খ্রীষ্টীয় সাক্ষীবৃন্দ যাদের স্বর্গীয় নাগরিকতা আছে
“কারণ আমরা স্বর্গপুরীর প্রজা।”—ফিলিপীয় ৩:২০.
১. কিছু মানুষের জন্য যিহোবার কী উত্তম উদ্দেশ্য রয়েছে?
ব্যক্তিবিশেষেরা যারা মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করেছে তারা স্বর্গেতে, এমনকি দূতেদের উপর, রাজা ও যাজক হিসাবে শাসন করবে। (১ করিন্থীয় ৬:২, ৩; প্রকাশিত বাক্য ২০:৬) এটি কতই না আশ্চর্য ধরনের সত্য! তবুও, এটাই হল যিহোবার উদ্দেশ্য এবং তিনি তাঁর একজাত পুত্র, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে তা সম্পাদন করবেন। আমাদের সৃষ্টিকর্তা কেন তা করবেন? আর এই জ্ঞানের দ্বারা কিভাবে আজকের একজন খ্রীষ্টানের প্রভাবিত হওয়া উচিত? আসুন আমরা দেখি যে বাইবেল কিভাবে এই প্রশ্নগুলির উত্তর দেয়।
২. যোহন বাপ্তাইজক কোন্ নতুন বিষয়ের সম্বন্ধে ঘোষণা করেন যা যীশু করবেন আর এই নতুন বিষয়টির সাথে কিসের সম্পর্ক রয়েছে?
২ যখন যোহন বাপ্তাইজক যীশুর জন্য পথ প্রস্তুত করছিলেন, তখন তিনি ঘোষণা করেছিলেন যে যীশু নতুন কিছু করবেন। নথিভুক্ত তথ্যটি জানায়: “[যোহন] প্রচার করিয়া বলিতেন, যিনি আমা অপেক্ষা শক্তিমান, তিনি আমার পশ্চাৎ আসিতেছেন; আমি হেঁট হইয়া তাঁহার পাদুকার বন্ধন খুলিবার যোগ্য নই। আমি তোমাদিগকে জলে বাপ্তাইজ করিলাম, কিন্তু তিনি তোমাদিগকে পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজ করিবেন।” (মার্ক ১:৭, ৮) এর আগে কেউ পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়নি। পবিত্র আত্মাকে কেন্দ্র করে এটি ছিল একটি নতুন ব্যবস্থা এবং এর সাথে জড়িত ছিল মানুষকে স্বর্গীয় শাসনের জন্য প্রস্তুত করা সম্বন্ধীয় যিহোবার আসন্ন প্রকাশিত উদ্দেশ্যটি।
“নূতন জন্ম”
৩. নীকদীমকে যীশু স্বর্গীয় রাজ্য সম্বন্ধে কোন্ নতুন জিনিসটি ব্যাখ্যা করেন?
৩ একজন বিশিষ্ট ফরীশীর সাথে গোপনে কথা বলার সময়, যীশু এই ঐশিক উদ্দেশ্য সম্বন্ধে আরও কিছু প্রকাশ করেছিলেন। নীকদীম নামে একজন ফরীশী রাত্রে যীশুর কাছে এসেছিলেন এবং যীশু তাকে বলেন: “নূতন জন্ম না হইলে কেহ ঈশ্বরের রাজ্য দেখিতে পায় না।” (যোহন ৩:৩) একজন ফরীশী হিসাবে, নীকদীম, নিশ্চয়ই ইব্রীয় শাস্ত্র পড়েছিলেন এবং ঈশ্বরের রাজ্যের মহান সত্যটি সম্বন্ধে তার কিছুটা জ্ঞান ছিল। দানিয়েলের পুস্তকে ভাববাণী করা হয়েছিল যে “মনুষ্য-পুত্ত্রের ন্যায় এক পুরুষ”-কে এবং “পরাৎপরের পবিত্র প্রজাদিগকে” রাজ্য দেওয়া হবে। (দানিয়েল ৭:১৩, ১৪, ২৭) এই রাজ্য অন্যান্য সমস্ত রাজ্যকে “চূর্ণ ও বিনষ্ট” করে নিজে চিরস্থায়ী হবে। (দানিয়েল ২:৪৪) সম্ভবত, নীকদীম ভেবেছিলেন যে এই ভাববাণীগুলি বিশেষ করে যিহূদী জাতির ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণতা লাভ করবে; কিন্তু যীশু বলেছিলেন যে রাজ্যকে দেখার জন্য একজনকে নূতন জন্ম নিতে হবে। নীকদীম এর অর্থ বুঝতে পারেননি, তাই যীশু বলে চলেন যে: “যদি কেহ জল এবং আত্মা হইতে না জন্মে, তবে সে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করিতে পারে না।”—যোহন ৩:৫.
৪. যারা পবিত্র আত্মার থেকে জন্ম নেয় তাদের সাথে যিহোবার সম্পর্ক কিভাবে পরিবর্তিত হয়?
৪ যোহন বাপ্তাইজক পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তিস্ম হওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু, যীশু এখন এর সাথে যোগ দিয়ে বলেন যে যদি একজন ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করতে চায় তবে তাকে অবশ্যই পবিত্র আত্মার দ্বারা জন্ম নিতে হবে। এই স্বতন্ত্র জন্মের মাধ্যমে, অসিদ্ধ পুরুষ ও স্ত্রীরা যিহোবা ঈশ্বরের সাথে এক বিশেষ সম্পর্ক স্থাপন করতে পারে। তারা তাঁর দত্তক সন্তান হিসাবে পরিগণিত হয়। আমরা পড়ি: “যত লোক [যীশুকে] গ্রহণ করিল, সেই সকলকে, যাহারা তাঁহার নামে বিশ্বাস করে তাহাদিগকে, তিনি ঈশ্বরের সন্তান হইবার ক্ষমতা দিলেন। তাহারা রক্ত হইতে নয়, মাংসের ইচ্ছা হইতে নয়, মানুষের ইচ্ছা হইতেও নয়, কিন্তু ঈশ্বর হইতে জাত।”—যোহন ১:১২, ১৩; রোমীয় ৮:১৫.
ঈশ্বরের সন্তান
৫. কখন বিশ্বস্ত শিষ্যেরা পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজিত হয় এবং এর সাথে সম্পর্কযুক্ত পবিত্র আত্মার কোন্ কাজগুলি সেই সময় ঘটে?
৫ যখন যীশু নীকদীমের সাথে কথা বলছিলেন, তখন ইতিমধ্যেই পবিত্র আত্মা যীশুর উপর অধিষ্ঠান করেছিল এবং তাঁকে ঈশ্বরের রাজ্যের ভবিষ্যৎ রাজা হিসাবে অভিষিক্ত করেছিল আর ঈশ্বর, যীশুকে জনসাধারণ্যে তাঁর পুত্র হিসাবে স্বীকার করেছিলেন। (মথি ৩:১৬, ১৭) সা.শ. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিহোবা আরও কিছু আত্মিক সন্তানদের দত্তক নেন। বিশ্বস্ত শিষ্যেরা যারা যিরূশালেমে একটি উপরের ঘরে মিলিত হয় তারা পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছিলেন। একই সাথে তারা আবার ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হওয়ার জন্য পবিত্র আত্মার থেকে জন্ম নিয়েছিলেন। (প্রেরিত ২:২-৪, ৩৮; রোমীয় ৮:১৫) এছাড়াও তারা ভবিষ্যতে স্বর্গীয় উত্তরাধিকারী হওয়ার উদ্দেশ্যে পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত এবং সেই স্বর্গীয় আশার নিশ্চয়তাস্বরূপ তারা পবিত্র আত্মারই মাধ্যমে প্রাথমিকরূপে মুদ্রাঙ্কিত হয়েছিলেন।—২ করিন্থীয় ১:২১, ২২.
৬. স্বর্গীয় রাজ্য সম্বন্ধে যিহোবার কী উদ্দেশ্য এবং এতে যে মানুষের অংশ থাকবে তা কেন যথার্থ?
৬ এরাই ছিলেন প্রথম অসিদ্ধ মানুষ যাদের ঈশ্বর বেছে নিয়েছিলেন রাজ্যে প্রবেশ করার জন্য। অর্থাৎ তাদের মৃত্যু ও পুনরুত্থানের পর তারা স্বর্গীয় রাজ্যের সংগঠনের অংশ হতে পারবে যা মানবজাতি ও দূতেদের উপর শাসন করবে। যিহোবার উদ্দেশ্য হল যে, এই রাজ্যের মাধ্যমে তাঁর মহান নাম পবিত্রীকৃত এবং সমস্ত সৃষ্টির সামনে তাঁর সার্বভৌমত্ব মহিমান্বিত হবে। (মথি ৬:৯, ১০; যোহন ১২:২৮) সেই রাজ্যের মধ্যে মানুষেরও যে কিছু অংশ থাকবে এটা কতই না যথার্থ! এদনোদ্যানে যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রথম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সময় শয়তান মানুষকে ব্যবহার করেছিল আর এখন যিহোবার উদ্দেশ্য হল যে সেই প্রতিদ্বন্দ্বিতার উত্তর দেওয়ার সময়েও যেন মানুষ অন্তর্ভুক্ত থাকে। (আদিপুস্তক ৩:১-৬; যোহন ৮:৪৪) সেই রাজ্যে শাসন করার জন্য যে সব ব্যক্তিবিশেষদের বেছে নেওয়া হয়েছে তাদের উদ্দেশ্যে প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “ধন্য আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের ঈশ্বর ও পিতা; তিনি নিজ বিপুল দয়ানুসারে মৃতগণের মধ্য হইতে যীশু খ্রীষ্টের পুনরুত্থান দ্বারা, জীবন্ত প্রত্যাশার নিমিত্ত আমাদিগকে পুনর্জন্ম দিয়াছেন, অক্ষয় ও বিমল ও অজর দায়াধিকারের নিমিত্ত দিয়াছেন; সেই দয়াধিকার স্বর্গে তোমাদের জন্য সঞ্চিত রহিয়াছে।”—১ পিতর ১:৩, ৪.
৭. যারা পবিত্র আত্মার দ্বারা বাপ্তাইজিত হয়েছে তারা যীশুর সাথে কিধরনের অদ্বিতীয় সম্পর্ক উপভোগ করে?
৭ ঈশ্বরের দত্তক পুত্র হিসাবে, এই মনোনীত খ্রীষ্টানেরা যীশু খ্রীষ্টের ভাই হয়। (রোমীয় ৮:১৬, ১৭; ৯:৪, ২৬; ইব্রীয় ২:১১) যেহেতু যীশু, আব্রাহামের সেই প্রতিজ্ঞাত বীজ হিসাবে প্রমাণিত হন, অতএব এই আত্মায় অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা হল সেই বীজের সহায়ক বা সম্পূরক অংশ যার মাধ্যমে বিশ্বাসী মানবজাতির উপর আশীর্বাদ আসবে। (আদিপুস্তক ২২:১৭, ১৮; গালাতীয় ৩:১৬, ২৬, ২৯) কিধরনের আশীর্বাদ? পাপের থেকে মুক্তি, ঈশ্বরের সাথে পুনরায় সম্পর্ক স্থাপন এবং এখন ও অনন্তকালের জন্য তাঁকে সেবা করার সুযোগ। (মথি ৪:২৩; ২০:২৮; যোহন ৩:১৬, ৩৬; ১ যোহন ২:১, ২) পৃথিবীর অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা তাদের আত্মিক ভাই যীশু খ্রীষ্ট এবং তাদের দত্তক পিতা, যিহোবা ঈশ্বর, তাঁদের সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে সহৃদয় ব্যক্তিদের এই আশীর্বাদের প্রতি পরিচালিত করে।—প্রেরিত ১:৮; ইব্রীয় ১৩:১৫.
৮. ঈশ্বরের আত্মায়-জাত পুত্রদের “প্রকাশপ্রাপ্তি” এর অর্থ কী?
৮ বাইবেল ঈশ্বরের এই আত্মায়-জাত পুত্রদের “প্রকাশপ্রাপ্তির” কথা বলে। (রোমীয় ৮:১৯) যীশুর সাথে সহকারী রাজা হিসাবে রাজ্যে প্রবেশ করার মাধ্যমে তারা শয়তানের এই জগৎ ব্যবস্থার যে ধ্বংস তাতে অংশ নেবে। এরপর, হাজার বছর ধরে, তারা মানবজাতির উপর মুক্তির মূল্যের যে উপকারিতা তা বর্তাতে সাহায্য করবে এবং এইভাবে মনুষ্যজাতিকে সেই সিদ্ধতার পর্যায় নিয়ে যাওয়া হবে যা আদম হারিয়েছিল। (২ থিষলনীকীয় ১:৮-১০; প্রকাশিত বাক্য ২:২৬, ২৭; ২০:৬; ২২:১, ২) এই সমস্ত কিছুই ছিল তাদের প্রকাশপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত। এটি এমন একটা জিনিস যার জন্য বিশ্বাসী মানব সৃষ্টি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।
৯. বাইবেল কিভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জগদ্ব্যাপী গোষ্ঠীকে সম্বোধন করে?
৯ জগদ্ব্যাপী অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের গোষ্ঠীই হল “স্বর্গে লিখিত প্রথমজাতদের সাধারণ . . . মণ্ডলী।” (ইব্রীয় ১২:২৩) তারাই হচ্ছেন প্রথম যারা যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকৃত হবেন। এদের “খ্রীষ্টের দেহ”-ও বলা হয়, যা একে অপরের সাথে এবং যীশুর সাথে তাদের নিবিড় সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়। (১ করিন্থীয় ১২:২৭) পৌল লিখেছিলেন: “যেমন দেহ এক, আর তাহার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ অনেক, এবং দেহের সমুদয় অঙ্গ, অনেক হইলেও, এক দেহ হয়, খ্রীষ্টও সেইরূপ। ফলতঃ আমরা কি যিহূদী কি গ্রীক, কি দাস কি স্বাধীন, সকলেই এক দেহ হইবার জন্য একই আত্মাতে বাপ্তাইজিত হইয়াছি, এবং সকলেই এক আত্মা হইতে পায়িত হইয়াছি।”—১ করিন্থীয় ১২:১২, ১৩; রোমীয় ১২:৫; ইফিষীয় ১:২২, ২৩; ৩:৬.
“ঈশ্বরের ইস্রায়েল”
১০, ১১. প্রথম শতাব্দীতে, কেন নতুন ইস্রায়েলের প্রয়োজন হয়েছিল এবং কাদের নিয়ে এই নতুন ইস্রায়েল গঠিত হয়?
১০ প্রতিজ্ঞাত মশীহ হিসাবে যীশুর আসার ১,৫০০ বছরেরও বেশি আগে, মাংসিক ইস্রায়েল জাতি ছিল যিহোবার বিশেষ লোক। বারেবারে স্মরণ করিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও, জাতিগতভাবে তারা অবিশ্বস্ত প্রমাণিত হয়। যখন যীশুর আবির্ভাব ঘটে, তখন সেই জাতি তাঁকে প্রত্যাখ্যান করে। (যোহন ১:১১) তাই, যীশু যিহূদী ধর্মীয় নেতাদের বলেছিলেন: “তোমাদের নিকট হইতে ঈশ্বরের রাজ্য কাড়িয়া লওয়া যাইবে, এবং এমন এক জাতিকে দেওয়া হইবে, যে জাতি তাহার ফল দিবে।” (মথি ২১:৪৩) পরিত্রাণের জন্য “যে জাতি [রাজ্যের] ফল দিবে” তাকে স্বীকার করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১১ এই নতুন জাতিটি হল অভিষিক্ত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী, যেটি সা.শ. ৩৩ সালে পঞ্চাসত্তমীর দিনে জন্ম নেয়। এর প্রথম সদস্যেরা ছিলেন যীশুর যিহূদী শিষ্যেরা যারা তাঁকে তাদের স্বর্গীয় রাজা হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন। (প্রেরিত ২:৫, ৩২-৩৬) কিন্তু, তারা ঈশ্বরের এই নতুন জাতির সদস্য হয়েছিলেন তাদের যিহূদী বংশ থেকে আসার ভিত্তিতে নয়, কিন্তু যীশুর উপর তাদের যে বিশ্বাস তার ভিত্তিতে। অতএব, ঈশ্বরের এই নতুন ইস্রায়েল খুবই স্বতন্ত্র—এক আত্মিক জাতি। যিহূদীদের মধ্যে অধিকাংশই যখন যীশুকে গ্রহণ করতে অস্বীকার করে, তখন নতুন জাতির অংশ হওয়ার আমন্ত্রণ প্রথমে শমরীয়দের এবং তারপর পরজাতীয়দের দেওয়া হয়। এই নতুন জাতিকে বলা হয় “ঈশ্বরের ইস্রায়েল।”—গালাতীয় ৬:১৬.
১২, ১৩. কিভাবে স্পষ্টরূপে বোঝা যায় যে নতুন ইস্রায়েল যিহূদী ধর্মের কোন সম্প্রদায় নয়?
১২ প্রাচীন ইস্রায়েলে, যখন কোন ন-যিহূদী ধর্মান্তরিত হত, তখন তাদের মোশির নিয়মের কাছে বাধ্যতা স্বীকার করতে হত এবং এর চিহ্নস্বরূপ পুরুষদের ত্বকচ্ছেদ করতে হত। (যাত্রাপুস্তক ১২:৪৮, ৪৯) কিছু যিহূদী খ্রীষ্টানেরা মনে করতেন যে ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অন্তর্ভুক্ত ন-যিহূদীদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য হওয়া উচিত। কিন্তু যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি ছিল একটু ভিন্ন। পবিত্র আত্মা প্রেরিত পিতরকে পরিচালিত করে পরজাতীয় ব্যক্তি কর্ণীলিয়ের ঘরে যেতে। যখন কর্ণীলিয় ও তার পরিবার পিতরের প্রচারে সাড়া দেয়, তখন তারা পবিত্র আত্মা পায়—এমনকি তারা জলে বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগে। এটি পরিষ্কারভাবে দেখায় যে যিহোবা তাদের কাছ থেকে মোশির নিয়মের প্রতি বাধ্যতার দাবি না জানিয়েই এই পরজাতীয়দের ঈশ্বরের ইস্রায়েলের সদস্য হিসাবে গ্রহণ করেছিলেন।—প্রেরিত ১০:২১-৪৮.
১৩ কিছু বিশ্বাসীদের পক্ষে এটিকে গ্রহণ করা কঠিন হয়েছিল এবং শীঘ্রই এই সমগ্র ব্যপারটিকে নিয়ে প্রেরিত ও প্রাচীনদের মধ্যে যিরূশালেমে আলোচনা হয়। সেই কর্তৃত্বপ্রধান গোষ্ঠীটি মন দিয়ে শোনে যে কিভাবে পবিত্র আত্মা ন-যিহূদী বিশ্বাসীদের উপর সক্রিয়ভাবে কাজ করছিল। বাইবেলের উপর গবেষণা দেখায় যে এটি ছিল অনুপ্রাণিত ভাববাণীর পরিপূর্ণতা। (যিশাইয় ৫৫:৫; আমোষ ৯:১১, ১২) সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়: ন-যিহূদী খ্রীষ্টানদের মোশির নিয়মের বাধ্য হতে হবে না। (প্রেরিত ১৫:১, ৬-২৯) অতএব আত্মিক ইস্রায়েল ছিল প্রকৃতই এক নতুন জাতি আর এটি যিহূদী ধর্মের কোন সম্প্রদায় নয়।
১৪. খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে যাকোব যখন “ছিন্নভিন্ন দ্বাদশ বংশের সমীপে” বলে সম্ভাষণ করেন তখন তিনি কী বুঝাতে চেয়েছিলেন?
১৪ এর সাথে সামঞ্জস্য রেখে, শিষ্য যাকোব যখন প্রথম শতাব্দীর অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের উদ্দেশ্যে তার চিঠি লেখেন, তখন তিনি তা “ছিন্নভিন্ন দ্বাদশ বংশের” প্রতি সম্বোধন করে লেখেন।” (যাকোব ১:১; প্রকাশিত বাক্য ৭:৩-৮) অবশ্যই, এই নতুন ইস্রায়েলের নাগরিকেরা কোন বিশেষ বংশের মধ্যে নিবদ্ধ ছিলেন না। আত্মিক ইস্রায়েলের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট ১২ বংশের ভাগ ছিল না যা মাংসিক ইস্রায়েলের মধ্যে ছিল। তবুও, যাকোবের অনুপ্রাণিত অভিব্যক্তিটি দেখায় যে যিহোবার দৃষ্টিতে ঈশ্বরের ইস্রায়েল সম্পূর্ণরূপে ১২ বংশীয় সাধারণ ইস্রায়েলের স্থান নিয়েছিল। যদি সাধারণ ইস্রায়েল, নতুন জাতির অংশ হয়, তাহলে তার এই মাংসিক বংশ—এমনকি সে যদি যিহূদা অথবা লেবীয় বংশের থেকেও এসে থাকে—তবুও তার কোন তাৎপর্য নেই।—গালাতীয় ৩:২৮; ফিলিপীয় ৩:৫, ৬.
এক নতুন নিয়ম
১৫, ১৬. (ক) ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অন্তর্ভুক্ত ন-যিহূদী সদস্যদের যিহোবা কিভাবে দেখেন? (খ) কোন্ ন্যায়ের ভিত্তিতে নতুন ইস্রায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়?
১৫ যিহোবার দৃষ্টিতে, এই নতুন জাতির ন-যিহূদী সদস্যেরা সম্পূর্ণরূপে আত্মিক যিহূদী! প্রেরিত পৌল ব্যাখ্যা করেন: “বাহিরে যে যিহূদী সে যিহূদী নয়, এবং বাহিরে মাংসে কৃত যে ত্বক্ছেদ তাহা ত্বক্ছেদ নয়। কিন্তু আন্তরিক যে যিহূদী সেই যিহূদী, এবং হৃদয়ের যে ত্বক্ছেদ, যাহা অক্ষরে নয়, আত্মায়, তাহাই ত্বক্ছেদ, তাহার প্রশংসা মনুষ্য হইতে হয় না, কিন্তু ঈশ্বর হইতে হয়।” (রোমীয় ২:২৮, ২৯) ঈশ্বরের ইস্রায়েলের অংশ হওয়ার যে আমন্ত্রণ তার প্রতি অনেক পরজাতীয়রা সারা দিয়েছিল এবং এই ঘটনাই বাইবেলের ভাববাণীর পরিপূর্ণতা এনেছিল। উদাহরণস্বরূপ, ভাববাদী হোশেয় লিখেছিলেন: “যে ‘অনুকম্পিতা নয়,’ তাহাকে অনুকম্পা করিব, এবং যে ‘আমার প্রজা নয়,’ তাহাকে বলিব তুমি আমার প্রজা, এবং সে বলিবে, তুমি আমার ঈশ্বর।”—হোশেয় ২:২৩; রোমীয় ১১:২৫, ২৬.
১৬ যদি আত্মিক ইস্রায়েলীয়রা মোশির নিয়ম চুক্তির অধীন না হয়ে থাকে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে তারা নতুন জাতির অংশ হয়? যিহোবা, যীশুর মাধ্যমে এই আত্মিক জাতির সাথে এক নতুন চুক্তি করেন। (ইব্রীয় ৯:১৫) যখন যীশু ১৪ই নিশান, সা.শ. ৩৩ সালে তাঁর মৃত্যুর স্মরণার্থক প্রবর্তন করেন, তখন তিনি রুটি ও দ্রাক্ষারস ১১ জন বিশ্বস্ত প্রেরিতদের দেন এবং বলেন যে এই দ্রাক্ষারস “নূতম নিয়মের রক্ত” তার প্রতিরূপ। (মথি ২৬:২৮; যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪) লূকের বিবরণ অনুসারে, যীশু বলেছিলেন যে এই দ্রাক্ষারসের পাত্র “নূতন নিয়ম”-কে চিত্রিত করছে। (লূক ২২:২০) যীশুর বাক্যের পরিপূর্ণতা অনুসারে, যখন পঞ্চাশত্তমীর দিনে পবিত্র আত্মা বর্ষিত হয়েছিল এবং ঈশ্বরের ইস্রায়েলের জন্ম হয়েছিল, তখন মাংসিক ইস্রায়েলের কাছ থেকে রাজ্যকে কেড়ে নেওয়া হয় এবং তা নতুন অর্থাৎ আত্মিক জাতিকে দেওয়া হয়। মাংসিক ইস্রায়েলের পরিবর্তে, এই নতুন জাতিটি হল যিহোবার দাস, যারা হল তাঁর সাক্ষীবৃন্দ দ্বারা গঠিত।—যিশাইয় ৪৩:১০, ১১.
“নূতন যিরূশালেম”
১৭, ১৮. প্রকাশিত বাক্য কিভাবে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য যে মহিমা অপেক্ষা করছে তার বর্ণনা দেয়?
১৭ স্বর্গীয় আহ্বানে অংশ নেওয়ার সুযোগ যাদের আছে তাদের জন্য কতই না আনন্দ অপেক্ষা করছে! আর যে সব আশ্চর্য বিষয়গুলি তাদের জন্য অপেক্ষা করছে সেগুলি জানতে পারা কতই না আনন্দের বিষয়! তাদের স্বর্গীয় উত্তরাধিকার সম্বন্ধে প্রকাশিত বাক্যের পুস্তক আমাদের এক রোমাঞ্চকর আভাস দেয়। উদাহরণস্বরূপ, প্রকাশিত বাক্য ৪:৪ পদে, আমরা পড়ি: “সেই সিংহাসনের [যিহোবার] চারিদিকে চব্বিশটী সিংহাসন আছে, সেই সকল সিংহাসনে চব্বিশ জন প্রাচীন বসিয়া আছেন, তাঁহারা শুক্লবস্ত্রপরিহিত এবং তাঁহাদের মস্তকের উপরে সুবর্ণ মুকুট।” এই ২৪ জন প্রাচীন হলেন অভিষিক্ত খ্রীষ্টান, যারা পুনরুত্থিত হওয়ার পর এখন স্বর্গীয় স্থানটি গ্রহণ করেছেন যা যিহোবা তাদের প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তাদের মুকুট ও সিংহাসন আমাদের মনে করিয়ে দেয় তাদের রাজকীয়তার কথা। এছাড়াও, যিহোবার সিংহাসনের চারিপাশে পরিচর্যার যে মহান সুযোগ তাদের আছে সে কথাও চিন্তা করুন!
১৮ প্রকাশিত বাক্য ১৪:১ পদে তাদের সম্বন্ধে আরেকটি আভাস আমরা পাই: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক, তাহাদের ললাটে তাঁহার নাম ও তাঁহার পিতার নাম লিখিত।” এখানে আমরা অভিষিক্তদের এক সীমিত সংখ্যা দেখতে পাই—১,৪৪,০০০ জন। তারা যে যিহোবার দ্বারা অধিষ্ঠিত রাজা, অর্থাৎ “মেষশাবক,” যীশুর সাথে দাঁড়িয়ে আছে এটাই তাদের রাজকীয় মর্যাদার পরিচয় দেয়। আর তারা স্বর্গীয় সিয়োন পর্বতে রয়েছে। পার্থিব সিয়োন পর্বত ছিল যিরূশালেম, ইস্রায়েলের রাজকীয় নগর। স্বর্গীয় সিয়োন পর্বত চিত্রিত করে যীশু এবং তাঁর সহদায়াদদের উচ্চান্বিত অবস্থাকে, যাদের নিয়ে স্বর্গীয় যিরূশালেম গঠিত।—২ বংশাবলি ৫:২; গীতসংহিতা ২:৬.
১৯, ২০. (ক) অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কোন্ স্বর্গীয় সংগঠনের অংশ হবে? (খ) কত বছর ধরে যিহোবা তাদের বেছে চলেছেন যারা স্বর্গীয় নাগরিকতা লাভ করবে?
১৯ এর সাথে সমতা বজায় রেখে, এই অভিষিক্তদের তাদের স্বর্গীয় মহিমাতে “নূতন যিরূশালেম” বলেও সম্বোধন করা হয়। (প্রকাশিত বাক্য ২১:২) পার্থিব যিরূশালেম ছিল “মহান্ রাজার নগরী” এবং সেখানে মন্দিরও অবস্থিত ছিল। (মথি ৫:৩৫) স্বর্গীয় নূতন যিরূশালেম হল এক রাজকীয় রাজ্যের সংগঠন যার মাধ্যমে মহান সার্বভৌম, যিহোবা এবং তাঁর মনোনীত রাজা, যীশু, এখন শাসন করছেন এবং এর মধ্যে দিয়ে যাজকীয় কাজ সম্পন্ন হয় যা আশীর্বাদরূপে যিহোবার সিংহাসন থেকে মানবজাতির উপর আরোগ্যের জন্য বর্ষিত হয়। (প্রকাশিত বাক্য ২১:১০, ১১; ২২:১-৫) আরেকটি দর্শনে যোহন শুনতে পান বিশ্বস্ত, পুনরুত্থিত, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের ‘মেষশাবকের ভার্যা’ হিসাবে অভিহিত করা হয়েছে। যীশুর সাথে নিবিড় সম্পর্ক এবং স্বেচ্ছায় তাঁর বশবর্তী হওয়ার মাধ্যমে তারা যে ধরনের আনন্দ উপভোগ করবে তার কী এক মনোরম চিত্রই না এখানে প্রকাশ করা হয়েছে! কল্পনা করুন স্বর্গের সেই আনন্দের কথা যখন তাদের শেষ ব্যক্তিটি তার স্বর্গীয় পুরস্কার পাবে। অবশেষে এখন, “মেষশাবকের বিবাহ” সম্ভব হবে! তখনই সেই রাজকীয় স্বর্গীয় সংগঠনটি সম্পূর্ণ হবে।—প্রকাশিত বাক্য ১৯:৬-৮.
২০ হ্যাঁ, অপূর্ব আশীর্বাদ সকল তাদের জন্য সঞ্চিত রয়েছে যাদের সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “কারণ আমরা স্বর্গপুরীর প্রজা।” (ফিলিপীয় ৩:২০) প্রায় দুই হাজার বছর ধরে, যিহোবা তাঁর এই আত্মিক সন্তানদের বেছে চলেছেন এবং স্বর্গীয় উত্তরাধিকারী হওয়া জন্য তাদের প্রস্তুত করে এসেছেন। প্রাপ্ত সমগ্র প্রমাণের ভিত্তিতে বলা যায় যে এই বাছাই ও প্রস্তুতিকরণের কাজ প্রায় সমাপ্ত হতে চলেছে। কিন্তু এর পরেও আরও কিছু আছে যা যোহনের কাছে দর্শনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়েছিল এবং যা লিপিবদ্ধ করা আছে প্রকাশিত বাক্যের ৭ অধ্যায়ে। অতএব এখন, খ্রীষ্টানদের আরেকটি দলের প্রতি আমাদের দৃষ্টি দেওয়ার প্রয়োজন আছে এবং এই দলটি সম্বন্ধে আমরা বিবেচনা করব পরবর্তী প্রবন্ধে।
আপনার কি স্মরণে আছে?
◻ যাদের স্বর্গীয় উত্তরাধিকার আছে তাদের উপর আত্মার কত ধরনের কাজ প্রতিফলিত হয়?
◻ কোন্ নিবিড় সম্পর্ক অভিষিক্তেরা যিহোবার সাথে? যীশুর সাথে উপভোগ করে?
◻ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মণ্ডলীকে কিভাবে বাইবেলে বর্ণনা করা হয়েছে?
◻ কোন্ ন্যায়ের ভিত্তিতে ঈশ্বরের ইস্রায়েল প্রতিষ্ঠিত হয়?
◻ অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য কোন্ স্বর্গীয় সুযোগগুলি অপেক্ষা করছে?
[Pictures on page 10]
প্রায় দুই হাজার বছর ধরে, যিহোবা তাদের বেছে এসেছেন যারা স্বর্গীয় রাজ্যে শাসন করবে