‘ঐকান্তিকী প্রতীক্ষায়’ অপেক্ষা করা
“সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে।”—রোমীয় ৮:১৯.
১. আজকের দিনের খ্রীষ্টান এবং প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের পরিস্থিতি কিভাবে একইরকম?
আজকে সত্য খ্রীষ্টানদের পরিস্থিতি প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মত একইরকম। মশীহের আবির্ভাব কখন হতে চলেছে তা বোঝার জন্য একটি ভবিষ্যদ্বাণী তখনকার যিহোবার দাসদের সাহায্য করেছিল। (দানিয়েল ৯:২৪-২৬) একই ভবিষ্যদ্বাণী যিরূশালেমের ধ্বংস সম্বন্ধে ভাববাণী করেছিল কিন্তু সেখানে এমন কোন সূত্র ছিল না যাতে শহরটি কখন ধ্বংস হবে খ্রীষ্টানেরা তা আগে থেকে জানতে পারে। (দানিয়েল ৯:২৬খ, ২৭) একইভাবে, একটি ভবিষ্যদ্বাণী উনবিংশ শতাব্দীর আন্তরিক বাইবেল ছাত্রদেরকে দূরদর্শীভাবে প্রতীক্ষা করতে সাহায্য করেছিল। দানিয়েল ৪:২৫ পদের “সাত কাল” এর সঙ্গে “পরজাতীদের সময়” যুক্ত করে, তারা আগেই বলেছিলেন যে খ্রীষ্ট ১৯১৪ সালে রাজ্যের ক্ষমতায় আসবেন। (লূক ২১:২৪, কিং জেমস্ ভারসন; যিহিষ্কেল ২১:২৫-২৭) যদিও দানিয়েলের পুস্তকে অনেক ভবিষ্যদ্বাণী রয়েছে, তবুও এগুলির কোনটিই ঠিক কখন শয়তানের সম্পূর্ণ বিধিব্যবস্থা ধ্বংস হবে তা গণনা করতে আধুনিক দিনের বাইবেল ছাত্রদেরকে কোন সূত্র দেয় না। (দানিয়েল ২:৩১-৪৪; ৮:২৩-২৫; ১১:৩৬, ৪৪, ৪৫) কিন্তু, তারা জানেন যে এটি শীঘ্রই ঘটবে কারণ আমরা ‘শেষকালে’ বাস করছি।—দানিয়েল ১২:৪.a
খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময় সতর্কতা
২, ৩. (ক) কোন্ মুখ্য প্রমাণ প্রতিপাদন করে যে আমরা রাজকীয় ক্ষমতায় খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময় বাস করছি? (খ) কী দেখায় যে খ্রীষ্টানদের যীশু খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময়ে সতর্ক থাকতে হয়েছিল?
২ এটি সত্য যে, ১৯১৪ সালে খ্রীষ্ট রাজ্যের ক্ষমতায় আসার আগে, একটি ভবিষ্যদ্বাণী খ্রীষ্টানদের এক প্রতীক্ষায় রেখেছিল। কিন্তু খ্রীষ্ট তাঁর উপস্থিতি এবং বিধিব্যবস্থার শেষ সম্বন্ধে যে “চিহ্ন” দিয়েছিলেন তা ঘটনাবলিকে চিত্রিত করেছিল। আর এর অধিকাংশই তাঁর উপস্থিতি শুরু হওয়ার পর দেখা যাবে। এইধরনের ঘটনাবলি—যুদ্ধ, খাদ্যাভাব, ভূমিকম্প, মহামারী, অধার্মিকতার বৃদ্ধি, খ্রীষ্টানদের তাড়না এবং জগদ্ব্যাপী রাজ্যের সুমসাচার প্রচার—মুখ্য প্রমাণ হিসাবে কাজ করে যে আমরা এখন রাজকীয় ক্ষমতায় খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময়ে বাস করছি।—মথি ২৪:৩-১৪; লূক ২১:১০, ১১.
৩ অধিকন্তু, তাঁর শিষ্যদের প্রতি দেওয়া যীশুর বিদায়ী পরামর্শের সারমর্ম ছিল: “সাবধান, তোমরা জাগিয়া থাকিও, . . . জাগিয়া থাকিও।” (মার্ক ১৩:৩৩, ৩৭; লূক ২১:৩৬) সতর্কতা সম্বন্ধে এই পরামর্শের প্রসঙ্গটি মনোযোগপূর্বক পড়লে দেখা যায় যে তাঁর উপস্থিতি শুরু হওয়ার চিহ্নটির প্রতি অত্যধিক সতর্ক থাকার বিষয়ে খ্রীষ্ট কেবল আলোচনাই করছিলেন না। পরিবর্তে, তিনি তাঁর অনুগত শিষ্যদের তাঁর উপস্থিতির সময়ে সতর্ক থাকতে আদেশ দিচ্ছিলেন। কিসের জন্য সত্য খ্রীষ্টানদের সতর্ক থাকতে হয়েছিল?
৪. যীশু যে চিহ্ন দিয়েছিলেন তা কোন্ উদ্দেশ্য সম্পাদন করবে?
৪ “এই সকল ঘটনা কখন্ হইবে [সেই ঘটনাবলি যা যিহূদী বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে গিয়েছিল]? আর আপনার আগমনের [“উপস্থিতির,” “NW”] এবং যুগান্তের চিহ্ন কি?” এই প্রশ্নটির উত্তরে যীশু তাঁর মহৎ ভবিষ্যদ্বাণীটি করেছিলেন। (মথি ২৪:৩) ভাববাণীকৃত চিহ্ন কেবল খ্রীষ্টের উপস্থিতিকেই নয়, সেইসঙ্গে বর্তমান দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষের দিকে নিয়ে যায় এমন ঘটনাবলিকেও শনাক্ত করবে।
৫. কিভাবে যীশু দেখিয়েছিলেন যে যদিও আধ্যাত্মিকভাবে উপস্থিত, তবুও তিনি “আসিবেন”?
৫ যীশু দেখিয়েছিলেন যে তাঁর “উপস্থিতির” (গ্রীক, পারৌসিয়া) সময় তিনি পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসবেন। এইধরনের ‘আসা’ (গ্রীক শব্দ আরখোমাই দ্বারা নির্দেশিত) সম্বন্ধে তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “তখন মনুষ্যপুত্ত্রের চিহ্ন আকাশে দেখা যাইবে, আর তখন পৃথিবীর সমুদয় গোষ্ঠী বিলাপ করিবে, এবং ‘মনুষ্যপুত্ত্রকে আকাশীয় মেঘরথে পরাক্রম ও মহা প্রতাপে আসিতে’ দেখিবে। . . . ডুমুরগাছ হইতে দৃষ্টান্ত শিখ; যখন তাহার শাখা কোমল হইয়া পত্র বাহির করে, তখন তোমরা জানিতে পার, গ্রীষ্মকাল সন্নিকট; সেইরূপ তোমরা ঐ সকল ঘটনা দেখিলেই জানিবে, তিনি [খ্রীষ্ট] সন্নিকট, এমন কি, দ্বারে উপস্থিত। . . . অতএব জাগিয়া থাক, কেননা তোমাদের প্রভু কোন্ দিন আসিবেন, তাহা তোমরা জান না। . . . তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।)—মথি ২৪:৩০, ৩২, ৩৩, ৪২, ৪৪.
কেন যীশু খ্রীষ্ট আসেন?
৬. “মহতী বাবিল” এর ধ্বংস কিভাবে ঘটবে?
৬ যীশু খ্রীষ্ট যদিও ১৯১৪ সাল থেকে রাজা হিসাবে উপস্থিত, তবুও তিনি যাদের মধ্যে দুষ্টতা খুঁজে পান তাদের বিচার করার আগে জাগতিক সংগঠন ও ব্যক্তিদের বিচার করবেন। (২ করিন্থীয় ৫:১০ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) শীঘ্রই যিহোবা মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্য, “মহতী বাবিল”-কে ধ্বংস করার জন্য রাজনৈতিক শাসকদের মনে প্রবৃত্তি দেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ১৭:৪, ৫, ১৬, ১৭) প্রেরিত পৌল নির্দিষ্টভাবে বলেছিলেন যে যীশু খ্রীষ্ট “সেই পাপ-পুরুষ”—খ্রীষ্টীয়জগতের ধর্মভ্রষ্ট পাদ্রিবর্গ যারা “মহতী বাবিল” এর এক উল্লেখযোগ্য অংশ তাদের ধ্বংস করবেন। পৌল লিখেছিলেন: “সেই অধর্ম্মী প্রকাশ পাইবে, যাহাকে প্রভু যীশু আপন মুখের নিশ্বাস দ্বারা সংহার করিবেন, ও আপন আগমনের প্রকাশ দ্বারা লোপ করিবেন।”—২ থিষলনীকীয় ২:৩, ৮.
৭. যখন মনুষ্যপুত্র তাঁর প্রতাপে আসবেন, তিনি কোন্ বিচার সম্পাদন করবেন?
৭ নিকট ভবিষ্যতে, বিভিন্ন জাতির লোকেরা তাঁর পৃথিবীস্থ ভাইদের প্রতি যেভাবে আচরণ করেছেন তার উপর ভিত্তি করে খ্রীষ্ট তাদের বিচার করবেন। আমরা পড়ি: “যখন মনুষ্যপুত্ত্র সমুদয় দূত সঙ্গে করিয়া আপন প্রতাপে আসিবেন, তখন তিনি নিজ প্রতাপের সিংহাসনে বসিবেন। আর সমুদয় জাতি তাঁহার সম্মুখে একত্রীকৃত হইবে; পরে তিনি তাহাদের এক জন হইতে অন্য জনকে পৃথক্ করিবেন, যেমন পালরক্ষক ছাগ হইতে মেষ পৃথক্ করে; আর তিনি মেষদিগকে আপনার দক্ষিণদিকে ও ছাগদিগকে বামদিকে রাখিবেন। . . . রাজা [মেষদিগকে] বলিবেন, আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, আমার এই ভ্রাতৃগণের—এই ক্ষুদ্রতমদিগের—মধ্যে এক জনের প্রতি যখন ইহা করিয়াছিলে, তখন আমারই প্রতি করিয়াছিলে। . . . পরে [ছাগেরা] অনন্ত দণ্ডে, কিন্তু ধার্ম্মিকেরা অনন্ত জীবনে প্রবেশ করিবে।”—মথি ২৫:৩১-৪৬.
৮. কিভাবে পৌল অধার্মিকদের উপর বিচার সম্পাদন করার জন্য খ্রীষ্টের আগমন সম্বন্ধে বর্ণনা করেন?
৮ মেষ ও ছাগের দৃষ্টান্তে যেভাবে দেখানো হয়েছে, সেভাবে যীশু সমস্ত অধার্মিকদের উপর চূড়ান্ত বিচার সম্পাদন করবেন। পৌল ক্লেশাপন্ন সহবিশ্বাসীদের আশ্বাস দিয়েছিলেন, “তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন। তাহারা প্রভুর মুখ হইতে ও তাঁহার শক্তির প্রতাপ হইতে অনন্তকালস্থায়ী বিনাশরূপ দণ্ড ভোগ করিবে, ইহা সেই দিন ঘটিবে, যে দিন তিনি আপন পবিত্রগণে গৌরবান্বিত হইবার, . . . জন্য আগমন করিবেন।” (২ থিষলনীকীয় ১:৭-১০) আমাদের সামনে এইসমস্ত রোমাঞ্চকর ঘটনাবলির কারণে, আমাদের কি বিশ্বাস অনুশীলন করা এবং খ্রীষ্টের আগমনের জন্য অত্যন্ত সতর্ক থাকা উচিত নয়?
খ্রীষ্টের প্রকাশের জন্য অধীর অপেক্ষা করা
৯, ১০. অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যারা এখনও পৃথিবীতে আছেন তারা কেন যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের জন্য অধীর অপেক্ষা করেন?
৯ “যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে . . . প্রকাশিত হইবেন” তখন তিনি কেবল দুষ্টদের ধ্বংসই করবেন না কিন্তু সেইসঙ্গে ধার্মিকদের পুরস্কার দেবেন। খ্রীষ্টের অভিষিক্ত ভাইদের অবশিষ্টাংশগণ যারা এখনও পৃথিবীতে আছেন তারা হয়ত খ্রীষ্টের প্রকাশের আগে আরও ক্লেশ পাবেন কিন্তু তারা তাদের চমৎকার স্বর্গীয় আশার জন্য আনন্দ করেন। অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের প্রতি প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “যে পরিমাণে খ্রীষ্টের দুঃখভোগের সহভাগী হইতেছ, সেই পরিমাণে আনন্দ কর, যেন তাঁহার প্রতাপের প্রকাশকালে উল্লাস সহকারে আনন্দ করিতে পার।”—১ পিতর ৪:১৩.
১০ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা বিশ্বস্ত থাকতে দৃঢ়সংকল্প যতক্ষণ পর্যন্ত না খ্রীষ্ট ‘তাঁহার নিকটে তাহাদের সংগৃহীত’ করেন যাতে তাদের বিশ্বাসের “পরীক্ষাসিদ্ধতা যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে প্রশংসা, গৌরব ও সমাদরজনক হইয়া প্রত্যক্ষ হয়।” (২ থিষলনীকীয় ২:১; ১ পিতর ১:৭) এইধরনের বিশ্বস্ত আত্মায়-জাত খ্রীষ্টানদের সম্বন্ধে, এটি বলা যেতে পারে: “খ্রীষ্টের সাক্ষ্য তোমাদের মধ্যে স্থিরীকৃত হইয়াছে। এজন্য তোমরা কোন বরে পিছাইয়া পড় নাই; আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের অপেক্ষা করিতেছ।”—১ করিন্থীয় ১:৬, ৭.
১১. যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশের জন্য অপেক্ষা করার সময়, অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কী করেন?
১১ অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশগণ পৌলের মতই অনুভব করেন, যিনি লিখেছিলেন: “আমার মীমাংসা এই, আমাদের প্রতি যে প্রতাপ প্রকাশিত হইবে, তাহার সঙ্গে এই বর্তমান কালের দুঃখভোগ তুলনার যোগ্য নয়।” (রোমীয় ৮:১৮) তাদের বিশ্বাসকে সমর্থন করার জন্য সময় গণনার প্রয়োজন নেই। তারা যিহোবার পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন ও তাদের সঙ্গী “অপর মেষ”-দের জন্য এক চমৎকার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। (যোহন ১০:১৬, NW) অভিষিক্ত ব্যক্তিরা জানেন যে এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষ নিকটে আর তারা পিতরের পরামর্শের প্রতি মনোযোগ দেন: “তোমরা আপন আপন মনের কটি বাঁধিয়া মিতাচারী হও, এবং যীশু খ্রীষ্টের প্রকাশকালে যে অনুগ্রহ তোমাদের নিকটে আনীত হইবে, তাহার অপেক্ষাতে সম্পূর্ণ প্রত্যাশা রাখ।”—১ পিতর ১:১৩.
“সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা”
১২, ১৩. কিভাবে মানুষ “অসারতার বশীকৃত হইল” এবং অপর মেষেরা কিসের আকাঙ্ক্ষা করেন?
১২ অপর মেষদেরও কি এমন কিছু আছে যার জন্য তাদের ঐকান্তিকী প্রতীক্ষায় জীবনযাপন করতে হয়? অবশ্যই তাদের আছে। স্বর্গীয় রাজ্যে আত্মায়-জাত “পুত্ত্র” এবং “খ্রীষ্টের সহদায়াদ” হিসাবে যিহোবা যাদের দত্তকপুত্ররূপে গ্রহণ করেছেন তাদের গৌরবময় আশা সম্বন্ধে বলার পর, পৌল বলেছিলেন: “সৃষ্টির ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে। কারণ সৃষ্টি অসারতার বশীকৃত হইল, স্ব-ইচ্ছায় যে হইল, তাহা নয়, কিন্তু বশীকর্ত্তার নিমিত্ত; এই প্রত্যাশায় হইল যে, সৃষ্টি নিজেও ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত হইয়া ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা পাইবে।”—রোমীয় ৮:১৪-২১; ২ তীমথিয় ২:১০-১২.
১৩ আদমের পাপের মাধ্যমে, তার সমস্ত বংশধর পাপ ও মৃত্যুর দাসত্বের অধীনে জন্মগ্রহণ করায় “অসারতার বশীকৃত হইল।” তারা নিজেদেরকে এইধরনের দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে অক্ষম। (গীতসংহিতা ৪৯:৭; রোমীয় ৫:১২, ২১) “ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত” হওয়ার জন্য অপর মেষেরা কতই না আকাঙ্ক্ষা করেন! কিন্তু তা হওয়ার আগে, যিহোবার সময় ও কাল অনুযায়ী নির্দিষ্ট কিছু বিষয় অবশ্যই ঘটবে।
১৪. “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপাপ্তির” সঙ্গে কী জড়িত এবং কিভাবে এটি মানবজাতির জন্য ‘ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্তি’ নিয়ে আসবে?
১৪ “ঈশ্বরের” অভিষিক্ত “পুত্ত্রগণের” অবশিষ্টাংশগণকে অবশ্যই প্রথমে ‘প্রকাশ’ পেতে হবে। এটি কী বোঝায়? ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে, এটি অপর মেষদের কাছে স্পষ্ট হবে যে অভিষিক্তগণ চূড়ান্তরূপে “মুদ্রাঙ্কিত” এবং খ্রীষ্টের সঙ্গে রাজত্ব করার জন্য মহিমান্বিত হয়েছেন। (প্রকাশিত বাক্য ৭:২-৪) ঈশ্বরের পুনরুত্থিত “পুত্ত্রগণ”-ও ‘প্রকাশিত’ হবেন যখন তারা শয়তানের দুষ্ট বিধিব্যবস্থাকে ধ্বংস করার ক্ষেত্রে খ্রীষ্টের সঙ্গে অংশ নেবেন। (প্রকাশিত বাক্য ২:২৬, ২৭; ১৯:১৪, ১৫) পরে, খ্রীষ্টের সহস্র বছরের রাজত্বের সময়ে, তারা মানব “সৃষ্টি”-কে যীশুর মুক্তিরমূল্যরূপ বলিদানের উপকারগুলি প্রদান করার জন্য যাজকীয় মাধ্যম হিসাবে আবারও ‘প্রকাশিত’ হবেন। এর ফলে মানবজাতি “ক্ষয়ের দাসত্ব হইতে মুক্ত” হবে এবং পরিশেষে “ঈশ্বরের সন্তানগণের প্রতাপের স্বাধীনতা” -য় প্রবেশ করবে। (রোমীয় ৮:২১; প্রকাশিত বাক্য ২০:৫; ২২:১, ২) এইধরনের চমৎকার প্রত্যাশাগুলি থাকায়, এটি কি কোন আশ্চর্যের বিষয় যে অপর মেষেরা “ঐকান্তিকী প্রতীক্ষা”-য় “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তির অপেক্ষা করিতেছে”?—রোমীয় ৮:১৯.
যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতার অর্থ পরিত্রাণ
১৫. ঘটনাবলি সম্বন্ধে যিহোবার নির্ধারিত সময়ের ক্ষেত্রে আমাদের কখনই কী ভুলে যাওয়া উচিত নয়?
১৫ যিহোবা হলেন মহান সময়রক্ষক। ঘটনাবলি সম্বন্ধে তাঁর নির্ধারিত সময় সঠিক প্রমাণিত হবে। বিষয়গুলি হয়ত সবসময় আমরা ব্যক্তিগত যেমন চাই তেমন হয় না। কিন্তু, আমরা নিশ্চিত বিশ্বাস রাখতে পারি যে ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হবে। (যিহোশূয় ২৩:১৪) তিনি হয়ত বিষয়গুলি, অনেকের প্রত্যাশার চেয়ে আরও বেশি সময় ধরে চলতে অনুমতি দেন। তথাপি আসুন আমরা সকলে তাঁর পথগুলি বুঝতে এবং তাঁর প্রজ্ঞার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে চেষ্টা করি। পৌল লিখেছিলেন: “আহা! ঈশ্বরের ধনাঢ্যতা ও প্রজ্ঞা ও জ্ঞান কেমন অগাধ! তাঁহার বিচার সকল কেমন বোধাতীত! তাঁহার পথ সকল কেমন অননুসন্ধেয়! কেননা প্রভুর মন কে জানিয়াছে? ‘তাঁহার মন্ত্রীই বা কে হইয়াছে?’”—রোমীয় ১১:৩৩, ৩৪.
১৬. যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতা থেকে কারা উপকার পান?
১৬ পিতর লিখেছিলেন: “প্রিয়তমেরা, তোমরা যখন এই সকলের [পুরাতন “আকাশমণ্ডলের” ও “পৃথিবীর” ধ্বংস এবং এগুলির জায়গায় ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত “নূতন আকাশমণ্ডলের” ও “নূতন পৃথিবীর” প্রতিষ্ঠার] অপেক্ষা করিতেছ, তখন যত্ন কর, যেন তাঁহার কাছে তোমাদিগকে নিষ্কলঙ্ক ও নির্দ্দোষ অবস্থায় শান্তিতে দেখিতে পাওয়া যায়! আর আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান কর।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) যিহোবার দীর্ঘসহিষ্ণুতার কারণে, আরও লক্ষ লক্ষ জন “ঈশ্বরের সেই দিনের” মধ্যে থেকে রক্ষা পাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন যা অপ্রত্যাশিতভাবে “চোরের ন্যায়” আসবে। (২ পিতর ৩:৯-১৫) তাঁর দীর্ঘসহিষ্ণুতার ফলে আমরাও প্রত্যেকে “সভয়ে ও সকম্পে আপন আপন পরিত্রাণ সম্পন্ন” করতে পারছি। (ফিলিপীয় ২:১২) যীশু বলেছিলেন যে আমাদের অবশ্যই “আপনাদের বিষয়ে সাবধান” এবং “জাগিয়া” থাকতে হবে যদি আমরা বিচারের জন্য তাঁর আগমনের সময় “মনুষ্যপুত্ত্রের সম্মুখে দাঁড়াইতে” অনুমোদনপ্রাপ্ত এবং সফল হতে চাই।—লূক ২১:৩৪-৩৬; মথি ২৫:৩১-৩৩.
ধৈর্য সহকারে অপেক্ষা করুন
১৭. প্রেরিত পৌলের কোন্ বাক্যগুলির প্রতি আমাদের মনোযোগ দেওয়া উচিত?
১৭ পৌল তার আধ্যাত্মিক ভাইদের “দৃশ্য বস্তু লক্ষ্য না করিয়া অদৃশ্য বস্তু লক্ষ্য” করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (২ করিন্থীয় ৪:১৬-১৮) তিনি চেয়েছিলেন যেন কোন কিছুই তাদের সামনে স্থাপিত স্বর্গীয় পুরস্কারের প্রতি তাদের দৃষ্টিকে অস্পষ্ট করে না দেয়। অভিষিক্ত খ্রীষ্টান কিংবা অপর মেষ যাই হই না কেন, আসুন আমরা আমাদের সামনে স্থাপিত চমৎকার আশাকে মনে রাখি এবং হাল ছেড়ে না দিই। আসুন আমরা ‘ধৈর্য্য সহকারে অপেক্ষায় থাকি’ এবং প্রমাণ করি যে “আমরা বিনাশের জন্য সরিয়া পড়িবার লোক নহি, বরং প্রাণের রক্ষার জন্য বিশ্বাসের লোক।”—রোমীয় ৮:২৫; ইব্রীয় ১০:৩৯.
১৮. কেন আমরা দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সময় ও কাল যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে পারি?
১৮ আমরা দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সময় ও কাল যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে পারি। তাঁর প্রতিজ্ঞাগুলির পরিপূর্ণতা তাঁর সময় তালিকা অনুযায়ী “বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:৩) একই সময়ে, তীমথিয়ের প্রতি পৌলের পরামর্শ আমাদের জন্য আরও অর্থ রাখে। তিনি বলেছিলেন: “আমি ঈশ্বরের সাক্ষাতে, এবং যিনি জীবিত ও মৃতগণের বিচার করিবেন, সেই খ্রীষ্ট যীশুর সাক্ষাতে, তাঁহার প্রকাশপ্রাপ্তি ও তাঁহার রাজ্যের দোহাই দিয়া, তোমাকে এই দৃঢ় আজ্ঞা দিতেছি; তুমি বাক্য প্রচার কর, সময়ে অসময়ে কার্য্যে অনুরক্ত হও, . . . সুসমাচার-প্রচারকের কার্য্য কর, তোমার পরিচর্য্যা সম্পন্ন কর।”—২ তীমথিয় ৪:১-৫.
১৯. যিহোবার লোকেদের জন্য এটি এখনও পর্যন্ত কোন্ সময় এবং কেন?
১৯ আমাদের নিজেদের এবং প্রতিবেশীদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পৌল লিখেছিলেন: “আপনার বিষয়ে ও তোমার শিক্ষার বিষয়ে সাবধান হও, এ সকলে স্থির থাক; কেননা তাহা করিলে তুমি আপনাকে ও যাহারা তোমার কথা শুনে, তাহাদিগকেও পরিত্রাণ করিবে।” (১ তীমথিয় ৪:১৬) এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার সময় অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত। আমাদের সামনে রোমাঞ্চকর ঘটনাবলির জন্য ঐকান্তিক প্রতীক্ষায় অপেক্ষা করার সময়, আসুন আমরা সর্বদা সতর্ক থাকি যে এটি যিহোবার নির্ধারিত সময় ও কাল যা তিনি তাঁর লোকেদের রাজ্যের সুসমাচার প্রচার করার জন্য ঠিক করেছেন। যতদিন তিনি চান ততদিন পর্যন্ত সেই কাজ সম্পন্ন করে যেতে হবে। যীশুর কথানুযায়ী, “তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪.
[পাদটীকাগুলো]
a ওয়াচ টাওয়ার বাইবেল অ্যান্ড ট্র্যাক্ট সোসাইটি দ্বারা প্রকাশিত জ্ঞান যা অনন্ত জীবনে পরিচালিত করে বইটির ১০ ও ১১ অধ্যায় দেখুন।
পুনরালোচনার মাধ্যমে
◻ সময় গণনা সম্বন্ধে, আমাদের পরিস্থিতি কিভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মত একইরকম?
◻ কেন খ্রীষ্টানদের এমনকি খ্রীষ্টের উপস্থিতির সময়েও অবশ্যই ‘জাগিয়া থাকিতে’ হবে?
◻ কেন মনুষ্য সৃষ্টি “ঈশ্বরের পুত্ত্রগণের প্রকাশপ্রাপ্তিকালের” জন্য ঐকান্তিক প্রতীক্ষা করে?
◻ কেন আমরা দৃঢ়বিশ্বাসের সঙ্গে সময় ও কাল যিহোবার হাতে ছেড়ে দিতে পারি?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্টের আগমনের প্রতীক্ষায় খ্রীষ্টানদের অবশ্যই সচেতন থাকতে হবে
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশগণ যিহোবার পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকেন, সময় গণনার উপর তাদের বিশ্বাস স্থাপন করে নয়