নারী ও পুরুষ প্রত্যেকের জন্য এক মর্যাদাপূর্ণ ভূমিকা
যিহোবা ঈশ্বর প্রথমে আদমকে, তারপর হবাকে সৃষ্টি করেছিলেন। হবাকে সৃষ্টি করার আগে, আদম জীবন সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। সেই সময়ে যিহোবা তাকে নির্দিষ্ট নির্দেশাবলি দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ২:১৫-২০) ঈশ্বরের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিল বলে আদমকে সেগুলো তার স্ত্রীকে জানাতে হয়েছিল। তাই, এটা যুক্তিসংগত যে, উপাসনাসহ সমস্ত ব্যাপারে তাকেই নেতৃত্ব দিতে হতো।
খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে একই ব্যবস্থা রয়েছে আর তা পরীক্ষা করার মাধ্যমে আমরা উপকৃত হতে পারি। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমি . . . পুরুষের উপরে কর্ত্তৃত্ব করিবার অনুমতি নারীকে দিই না, কিন্তু মৌনভাবে থাকিতে বলি। কারণ প্রথমে আদমকে, পরে হবাকে নির্ম্মাণ করা হইয়াছিল।” (১ তীমথিয় ২:১২, ১৩) এর অর্থ এই নয় যে, খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর কোনো সভাতে নারীকে একেবারেই নীরব থাকতে হবে। তাকে এই অর্থে নীরব থাকতে হবে যে, তিনি একজন পুরুষের সঙ্গে বিতর্কে জড়াবেন না। তিনি পুরুষের নিযুক্ত পদের মর্যাদাহানি করবেন না অথবা মণ্ডলীকে শিক্ষা দেওয়ার চেষ্টা করবেন না। মণ্ডলীকে পরিচালনা ও শিক্ষা দেওয়ার কার্যভার পুরুষদের দেওয়া হয়েছে কিন্তু নারীরা খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে বিভিন্ন উপায়ে অংশগ্রহণ করার মাধ্যমে সেগুলোতে অনেক অবদান রাখে।
ঈশ্বরের ব্যবস্থায় নারী ও পুরুষের নিজ নিজ ভূমিকা সম্বন্ধে আমাদের অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “পুরুষ স্ত্রীলোক হইতে নয়, বরং স্ত্রীলোক পুরুষ হইতে . . . তথাপি প্রভুতে স্ত্রীও পুরুষ ছাড়া নয়, আবার পুরুষও স্ত্রী ছাড়া নয় [অথবা একে অন্যের কাছ থেকে স্বাধীনও নয়]। কারণ যেমন পুরুষ হইতে স্ত্রী, তেমনি আবার স্ত্রী দিয়া পুরুষ হইয়াছে, কিন্তু সকলই ঈশ্বর হইতে।”—১ করিন্থীয় ১১:৮-১২.
নারীরা চমৎকার সুযোগগুলো উপভোগ করে
ইস্রায়েলকে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থার অধীনে নারীদের বিভিন্ন বিশেষ সুযোগ ছিল এবং তারা তাদের পদক্ষেপ গ্রহণ করার ব্যাপারে স্বাধীন ছিল। উদাহরণস্বরূপ, হিতোপদেশ ৩১:১০-৩১ পদ এক “গুণবতী স্ত্রী” সম্বন্ধে বলে, যিনি তার পরিবারের জন্য উত্তম দ্রব্যাদি কেনেন ও তা দিয়ে চমৎকার কাপড় তৈরি করেন। এমনকি ‘তিনি কটিবস্ত্র প্রস্তুত করিয়া বিক্রয় করেন’! (১৩, ২১-২৪ পদ) এই চমৎকার নারী “বাণিজ্য-জাহাজসমূহের ন্যায়” সতর্কতার সঙ্গে বাছাই করা খাদ্যসামগ্রী অন্বেষণ করেন, যদিও সেটা তাকে দূরবর্তী জায়গা থেকে সংগ্রহ করতে হয়। (১৪ পদ) “তিনি ক্ষেত্রের বিষয়ে সঙ্কল্প করিয়া তাহা ক্রয় করেন” এবং তিনি “দ্রাক্ষার উদ্যান প্রস্তুত করেন।” (১৬ পদ) যেহেতু “তাঁহার ব্যবসায় উত্তম,” তাই তার কাজকর্ম লাভজনক। (১৮ পদ) ‘আপন পরিবারের আচরণের প্রতি লক্ষ্য রাখার’ পাশাপাশি যিহোবার ভয়কারী এই কর্মঠ নারী নিঃস্বার্থভাবে অন্যদের সাহায্য করেন। (২০, ২৭ পদ) তাই, এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই যে, তিনি প্রশংসিত হন!—৩১ পদ।
মোশির মাধ্যমে জোগানো যিহোবার ব্যবস্থা নারীদের আধ্যাত্মিকভাবে উন্নতি লাভ করার প্রচুর সুযোগ দিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, যিহোশূয়ের পুস্তক ৮:৩৫ পদে আমরা পড়ি: “মোশি যাহা যাহা আদেশ করিয়াছিলেন, যিহোশূয় ইস্রায়েলের সমস্ত সমাজের এবং স্ত্রীলোকদের, বালকবালিকাদের ও তাহাদের মধ্যবর্ত্তী প্রবাসিগণের সম্মুখে সেই সমস্ত পাঠ করিলেন, একটী বাক্যেরও ত্রুটী করিলেন না।” যাজক ইষ্রা সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “সপ্তম মাসের প্রথম দিনে [তিনি] সমাজের সম্মুখে, স্ত্রী পুরুষ এবং যাহারা শুনিয়া বুঝিতে পারে, তাহাদের সম্মুখে সেই ব্যবস্থা-পুস্তক আনিলেন। আর জল-দ্বারের সম্মুখস্থ চকে স্ত্রী পুরুষ এবং যত লোক বুঝিতে পারে, তাহাদের নিকটে তিনি প্রাতঃকাল হইতে মধ্যাহ্ন পর্য্যন্ত তাহা পাঠ করিলেন, তাহাতে ব্যবস্থা-পুস্তক শ্রবণে সমস্ত লোকের কর্ণ নিবিষ্ট হইল।” (নহিমিয় ৮:২, ৩) এই ব্যবস্থা পাঠ করার ফলে নারীরা উপকৃত হয়েছিল। এ ছাড়া, তারা ধর্মীয় উৎসবগুলো উদ্যাপন করত। (দ্বিতীয় বিবরণ ১২:১২, ১৮; ১৬:১১, ১৪) সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, প্রাচীন ইস্রায়েলের নারীরা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক বজায় রাখতে এবং তাঁর কাছে ব্যক্তিগতভাবে প্রার্থনা করতে পারত।—১ শমূয়েল ১:১০.
সাধারণ কাল প্রথম শতাব্দীতে ঈশ্বরভয়শীল নারীরা যিশুর পরিচর্যা করার বিশেষ সুযোগ পেয়েছিল। (লূক ৮:১-৩) একবার বৈথনিয়ায় সান্ধ্যভোজের সময়ে একজন নারী তাঁর মাথায় ও পায়ে তেল ঢেলে দিয়েছিলেন। (মথি ২৬:৬-১৩; যোহন ১২:১-৭) যিশু তাঁর পুনরুত্থানের পর যাদেরকে দেখা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে নারীরাও ছিল। (মথি ২৮:১-১০; যোহন ২০:১-১৮) যিশুর স্বর্গারোহণের পর, প্রায় ১২০ জনের একটা দল একত্রিত হয়েছিল, যাদের মধ্যে ‘স্ত্রীলোকেরা ও যীশুর মাতা মরিয়ম’ ছিল। (প্রেরিত ১:৩-১৫) কোনো সন্দেহ নেই যে, এই নারীদের মধ্যে অনেকে অথবা সকলেই সা.কা. ৩৩ সালে পঞ্চাশত্তমীর দিনে যিরূশালেমের সেই ওপরের কুঠরিতে ছিল, যখন পবিত্র আত্মা পাঠানো হয়েছিল এবং যিশুর শিষ্যরা অলৌকিকভাবে বিভিন্ন ভাষায় কথা বলেছিল।—প্রেরিত ২:১-১২.
যারা যোয়েল ২:২৮, ২৯ পদের পরিপূর্ণতার অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল, তাদের মধ্যে নারী ও পুরুষ উভয়েই ছিল, যেমনটা প্রেরিত পিতর পঞ্চাশত্তমীর দিনে উদ্ধৃত করেছিলেন: “আমি [সদাপ্রভু] মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আপন আত্মা সেচন করিব; তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রগণ ও তোমাদের কন্যাগণ ভাববাণী বলিবে, . . . আবার আমার দাসদের উপরে এবং আমার দাসীদের উপরে সেই সময়ে আমি আমার আত্মা সেচন করিব।” (প্রেরিত ২:১৩-১৮) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনের পর কিছু সময় পর্যন্ত খ্রিস্টান নারীদের আত্মার বর দান করে অনুগ্রহ প্রদান করা হয়েছিল। তারা ভাববাণী বলেছিল অর্থাৎ বিদেশি ভাষায় শাস্ত্রীয় সত্যগুলো বলেছিল।
প্রেরিত পৌল রোমের খ্রিস্টানদের উদ্দেশে লেখা তার পত্রে আন্তরিকতার সঙ্গে ‘আমাদের ভগিনী ফৈবী’ সম্বন্ধে বলেন, তাদের কাছে তার সম্বন্ধে সুপারিশ করেন। এ ছাড়া, তিনি ত্রুফেণা ও ত্রুফোষা সম্বন্ধেও উল্লেখ করেন, তাদেরকে এমন নারী বলে সম্বোধন করেন, “যাঁহারা প্রভুতে পরিশ্রম করেন।” (রোমীয় ১৬:১, ২, ১২) যদিও প্রাথমিক খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এই নারীদের নিযুক্ত পদ ছিল না কিন্তু তাদের ও সেইসঙ্গে আরও অনেক নারীর ঈশ্বরের দ্বারা মনোনীত হওয়ার বিশেষ সুযোগ ছিল, যাতে তারা ঈশ্বরের পুত্র যিশু খ্রিস্টের সঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে সহযোগী হতে পারে।—রোমীয় ৮:১৬, ১৭; গালাতীয় ৩:২৮, ২৯.
আজকে ধার্মিক নারীরা কত বড় সুযোগই না উপভোগ করে থাকে! “প্রভু [“যিহোবা,” NW] বাক্য দেন, শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী,” গীতসংহিতা ৬৮:১১ পদ বলে। এই নারীরা প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। উদাহরণস্বরূপ, গৃহ বাইবেল অধ্যয়নে তাদের দক্ষতাপূর্ণ শিক্ষা অনেককে সেই সত্য শিক্ষাগুলো গ্রহণ করতে পরিচালিত করছে, যেগুলো ঈশ্বরকে খুশি করে। যে-বিবাহিত খ্রিস্টান নারীরা তাদের সন্তানদের বিশ্বাসী হয়ে উঠতে সাহায্য করে এবং তাদের স্বামীদের সমর্থন করে, যাদের মণ্ডলীতে বিভিন্ন দায়িত্ব রয়েছে, তারাও প্রশংসা লাভের যোগ্য। (হিতোপদেশ ৩১:১০-১২, ২৮) ঈশ্বরের ব্যবস্থায় অবিবাহিত নারীদেরও মর্যাদাপূর্ণ অবস্থান রয়েছে এবং খ্রিস্টান পুরুষদের “প্রাচীনাদিগকে মাতার ন্যায়, যুবতীদিগকে সম্পূর্ণ শুদ্ধ ভাবে ভগিনীর ন্যায় জানিয়া অনুনয়” করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।—১ তীমথিয় ৫:২.
পুরুষের বিভিন্ন কার্যভার
একজন খ্রিস্টান পুরুষের ঐশিকভাবে নিযুক্ত ভূমিকা রয়েছে এবং তিনি তা পালন করবেন বলে আশা করা হয়। পৌল বলেছিলেন: “আমার ইচ্ছা এই, যেন তোমরা জান যে, প্রত্যেক পুরুষের মস্তকস্বরূপ খ্রীষ্ট, এবং স্ত্রীর মস্তকস্বরূপ পুরুষ, আর খ্রীষ্টের মস্তকস্বরূপ ঈশ্বর।” (১ করিন্থীয় ১১:৩) পুরুষেরও একজন মস্তক রয়েছে আর তিনি হলেন খ্রিস্ট। বস্তুতপক্ষে পুরুষ, খ্রিস্টের কাছে এবং সর্বোপরি ঈশ্বরের কাছে নিকাশ দিতে বাধ্য। আর ঈশ্বর চান যেন পুরুষ তার মস্তকপদকে প্রেমপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করে। (ইফিষীয় ৫:২৫) মানব সৃষ্টির সময় থেকেই তা হয়ে এসেছে।
বাইবেল দেখায় যে, ঈশ্বর পুরুষকে তার মস্তকপদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিভিন্ন কার্যভার দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবা একজন পুরুষ নোহকে জলপ্লাবনের সময়ে জীবন রক্ষা করার জন্য জাহাজ নির্মাণ করতে দিয়েছিলেন। (আদিপুস্তক ৬:৯–৭:২৪) আরেকজন পুরুষ অব্রাহামের কাছে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল যে, তার বংশের মাধ্যমে পৃথিবীর সমস্ত পরিবার ও জাতি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হবে। সেই বংশের মুখ্য অংশ হলেন খ্রিস্ট যিশু। (আদিপুস্তক ১২:৩; ২২:১৮; গালাতীয় ৩:৮-১৬) ঈশ্বর মিশর থেকে ইস্রায়েলীয়দের বের করে নিয়ে আসার জন্য একজন পুরুষ মোশিকে নিযুক্ত করেছিলেন। (যাত্রাপুস্তক ৩:৯, ১০, ১২, ১৮) মোশির মাধ্যমেই যিহোবা আইনবিধি দিয়েছিলেন, যা ব্যবস্থা চুক্তি বা মোশির ব্যবস্থা বলে পরিচিত। (যাত্রাপুস্তক ২৪:১-১৮) একইভাবে, বাইবেল লেখকরাও ছিল পুরুষ।
খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর মস্তক হিসেবে যিশু “মনুষ্যদিগকে নানা বর দান করিলেন” বা দানরূপ পুরুষদের প্রদান করলেন। (ইফিষীয় ১:২২; ৪:৭-১৩) অধ্যক্ষপদের জন্য যোগ্যতাগুলো তালিকাবদ্ধ করার সময়ে পৌল পুরুষদের প্রতি নির্দেশ করেছিলেন। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯) তাই, যিহোবার সাক্ষিদের মণ্ডলীগুলোতে পুরুষেরা অধ্যক্ষ বা প্রাচীন এবং পরিচারক দাস হিসেবে সেবা করে থাকে। (ফিলিপীয় ১:১, ২; ১ তীমথিয় ৩:৮-১০, ১২) কেবলমাত্র পুরুষেরাই খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে পালক হিসেবে সেবা করবে। (১ পিতর ৫:১-৪) কিন্তু ইতিমধ্যেই যেমন উল্লেখ করা হয়েছে যে, নারীদের চমৎকার ঈশ্বরদত্ত বিশেষ সুযোগগুলো রয়েছে।
তাদের নিজ নিজ ভূমিকায় সুখী
তাদের ঈশ্বরদত্ত ভূমিকা পালন করা নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য সুখ নিয়ে আসে। স্বামী-স্ত্রী যখন খ্রিস্ট ও তাঁর মণ্ডলীর উদাহরণ অনুকরণ করে, তখন সুখী বিবাহিত জীবন লাভ করে থাকে। “স্বামীরা,” পৌল লিখেছিলেন, “তোমরা আপন আপন স্ত্রীকে সেইরূপ প্রেম কর, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; . . . তোমরাও প্রত্যেকে আপন আপন স্ত্রীকে তদ্রূপ আপনার মত প্রেম কর।” (ইফিষীয় ৫:২৫-৩৩) তাই, স্বামীদের তাদের মস্তকপদকে স্বার্থপর উপায়ে নয় বরং প্রেমপূর্ণ উপায়ে ব্যবহার করতে হবে। খ্রিস্টের মণ্ডলী সিদ্ধ মানুষদের নিয়ে গঠিত নয়। কিন্তু, তারপরও যিশু মণ্ডলীকে ভালবাসেন ও এর যত্ন নেন। একইভাবে, একজন খ্রিস্টান স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে ভালবাসা ও তার যত্ন নেওয়া।
একজন খ্রিস্টান স্ত্রীর “উচিত যেন সে স্বামীকে ভয় [“সম্মান,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] করে।” (ইফিষীয় ৫:৩৩) এই বিষয়ে স্ত্রী উদাহরণ হিসেবে মণ্ডলীকে দেখতে পারেন। ইফিষীয় ৫:২১-২৪ পদ বলে: “খ্রীষ্টের ভয়ে এক জন অন্য জনের বশীভূত হও। নারীগণ, তোমরা যেমন প্রভুর, তেমনি নিজ নিজ স্বামীর বশীভূতা হও। কেননা স্বামী স্ত্রীর মস্তক, যেমন খ্রীষ্টও মণ্ডলীর মস্তক; তিনি আবার দেহের ত্রাণকর্ত্তা; কিন্তু মণ্ডলী যেমন খ্রীষ্টের বশীভূত, তেমনি নারীগণ সর্ব্ববিষয়ে আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হউক।” যদিও একজন খ্রিস্টান স্ত্রী হয়তো মাঝে মাঝে তার স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকাকে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক বা কঠিন বলে মনে করতে পারেন কিন্তু তা “প্রভুতে উপযুক্ত।” (কলসীয় ৩:১৮) তার স্বামীর প্রতি বশীভূত থাকা তার পক্ষে আরও সহজ হবে যদি তিনি মনে রাখেন যে, তা করা প্রভু যিশু খ্রিস্টকে খুশি করে।
এমনকি যদি তার স্বামী একজন সহবিশ্বাসী না-ও হন, তবুও একজন খ্রিস্টান স্ত্রীকে তার মস্তকপদের প্রতি বশীভূত থাকতে হবে। প্রেরিত পিতর বলেন: “হে ভার্য্যা সকল, তোমরা আপন আপন স্বামীর বশীভূতা হও; যেন কেহ কেহ যদিও বাক্যের অবাধ্য হয়, তথাপি যখন তাহারা তোমাদের সভয় বিশুদ্ধ আচার ব্যবহার স্বচক্ষে দেখিতে পায়, তখন বাক্য বিহীনে আপন আপন ভার্য্যার আচার ব্যবহার দ্বারা তাহাদিগকে লাভ করা হয়।” (১ পিতর ৩:১, ২) সারা, যিনি তার স্বামী অব্রাহামকে সম্মান করতেন, তিনি ইস্হাককে গর্ভে ধারণ করার এবং যিশু খ্রিস্টের একজন পূর্বপুরুষী হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করেছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১১, ১২; ১ পিতর ৩:৫, ৬) যে-স্ত্রীরা সারার মতো আচরণ করে, তারাও নিশ্চিতভাবে ঈশ্বরের দ্বারা পুরস্কৃত হয়।
নারী ও পুরুষেরা যখন তাদের ঈশ্বরদত্ত ভূমিকা পালন করে, তখন শান্তি ও একতা বিরাজ করে। এটা তাদের জন্য পরিতৃপ্তি ও সুখ নিয়ে আসে। অধিকন্তু, শাস্ত্রীয় চাহিদাগুলো মেনে চলে প্রত্যেকে ঈশ্বরের ব্যবস্থায় এক বিশেষ অবস্থানসহ মর্যাদার অধিকারী হয়ে থাকে।
[৭ পৃষ্ঠার বাক্স]
তারা তাদের ঈশ্বরদত্ত ভূমিকা সম্বন্ধে যা মনে করে
“আমার স্বামী তার মস্তকপদকে প্রেমপূর্ণ উপায়ে ও সদয়ভাবে ব্যবহার করে,” সুজান বলেন। “আমরা সাধারণত সিদ্ধান্তগুলোর ব্যাপারে আলোচনা করে থাকি আর আমার স্বামী যখন সিদ্ধান্ত নেয় যে কী করা হবে বা কী করা হবে না, তখন আমি জানি যে তা আমাদের উপকারের জন্যই। খ্রিস্টান স্ত্রীদের জন্য যিহোবার ব্যবস্থা আমাকে সত্যিই সুখী করে ও আমাদের বিয়েকে দৃঢ় করে। আমাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে এবং আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো অর্জন করার জন্য আমরা একসঙ্গে কাজ করে থাকি।”
মিন্ডি নামে একজন নারী মন্তব্য করেন: “যিহোবা তাঁর নারী দাসদের যে-ভূমিকা দান করেছেন, তা আমাদের প্রতি তাঁর ভালবাসার এক আশ্বাসস্বরূপ। আমি মনে করি যে, আমার স্বামীকে শ্রদ্ধা ও সম্মান প্রদান করা আর সেইসঙ্গে মণ্ডলীতে তার দায়িত্বগুলো পালন করতে তাকে সমর্থন করা হল, এই ব্যবস্থার জন্য যিহোবার প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার উপায়।”
[৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
ঈশ্বর পুরুষের মস্তকপদের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নোহ, অব্রাহাম ও মোশিকে
বিভিন্ন কার্যভার দিয়েছিলেন
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
“শুভবার্ত্তার প্রচারিকাগণ মহাবাহিনী”