‘কার্য্যে ও সত্যে প্রেম করুন’
“আইস, আমরা বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে প্রেম করি।”—১ যোহন ৩:১৮.
১. সর্বোত্তম প্রেম কী এবং কীভাবে আপনি এটাকে বর্ণনা করবেন? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
যিহোবা হলেন প্রেমের উৎস। (১ যোহন ৪:৭) সর্বোত্তম প্রেম হল সেই প্রেম, যা সঠিক নীতির উপর ভিত্তি করে হয়। বাইবেলে এই ধরনের প্রেমকে গ্রিক শব্দ আগাপে-র মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। এই প্রেমের অন্তর্ভুক্ত হতে পারে, কোনো ব্যক্তির জন্য স্নেহ ও উষ্ণ অনুভূতি অনুভব করা। তবে, এটা কেবল অনুভূতির চেয়ে আরও বেশি কিছুকে বোঝায়। এটা অন্যদের মঙ্গলের জন্য করা বিভিন্ন নিঃস্বার্থ কাজের মাধ্যমে দেখানো হয়। এটা হল এমন প্রেম, যা আমাদের অন্যদের জন্য ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত করে। এই ধরনের প্রেম আমাদের জীবনে আনন্দ ও উদ্দেশ্য খুঁজে পেতে সাহায্য করে।
২, ৩. কীভাবে যিহোবা মানুষের জন্য তাঁর নিঃস্বার্থ প্রেম প্রদর্শন করেছেন?
২ যিহোবা এমনকী আদম ও হবাকে সৃষ্টি করার অনেক আগেই মানুষের প্রতি প্রেম প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি পৃথিবীকে এমনভাবে তৈরি করেছিলেন, যাতে এটার মধ্যে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু থাকে। শুধু তা-ই নয়, তিনি এটাকে এমন একটা গৃহ হিসেবে তৈরি করেছিলেন, যেখানে আমরা সত্যিই জীবন উপভোগ করতে পারি। যিহোবা এই সমস্ত কিছু নিজের জন্য করেননি। তিনি এগুলো আমাদের জন্য করেছিলেন। আর আমাদের গৃহ প্রস্তুত হয়ে যাওয়ার পর তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছিলেন এবং তাদের চিরকাল এক পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকার আশা প্রদান করেছিলেন।
৩ পরবর্তী সময়, যিহোবা যথাসম্ভব সর্বমহৎ উপায়ে মানুষের জন্য তাঁর নিঃস্বার্থ প্রেম প্রকাশ করেছিলেন। যদিও আদম ও হবা বিদ্রোহ করেছিলেন কিন্তু যিহোবা এই ব্যাপারে একেবারে নিশ্চিত ছিলেন যে, তাদের বংশধরদের মধ্যে কেউ কেউ তাঁকে ভালোবাসবে। আর এই কারণে, তিনি সেই ব্যক্তিদের রক্ষা করার জন্য তাঁর পুত্রের মাধ্যমে মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। (আদি. ৩:১৫; ১ যোহন ৪:১০) যিহোবা যে-মুহূর্তে মুক্তির মূল্যের বিষয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন, বিষয়টা এমন ছিল যেন সেই মুহূর্তেই বলিদান প্রদান করা হয়ে গিয়েছিল। এর ৪,০০০ বছর পর, যিহোবা তাঁর একজাত পুত্রকে মানুষের জন্য প্রদান করেছিলেন। (যোহন ৩:১৬) যিহোবার প্রেমের জন্য আমরা তাঁর কাছে কতই-না কৃতজ্ঞ!
৪. কীভাবে আমরা জানি যে, অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে নিঃস্বার্থ প্রেম দেখানো সম্ভব?
৪ এমনকী অসিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আমাদের পক্ষে কি নিঃস্বার্থ প্রেম দেখানো সম্ভব? হ্যাঁ, সম্ভব। যিহোবা আমাদের তাঁর প্রতিমূর্তিতে সৃষ্টি করেছেন অর্থাৎ আমাদের তাঁকে অনুকরণ করার ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। এটা ঠিক যে, আমাদের পক্ষে সবসময় নিঃস্বার্থ প্রেম দেখানো সহজ নয় কিন্তু এটা দেখানো সম্ভব। হেবল যখন তার কাছে থাকা সর্বোত্তম বিষয়টা নিঃস্বার্থভাবে উৎসর্গ করেছিলেন, তখন তিনি ঈশ্বরের প্রতি প্রেম দেখিয়েছিলেন। (আদি. ৪:৩, ৪) নোহ যখন অনেক বছর ধরে ঈশ্বরের বার্তা প্রচার করে গিয়েছিলেন আর তা এমনকী লোকেরা মনোযোগ না দেওয়া সত্ত্বেও, তখন তিনি নিঃস্বার্থ প্রেম দেখিয়েছিলেন। (২ পিতর ২:৫) আর অব্রাহাম তার প্রিয় পুত্র ইস্হাককে উৎসর্গ করার জন্য ইচ্ছুক হওয়ার মাধ্যমে দেখিয়েছিলেন যে, অন্য যেকোনো কিছুর চেয়ে ঈশ্বরের প্রতি তার প্রেম আরও দৃঢ়। (যাকোব ২:২১) সেই বিশ্বস্ত পুরুষদের মতো আমরাও এমনকী সেই সময়গুলোতে প্রেম দেখাতে চাই, যখন তা দেখানো সহজ হয় না।
প্রকৃত প্রেম কী?
৫. কোন কোন উপায়ে আমরা প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারি?
৫ বাইবেল আমাদের বলে, আমরা “বাক্যে কিম্বা জিহ্বাতে নয়, কিন্তু কার্য্যে ও সত্যে” প্রকৃত প্রেম দেখাই। (১ যোহন ৩:১৮) এর মানে কি এই যে, আমরা কথার মাধ্যমে প্রেম প্রকাশ করতে পারি না? না, ঠিক তা নয়। (১ থিষল. ৪:১৮) এর অর্থ হল, “আমি আপনাকে ভালোবাসি” কেবল এতটুকু বলাই সবসময় যথেষ্ট নয়। আমাদের দেখাতে হবে, আমরা সত্যিই সেই ব্যক্তিকে ভালোবাসি। উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের ভাই-বোনদের কাছে যদি যথেষ্ট খাবার অথবা পোশাক না থাকে, তা হলে তাদের কেবল সদয় কথার চেয়ে আরও বেশি কিছুর প্রয়োজন হবে। (যাকোব ২:১৫, ১৬) একইভাবে, আমরা যেহেতু যিহোবা ও আমাদের প্রতিবেশীকে ভালোবাসি, তাই আমরা কেবল আমাদের সঙ্গে প্রচার করার জন্য আরও বেশি লোক চেয়ে প্রার্থনাই করি না কিন্তু সেইসঙ্গে নিজেরাও প্রচার কাজে কঠোর পরিশ্রম করি।—মথি ৯:৩৮.
৬, ৭. (ক) ‘অকপট প্রেম’ কী? (খ) নকল প্রেমের কিছু উদাহরণ কী?
৬ প্রেরিত যোহন বলেছিলেন, আমাদের অবশ্যই “কার্য্যে ও সত্যে” প্রেম করতে হবে। তাই, আমাদের প্রেম যেন অবশ্যই “নিষ্কপট” বা “অকপট” হয়। (রোমীয় ১২:৯; ২ করি. ৬:৬) কখনো কখনো একজন ব্যক্তি হয়তো প্রেম দেখানোর ভান করতে পারেন। কিন্তু, তার সেই প্রেম কি প্রকৃত এবং আন্তরিক? এমনটা করার পিছনে তার উদ্দেশ্য কী? প্রেমের মধ্যে কপটতার কোনো স্থান নেই। আর নকল প্রেমের কোনো মূল্য নেই।
৭ আসুন, আমরা নকল প্রেমের কিছু উদাহরণ নিয়ে বিবেচনা করি। শয়তান যখন এদন উদ্যানে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল, তখন সে তার কথার মাধ্যমে হবাকে এমনটা মনে করতে পরিচালিত করেছিল যে, সে তার জন্য সর্বোত্তমটা চায়। কিন্তু, শয়তানের কাজ দেখিয়েছিল, সে আসলে তেমনটা চায়নি। (আদি. ৩:৪, ৫) দায়ূদ যখন রাজা ছিলেন, তখন অহীথোফল নামে তার এক বন্ধু ছিল। কিন্তু, অহীথোফল সুবিধালাভের জন্য দায়ূদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন। তার কাজ দেখিয়েছিল, তিনি একজন প্রকৃত বন্ধু ছিলেন না। (২ শমূ. ১৫:৩১) বর্তমানে, ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি ও অন্যেরা, যারা মণ্ডলীতে দলাদলি বা বিভেদ সৃষ্টি করে, তারা “মধুর বাক্য ও স্তুতিবাদ [“খোশামোদের কথা,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]” ব্যবহার করে। (রোমীয় ১৬:১৭, ১৮) তারা হয়তো অন্যদের জন্য চিন্তা করার ভান করতে পারে কিন্তু তারা আসলে স্বার্থপর।
৮. আমাদের নিজেদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত?
৮ নকল প্রেম হল বিশেষভাবে লজ্জার এক বিষয় কারণ এটা লোকেদের প্রতারিত করার জন্য ব্যবহার করা হয়। আমরা হয়তো লোকেদের বোকা বানাতে পারি কিন্তু যিহোবাকে নয়। যিশু বলেছিলেন, যে-সমস্ত ব্যক্তি কপটীদের মতো আচরণ করে, তাদের “দ্বিখণ্ড করিয়া [“কঠোর,” ইজি-টু-রিড ভারশন]” শাস্তি দেওয়া হবে। (মথি ২৪:৫১) যিহোবার দাস হিসেবে আমরা কখনোই কপটী হতে চাই না। তাই, আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করা উচিত, ‘আমি কি প্রকৃত প্রেম দেখাই, না কি আমি স্বার্থপর ও অসৎ?’ আসুন, আমরা “অকপট” প্রেম দেখানোর ন-টা উপায় নিয়ে বিবেচনা করি।
যেভাবে আমরা “কার্য্যে ও সত্যে” প্রেম করতে পারি
৯. প্রকৃত প্রেম আমাদের কী করার জন্য অনুপ্রাণিত করবে?
৯ এমনকী কেউ যদি আপনার কাজ না-ও লক্ষ করে, তা সত্ত্বেও আনন্দের সঙ্গে সেবা করুন। অন্যদের জন্য আমাদের এমন প্রেমময় ও সদয় কাজ করতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত, যেগুলো সম্বন্ধে তারা ছাড়া আর কেউ কখনো জানতে পারবে না। (পড়ুন, মথি ৬:১-৪.) অননিয় ও সাফীরার এক ভিন্ন মনোভাব ছিল। একবার তারা যখন দান দিয়েছিলেন, তখন তারা তাদের দানের বিষয়ে অন্যদের জানাতে চেয়েছিলেন। তারা কতটা দান দিচ্ছেন, সেই বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন আর তাদের এই কপটতাপূর্ণ কাজের জন্য শাস্তি দেওয়া হয়েছিল। (প্রেরিত ৫:১-১০) কিন্তু, আমরা যদি আমাদের ভাইদের প্রকৃতই ভালোবাসি, তা হলে সেটা আমাদের অন্যদের জানানোর চেষ্টা না করেই আনন্দের সঙ্গে তাদের জন্য সদয় কাজ করতে অনুপ্রাণিত করবে। আমরা সেই ভাইদের কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করতে পারি, যারা আধ্যাত্মিক খাদ্য প্রস্তুত করার জন্য পরিচালকগোষ্ঠীকে সাহায্য করেন। তারা নিজেদের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করান না এবং তারা লোকেদের জানান না যে, তারা কোন কোন প্রকল্পে কাজ করেছেন।
১০. কীভাবে আমরা অন্যদের সমাদর করতে পারি?
১০ অন্যদের সমাদর করুন। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১০.) যিশু তাঁর প্রেরিতদের পা ধুয়ে দেওয়ার মাধ্যমে তাদের সমাদর করেছিলেন। (যোহন ১৩:৩-৫, ১২-১৫) যিশুর মতো নম্র হওয়ার এবং অন্যদের সেবা করার জন্য আমাদের কঠোর প্রচেষ্টা করতে হবে। প্রেরিতরা সেই ঘটনার অনেক পরে পবিত্র আত্মা লাভ না করা পর্যন্ত সম্পূর্ণভাবে বুঝতে পারেননি যে, যিশুর কাজের অর্থ কী ছিল। (যোহন ১৩:৭) আমরা আমাদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, ধনসম্পদ অথবা বিশেষ বিশেষ কার্যভারের কারণে অন্যদের চেয়ে নিজেদের আরও উত্তম বলে মনে না করার মাধ্যমে অন্যদের সমাদর করি। (রোমীয় ১২:৩) অন্যেরা প্রশংসা লাভ করলে আমরা ঈর্ষা করি না বরং আমরা তাদের সঙ্গে আনন্দ করি আর এটা এমনকী সেইসময়ও, যখন আমাদের মনে হয় যে, আমাদেরও কিছুটা প্রশংসা লাভ করা উচিত ছিল।
১১. কেন আমাদের আন্তরিকভাবে প্রশংসা করতে হবে?
১১ আন্তরিকভাবে প্রশংসা করুন। অন্যদের প্রশংসা করার জন্য সুযোগ খুঁজুন। আমরা সবাই জানি, প্রশংসা একে অন্যকে “গাঁথিয়া তুলিবার জন্য” উত্তম। (ইফি. ৪:২৯) কিন্তু, আমাদের এই বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে যেন আমরা অন্যদের তোষামোদ না করে বরং আন্তরিকভাবে প্রশংসা করি। আমাদের এমন কিছু বলা উচিত নয়, যেটা আমরা বোঝাতে চাই না অথবা সেইসময়ও পরামর্শ দেওয়ার বিষয়ে আমাদের দায়িত্ব এড়িয়ে চলা উচিত নয়, যখন তা দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দেয়। (হিতো. ২৯:৫) আমরা যদি তাদের সামনে তাদের প্রশংসা করি এবং পরবর্তী সময় তাদের অবর্তমানে তাদের সমালোচনা করি, তা হলে আমরা আসলে কপটী হয়ে যাব। প্রেরিত পৌল প্রকৃত প্রেম দেখিয়েছিলেন। করিন্থের খ্রিস্টানদের কাছে চিঠি লেখার সময় তিনি তাদের কাজের জন্য অনেক প্রশংসা করেছিলেন। (১ করি. ১১:১, ২) কিন্তু, তাদের যখন পরামর্শ দেওয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল, তখন তিনি সদয় ও স্পষ্টভাবে তাদের কাছে পরামর্শের কারণ সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করেছিলেন।—১ করি. ১১:২০-২২.
১২. কীভাবে আমরা অতিথিসেবা করার সময় প্রকৃত প্রেম দেখাতে পারি?
১২ অতিথিসেবা করুন। যিহোবা আমাদের আদেশ দিয়েছেন যেন আমরা আমাদের ভাই-বোনদের প্রতি উদারতা দেখাই। (পড়ুন, ১ যোহন ৩:১৭.) কিন্তু, আমাদের অতিথিসেবা করার পিছনে সঠিক মনোভাব থাকা উচিত। আমরা নিজেদের জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘আমি কি আমার বাড়িতে কেবল সেই ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাই, যারা আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অথবা যাদের আমি মণ্ডলীতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলে মনে করি? আমি কি কেবল সেই ব্যক্তিদের আমন্ত্রণ জানাই, যারা এর বিনিময়ে আমার জন্য কিছু করবে বলে আমি মনে করি? না কি আমি সেই ভাই-বোনদের প্রতি উদারতা দেখাই, যাদের আমি খুব-একটা ভালোভাবে জানি না অথবা যারা এর বিনিময়ে আমার জন্য কিছু করতে পারবে না?’ (লূক ১৪:১২-১৪) এই পরিস্থিতিগুলো কল্পনা করুন: মূর্খতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণে একজন ভাইয়ের যদি সাহায্যের প্রয়োজন হয়, তা হলে আমরা কী করব? অথবা আমাদের বাড়িতে আমন্ত্রিত কোনো ব্যক্তি যদি আমাদের ধন্যবাদ না জানিয়ে থাকেন, তা হলে আমরা কী করব? যিহোবা আমাদের বলেন: “বিনা বচসাতে পরস্পর অতিথি সেবা কর।” (১ পিতর ৪:৯) আমরা যখন সঠিক মনোভাব নিয়ে দান করব, তখন আমরা ধন্য বা সুখী হব।—প্রেরিত ২০:৩৫.
১৩. (ক) কখন আমাদের হয়তো আরও বেশি ধৈর্য দেখানোর প্রয়োজন হয়? (খ) দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আমরা কী করতে পারি?
১৩ দুর্বল ব্যক্তিদের সাহায্য করুন। বাইবেল আমাদের ‘দুর্ব্বলদিগের সাহায্য করিবার, সকলের প্রতি দীর্ঘসহিষ্ণু হইবার’ আদেশ দেয়। এই আদেশ পরীক্ষা করতে পারে যে, আমাদের প্রেম প্রকৃত কি না। (১ থিষল. ৫:১৪) অনেক ভাই-বোন, যারা একসময় বিশ্বাসে দুর্বল ছিল, তারা পরবর্তী সময় বিশ্বাসে বলবান হয়েছে। কিন্তু, অন্যদের ক্রমাগতভাবে আমাদের ধৈর্যপূর্ণ ও প্রেমময় সাহায্যের প্রয়োজন হয়। কীভাবে আমরা তাদের সাহায্য করতে পারি? আমরা বাইবেল ব্যবহার করে তাদের উৎসাহিত করতে পারি, আমাদের সঙ্গে প্রচার করার জন্য তাদের আমন্ত্রণ জানাতে পারি অথবা কেবল মন দিয়ে তাদের কথা শুনতে পারি। এ ছাড়া, আমাদের ভাই-বোনদের ‘বলবান’ অথবা ‘দুর্বল’ হিসেবে শ্রেণিভুক্ত করা উচিত নয়। এর পরিবর্তে, আমাদের উপলব্ধি করতে হবে যে, আমরা সবাই কোনো-না-কোনো দিক থেকে বলবান ও দুর্বল। এমনকী প্রেরিত পৌলও স্বীকার করেছিলেন যে, তার দুর্বলতা রয়েছে। (২ করি. ১২:৯, ১০) আমাদের সবারই একে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য ও উৎসাহের প্রয়োজন রয়েছে।
১৪. ভাই-বোনদের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য আমাদের কী করতে ইচ্ছুক হওয়া উচিত?
১৪ শান্তি স্থাপন করুন। ভাই-বোনদের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকী আমাদের যদি মনে হয় যে, আমাদের ভুলভাবে বোঝা হয়েছে অথবা আমাদের সঙ্গে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে, তা সত্ত্বেও আমাদের শান্তি স্থাপন করার জন্য যথাসাধ্য করা উচিত। (পড়ুন, রোমীয় ১২:১৭, ১৮.) আমরা যদি কাউকে দুঃখ দিয়ে থাকি, তা হলে আমাদের ক্ষমা চাইতে হবে। তবে, আমাদের আন্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়া উচিত। উদাহরণ স্বরূপ, “আপনি যে এইরকম অনুভব করছেন, তার জন্য আমি দুঃখিত” এমনটা বলার পরিবর্তে, আমাদের নিজেদের ভুল স্বীকার করে এইরমকটা বলা আরও ভালো হবে যে, “আমি আমার কথার মাধ্যমে আপনাকে কষ্ট দিয়েছি বলে দুঃখিত।” বিশেষভাবে বিয়েতে শান্তি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একজন স্বামী ও স্ত্রী যদি লোকেদের সামনে এমন দেখান যেন তারা একে অন্যকে ভালোবাসেন কিন্তু অন্যদের অবর্তমানে একে অন্যের সঙ্গে কথা বলতে প্রত্যাখ্যান করেন, একে অন্যকে আঘাতদায়ক কথা বলেন অথবা এমনকী দৌরাত্ম্যপূর্ণ কাজ করেন, তা হলে সেটা অন্যায় হবে।
১৫. কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, আমরা কোনো ব্যক্তিকে প্রকৃতরূপে ক্ষমা করেছি?
১৫ মন থেকে ক্ষমা করুন। কেউ যদি আমাদের অসন্তুষ্ট করেন, তা হলে আমরা তাকে ক্ষমা করি এবং আমরা তার বিরুদ্ধে আর বিদ্বেষ পুষে রাখি না। আমাদের এমনকী সেইসময়েও তা করা উচিত, যখন সেই ব্যক্তি বুঝতেও পারেন না যে, তিনি আমাদের অসন্তুষ্ট করেছেন। আমরা ‘প্রেমে পরস্পর ক্ষমাশীল হইবার [‘ভালবাসার মনোভাব নিয়ে একে অন্যকে সহ্য করার,’ বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন]’ এবং ‘শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্ হইবার’ মাধ্যমে মন থেকে ক্ষমা করি। (ইফি. ৪:২, ৩) প্রকৃতরূপে ক্ষমা করার জন্য আমাদের অবশ্যই সেই ব্যক্তির করা কাজ নিয়ে চিন্তা করা বন্ধ করতে হবে। প্রেম “অপকার গণনা করে না।” (১ করি. ১৩:৪, ৫) আসলে, আমরা যদি অসন্তোষ পুষে রাখি, তা হলে আমরা ভাই-বোনদের ও যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারি। (মথি ৬:১৪, ১৫) আমাদের অসন্তুষ্ট করেছেন, এমন একজন ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করার মাধ্যমে আমরা প্রমাণ করি যে, আমরা আন্তরিকভাবে তাকে ক্ষমা করেছি।—লূক ৬:২৭, ২৮.
১৬. যিহোবার সেবায় বিশেষ বিশেষ কার্যভার লাভ করলে, সেগুলোকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
১৬ ব্যক্তিগত সুযোগসুবিধা ত্যাগ করুন। যিহোবার সেবায় আমরা যখন কোনো বিশেষ কার্যভার লাভ করি, তখন ‘স্বার্থ চেষ্টা না করিয়া, বরং পরের মঙ্গল চেষ্টা করিবার’ মাধ্যমে আমরা দেখাতে পারি যে, আমাদের প্রেম হল প্রকৃত। (১ করি. ১০:২৪) উদাহরণ স্বরূপ, আমাদের সম্মেলনগুলোতে পরিচারকরা অন্যদের চেয়ে আগে সম্মেলন হলে প্রবেশ করে এবং তারা তাদের নিজেদের ও তাদের পরিবারের জন্য সবচেয়ে ভালো আসনগুলো সংরক্ষণ করার জন্য প্রলুব্ধ হতে পারে। কিন্তু এর পরিবর্তে, তাদের মধ্যে অনেকে হলের মধ্যে তাদের কার্যভারের নির্ধারিত জায়গায় এমন আসনগুলো বেছে নেয়, যেগুলো তুলনামূলকভাবে ততটা ভালো নয়। এমনটা করার মাধ্যমে তারা নিঃস্বার্থ প্রেম দেখায়। আপনি কীভাবে তাদের এই উত্তম উদাহরণ অনুকরণ করতে পারেন?
১৭. কোনো খ্রিস্টান যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে প্রকৃত প্রেম তাকে কী করতে অনুপ্রাণিত করবে?
১৭ গোপনে করা পাপ স্বীকার করুন এবং তা করা বন্ধ করুন। কোনো কোনো খ্রিস্টান গুরুতর পাপ করার পর তা গোপন করে রাখার চেষ্টা করেছে। হতে পারে তারা লজ্জা বোধ করে অথবা তারা অন্যদের হতাশ করতে চায় না। (হিতো. ২৮:১৩) কিন্তু, পাপ লুকিয়ে রাখা হল প্রেমের বিপরীত এক কাজ কারণ এটা সেই পাপী ব্যক্তির আর সেইসঙ্গে অন্যদেরও ক্ষতি করে। কীভাবে? যিহোবা হয়তো মণ্ডলীর উপর পবিত্র আত্মা সেচন করা বন্ধ করে দিতে পারেন এবং এতে মণ্ডলীর শান্তি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। (ইফি. ৪:৩০) তাই, একজন খ্রিস্টান যদি গুরুতর পাপ করেন, তা হলে প্রকৃত প্রেম তাকে প্রাচীনদের সঙ্গে কথা বলতে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য চাইতে অনুপ্রাণিত করবে।—যাকোব ৫:১৪, ১৫.
১৮. প্রকৃত প্রেম কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
১৮ প্রেমই হল সর্বশ্রেষ্ঠ গুণ। (১ করি. ১৩:১৩) এটা লোকেদের দেখতে সাহায্য করে যে, কারা যিশুর প্রকৃত অনুসারী ও সেইসঙ্গে কারা প্রেমের উৎস যিহোবার প্রকৃত অনুকারী। (ইফি. ৫:১, ২) পৌল বলেছিলেন যে, তার মধ্যে যদি প্রেম না থাকে, তা হলে তিনি কিছুই নন বা তার কোনো মূল্য নেই। (১ করি. ১৩:২) আমরা প্রত্যেকেই যেন কেবল “বাক্যে” নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “কার্য্যে ও সত্যে” প্রেম দেখিয়ে চলি।