যিহোবার পালকদের বাধ্য হোন
“তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও, কারণ . . . তাঁহারা তোমাদের প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছেন।”—ইব্রীয় ১৩:১৭.
১, ২. কেন এটা তাৎপর্যপূর্ণ যে, যিহোবা নিজেকে একজন মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করেন?
যিহোবা নিজেকে একজন পালকের সঙ্গে তুলনা করেন। (যিহি. ৩৪:১১-১৪) এই বিষয়টা তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এটা আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, যিহোবা কেমন ব্যক্তি। একজন প্রেমময় মেষপালক তার যত্নাধীন মেষপালের রক্ষা এবং মঙ্গলের পুরো দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি তাদেরকে চারণভূমি এবং জলের উৎসের কাছে নিয়ে যান (গীত. ২৩:১, ২); দিন-রাত তাদের পাহারা দেন (লূক ২:৮); শিকারিদের হাত থেকে তাদেরকে সুরক্ষা করেন (১ শমূ. ১৭:৩৪, ৩৫); নবজাত মেষদের বহন করেন (যিশা. ৪০:১১); বিপথগামী মেষদের অন্বেষণ করেন ও সেইসঙ্গে আহত মেষদের ভালোভাবে যত্ন নেন।—যিহি. ৩৪:১৬.
২ প্রাচীন কালে যিহোবার লোকেরা যেহেতু এমন একটা সমাজে বাস করত, যেখানে মূলত পশু চরানো এবং চাষাবাদ করা হতো, তাই তারা যিহোবা ঈশ্বরকে একজন প্রেমময় মেষপালকের সঙ্গে তুলনা করার তাৎপর্যটা সহজেই বুঝতে পেরেছিল। তারা জানত যে, সুস্থসবল থাকার জন্য মেষদের যত্ন এবং মনোযোগের প্রয়োজন। আধ্যাত্মিক অর্থে, লোকেদের ক্ষেত্রেও একই বিষয় প্রযোজ্য। (মার্ক ৬:৩৪) উত্তম আধ্যাত্মিক যত্ন এবং নেতৃত্বের অভাবে লোকেরা কষ্টভোগ করে থাকে। তারা সহজেই আক্রমণের শিকার হয়ে ওঠে এবং নৈতিকভাবে বিপথগামী হয়—ঠিক যেমন ‘অরক্ষক মেষপাল’ ছিন্ন ভিন্ন হয়ে পড়ে। (১ রাজা. ২২:১৭) কিন্তু, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে তাঁর লোকেদের প্রয়োজনগুলো জুগিয়ে থাকেন।
৩. এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
৩ যিহোবাকে একজন মেষপালক হিসেবে চিত্রিত করা এমনকী আধুনিক দিনেও অর্থপূর্ণ। যিহোবা এখনও তাঁর মেষতুল্য লোকেদের প্রয়োজনগুলো জুগিয়ে থাকেন। আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে তিনি বর্তমানে তাঁর মেষদের পরিচালনা দেন এবং তাদের প্রয়োজনগুলো পূরণ করেন। আমরা এও বিবেচনা করব যে, যিহোবার প্রেমময় আগ্রহের প্রতি মেষদের কীভাবে সাড়া দেওয়া উচিত।
উত্তম পালক অধীনস্থ পালকদের জোগান
৪. যিহোবার মেষদের প্রয়োজনীয় বিষয় জোগানোর জন্য যিশু কোন ভূমিকা পালন করেন?
৪ যিশুকে যিহোবা খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। (ইফি. ১:২২, ২৩) “উত্তম মেষপালক” হিসেবে যিশু তাঁর পিতার মতো একই আগ্রহ, উদ্দেশ্য এবং গুণাবলি প্রকাশ করেন। যিশু এমনকী ‘মেষদের জন্য আপন প্রাণ সমর্পণ করিয়াছেন।’ (যোহন ১০:১১, ১৫) খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান মানবজাতির জন্য কী এক আশীর্বাদ! (মথি ২০:২৮) আসলে, এটা যিহোবারই উদ্দেশ্য, যেন “যে কেহ [যিশুতে] বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়”!—যোহন ৩:১৬.
৫, ৬. (ক) তাঁর মেষদের যত্ন নেওয়ার জন্য যিশু কাদের নিযুক্ত করেছেন এবং এই ব্যবস্থা থেকে উপকার লাভ করতে চাইলে, মেষদের কী করা প্রয়োজন? (খ) মণ্ডলীর প্রাচীনদের বাধ্য হতে চাওয়ার পিছনে সর্বপ্রধান কারণ কী হওয়া উচিত?
৫ উত্তম মেষপালক যিশু খ্রিস্টের প্রতি মেষেরা কীভাবে সাড়া দেয়? “আমার মেষেরা আমার রব শুনে,” যিশু বলেছিলেন, “আর আমি তাহাদিগকে জানি, এবং তাহারা আমার পশ্চাদ্গমন করে।” (যোহন ১০:২৭) উত্তম মেষপালকের রব শোনার অর্থ হল, সমস্ত বিষয়ে তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করা। এর অন্তর্ভুক্ত সেই অধীনস্থ আধ্যাত্মিক পালকদের সঙ্গে সহযোগিতা করা, যাদেরকে তিনি নিযুক্ত করেছেন। যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তাঁর প্রেরিত এবং শিষ্যরা সেই কাজ চালিয়ে যাবে, যা তিনি শুরু করেছিলেন। তারাই ‘যিশুর মেষগণকে চরাইবে’ এবং “শিক্ষা” দিবে। (মথি ২৮:২০; পড়ুন, যোহন ২১:১৫-১৭.) যেহেতু সুসমাচার ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিষ্যদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পায়, তাই যিশু মণ্ডলীগুলোকে পালন করার জন্য পরিপক্ব খ্রিস্টানদের ব্যবস্থা করেন।—ইফি. ৪:১১, ১২.
৬ প্রথম শতাব্দীতে ইফিষে অবস্থিত মণ্ডলীর অধ্যক্ষদের উদ্দেশ্য করে লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিষয়টা উল্লেখ করেছিলেন যে, পবিত্র আত্মা তাদেরকে ‘ঈশ্বরের মণ্ডলীকে পালন করিবার’ জন্য অধ্যক্ষ হিসেবে নিযুক্ত করেছে। (প্রেরিত ২০:২৮) বর্তমানে, খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের বেলায় একই বিষয় সত্য, যেহেতু তাদেরকেও পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত শাস্ত্রীয় চাহিদাগুলোর ভিত্তিতে নিযুক্ত করা হয়। তাই, খ্রিস্টান অধ্যক্ষদের বাধ্য হওয়া, দু-জন মহান পালক যিহোবা এবং যিশুর প্রতি আমাদের সম্মান প্রকাশ করে। (লূক ১০:১৬) নিশ্চিতভাবেই, প্রাচীনদের বশীভূত হতে চাওয়ার পিছনে এটাই সর্বপ্রধান কারণ হওয়া উচিত। কিন্তু, এই ধরনের বশ্যতার পিছনে অন্যান্য কারণও রয়েছে।
৭. যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য কীভাবে প্রাচীনরা আপনাকে সাহায্য করে?
৭ সহবিশ্বাসীদের নির্দেশনা প্রদান করার সময় প্রাচীনরা হয় সরাসরি শাস্ত্রের ওপর কিংবা শাস্ত্রীয় নীতিগুলোর ওপর ভিত্তি করে উৎসাহ ও পরামর্শ জুগিয়ে থাকে। কীভাবে তাদের ভাই-বোনদের জীবনযাপন করা উচিত, সেই বিষয়ে নিয়ম তৈরি করার উদ্দেশ্যে তারা এই ধরনের নির্দেশনা প্রদান করে না। (২ করি. ১:২৪) এর পরিবর্তে এর উদ্দেশ্য হল, উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার এবং মণ্ডলীতে শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখার ব্যাপারে সহখ্রিস্টানদের সাহায্য করার জন্য তাদেরকে শাস্ত্রীয় নির্দেশাবলি প্রদান করা। (১ করি. ১৪:৩৩, ৪০) প্রাচীনরা এই অর্থে ‘প্রাণের নিমিত্ত প্রহরি-কার্য্য করিতেছে’ যে, তারা মণ্ডলীর প্রত্যেক সদস্যকে যিহোবার সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক বজায় রাখার জন্য সাহায্য করতে চায়। তাই, তারা যদি বুঝতে পারে, একজন ভাই অথবা বোন কোনো ‘অপরাধ’ করতে যাচ্ছেন বা ইতিমধ্যেই করে ফেলেছেন, তাহলে তারা দ্রুত সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসবে। (গালা. ৬:১, ২; যিহূদা ২২) এগুলো কী “নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী” হওয়ার উত্তম কারণ নয়?—পড়ুন, ইব্রীয় ১৩:১৭.
৮. কীভাবে প্রাচীনরা ঈশ্বরের পালকে রক্ষা করে?
৮ প্রেরিত পৌল, যিনি নিজে একজন আধ্যাত্মিক পালক ছিলেন, কলসীর ভাইদের লিখেছিলেন: “দেখিও, দর্শনবিদ্যা ও অনর্থক প্রতারণা দ্বারা কেহ যেন তোমাদিগকে বন্দি করিয়া লইয়া না যায়; তাহা মনুষ্যদের পরম্পরাগত শিক্ষার অনুরূপ, জগতের অক্ষরমালার অনুরূপ, খ্রীষ্টের অনুরূপ নয়।” (কল. ২:৮) এই সাবধানবাণী, প্রাচীনদের দেওয়া শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার আরেকটা উত্তম কারণের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করায়। তারা এমন যেকোনো ব্যক্তির কাছ থেকে তাদের ভাই-বোনদের রক্ষা করার মাধ্যমে পালকে সুরক্ষা করে, যিনি হয়তো তাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দেওয়ার চেষ্টা করেন। প্রেরিত পিতর সেইসমস্ত ‘ভাক্ত ভাববাদী’ এবং ‘ভাক্ত গুরু’ সম্বন্ধে সাবধান করে দিয়েছিলেন, যারা “চঞ্চলমতিদিগকে” বা অস্থিরচিত্তের লোকেদের ভুল করার জন্য ‘প্রলোভিত করিবার’ চেষ্টা করে। (২ পিতর ২:১, ১৪) বর্তমান দিনের প্রাচীনদেরও যখন দরকার, তখন অবশ্যই একই সাবধানবাণী প্রদান করা প্রয়োজন। পরিপক্ব খ্রিস্টান পুরুষ হিসেবে, জীবন সম্বন্ধে তাদের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ ছাড়া, নিযুক্ত হওয়ার আগে তারা দেখিয়েছে যে, শাস্ত্র সম্বন্ধে তাদের এক স্পষ্ট বোধগম্যতা রয়েছে এবং তারা নিরাময় শিক্ষা প্রদান করার ক্ষেত্রে দক্ষ। (১ তীম. ৩:২; তীত ১:৯) তাদের পরিপক্বতা, ভারসাম্যপূর্ণ মনোভাব এবং বাইবেলভিত্তিক প্রজ্ঞা তাদেরকে দক্ষতার সঙ্গে পালকে নির্দেশনা প্রদান করতে সমর্থ করে।
উত্তম পালক মেষদের পালন করেন এবং সুরক্ষা প্রদান করেন
৯. বর্তমানে যিশু কীভাবে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীকে নির্দেশনা দেন এবং পালন করেন?
৯ তাঁর সংগঠনের মাধ্যমে যিহোবা বিশ্বব্যাপী সমগ্র ভ্রাতৃসমাজের জন্য প্রচুর আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগান। আমাদের প্রকাশনাগুলোর মাধ্যমে অনেক শাস্ত্রীয় পরামর্শ জোগানো হয়। এ ছাড়া, মাঝে মাঝে সংগঠন সরাসরি মণ্ডলীর প্রাচীনদের মাধ্যমে নির্দেশনা প্রদান করে আর তা হয় চিঠিপত্রের মাধ্যমে নতুবা ভ্রমণ অধ্যক্ষদের দেওয়া নির্দেশনার মাধ্যমে। এই উপায়গুলোর মাধ্যমে, মেষেরা স্পষ্ট নির্দেশনা লাভ করে থাকে।
১০. সেই ব্যক্তিদের বিষয়ে আধ্যাত্মিক পালকদের কোন দায়িত্ব রয়েছে, যারা পাল থেকে বিপথে গিয়েছে?
১০ আধ্যাত্মিক অর্থে, অধ্যক্ষদের মণ্ডলীর সদস্যদের সুরক্ষা প্রদান করার, লালনপালন করার এবং স্বাস্থ্যের যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে আর তা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তিদের, যারা আধ্যাত্মিকভাবে দুর্বল বা অসুস্থ হয়ে পড়েছে। (পড়ুন, যাকোব ৫:১৪, ১৫.) এইরকম কিছু ব্যক্তি হয়তো পাল থেকে বিপথে চলে গিয়েছে এবং খ্রিস্টীয় কাজকর্ম করা বন্ধ করে দিয়েছে। এমন ক্ষেত্রগুলোতে, একজন যত্নবান প্রাচীন কি প্রতিটা হারানো মেষকে খুঁজে বের করার এবং তাকে খোঁয়াড়ে অর্থাৎ মণ্ডলীতে ফিরে আসার ব্যাপারে উৎসাহিত করার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করবেন না? অবশ্যই করবেন! “এই ক্ষুদ্রগণের মধ্যে এক জনও যে বিনষ্ট হয়, তোমাদের স্বর্গস্থ পিতার এমন ইচ্ছা নয়,” যিশু ব্যাখ্যা করেছিলেন।—মথি ১৮:১২-১৪.
অধীনস্থ পালকদের ভুলত্রুটিকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
১১. কোন কারণে হয়তো কারো কারো পক্ষে প্রাচীনদের নেতৃত্ব অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে?
১১ যিহোবা এবং যিশু একেবারে নিখুঁত পালক। কিন্তু, অধীনস্থ মানব পালকরা নিখুঁত নয়, যাদেরকে তাঁরা আস্থা সহকারে মণ্ডলীর যত্ন নেওয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। এই বাস্তব বিষয়টার কারণে হয়তো কারো কারো পক্ষে প্রাচীনদের নেতৃত্ব অনুসরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। এই ধরনের ব্যক্তিরা হয়তো এমন যুক্তি দেখায়: ‘তারা তো আমাদের মতোই অসিদ্ধ মানুষ। তাই, কেন আমরা তাদের পরামর্শ শুনব?’ এটা ঠিক যে, প্রাচীনরা অসিদ্ধ। কিন্তু, তাদের ভুলত্রুটি এবং দুর্বলতা সম্বন্ধে আমাদের এক সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে।
১২, ১৩. (ক) এইরকম কিছু ব্যক্তির দোষত্রুটি সম্বন্ধে কী বলা যেতে পারে, যাদেরকে যিহোবা দায়িত্বপূর্ণ পদে ব্যবহার করেছিলেন? (খ) কেন দায়িত্ববান পুরুষদের ভুলত্রুটি সম্বন্ধে বাইবেলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে?
১২ শাস্ত্র স্পষ্টভাবে সেই ব্যক্তিদের দোষত্রুটি সম্বন্ধে তুলে ধরে, যাদেরকে অতীতে যিহোবা তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, দায়ূদকে ইস্রায়েলের রাজা এবং নেতা হিসেবে অভিষিক্ত করা হয়েছিল। কিন্তু, তিনি প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছিলেন এবং পারদারিকতা ও হত্যা করার মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছিলেন। (২ শমূ. ১২:৭-৯) এ ছাড়া, প্রেরিত পিতরের কথাও বিবেচনা করুন। যদিও প্রথম শতাব্দীতে খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে তাকে আস্থা সহকারে অনেক বড়ো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু তিনি গুরুতর ভুল করেছিলেন। (মথি ১৬:১৮, ১৯; যোহন ১৩:৩৮; ১৮:২৭; গালা. ২:১১-১৪) আদম এবং হবা থেকে শুরু করে এযাবৎ যিশু ছাড়া কোনো মানুষই নিখুঁত থাকেনি।
১৩ কেন যিহোবা সেই ব্যক্তিদের ভুলত্রুটির বিবরণ বাইবেল লেখকদের দ্বারা লিপিবদ্ধ করিয়েছেন, যাদেরকে তিনি কার্যভার দিয়েছিলেন? অন্যান্য কারণের পাশাপাশি আরেকটা কারণ হল এই বিষয়টা তুলে ধরা যে, ঈশ্বর তাঁর লোকেদের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য অসিদ্ধ মানুষকে ব্যবহার করতে পারেন। বাস্তবিকপক্ষে, সবসময়ই তিনি তা করেছেন। তাই, বর্তমানে যারা আমাদের নেতৃত্ব দেয়, তাদের অসিদ্ধতাগুলোকে তাদের বিরুদ্ধে বচসা করার অথবা তাদের কর্তৃত্বকে উপেক্ষা করার এক অজুহাত হিসেবে আমাদের ব্যবহার করা উচিত নয়। যিহোবা চান যেন আমরা এই ভাইদের সম্মান করি এবং তাদের বাধ্য থাকি।—পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ১৬:২, ৮.
১৪, ১৫. অতীতে যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছিলেন, তা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
১৪ বর্তমানে যারা আমাদের নেতৃত্ব দেয়, তাদের বাধ্য হওয়া অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অতীতে, কঠিন সময়গুলোতে কীভাবে যিহোবা তাঁর লোকেদের সঙ্গে আচরণ করেছিলেন, তা চিন্তা করুন। ইস্রায়েলের লোকেরা যখন প্রাচীন মিশর ত্যাগ করেছিল, তখন তারা মোশি ও হারোণের মাধ্যমে ঈশ্বরের নির্দেশনা লাভ করেছিল। দশটা আঘাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ইস্রায়েলীয়দের বিশেষ ভোজ খাওয়ার এবং হননকৃত মেষের কিছুটা রক্ত নিয়ে তাদের ঘরের দরজার দুই বাজুতে এবং কপালীতে লেপন করার নির্দেশনা পালন করতে হয়েছিল। এই নির্দেশনা তারা স্বর্গ থেকে একটা রবের মাধ্যমে লাভ করেনি। এর পরিবর্তে, তাদের ইস্রায়েলের সেই প্রাচীনবর্গের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনতে হয়েছিল, যারা মোশির কাছ থেকে নির্দিষ্ট নির্দেশনা লাভ করেছিল। (যাত্রা. ১২:১-৭, ২১-২৩, ২৯) সেই পরিস্থিতিগুলোতে, মোশি এবং প্রাচীনবর্গ তাঁর লোকেদের প্রতি যিহোবার নির্দেশনা জোগানোর বাহক হিসেবে কাজ করেছিল। বর্তমানেও খ্রিস্টান প্রাচীনরা এইরকম অতীব গুরুত্বপূর্ণ এক ভূমিকা পালন করে।
১৫ খুব সম্ভবত, আপনি হয়তো বাইবেলের ইতিহাসের এমন অসংখ্য সময়ের কথা চিন্তা করতে পারেন, যখন যিহোবা মানব অথবা দূত প্রতিনিধির মাধ্যমে জীবন রক্ষাকারী নির্দেশনা জুগিয়েছিলেন। সেইসমস্ত পরিস্থিতিতে ঈশ্বর কর্তৃত্ব প্রদান করাকে উপযুক্ত বলে মনে করেছিলেন। বার্তাবাহকরা তাঁর নামে কথা বলেছিল এবং তাঁর লোকেদের বলেছিল যে, কোনো দুর্দশা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তাদের কী করতে হবে। আমরা কি কল্পনা করতে পারি না যে, আরমাগিদোনের সময়ও হয়তো যিহোবা এইরকম কিছু করবেন? স্বাভাবিকভাবেই, বর্তমানে যিহোবা অথবা তাঁর সংগঠনকে প্রতিনিধিত্ব করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এমন যেকোনো প্রাচীনের অবশ্যই অত্যন্ত সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তারা তাদের সেই কর্তৃত্বের অপব্যবহার না করে, যা তাদেরকে আস্থা সহকারে প্রদান করা হয়েছে।
“এক পাল, ও এক পালক”
১৬. কোন ‘বাণীর’ প্রতি আমাদের মনোযোগ দিতে হবে?
১৬ যিহোবার লোকেরা “এক পালক” যিশুর অধীনে “এক পাল” গঠন করে। (যোহন ১০:১৬) যিশু ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, তিনি “যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন” শিষ্যদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন। (মথি ২৮:২০) স্বর্গীয় রাজা হিসেবে তাঁর সেইসমস্ত ঘটনার ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে শয়তানের জগতের বিরুদ্ধে বিচার আসবে। ঈশ্বরের পালের মধ্যে একতাবদ্ধ এবং নিরাপদ থাকতে হলে আমাদের ‘পশ্চাৎ হইতে বাণী’ শুনতে হবে, যা আমাদেরকে কোন পথে চলতে হবে, সেই বিষয়ে বলে থাকে। এই ‘বাণীর’ অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার বাক্যগুলো, যেগুলো বাইবেলের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে এবং যিহোবা ও যিশুর বাক্যগুলো, যেগুলো তাঁরা তাঁদের নিযুক্ত অধীনস্থ পালকদের মাধ্যমে প্রকাশ করে থাকে।—পড়ুন, যিশাইয় ৩০:২১; প্রকাশিত বাক্য ৩:২২.
১৭, ১৮. (ক) কোন বিপদ পালের জন্য হুমকি স্বরূপ কিন্তু আমরা কোন বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে পারি? (খ) পরের প্রবন্ধে কী আলোচনা করা হবে?
১৭ শয়তান সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে, সে “গর্জ্জনকারী সিংহের ন্যায়, কাহাকে গ্রাস করিবে, তাহার অন্বেষণ করিয়া বেড়াইতেছে।” (১ পিতর ৫:৮) একটা বন্য এবং হিংস্র শিকারির ন্যায় সে পালের দিকে এগিয়ে আসছে, অসতর্ক অথবা বিপথগামী ব্যক্তিদের ধরার জন্য সুযোগের অপেক্ষা করছে। এটা হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো কারণ, যেজন্য আমাদের পালের বাকি সকলের এবং ‘[আমাদের] প্রাণের পালক ও অধ্যক্ষ’ যিহোবার খুব কাছাকাছি থাকা উচিত। (১ পিতর ২:২৫) মহাক্লেশ থেকে রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে প্রকাশিত বাক্য ৭:১৭ পদ বলে: “মেষশাবক [যিশু] ইহাদিগকে পালন করিবেন, এবং জীবন-জলের উনুইয়ের নিকটে গমন করাইবেন, আর ঈশ্বর ইহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন।” এর চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিজ্ঞা কি থাকতে পারে?
১৮ অধীনস্থ আধ্যাত্মিক পালক হিসেবে খ্রিস্টান প্রাচীনদের অতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা সম্বন্ধে বিবেচনা করার পর, নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত, কীভাবে এই নিযুক্ত ব্যক্তিরা নিশ্চিত হতে পারে যে, তারা যিশুর মেষদের সঙ্গে এক উপযুক্ত উপায়ে আচরণ করে? পরের প্রবন্ধে এর উত্তর নিয়ে আলোচনা করা হবে।