিহোবার মান সম্বন্ধে আপনি কী জানতে পেরেছেন?
১৪ যিহোবার মানগুলোর প্রতি উপলব্ধিবোধ গড়ে তুলতে এবং সেই অনুযায়ী জীবনযাপন করতে শিখুন। যিহোবাকে জানার আগে আপনি হয়তো নিজেই নিজের জন্য বিভিন্ন মান নির্ধারণ করতেন কিন্তু এখন আপনি এটা উপলব্ধি করেন, সেগুলোর চেয়ে যিহোবার মানগুলো আরও ভালো। (গীত. ১:১-৩; পড়ুন, ১ যোহন ৫:৩.) স্বামী, স্ত্রী, বাবা-মা ও সন্তানদের জন্য বাইবেল যে-পরামর্শ প্রদান করে, সেই বিষয়ে চিন্তা করুন। (ইফি. ৫:২২–৬:৪) এই পরামর্শ কাজে লাগানোর ফলে আপনার পরিবার কি আরও সুখী হয়েছে? বিজ্ঞতার সঙ্গে বন্ধুবান্ধব বাছাই করার বিষয়ে যিহোবার নির্দেশনার বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে আপনার ব্যক্তিগত অভ্যাসে কি উন্নতি হয়েছে? আপনি কি আগের চেয়ে আরও বেশি সুখী হয়েছেন? (হিতো. ১৩:২০; ১ করি. ১৫:৩৩) সম্ভবত, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর হল হ্যাঁ।
১৫. বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর জন্য সাহায্যের প্রয়োজন হলে আপনি কী করতে পারেন?
১৫ আপনি বাইবেলের যে-নীতিগুলো সম্বন্ধে শিখছেন, কীভাবে সেগুলো কাজে লাগানো যায়, তা নির্ধারণ করা কখনো কখনো আপনার জন্য কঠিন হতে পারে। এই কারণে যিহোবা তাঁর সংগঠনকে ব্যবহার করে আপনাকে বাইবেলভিত্তিক বিষয়বস্তু প্রদান করেন, যা আপনাকে সদসৎ বিষয় বা সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য সাহায্য করতে পারে। (ইব্রীয় ৫:১৩, ১৪) আপনি যখন সেই বিষয়বস্তু পড়বেন এবং তা নিয়ে অধ্যয়ন করবেন, তখন বাইবেলের নীতিগুলো আপনার কাছে আরও বেশি স্পষ্ট ও ব্যাবহারিক হয়ে উঠবে আর এর ফলে আপনি যিহোবার সংগঠনের আরও নিকটবর্তী হতে পারবেন।
১৬. কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের সংগঠিত করেছেন?
১৬ যিহোবার সংগঠনের প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলুন এবং এটাকে সমর্থন করুন। যিহোবা মণ্ডলীগুলোর মাধ্যমে তাঁর লোকেদের সংগঠিত করেছেন। আর তাঁর পুত্র যিশু হলেন সমস্ত মণ্ডলীর মস্তক। (ইফি. ১:২২; ৫:২৩) বর্তমানে যিশু যে-কাজ করতে চান, সেটা সংগঠিত করার কাজে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য তিনি “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”-কে নিযুক্ত করেছেন, যা অভিষিক্ত পুরুষদের একটা ছোটো দলকে নিয়ে গঠিত। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) আপনাকে আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানো এবং সুরক্ষিত রাখার জন্য তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আর তারা এই দায়িত্বকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকেন এবং বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে সাহায্য করে থাকেন। এগুলোর মধ্যে একটা হল প্রাচীনদের নিযুক্ত করা। (যিশা. ৩২:১, ২; ইব্রীয় ১৩:১৭; ১ পিতর ৫:২, ৩) এই প্রাচীনরা ইচ্ছুক মনে আপনার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেন, আপনাকে সান্ত্বনা প্রদান করেন এবং আপনাকে যিহোবার আরও নিকটবর্তী হতে সাহায্য করেন। তবে, তারা আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-বিষয়টা করতে পারেন, সেটা হল আপনাকে প্রশিক্ষিত করা, যাতে আপনি যিহোবা সম্বন্ধে অন্যদের শিক্ষা দিতে পারেন।—ইফি. ৪:১১-১৩.
১৭. রোমীয় ১০:১০, ১৩, ১৪ পদ অনুযায়ী কেন আমরা অন্যদের কাছে যিহোবা সম্বন্ধে বলি?
১৭ অন্যদের যিহোবার প্রতি ভালোবাসা গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। যিশু তাঁর অনুসারীদের যিহোবা সম্বন্ধে অন্যদের শেখাতে বলেছিলেন। (মথি ২৮:১৯, ২০) আমরা হয়তো কেবল কর্তব্যের খাতিরে সেই আদেশের বাধ্য হতে পারি। কিন্তু, যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা যখন বৃদ্ধি পাবে, তখন আপনি প্রেরিত পিতর ও যোহনের মতোই অনুভব করবেন, যারা বলেছিলেন: “আমরা যাহা দেখিয়াছি ও শুনিয়াছি, তাহা না বলিয়া থাকিতে পারি না।” (প্রেরিত ৪:২০) কোনো ব্যক্তি যাতে যিহোবাকে ভালোবাসতে পারে, সেইজন্য তাকে সাহায্য করে যে-আনন্দ লাভ করা যায়, তা খুব কম বিষয় থেকেই পাওয়া যায়। সুসমাচার প্রচারক ফিলিপ যখন সেই ইথিওপীয় ব্যক্তিকে শাস্ত্রে লিপিবদ্ধ সত্য শিখতে এবং বাপ্তিস্ম নিতে সাহায্য করেছিলেন, তখন ফিলিপ কতটা আনন্দিত হয়েছিলেন, তা একটু কল্পনা করুন! আপনি যখন ফিলিপকে অনুকরণ করেন এবং প্রচার করার বিষয়ে যিশুর আদেশের বাধ্য হন, তখন আপনি প্রমাণ করেন যে, আপনি একজন যিহোবার সাক্ষি হতে চান। (পড়ুন, রোমীয় ১০:১০, ১৩, ১৪.) সেইসময়ে আপনিও সম্ভবত এই প্রশ্নটাই জিজ্ঞেস করবেন, যেটা সেই ইথিওপীয় করেছিল: “আমার বাপ্তাইজিত হইবার বাধা কি?”—প্রেরিত ৮:৩৬.
১৮. পরবর্তী প্রবন্ধে কী নিয়ে বিবেচনা করা হবে?
১৮ বাপ্তিস্ম নেওয়ার সিদ্ধান্তই হবে আপনার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। কারণ এটা এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত, যেটার বিষয়ে আপনাকে ভালোভাবে চিন্তা করতে হবে যে, এর সঙ্গে কী জড়িত রয়েছে। বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে আপনাকে কী জানতে হবে? বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে ও পরে আপনাকে কী করতে হবে? পরবর্তী প্রবন্ধে এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়া হবে।
গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি
a কোনো কোনো ব্যক্তি যদিও যিহোবাকে ভালোবাসে, কিন্তু তারপরও তারা এই বিষয়ে নিশ্চিত নয় যে, তারা বাপ্তিস্ম নেওয়ার জন্য প্রস্তুত কি না। আপনি যদি এইরকম অনুভব করেন, তা হলে এই প্রবন্ধ আপনাকে এমন ব্যাবহারিক বিষয়গুলো নিয়ে পুনর্বিবেচনা করে দেখতে সাহায্য করবে, যেগুলো আপনাকে বাপ্তিস্ম নিতে অনুপ্রাণিত করবে।
b প্রত্যেক ব্যক্তিই আলাদা আর তাই কোনো কোনো ব্যক্তি হয়তো এই প্রবন্ধে দেওয়া পরামর্শগুলো ক্রমানুযায়ী অনুসরণ নাও করতে পারেন।
c আরও উদাহরণ জানার জন্য জীবনকে কি সৃষ্টি করা হয়েছিল? (ইংরেজি) এবং জীবনের উৎপত্তি—জিজ্ঞেস করা যথার্থ এমন পাঁচটা প্রশ্ন (ইংরেজি) শিরোনামের ব্রোশারগুলো দেখুন।
d ছবি সম্বন্ধে: একজন বোন কেনাকাটা করতে গিয়ে একজন যুবতীকে ট্র্যাক্ট দিচ্ছেন।