অধ্যায় ১২
“যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা সহকারে সাহসের সঙ্গে কথা বললেন”
পৌল ও বার্ণবা নম্রতা ও সাহস দেখান এবং প্রচার কাজ চালিয়ে যান
প্রেরিত ১৪:১-২৮ পদের উপর ভিত্তি করে
১, ২. লুস্ত্রায় পৌল ও বার্ণবার প্রতি কী ঘটেছিল?
লুস্ত্রার চারিদিকে খুবই হইচই হচ্ছে। কিছুক্ষণ আগে দু-জন অচেনা ব্যক্তি এখানে আসেন এবং জন্ম থেকে খোঁড়া এমন একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেন। সুস্থ হয়ে সেই ব্যক্তি আনন্দে লাফালাফি করছে। লোকেরা এটা বিশ্বাসই করতে পারছে না কারণ তারা জীবনে প্রথম বার এইরকম আশ্চর্য কাজ দেখেছে। তারা মনে করছে, এই দু-জন অচেনা ব্যক্তি নিশ্চয়ই দেবতা। আর তারপর তারা তাদের উপাসনা করার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করে। সেখানকার পুরোহিত তাদের পরানোর জন্য ফুলের মুকুট এবং বলি দেওয়ার জন্য ষাঁড় নিয়ে আসেন। তখন সেই দু-জন অচেনা ব্যক্তি নিজেদের কাপড় ছিঁড়লেন এবং ভিড়ের মধ্যে গেলেন এবং চিৎকার করে তাদের বললেন, ‘আমাদের উপাসনা কোরো না।’ এই দু-জন অচেনা ব্যক্তি আর কেউ নন, পৌল ও বার্ণবা ছিলেন। তারা অনেক কাকুতিমিনতি করার পর, সেই লোকেরা শান্ত হল।
২ এরপর পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া ও ইকনিয় থেকে কিছু যিহুদি আসে এবং পৌল ও বার্ণবার বিরুদ্ধে লোকদের উসকে দেয়। এর ফল কী হয়েছিল? কিছু সময় আগে যে-লোকেরা পৌলকে দেবতা হিসেবে উপাসনা করতে চেয়েছিল, এখন সেই লোকেরাই তার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং তাকে ততক্ষণ পাথর মারতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না পৌল জ্ঞান হারান। এরপর তারা, তাকে টেনে-হেঁচড়ে নগরের বাইরে নিয়ে যায় এবং তাকে মরা ভেবে সেখানেই ফেলে রেখে চলে যায়।
৩. এই অধ্যায়ে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করব?
৩ এই ঘটনার আগে কী হয়েছিল? পৌল, বার্ণবা এবং লুস্ত্রার লোকদের কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? পৌল ও বার্ণবা যেভাবে “যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা সহকারে সাহসের সঙ্গে কথা” বলেছিলেন, সেখান থেকে বর্তমানে প্রাচীনেরা কী শিখতে পারেন? (প্রেরিত ১৪:৩) আসুন, এই প্রশ্নগুলোর উত্তর জানার চেষ্টা করি।।
“অনেকে যিশুর অনুসারী হয়ে উঠল” (প্রেরিত ১৪:১-৭)
৪, ৫. কেন পৌল ও বার্ণবা ইকনিয়ে গিয়েছিলেন এবং সেখানে কী ঘটেছিল?
৪ কিছুদিন আগে যখন পৌল ও বার্ণবা রোমীয় নগর পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়াতে ছিলেন, তখন সেখানে কিছু যিহুদি তাদের বিরোধিতা করে এবং তাদের দু-জনকে নগর থেকে বার করে দেয়। তারা চুপচাপ সেখান থেকে চলে যান। সেই দু-জন মিশনারি নিরুৎসাহিত না হয়ে বরং সেখানকার লোকদের বিরুদ্ধে “তাদের পায়ের ধুলো ঝেড়ে ফেললেন।” (প্রেরিত ১৩:৫০-৫২; মথি ১০:১৪) এবার ঈশ্বরের বিচার দিনে তাদের প্রতি যা-কিছু ঘটবে, তার জন্য তারা নিজেরা দায়ী হবে। (প্রেরিত ১৮:৫, ৬; ২০:২৬) পৌল ও বার্ণবা আগের মতোই আনন্দের সঙ্গে তাদের প্রচার কাজ চালিয়ে যান। তারা দক্ষিণ-পূর্ব দিকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার যাত্রা করেন এবং তারা টেরোশ ও সুলতান পর্বতশ্রেণীর মাঝামাঝি একটা স্থানে মালভূমিতে এসে পৌঁছান।
৫ প্রথমে পৌল ও বার্ণবা ইকনিয়ে থাকতে শুরু করেন, যেটা রোমীয় প্রদেশ গালাতীয়ের একটা বিশেষ নগর ছিল।a ইকনিয়ের চারিদিকে গ্রিক সংস্কৃতি ছেয়ে ছিল। এই নগরে যিহুদিদের অনেক প্রভাব ছিল, তা ছাড়া ন-যিহুদি লোকেরাও সেখানে বাস করত, যারা ধর্মান্তরিত হয়েছিল। ইকনিয়ে পৌঁছানোর পর পৌল ও বার্ণবা তাদের রীতি অনুসারে সমাজগৃহে যান এবং প্রচার করতে থাকেন। (প্রেরিত ১৩:৫, ১৪) তারা “সেখানে এত চমৎকারভাবে কথা বললেন যে, যিহুদি ও গ্রিকদের মধ্যে অনেকে যিশুর অনুসারী হয়ে উঠল।”—প্রেরিত ১৪:১.
৬. পৌল ও বার্ণবা কেন এত কার্যকরী উপায়ে শিক্ষা দিতে পেরেছিলেন আর কীভাবে আমরা তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে পারি?
৬ পৌল ও বার্ণবার কেন এত কার্যকারী উপায়ে শিক্ষা দিতে পেরেছিল? পৌল শাস্ত্র খুব ভালোভাবে জানতেন। তিনি মোশির ব্যবস্থা, ইতিহাস এবং ভবিষ্যদ্বাণীর বই ব্যবহার করে, অত্যন্ত কৌশলতার সঙ্গে বোঝাতে পারতেন যে, যিশুই হলেন প্রতিজ্ঞা মশীহ। (প্রেরিত ১৩:১৫-৩১; ২৬:২২, ২৩) অন্যদিকে, বার্ণবা যেভাবে কথা বলেছিলেন, সেখান থেকে এটা বোঝা যায় যে, তিনি লোকদের জন্য চিন্তা করতেন। (প্রেরিত ৪:৩৬, ৩৭; ৯:২৭; ১১:২৩, ২৪) তারা নিজেদের বুদ্ধিতে নয় বরং যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন। সেইজন্য বাইবেল বলে, “যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা” ব্যবহার করে তারা প্রচার করতেন। কীভাবে আপনি এই দু-জন মিশনারির উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন? এই পদক্ষেপগুলো নিন: ঈশ্বরের বাক্যের সঙ্গে ভালোভাবে পরিচিত হোন। এমন শাস্ত্রপদগুলো বাছাই করুন, যা লোকদের হৃদয় ছুঁয়ে যাবে। এমন কিছু ব্যাবহারিক উপায় খুঁজুন যাতে আপনি যাদের কাছে প্রচার করেন, তাদের সান্ত্বনা দিতে পারেন এবং এটা বোঝাতে পারেন যে, আপনি তাদের জন্য চিন্তা করেন। শিক্ষা দেওয়ার সময় নিজের বুদ্ধি নয় বরং সবসময় ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করুন।
৭. (ক) লোকেরা যখন সুসমাচার গ্রহণ করে, তখন কী হয়? (খ) আপনার পরিবার যদি আপনার বিরোধিতা করে থাকে, তা হলে আপনার কী মনে রাখা উচিত?
৭ কিন্তু, ইকনিয়ের সমস্ত লোক পৌল ও বার্ণবার বার্তা শুনে খুশি হয়নি। লূক বলেন, “যে-যিহুদিরা যিশুর অনুসারী হয়নি, তারা ভাইদের বিরুদ্ধে ন-যিহুদি লোকদের উত্তেজিত করে তুলল এবং তাদের মন বিষিয়ে তুলল।” এই সমস্ত কিছু দেখে পৌল ও বার্ণবা মনে করেন যে, এখন চুপ করে থাকার সময় নয় বরং তাদের সুসমাচার জানানো প্রয়োজন। তাই, তারা “অনেক দিন সেখানে থেকে . . . সাহসের সঙ্গে কথা বললেন।” এর ফলে, “নগরের বহু লোক দু-দলে ভাগ হয়ে গেল; কেউ কেউ যিহুদিদের পক্ষে, আবার কেউ কেউ প্রেরিতদের পক্ষে গেল।” (প্রেরিত ১৪:২-৪) বর্তমানেও এমনটা ঘটে থাকে। লোকেরা যখন সত্য গ্রহণ করে, তখন কিছু পরিবারের মধ্যে একতার বন্ধন দৃঢ় হয়, আবার কিছু পরিবারের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়ে থাকে। (মথি ১০:৩৪-৩৬) আপনার পরিবারের কোনো সদস্য যদি আপনার বিরোধিতা করে থাকে, তা হলে আপনি মনে রাখতে পারেন, কেন তারা এইরকম করছে। হতে পারে, তারা যিহোবার লোকদের সম্বন্ধে গুজব অথবা মিথ্যা কথা শুনে আমাদের বিরোধিতা করে। এইরকম পরিস্থিতিতে আপনি কী করতে পারেন? ভালো আচার-ব্যবহার বজায় রাখুন। এটা করার মাধ্যমে তারা দেখতে পাবে, যে-সমস্ত গুজব তারা শুনেছিল, তা মিথ্যা এবং ধীরে ধীরে হয়তো তাদের মন পরিবর্তন হতে পারে।—১ পিতর ২:১২; ৩:১, ২.
৮. কেন পৌল ও বার্ণবা ইকনিয় ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে গিয়েছিলেন আর এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৮ কিছু সময় পর, ইকনিয়ে পৌল ও বার্ণবার বিরোধীরা তাদের পাথর মারার চক্রান্ত করে। এই দু-জন মিশনারি ভাই যখন এই বিষয়টা জানতে পারেন, তখন তারা সেই এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় চলে যান এবং সুসমাচার প্রচার করতে লাগলেন। (প্রেরিত ১৪:৫-৭) একইভাবে, বর্তমানেও রাজ্যের প্রচারকেরা বুঝে-শুনে কাজ করে থাকে। আমাদের ওপর যখন মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়, তখন আমরা সাহসের সঙ্গে উত্তর দিই। (ফিলি. ১:৭; ১ পিতর ৩:১৩-১৫) কিন্তু, আমরা যখন বুঝতে পারি যে, লোকেরা আমাদের আক্রমণ করতে পারে, তখন আমরা এমন কোনো কাজ করি না, যার ফলে হয়তো আমাদের নিজেদের এবং ভাই-বোনদের জীবন অযথা ঝুঁকির মুখে পড়তে পারে।।—হিতো. ২২:৩.
“জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা” করুন (প্রেরিত ১৪:৮-১৯)
৯, ১০. লুস্ত্রা নগর কোথায় অবস্থিত ছিল আর সেখানকার লোকদের সম্পর্কে আমরা কী জানতে পারি?
৯ পৌল ও বার্ণবা লুস্ত্রায় আসেন। লুস্ত্রা হল একটা রোমীয় উপনিবেশ, যেটা ইকনিয় থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। লুস্ত্রা অনেকটা পিষিদিয়ার আন্তিয়খিয়া নগরের মতো। কিন্তু, ইকনিয়ের তুলনায় লুস্ত্রায় অনেক কম যিহুদিরা বাস করত। যদিও এখানকার লোকেরা গ্রিক ভাষায় কথা বলত, কিন্তু তাদের মাতৃভাষা ছিল লুকায়নীয়। এটা মনে করা হয়, এই নগরে কোনো সমাজগৃহ ছিল না। তাই, পৌল ও বার্ণবা জনসাধারণ্যে লোকদের কাছে প্রচার করতেন। মনে করে দেখুন, বেশ কিছুদিন আগে পিতর যখন জেরুসালেমে জন্ম থেকে খোঁড়া একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন, তখন এই আশ্চর্য কাজ দেখে একসঙ্গে অনেক লোক প্রভুতে বিশ্বাস করেছিল। (প্রেরিত ৩:১-১০) এখন লুস্ত্রায় পৌলও জন্ম থেকে খোঁড়া একজন ব্যক্তিকে সুস্থ করেন। (প্রেরিত ১৪:৮-১০) কিন্তু, পৌলের এই আশ্চর্য কাজ লোকদের উপর একেবারেই বিপরীত প্রভাব ফেলে।
১০ লুস্ত্রার লোকেরা মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করত। সেইজন্য, পৌল যখন সেই ব্যক্তিকে সুস্থ করেছিলেন, তখন লুস্ত্রার লোকেরা মনে পৌল ও বার্ণবাকে দেবতা বলে মনে করে। তারা বার্ণবাকে জিউস দেবতা এবং পৌলকে হার্মিস দেবতা বলে ডাকতে শুরু করে। জিউস ছিল তাদের দেবতাদের মধ্যে প্রধান এবং হার্মিস ছিল জিউসের ছেলে ছিলেন আর সেইসঙ্গে দেবতাদের বার্তাবাহকও ছিলেন। (“লুস্ত্রা নগর যেখানে জিউস ও হার্মিসের উপাসনা করা হত” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।) কিন্তু, পৌল ও বার্ণবা সেই লোকদের এটা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে, তারা কোনো দেবতা নয়। বরং যিহোবাই হলেন একমাত্র সত্য ঈশ্বর আর তার কাছ থেকে পাওয়া ক্ষমতার কারণেই তারা এই আশ্চর্য কাজটা করতে পেরেছে।—প্রেরিত ১৪:১১-১৪.
১১-১৩. (ক) পৌল ও বার্ণবা লুস্ত্রার লোকদের কী বলেছিলেন? (খ) পৌল ও বার্ণবার কাছ থেকে আমরা কোন বিষয়টা শিখতে পারি?
১১ এত হইচইয়ের মধ্যেও পৌল ও বার্ণবা পুরোপুরিভাবে লোকদের কাছে সাক্ষ্য দেওয়ার প্রচেষ্টা করেন। লক্ষ করুন, তারা লোকদের কী বলেন? এখান থেকে আমরা বুঝতে পারব যে, কীভাবে আমরা অন্য ধর্মের লোকদের কাছে ভালোভাবে সাক্ষ্য দিতে পারি। তারা বলেন: “বন্ধুরা, কেন আপনারা এইসমস্ত কাজ করছেন? আমরাও আপনাদের মতোই সাধারণ মানুষ মাত্র। আর আমরা আপনাদের কাছে সুসমাচার ঘোষণা করছি, যেন আপনারা এই অলীক বিষয়গুলো থেকে ফিরে আসেন এবং সেই জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা করেন, যিনি আকাশ ও পৃথিবী ও সমুদ্র এবং সেগুলোর মধ্যে যা যা আছে, সবই তৈরি করেছেন। অতীতে তিনি সমস্ত জাতিকে নিজেদের ইচ্ছামতো চলতে দিয়েছেন, তবুও তিনি ভালো বিষয়গুলোর মাধ্যমে নিজের সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে সাক্ষ্য দিয়েছেন, আপনাদের জন্য আকাশ থেকে বৃষ্টি এবং বিভিন্ন ঋতুতে প্রচুর শস্য জুগিয়েছেন আর খাদ্য দিয়ে আপনাদের পরিতৃপ্ত করেছেন এবং আপনাদের হৃদয় আনন্দে পূর্ণ করেছেন।”—প্রেরিত ১৪:১৫-১৭.
১২ পৌল ও বার্ণবা লোকদের যা বলেছিলেন, তা সত্যিই লক্ষ করার মতো। সেখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি? প্রথমত, পৌল ও বার্ণবা নিজেদের সেই লোকদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হিসেবে দেখেননি বরং তারা এটা নম্রভাবে স্বীকার করেছিলেন যে, তারাও সেই লোকদের মতো আর তাদের নিজেদের মধ্যেও দুর্বলতা রয়েছে। এটা ঠিক যে, পৌল ও বার্ণবা পবিত্র শক্তি পেয়েছিলেন এবং তারা মিথ্যা শিক্ষাগুলো থেকে মুক্ত ছিলেন। আর খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করার আশাও তাদের ছিল। তবে, তারা এটা ভালোভাবে জানতেন, লুস্ত্রার লোকেরা যদি খ্রিস্টের আজ্ঞাগুলো পালন করে, তা হলে তারাও এই সমস্ত আশীর্বাদগুলো লাভ করবে।
১৩ বর্তমানে, যাদের কাছে আমরা প্রচার করি, তাদের প্রতি আমরা কেমন মনোভাব বজায় রাখি? আমরা নিজেদের যেভাবে দেখি তাদেরও কি সেভাবেই দেখি? আমরা যখন তাদের ঈশ্বরের বাক্য থেকে সত্য সম্বন্ধে শেখাই, তখন কি তাদের কাছ থেকে প্রশংসা পাওয়ার চেষ্টা করি, না কি পৌল ও বার্ণবার মতো এমনটা করা থেকে দূরে থাকি? ভাই চার্লস টেজ রাসেল এই বিষয়ে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ রেখেছেন। তিনি একজন দক্ষ শিক্ষক ছিলেন, যিনি ১৮৭০ থেকে ১৯১৬ সাল পর্যন্ত অনেক উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ করেছিলেন। কিন্তু তিনি লিখেছিলেন, “আমরা চাই না,, লোকেরা আমাদের প্রতি কিংবা আমাদের পত্রপত্রিকার প্রতি শ্রদ্ধা বা ভক্তি দেখাক। অথবা আমরা এটাও চাই না যে, কেউ আমাদের রেভারেণ্ড অথবা গুরু হিসেবে সম্বোধন করুক।” পৌল ও বার্ণবার মতো ভাই রাসেল নম্রতা দেখেছিলেন। একইভাবে, আমরাও অন্যদের কাছ থেকে সুনাম পাওয়ার করার জন্য লোকদের কাছে প্রচার করি না বরং আমরা প্রচার করি যাতে লোকেরা “জীবন্ত ঈশ্বরের উপাসনা” করতে পারে।
১৪-১৬. পৌল ও বার্ণবা লুস্ত্রার লোকদের সঙ্গে যেভাবে কথা বলেছিলেন, সেখান থেকে আর কোন দুটো বিষয় আমরা শিখতে পারি?
১৪ পৌল ও বার্ণবা যেভাবে লুস্ত্রার লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন, সেখান থেকে আমরা আরও একটা বিষয়টা শিখতে পারি। তারা লোকদের পরিস্থিতি বিবেচনা করে, সেই অনুযায়ী তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার পদ্ধতিতে রদবদল করেছিলেন। লুস্ত্রার লোকেরা ইকনিয়ের যিহুদি এবং ধর্মান্তরিত ব্যক্তিদের মতো ছিল না। তাদের কাছে শাস্ত্রের জ্ঞান ছিল না। এমনকী তার এটাও জানত না যে, ইজরায়েল জাতির সঙ্গে যিহোবা ঈশ্বরের সম্পর্ক কেমন ছিল। তাই, পৌল ও বার্ণবা তাদের দৈনন্দিন জীবন এবং তাদের জীবিকার কথা মাথায় রেখে তাদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। লুস্ত্রার লোকেরা চাষবাস করত। এখানে খুব বৃষ্টি হত আর এখানকার জমি খুব উর্বর ছিল। এই সমস্ত কিছু দেখে তারা খুব সহজে এটা বুঝতে পারত যে, যিনি তাদের সৃষ্টি করেছেন, তার মধ্যে কত চমৎকার গুণাবলি রয়েছে। পৌল ও বার্ণবা এই বিষয়গুলো ব্যবহার করে, সেখানকার লোকদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন এবং তাদের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। —রোমীয় ১:১৯, ২০.
১৫ আমরাও কি লোকদের কথা মাথায় রেখে আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার পদ্ধতিতে রদবদল করতে পারি? আসুন, এই বিষয়টা একটা উদাহরণের সাহায্যে বোঝার চেষ্টা করি। একজন চাষি একই ধরনের বীজ আলাদা আলাদা জমিতে বপন করেছেন। কিন্তু, প্রতিটা জমির মাটি একই রকমের নয়। তাই, সেই চাষিকে প্রতিটা জমি আলাদা আলাদা উপায়ে তৈরি করতে হয়। যেমন, হতে পারে কোনো জমির মাটি নরম আর তাই সেই জমিতে বেশি পরিশ্রম করার প্রয়োজন নেই। অন্যদিকে, হয়তো অন্য জমির মাটিতে বীজ বোনার জন্য প্রস্তুত করতে অনেকটা সময় লাগতে পারে। একইভাবে, আমরা সমস্ত লোকদের হৃদয়ে একই প্রকৃতির বীজ বুনে থাকি আর সেটা হল, রাজ্যের বার্তা যা ঈশ্বরের বাক্যে রয়েছে। আমরা যদি চাই যে, লোকেরা আমাদের বার্তা শুনুক, তা হলে আমাদের এটা জানার চেষ্টা করতে হবে যে, লোকেরা কোন পরিস্থিতিতে রয়েছে আর তারা কী বিশ্বাস করে। আর এরপর, সেই পরিস্থিতি মাথায় রেখে আমাদের সাক্ষ্য দেওয়ার পদ্ধতিতে রদবদল করতে হবে। এভাবে আমরা পৌল ও বার্ণবার মতো পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দিতে পারব।—লূক ৮:১১, ১৫.
১৬ পৌল, বার্ণবা এবং লুস্ত্রার লোকদের বিবরণ থেকে আমরা আরও একটা বিষয় শিখতে পারি, তা হল কখনো কখনো আমাদের শত প্রচেষ্টার পরও কোনো কোনো ব্যক্তির হৃদয়ে সত্যের বীজ অঙ্কুরিত না-ও হতে পারে। সেই বীজ হয়তো শয়তান নিয়ে যায় অথবা সেই বীজ পাথুরে জমিতে পড়ে। (মথি ১৩:১৮-২১) প্রচার করার সময় যদি আপনার ক্ষেত্রেও এইরকমটা হয়ে থাকে, তা হলে নিরুৎসাহিত হবেন না। আমাদের উচিত পৌলের সেই কথাগুলো মনে রাখা, যা তিনি রোমের খ্রিস্টানদের বলেছিলেন: “আমাদের প্রত্যেককে [যাদের সঙ্গে আমরা বাইবেল থেকে আলোচনা করি তাদেরও] নিজ নিজ কাজের জন্য ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে হবে।”—রোমীয় ১৪:১২.
তারা “সেই প্রাচীনদের যিহোবার কাছে সমর্পণ করলেন” (প্রেরিত ১৪:২০-২৮)
১৭. দর্বী থেকে চলে যাওয়ার পর পৌল ও বার্ণবা কত দূর পর্যন্ত যাত্রা করেছিলেন এবং কেন?
১৭ পৌল মারা গিয়েছে ভেবে লোকেরা তাকে টেনে-হেঁচড়ে লুস্ত্রার বাইরে নিয়ে যায় এবং সেখানে ফেলে দেয়, তখন শিষ্যেরা তাকে সাহায্য করার জন্য সেখানে আসে। তিনি উঠে বসেন এবং সেই রাতে তারা লুস্ত্রাতেই থেকে যান। পরের দিন, তিনি এবং বার্ণবা দর্বী নগরের উদ্দেশে রওনা দিলেন, যেটা প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে ছিল। একটু কল্পনা করুন, পৌলের জন্য সেই যাত্রা কতটা কষ্টকর ছিল, কারণ কয়েক ঘণ্টা আগেই তাকে পাথর ছুড়ে মারা হয়েছিল আর তার ক্ষত তখনও ঠিক হয়নি। তবুও, তারা দু-জন হাল ছেড়ে দেননি। তারা দর্বীতে পৌঁছানোর পর “অনেক লোককে শিষ্য হতে সাহায্য” করলেন। এরপর, তারা চাইলে দর্বী থেকে কম দূরত্বের রাস্তা বাছাই করে, সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় যেতে পারতেন, যেখান থেকে তারা মিশনারি যাত্রা শুরু করেছিলেন। কিন্তু, এর পরিবর্তে, “তারা লুস্ত্রা, ইকনিয় ও [পিষিদিয়ায়] আন্তিয়খিয়ায় ফিরে গেলেন।” কেন? কারণ “সেখানে তারা শিষ্যদের শক্তি জোগালেন এবং বিশ্বাসে স্থির থাকার জন্য” উৎসাহিত করলেন। (প্রেরিত ১৪:২০-২২) এই দু-জন ভাই কতই-না এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন! তারা নিজেদের আরাম-আয়েশের কথা না ভেবে সবসময় মণ্ডলীর বিষয়ে চিন্তা করতেন। বর্তমানে, সীমা অধ্যক্ষ এবং মিশনারিরা এই একইরকম উদ্যোগ দেখিয়ে থাকেন।
১৮. কীভাবে মণ্ডলীতে প্রাচীনদের নিযুক্ত করা হয়?
১৮ পৌল ও বার্ণবা তাদের কথা ও কাজের মাধ্যমে শিষ্যদের সাহস বৃদ্ধি করার সঙ্গে সঙ্গে “প্রতিটা মণ্ডলীতে প্রাচীনদের নিযুক্ত করলেন।” যদিও এই দু-জনকে “পবিত্র শক্তির দ্বারা প্রেরিত হয়ে” মিশনারি যাত্রার জন্য পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, তারপরও তারা “প্রাচীনদের যিহোবার কাছে সমর্পণ” করার আগে প্রার্থনা ও উপবাস করলেন। (প্রেরিত ১৩:১-৪; ১৪:২৩) বর্তমানে, এভাবেই প্রাচীনদের নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। কোনো ভাইকে প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করার আগে, প্রাচীনগোষ্ঠী প্রার্থনা করেন এবং ভালোভাবে পরীক্ষা করে দেখেন যে, প্রাচীনদের জন্য শাস্ত্রে যে-যোগ্যতার বিষয় বলা রয়েছে, এই ভাইয়ের মধ্যে সেই যোগ্যতা রয়েছে কি না। (১ তীম. ৩:১-১০, ১২, ১৩; তীত ১:৫-৯; যাকোব ৩:১৭, ১৮; ১ পিতর ৫:২, ৩) সেই ভাইয়ের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র এটা দেখা হয় না যে, তিনি কত বছর ধরে সত্যে রয়েছেন। এর পরিবর্তে, এটাও দেখা হয় যে, তার কথাবার্তা এবং আচার-আচরণ কেমন আর তিনি অন্যদের কাছে কতটা সুনাম অর্জন করেছেন। আর এটা দেখাবে যে, তিনি পবিত্র শক্তির নির্দেশনা অনুযায়ী জীবনযাপন করেন কি না। একজন ভাই যখন বাইবেলে দেওয়া অধ্যক্ষদের জন্য যোগ্যতাগুলো পূরণ করেন, তখনই তাকে মণ্ডলীতে অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়ে থাকে। (গালা. ৫:২২, ২৩) এই নিযুক্তিকরণের কাজ সীমা অধ্যক্ষ করে থাকেন।—তুলনা করুন, ১ তীমথিয় ৫:২২.
১৯. প্রাচীনেরা কী জানেন এবং পৌল ও বার্ণবার মতো তারা কী করে থাকেন?
১৯ প্রাচীনেরা এটা জানেন যে, তারা মণ্ডলীর ভাই-বোনদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, তার জন্য তাদের যিহোবার কাছে নিকাশ দিতে হবে। (ইব্রীয় ১৩:১৭) পৌল ও বার্ণবার মতো প্রাচীনেরা উদ্যোগের সঙ্গে প্রচারে অংশ নেন এবং অন্যদের জন্য ভালো উদাহরণ স্থাপন করেন আর তাদের কথার মাধ্যমে ভাই-বোনদের উৎসাহিত করেন। তারা নিজেদের আরাম-আয়েশের পরিবর্তে, মণ্ডলীর ভালোর জন্য সবসময় কাজ করার জন্য প্রস্তুত থাকেন।—ফিলি. ২:৩, ৪.
২০. আমরা যখন বিশ্বস্ত খ্রিস্টান ভাই-বোনদের সম্বন্ধে পড়ি, তারা প্রচারে কতটা পরিশ্রম করছে, তখন আমরা কোন উপকার লাভ করি?
২০ শেষে পৌল ও বার্ণবা সিরিয়ার আন্তিয়খিয়ায় ফিরে আসেন, যেখান থেকে তারা মিশনারি যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেখানে পৌঁছে তারা সেখানকার ভাইদের, “ঈশ্বর তাদের মাধ্যমে যে কত কাজ করেছেন এবং ন-যিহুদিদের জন্য যে বিশ্বাসের দ্বার খুলে দিয়েছেন, তা তাদের জানালেন।” (প্রেরিত ১৪:২৭) বর্তমানে, আমরা যখন পড়ি যে, আমাদের বিশ্বস্ত খ্রিস্টান ভাই-বোনেরা কত উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে এবং যিহোবা তাদের প্রচেষ্টার উপর কত আশীর্বাদ করছেন, তখন আমরা অনেক খুশি আর ‘যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতা সহকারে সাহসের সঙ্গে কথা বলার’ জন্য অনেক উৎসাহিত হই।
a “ইকনিয়—ফরুগিয়াদের নগর” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।