যিহোবা আমাদের সার্বভৌম প্রভু!
“কেননা পরাৎপর সদাপ্রভু ভয়াবহ, তিনি সমস্ত পৃথিবীর উপরে মহান্ রাজা।”—গীত. ৪৭:২.
১. প্রথম করিন্থীয় ৭:৩১ পদে লিপিবদ্ধ তার কথাগুলোতে পৌল পরোক্ষভাবে কোন বিষয়টা উল্লেখ করছিলেন বলে মনে হয়?
“এই জগতের দৃশ্যপট পরিবর্তিত হচ্ছে।” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন। (১ করি. ৭:৩১, NW) প্রসঙ্গ দেখে মনে হয় যে, তিনি জগৎকে এমন একটা মঞ্চের সঙ্গে তুলনা করছিলেন, যেখানে একটা নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রীরা একটা দৃশ্যপট পরিবর্তিত হওয়ার আগে পর্যন্ত ভালো বা মন্দ চরিত্রে অভিনয় করে থাকে।
২, ৩. (ক) যিহোবার সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকে কীসের সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে? (খ) আমরা কোন প্রশ্নগুলো বিবেচনা করব?
২ বর্তমানে, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা নাটক অনুষ্ঠিত হচ্ছে—আর সেখানে আপনিও জড়িত আছেন! বিশেষভাবে এটা যিহোবা ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বের সত্যতা প্রতিপাদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এই নাটকটাকে এমন এক পরিস্থিতির মাধ্যমে তুলে ধরা যেতে পারে, যা হয়তো কোনো দেশে বিদ্যমান রয়েছে। একদিকে রয়েছে বৈধ সরকার, যা নিয়মশৃঙ্খলা বজায় রাখে। আর অন্যদিকে রয়েছে এক অপরাধী সংগঠন, যা প্রতারণা, দৌরাত্ম্য এবং হত্যার মতো বিষয়গুলোর মাধ্যমে শাসন করে। সেই অবৈধ সংগঠন হচ্ছে সার্বভৌম শাসনের বিরুদ্ধে এক প্রতিদ্বন্দ্বী এবং সেটা সমস্ত নাগরিক তাদের সরকারের প্রতি অনুগত কি না, তা পরীক্ষা করে।
৩ সর্বজনীনভাবে একইরকম পরিস্থিতি বিদ্যমান। বর্তমানে বৈধভাবে গঠিত “পরাৎপর” বা সার্বভৌম প্রভু যিহোবার সরকার রয়েছে। (গীত. ৫৭:২) কিন্তু, মানবজাতি এখন এক অপরাধী সংগঠনের দ্বারা হুমকির মুখে রয়েছে, যে-সংগঠনের নেতা হচ্ছে “পাপাত্মা।” (১ যোহন ৫:১৯) এটা বৈধভাবে গঠিত ঈশ্বরের সরকারের বিরুদ্ধে এক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নিয়ে আসে এবং তাঁর সার্বভৌম শাসনের অধীন সমস্ত লোকের আনুগত্যকে পরীক্ষা করে। কোন কারণে এইরকম পরিস্থিতির উদয় হয়েছিল? কেন ঈশ্বর তা ঘটতে দিয়েছেন? ব্যক্তি-বিশেষ হিসেবে আমরা এই ব্যাপারে কী করতে পারি?
নাটকের বিষয়বস্তু
৪. উন্মোচিত সর্বজনীন নাটকের সঙ্গে কোন বিচার্য বিষয়গুলো ওতপ্রোতভাবে জড়িত?
৪ উন্মোচিত এই সর্বজনীন নাটকের সঙ্গে দুটো বিচার্য বিষয় ওতপ্রোতভাবে জড়িত: যিহোবার সার্বভৌমত্ব এবং মানুষের নীতিনিষ্ঠা। শাস্ত্রে যিহোবাকে প্রায়ই “পরাৎপর” বা সার্বভৌম প্রভু বলে অভিহিত করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর ওপর পূর্ণ নির্ভরতা রেখে গীতরচক গেয়েছিলেন: “কেননা পরাৎপর সদাপ্রভু ভয়াবহ, তিনি সমস্ত পৃথিবীর উপরে মহান্ রাজা।” (গীত. ৪৭:২) “সার্বভৌমত্ব” হল সর্বোচ্চ ক্ষমতা বা শাসনপদ। একজন সার্বভৌম ব্যক্তি সর্বোচ্চ কর্তৃত্ব ব্যবহার করে থাকেন। যিহোবা ঈশ্বরকে পরাৎপর হিসেবে দেখার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।—দানি. ৭:২২.
৫. কেন আমাদের যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে অনুপ্রাণিত হওয়া উচিত?
৫ সৃষ্টিকর্তা হিসেবে যিহোবা ঈশ্বর হলেন পৃথিবী ও সমগ্র নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি। (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ৪:১১.) এ ছাড়া, যিহোবা হলেন আমাদের বিচারক, ব্যবস্থাপক ও রাজা কারণ তিনি নিজেই সর্বজনীন সরকারের বিচার সংক্রান্ত, আইনপ্রণয়নকারী এবং কার্যনির্বাহী শাখাগুলোর দেখাশোনা করেন। (যিশা. ৩৩:২২) যেহেতু আমরা আমাদের অস্তিত্বের জন্য যিহোবার কাছে ঋণী ও তাঁর ওপর নির্ভরশীল, তাই তাঁকে আমাদের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে দেখা উচিত। আমরা তাঁর অতি উচ্চ অবস্থানকে সমর্থন করতে অনুপ্রাণিত হব, যদি আমরা সবসময় মনে রাখি যে, “সদাপ্রভু স্বর্গে আপন সিংহাসন স্থাপন করিয়াছেন, তাঁহার রাজ্য কর্ত্তৃত্ব করে সমস্তের উপরে।”—গীত. ১০৩:১৯; প্রেরিত ৪:২৪.
৬. নীতিনিষ্ঠা কী?
৬ যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার জন্য আমাদেরকে তাঁর প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে হবে। “নীতিনিষ্ঠা” হল নৈতিক দৃঢ়তা অথবা সম্পূর্ণতা। একজন নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি হলেন এমন একজন, যিনি “সিদ্ধ ও সরল [“নির্দোষ ও সৎ,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন]।” কুলপতি ইয়োব এইরকমই একজন ব্যক্তি ছিলেন।—ইয়োব ১:১.
যেভাবে নাটক শুরু হয়েছিল
৭, ৮. কীভাবে শয়তান যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল?
৭ প্রায় ৬,০০০ বছর আগে একজন আত্মিক প্রাণী যিহোবার সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল। সেই বিদ্রোহীর কথাবার্তা ও কর্মকাণ্ডের মূলে ছিল, উপাসনা পাওয়ার এক স্বার্থপর আকাঙ্ক্ষা। সে প্রথম মানব দম্পতি আদম ও হবাকে ঐশিক সার্বভৌমত্বের প্রতি আনুগত্যহীন হতে প্ররোচিত করেছিল এবং যিহোবার নামকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করেছিল, এই কথা বলার দ্বারা যে, তিনি মিথ্যা বলেছেন। (পড়ুন, আদিপুস্তক ৩:১-৫.) সেই বিদ্রোহী ঘোর শত্রু, শয়তান (বিপক্ষ), দিয়াবল (অপবাদক), সর্প (প্রতারক) এবং নাগ (গ্রাসকারী) হয়ে উঠেছিল।—প্রকা. ১২:৯.
৮ শয়তান নিজেকে একজন প্রতিদ্বন্দ্বী শাসক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছিল। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে সার্বভৌম প্রভু যিহোবা কী করতে পারতেন? তিনি কি সঙ্গেসঙ্গে তিন বিদ্রোহীকে—শয়তান, আদম ও হবাকে—ধ্বংস করে দেবেন? নিশ্চিতভাবেই তাঁর সেটা করার ক্ষমতা ছিল এবং সেই পদক্ষেপ এই প্রশ্নের মীমাংসা করতে পারত যে, কার সর্বোচ্চ ক্ষমতা ছিল। এ ছাড়া, এটা এও প্রমাণ করত যে, যিহোবা তাঁর আইন লঙ্ঘন করার শাস্তি সম্বন্ধে সত্য কথা বলেছিলেন। কেন যিহোবা সেই পদক্ষেপ নেননি?
৯. শয়তান কোন বিষয় সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল?
৯ মিথ্যা কথা বলে এবং আদম ও হবাকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নেওয়ার মাধ্যমে শয়তান মানবজাতির বাধ্যতা লাভ করার ব্যাপারে যিহোবার অধিকার সম্বন্ধে প্রশ্ন তুলেছিল। অধিকন্তু, প্রথম মানব দম্পতিকে ঈশ্বরের অবাধ্য হতে প্ররোচিত করার মাধ্যমে শয়তান সমস্ত বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীর আনুগত্য সম্বন্ধেও প্রশ্ন তুলেছিল। যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি অনুগত ব্যক্তি ইয়োবের ঘটনায় যেমন প্রকাশিত হয়েছে, শয়তান দাবি করেছিল যে, সে সকল মানুষকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে।—ইয়োব ২:১-৫.
১০. ঈশ্বর তাঁর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টাকে স্থগিত রাখার দ্বারা কী করার সুযোগ দিয়েছেন?
১০ যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা করার বিষয়টাকে স্থগিত রাখার দ্বারা তিনি শয়তানকে তার দাবি প্রমাণ করার সময় দিয়েছিলেন। এ ছাড়া, ঈশ্বর মানুষকেও তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি তাদের আনুগত্য প্রদর্শন করার সুযোগ প্রদান করেছিলেন। শত শত বছর অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কী ঘটেছে? শয়তান এক শক্তিশালী অপরাধী সংগঠন গড়ে তুলেছে। যিহোবা শেষপর্যন্ত এই সংগঠনকে ও দিয়াবলকে ধ্বংস করবেন, ঈশ্বরের ন্যায্য সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে অত্যন্ত জোরালো প্রমাণ দেবেন। যিহোবা ঈশ্বর এক ইতিবাচক ফলাফল সম্বন্ধে এতটাই নিশ্চিত ছিলেন যে, তিনি এদনে বিদ্রোহ সংগঠিত হওয়ার পর পরই তা ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।—আদি. ৩:১৫.
১১. যিহোবার সার্বভৌমত্বের ব্যাপারে অনেক মানুষ কী করেছে?
১১ অনেক মানুষ বিশ্বাস দেখিয়ে চলেছে এবং যিহোবার সার্বভৌমত্ব ও তাঁর নামের পবিত্রীকরণের ব্যাপারে তাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রেখেছে। এই দলের অন্তর্ভুক্ত হল হেবল, হনোক, নোহ, অব্রাহাম, সারা, মোশি, রূৎ, দায়ূদ, যিশু, খ্রিস্টের প্রাথমিক শিষ্যরা এবং বর্তমানে লক্ষ লক্ষ নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তি। ঐশিক সার্বভৌমত্বের এই সমর্থকরা শয়তানকে মিথ্যাবাদী প্রমাণ করায় এবং যিহোবার নামের ওপর নিন্দা, যা দিয়াবল সমস্ত মানবজাতিকে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে বলে দম্ভোক্তি করার মাধ্যমে নিয়ে এসেছিল, তা দূর করায় অংশ নিয়ে থাকে।—হিতো. ২৭:১১.
ফলাফল নিশ্চিত
১২. কীভাবে আমরা নিশ্চিত হতে পারি যে, ঈশ্বর অনন্তকাল ধরে দুষ্টতাকে সহ্য করবেন না?
১২ আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি যে, যিহোবা শীঘ্র তাঁর সার্বভৌমত্বকে দৃঢ়রূপে প্রতিষ্ঠা করবেন। তিনি অনন্তকাল ধরে দুষ্টতাকে সহ্য করবেন না এবং আমরা জানি যে, আমরা শেষকালে বাস করছি। যিহোবা জলপ্লাবনের সময় দুষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। তিনি সদোম ও ঘমোরা এবং ফরৌণ ও তার সেনাবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন। সীষরা ও তার সেনাবাহিনী এবং সন্হেরীব ও অশূরীয় সৈন্যদল পরাৎপরের বিরুদ্ধে সফল হয়নি। (আদি. ৭:১, ২৩; ১৯:২৪, ২৫; যাত্রা. ১৪:৩০, ৩১; বিচার. ৪:১৫, ১৬; ২ রাজা. ১৯:৩৫, ৩৬) তাই, আমরা এই আস্থা রাখতে পারি যে, যিহোবা ঈশ্বর তাঁর নামের প্রতি অসম্মানকে ও তাঁর সাক্ষিদের প্রতি দুর্ব্যবহারকে অনির্দিষ্টকাল ধরে সহ্য করবেন না। এ ছাড়া, আমরা এখন যিশুর আগমন বা উপস্থিতির ও দুষ্ট বিধিব্যবস্থার শেষের চিহ্ন সম্বন্ধে স্পষ্ট প্রমাণ দেখতে পাচ্ছি।—মথি ২৪:৩.
১৩. কীভাবে আমরা যিহোবার শত্রুদের সঙ্গে ধ্বংস হওয়া এড়াতে পারি?
১৩ ঈশ্বরের শত্রুদের সঙ্গে ধ্বংস হওয়া এড়ানোর জন্য আমাদের প্রমাণ করতে হবে যে, আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বের প্রতি অনুগত। কীভাবে আমরা তা করতে পারি? শয়তানের অন্যায্য শাসন থেকে পৃথক থাকার মাধ্যমে এবং তার প্রতিনিধিদের দেখানো ভয়ের কারণে নতিস্বীকার করতে প্রত্যাখ্যান করার মাধ্যমে। (যিশা. ৫২:১১; যোহন ১৭:১৬; প্রেরিত ৫:২৯) একমাত্র তা করলেই আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে পারি এবং যিহোবা যখন তাঁর নামের ওপর আসা নিন্দা দূর করবেন ও তিনিই যে নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম ব্যক্তি তা প্রকাশ করবেন, তখন রক্ষা পাওয়ার আশা রাখতে পারি।
১৪. বাইবেলের বিভিন্ন অংশে কী প্রকাশ করা হয়েছে?
১৪ বাইবেলজুড়ে মানবজাতি ও যিহোবার সার্বভৌমত্ব সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। প্রথম তিনটে অধ্যায় আমাদেরকে সৃষ্টি ও মানুষের পাপে পতিত হওয়া সম্বন্ধে জানায় আর অন্যদিকে শেষ তিনটে অধ্যায়ে মানবজাতির পূর্বাবস্থায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টা তুলে ধরা হয়েছে। মধ্যবর্তী পৃষ্ঠাগুলো মানবজাতি, পৃথিবী ও নিখিলবিশ্বের জন্য তাঁর উদ্দেশ্য সম্পাদন করতে গিয়ে সার্বভৌম প্রভু যিহোবার গৃহীত পদক্ষেপগুলো সম্বন্ধে বিস্তারিত তথ্য জোগায়। আদিপুস্তক দেখায় যে, কীভাবে শয়তান ও দুষ্টতা পৃথিবীতে প্রবেশ করেছে আর প্রকাশিত বাক্যের শেষের অংশ প্রকাশ করে যে, কীভাবে মন্দতাকে দূরীভূত করা হবে, দিয়াবলকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা স্বর্গের মতো পৃথিবীতেও পরিপূর্ণ হবে। বস্তুতপক্ষে, বাইবেল পাপ ও মৃত্যুর কারণ সম্বন্ধে প্রকাশ করে এবং দেখায় যে, কীভাবে সেগুলোকে পৃথিবীর দৃশ্যপট থেকে দূর করে দেওয়া হবে আর এর স্থলে নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য অসীম আনন্দ ও অনন্তজীবন আসবে।
১৫. সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত নাটক শেষ হওয়ার সময় ব্যক্তিগতভাবে উপকৃত হওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৫ শীঘ্র, এই জগতের দৃশ্যপট পুরোপুরিভাবে পরিবর্তিত হবে। সার্বভৌমত্বের সঙ্গে জড়িত শত শত বছরের পুরোনো নাটক শেষ হবে। শয়তানকে শেষ পর্যন্ত ধ্বংসের জন্য মঞ্চ থেকে সরিয়ে দেওয়া হবে এবং ঈশ্বরের ইচ্ছা নিশ্চিতভাবেই প্রতিষ্ঠিত হবে। কিন্তু, এটা থেকে উপকার লাভ করার ও ঈশ্বরের বাক্যে ভবিষ্যদ্বাণীকৃত অনেক আশীর্বাদ উপভোগ করার জন্য আমাদের এখনই যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে হবে। আমরা কোনো নিরপেক্ষ অবস্থানে থাকতে পারব না। “সদাপ্রভু আমার সপক্ষ,” এই কথা বলতে সমর্থ হওয়ার জন্য আমাদের তাঁর পক্ষে থাকতে হবে।—গীত. ১১৮:৬, ৭.
আমরা নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি!
১৬. কেন আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে, মানুষের পক্ষে ঈশ্বরের প্রতি নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা সম্ভব?
১৬ আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করতে ও আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি কারণ প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই; আর ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” (১ করি. ১০:১৩) পৌলের দ্বারা উল্লেখিত পরীক্ষা বা প্রলোভনের উৎস কী এবং কীভাবে ঈশ্বর আমাদের জন্য রক্ষার পথ করে দেন?
১৭-১৯. (ক) প্রান্তরে ইস্রায়েলীয়রা কোন প্রলোভনগুলোর কাছে নতিস্বীকার করেছিল? (খ) কেন আমাদের পক্ষে যিহোবার প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা সম্ভব?
১৭ প্রান্তরে ইস্রায়েলের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে যেমন তুলে ধরা হয়েছে, “পরীক্ষা” বা প্রলোভন এমন পরিস্থিতিগুলোর মাধ্যমে আসে, যেগুলো আমাদেরকে ঈশ্বরের আইন ভঙ্গ করার জন্য প্ররোচিত করতে পারে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৬-১০.) ইস্রায়েলীয়রা প্রলোভন প্রতিরোধ করতে পারত, কিন্তু তারা “মন্দ বিষয়ের” অভিলাষ করেছিল, যখন যিহোবা তাদের খাদ্যের জন্য অলৌকিকভাবে এক মাসের জন্য ভারুই পাখি জুগিয়েছিলেন। যদিও লোকেরা অল্প সময়ের জন্য মাংস খেতে পারেনি কিন্তু ঈশ্বর তাদেরকে খাওয়ার জন্য পর্যাপ্ত মান্না দিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, ভারুই পাখি সংগ্রহ করার সময় তারা অনিয়ন্ত্রিত লোভের কাছে নতিস্বীকার করে প্রলোভনের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়েছিল।—গণনা. ১১:১৯, ২০, ৩১-৩৫.
১৮ এর আগে, মোশি যখন সীনয় পর্বতের ওপর ব্যবস্থা গ্রহণ করছিলেন, তখন ইস্রায়েলীয়রা প্রতিমাপূজক হয়ে উঠেছিল, বাছুর উপাসনা ও যৌনক্রিয়ায় রত হয়েছিল। তাদের দৃশ্যত নেতার অনুপস্থিতির অর্থ ছিল, তাদের প্রলোভন নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় ছিল। (যাত্রা. ৩২:১, ৬) প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করার ঠিক আগে, হাজার হাজার ইস্রায়েলীয় সেই মোয়াবীয় নারীদের দ্বারা প্রলুব্ধ হয়েছিল, যাদের সঙ্গে তারা অনৈতিক যৌনসম্পর্ক স্থাপন করেছিল। সেই সময়, হাজার হাজার ইস্রায়েলীয় তাদের পাপের কারণে মারা গিয়েছিল। (গণনা. ২৫:১, ৯) মাঝে মাঝে ইস্রায়েলের লোকেরা বিদ্রোহাত্মক অভিযোগ করে প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছিল, একবার মোশির বিরুদ্ধে ও সেইসঙ্গে স্বয়ং ঈশ্বরের বিরুদ্ধে কথা বলেছিল! (গণনা. ২১:৫) ইস্রায়েলের লোকেরা এমনকী দুষ্ট কোরহ, দাথন, অবীরাম ও তাদের সঙ্গীদের ধ্বংসের পরও বচসা করেছিল, ভুলভাবে এই যুক্তি দেখিয়েছিল যে, বিদ্রোহীদের শাস্তির বিষয়টা অন্যায্য ছিল। ফল স্বরূপ, ঈশ্বরের কাছ থেকে আসা এক মহামারিতে ১৪,৭০০ জন লোক ধ্বংস হয়েছিল।—গণনা. ১৬:৪১, ৪৯.
১৯ সবেমাত্র উল্লেখিত প্রলোভনগুলোর মধ্যে কোনোটাই এমন ছিল না যে, ইস্রায়েলীয়রা সেটাকে প্রতিরোধ করতে পারত না। লোকেরা প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার করেছিল কারণ তারা তাদের বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিল এবং যিহোবাকে, তাদের জন্য তাঁর প্রেমময় যত্ন এবং তাঁর বিভিন্ন পথের ন্যায্যতা সম্বন্ধে ভুলে গিয়েছিল। ইস্রায়েলীয়দের ক্ষেত্রে যেমন দেখা যায়, আমরা যে-প্রলোভনগুলোর মুখোমুখি হই, সেগুলো সমস্ত মানুষই ভোগ করে। আমরা যদি সেগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় প্রচেষ্টা করি ও আমাদেরকে টিকিয়ে রাখার জন্য ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করি, তাহলে আমরা আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখতে পারি। আমরা এই আস্থা রাখতে পারি কারণ “ঈশ্বর বিশ্বাস্য” এবং তিনি আমাদের ওপর “[আমাদের] শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা” বা প্রলোভন “ঘটিতে” দেবেন না। যিহোবা কখনোই আমাদেরকে সেই পর্যায়ে পরিত্যাগ করবেন না, যেটা আমাদেরকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলতে পারে, যে-পরিস্থিতি মানুষের পক্ষে তাঁর ইচ্ছা পালন করাকে অসম্ভব করে তোলে।—গীত. ৯৪:১৪.
২০, ২১. আমরা যখন প্রলোভিত হই, তখন কীভাবে যিহোবা ‘রক্ষার পথ’ করে দেন?
২০ যিহোবা আমাদেরকে প্রলোভন প্রতিরোধ করতে শক্তিশালী করার মাধ্যমে ‘রক্ষার পথ’ করে দেন। উদাহরণস্বরূপ, তাড়নাকারীরা হয়তো আমাদের বিশ্বাসকে অস্বীকার করানোর চেষ্টায় শারীরিক নির্যাতন করতে পারে। এই ধরনের আচরণ হয়তো আমাদেরকে আরও মারধর, নির্যাতন অথবা সম্ভাব্য মৃত্যু থেকে রেহাই পেতে আপোশ করার জন্য প্রলুব্ধ করতে পারে। কিন্তু, ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের অনুপ্রাণিত আশ্বাসের ভিত্তিতে আমরা জানি যে, প্রলোভনকে জাগিয়ে তোলে এমন পরিস্থিতি হচ্ছে সাময়িক মাত্র। যিহোবা এটাকে সেই পর্যায় পর্যন্ত যেতে দেবেন না, যেখানে আমরা আর তাঁর প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারব না। আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার জন্য যিহোবা আমাদের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করতে পারেন এবং আমাদের প্রয়োজনীয় আধ্যাত্মিক শক্তি দিতে পারেন।
২১ যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মার মাধ্যমে আমাদের টিকিয়ে রাখেন। এ ছাড়া, সেই আত্মা আমাদেরকে প্রলোভন প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজনীয় শাস্ত্রীয় চিন্তাধারা স্মরণ করিয়ে দেয়। (যোহন ১৪:২৬) এর ফলে, আমরা ভুল পথ অনুসরণ করার জন্য প্রতারিত হই না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা যিহোবার সার্বভৌমত্ব ও মানুষের নীতিনিষ্ঠার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত বিচার্য বিষয়গুলো বুঝতে পারি। এই জ্ঞানের দ্বারাই অনেকে মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ত থাকার জন্য ঈশ্বরের কাছ থেকে শক্তি লাভ করে টিকে রয়েছে। কিন্তু, মৃত্যু তাদেরকে রক্ষার পথ করে দেয়নি; বরং যিহোবার সাহায্যই তাদের জন্য এই বিষয়টা সম্ভবপর করে তুলেছে, যেন তারা প্রলোভনের কাছে নতিস্বীকার না করে শেষপর্যন্ত সহ্য করতে পারে। তিনি আমাদের জন্যও একই বিষয় করতে পারেন। বস্তুতপক্ষে, তিনি তাঁর বিশ্বস্ত দূতদেরও আমাদের জন্য অর্থাৎ “যাহারা পরিত্রাণের অধিকারী হইবে, . . . তাহাদের পরিচর্য্যার জন্য প্রেরিত” সেবাকারী হিসেবে ব্যবহার করেন। (ইব্রীয় ১:১৪) পরের প্রবন্ধ যেমন দেখায় যে, কেবলমাত্র নীতিনিষ্ঠ ব্যক্তিরাই চিরকাল ঈশ্বরের সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার আনন্দময় বিশেষ সুযোগ লাভ করার আশা রাখতে পারে। আমরাও তাদের মধ্যে থাকতে পারি, যদি আমরা আমাদের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে যিহোবার প্রতি আসক্ত থাকি।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• কেন যিহোবাকে আমাদের সার্বভৌম প্রভু হিসেবে স্বীকার করা উচিত?
• ঈশ্বরের প্রতি আমাদের নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখার অর্থ কী?
• কীভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা শীঘ্র তাঁর সার্বভৌমত্বকে প্রতিষ্ঠা করবেন?
• ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদের পরিপ্রেক্ষিতে, কেন নীতিনিষ্ঠা বজায় রাখা সম্ভব?
[২৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
শয়তান আদম ও হবাকে যিহোবার প্রতি আনুগত্যহীন হতে প্ররোচিত করেছিল
[২৬ পৃষ্ঠার চিত্র]
যিহোবার সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হোন