তারা যিহোবার ইচ্ছা পালন করেছিলেন
এক বিচক্ষণ নারী বিপর্যয়কে সরিয়ে নেন
এক বুদ্ধিমতী নারী এক মূর্খ ব্যক্তিকে বিয়ে করেছিলেন—তাই ঘটেছিল অবীগল ও নাবলের ক্ষেত্রে। অবীগল ছিলেন “সুবুদ্ধি ও সুবদনা।” বিপরীতে, নাবল “কঠিন ও দুর্বৃত্ত” ছিলেন। (১ শমূয়েল ২৫:৩) এই বেমানান দম্পতিকে কেন্দ্র করে যে নাটকীয় ঘটনাটি প্রকাশ পেয়েছিল তা বাইবেল ইতিহাসে তাদের নামকে অবিচ্ছেদ্যভাবে মুদ্রিত করেছিল। কিভাবে আসুন আমরা তা দেখি।
অনুগ্রহ যা নিশ্চিত হিসাবে ধরে নেওয়া হয়েছিল
সময়টি ছিল সা.কা.পূ. একাদশ শতাব্দী। যখন দায়ূদ ইস্রায়েলের ভাবী রাজা হিসাবে অভিষিক্ত হয়েছিলেন কিন্তু শাসন করার পরিবর্তে তিনি পলায়ন করছিলেন। শাসনরত রাজা শৌল, তাকে হত্যা করার সংকল্প করেছিলেন। ফলে, দায়ূদ পলাতক হতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি এবং তার ৬০০ সাথীরা পরিশেষে পারণের প্রান্তরে, যিহূদার দক্ষিণে ও সীনয় প্রান্তরের অভিমুখে আশ্রয় খুঁজে পেয়েছিলেন।—১ শমূয়েল ২৩:১৩; ২৫:১.
সেখানে থাকাকালীন, নাবল নামে এক ব্যক্তির অধীনে কর্মরত মেষপালকদের সাথে তাদের সাক্ষাৎ হয়। কালেবের বংশধর এই ধনী ব্যক্তিটির ৩,০০০ মেষ ও ১,০০০ ছাগল ছিল এবং তিনি কর্ম্মিলে তার মেষের লোম ছাঁটাই করতেন, হিব্রোণের দক্ষিণে একটি নগরে এবং সম্ভবত পারণ থেকে মাত্র ৪০ কিলোমিটার দূরে।a দায়ূদ ও তার লোকেরা নাবলের মেষপালকদের সাহায্য করত পালগুলিকে চোরের হাত থেকে রক্ষা করতে, যারা প্রান্তরে ঘুরে বেড়াত।—১ শমূয়েল ২৫:১৪-১৬.
ইত্যবসরে, কর্ম্মিলে মেষলোম ছাঁটাই করা শুরু হয়ে গিয়েছিল। এটি ছিল উৎসবের সময়, কৃষকদের শস্য কাটার সময়ের মত। এছাড়া এটি মুক্তহস্তে দান করারও এক সময় ছিল, তখন যারা তাদের মেষ কর্তাদের জন্য কাজ করত তাদের পুরস্কার দেওয়া হত। অতএব দায়ূদ যখন নাবলের কাছে তার মেষপালের জন্য কাজ করার বিনিময়ে খাদ্যের প্রত্যাশায় দশজন লোককে কর্ম্মিল নগরে পাঠান, তখন তিনি কোন অসঙ্গত কাজ করেননি।—১ শমূয়েল ২৫:৪-৯.
নাবলের প্রতিক্রিয়ার মধ্যে উদারতার লেশমাত্র ছিল না। “দায়ূদ কে?” তিনি বিদ্রূপ করে বলেছিলেন। তারপর, পরোক্ষভাবে দায়ূদ ও তার লোকেদের শুধুমাত্র পলাতক দাস হিসাবে গণ্য করে তিনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “আমি কি আপনার রুটী, জল ও আপন মেষ-লোমচ্ছেদকদের জন্য সে সকল পশু মারিয়াছি, তাহাদের মাংস লইয়া অজ্ঞাত কোথাকার লোকদিগকে দিব?” দায়ূদ যখন তা শুনতে পেলেন, তখন তিনি তার লোকেদের বলেন: “তোমরা প্রত্যেক জন খড়্গ বাঁধ।” প্রায় ৪০০ জন লোক যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হল।—১ শমূয়েল ২৫:১০-১৩.
অবীগলের বিচক্ষণতা
নাবলের কটু বাক্যগুলি তার স্ত্রী, অবীগলের কর্ণগোচর হয়েছিল। সম্ভবত এটি প্রথম ঘটনা নয় যখন তাকে নাবলের হয়ে শান্তিস্থাপনের জন্য হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। যাইহোক, অবীগল তৎক্ষণাৎ কাজ করেছিলেন। নাবলকে না বলে, তিনি বিভিন্ন বস্তু একত্রিত করেছিলেন—যার অন্তর্ভুক্ত ছিল পাঁচটি মেষ এবং প্রচুর পরিমাণে খাদ্য—তারপর প্রান্তরে দায়ূদের সাথে সাক্ষাৎ করতে যান।—১ শমূয়েল ২৫:১৮-২০.
যখন অবীগল দায়ূদকে দেখতে পান তিনি তৎক্ষণাৎ তার সম্মুখে নত হন। “আমার প্রভু সেই পাষণ্ডকে অর্থাৎ নাবলকে গণনার মধ্যে ধরিবেন না,” তিনি তার কাছে বিনতি করেছিলেন। “আপনার দাসী এই যে উপহার প্রভুর নিমিত্ত আনিয়াছে, ইহা প্রভুর পশ্চাদ্গামী যুবকদিগকে প্রদান করিতে আজ্ঞা হউক।” তিনি আরও বলেন: “[নাবলের পরিস্থিতির বিষয়ে] আমার প্রভুর শোক বা হৃদয়ে বিঘ্ন জন্মিবে না।” এখানে “শোক” হিসাবে যে ইব্রীয় শব্দটি অনুবাদ করা হয়েছে তা অনুভূতির অস্বস্তিবোধের স্বীয় অন্তর্নিহিত প্রকাশ। সুতরাং অবীগল দায়ূদকে কোন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করার বিপক্ষে সতর্ক করেছিলেন, যে কারণে তাকে হয়ত পরবর্তীকালে দুঃখ করতে হবে।—১ শমূয়েল ২৫:২৩-৩১.
দায়ূদ অবীগলের কথা শুনেছিলেন। “ধন্য তোমার সুবিচার, এবং ধন্যা তুমি, কারণ অদ্য তুমি রক্তপাত ও স্বহস্তে প্রতিশোধ লইতে আমাকে নিবৃত্ত করিলে,” তিনি তাকে বলেছিলেন। “আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করিতে যদি তুমি শীঘ্র না আসিতে, তবে নাবলের সম্পর্কীয় পুরুষদের মধ্যে এক জনও প্রভাত পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিত না।”b—১ শমূয়েল ২৫:৩২-৩৪.
আমাদের জন্য শিক্ষাগুলি
বাইবেলের এই ঘটনাটি দেখায় যে একজন ধার্মিক নারীর ক্ষেত্রে প্রয়োজনে উপযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা কোনমতেই দোষের নয়। অবীগল তার স্বামী, নাবলের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কাজ করেছিলেন কিন্তু এইজন্য বাইবেল তাকে নিন্দা করেনি। বিপরীতে, তাকে এক বিচক্ষণ ও বুদ্ধিমতী নারী হিসাবে প্রশংসা করে। এই সংকটময় পরিস্থিতিতে উদ্যোগ গ্রহণ করার দ্বারা অবীগল অনেকের জীবন রক্ষা করেছিলেন।
সাধারণত একজন স্ত্রীকে যদিও এক ঈশ্বরীয় বশ্যতার মনোভাব প্রকাশ করতে হবে, কিন্তু সঠিক নীতি যখন বিপদগ্রস্ত হয় তখন যথার্থভাবেই স্বামীর সাথে সে ভিন্নমত প্রকাশ করতে পারে। অবশ্যই, তাকে ‘মৃদু ও প্রশান্ত আত্মা’ বজায় রাখতে আপ্রাণ চেষ্টা করতে হবে শুধুমাত্র বিদ্বেষ, অহংকার, কিংবা বিরোধিতার কারণে ইচ্ছামত কাজ করা উচিত নয়। (১ পিতর ৩:৪) কিন্তু, একজন ধার্মিক নারী এমন কিছু করতে নিজেকে বাধ্য বলে মনে করবে না, যা সে জানে যে তা হবে অত্যন্ত মূর্খতা অথবা বাইবেল নীতিগুলির লঙ্ঘন। অবীগলের ঘটনাটি, প্রকৃতই সেই সব ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে এক দৃঢ় যুক্তি যোগায়, যারা নিশ্চিতভাবে মনে করে যে বাইবেল নারীদের নিছক দাসী হিসাবে বর্ণনা করেছে।
এছাড়াও এই ঘটনাটি আমাদের আত্মসংযম সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। কোন কোন সময়, দায়ূদ এই গুণাবলি পূর্ণমাত্রায় প্রদর্শন করেছিলেন। উদাহরণস্বরূপ, প্রচুর সুযোগ থাকা সত্ত্বেও তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ রাজা শৌলকে হত্যা করতে অস্বীকার করেন, যদিও শৌলের মৃত্যু দায়ূদের জন্য শান্তি আনতে পারত। (১ শমূয়েল ২৪:২-৭) বিপরীতে, নাবল যখন তাকে অপমানের সাথে তাচ্ছিল্য করেন, দায়ূদ অপ্রস্তুত অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলেন এবং প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য শপথ নেন। খ্রীষ্টানদের জন্য এটি স্পষ্ট সতর্কবাণী যারা আপ্রাণ চেষ্টা করে “মন্দের পরিশোধে কাহারও মন্দ করিও না।” প্রতিটি অবস্থায়, তাদের পৌলের এই পরামর্শ মেনে চলা উচিত: “যদি সাধ্য হয়, তোমাদের যত দূর হাত থাকে, মনুষ্যমাত্রের সহিত শান্তিতে থাক। হে প্রিয়েরা, তোমরা আপনারা প্রতিশোধ লইও না, বরং ক্রোধের জন্য স্থান ছাড়িয়া দেও।”—রোমীয় ১২:১৭-১৯.
[পাদটীকাগুলো]
a পারণের প্রান্তরটি বের-শেবার দক্ষিণ সীমান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত বলে ধরা হয়। জমির এই অংশের অন্তর্ভুক্ত ছিল বিশাল পশুচারণ ভূমি।
b “এক জনও প্রভাত পর্য্যন্ত অবশিষ্ট থাকিত না” এই বাক্যাংশটি পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রচলিত একটি ইব্রীয় বাগ্ধারা ছিল, স্পষ্টত যেটি অবজ্ঞার এক অভিব্যক্তি।—১ রাজাবলি ১৪:১০ পদের সাথে তুলনা করুন।
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
অবীগল দায়ূদের জন্য উপহার নিয়ে আসেন