-
ঈশ্বর এবং কৈসর১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ | মে ১
-
-
১১. জাগতিক শাসকদের সাথে ব্যবহার করা সম্বন্ধে পৌল খ্রীষ্টানদের কিভাবে উপদেশ দিয়েছিলেন?
১১ এই নীতিটির সাথে এই বিষয়টির মিল ছিল যেটি, খ্রীষ্টের মৃত্যুর ২০ বছরের অল্প কিছু সময় পর, প্রেরিত পৌল রোমের খ্রীষ্টানদের বলেছিলেন: “প্রত্যেক প্রাণী প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের বশীভূত হউক।” (রোমীয় ১৩:১) প্রায় দশ বছর পর, রোমে পৌলের দ্বিতীয়বার কারারুদ্ধ হওয়ার ও তাকে হত্যা করার অল্প কিছুদিন আগে, পৌল তীতকে লিখেছিলেন: “তুমি তাহাদিগকে [ক্রীতের খ্রীষ্টানদের] স্মরণ করাইয়া দেও, যেন তাহারা আধিপত্যের ও কর্ত্তৃত্বের বশীভূত হয়, বাধ্য হয়, সর্ব্বপ্রকার সৎক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত হয়, কাহারও নিন্দা না করে, নির্ব্বিরোধ ও ক্ষান্তশীল হয়, সকল মনুষ্যের কাছে সম্পূর্ণ মৃদুতা দেখায়।”—তীত ৩:১, ২.
“প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” ক্রমশ বুঝতে পারা
১২. (ক) সরকারি কর্তৃপক্ষদের প্রতি সঠিক স্থান হিসাবে খ্রীষ্টীয় আপেক্ষিক বশ্যতা সম্বন্ধে চার্লস টেজ্ রাসেল কোন্ দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করতেন? (খ) সেনাবাহিনীতে কাজ করা সম্বন্ধে, ১ম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা কী স্বতন্ত্র দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করেছিল?
১২ ১৮৮৬ সালের প্রারম্ভে, চার্লস টেজ্ রাসেল যুগের পরিকল্পনা (ইংরাজি) নামক বইয়ে লিখেছিলেন: “কোনভাবেই যীশু কিংবা প্রেরিতেরা পার্থিব শাসকদের ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেননি। . . . তারা গির্জাকে আইনগুলির প্রতি বাধ্য হতে এবং যারা কর্তৃত্ব পদে রয়েছে তাদের সম্মান করতে, . . . তাদের ধার্য কর প্রদান করতে এবং যেখানে রাষ্ট্রের আইনগুলি ঈশ্বরের আইনের (প্রেরিত ৪:১৯; ৫:২৯) পরিপন্থী সেখানে সেগুলিকে বর্জন করে, প্রতিষ্ঠিত যে কোন আইনের প্রতিরোধ না করতে শিক্ষা দিয়েছিলেন। (রোমীয় ১৩:১-৭; মথি ২২:২১) যদিও তারা এই জগতের সরকারগুলি থেকে আলাদা ছিলেন এবং তাতে কোন অংশ নেননি, তবুও যীশু ও প্রেরিতেরা এবং প্রাথমিক গির্জা সকলেই আইন-মান্যকারী ছিলেন।” এই বইটি সঠিকভাবে প্রেরিত পৌলের দ্বারা উল্লেখিত মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষ হিসাবে “উচ্চতর শক্তিগুলি” অথবা “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” শনাক্ত করেছিল। (রোমীয় ১৩:১; কিং জেমস্ ভারসন) ১৯০৪ সালে, নতুন সৃষ্টি (ইংরাজি) নামক বইটি বর্ণনা করেছিল যে সত্য খ্রীষ্টানদের “বর্তমান দিনে আইন-মান্যকারী লোকেদের অন্তর্ভুক্ত হওয়া উচিত—আন্দোলনকারী, কলহপ্রবণ, ছিদ্রান্বেষী ব্যক্তি তারা হবে না।” কিছু ব্যক্তি বুঝেছিল এটির অর্থ সরকারি শক্তিগুলির প্রতি সম্পূর্ণ বশীভূত হওয়া, এমনকি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময়ে সেনাবাহিনীতে অংশ গ্রহণ করা পর্যন্ত। কিন্তু অন্যেরা, এটিকে যীশুর এই মন্তব্যের “যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে,” বিপরীত বলে গণ্য করেছিল। (মথি ২৬:৫২) তাই স্পষ্টতই, প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষদের প্রতি খ্রীষ্টীয় বশ্যতা সম্বন্ধে পরিষ্কার বোধগম্যতার প্রয়োজন ছিল।
১৩. ১৯২৯ সালে উচ্চতর শক্তি সম্বন্ধে কোন্ পরিবর্তিত চিন্তাধারা প্রদান করা হয়েছিল এবং কিভাবে এটি উপকারী বলে প্রমাণিত হয়েছিল?
১৩ ১৯২৯ সালে, এক সময়ে যখন বিভিন্ন সরকারের আইনগুলি, ঈশ্বর যা আদেশ করেছিলেন অথবা ঈশ্বরের আইন যা নিষিদ্ধ করে এমন বিষয়গুলি দাবি করে, সেগুলিকে নিষিদ্ধ করতে আরম্ভ করে, তখন মনে করা হয়েছিল যে উচ্চতর শক্তি অবশ্যই যিহোবা ঈশ্বর এবং যীশু খ্রীষ্ট হবেন।b ২য় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে ও যুদ্ধ চলাকালীন গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এবং ভীতির সমতা ও তার সামরিক প্রস্তুতিসহ ঠাণ্ডা লড়াইয়ের সময়ে যিহোবার দাসেরা এটি বুঝেছিল। পশ্চাতের দিকে তাকিয়ে এটি অবশ্যই বলতে হবে যে এই বিষয়গুলি যিহোবার ও তাঁর খ্রীষ্টের প্রাধান্যকে মহিমান্বিত করেছিল যা, সম্পূর্ণ সমস্যাবহূল সময়ে আপোশহীনভাবে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ঈশ্বরের দাসেদের সাহায্য করেছিল।
আপেক্ষিক বশ্যতা
১৪. কিভাবে ১৯৬২ সালে রোমীয় ১৩:১, ২ এবং সম্পর্কযুক্ত পদগুলির উপর বৃদ্ধিরত দীপ্তি প্রকাশ পেয়েছিল?
১৪ ১৯৬১ সালে, পবিত্র শাস্ত্রের নতুন জগৎ অনুবাদ (ইংরাজি) শেষ হয়। এর প্রস্তুতির জন্য শাস্ত্রের পাঠ্য ভাষার উপর পুঙ্খানুপুঙ্খ অধ্যয়নের প্রয়োজন হয়েছিল। বাক্যগুলির নির্ভুল অনুবাদ কেবলমাত্র রোমীয় ১৩ অধ্যায়ে ব্যবহৃত নয়, কিন্তু এই পদগুলিতেও ব্যবহৃত হয়েছে, যেমন তীত ৩:১, ২ এবং ১ পিতর ২:১৩, ১৭ যা এটি স্পষ্ট করে যে “প্রাধান্যপ্রাপ্ত কর্ত্তৃপক্ষদের” অভিব্যক্তিটি সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ যিহোবা এবং তাঁর পুত্র যীশুর প্রতি নির্দেশ করে না, কিন্তু মনুষ্য সরকারের কর্তৃপক্ষদের প্রতি নির্দেশ করে। ১৯৬২ সালের শেষের দিকে, প্রহরীদুর্গ-এ যে প্রবন্ধগুলি প্রকাশ করা হয়েছিল তা রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের বিষয় সঠিক ব্যাখ্যা দিয়েছিল আর সি. টি. রাসেলের সময়ে যে ধারণাটি পোষণ করা হয়েছিল তার থেকেও এটি আরও স্পষ্ট ধারণা প্রদান করেছিল। এই প্রবন্ধগুলি উল্লেখ করেছিল যে কর্তৃপক্ষদের প্রতি খ্রীষ্টানদের বশ্যতা সম্পূর্ণ হতে পারে না। এটি অবশ্যই আপেক্ষিক এবং এটি নির্ভরশীল এই বিষয়ের উপর যে এটি ঈশ্বরের দাসেদের ঈশ্বরের আইনের সাথে কোন সংঘর্ষ ঘটাবে না। প্রহরীদুর্গ-এ অতিরিক্ত প্রবন্ধগুলি এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর জোর দিয়েছিল।c
১৫, ১৬. (ক) কোন্ ভারসাম্যমূলক দৃষ্টিভঙ্গি রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের নতুন বোধগম্যতাকে বুঝতে সাহায্য করেছিল? (খ) কোন্ প্রশ্নগুলির উত্তর দেওয়া এখনও বাকি আছে?
১৫ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় শাস্ত্রীয় নীতিগুলির উপর ভিত্তি করে আপোশহীনভাবে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষদের প্রতি ভারসাম্য সম্মান দেখানোর বিষয়ে রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের এই বিশেষ ব্যাখ্যাটি সঠিকভাবে যিহোবার লোকেদের বুঝতে সাহায্য করেছিল। (গীতসংহিতা ৯৭:১১; যিরমিয় ৩:১৫) এটি তাদের ঈশ্বরের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে এবং রাষ্ট্রের সাথে তাদের ব্যবহারের ক্ষেত্রে সঠিক দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে সাহায্য করেছিল। এটি তাদের নিশ্চিত করেছিল যে যখন তারা কৈসরের যা কৈসরকে দেয়, তখন তারা ঈশ্বরের যা তা ঈশ্বরকে দিতে উপেক্ষা করে না।
-
-
ঈশ্বর এবং কৈসর১৯৯৬ প্রহরীদুর্গ | মে ১
-
-
আগ্রহের বিষয় যে, রোমীয় ১৩ অধ্যায়ের উপর তার মন্তব্যে, অধ্যাপক এফ. এফ. ব্রুস লেখেন: “বর্তমান প্রাসঙ্গিক বিষয় থেকে, ঠিক যেমন প্রেরিতদের লেখাগুলির সাধারণ প্রসঙ্গের মত এটি পরিষ্কার যে রাষ্ট্র যে উদ্দেশ্যে ঐশিকভাবে স্থাপিত হয়েছিল কেবলমাত্র তারই সীমার মধ্যে যথার্থভাবে বাধ্যতা দাবি করতে পারে—বিশেষ করে রাষ্ট্রকে শুধুমাত্র প্রতিরোধ করা যেতে পারে তাই নয়, কিন্তু তাকে অবশ্যই প্রতিরোধ করা হবে যদি সে সেই বাধ্যতা দাবি করে যা একমাত্র ঈশ্বরের প্রাপ্য।”
-