যারা উদারভাবে দেয়, তারা সুখী হয়
“দান করা ধন্য হইবার বিষয়।”—প্রেরিত ২০:৩৫.
১. কী প্রমাণ করে যে, যিহোবা হলেন উদার?
একটা সময় ছিল, যখন যিহোবা ছাড়া আর কেউ ছিল না। তারপর, তিনি স্বর্গে ও পৃথিবীতে বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের সৃষ্টি করে তাদের জীবন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। “পরম ধন্য” বা সুখী ‘ঈশ্বর’ যিহোবা উত্তম উত্তম বিষয় প্রদান করতে ভালোবাসেন। (১ তীম. ১:১১; যাকোব ১:১৭) আর যেহেতু যিহোবা চান যেন আমরাও সুখী হই, তাই তিনি আমাদের উদারতা দেখানোর বিষয়টা শেখান।—রোমীয় ১:২০.
২, ৩. (ক) আমরা যখন উদারতা দেখাই, তখন কেন আমরা সুখী হই? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী শিখব?
২ ঈশ্বর মানুষকে তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন। (আদি. ১:২৭) এর অর্থ হল, যিহোবা আমাদের সেই গুণগুলো দিয়ে সৃষ্টি করেছেন, যেগুলো তাঁর নিজের রয়েছে। প্রকৃত সুখ ও যিহোবার আশীর্বাদ লাভ করার জন্য আমাদের তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে হবে। অন্যদের প্রতি আমাদের আগ্রহ দেখাতে হবে এবং তাদের অকাতরে বা উদারভাবে দিতে হবে। (ফিলি. ২:৩, ৪; যাকোব ১:৫) কেন? কারণ যিহোবা আমাদের এভাবেই সৃষ্টি করেছেন। যদিও আমরা অসিদ্ধ, তারপরও আমরা যিহোবাকে অনুকরণ করতে ও সেইসঙ্গে উদারতা দেখাতে পারি।
৩ এখন আমরা উদারতা সম্বন্ধে বাইবেলে পাওয়া কিছু শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করব। আমরা শিখব যে, আমরা যখন উদারতা দেখাই, তখন কেন যিহোবা খুশি হন। আমরা এও শিখব যে, কীভাবে উদারতা আমাদের যিহোবার দেওয়া কাজ করতে সাহায্য করে এবং আমরা যখন উদারতা দেখাই, তখন কেন আমরা সুখী হই। আর আমরা আলোচনা করব যে, কেন আমাদের উদারতা দেখিয়ে চলা উচিত।
আমরা যখন উদারতা দেখাই, তখন যিহোবা খুশি হন
৪, ৫. কীভাবে যিহোবা ও যিশু উদারতা দেখিয়েছেন এবং আমাদের কেন তাঁদের অনুকরণ করা উচিত?
৪ যিহোবা চান যেন আমরা তাঁকে অনুকরণ করি আর তাই, আমরা যখন উদারতা দেখাই, তখন এটা তাঁকে আনন্দিত করে। (ইফি. ৫:১) এ ছাড়া, যিহোবা চান যেন মানুষেরা সুখী হয়। আমরা এটা জানি কারণ তিনি আমাদের এক চমৎকার উপায়ে সৃষ্টি করেছেন এবং এই সুন্দর পৃথিবী ও এতে থাকা সমস্ত কিছু সৃষ্টি করেছেন যেন আমরা এগুলো উপভোগ করতে পারি। (গীত. ১০৪:২৪; ১৩৯:১৩-১৬) তাই, আমরা যখন অন্যদের খুশি করার চেষ্টা করি, তখন আমরা যিহোবাকে সম্মানিত করি।
৫ এ ছাড়া, আমরা যিশুকে অনুকরণ করি, যিনি এই বিষয়ে এক নিখুঁত উদাহরণ স্থাপন করেছেন যে, একজন মানুষ কীভাবে উদারতা দেখাতে পারেন। তিনি বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র পরিচর্য্যা পাইতে আইসেন নাই, কিন্তু পরিচর্য্যা করিতে, এবং অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে আসিয়াছেন।” (মথি ২০:২৮) আর প্রেরিত পৌল এই বলে খ্রিস্টানদের উৎসাহিত করেছিলেন: “খ্রীষ্ট যীশুতে যে ভাব ছিল, তাহা তোমাদিগেতেও হউক। . . . [তিনি] আপনাকে শূন্য করিলেন, দাসের রূপ ধারণ করিলেন।” (ফিলি. ২:৫, ৭) তাই, আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি, ‘আমি কি আরও ভালোভাবে যিশুর পদচিহ্নের অনুগমন অর্থাৎ তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?’—পড়ুন, ১ পিতর ২:২১.
৬. প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের গল্প বলার মাধ্যমে যিশু আমাদের কী শিখিয়েছেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৬ যিহোবা সেইসময় খুশি হন, যখন আমরা তাঁর ও যিশুর দ্বারা স্থাপিত নিখুঁত উদাহরণ অনুসরণ করি। আমরা সেইসময় এমনটা করে থাকি, যখন আমরা লোকেদের প্রতি আগ্রহ দেখাই এবং তাদের সাহায্য করার বিভিন্ন উপায় খুঁজি। যিশু এমনটা করার গুরুত্ব সম্বন্ধে তুলে ধরেছিলেন, যখন তিনি প্রতিবেশীসুলভ শমরীয়ের গল্প বলেছিলেন। (পড়ুন, লূক ১০:২৯-৩৭.) যিশু তাঁর অনুসারীদের শিখিয়েছিলেন যে, তাদের অবশ্যই অন্যদের সাহায্য করতে হবে, তা সেই ব্যক্তিরা যে-ই হোক না কেন অথবা তাদের পটভূমি যা-ই হোক না কেন। আপনার কি মনে আছে, কেন যিশু এই গল্পটা বলেছিলেন? কারণ একজন যিহুদি ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “আমার প্রতিবাসী কে?” এর পরিপ্রেক্ষিতে বলা যিশুর উত্তর আমাদের শেখায় যে, আমরা যদি যিহোবাকে খুশি করতে চাই, তা হলে আমাদের অবশ্যই সেই শমরীয় ব্যক্তির মতো উদারতা দেখাতে হবে।
৭. কীভাবে আমরা এই বিষয়টার প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখাই যে, বিভিন্ন কাজ করার বিষয়ে যিহোবার পদ্ধতিই সর্বোত্তম? ব্যাখ্যা করুন।
৭ উদারতা দেখানোর আরেকটা কারণ এদন উদ্যানে ঘটা বিষয়টার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। শয়তান দাবি করেছিল, আদম ও হবা যদি যিহোবার অবাধ্য হন এবং কেবল নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করেন, তা হলে তারা আরও বেশি সুখী হবেন। হবা স্বার্থপর ছিলেন আর তিনি ঈশ্বরের মতো হতে চেয়েছিলেন। আদমও স্বার্থপর ছিলেন আর তিনি ঈশ্বরের চেয়ে হবাকে বেশি খুশি করতে চেয়েছিলেন। (আদি. ৩:৪-৬) এর পরিণতি খুবই খারাপ হয়েছিল। স্পষ্টতই, একজন স্বার্থপর ব্যক্তি কখনোই সুখী হতে পারেন না। কিন্তু, আমরা যখন নিঃস্বার্থপরতা ও উদারতার মনোভাব প্রদর্শন করি, তখন আমরা এই বিষয়টার প্রতি আমাদের বিশ্বাস দেখাই যে, বিভিন্ন কাজ করার বিষয়ে যিহোবার পদ্ধতিই সর্বোত্তম।
ঈশ্বর আমাদের যে-কাজ দিয়েছেন, সেটা করুন
৮. কেন আদম ও হবার অন্যদের বিষয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল?
৮ যদিও এদন উদ্যানে আদম ও হবা ছাড়া আর কেউ ছিল না, তা সত্ত্বেও তাদের অন্যদের বিষয়ে চিন্তা করা উচিত ছিল। কেন? যিহোবা তাদের কিছু কাজ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের সন্তানদের দ্বারা পৃথিবীকে পরিপূর্ণ করতে ও এটাকে এক পরমদেশে পরিণত করতে বলেছিলেন। (আদি. ১:২৮) আদম ও হবার তাদের ভাবী সন্তানদের খুশি করার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষী হওয়া উচিত ছিল, ঠিক যেমন যিহোবা তাদের সবাইকে খুশি করার বিষয়ে আকাঙ্ক্ষী ছিলেন। তাদের সবাইকে একসঙ্গে মিলে পুরো পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার কাজ করতে হতো। সেটা সত্যিই এক বিশাল প্রকল্প হতো!
৯. পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার সময়ে কেন মানুষ সুখী হতে পারত?
৯ এ ছাড়া, পৃথিবীকে পরমদেশে পরিণত করার ও যিহোবার ইচ্ছা সম্পাদন করার জন্য সিদ্ধ মানুষদের তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে হতো। এভাবে তারা তাঁর বিশ্রামে প্রবেশ করতে পারত। (ইব্রীয় ৪:১১) একটু কল্পনা করুন, সেই কাজ কতই-না পরিতৃপ্তিদায়ক ও আনন্দদায়ক হতো! নিঃস্বার্থপর মনোভাব দেখানোর ও অন্যদের যত্ন নেওয়ার জন্য যিহোবা তাদের প্রচুররূপে আশীর্বাদ করতেন।
১০, ১১. কী আমাদের প্রচার করতে ও শিষ্য তৈরি করতে সাহায্য করবে?
১০ বর্তমানে, যিহোবা আমাদের এক বিশেষ কাজ দিয়েছেন। তিনি চান যেন আমরা প্রচার করি ও শিষ্য তৈরি করি। এই কাজ করার জন্য লোকেদের বিষয়ে আমাদের সত্যিই চিন্তা করতে হবে। সত্যি বলতে কী, আমরা একমাত্র তখনই এই কাজ চালিয়ে যেতে পারব, যদি আমাদের সঠিক উদ্দেশ্য থাকে: যিহোবার প্রতি ভালোবাসা ও লোকেদের প্রতি ভালোবাসা।
১১ পৌল বলেছিলেন যে, তিনি ও প্রথম শতাব্দীর অন্যান্য খ্রিস্টানরা আসলে ‘ঈশ্বরের সহকার্য্যকারী’ ছিলেন কারণ তারা সত্যের বিষয়ে প্রচার করেছিলেন ও শিক্ষা দিয়েছিলেন। (১ করি. ৩:৬, ৯) বর্তমানে, আমরাও ঈশ্বরের কাছ থেকে পাওয়া প্রচার কাজে উদারভাবে আমাদের সময়, শক্তি ও বস্তুগত বিষয় দেওয়ার মাধ্যমে ‘ঈশ্বরের সহকার্য্যকারী’ হতে পারি। এটা অনেক সম্মানের এক বিষয়!
১২, ১৩. আপনার কী মনে হয়, শিষ্য তৈরি করার পুরস্কারগুলো কী কী?
১২ আমরা যখন প্রচার করার ও শিক্ষা দেওয়ার সময়ে উদারভাবে আমাদের সময় ও শক্তি ব্যবহার করি, তখন তা অনেক আনন্দ নিয়ে আসে। অনেক ভাই-বোন, যারা বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার সুযোগ পেয়েছে, তারা ঠিক এই কথাই বলেছে। আমাদের ছাত্ররা যখন বাইবেল প্রকৃতপক্ষে কী শিক্ষা দেয়, তা বুঝতে পেরে রোমাঞ্চিত হয়, আরও বিশ্বাস অর্জন করে, তাদের জীবনে পরিবর্তন করে এবং তারা যা শেখে, তা অন্যদের বলতে শুরু করে, তখন আমরা তা দেখে অনেক আনন্দিত হই। যিশুও সেইসময় অনেক আনন্দিত হয়েছিলেন, যখন তাঁর দ্বারা পাঠানো ৭০ জন প্রচারক পরিচর্যায় ভালো অভিজ্ঞতাগুলো লাভ করার কারণে ‘আনন্দে ফিরিয়া আসিয়াছিল।’—লূক ১০:১৭-২১.
১৩ সারা বিশ্বে আমাদের ভাই-বোনেরা সেইসময়ে কতই-না আনন্দিত হয়, যখন তারা দেখে যে, বাইবেলের বার্তা কীভাবে লোকেদের জীবনকে উন্নত করতে সাহায্য করে! উদাহরণ স্বরূপ, আ্যনা নামে একজন অল্পবয়সি অবিবাহিত বোন যিহোবার জন্য আরও বেশি কিছু করতে চেয়েছিলেন।a তাই, তিনি পূর্ব ইউরোপের একটা এলাকায় চলে গিয়েছিলেন, যেখানে আরও বেশি প্রচারকের প্রয়োজন। তিনি লেখেন: “এখানে বাইবেল অধ্যয়ন পরিচালনা করার অনেক সুযোগ রয়েছে আর আমার এটা খুব ভালো লাগে। আমার এই সেবা আমাকে প্রচুর আনন্দ দেয়। আমি যখন বাড়ি ফিরে আসি, তখন আমার কাছে নিজের সমস্যাগুলো নিয়ে চিন্তা করার জন্য সময়ই থাকে না। আমি আমার বাইবেল ছাত্র-ছাত্রীদের সমস্যা ও উদ্বিগ্নতার বিষয়ে চিন্তা করি। আমি তাদের উৎসাহিত করার ও সেইসঙ্গে তাদের ব্যাবহারিক সাহায্য প্রদান করার উপায় খুঁজি। আর আমি নিশ্চিত হয়েছি যে, ‘গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য’ বা সুখী ‘হইবার বিষয়।’”—প্রেরিত ২০:৩৫.
১৪. এমনকী লোকেরা যদি না শোনে, তারপরও কীভাবে আপনি আপনার প্রচার কাজকে উপভোগ করতে পারেন?
১৪ প্রচার করার সময়ে এমনকী লোকেরা যদি আমাদের কথা না শোনে, তারপরও আমরা আনন্দিত থাকতে পারি কারণ আমরা তাদের সুসমাচার শোনার সুযোগ দিয়েছি। যিহোবা চান যেন আমরাও সেই একই কাজ করি, যা তিনি যিহিষ্কেলকে করতে বলেছিলেন: “তুমি তাহাদের কাছে আমার বাক্য সকল বলিও, তাহারা শুনুক বা না শুনুক।” (যিহি. ২:৭; যিশা. ৪৩:১০) তাই, লোকেরা যেরকম প্রতিক্রিয়াই দেখাক না কেন, যিহোবা আমাদের প্রচেষ্টাকে মূল্যবান হিসেবে দেখেন। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০.) একজন ভাই তার পরিচর্যা সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমরা রোপণ করেছি, জল সেচন করেছি আর এই আশা নিয়ে প্রার্থনা করেছি যে, যিহোবা লোকেদের আগ্রহ বৃদ্ধি করবেন।”—১ করি. ৩:৬.
যেভাবে আমরা সুখী হতে পারি
১৫. আমাদের কি কেবল তখনই উদারতা দেখানো উচিত, যখন লোকেরা আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হয়? ব্যাখ্যা করুন।
১৫ যিশু চান যেন আমরা উদারতা দেখাই কারণ এটা আমাদের সুখী করে। আমরা যখন উদারতা দেখাব, তখন অনেকে আমাদের প্রতি উদারতা দেখাবে। তাই, তিনি আমাদের উৎসাহিত করেন: “দেও, তাহাতে তোমাদিগকেও দেওয়া যাইবে; লোকে বিলক্ষণ পরিমাণে চাপিয়া ঝাঁকরিয়া উপচিয়া তোমাদের কোলে দিবে; কারণ তোমরা যে পরিমাণে পরিমাণ কর, সেই পরিমাণে তোমাদেরও নিমিত্তে পরিমাণ করা যাইবে।” (লূক ৬:৩৮) এটা ঠিক যে, আপনি যখন উদারতা দেখাবেন, তখন সবাই যে কৃতজ্ঞ হবে, এমন নয়। কিন্তু, তারা যদি কৃতজ্ঞ না হয়, তারপরও উদারভাবে দিয়ে চলুন। আপনি নিজেও জানবেন না যে, একটা উদার কাজের মাধ্যমে আপনি কত কী সম্পাদন করতে পারবেন।
১৬. কাদের প্রতি আমাদের উদারতা দেখানো উচিত এবং কেন?
১৬ প্রকৃতরূপে উদার ব্যক্তিরা অন্যদের কাছ থেকে কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে কিছু দেয় না। যিশু বলেছিলেন: “তুমি যখন ভোজ প্রস্তুত কর, তখন দরিদ্র, নুলা, খঞ্জ ও অন্ধদিগকে নিমন্ত্রণ করিও; তাহাতে ধন্য” বা সুখী “হইবে, কেননা তোমার প্রতিদান করিতে তাহাদের কিছু নাই।” (লূক ১৪:১৩, ১৪) এ ছাড়া, বাইবেল ব্যাখ্যা করে: “সুনয়ন [“দানশীল,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন] ব্যক্তি আশীর্ব্বাদযুক্ত হইবে” এবং “ধন্য” বা সুখী “সেই জন, যে দীনহীনের পক্ষে চিন্তাশীল।” (হিতো. ২২:৯; গীত. ৪১:১) আমাদের উদারতা দেখানো উচিত কারণ আমরা প্রকৃতই অন্যদের সাহায্য করতে চাই।
১৭. কোন বিষয়গুলো দেওয়া আমাদের সুখী করবে?
১৭ পৌল যখন যিশুর এই কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন, “গ্রহণ করা অপেক্ষা বরং দান করা ধন্য” বা সুখী “হইবার বিষয়,” তখন তিনি কেবল বস্তুগত জিনিস দেওয়ার বিষয়ে বলছিলেন না। আমরা লোকেদের উৎসাহ, বাইবেল থেকে পরামর্শ ও ব্যাবহারিক সাহায্যও প্রদান করতে পারি। (প্রেরিত ২০:৩১-৩৫) পৌল তার কথা ও কাজের মাধ্যমে আমাদের শিখিয়েছিলেন যে, লোকেদের সময় ও শক্তি দেওয়ার, তাদের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার এবং তাদের প্রতি ভালোবাসা দেখানোর বিষয়ে উদার হওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
১৮. উদারতা দেখানোর বিষয়ে অনেক গবেষক কী বলে থাকে?
১৮ যে-গবেষকরা মানব আচরণ নিয়ে গবেষণা করে, তারাও দেখেছে যে, দেওয়ার মাধ্যমে লোকেরা সুখী হয়ে ওঠে। একটা প্রবন্ধ অনুযায়ী, লোকেরা বলে যে, তারা অন্যদের জন্য উত্তম কাজ করার পর আরও বেশি সুখী হয়। গবেষকরা বলে যে, আমরা যখন অন্যদের সাহায্য করি, তখন আমরা আমাদের জীবনকে উদ্দেশ্যপূর্ণ ও অর্থপূর্ণ বলে মনে করি। তাই, কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ পরামর্শ দেয় যেন লোকেরা আরও বেশি স্বাস্থ্যবান ও সুখী হওয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবকের কাজ করে। অবশ্য, তারা গবেষণার মাধ্যমে যা জানতে পেরেছে, সেটা আমাদের অবাক করে না কারণ আমাদের প্রেমময় সৃষ্টিকর্তা যিহোবা প্রথম থেকেই বলেছেন যে, দেওয়ার মাধ্যমে আমরা সুখী হই।—২ তীম. ৩:১৬, ১৭.
উদারতা দেখিয়ে চলুন
১৯, ২০. কেন আপনি উদারতা দেখাতে চান?
১৯ আমাদের চারপাশের লোকেরা যখন কেবল নিজেদের বিষয়ে চিন্তা করে, তখন আমাদের পক্ষে উদারতা দেখিয়ে চলা কঠিন হতে পারে। কিন্তু, যিশু আমাদের মনে করিয়ে দিয়েছিলেন যে, সবচেয়ে মহৎ দুটো আজ্ঞা হল যিহোবাকে আমাদের সমস্ত অন্তঃকরণ, প্রাণ, মন ও শক্তি দিয়ে ভালোবাসা এবং আমাদের প্রতিবেশীকে নিজেদের মতো করে ভালোবাসা। (মার্ক ১২:২৮-৩১) আমরা এই প্রবন্ধে শিখেছি যে, যারা যিহোবাকে ভালোবাসে, তারা তাঁকে অনুকরণ করে। যিহোবা ও যিশু, উভয়ই উদারতা দেখান। তাঁরা তাঁদের উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য আমাদের উৎসাহিত করেন কারণ তাঁরা জানেন যে, এটা আমাদের প্রকৃতই সুখী করে তুলবে। আমরা ঈশ্বর ও প্রতিবেশীদের উদ্দেশ্যে যা-কিছু করি, সেগুলোর বিষয়ে উদারতা দেখানোর মাধ্যমে আমরা যিহোবাকে সম্মানিত করব এবং নিজেদের ও সেইসঙ্গে অন্যদের উপকৃত করব।
২০ নিশ্চিতভাবে, আপনি ইতিমধ্যেই উদারতা দেখানোর এবং অন্যদের, বিশেষ করে আপনার ভাই-বোনদের, সাহায্য করার জন্য আপনার সর্বোত্তমটা করছেন। (গালা. ৬:১০) আপনি যদি এমনটা করে চলেন, তা হলে লোকেরা কৃতজ্ঞ হবে এবং আপনাকে ভালোবাসবে আর আপনিও সুখী হবেন। বাইবেল বলে: “দানশীল” অর্থাৎ উদার “ব্যক্তি পরিতৃপ্ত হয়, জল-সেচনকারী আপনিও জলে সিক্ত হয়।” (হিতো. ১১:২৫) আমাদের জীবন ও পরিচর্যায় এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেগুলোতে আমরা নিঃস্বার্থভাবে দিতে পারি এবং সদয় ও উদার হতে পারি। আসুন, আমরা পরবর্তী প্রবন্ধে এগুলোর কয়েকটা নিয়ে আলোচনা করি।
a নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।