জীবন ও পরিচর্যা সভার জন্য অধ্যয়ন পুস্তিকা-র রেফারেন্স
জানুয়ারি ৭-১৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রেরিত ২১-২২
“যিহোবারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক”
সাক্ষ্য দেওয়া ১৭৭-১৭৮ অনু. ১৫-১৬, ইংরেজি
“যিহোবারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক”
১৫ পৌল ফিলিপের বাড়িতে থাকার সময়, সেখানে আরেকজন সম্মাননীয় অতিথি—আগাব—এসেছিলেন। ফিলিপের বাড়িতে একত্রিত হওয়া ব্যক্তিরা জানতেন, আগাব একজন ভাববাদী; তিনি ক্লৌদিয়ের রাজত্বের সময়ে মহাদুর্ভিক্ষ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন। (প্রেরিত ১১:২৭, ২৮) তারা হয়তো ভেবেছিলেন: ‘আগাব কেন এসেছেন? তিনি কী বার্তা নিয়ে এসেছেন?’ তারা যখন মনোযোগ দিয়ে লক্ষ করছিলেন, তখন আগাব পৌলের কটিবন্ধন অর্থাৎ বেল্টের মতো দেখতে একটা কাপড়ের লম্বা টুকরো, যেটা কোমরে পরা হতো এবং যেটাতে টাকা ও অন্যান্য জিনিস বেঁধে রাখা যেত, সেটা নিয়েছিলেন। সেটা নিয়ে আগাব নিজের হাত ও পা বেঁধেছিলেন। এরপর তিনি কথা বলতে শুরু করেছিলেন। তার বার্তাটা গুরুগম্ভীর ছিল: “পবিত্র আত্মা এই কথা কহিতেছেন, যে ব্যক্তির এই কটিবন্ধন, তাহাকে যিহূদীরা যিরূশালেমে এইরূপে বাঁধিবে, এবং পরজাতীয়দের হস্তে সমর্পণ করিবে।”—প্রেরিত ২১:১১.
১৬ ভবিষ্যদ্বাণীতে এটা নিশ্চিত করা হয়েছিল, পৌল যিরূশালেমে যাবেন। আর এটা এই ইঙ্গিতও দিয়েছিল যে, সেখানে তিনি যিহুদিদের মুখোমুখি হবেন আর তারা তাকে “পরজাতীয়দের হস্তে” সমর্পণ করবে। এই ভবিষ্যদ্বাণী সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিদের উপর গভীর ছাপ ফেলেছিল। লূক লেখেন: “ইহা শুনিয়া তথাকার ভ্রাতৃগণ ও আমরা পৌলকে বিনতি করিলাম, যেন তিনি যিরূশালেমে না যান। তখন পৌল উত্তর করিলেন, তোমরা এ কি করিতেছ? ক্রন্দন করিয়া আমার হৃদয় চূর্ণ করিতেছ? কারণ আমি প্রভু যীশুর নামের নিমিত্ত যিরূশালেমে কেবল বদ্ধ হইতে, তাহা নয়, বরং মরিতেও প্রস্তুত আছি।”—প্রেরিত ২১:১২, ১৩.
সাক্ষ্য দেওয়া ১৭৮ অনু. ১৭, ইংরেজি
“যিহোবারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক”
১৭ দৃশ্যটা কল্পনা করুন। ভাইয়েরা পৌলকে সেখানে না যাওয়ার জন্য অনুরোধ করছেন আর তাদের মধ্যে লূকও রয়েছেন। কেউ কেউ কাঁদছেন। পৌলের জন্য তারা যে-প্রেমময় চিন্তা দেখাচ্ছেন, সেটার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে পৌল কোমলভাবে তাদের বলেন, তারা তার “হৃদয় চূর্ণ” করছেন। তা সত্ত্বেও, তার সংকল্প এখনও দৃঢ় আছে, যেমনটা সোরের ভাইদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সময়ও ছিল আর তিনি কোনো ধরনের অনুরোধ অথবা কান্নার দ্বারা নিজেকে বিচলিত হতে দেবেন না। এর পরিবর্তে, তিনি তাদের ব্যাখ্যা করেন, কেন তাকে যেতেই হবে। তিনি কতই-না সাহস ও দৃঢ়সংকল্প দেখিয়েছিলেন! পৌল যিরূশালেমে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব ছিলেন, যেমনটা তার আগে যিশুও ছিলেন। (ইব্রীয় ১২:২) পৌল শহিদ হওয়ার কোনো উপায় অনুসন্ধান করছিলেন না কিন্তু যদি তা ঘটে, তা হলে তিনি সেটাকে খ্রিস্ট যিশুর একজন অনুসারী হিসেবে এক গৌরবময় মৃত্যু হিসেবে বিবেচনা করবেন।
সাক্ষ্য দেওয়া ১৭৮ অনু. ১৮, ইংরেজি
“যিহোবারই ইচ্ছা সিদ্ধ হউক”
১৮ ভাইয়েরা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন? এক কথায় বললে, সম্মান দেখিয়েছিলেন। আমরা পড়ি: “এইরূপে তিনি আমাদের কথা শুনিতে অসম্মত হইলে আমরা ক্ষান্ত হইয়া বলিলাম, প্রভুরই [“যিহোবারই,” NW] ইচ্ছা সিদ্ধ হউক।” (প্রেরিত ২১:১৪) যারা পৌলকে যিরূশালেমে না যাওয়ার ব্যাপারে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, তারা আর সেই বিষয়ে জোরাজুরি করেননি। তারা পৌলের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন ও মেনে নিয়েছিলেন আর এভাবে যিহোবার ইচ্ছা বুঝতে পেরে তা গ্রহণ করেছিলেন, যদিও সেটা করা তাদের জন্য কঠিন ছিল। পৌল এমন এক পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যেটা অবশেষে তাকে মৃত্যুর দিকে নিয়ে যাবে। যারা পৌলকে ভালোবাসেন, তারা তাকে নিরুৎসাহিত করার চেষ্টা না করলে, সেটা তার জন্য আরও সহজ হবে।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
সাক্ষ্য দেওয়া ১৮৪-১৮৫ অনু. ১০-১২, ইংরেজি
“আমি . . . আত্মপক্ষ সমর্থন করিতেছি, শ্রবণ করুন”
১০ তা সত্ত্বেও, পৌল সেই ব্যক্তিদের প্রতি বিবেচনা দেখিয়েছিলেন, যারা কিছু যিহুদি রীতিনীতি পালন করতে স্বচ্ছন্দবোধ করত যেমন, বিশ্রামবারে কাজ করা থেকে বিরত থাকা কিংবা নির্দিষ্ট কিছু খাবার এড়িয়ে চলা। (রোমীয় ১৪:১-৬) আর তিনি ত্বকচ্ছেদ সম্বন্ধে কোনো নিয়মস্থাপন করেননি। আসলে, পৌল তীমথিয়ের ত্বকচ্ছেদ করিয়েছিলেন, যাতে যিহুদিরা তীমথিয়ের ব্যাপারে কোনো সন্দেহ না করে, যার বাবা একজন গ্রিক ছিলেন। (প্রেরিত ১৬:৩) ত্বকচ্ছেদ করা একটা ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত ছিল। পৌল গালাতীয়দের উদ্দেশে বলেছিলেন: “ত্বক্ছেদের কোন শক্তি নাই, অত্বক্ছেদেরও নাই, কিন্তু প্রেম দ্বারা কার্য্যসাধক বিশ্বাসই শক্তিযুক্ত।” (গালা ৫:৬) কিন্তু, ব্যবস্থার অধীনে আসার জন্য ত্বকচ্ছেদ করা কিংবা এই প্রথাকে যিহোবার অনুমোদন লাভের জন্য অপরিহার্য বলে তুলে ধরা হলে, তা বিশ্বাসের অভাব প্রকাশ করবে।
১১ তাই যে-সমস্ত সংবাদ বা গুজব শোনা গিয়েছিল, সেগুলোতে যদিও খুবই বিকৃত তথ্য ছিল, কিন্তু তারপরও যিহুদি বিশ্বাসীরা সেগুলোর দ্বারা বিরক্ত হয়েছিল। সেই কারণে, প্রাচীনরা পৌলকে এই নির্দেশনা দিয়েছিলেন: “আমাদের এমন চারি জন পুরুষ আছে, যাহারা মানত করিয়াছে; তুমি তাহাদিগকে লইয়া তাহাদের সহিত আপনাকেও শুচি কর, এবং তাহাদের মস্তক মুণ্ডনের জন্য ব্যয় কর। তাহা করিলে সকলে জানিবে, তোমার বিষয়ে যে সকল সংবাদ উহারা পাইয়াছে, সে কিছু নয়, বরং তুমি নিজেও ব্যবস্থা-পালন করিয়া যথানিয়মে চলিতেছ।”—প্রেরিত ২১:২৩, ২৪.
১২ পৌল এইরকম আপত্তি জানাতে পারতেন যে, আসল সমস্যাটা তার বিষয়ে গুজব নয় বরং মোশির ব্যবস্থার প্রতি সেই যিহুদি বিশ্বাসীদের উদ্যোগ। কিন্তু তিনি ততক্ষণ পর্যন্ত নমনীয় হতে ইচ্ছুক ছিলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত তা ঈশ্বরের নীতির সঙ্গে সংঘর্ষ সৃষ্টি না করে। এর আগে তিনি লিখেছিলেন: “আপনি ব্যবস্থার অধীন না হইলেও আমি ব্যস্থার অধীন লোকদিগকে লাভ করিবার জন্য ব্যবস্থাধীনদিগের কাছে ব্যবস্থাধীনের ন্যায় হইলাম।” (১ করি. ৯:২০) এই বার, পৌল যিরূশালেমের প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করেছিলেন এবং “ব্যবস্থাধীনের ন্যায়” হয়েছিলেন। তা করার মাধ্যমে তিনি আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছেন, যাতে বর্তমানে আমরাও প্রাচীনদের সঙ্গে সহযোগিতা করি ও নিজেদের উপায়ে বিভিন্ন বিষয় করার জন্য নাছোড়বান্দা মনোভাব না দেখাই।—ইব্রীয় ১৩:১৭.
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২২:১৬
তাঁর নামে ডেকে তোমার পাপ ধুয়ে ফেলো: বা “তোমার পাপ ধুয়ে ফেলো ও তাঁর নামে ডাকো।” একজন ব্যক্তি বাপ্তিস্মের জল দ্বারা নয় বরং যিশুর নামে ডেকে তার পাপ ধুয়ে ফেলতে পারবে। এর সঙ্গে যিশুকে বিশ্বাস করা ও খ্রিস্টীয় কাজের মাধ্যমে তা প্রকাশ করা জড়িত।—প্রেরিত ১০:৪৩; যাকোব ২:১৪, ১৮.
ক্ষেত্রের পরিচর্যায় ব্যবহার করার প্রচেষ্টা করুন
প্রহরীদুর্গ ১০ ২/১ ১৩ অনু. ২–১৪ অনু. ২, ইংরেজি
আপনার কি সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করা উচিত?
যেহেতু খ্রিস্টের মাধ্যমে ব্যবস্থা পরিপূর্ণ হয়েছে, তাই খ্রিস্টানদের কি সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে? পৌল পবিত্র আত্মার দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে উত্তর দেন: “অতএব ভোজন কি পান, কি উৎসব, কি অমাবস্যা, কি বিশ্রামবার, এই সকলের সম্বন্ধে কেহ তোমাদের বিচার না করুক; এ সকল ত আগামী বিষয়ের ছায়ামাত্র, কিন্তু দেহ খ্রীষ্টের।”—কলসীয় ২:১৬, ১৭.
অনুপ্রাণিত হয়ে লেখা এই কথাগুলো, ঈশ্বর তাঁর দাসদের কাছ থেকে যা চান, সেই ক্ষেত্রে এক বড়ো পরিবর্তন সম্বন্ধে তুলে ধরে। কেন এই পরিবর্তন? কারণ খ্রিস্টানরা এক নতুন ব্যবস্থার অধীন আর তা হল “খ্রীষ্টের ব্যবস্থা।” (গালাতীয় ৬:২) মোশির মাধ্যমে ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া আগের ব্যবস্থা চুক্তি, যিশুর মৃত্যুর মাধ্যমে পরিপূর্ণ হয়ে শেষ হয়েছিল। (রোমীয় ১০:৪; ইফিষীয় ২:১৫) বিশ্রামবার পালন করার আজ্ঞাও কি বাতিল হয়েছিল? হ্যাঁ, বাতিল হয়েছিল। “আমরা ব্যবস্থা হইতে মুক্ত হইয়াছি” এই কথাগুলো বলার পর পৌল দশ আজ্ঞার মধ্যে একটা আজ্ঞা উল্লেখ করেছিলেন। (রোমীয় ৭:৬, ৭) তাই দশ আজ্ঞা, যেগুলো ব্যবস্থার অংশ ছিল, সেগুলো বাতিল হয়েছিল আর এর মধ্যে বিশ্রামবার পালন করার আজ্ঞাও ছিল। এই কারণে, ঈশ্বরের উপাসকদের আর সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করার বাধ্যবাধকতা নেই।
ইস্রায়েলীয়দের উপাসনা ব্যবস্থা থেকে খ্রিস্টানদের উপাসনা ব্যবস্থা যে পরিবর্তন হয়েছে, সেই বিষয়টাকে এভাবে উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে: একটা রাষ্ট্র এর সংবিধান পরিবর্তন করতে পারে। একবার যখন নতুন সংবিধান আইনত প্রবর্তন করা হয়, তখন লোকেদের আর পুরোনো সংবিধান পালন করার বাধ্যবাধকতা থাকে না। তবে, নতুন সংবিধানের কিছু আইন হয়তো আগের সংবিধানের মতো একই থাকতে পারে আবার অন্যগুলো হয়তো আলাদা হতে পারে। তাই, এখন কোন আইনগুলো প্রযোজ্য তা জানার জন্য একজন ব্যক্তিকে নতুন সংবিধান মনোযোগ দিয়ে অধ্যয়ন করতে হবে। এ ছাড়া, নতুন সংবিধান কখন থেকে কার্যকর হবে, সেটাও একজন অনুগত নাগরিক জানতে চাইবেন।
একইভাবে, যিহোবা ঈশ্বর ইস্রায়েল জাতির জন্য দশটা প্রধান আজ্ঞা-সহ ছয়-শোরও বেশি আইন দিয়েছিলেন। এর মধ্যে নৈতিকতা বিষয়ক, বলিদান বিষয়ক, স্বাস্থ্য সংক্রান্ত ও বিশ্রামবার পালন করার আইন ছিল। কিন্তু যিশু বলেছিলেন, তাঁর অভিষিক্ত অনুসারীরা এক নতুন “জাতি” গঠন করবে। (মথি ২১:৪৩) ৩৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই জাতির কাছে দুটো মৌলিক আইনের—ঈশ্বর ও প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমের—উপর ভিত্তি করে তৈরি এক নতুন “সংবিধান” রয়েছে। (মথি ২২:৩৬-৪০) যদিও ‘খ্রীষ্টের ব্যবস্থার’ মধ্যে এমন নির্দেশনা রয়েছে যেগুলো ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া ব্যবস্থার সঙ্গে মিলে যায়, তবে আমাদের এতে অবাক হওয়ার কোনো কারণ নেই যে, কিছু আইন একেবারে আলাদা এবং অন্যান্য আইন এখন আর পালন করার বাধ্যবাধকতা নেই। সাপ্তাহিক বিশ্রামবার পালন করার আইন হল সেগুলোর মধ্যে একটা, যেগুলো এখন আর পালন করার বাধ্যবাধকতা নেই।
জানুয়ারি ১৪-২০
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রেরিত ২৩-২৪
“মহামারি স্বরূপ ও কলহজনক এক ব্যক্তি হিসেবে অভিযুক্ত”
সাক্ষ্য দেওয়া ১৯১ অনু. ৫-৬, ইংরেজি
“সাহস কর”
৫ পৌলকে দেওয়া উৎসাহ সময়োপযোগী ছিল। এর ঠিক পরের দিন, ৪০ জনেরও বেশি যিহুদি পুরুষ “ষড়যন্ত্র করিয়া আপনাদিগকে এক অভিশাপে আবদ্ধ করিল, বলিল, আমরা যে পর্য্যন্ত পৌলকে বধ না করিব, সে পর্য্যন্ত ভোজন কি পান করিব না।” “একসঙ্গে শপথ করিয়া এই প্রকারে চক্রান্ত” করা প্রকাশ করে যে, এই যিহুদিরা প্রেরিতকে হত্যা করার জন্য কতটা দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিল। তারা যদি তাদের ষড়যন্ত্র কার্যকর করতে সফল না হতো, তা হলে তাদের ধারণা অনুযায়ী সেটার পরিণতি তাদের জন্য এক অভিশাপ বা ক্ষতিকর বিষয় হবে। (প্রেরিত ২৩:১২-১৫) তারা যে-পরিকল্পনা করেছিল, তা প্রধান যাজকরা ও প্রাচীনরা অনুমোদন করেছিল। আর সেটা ছিল, পৌলকে আরও জিজ্ঞাসাবাদ করার জন্য আবার মহাসভায় নিয়ে আসা হবে, এমনটা মনে হবে যেন তার ব্যাপারে বিভিন্ন বিষয় আরও সঠিকভাবে যাচাই করা হচ্ছে। কিন্তু যাত্রাপথে, ষড়যন্ত্রকারীরা পৌলকে হঠাৎ আক্রমণ করে হত্যা করার জন্য অপেক্ষা করবে।
৬ তবে, পৌলের ভাগনে এই ষড়যন্ত্রের বিষয়ে শুনতে পেয়েছিলেন ও তা পৌলকে জানিয়েছিলেন। আর পৌল সেই যুবককে রোমীয় সহস্রপতি ক্লৌদিয় লুষিয়কে সেই খবর জানাতে বলেছিলেন। (প্রেরিত ২৩:১৬-২২) নিশ্চিতভাবেই যিহোবা সেইসমস্ত অল্পবয়সিকে ভালোবাসেন, যারা পৌলের এই নাম-না-জানা ভাগনের মতো, সাহসের সঙ্গে ঈশ্বরের লোকেদের মঙ্গলকে নিজেদের মঙ্গলের আগে রাখে এবং রাজ্যের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশ্বস্তভাবে তাদের পক্ষে যা-কিছু করা সম্ভব তা করে।
সাক্ষ্য দেওয়া ১৯২ অনু. ১০, ইংরেজি
“সাহস কর”
১০ কৈসরিয়াতে, পৌলকে “হেরোদের রাজবাটীতে . . . রাখিতে আজ্ঞা” দেওয়া হয়েছিল, যাতে যিরূশালেম থেকে তার অভিযোগকারীরা না আসা পর্যন্ত সেখানে অপেক্ষা করা যায়। (প্রেরিত ২৩:৩৪) পাঁচ দিন পর, তারা অর্থাৎ মহাযাজক অননিয়, তর্তুল্ল নামে একজন উকিল ও কয়েক জন প্রাচীন এসেছিলেন। তর্তুল্ল প্রথমে যিহুদিদের জন্য ফীলিক্স যা করছিলেন, সেটার প্রশংসা করেছিলেন, স্পষ্টতই তাকে তোষামোদ করে তার সুনজর লাভের চেষ্টা করেছিলেন। এরপর, মোক্ষম সুযোগ পেয়ে তর্তুল্ল পৌল সম্বন্ধে বলেছিলেন, “এই ব্যক্তি মহামারীস্বরূপ, জগতের সমস্ত যিহূদীর মধ্যে কলহজনক, এবং নাসরতীয় দলের অগ্রণী, আর এ ধর্ম্মধামও অশুচি করিবার চেষ্টা করিয়াছিল।” অন্য যিহুদিরা তখন “সায় দিয়া বলিল, এই সকল কথা ঠিক।” (প্রেরিত ২৪:৫, ৬, ৯) কলহ বা বিদ্রোহ সৃষ্টিকারী, এক বিপদজনক দলের অগ্রণী ও ধর্মধাম বা মন্দির অশুচি করা—এগুলো গুরুতর অভিযোগ ছিল, যেগুলোর কারণে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া যেত।
সাক্ষ্য দেওয়া ১৯৩-১৯৪ অনু. ১৩-১৪, ইংরেজি
“সাহস কর”
১৩ আমাদের যদি কখনো উপাসনার কারণে জাগতিক কর্তৃপক্ষের সামনে দাঁড় করানো হয় ও আমাদের বিদ্রোহ সৃষ্টিকারী, বিদ্রোহী অথবা এক “বিপদজনক দলের” সদস্য হিসেবে মিথ্যা অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়, তা হলে পৌল আমাদের অনুসরণের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করেছেন। পৌল দেশাধ্যক্ষের আনুকূল্য লাভের চেষ্টায় তাকে তোষামোদ করেননি, তর্তুল্লের মতো চাটুকারিতাপূর্ণ কথাবার্তা বলেননি। পৌল শান্ত ছিলেন ও সম্মান দেখিয়েছিলেন। তিনি কৌশলতার সঙ্গে স্পষ্ট ও সত্য সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। পৌল বলেছিলেন, “এশিয়া দেশের কতকগুলি যিহূদী,” যারা তাকে মন্দির অশুচি করার অভিযোগে অভিযুক্ত করেছিল, তারা সেখানে উপস্থিত নেই এবং তার সেই ব্যক্তিদের মুখোমুখি হওয়ার ও তাদের অভিযোগ শোনার আইনগত অধিকার রয়েছে।—প্রেরিত ২৪:১৮, ১৯.
১৪ সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, পৌল নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়া থেকে বিরত হননি। এই প্রেরিত সাহসের সঙ্গে বার বার পুনরুত্থানের প্রতি নিজের বিশ্বাস সম্বন্ধে বলেছিলেন আর তিনি যখন মহাসভার সামনে ছিলেন, তখন এই বিষয়টা নিয়েই গণ্ডগোল সৃষ্টি হয়েছিল। (প্রেরিত ২৩:৬-১০) আত্মপক্ষ সমর্থন করার জন্য পৌল পুনরুত্থানের আশার উপর জোর দিয়েছিলেন। কেন? কারণ পৌল যিশু ও মৃতদের মধ্য থেকে তাঁর পুনরুত্থানের সাক্ষ্য বহন করছিলেন—এমন এক বিষয়, যা সেই বিরোধীরা মানত না। (প্রেরিত ২৬:৬-৮, ২২, ২৩) হ্যাঁ, পুনরুত্থানের বিষয়টা—আরও নির্দিষ্টভাবে বললে, যিশু ও তাঁর পুনরুত্থানে বিশ্বাসের বিষয়টা—নিয়েই মতভেদ তৈরি হয়েছিল।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২৩:৬
আমি একজন ফরীশী: শ্রোতাদের মধ্যে কেউ কেউ পৌলকে চিনতেন। (প্রেরিত ২২:৫) তারা এটা বুঝতে পেরেছিলেন, নিজেকে ফরীশীদের সন্তান বলার মাধ্যমে তিনি তাদের মতো একই জন্মগত অধিকার রয়েছে বলে স্বীকার করছিলেন। তারা বুঝতে পেরেছিলেন, পৌল নিজের সম্বন্ধে ভুল ধারণা দিচ্ছেন না কারণ মহাসভার ফরীশীরা জানতেন যে, তিনি একজন উদ্যোগী খ্রিস্টান হয়েছিলেন। কিন্তু এই প্রসঙ্গে, নিজেকে একজন ফরীশী হিসেবে তুলে ধরার বিষয়ে পৌলের বিবৃতিকে তুলনামূলক অর্থে বোঝা যেতে পারে; পৌল নিজেকে সদ্দূকীদের চেয়ে বরং ফরীশী হিসেবে পরিচয় দিতে চেয়েছিলেন কারণ তিনি ফরীশীদের মতো পুনরুত্থানে বিশ্বাস করতেন। এভাবে তিনি সেখানে উপস্থিত ফরীশীদের সঙ্গে একমত হওয়ার মতো একটা ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। তিনি হয়তো আশা করেছিলেন, এই বিতর্কিত বিষয়টা উত্থাপন করলে মহাসভার কোনো কোনো সদস্য তার যুক্তি সমর্থন করবেন। তার সেই কৌশল কাজে লেগেছিল। (প্রেরিত ২৩:৭-৯) প্রেরিত ২৩:৬ পদে উল্লেখিত পৌলের কথাগুলো, পরে রাজা আগ্রিপ্পর সামনে পক্ষসমর্থন করার সময় নিজের সম্বন্ধে তিনি যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন, সেটার সঙ্গেও সংগতিপূর্ণ। (প্রেরিত ২৬:৫) আর রোম থেকে ফিলিপীর সহখ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখার সময়, পৌল আবারও একজন ফরীশী হিসেবে তার জন্মগত অধিকার সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন। (ফিলি ৩:৫) এ ছাড়া, অন্যান্য খ্রিস্টান যারা আগে ফরীশী ছিলেন, তাদের বিষয়ে প্রেরিত ১৫:৫ পদের বর্ণনাও লক্ষণীয়।—দেখুন, প্রেরিত ১৫:৫ পদের স্টাডি নোট।
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২৪:২৪
দ্রুষিল্লা: প্রেরিত ১২:১ পদে উল্লেখিত হেরোদ অর্থাৎ হেরোদ আগ্রিপ্প ১ম-এর মেয়েদের মধ্যে তৃতীয় ও সবচেয়ে ছোটো মেয়ে। প্রায় ৩৮ খ্রিস্টাব্দে তার জন্ম হয়েছিল এবং তিনি আগ্রিপ্প ২য় ও বর্ণীকীর বোন ছিলেন। (দেখুন, প্রেরিত ২৫:১৩ পদের স্টাডি নোট এবং শব্দকোষের অধীনে “হেরোদ।”) দেশাধ্যক্ষ ফীলিক্স ছিলেন তার দ্বিতীয় স্বামী। প্রথমে সিরিয়ার ইমেসার রাজা আ্যজাইজাসের সঙ্গে তার বিয়ে হয়েছিল কিন্তু তিনি তার সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ করেছিলেন এবং প্রায় ৫৪ খ্রিস্টাব্দে, যখন তার বয়স প্রায় ১৬ বছর, সেই সময়ে ফীলিক্সকে বিয়ে করেছিলেন। পৌল যখন ফীলিক্সের সামনে ‘ন্যায়পরতার, ইন্দ্রিয়-দমনের এবং আগামী বিচারের বিষয়ে’ কথা বলেছিলেন, তখন দ্রুষিল্লা সম্ভবত সেখানে উপস্থিত ছিলেন। (প্রেরিত ২৪:২৫) ফীষ্ট যখন ফীলিক্সের দেশাধ্যক্ষের পদ লাভ করেছিলেন, তখন ফীলিক্স “যিহূদীদের প্রীতির পাত্র হইবার ইচ্ছা করিয়া” পৌলকে বন্দি করে রেখে গিয়েছিলেন আর কেউ কেউ মনে করে, তার তরুণী স্ত্রী, যিনি যিহুদি ছিলেন, তাকে খুশি করার জন্যই এটা করা হয়েছিল।—প্রেরিত ২৪:২৭.
জানুয়ারি ২১-২৭
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রেরিত ২৫-২৬
“পৌল কৈসরের কাছে আপিল করেন আর এরপর রাজা হেরোদ আগ্রিপ্পর কাছে সাক্ষ্য দেন”
সাক্ষ্য দেওয়া ১৯৮ অনু. ৬, ইংরেজি
“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”
৬ যিহুদিদের ইচ্ছা পূরণ করার ব্যাপারে ফীষ্টের আকাঙ্ক্ষা, পৌলকে মৃত্যুর মুখে ফেলতে পারত। তাই, পৌল একজন রোমীয় নাগরিক হিসেবে তার অধিকার ব্যবহার করেছিলেন। তিনি ফীষ্টকে বলেছিলেন: “আমি কৈসরের বিচারাসনের সম্মুখে দাঁড়াইয়া আছি, এখানে আমার বিচার হওয়া উচিত। আমি যিহূদীদের প্রতি কিছু অন্যায় করি নাই, ইহা আপনিও বিলক্ষণ জানেন। . . . আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি।” একবার এই ধরনের আপীল করা হলে তা সাধারণত প্রত্যাহার করা যেত না। ফীষ্ট এই বলে বিষয়টার উপর জোর দিয়েছিলেন: “তুমি কৈসরের নিকটে আপীল করিলে; কৈসরের কাছেই যাইবে।” (প্রেরিত ২৫:১০-১২) পৌল আরও উচ্চ আইনি কর্তৃপক্ষের কাছে আপীল করার মাধ্যমে বর্তমানের সত্য খ্রিস্টানদের জন্য এক উদাহরণ রেখে গিয়েছেন। বিরোধীরা যখন “বিধান” বা আইন “দ্বারা উপদ্রব” করার চেষ্টা করে, তখন যিহোবার সাক্ষিরা সুসমাচারের পক্ষসমর্থন করার জন্য আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে।—গীত. ৯৪:২০.
সাক্ষ্য দেওয়া ১৯৮-২০১ অনু. ১০-১৬, ইংরেজি
“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”
১০ নিজের পক্ষসমর্থন করার সুযোগ দেওয়ার জন্য পৌল সম্মানের সঙ্গে রাজা আগ্রিপ্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন আর এটা স্বীকার করেছিলেন যে, রাজা যিহুদিদের সমস্ত রীতিনীতি ও তর্ক সম্বন্ধে অভিজ্ঞ। এরপর পৌল নিজের অতীত জীবন সম্বন্ধে বলেছিলেন: “আমাদের ধর্ম্মের মধ্যে সর্ব্বাপেক্ষা সূক্ষ্ণাচারী” বা কঠোর নিয়মপরায়ণ “সম্প্রদায় অনুসারে আমি ফরীশী মতে জীবন যাপন করিতাম।” (প্রেরিত ২৬:৫) একজন ফরীশী হিসেবে পৌল মশীহের আসার বিষয়ে প্রত্যাশা করতেন। আর এখন একজন খ্রিস্টান হিসেবে তিনি সাহসের সঙ্গে যিশু খ্রিস্টকে দীর্ঘপ্রতীক্ষিত সেই ব্যক্তি হিসেবে শনাক্ত করেন। তার ও তার বিরুদ্ধে অভিযোগকারীদের একই বিশ্বাস—অর্থাৎ তাদের পূর্বপুরুষদের কাছে করা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হওয়ার আশা—ছিল আর এই কারণেই সেই দিন পৌলের বিচার হচ্ছিল। এই পরিস্থিতি আগ্রিপ্পকে পৌলের কথা শোনার বিষয়ে আরও বেশি আগ্রহী করে তুলেছিল।
১১ অতীতে খ্রিস্টানদের প্রতি তার আক্রমণাত্মক আচরণ সম্বন্ধে স্মরণ করে পৌল বলেছিলেন: “আমিই ত মনে করিতাম যে, নাসরতীয় যীশুর নামের বিরুদ্ধে অনেক কার্য্য করা আমার কর্ত্তব্য। . . . তাঁহাদের [খ্রিস্টের অনুসারীদের] বিরুদ্ধে অতিমাত্র উন্মত্ত হইয়া বিদেশীয় নগর পর্য্যন্তও তাঁহাদিগকে তাড়না করিতাম।” (প্রেরিত ২৬:৯-১১) পৌল মোটেও বাড়িয়ে বলেননি। তিনি যে খ্রিস্টানদের প্রতি হিংস্র আচরণ করেছিলেন, সেই বিষয়ে অনেকে জানত। (গালা. ১:১৩, ২৩) আগ্রিপ্প হয়তো ভেবেছিলেন, ‘এইরকম একজন ব্যক্তি কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে?’
১২ পৌলের পরের কথা থেকে সেটার উত্তর পাওয়া গিয়েছিল: “প্রধান যাজকদের নিকটে ক্ষমতা ও আজ্ঞাপত্র লইয়া আমি দম্মেশকে যাইতেছিলাম, এমন সময়ে, হে রাজন্, মধ্যাহ্নকালে পথিমধ্যে দেখিলাম, আকাশ হইতে সূর্য্যতেজ অপেক্ষাও তেজোময় জ্যোতি আমার ও আমার সহযাত্রীদের চারিদিকে দেদীপ্যমান। তখন আমরা সকলে ভূমিতে পতিত হইলে আমি এক বাণী শুনিলাম, উহা ইব্রীয় ভাষায় আমাকে বলিল, ‘শৌল, শৌল, কেন আমাকে তাড়না করিতেছ? কণ্টকের [“পাঁচনীর,” NW] মুখে পদাঘাত করা তোমার দুষ্কর।’ তখন আমি বলিলাম, ‘প্রভু, আপনি কে?’ প্রভু কহিলেন, ‘আমি যীশু, যাঁহাকে তুমি তাড়না করিতেছ?’”—প্রেরিত ২৬:১২-১৫.
১৩ এই অতিপ্রাকৃতিক ঘটনার আগে, পৌল রূপকভাবে “পাঁচনীর মুখে পদাঘাত” করছিলেন। ঠিক যেমন একটা মালবাহী পশু একটা পাঁচনীর সূচালো প্রান্তে পদাঘাত করলে অযথা নিজেই ক্ষতবিক্ষত হবে, তেমনই ঈশ্বরের ইচ্ছার বিরোধিতা করার মাধ্যমে পৌল নিজেই আধ্যাত্মিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। পুনরুত্থিত যিশু দম্মেশকের পথে পৌলের সামনে আবির্ভূত হওয়ার মাধ্যমে, আন্তরিক অথচ স্পষ্টতই বিভ্রান্ত এই ব্যক্তিকে নিজের চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করতে পরিচালিত করেছিলেন।—যোহন ১৬:১, ২.
১৪ পৌল সত্যিকার অর্থেই তার জীবনে বড়ো বড়ো পরিবর্তন করেছিলেন। আগ্রিপ্পকে সম্বোধন করে তিনি বলেছিলেন: “আমি সেই স্বর্গীয় দর্শনের অবাধ্য হইলাম না; কিন্তু প্রথমে দম্মেশকের লোকদের কাছে, পরে যিরূশালেমে ও যিহূদিয়ার সমস্ত জনপদে, এবং পরজাতিদের কাছে প্রচার করিতে লাগিলাম যে, তাহারা যেন মন ফিরায়, ও ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়া আইসে, মনপরিবর্ত্তনের উপযোগী কার্য্য করে।” (প্রেরিত ২৬:১৯, ২০) বহু বছর ধরে, পৌল মধ্যাহ্নের সেই দর্শনে যিশু খ্রিস্ট তাকে যে-কার্যভার অর্পণ করেছিলেন, তা পালন করে এসেছিলেন। এর ফল কী হয়েছিল? যারা পৌলের প্রচারিত সুসমাচারের প্রতি সাড়া দিয়েছিল, তারা তাদের অনৈতিক ও অসৎ আচরণের জন্য অনুতপ্ত হয়েছিল এবং ঈশ্বরের কাছে ফিরে এসেছিল। এই ব্যক্তিরা উত্তম নাগরিক হয়েছিল, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় অবদান রেখেছিল ও এর প্রতি সম্মান দেখিয়েছিল।
১৫ কিন্তু, পৌলের যিহুদি বিরোধীদের কাছে এসব উপকারের কোনো গুরুত্বই ছিল না। পৌল বলেছিলেন: “এই কারণ যিহূদীরা ধর্ম্মধামে আমাকে ধরিয়া বধ করিতে চেষ্টা করিতেছিল। কিন্তু ঈশ্বর হইতে সাহায্য প্রাপ্ত হইয়া আমি অদ্য পর্য্যন্ত দাঁড়াইয়া আছি, ক্ষুদ্র ও মহান্ সকলের কাছে সাক্ষ্য দিতেছি।”—প্রেরিত ২৬:২১, ২২.
১৬ সত্য খ্রিস্টান হিসেবে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে “উত্তর দিতে” বা আত্মপক্ষ সমর্থন করতে আমাদের “সর্ব্বদা প্রস্তুত” থাকতে হবে। (১ পিতর ৩:১৫) বিচারকদের ও শাসকদের কাছে আমাদের বিশ্বাস সম্বন্ধে কথা বলার সময় আমাদের জন্য পৌলের পন্থা অনুসরণ করা সাহায্যকারী হবে, যা তিনি আগ্রিপ্প ও ফীষ্টের সঙ্গে কথা বলার সময় ব্যবহার করেছিলেন। বাইবেলের সত্য যেভাবে জীবনকে—আমাদের নিজেদের জীবনকে ও সেইসঙ্গে যারা আমাদের বার্তার প্রতি সাড়া দেয় তাদের জীবনকে—আরও উন্নত করে, সেই বিষয়ে সম্মানের সঙ্গে বলার মাধ্যমে আমরা হয়তো এই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের হৃদয়ে নাড়া দিতে পারি।
সাক্ষ্য দেওয়া ২০২ অনু. ১৮, ইংরেজি
“আমি কৈসরের নিকটে আপীল করি”
১৮ কিন্তু পৌল দেশাধ্যক্ষকে এই উত্তর দিয়েছিলেন: “হে মহামহিম ফীষ্ট, আমি পাগল নহি, কিন্তু সত্যের ও সুবোধের উক্তি প্রচার করিতেছি। বাস্তবিক রাজা এ সকল বিষয় জানেন, আর তাঁহারই সাক্ষাতে আমি সাহসপূর্ব্বক কথা কহিতেছি . . . হে রাজন্ আগ্রিপ্প, আপনি কি ভাববাদিগণকে বিশ্বাস করেন? আমি জানি, আপনি বিশ্বাস করেন।” আগ্রিপ্প তখন বলেছিলেন: “তুমি অল্পেই আমাকে খ্রীষ্টীয়ান করিতে চেষ্টা পাইতেছ।” (প্রেরিত ২৬:২৫-২৮) এই কথাটা আন্তরিকভাবে বলা হোক বা না হোক, এটা প্রকাশ করে যে, পৌলের সাক্ষ্য রাজার উপর এক গভীর প্রভাব ফেলেছিল।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২৬:১৪
পাঁচনীর মুখে পদাঘাত করা: একটা পাঁচনী হল সূচালো প্রান্তবিশিষ্ট লাঠি, যা কোনো পশুকে তাড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য ব্যবহার করা হতো। (বিচার. ৩:৩১) “পাঁচনীর মুখে পদাঘাত করা” অভিব্যক্তিটা হল গ্রিক সাহিত্যে পাওয়া একটা প্রবাদ। এই প্রবাদের ভিত্তি হল একটা একগুঁয়ে ষাঁড়ের ছবি, যেটা পাঁচনীর মুখে পদাঘাত করার মাধ্যমে পাঁচনীর খোঁচার আঘাত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে, যার ফলে পশুটা ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে। একজন খ্রিস্টান হওয়ার আগে শৌল একইরকম আচরণ করেছিলেন। যিশুর অনুসারীরা, যাদের উপর যিহোবা ঈশ্বরের সমর্থন ছিল, তাদের আঘাত করে পৌল নিজের গুরুতর ক্ষতি করার ঝুঁকি নিয়েছিলেন। (তুলনা করুন, প্রেরিত ৫:৩৮, ৩৯; ১তীম ১:১৩, ১৪) উপ ১২:১১ পদে ‘অঙ্কুশ’ বা পাঁচনী শব্দটা রূপক অর্থে উল্লেখ করা হয়েছে আর এটা একজন জ্ঞানবান বা বিজ্ঞ ব্যক্তির বাক্যকে বোঝায়, যা একজন শ্রোতাকে পরামর্শ অনুসরণ করতে অনুপ্রাণিত করে।
nwt শব্দকোষ
পাঁচনী: সূচালো ধাতব প্রান্তবিশিষ্ট একটা লম্বা লাঠি, যেটা খামারের কর্মীরা একটা পশুকে খোঁচা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করত। পাঁচনীকে একজন জ্ঞানবান বা বিজ্ঞ ব্যক্তির বাক্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে, যা শ্রোতাকে বিজ্ঞ পরামর্শে মনোযোগ দিতে অনুপ্রাণিত করে। “পাঁচনীর মুখে পদাঘাত করা” ধারণাটা এমন একটা একঁগুয়ে ষাঁড়ের আচরণ থেকে নেওয়া হয়েছিল, যেটা পাঁচনীর মুখে পদাঘাত করার মাধ্যমে পাঁচনীর খোঁচার আঘাত প্রতিরোধ করার চেষ্টা করছে আর এর ফলে নিজেই ক্ষতবিক্ষত হচ্ছে।—প্রেরিত ২৬:১৪; বিচার ৩:৩১.
প্রহরীদুর্গ ০৩ ১১/১৫ ১৬-১৭ অনু. ১৪
রাজ্যের বার্তা গ্রহণ করতে অন্যদের সাহায্য করুন
১৪ পৌল জানতেন যে, আগ্রিপ্প কেবল নামেমাত্র একজন যিহুদি ছিলেন। যিহুদি ধর্ম সম্বন্ধে আগ্রিপ্পর জ্ঞানকে নাড়া দেয় এমনভাবে পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে, তিনি তার প্রচারে আসলে মশীহের মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে ‘ভাববাদিগণ এবং মোশিও যাহা ঘটিবে বলিয়া গিয়াছেন, ইহা ছাড়া আর কিছুই বলিতেছিলেন না।’ (প্রেরিত ২৬:২২, ২৩) সরাসরি আগ্রিপ্পকে সম্বোধন করে পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “হে রাজন্ আগ্রিপ্প, আপনি কি ভাববাদিগণকে বিশ্বাস করেন?” এই প্রশ্নে আগ্রিপ্প উভয়সংকটে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি যদি বলেন যে, তিনি ভাববাদীদের অস্বীকার করেন, তা হলে এক যিহুদি বিশ্বাসী হিসেবে তার সুনাম নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তিনি যদি পৌলের যুক্তির সঙ্গে একমত হন, তা হলে তিনি প্রেরিতের সঙ্গে প্রকাশ্যে মতৈক্য অবলম্বন করবেন এবং এর ফলে একজন খ্রিস্টান হিসেবে আখ্যাত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। পৌল বিজ্ঞতার সঙ্গে তার প্রশ্নের উত্তর দিয়েছিলেন, এই কথা বলে: “আমি জানি, আপনি বিশ্বাস করেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) কীভাবে আগ্রিপ্পর হৃদয় তাকে উত্তর দিতে পরিচালিত করেছিল? তিনি উত্তর দিয়েছিলেন: “অল্প সময়ের মধ্যেই তুমি আমাকে একজন খ্রিস্টান হতে প্রত্যয়ী করবে।” (প্রেরিত ২৬:২৭, ২৮) যদিও আগ্রিপ্প একজন খ্রিস্টান হননি, তবুও স্পষ্টতই পৌল তার বার্তার মাধ্যমে কিছুটা হলেও আগ্রিপ্পর হৃদয় স্পর্শ করেছিলেন।—ইব্রীয় ৪:১২.
জানুয়ারি ২৮–ফেব্রুয়ারি ৩
ঈশ্বরের বাক্যের গুপ্তধন | প্রেরিত ২৭-২৮
“পৌল রোমের উদ্দেশে সমুদ্রপথে যাত্রা করেন”
সাক্ষ্য দেওয়া ২০৮ অনু. ১৫, ইংরেজি
“আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না”
১৫ সম্ভবত পৌল “ঈশ্বর কর্ত্তৃক যাহা অঙ্গীকৃত হইয়াছে, তাহার প্রত্যাশা” সম্বন্ধে জাহাজের অনেকের কাছে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২৬:৬; কল ১:৫) এখন জাহাজ ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় পৌল সেই প্রত্যাশা সম্বন্ধে এক জোরালো ভিত্তি প্রদান করতে পারতেন, যা শীঘ্রই পরিপূর্ণ হতে যাচ্ছিল। তিনি বলেছিলেন: “এক দূত গত রাত্রিতে আমার নিকটে দাঁড়াইয়া কহিলেন, পৌল, ভয় করিও না, কৈসরের সম্মুখে তোমাকে দাঁড়াইতে হইবে। আর দেখ, যাহারা তোমার সঙ্গে যাইতেছে, ঈশ্বর তাহাদের সকলকেই তোমায় দান করিয়াছেন।” পৌল তাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “অতএব মহাশয়েরা সাহস করুন কেননা ঈশ্বরে আমার এমন বিশ্বাস আছে যে, আমার নিকটে যেরূপ উক্ত হইয়াছে, সেইরূপই ঘটিবে। কিন্তু কোন দ্বীপে গিয়া আমাদিগকে পড়িতে হইবে।”—প্রেরিত ২৭:২৩-২৬.
সাক্ষ্য দেওয়া ২০৯ অনু. ১৮, ইংরেজি
“আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না”
১৮ জানা গিয়েছিল যে, রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সিসিলির দক্ষিণে মিলিতা (মালটা) দ্বীপে ছিল। (“মিলিতা—কোথায়?” শিরোনামের বাক্স দেখুন।) সেই দ্বীপের অধিবাসীরা তাদের প্রতি “অসাধারণ সৌজন্য” দেখিয়েছিল। (প্রেরিত ২৮:২) তারা এই অপরিচিত লোকেদের জন্য আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছিল, যারা ভিজে জবজবে হয়ে ও কাঁপতে কাঁপতে তাদের উপকূলে এসে পৌঁছেছিল। ঠাণ্ডা ও বৃষ্টি সত্ত্বেও, সেই আগুন তাদের উষ্ণ হতে সাহায্য করেছিল। আর সেখানে একটা অলৌকিক কাজও ঘটেছিল।
সাক্ষ্য দেওয়া ২১০ অনু. ২১, ইংরেজি
“আপনাদের কাহারও প্রাণের হানি হইবে না”
২১ পুব্লিয় নামে একজন ধনী জমিদার সেই এলাকায় বাস করতেন। তিনি হয়তো মিলিতার প্রধান রোমীয় কর্মকর্তা ছিলেন। লূক তাকে ‘দ্বীপের প্রধান’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন আর মিলিতায় খুঁজে পাওয়া দুটো ফলকে খোদাই করা লিপিতে ঠিক এই উপাধিই ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি তিন দিন ধরে পৌল ও তার সঙ্গীদের আতিথেয়তা দেখিয়েছিলেন। কিন্তু পুব্লিয়ের বাবা অসুস্থ ছিলেন। আবারও লূক সঠিকভাবে পরিস্থিতি বর্ণনা করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন, সেই ব্যক্তি “জ্বর ও আমাশয় রোগে পীড়িত হইয়া শয্যাগত ছিলেন” আর এভাবে অসুস্থতার ধরন সম্বন্ধে নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেছিলেন। পৌল তখন প্রার্থনা করে সেই ব্যক্তির উপর হস্তার্পণ করেছিলেন আর তিনি সুস্থ হয়েছিলেন। স্থানীয় লোকেরা এই অলৌকিক কাজ দেখে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়ে অন্যান্য অসুস্থ ব্যক্তিকেও সুস্থ করার জন্য তার কাছে নিয়ে এসেছিল আর তারা পৌল ও তার সঙ্গীদের জন্য প্রয়োজনীয় উপহারও এনেছিল।—প্রেরিত ২৮:৭-১০.
সাক্ষ্য দেওয়া ২১৩ অনু. ১০, ইংরেজি
পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে “সাক্ষ্য দিলেন”
১০ ভ্রমণকারীদের দল যখন অবশেষে রোমে প্রবেশ করেছিল, তখন “পৌল আপন প্রহরী সৈনিকের সহিত স্বতন্ত্র বাস করিবার অনুমতি পাইলেন।” (প্রেরিত ২৮:১৬) যারা হালকা প্রহরায় থাকত, তাদের পালিয়ে যাওয়া প্রতিরোধ করার জন্য সাধারণত একটা শিকল প্রয়োজন হতো, যেটা দিয়ে বন্দিকে তার প্রহরীর সঙ্গে বেঁধে রাখা যেত। কিন্তু, পৌল একজন রাজ্য ঘোষণাকারী ছিলেন আর একটা শিকল নিশ্চয়ই তাকে থামিয়ে রাখতে পারত না। তাই, যাত্রার ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠার জন্য মাত্র তিন দিন সময় নেওয়ার পর তিনি নিজের পরিচয় ও সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য রোমে থাকা যিহুদিদের প্রধান প্রধান ব্যক্তিকে একত্রে ডেকে পাঠিয়েছিলেন।
আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে বের করুন
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২৭:৯
প্রায়শ্চিত্ত দিনের উপবাস: বা “শরৎ কালের উপবাস।” আক্ষ. “উপবাস।” উপবাস শব্দের জন্য যে-গ্রিক শব্দ রয়েছে, সেটা শুধু সেই উপবাসকে বোঝায়, যে-বিষয়ে মোশির ব্যবস্থায় আজ্ঞা দেওয়া হয়েছিল আর এটা বার্ষিক প্রায়শ্চিত্ত দিনের উপবাসের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। এ ছাড়া, এটাকে ইয়োম কিপপুর-ও (ইব্রীয়, ইয়োহম হাককিপপুরিম, “আচ্ছাদন দিন”) বলা হতো। (লেবীয় ১৬:২৯-৩১; ২৩:২৬-৩২; গণনা ২৯:৭; শব্দকোষের অধীনে “প্রায়শ্চিত্ত দিন” দেখুন।) “নিজেকে দুঃখ দেওয়া” অভিব্যক্তিটা যখন প্রায়শ্চিত্ত দিনের সঙ্গে যুক্ত করে ব্যবহার করা হয়, তখন এটা সাধারণত উপবাস-সহ আত্মত্যাগ করার বিভিন্ন উপায়কে বোঝাতে পারে। (লেবীয় পুস্তক ১৬:২৯, পাদটীকা) প্রেরিত ২৭:৯ পদে “উপবাস” শব্দের ব্যবহার এই ধারণাকে সমর্থন করে যে, প্রায়শ্চিত্ত দিনে আত্মত্যাগ করার একটা প্রধান উপায় ছিল উপবাস করা। প্রায়শ্চিত্ত দিনের উপবাস সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে কিংবা অক্টোবর মাসের শুরুর দিকে পড়ত।
nwtsty স্টাডি নোট—প্রেরিত ২৮:১১
জিউসের ছেলেদের: গ্রিক ও রোমীয় পৌরাণিক কাহিনি অনুযায়ী, “জিউসের ছেলেরা” (গ্রিক, দিয়শকুরি) ছিল কাসতোরাস ও পোলাক্স, যারা দেবতা জিউস (জুপিটার) ও স্পার্টান রানি লেডার যমজ ছেলে। এই যমজ ছেলেদের অন্যান্য বিষয় ছাড়াও নাবিকদের রক্ষক হিসেবে গণ্য করা হতো, যারা অশান্ত সমুদ্রে নাবিকদের রক্ষা করতে সমর্থ ছিল। জাহাজের গলুইয়ে খোদাই করা মূর্তি সম্বন্ধে বিস্তারিত বর্ণনা হল আরেকটা প্রমাণ, যা দেখায় একজন চাক্ষুষ সাক্ষি এই বিবরণ লিখেছিলেন।