অধ্যায় ১৮
‘ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টা করো, তা হলে তাঁকে খুঁজে পেতে পার’
পৌল তার প্রচারের পদ্ধতিতে রদবদল করেন এবং লোকদের আগ্রহ রয়েছে এমন বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলেন
প্রেরিত ১৭:১৬-৩৪ পদের উপর ভিত্তি করে
১-৩. (ক) এথেন্সে পৌল কী দেখে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলেন? (খ) পৌলের বক্তৃতা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
প্রেরিত পৌল গ্রিসের এথেন্সে রয়েছেন, যেটা জ্ঞান ও শিক্ষার প্রধান কেন্দ্র। এখানে এক সময় সক্রেটিস, প্লেটো ও এরিস্টটল নামে মহান দার্শনিকেরা শিক্ষা দিতেন। পৌল এই নগর ঘুরে দেখার সময় এমন কিছু বিষয় দেখেন, যেটার কারণে তিনি বিরক্ত হয়ে যান। মন্দিরে, বাজারে, রাস্তায় সবদিকেই শুধু প্রতিমা দেখা যায় কারণ এখানকার লোকেরা অনেক দেব-দেবীর পূজা করত। পৌল জানতেন যে, সত্য ঈশ্বর যিহোবা প্রতিমাপূজাকে ঘৃণা করেন। (যাত্রা. ২০:৪, ৫) আর পৌলও যিহোবা ঈশ্বরের মতো প্রতিমাপূজাকে ঘৃণা করতেন।
২ পৌল যখন বাজারে পৌঁছান, তখন সেখানে এমন কিছু দেখেন যা দেখে তিনি হতবাক হয়ে যান। সেই নগরের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রধান ফটক বা প্রবেশদ্বারের কাছে হার্মিস দেবতার অনেক নগ্ন প্রতিমা রয়েছে। সেই বাজারে অনেক মন্দির ছিল। এখন পৌল কীভাবে এই নগরে প্রচার করবেন? তিনি কি নিজেকে শান্ত রাখতে এবং লোকদের আগ্রহ রয়েছে, এমন বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন? তিনি কি একজন ব্যক্তিকেও সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে জানতে সাহায্য করতে পারবেন?
৩ পৌল এথেন্সের সেই বড়ো বড়ো জ্ঞানী ব্যক্তিদের সামনে দাঁড়িয়ে একটা বক্তৃতা দেন, যা প্রেরিত ১৭:২২-৩১ পদে লেখা রয়েছে। তিনি যথেষ্ট চিন্তাভাবনা করে লোকদের সঙ্গে কথা বলেন, যাতে তারা বিঘ্ন না পায়। আর তিনি যা-কিছুই বলেন, তা দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন। তার কাছ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? লোকদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের এমন বিষয় বাছাই করা উচিত, যে-বিষয়ে তাদের আগ্রহ রয়েছে। আর আমাদের এমনভাবে কথা বলা উচিত, যাতে লোকেরা সেই বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করে এবং সঠিক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারে।
তিনি “বাজারে” শিক্ষা দিতে লাগলেন (প্রেরিত ১৭:১৬-২১)
৪, ৫. পৌল এথেন্সের কোন জায়গায় প্রচার করেছিলেন এবং কাদের সঙ্গে কথা বলা পৌলের জন্য সহজ ছিল না?
৪ পৌল তার দ্বিতীয় মিশনারি যাত্রায় অর্থাৎ প্রায় ৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে এথেন্সে এসেছিলেন আর সীল ও তীমথিয় বিরয়া থেকে এখানে আসতে চলেছেন।a এর মধ্যে পৌল যেমনটা করে থাকেন, ঠিক তেমনি “সমাজগৃহে যিহুদিদের সঙ্গে . . . শাস্ত্র থেকে যুক্তিতর্ক করতে লাগলেন।” তিনি ‘বাজারেও’ যান, যাতে ন-যিহুদিদের কাছেও সাক্ষ্য দিতে পারেন। (প্রেরিত ১৭:১৭) এথেন্সের বাজারটা অনেক বড়ো ছিল আর এটা আ্যক্রোপলিস নামে একটা পাহাড়ের পাশে অবস্থিত। লোকেরা এখানে শুধুমাত্র জিনিসপত্র কেনা-বেচা করার জন্য আসত না বরং নগরের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করার জন্য এখানে একত্রিত হত। একটা বই বলে: “সেখানে নগরের ব্যবসায়ী, নেতা, দার্শনিক ও লেখকেরা একত্রিত হত। এখানে বসে বসে লোকেরা জ্ঞানের বড়ো বড়ো কথা বলতে খুব পছন্দ করত।”
৫ পৌল বাজারে এমন লোকদের সঙ্গে কথা বলতে যাচ্ছেন, যাদের বোঝানো সহজ নয়। এদের মধ্যে কিছু লোককে ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয় বলা হয়।b এদের দার্শনিক চিন্তাভাবনা একে অন্যের চেয়ে একেবারেই আলাদা। ইপিকুরেয়রা বিশ্বাস করত, জীবন আপনা-আপনি শুরু হয়েছে। অল্প কথায় বললে, জীবন সম্বন্ধে তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল, “ঈশ্বরকে ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই; মৃত্যু কোনো কষ্টদায়ক দুর্ঘটনা নয়; ভালোকে অর্জন করা যায়; মন্দকে সহ্য করা যায়।” অন্যদিকে স্তোয়িকীয়রা মনে করত, ঈশ্বর বলে কেউ নেই। মানুষ তার বুদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে ভালোভাবে জীবনযাপন করতে পারে। ইপিকুরেয় কিংবা স্তোয়িকীয় কেউই বিশ্বাস করত না, মানুষকে পুনরুত্থান করা সম্ভব। যেটা খ্রিস্টানদের এক গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা। তাই এটা স্পষ্টভাবে বোঝা যায়, এই দুই দার্শনিক দলের চিন্তাভাবনা খ্রিস্টানদের শিক্ষাগুলো থেকে একেবারেই আলাদা ছিল, যে-বিষয়ে পৌল তাদের বলছিলেন।
৬, ৭. গ্রিকের কিছু জ্ঞানী ব্যক্তি পৌলের কথা শুনে কী বলেছিল এবং বর্তমানেও লোকেরা আমাদের কী বলে?
৬ পৌলের কথা শুনে গ্রিকের কিছু জ্ঞানী ব্যক্তির কেমন লেগেছিল? এদের মধ্যে কিছু লোক পৌলকে “বাচাল” বলেছিল। গ্রিক ভাষায় এই শব্দের অর্থ হতে পারে, “যিনি বীজ কুড়ান।” (প্রেরিত ১৭:১৮) একজন পণ্ডিত বলেন: “এই শব্দটা মূলত একটা ছোটো পাখির ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়, যে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে শস্য সংগ্রহ করে। পরবর্তী সময়ে, এই শব্দ সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হত, যারা বাজারে পড়ে থাকা খাবার এবং অন্যান্য জিনিস সংগ্রহ করত। পরে এই শব্দ সেই ব্যক্তিদের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয়, যারা এখান-ওখান থেকে বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করে, কিন্তু নিজেই সেগুলোর অর্থ বুঝতে পারে না।” তাই, সেই জ্ঞানী ব্যক্তিরা যখন পৌলকে “বাচাল” বলেছিল, তখন এর অর্থ ছিল, পৌল কিছুই জানেন না, তিনি শুধুমাত্র শোনা কথাগুলো না বুঝে বলে চলেছেন। লোকেরা যখন পৌলকে এভাবে অপমান করছিল, তখন তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি আর বার্তা শোনানোর ক্ষেত্রে পিছপা হননি, যেমনটা আমরা পরবর্তী সময়ে দেখব।
৭ বর্তমানেও যিহোবার সাক্ষিদের সঙ্গে এমনই কিছু হয়ে থাকে। আমরা যেহেতু যিহোবার সাক্ষি এবং বাইবেলকে বিশ্বাস করি, তাই লোকেরা আমাদের অপমান করে এবং উলটোপালটা নামে ডাকে। উদাহরণ স্বরূপ, কিছু শিক্ষক বলে, বিবর্তনবাদের শিক্ষা সঠিক আর বুদ্ধিমান ব্যক্তিরাই এই শিক্ষাটাকে বিশ্বাস করে। তারা বলে থাকে, যারা এই শিক্ষায় বিশ্বাস করে না, তারা বোকা। সেইজন্য আমরা যখন বাইবেল থেকে লোকদের দেখাই যে, সমস্ত কিছু আপনা-আপনি হয়নি, বরং এগুলো সৃষ্টি করা হয়েছে, তখন তারা আমাদের বোকা বলে মনে করে। আমাদেরকে যখন অপমান করা হয়, তখন আমরা হতাশ হই না। এর পরিবর্তে, আমরা পুরোপুরি নিশ্চয়তার সঙ্গে আমাদের বিশ্বাসের পক্ষ সমর্থন করি আর জানাই যে, একজন সৃষ্টিকর্তা রয়েছেন, যিনি সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন।—প্রকা. ৪:১১.
৮. (ক) পৌলের কথা শুনে অন্য ব্যক্তিরা কী বলেছিল? (খ) কেন পৌলকে আরেয়পাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল? (১৪২ পৃষ্ঠায় দেওয়া পাদটীকা দেখুন।)
৮ পৌলের কথা শুনে কেউ কেউ আবার এইরকম বলে, “মনে হচ্ছে এ বিদেশি দেবতাদের বিষয়ে প্রচার করছে।” (প্রেরিত ১৭:১৮) তাদের কথা কি সত্যি? পৌল কি নতুন দেবতাদের বিষয়ে প্রচার করছেন? সেই সময়ে নতুন দেবতাদের সম্বন্ধে প্রচার করা অনেক বিপদজনক ছিল। অনেক বছর আগে, সক্রেটিস নামে একজন দার্শনিকের উপর একইরকম অভিযোগ নিয়ে আসা হয়েছিল আর এইজন্য তার বিরুদ্ধে মামলা চলেছিল এবং শেষে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। সেইজন্য এথেন্সের লোকদের কাছে যখন পৌলের শিক্ষা অন্যরকম লেগেছিল, তখন তারা তাকে আরেয়পাগে নিয়ে যায় আর সেখানে গিয়ে পৌল যে-বিষয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন, সেই বিষয়ে তাকে বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করতে বলে।c এখন পৌল কীভাবে এই ব্যক্তিদের কাছে প্রচার করবেন, যাদের শাস্ত্রের বিষয়ে কোনো জ্ঞান নেই?
‘হে এথেন্সের লোকেরা, [আমি] দেখতে পাচ্ছি’ (প্রেরিত ১৭:২২, ২৩)
৯-১১. (ক) পৌল কোন বিষয় নিয়ে তার কথা শুরু করেছিলেন? (খ) কীভাবে আমরা প্রচারে পৌলের পদ্ধতিকে ব্যবহার করতে পারি?
৯ মনে করে দেখুন, পৌল সেই নগরের প্রতিমাগুলো দেখে কতটা বিরক্ত হয়েছিলেন! কিন্তু, তিনি প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে জনসমক্ষে কিছু বলেননি। এর পরিবর্তে, তিনি শান্ত থাকেন আর বুদ্ধিপূর্বক কাজ করেন। তিনি এমন বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন, যে-বিষয়ে এথেন্সের লোকদের আগ্রহ রয়েছে। তিনি বলেন: “হে এথেন্সের লোকেরা, তোমরা দেখছি সমস্ত বিষয়ে অন্য লোকদের চেয়ে বেশি দেবতাভক্ত।” (প্রেরিত ১৭:২২) পৌল তাদের প্রশংসায় বলছেন যে তারা দেবতাভক্ত। যদিও তিনি জানতেন, তারা মিথ্যা শিক্ষায় অন্ধ হয়ে রয়েছে, তবে তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি ভালো আর তারা সত্য জানতে চায়। পৌল স্মরণ করেন যে, তিনিও একসময় যা-কিছু করেছিলেন, “না বুঝে এবং প্রকৃত বিশ্বাস না থাকার কারণে” করেছিলেন। —১ তীম. ১:১৩.
১০ এরপর পৌল বলেন, কেন তিনি এথেন্সের লোকদের প্রশংসা করেছেন। তারা “অপরিচিত ঈশ্বরের উদ্দেশে” একটা বেদি তৈরি করেছে। একটা বই বলে, “গ্রিক এবং অন্যান্য দেশের লোকেরা ‘অপরিচিত ঈশ্বরদের’ নামে বেদি তৈরি করত। এমনটা করার কারণ হল তারা মনে করত, তারা যদি ভুল করে কোনো এক ঈশ্বরের উপাসনা করা বাদ দিয়ে দেয়, তা হলে সেই ঈশ্বর তাদের উপর রেগে যাবেন।” তাই, এথেন্সের লোকেরা “অপরিচিত ঈশ্বরের উদ্দেশে” যে-বেদি তৈরি করেছিল, সেটার অর্থ ছিল, এমন এক ঈশ্বর আছেন, যার সম্বন্ধে তারা জানে না। এই বেদির বিষয়ে উল্লেখ করার পর, পৌল সেই লোকদের মনোযোগ তার বার্তার প্রতি আকর্ষণ করান। তিনি বুঝিয়ে বলেন: “তোমরা না জেনে যাঁর উপাসনা করছ, আমি তোমাদের কাছে তাঁর বিষয়েই প্রচার করছি।” (প্রেরিত ১৭:২৩) পৌল কোনো নতুন কিংবা বিদেশি দেবতার বিষয়ে তাদের কাছে প্রচার করছেন না, যেমনটা কেউ কেউ তার উপর অভিযোগ নিয়ে এসেছিল। এর পরিবর্তে, তিনি সত্য ঈশ্বর সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিচ্ছিলেন, যাঁর বিষয়ে তারা জানত না। পৌল বুদ্ধিপূর্বক এবং কতই-না চমৎকার উপায়ে বার্তা তুলে ধরেছিলেন!
১১ কীভাবে আমরা প্রচারে পৌলের মতো একই পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারি? আমরা একটু মনোযোগ দিতে পারি, গৃহকর্তা কোনো ধরনের পোশাক পরে আছেন কিংবা তার ঘরের আশেপাশে এমন কোনো জিনিস রয়েছে, যেটা থেকে বোঝা যায় যে, তার ঈশ্বরের প্রতি ভক্তি রয়েছে। এরপর আমরা সেই গৃহকর্তাকে বলতে পারি, ‘আমি লক্ষ করেছি, আপনি ঈশ্বরকে খুব ভক্তি করেন। আমি আপনার মতো ব্যক্তিদের সঙ্গেই দেখা করতে এসেছি।’ এভাবে তার প্রশংসা করার মাধ্যমে আমরা এমন বিষয় নিয়ে কথা শুরু করতে পারি, যে-বিষয়ে তার আগ্রহ রয়েছে। মনে রাখবেন, একজন ব্যক্তি যে-ধর্মেই বিশ্বাস করুক না কেন, তার সম্বন্ধে এমনটা চিন্তা করা ঠিক নয় যে, তিনি কখনো সত্য গ্রহণ করবেন না। আমাদের মধ্যে এমন অনেক ভাই-বোন রয়েছে, যারা একসময় মিথ্যা শিক্ষাগুলো মেনে চলত।
ঈশ্বর “আমাদের কারো কাছ থেকে দূরে নন” (প্রেরিত ১৭:২৪-২৮)
১২. পৌল কীভাবে এথেন্সের লোকদের কথা মাথায় রেখে তার প্রচারের পদ্ধতিতে রদবদল করেছিলেন?
১২ পৌল এথেন্সের লোকদের আগ্রহের বিষয় নিয়ে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। কিন্তু, তিনি কি তাদের আগ্রহ ধরে রাখতে পারবেন? পৌল জানতেন, সেই ব্যক্তিদের গ্রিক দর্শন সম্বন্ধে জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু শাস্ত্র সম্বন্ধে কোনো জ্ঞান নেই। তাই, তাদের সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য তিনি তার পদ্ধতিতে রদবদল করেন। কীভাবে? প্রথমত, তিনি সরাসরি শাস্ত্র থেকে উদ্ধৃতি না করে, তাতে লেখা কথাগুলো নিজের ভাষায় বুঝিয়ে বলেন। দ্বিতীয়ত, তিনি কথা বলার সময়ে “আমরা” শব্দটা ব্যবহার করেন। এমনটা করার মাধ্যমে তিনি তাদের বুঝতে সাহায্য করেন যে, তিনি তাদের চিন্তাভাবনা ও অনুভূতি বোঝেন। তৃতীয়ত, তিনি গ্রিক লেখকদের বই থেকেও কিছু উদ্ধৃতি করে কথা বলেন, যেন তারা বুঝতে পারে, তিনি যে-কথাগুলো বলছেন, সেগুলো তাদের বইতেও লেখা আছে। আসুন, পৌলের সেই চমৎকার বক্তৃতার প্রতি মনোযোগ দিই আর দেখি তিনি সেই অপরিচিত ঈশ্বরের বিষয়ে কোন গুরুত্বপূর্ণ সত্য জানাচ্ছেন।
১৩. নিখিলবিশ্ব সম্বন্ধে পৌল কী বলেছিলেন আর এটা বলার মাধ্যমে তিনি কোন বার্তা জানাতে চেয়েছিলেন?
১৩ ঈশ্বর নিখিলবিশ্বকে সৃষ্টি করেছেন। পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বর, যিনি জগৎ এবং এর মধ্যে যা যা আছে, সমস্ত কিছু তৈরি করেছেন, তিনিই আকাশ ও পৃথিবীর প্রভু। তিনি মানুষের হাতে তৈরি কোনো মন্দিরে বাস করেন না।”d (প্রেরিত ১৭:২৪) নিখিলবিশ্ব এবং এর মধ্যে যা-কিছু আছে, তা আপনা-আপনি হয়নি। সত্য ঈশ্বর সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন। (গীত. ১৪৬:৬) তিনি আকাশ ও পৃথিবীর প্রভু, তা হলে কীভাবে তিনি মানুষের তৈরি কোনো মন্দিরে বাস করতে পারেন? (১ রাজা. ৮:২৭) তিনি এথেনা এবং অন্যান্য দেবতাদের মত নন, যাদের মহিমা বা গৌরব ততদিন থাকে, যতদিন তাদের মন্দির ও বেদি থাকে। পৌলের বার্তা একেবারে স্পষ্ট: সত্য ঈশ্বর এতটাই মহান যে, মানুষের তৈরি কোনো মূর্তির সঙ্গে তাঁর তুলনাই হয় না।—যিশা. ৪০:১৮-২৬.
১৪. কীভাবে পৌল বুঝিয়েছিলেন যে, ঈশ্বর মানুষের ওপর নির্ভরশীল নন?
১৪ ঈশ্বর মানুষের উপর নির্ভরশীল নন। প্রতিমাপূজা করার জন্য লোকেরা সেই প্রতিমাকে দামি দামি কাপড় পরায় এবং তার সামনে দামি দামি উপহার ও সেইসঙ্গে খাবার-দাবার রাখে। তারা মনে করে, প্রতিমাগুলোর এই সমস্ত কিছুর প্রয়োজন রয়েছে। কিন্তু, কিছু গ্রিক দার্শনিক হয়তো এটা বিশ্বাস করত না। তারা নিশ্চয়ই পৌলের এই কথায় একমত হয়েছিল যে, “মানুষের হাত থেকে [ঈশ্বরের] কোনো সেবার প্রয়োজন নেই, যেহেতু তাঁর কোনো কিছুরই অভাব নেই।” সত্য বিষয়টা হল, সৃষ্টিকর্তা মানুষের ওপর নির্ভরশীল নন। এর পরিবর্তে, ঈশ্বরই মানুষকে “জীবন ও শ্বাস এবং সমস্ত কিছু দেন।” তিনি সূর্যের আলো, বৃষ্টি, উর্বর জমি ইত্যাদি দিয়ে থাকেন, যেগুলো মানুষের খুবই প্রয়োজন। (প্রেরিত ১৭:২৫; আদি. ২:৭) এখান থেকে স্পষ্ট বোঝা যায়, ঈশ্বর যিনি মানুষকে সবকিছু দেন, মানুষের কাছ থেকে তাঁর কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই।
১৫. পৌল এথেন্সের লোকদের ভুল চিন্তাভাবনা কীভাবে সংশোধন করেছিলেন আর আমরা তার উদাহরণ থেকে কী শিখতে পারি?
১৫ ঈশ্বর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন। এথেন্সের লোকেরা নিজেদের দেশ নিয়ে খুব গর্ব করত এবং ন-যিহুদিদের থেকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ বলে মনে করত। কিন্তু বাইবেল আমাদের শেখায়, আমাদের দেশ কিংবা জাতি নিয়ে গর্ব করা উচিত নয়। (দ্বিতীয়. ১০:১৭) পৌল কীভাবে তাদের ভুল চিন্তাভাবনাকে সংশোধন করেছিলেন? সেই ব্যক্তিরা যেন আঘাত না পায়, এই বিষয়টা মাথায় রেখে, তিনি খুবই কৌশলতার সঙ্গে বলেন, “[ঈশ্বর] এক ব্যক্তি থেকে সমস্ত জাতির লোককে তৈরি করেছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৬) পৌলের এই কথা শুনে তারা চিন্তায় পড়ে যায়। পৌল এখানে আদিপুস্তকে বলা প্রথম মানুষ আদমের বিষয়ে কথা বলছিলেন, যার থেকে মানবজাতি এসেছে। (আদি. ১:২৬-২৮) যেহেতু মানবজাতি এক জন মানুষ থেকে এসেছে, তাই কোনো দেশ কিংবা জাতি একে অন্যের থেকে শ্রেষ্ঠ নয়। এই সত্যটা এথেন্সের লোকেরা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পারে। এখানে পৌলের কাছ থেকে আমরা এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় শিখতে পারি। সেটা হল লোকেরা যাতে আঘাত না পায়, এই কথা মাথায় রেখে আমরা যেন প্রচারে কৌশলতার সঙ্গে কথা বলি। তবে, তারা রেগে যাবে বলে আমরা বাইবেলের সত্যের বার্তায় কোনো পরিবর্তন করি না।
১৬. ঈশ্বর কেন মানুষকে সৃষ্টি করেছেন?
১৬ ঈশ্বর চান যেন মানুষ তাঁর নিকটবর্তী হয়। যে-দার্শনিকেরা পৌলের কথা শুনছিলেন, তারা নিশ্চয়ই অনেক বছর ধরে মানুষ ও জীবন সম্পর্কে আলোচনা করে আসছেন। কিন্তু তারপরও, তারা এই বিষয়টা সঠিকভাবে বুঝতে পারেননি যে, মানুষকে কেন সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু, পৌল তাদের স্পষ্টভাবে বলেন, ঈশ্বর মানুষকে এইজন্য সৃষ্টি করেছেন “যেন তারা ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টা করে। যদি তারা তাঁকে খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা করে, তা হলে তাঁকে খুঁজে পেতে পারে। যদিও তিনি আসলে আমাদের কারো কাছ থেকে দূরে নন।” (প্রেরিত ১৭:২৭) এথেন্সের লোকেরা যে-ঈশ্বর সম্বন্ধে জানত না, এখন তারা তাঁকে জানতে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে পারবে। আসলে, যে-লোকেরা সত্যিই তাঁকে খোঁজার চেষ্টা করে এবং তাঁর সম্বন্ধে জানতে চায়, তিনি তাদের কারো কাছ থেকে দূরে নন। (গীত. ১৪৫:১৮) লক্ষ করুন, পৌল “আমাদের” শব্দটা ব্যবহার করেছেন অর্থাৎ তিনি নিজেকেও সেই ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছেন, যাদের “ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টা” করা প্রয়োজন।
১৭, ১৮. (ক) কেন মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে জানার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত? (খ) পৌল তার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কী করেছিলেন এবং এখান থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৭ মানুষের মধ্যে ঈশ্বরকে জানার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত। কেন আমরা তা বলতে পারি? পৌল যেমন বলেছিলেন, “[ঈশ্বরের] মাধ্যমেই আমরা জীবন, গতি ও সত্তা লাভ করেছি।” কিছু পণ্ডিত বলে থাকেন, পৌল এই শব্দগুলো ষষ্ঠ শতাব্দীর কবি ইপিমেনাডিজের কবিতা থেকে নিয়েছেন। তিনি একজন সুপরিচিত কবি ছিলেন আর যখন এথেন্সের ধার্মিক রীতিনীতির কথা হত, তখন তার নাম অবশ্যই আসত। পৌল আরেকটা কারণ তুলে ধরেন যে, কেন মানুষের ঈশ্বরকে জানার আকাঙ্ক্ষা থাকা উচিত। তিনি বলেন: “যেমনটা তোমাদের কয়েক জন কবিও বলেছেন, ‘কারণ আমরাও তাঁর সন্তান।’” (প্রেরিত ১৭:২৮) ঈশ্বর পৃথিবীর প্রথম মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন, যার মাধ্যমে সমস্ত মানবজাতি এসেছে। তাই বলা যায়, ঈশ্বর এবং আমাদের মধ্যে একটা সম্পর্ক রয়েছে। সেইজন্য আমাদের তাঁকে জানতে হবে এবং তাঁর নিকটবর্তী হতে হবে। পৌল তার শ্রোতাদের মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য কিছু গ্রিক বই থেকে সরাসরি উদ্ধৃতি করেছিলেন।e পৌলের মতো আমরাও কখনো কখনো ইতিহাসের কিছু বই থেকে, এনসাইক্লোপিডিয়া থেকে কিংবা সুপরিচিত কিছু রেফারেন্স থেকে উদ্ধৃতি করতে পারি। যেমন, আমরা কিছু বিখ্যাত বই থেকে উদ্ধৃতি করে বোঝাতে পারি যে, প্রচলিত আচার-অনুষ্ঠান কিংবা উৎসব কীভাবে মিথ্যা ধর্ম থেকে এসেছে।
১৮ এখন পর্যন্ত পৌল এথেন্সের লোকদের খুবই কৌশলতার সঙ্গে ঈশ্বরের বিষয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সত্য জানিয়েছেন। এই সমস্ত কিছু জানার পর তাদের কী করা উচিত? আসুন দেখি, পৌল তাদের কী বলেন।
“সমস্ত জায়গায় লোকদের . . . অনুতপ্ত হতে হবে” (প্রেরিত ১৭:২৯-৩১)
১৯, ২০. (ক) লোকদের আঘাত না দিয়ে কীভাবে পৌল বুঝিয়েছিলেন যে, প্রতিমাপূজা করা বোকামি? (খ) পৌলের শ্রোতাদের কী করতে হত?
১৯ পৌল আরও একবার গ্রিক বইগুলো থেকে উদ্ধৃতি করে বলেন, “আমরা যেহেতু ঈশ্বরের সন্তান, তাই ঈশ্বরকে মানুষের শিল্প ও কল্পনা অনুসারে সোনা বা রুপোর তৈরি কিংবা পাথরে খোদাই করা কোনো কিছু হিসেবে চিন্তা করা উচিত নয়।” (প্রেরিত ১৭:২৯) ঈশ্বর যদি মানুষকে সৃষ্টি করে থাকেন, তা হলে তিনি কীভাবে একটা প্রতিমা হতে পারেন কারণ প্রতিমা তো মানুষ তৈরি করেছে? পৌল কতই-না চমৎকার এক যুক্তি তুলে ধরেন! এভাবে তিনি লোকদের আঘাত না দিয়ে খুবই কৌশলের সঙ্গে বিষয়টা স্পষ্ট করেন যে, প্রতিমাপূজা করা বোকামি। (গীত. ১১৫:৪-৮; যিশা. ৪৪:৯-২০) লক্ষ করুন, পৌল নিজেকে জড়িত করে “আমরা” শব্দ ব্যবহার করে বলেন, ‘তাই আমরা চিন্তা করব’ না। আর এর ফলে, হয়তো লোকদের পক্ষে তার কথা মেনে নেওয়া সহজ হয়েছিল।
২০ এখন পৌল তাদের স্পষ্টভাবে জানান যে, তাদের কী করতে হবে। তিনি বলেন: “একসময় মানুষ নিজেদের অজান্তেই সেইসমস্ত বিষয় করত, [মনে করত, প্রতিমাপূজা করার মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুশি করতে পারবে] কিন্তু ঈশ্বর সেগুলোকে উপেক্ষা করেছিলেন; তবে তিনি এখন সমস্ত জায়গায় লোকদের কাছে ঘোষণা করছেন যে, তাদের অনুতপ্ত হতে হবে।” (প্রেরিত ১৭:৩০) “অনুতপ্ত” হওয়ার বিষয়টা শুনে কিছু লোক হয়তো অবাক হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, পৌলের বক্তৃতা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট ছিল, ঈশ্বর যেহেতু তাদের জীবন দিয়েছেন, তাই তাঁর কাছে তাদের নিকাশ দিতে হবে। এতদিন যিহোবা তাদের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন কারণ তারা প্রতিমাপূজা করত। সেইজন্য তাদের প্রতিমাপূজা ছাড়তে হবে, যিহোবা সম্বন্ধে জানতে হবে এবং তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী জীবনযাপন করতে হবে।
২১, ২২. পৌল শেষে কোন জোরালো কথাগুলো বলেছিলেন এবং কেন তার কথাগুলো বর্তমানে আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ?
২১ শেষে পৌল এথেন্সের লোকদের এই জোরালো কথাগুলো বলেন: “[ঈশ্বর] একটা দিন স্থির করেছেন, যখন তিনি তাঁর নিযুক্ত ব্যক্তির মাধ্যমে ন্যায় সহকারে পুরো পৃথিবীর বিচার করবেন আর তিনি তাঁকে পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে সমস্ত মানুষকে এই বিষয়ে নিশ্চয়তা দিয়েছেন।” (প্রেরিত ১৭:৩১) ঈশ্বর খুব শীঘ্রই পৃথিবীর বিচার করবেন! এটা থেকে তাদের বোঝা উচিত ছিল, সত্য ঈশ্বরকে খোঁজা এবং তাঁকে খুঁজে পাওয়া কতটা প্রয়োজন! পৌল তাদের এটা বলেননি যে, ঈশ্বর বিচার করার জন্য কাকে নিযুক্ত করেছেন। তবে, তিনি সেই বিচারকের বিষয়ে এক আগ্রহজনক বিষয় বলেন যে, তাঁকে মেরে ফেলা হয়েছিল এবং ঈশ্বর তাঁকে পুনরুত্থিত করেছেন।
২২ পৌলের এই কথাগুলো আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা জানি, ঈশ্বর যিশু খ্রিস্টকে সেই বিচারক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন, যাঁকে মৃতদের মধ্যে থেকে পুনরুত্থিত করা হয়েছে। (যোহন ৫:২২) আমরা এটাও জানি, বিচার দিন ১০০০ বছর দীর্ঘ হবে আর সেই দিন দ্রুত এগিয়ে আসছে। (প্রকা. ২০:৪, ৬) আমরা সেই বিচার দিনকে ভয় পাই না কারণ আমরা জানি, আমরা যদি বিশ্বস্ত থাকি, তা হলে চমৎকার আশীর্বাদ পাব। কেন আমরা এতটা নিশ্চিত যে, আমাদের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল হবে? কারণ যিশুর পুনরুত্থান হল সবচেয়ে বড়ো প্রমাণ, যেটা আজ পর্যন্ত হওয়া সবচেয়ে বড়ো আশ্চর্য কাজ।
“কোনো কোনো ব্যক্তি . . . অনুসারী হল” (প্রেরিত ১৭:৩২-৩৪)
২৩. পৌলের বক্তৃতা শুনে লোকেরা কেমন প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?
২৩ পৌলের বক্তৃতা শোনার পর লোকেরা কী করে? “কেউ কেউ উপহাস করতে লাগল,” কারণ পৌল মৃতদের পুনরুত্থানের বিষয়ে কথা বলছিলেন। অন্যেরা উপহাস করেনি ঠিকই, কিন্তু তারা অনুতপ্তও হয়নি এবং সিদ্ধান্তও নেয়নি যে, যিশুর অনুসারী হবে। তারা শুধু পৌলকে এই বলে এড়িয়ে যাচ্ছিল, “আমরা এই বিষয়ে আরেক দিন আপনার কাছ থেকে শুনব।” (প্রেরিত ১৭:৩২) “কিন্তু কোনো কোনো ব্যক্তি তার সঙ্গে যোগ দিল এবং যিশুর অনুসারী হল। তাদের মধ্যে ছিলেন, দিয়নুষিয় নামে আরেয়পাগের আদালতের একজন বিচারক, দামারী নামে একজন মহিলা এবং তারা ছাড়া আরও কয়েক জন ব্যক্তি।” (প্রেরিত ১৭:৩৪) বর্তমানে, প্রচারে আমাদেরও বিভিন্ন ধরনের ব্যক্তিদের সঙ্গে দেখা হয়। তাদের মধ্যে কিছু ব্যক্তি আমাদের উপহাস করে, আবার অন্যেরা সম্মানের সঙ্গে এড়িয়ে যায়। কিন্তু, কোনো কোনো ব্যক্তি যখন রাজ্যের সুসমাচার শোনে আর যিশুর অনুসারী হয়, তখন আমরা খুবই আনন্দিত হই।
২৪. এথেন্সের লোকদের কাছে পৌল যে-বক্তৃতা দিয়েছিলেন, সেটা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
২৪ পৌলের বক্তৃতা থেকে আমরা অনেক কিছু শিখেছি। একটা বিষয় হল, আমরা লোকদের সঙ্গে যুক্তি করতে পারি এবং এমন প্রমাণগুলো দিতে পারি, যাতে তারা আমাদের কথায় বিশ্বাস করতে পারে। সেইসঙ্গে আমরা লোকদের কথা মাথায় রেখে প্রচার করার পদ্ধতিতে রদবদল করতে পারি। কিছু ব্যক্তি সৎ হৃদয়ের ঠিকই, কিন্তু মিথ্যা ধর্ম তাদের অন্ধ করে রেখেছে। আমরা এও শিখেছি, সেই ব্যক্তিদের আঘাত না দিয়ে আমরা ধৈর্য ধরতে পারি এবং বুদ্ধিপূর্বক আচরণ করতে পারি। আমরা পৌলের কাছ থেকে আরও একটা বিষয় শিখেছি, লোকেরা রেগে যাবে বলে আমরা বাইবেলের বার্তায় কোনো পরিবর্তন করব না। আমরা নিশ্চিত, আমরা যদি প্রেরিত পৌলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিই, তা হলে আমরা এক উত্তম শিক্ষক হয়ে উঠব। আর সেইসঙ্গে মণ্ডলীর অধ্যক্ষেরা তাদের শিক্ষাদানের মানকে উন্নত করতে পারেন। আমরা যদি এমনটা করি, তা হলে আমরা অন্যদের সাহায্য করতে পারব, “যেন তারা ঈশ্বরকে খোঁজার চেষ্টা করে” এবং “তাঁকে খুঁজে পেতে পারে।”—প্রেরিত ১৭:২৭.
a “এথেন্স—প্রাচীন কালের এক বিখ্যাত নগর” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
b “ইপিকুরেয় ও স্তোয়িকীয়” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।
c অ্যাক্রোপলিসের উত্তর-পশ্চিম দিকে অবস্থিত আরেয়পাগ নামে একটা উঁচু পাহাড় রয়েছে, যেখানে সাধারণত এথেন্সের শাসক সভা করতেন। বাইবেলে ‘আরেয়পাগ’ শব্দের মানে আরেয়পাগ পাহাড় কিংবা এথেন্সের শাসক হতে পারে। তাই, পণ্ডিতদের মধ্যে এই বিষয়ে মতভেদ রয়েছে যে, পৌলকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। কিছু পণ্ডিতেরা বলেন, পৌলকে আরেয়পাগ পাহাড়ে কিংবা তার আশেপাশে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আবার অন্য পণ্ডিতেরা বলেন, তাকে শাসকদের সভাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, যা হয়তো বাজারে কিংবা অন্য জায়গায় ছিল।
d এখানে যে-গ্রিক শব্দের অনুবাদ “জগৎ” করা হয়েছে, সেটা হল কস্মস্। বাইবেলে সাধারণত এই শব্দের মানে হল, লোক। কিন্তু, গ্রিক লোকেরা কস্মস্ শব্দ বলতে নিখিলবিশ্ব মনে করত। পৌল এথেন্সে গ্রিক লোকদের কাছে সেই বিষয় নিয়ে কথা বলেছিলেন, যে-বিষয়ে তাদের আগ্রহ ছিল। আর তিনি চেয়েছিলেন যেন সেই লোকেরা পরবর্তী সময়েও তার বার্তার প্রতি আগ্রহ দেখায়। হতে পারে, এই কারণেই তিনি নিখিলবিশ্বকে বোঝানোর জন্য প্রেরিত ১৭:২৪ পদে কস্মস্ শব্দ ব্যবহার করেছিলেন।
e পৌল স্তোয়িকীয় কবি অরাটাসের লেখা কবিতা ফিলোমিনা থেকে উদ্ধৃতি করেছিলেন। এর মতো একই কথাগুলো অন্যান্য গ্রিক বইগুলোতেও পাওয়া যায়। যেমন, যিউশের স্তুতি যা স্তোয়িকীয় লেখক ক্লিন্থেস লিখেছিলেন।