শয়তানের শাসন পদ্ধতি ব্যর্থ হবেই
“দুষ্ট লোকের মঙ্গল হইবে না।”—উপ. ৮:১৩.
১. কেন দুষ্টদের প্রতি আসন্ন বিচারের বিষয়টা সান্ত্বনাদায়ক সংবাদ?
আজ হোক বা কাল হোক, দুষ্টদের বিচার করা হবেই। তাদের কাজের জন্য তাদেরকে জবাবদিহি করতেই হবে। (হিতো. ৫:২২; উপ. ৮:১২, ১৩) এটা সান্ত্বনাদায়ক সংবাদ, বিশেষ করে সেই ব্যক্তিদের জন্য, যারা ধার্মিকতা ভালোবাসে এবং যারা দুষ্টদের হাতে অবিচার ও দুর্ব্যবহার ভোগ করেছে। দুষ্টদের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান যে-ব্যক্তির বিচার করা হবে, সে হল দুষ্টতার পিতা শয়তান দিয়াবল।—যোহন ৮:৪৪.
২. কেন এদনে উত্থাপিত বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল?
২ এদনে শয়তান আত্মগৌরবের অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত হয়ে যিহোবার শাসন পদ্ধতি প্রত্যাখ্যান করার জন্য মানুষদের প্ররোচিত করেছিল। ফল স্বরূপ, আমাদের প্রথম পিতামাতা শয়তানের সঙ্গে যিহোবার ন্যায্য কর্তৃত্বের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যোগ দিয়েছিল এবং তাঁর দৃষ্টিতে পাপী হয়ে উঠেছিল। (রোমীয় ৫:১২-১৪) অবশ্য, যিহোবা জানতেন যে, কীভাবে তাদের অসম্মানজনক ও বিদ্রোহী কাজ তাদের জন্য দুর্দশা নিয়ে আসবে। কিন্তু, সেই অবশ্যম্ভাবী পরিণতি সমস্ত বুদ্ধিমান প্রাণীর কাছে স্পষ্ট করার দরকার ছিল। তাই, বিচার্য বিষয়টা মীমাংসা করার এবং বিদ্রোহীরা যে পুরোপুরি ভুল, তা দৃঢ়প্রত্যয়ের সঙ্গে দেখানোর জন্য সময়ের প্রয়োজন ছিল।
৩. মানব সরকারগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান কী?
৩ যেহেতু মানুষ যিহোবার তত্ত্বাবধানকে প্রত্যাখ্যান করেছিল, তাই তাদেরকে নিজেদের সরকার গঠন করতে হয়েছিল। প্রেরিত পৌল, রোমের সহবিশ্বাসীদের কাছে লেখার সময় বলেছিলেন যে, তাদের “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” বশীভূত থাকতে হবে। পৌলের দিনে, ‘প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ’ ছিল মূলত সম্রাট নিরোর অধীনস্থ রোমীয় সরকার আর সেই সম্রাট সা.কা. ৫৪-৬৮ সাল পর্যন্ত শাসন করেছিলেন। পৌল বলেছিলেন যে, এই ধরনের প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ “ঈশ্বরনিযুক্ত।” (পড়ুন, রোমীয় ১৩:১, ২.) এর অর্থ কী? এর অর্থ কি এই যে, পৌল ঈশ্বরের শাসনের পরিবর্তে মানব শাসনকে সমর্থন করছিলেন? কখনোই না। এর পরিবর্তে, তিনি কেবল বলছিলেন যে, যতদিন পর্যন্ত যিহোবা মানব শাসন থাকতে দেন, ততদিন পর্যন্ত খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের দ্বারা অনুমোদিত ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানো এবং এই ধরনের শাসকদের গ্রহণ করে নেওয়া উচিত।
ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায় এমন এক পথ
৪. কেন মানব শাসন ব্যর্থ হবেই, তা ব্যাখ্যা করুন।
৪ তা সত্ত্বেও, শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত মানব শাসন ব্যর্থ হবেই। কেন? একটা কারণ হল, এটা ঐশিক জ্ঞান বা প্রজ্ঞার ওপর ভিত্তি করে নয়। একমাত্র যিহোবাই নিখুঁত প্রজ্ঞার অধিকারী। তাই, কোন বিষয়টা সফল শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করে, সেই সম্বন্ধে একমাত্র তিনিই নির্ভরযোগ্য পরিচালক। (যির. ৮:৯; রোমীয় ১৬:২৭) মানুষেরা, যারা প্রায়ই অনেক পরীক্ষানিরীক্ষা করার পর শেখে, তাদের বিপরীতে যিহোবা সবসময় সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায় সম্বন্ধে জানেন। তাঁর নির্দেশনা অনুসরণ করে না এমন যেকোনো সরকার ব্যবস্থা ব্যর্থ হবেই। শুধুমাত্র এই কারণেই—আর এর সঙ্গে যুক্ত দুষ্ট মনোভাবের কথা না হয় উল্লেখ না-ই করা হল—মানব শাসনের মাধ্যমে পরিচালনা করার বিষয়ে শয়তানের বিকল্প উপায় শুরু থেকেই ব্যর্থ হয়েছে।
৫, ৬. স্পষ্টতই কোন বিষয়টা শয়তানকে যিহোবার বিরুদ্ধে বিরোধিতা করতে প্ররোচিত করেছিল?
৫ একজন বিচারবুদ্ধিসম্পন্ন ব্যক্তি সাধারণত এমন কোনো প্রচেষ্টা শুরু করা থেকে বিরত থাকেন, যা ব্যর্থ হবেই। তিনি যদি একগুঁয়েভাবে তার প্রচেষ্টা চালিয়েই যান, তাহলে তিনি তার ভুল স্বীকার করতে বাধ্য হবেন। ইতিহাস এই বিষয়ে বহু বার প্রমাণ দিয়েছে যে, সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার বিরোধিতা করা বৃথা। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২১:৩০.) কিন্তু, শয়তান আত্মগৌরব ও গর্বের দ্বারা অন্ধ হয়ে যিহোবার বিরুদ্ধে গিয়েছিল। এভাবে দিয়াবল স্বেচ্ছায় এমন এক পথ বেছে নিয়েছিল, যেটার পরিণিত হতে পারে কেবল ধ্বংস।
৬ শয়তানের অহংকারী মনোভাব পরে একজন বাবিলীয় শাসক প্রতিফলিত করেছিলেন, যিনি দম্ভ করে এই কথাগুলো বলেছিলেন বলে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে: “আমি স্বর্গারোহণ করিব, ঈশ্বরের নক্ষত্রগণের ঊদ্ধের্ব আমার সিংহাসন উন্নত করিব; সমাগম-পর্ব্বতে, উত্তরদিকের প্রান্তে, উপবিষ্ট হইব; আমি মেঘরূপ উচ্চস্থলীর উপরে উঠিব, আমি পরাৎপরের তুল্য হইব।” (যিশা. ১৪:১৩-১৫) সেই শাসকের মূর্খতাপূর্ণ শপথ ব্যর্থ হয়েছিল আর বাবিলীয় রাজবংশের অপমানজনক সমাপ্তি ঘটেছিল। একইভাবে, শয়তান ও তার জগৎ শীঘ্র সম্পূর্ণরূপে পরাজিত হবে।
কেন অনুমতি দিয়েছেন?
৭, ৮. যিহোবা যে কিছু সময়ের জন্য দুষ্টতা থাকতে দিয়েছেন, তার কিছু উপকার কী?
৭ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারে যে, কেন যিহোবা শয়তানের পক্ষ নেওয়ার এবং ব্যর্থ হবেই এমন শাসন পদ্ধতি গ্রহণ করার এক বিকল্প পরিকল্পনা অনুসরণ করার ক্ষেত্রে মানুষকে বাধা দেননি। সর্বশক্তিমান ঈশ্বর হিসেবে তিনি নিশ্চিতভাবেই তা করতে পারতেন। (যাত্রা. ৬:৩) কিন্তু, তিনি তা করা থেকে বিরত ছিলেন। তাঁর প্রজ্ঞা দ্বারা তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মানুষের বিদ্রোহে হস্তক্ষেপ করা থেকে সাময়িকভাবে বিরত থাকা পরে দীর্ঘসময়ের জন্য সর্বোত্তম ফল নিয়ে আসবে। পরিশেষে, যিহোবা একজন ধার্মিক ও প্রেমময় শাসক হিসেবে সত্য বলে প্রমাণিত হবেন আর বিশ্বস্ত মানুষরা ঈশ্বরের সিদ্ধান্ত থেকে উপকার লাভ করবে।
৮ মানব পরিবার কী এক দুর্দশা থেকেই না রেহাই পেতে পারত, যদি তারা শয়তানের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করত এবং ঈশ্বরের শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার জন্য বিদ্রোহ করতে অসম্মত হতো! তা সত্ত্বেও, কিছু সময়ের জন্য মানুষকে নিজেদের শাসন করতে দেওয়ার বিষয়ে যিহোবার সিদ্ধান্তের বিভিন্ন উপকার রয়েছে। এটা সঠিক হৃদয়ের ব্যক্তিদের ওপর এই গভীর ছাপ ফেলেছে যে, ঈশ্বরের কথা শোনা ও তাঁর ওপর নির্ভর করা প্রজ্ঞার কাজ। শত শত বছর ধরে, মানুষ বিভিন্ন ধরনের সরকার পরীক্ষা করে দেখেছে কিন্তু সেগুলোর একটাও আদর্শ বলে প্রমাণিত হয়নি। এই বিষয়টা ঈশ্বরের উপাসকদেরকে যিহোবার শাসন পদ্ধতি যে সত্যিই সর্বোত্তম, সেই ব্যাপারে তাদের দৃঢ়প্রত্যয়কে শক্তিশালী করতে সাহায্য করেছে। এটা ঠিক যে, যিহোবা শয়তানের দুষ্ট শাসন থাকতে অনুমতি দিয়েছেন বলে তা মানবজাতির জন্য দুঃখকষ্ট নিয়ে এসেছে, যাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিরাও রয়েছে, যারা বিশ্বস্ততার সঙ্গে ঈশ্বরের উপাসনা করে। তবে, সাময়িকভাবে দুষ্টতা থাকতে দেওয়া এই বিশ্বস্ত উপাসকদের জন্য উপকারও নিয়ে এসেছে।
যে-বিদ্রোহ যিহোবার গৌরব নিয়ে এসেছে
৯, ১০. কীভাবে শয়তানের শাসন যিহোবার গৌরব নিয়ে এসেছে, তা ব্যাখ্যা করুন।
৯ মানুষদের শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হতে দেওয়া এবং নিজেদের শাসন করতে দেওয়া কোনোভাবেই যিহোবার শাসন পদ্ধতির সুনামহানি করেনি। বরং এর উলটোটাই ঘটেছে! ইতিহাস প্রমাণ দেয় যে, নিজেদেরকে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে মানুষের অক্ষমতা সম্বন্ধে অনুপ্রাণিত হয়ে বলা যিরমিয়ের উক্তি সঠিক। (পড়ুন, যিরমিয় ১০:২৩.) অধিকন্তু, শয়তানের বিদ্রোহ যিহোবাকে তাঁর চমৎকার গুণাবলি আরও সুস্পষ্ট উপায়ে দেখানোর একটা সুযোগ করে দিয়েছে। কীভাবে?
১০ শয়তানের শাসনের ধ্বংসাত্মক পরিণতির সামনে যিহোবার নিখুঁত গুণাবলি এমনকী আরও বেশি স্পষ্ট হচ্ছে, যা আর অন্য কোনোভাবে হতে পারত না। এভাবে, তিনি সেই ব্যক্তিদের দৃষ্টিতে মহিমান্বিত হয়েছেন, যারা তাঁকে ভালোবাসে। হ্যাঁ, এটা শুনতে স্ববিরোধী বলে মনে হলেও শয়তানের শাসন পদ্ধতি আসলে ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে এসেছে। এটা তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি আসা এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে তিনি যে-সর্বোত্তম উপায়ে মীমাংসা করেছেন, তা তুলে ধরে। সেই সত্যটা তুলে ধরার জন্য, আসুন আমরা সংক্ষেপে যিহোবার কিছু গুণ বিবেচনা করি এবং দেখি যে, কীভাবে শয়তানের দুষ্ট শাসন যিহোবাকে আরও অন্যান্য উপায়ে এই গুণাবলি দেখাতে পরিচালিত করেছে।
১১. কীভাবে যিহোবার প্রেম প্রকাশিত হয়েছে?
১১ প্রেম। শাস্ত্র আমাদের বলে যে, “ঈশ্বর প্রেম।” (১ যোহন ৪:৮) প্রথমত, মানুষ সৃষ্টি করা ছিল ঈশ্বরের প্রেমের এক অভিব্যক্তি। অধিকন্তু, আমরা যে-ভয় উদ্রেককারী ও চমৎকার উপায়ে নির্মিত, তা ঈশ্বরের প্রেমের সাক্ষ্য বহন করে। এ ছাড়া, যিহোবা প্রেমের সঙ্গে মানুষের জন্য এক চমৎকার গৃহ জুগিয়েছেন, যার মধ্যে তাদের সুখের জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু রয়েছে। (আদি. ১:২৯-৩১; ২:৮, ৯; গীত. ১৩৯:১৪-১৬) কিন্তু, একবার মানব পরিবারের মধ্যে দুষ্টতা প্রবেশ করার পর, যিহোবা আরও নতুন নতুন উপায়ে তাঁর প্রেম প্রকাশ করেছেন। কীভাবে? প্রেরিত যোহন যিশুর বলা এই কথাগুলো উদ্ধৃতি করেছিলেন: “ঈশ্বর জগৎকে এমন প্রেম করিলেন যে, আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিলেন, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।” (যোহন ৩:১৬) পাপীদের জন্য মুক্তির মূল্য দিতে তাঁর একজাত পুত্রকে পৃথিবীতে পাঠানোর মাধ্যমে ঈশ্বর মানবজাতির জন্য যে-উল্লেখযোগ্য উপায়ে প্রেম দেখিয়েছেন, তা কি অন্য আর কোনো উপায়ে দেখাতে পারতেন? (যোহন ১৫:১৩) প্রেমের এই মহৎ প্রদর্শন মানুষের জন্য এক আদর্শ হিসেবেও কাজ করে, তাদেরকে রোজকার জীবনে ঈশ্বরের আত্মত্যাগমূলক প্রেম প্রতিফলিত করার সুযোগ করে দেয়, যেমনটা যিশুও করেছিলেন।—যোহন ১৭:২৫, ২৬.
১২. কোন উপায়ে যিহোবার শক্তি প্রদর্শিত হয়েছে?
১২ শক্তি। একমাত্র ‘সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের’ জীবন সৃষ্টি করার শক্তি রয়েছে। (প্রকা. ১১:১৭; গীত. ৩৬:৯) জন্মের মাধ্যমে একজন মানুষের সূচনা হয়, রূপকভাবে বললে একটা খালি পৃষ্ঠার মতো। মৃত্যুতে তিনি সেই খালি পৃষ্ঠাটা সারা জীবনের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত, কাজ ও অভিজ্ঞতা দিয়ে পূর্ণ করেন, যেগুলো তার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য এবং ব্যক্তিত্বকে গঠন করেছে। সেই তথ্য যিহোবার স্মৃতিতে সঞ্চিত থাকতে পারে। নিরূপিত সময়ে যিহোবা সেই ব্যক্তিকে পুনরায় জীবনে ফিরিয়ে আনতে পারেন, তাঁর অদ্বিতীয় জীবনের নকশাকে পূর্ণাঙ্গ করতে পারেন। (যোহন ৫:২৮, ২৯) তাই, যদিও মৃত্যুটা মানুষের জন্য ঈশ্বরের আদি উদ্দেশ্য ছিল না, তবুও এটা যিহোবাকে এই বিষয়টা দেখানোর সুযোগ করে দিয়েছে যে, মৃতকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার শক্তি তাঁর রয়েছে। সত্যিই, যিহোবা হলেন ‘সর্ব্বশক্তিমান ঈশ্বর।’
১৩. কীভাবে যিশুর বলিদান যিহোবার নিখুঁত ন্যায়বিচারের এক প্রদর্শন?
১৩ ন্যায়বিচার। যিহোবা মিথ্যা কথা বলেন না; অথবা তিনি অন্যায্যভাবে কাজও করেন না। (দ্বিতীয়. ৩২:৪; তীত ১:২) তিনি সবসময় সত্য ও ন্যায়বিচারের উচ্চমান ধরে রাখেন, এমনকী সেই সময়েও যখন তা করা তাঁর নিজের জন্য অসুবিধাজনক বলে মনে হয়। (রোমীয় ৮:৩২) তাঁর প্রিয় পুত্র যিশুকে একজন অবিশ্বস্ত ঈশ্বরনিন্দুকের মতো মৃত্যুবরণ করতে দেখা নিশ্চয়ই যিহোবার জন্য কত বেদনাদায়কই না ছিল! তা সত্ত্বেও, অসিদ্ধ মানুষের প্রতি প্রেমবশত যিহোবা তাঁর নিজের ন্যায়বিচারের নিখুঁত মান তুলে ধরার জন্য এই বেদনাদায়ক ঘটনা ঘটতে অনুমতি দিয়েছিলেন। (পড়ুন, রোমীয় ৫:১৮-২১.) অবিচারে পরিপূর্ণ এক জগৎ যিহোবাকে সুযোগ করে দিয়েছে, যেন তিনি নিজেকে ন্যায়বিচারের চূড়ামণি হিসেবে দেখাতে পারেন।
১৪, ১৫. কিছু উপায় কী, যেগুলোর মাধ্যমে যিহোবার সর্বোৎকৃষ্ট প্রজ্ঞা ও ধৈর্য প্রকাশিত হয়েছে?
১৪ প্রজ্ঞা। আদম ও হবা পাপ করার পর পরই যিহোবা প্রকাশ করেছেন যে, তিনি বিদ্রোহীদের দ্বারা সৃষ্ট সমস্ত মন্দ প্রভাব দূর করবেন। (আদি. ৩:১৫) এই ধরনের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ ও সেইসঙ্গে তাঁর দাসদের কাছে এই উদ্দেশ্যের বিস্তারিত বিষয় ধীরে ধীরে প্রকাশ করা যিহোবার প্রজ্ঞাকে সুস্পষ্ট করেছে। (রোমীয় ১১:৩৩) কোনো কিছুই বিভিন্ন বিষয় সফলভাবে পরিচালনা করার ক্ষেত্রে ঈশ্বরের ক্ষমতাকে ব্যাহত করতে পারে না। অনৈতিকতা, যুদ্ধ, অযৌক্তিকতা, অবাধ্যতা, নির্দয়তা, পক্ষপাতিত্ব এবং কপটতা দ্বারা বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত এক জগতে, তাঁর সৃষ্ট প্রাণীদেরকে যিহোবার এটা দেখানোর প্রচুর সুযোগ রয়েছে যে, প্রকৃত প্রজ্ঞা কী। শিষ্য যাকোব বলেছিলেন: “যে জ্ঞান” বা প্রজ্ঞা “উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি, পরে শান্তিপ্রিয়, ক্ষান্ত [“যুক্তিযুক্ত,” NW], সহজে অনুনীত, দয়া ও উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ, ভেদাভেদবিহীন ও নিষ্কপট।”—যাকোব ৩:১৭.
১৫ ধৈর্য এবং দীর্ঘসহিষ্ণুতা। যিহোবার ধৈর্য ও দীর্ঘসহিষ্ণুতার মতো গুণগুলো কখনোই এতটা সুস্পষ্ট হয়ে উঠতো না, যদি না তাঁকে মানুষের অসিদ্ধতা, পাপ ও অপরাধের সঙ্গে মোকাবিলা করার প্রয়োজন হতো। হাজার হাজার বছর ধরে তা করার জন্য যিহোবার ইচ্ছুক মনোভাব দেখিয়েছে যে, তিনি একেবারে নিখুঁতভাবে এই অপূর্ব গুণগুলোর অধিকারী এবং এর জন্য আমাদের সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। প্রেরিত পিতর উপযুক্তভাবেই বলেছিলেন যে, “আমাদের প্রভুর দীর্ঘসহিষ্ণুতাকে পরিত্রাণ জ্ঞান” করা উচিত।—২ পিতর ৩:৯, ১৫.
১৬. কেন ক্ষমা করার ব্যাপারে যিহোবার ইচ্ছুক মনোভাব প্রচুর আনন্দের একটা কারণ?
১৬ ক্ষমা করতে ইচ্ছুক। আমরা সকলে পাপী আর অনেক সময়ে আমরা উছোট খাই। (যাকোব ৩:২; ১ যোহন ১:৮, ৯) আমাদের কতই না কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, যিহোবা “প্রচুররূপে” ক্ষমা করতে ইচ্ছুক! (যিশা. ৫৫:৭) এ ছাড়া, এই বিষয়টা বিবেচনা করুন: অসিদ্ধ পাপী হিসেবে জন্মগ্রহণ করায় আমরা সেই গভীর আনন্দ উপভোগ করতে পারি, যা ঈশ্বর যখন আমাদের অপরাধগুলো ক্ষমা করেন, তখন আমরা অনুভব করি। (গীত. ৫১:৫, ৯, ১৭) যিহোবার সেই হৃদয়গ্রাহী বৈশিষ্ট্যগুলো সম্বন্ধে ব্যক্তিগতভাবে অভিজ্ঞতা লাভ করা, তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমকে শক্তিশালী করে এবং অন্যদের সঙ্গে আচরণে তাঁর উদাহরণ অনুসরণ করার জন্য উৎসাহিত করে।—পড়ুন, কলসীয় ৩:১৩.
যে-কারণে জগৎ অসুস্থ
১৭, ১৮. কোন কোন উপায়ে শয়তানের শাসন পদ্ধতি ব্যর্থ হয়েছে?
১৭ শয়তানের সম্পূর্ণ জগৎ ব্যবস্থা—তার শাসন পদ্ধতির এক ফল—শত শত বছর ধরে বার বার এবং ক্রমাগত ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৯১ সালে দি ইউরোপিয়ান সংবাদপত্র মন্তব্য করেছিল: “জগৎ কী অসুস্থ? হ্যাঁ, অবশ্যই, তবে . . . ঈশ্বরের [কোনো] কাজের ফলে নয়—জগতের অসুস্থতা এর লোকেদের কারণে সৃষ্ট।” কতই না সত্য! শয়তানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আমাদের প্রথম পিতামাতা যিহোবার শাসনের পরিবর্তে মানুষের শাসন বেছে নিয়েছে। এভাবে তারা এমন একটা শাসন পদ্ধতি চালু করেছে, যা ব্যর্থ হবেই। বিশ্বব্যাপী লোকেরা যে-বেদনা ও দুর্দশা ভোগ করছে, সেগুলো দেখায় যে, মানব শাসন মারাত্মক অসুস্থতায় আক্রান্ত।
১৮ শয়তানের শাসন পদ্ধতি স্বার্থপরতাকে আকর্ষণীয় উপায়ে তুলে ধরে। কিন্তু, স্বার্থপরতা কখনো প্রেমকে পরাজিত করতে পারে না, যা যিহোবার শাসন পদ্ধতির ভিত্তি। শয়তানের শাসন পদ্ধতি সুস্থির অবস্থা, সুখ ও নিরাপত্তা নিয়ে আসতে ব্যর্থ হয়েছে। যিহোবার শাসন পদ্ধতির ন্যায্যতা প্রতিপাদিত হয়! সেই বিষয়ে কি আমাদের আধুনিক দিনের প্রমাণ রয়েছে? হ্যাঁ, যা আমরা পরের প্রবন্ধে দেখতে পারব।
নীচের পদগুলো পড়ার মাধ্যমে আমরা শাসনব্যবস্থা সম্বন্ধে কী শিখেছি . . .
• যিরমিয় ১০:২৩?
• কলসীয় ৩:১৩?
[২৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
শয়তানের শাসন কখনোই মানবজাতির উপকার করতে পারেনি
[সৌজন্যে]
U.S. Army photo
WHO photo by P. Almasy
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
মৃতকে জীবন ফিরিয়ে দেওয়ার শক্তি যিহোবার রয়েছে
[২৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার প্রেম ও ন্যায়বিচার তাঁর পুত্রকে বলিদান দেওয়ার মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে