পাঠ ৩৫
কীভাবে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
আমাদের প্রত্যেককেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কিছু সিদ্ধান্ত এমন হয়, যেগুলো আমাদের জীবনের উপর এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বের উপর প্রভাব ফেলে। যেমন, আমরা বিয়ে করব কি করব না, কোথায় থাকব, কীভাবে ভরণ-পোষণ জোগাব। আমরা যখন ভেবেচিন্তে সঠিক সিদ্ধান্ত নেব, তখন আমরা সবসময় সুখী হতে পারব এবং যিহোবার হৃদয়কে খুশি করতে পারব।
১. কীভাবে বাইবেল আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করতে পারে?
কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের প্রথমে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করতে হবে এবং এরপর যিহোবা এই বিষয়ে কী চিন্তা করেন, তা বাইবেল থেকে খোঁজার চেষ্টা করতে হবে। (পড়ুন, হিতোপদেশ ২:৩-৬.) কিছু বিষয়ে, যিহোবা বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের সরাসরি আজ্ঞা দিয়েছেন যে, কী করতে হবে। আর এই বিষয়গুলোতে যিহোবার আজ্ঞা পালন করাই আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।
কিন্তু, কোনো বিষয়ে যদি বাইবেলে সরাসরি আজ্ঞা দেওয়া না থাকে, তখন আমরা কী করব? যিহোবা তখনও ‘যে পথে আমাদের চলতে হবে’ সেই পথে আমাদের চলতে সাহায্য করবেন। (যিশাইয় ৪৮:১৭, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) কীভাবে? যিহোবা আমাদের সাহায্য করার জন্য বাইবেলে বিভিন্ন নীতি দিয়েছেন। আর এই নীতিগুলো হল সেই সত্য বিষয়, যেগুলো আমাদের বুঝতে সাহায্য করে যে, বিভিন্ন বিষয়ে যিহোবা কী চিন্তা করেন এবং তিনি কেমন অনুভব করেন। বাইবেলের কোনো বিবরণ পড়ার মাধ্যমে প্রায়ই আমরা যিহোবার চিন্তাভাবনা সম্বন্ধে জানতে পারি। আর আমরা যখন বুঝতে পারি যে, তিনি কী চিন্তা করেন এবং কেমন অনুভব করেন, তখন আমরা সেই সিদ্ধান্তগুলো নিতে পারি, যেগুলো তাঁকে খুশি করে।
২. সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কোন বিষয়টা মনে রাখতে হবে?
কোনো কোনো বিষয়ে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ থাকে। এই পরিস্থিতিতে আমাদের কী করা উচিত? বাইবেল বলে, “সতর্ক মানুষ নিজ পদক্ষেপের উপর দৃষ্টি রাখে।” (হিতোপদেশ ১৪:১৫, জুবিলী বাইবেল) এর অর্থ হল, কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের সেই বিষয়ে ভালো করে চিন্তা করতে হবে। আমরা নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারি: ‘বাইবেলের কোন নীতিটা আমাকে সাহায্য করতে পারে? এই সিদ্ধান্ত নিলে, পরে আমার কেমন লাগবে? এই সিদ্ধান্ত অন্যদের উপর কোন প্রভাব ফেলবে? আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, যিহোবা কি আমার এই সিদ্ধান্তে খুশি হবেন?’—দ্বিতীয় বিবরণ ৩২:২৯.
কোনটা সঠিক এবং কোনটা ভুল তা নির্ধারণ করার অধিকার যিহোবার রয়েছে। তিনি আমাদের সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ধারণ করার জন্য কিছু আইন ও নীতি দিয়েছেন। শুধু তা-ই নয়, তিনি আমাদের এক বিবেক দিয়েছেন। (রোমীয় ২:১৪, ১৫) তাই, আমরা যখন যিহোবার বিভিন্ন আইন ও নীতি ভালোভাবে জানব এবং যেকোনো পরিস্থিতিতে সেগুলো মেনে চলব, তখন আমরা আমাদের বিবেককে সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত করতে পারব। আর তখন এই বিবেক আমাদের সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
গভীরভাবে গবেষণা করুন
কীভাবে বাইবেলের বিভিন্ন নীতি এবং আমাদের বিবেক সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে? আসুন তা দেখি।
৩. বাইবেল আপনাকে সঠিক পথ দেখায়
কীভাবে বাইবেলের বিভিন্ন নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আপনাকে সাহায্য করতে পারে? ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন।
যিহোবা আমাদের কী করার স্বাধীনতা দিয়েছেন?
যিহোবা কেন আমাদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন?
যিহোবা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য আমাদের কী দিয়েছেন?
বাইবেলের একটা নীতি লক্ষ করুন। ইফিষীয় ৫:১৫, ১৬ পদ পড়ুন এবং আলোচনা করুন যে, কীভাবে ‘আপনার সময়কে সর্বোত্তম উপায়ে ব্যবহার করে’ . . .
আপনি প্রতিদিন বাইবেল পড়তে পারেন?
আপনি একজন উত্তম স্বামী অথবা স্ত্রী, বাবা অথবা মা কিংবা সন্তান হতে পারেন?
আপনি মণ্ডলীর সভাগুলোতে যোগ দিতে পারেন?
৪. সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত করুন
বাইবেলে যখন সরাসরি কোনো আজ্ঞা দেওয়া থাকে, তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়। কিন্তু, যখন সরাসরি কোনো আজ্ঞা দেওয়া থাকে না, তখন আমরা কীভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারি? ভিডিওটা দেখুন এবং এরপর এই প্রশ্নটা নিয়ে আলোচনা করুন।
এই বোন কোন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, যাতে তিনি বাইবেল অনুযায়ী নিজের বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারেন এবং সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা যিহোবাকে খুশি করে?
আমাদের কেন অন্যদের বলা উচিত নয় যে, তারা যেন আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেয়? ইব্রীয় ৫:১৪ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
আমাদের হয়ে অন্যদের সিদ্ধান্ত নিতে বলা হয়তো আরও সহজ বলে মনে হতে পারে। কিন্তু, আমাদের কী করার ক্ষমতা থাকা উচিত?
আপনি কীসের সাহায্যে আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারেন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন?
৫. অন্যদের বিবেকের প্রতি চিন্তা দেখান
একজন ব্যক্তির সিদ্ধান্ত, অন্য ব্যক্তির সিদ্ধান্তের থেকে একদম আলাদা হতে পারে। তা হলে, সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় কীভাবে আমরা অন্যদের বিবেকের প্রতি চিন্তা দেখাতে পারি? দুটো পরিস্থিতির বিষয়ে লক্ষ করুন:
১: একজন বোন অন্য একটা মণ্ডলীতে যেতে শুরু করেছেন আর এই বোনের মেক-আপ করতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু, সেই মণ্ডলীর বেশিরভাগ বোন এটা পছন্দ করে না যে, কেউ মেক-আপ করুক।
রোমীয় ১৫:১ এবং ১ করিন্থীয় ১০:২৩, ২৪ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
এই শাস্ত্রপদ অনুযায়ী, সেই বোন হয়তো কী করার কথা চিন্তা করতে পারেন? আপনার বিবেক হয়তো কোনো কাজ করাকে সঠিক বলে মনে করে, কিন্তু অন্যদের বিবেক হয়তো সেই কাজ করাকে সঠিক বলে মনে না-ও করতে পারে, তখন আপনি কী করবেন?
২: একজন ভাই জানেন, অল্প পরিমাণে মদ খাওয়া বাইবেল অনুযায়ী ভুল নয়। তা সত্ত্বেও, তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, তিনি মদ খাবেন না। এই ভাইকে কোথাও খাবারের জন্য নিমন্ত্রণ করা হয়েছে, আর তিনি দেখছেন যে, মণ্ডলীর অন্য ভাইয়েরা সেখানে মদ খাচ্ছে।
উপদেশক ৭:১৬ এবং রোমীয় ১৪:১, ১০ পদ পড়ুন এবং এরপর এই প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করুন:
এই শাস্ত্রপদ অনুযায়ী, সেই ভাই হয়তো কী করার কথা চিন্তা করতে পারেন? আপনি যদি কোনো ব্যক্তিকে এমন কাজ করতে দেখেন, যেটাকে আপনার বিবেক হয়তো সঠিক বলে মনে করে না, তখন আপনি কী করবেন?
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য কী করতে পারেন?
১. প্রার্থনা করুন: যিহোবার কাছে সাহায্য চান, যাতে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।—যাকোব ১:৫.
২. গবেষণা করুন: বাইবেল এবং বাইবেলভিত্তিক প্রকাশনাগুলো থেকে সেই নীতিগুলো খুঁজে বের করুন, যেগুলো আপনাকে সাহায্য করতে পারে। আপনি চাইলে অভিজ্ঞ ভাই-বোনদের সঙ্গেও কথা বলতে পারেন।
৩. ধ্যান করুন: আপনি যে-সিদ্ধান্ত নেবেন, তা আপনার এবং অন্যদের বিবেকের উপর কোন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে চিন্তা করুন।
কেউ কেউ বলে থাকে: “আমার যা ইচ্ছা আমি তা-ই করব, অন্যেরা কী ভাবল, তাতে আমার কিছু যায় আসে না।”
ঈশ্বর কী চিন্তা করবেন এবং লোকেরা কী মনে করবে, তা নিয়ে কেন আমাদের চিন্তা করা উচিত?
সারাংশ
সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য এটা জানা জরুরি যে, সেই বিষয়ে যিহোবা কী চিন্তা করেন। আর এটাও চিন্তা করা প্রয়োজন যে, আমরা যে-সিদ্ধান্ত নেব, তা অন্যদের উপর ভালো প্রভাব ফেলবে, না কি খারাপ প্রভাব ফেলবে।
পুনরালোচনা
কীভাবে আপনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা যিহোবাকে খুশি করবে?
কীভাবে আপনি সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আপনার বিবেককে প্রশিক্ষিত করতে পারেন?
কীভাবে আপনি সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অন্যদের বিবেকের প্রতি চিন্তা দেখাতে পারেন?
আরও জানুন
কীভাবে আপনি এমন সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, যা ঈশ্বরের সঙ্গে আপনার বন্ধুত্বকে দৃঢ় করতে পারে?
“ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে এমন সিদ্ধান্ত নিন” (প্রহরীদুর্গ, এপ্রিল ১৫ ২০১১)
কীভাবে যিহোবা আমাদের সঠিক পথ দেখান, তা আরও ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করুন।
একজন ব্যক্তিকে একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছিল। কোন বিষয়টা তাকে এই সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করেছিল? আসুন তা দেখি।
যিহোবা যখন কোনো বিষয়ে সরাসরি আজ্ঞা দেন না, তখন কীভাবে আমরা তাঁর হৃদয়কে খুশি করতে পারি? আসুন তা জানি।
“আপনার কি সবসময়ই বাইবেলের আদেশের প্রয়োজন আছে?” (প্রহরীদুর্গ, ডিসেম্বর ১, ২০০৩)