অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৫০
“মৃত ব্যক্তিদের কীভাবে পুনরুত্থিত করা হবে?”
“মৃত্যু, তোমার জয় কোথায়? মৃত্যু, তোমার হুল কোথায়?”—১ করি. ১৫:৫৫.
গান সংখ্যা ১ যিহোবার গুণাবলি
সারাংশa
১-২. কেন সমস্ত খ্রিস্টানের স্বর্গীয় পুনরুত্থানের বিষয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত?
বর্তমানে যারা যিহোবার সেবা করছে, তাদের মধ্যে বেশিরভাগ লোকেরই পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। তবে, আত্মায় অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের অবশিষ্টাংশের স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়ার প্রত্যাশা রয়েছে। এই অভিষিক্ত ব্যক্তিরা, ভবিষ্যতে তাদের জীবন কেমন হবে, সেই বিষয়ে অত্যন্ত আগ্রহী। কিন্তু, যাদের পার্থিব আশা রয়েছে, তাদের বিষয়ে কী বলা যায়? আমরা দেখব যে, স্বর্গীয় পুনরুত্থান সেই ব্যক্তিদের জন্যও আশীর্বাদ নিয়ে আসবে, যাদের পৃথিবীতে চিরকাল বেঁচে থাকার প্রত্যাশা রয়েছে। তাই, আমাদের প্রত্যাশা স্বর্গীয় অথবা পার্থিব, যা-ই হোক না কেন, আমাদের স্বর্গীয় পুনরুত্থানের বিষয়ে আগ্রহী হওয়া উচিত।
২ ঈশ্বর প্রথম শতাব্দীতে যিশুর কয়েক জন শিষ্যকে স্বর্গীয় প্রত্যাশার বিষয়ে লেখার জন্য পবিত্র শক্তির দ্বারা অনুপ্রাণিত করেছিলেন। প্রেরিত যোহন বলেছেন: “এখন আমরা ঈশ্বরের সন্তান, কিন্তু ভবিষ্যতে আমরা কেমন হব, তা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে, আমরা এটা জানি, যখন ঈশ্বর প্রকাশিত হবেন, তখন আমরা তাঁর মতো হব।” (১ যোহন ৩:২) তাই, অভিষিক্ত খ্রিস্টানেরা জানে না যে, তারা যখন আত্মিক দেহে স্বর্গে পুনরুত্থিত হবে, তখন তারা কেমন হবে। কিন্তু, তারা যখন তাদের পুরস্কার লাভ করবে, তখন তারা আক্ষরিক অর্থে যিহোবাকে দেখতে পাবে। বাইবেল স্বর্গীয় পুনরুত্থান সম্বন্ধে বিস্তারিতভাবে সমস্ত কিছু প্রকাশ করে না, কিন্তু প্রেরিত পৌল এই সম্বন্ধে কিছু তথ্য জানান। অভিষিক্ত ব্যক্তিরা সেইসময়ে খ্রিস্টের সঙ্গে থাকবে, যখন তিনি “সমস্ত সরকার এবং সমস্ত কর্তৃত্ব ও ক্ষমতা” এবং “শেষ শত্রু যে মৃত্যু,” সেটাকেও “শেষ করে” দেবেন। পরিশেষে, যিশু এবং তাঁর সহ-শাসকেরা যিহোবার নিয়ন্ত্রণাধীন হবেন এবং সমস্ত কিছু তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন করবেন। (১ করি. ১৫:২৪-২৮) সেটা কতই-না চমৎকার এক সময় হবে!b
৩. প্রথম করিন্থীয় ১৫:৩০-৩২ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয়, পুনরুত্থানের উপর পৌলের বিশ্বাস তাকে কী করতে সাহায্য করেছিল?
৩ পুনরুত্থানের উপর পৌলের বিশ্বাস তাকে বিভিন্ন পরীক্ষা সহ্য করতে সাহায্য করেছিল। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৩০-৩২.) তিনি করিন্থীয়দের বলেছিলেন: “আমি প্রতিদিন মৃত্যুর মুখোমুখি হই।” পৌল আরও লিখেছিলেন, ‘আমি ইফিষে বন্য পশুর সঙ্গে লড়াই’ করেছি। তিনি হয়তো ইফিষের কোনো স্টেডিয়ামে সত্যিকারের পশুদের সঙ্গে লড়াই করার বিষয়ে বলছিলেন। (২ করি. ১:৮; ৪:১০; ১১:২৩) অথবা তিনি হয়তো শত্রুভাবাপন্ন যিহুদিদের এবং সেই ব্যক্তিদের সম্বন্ধে বলছিলেন, যারা “বন্য পশুর” মতো ছিল। (প্রেরিত ১৯:২৬-৩৪; ১ করি. ১৬:৯) যা-ই হোক না কেন, পৌল বিভিন্ন বিপদের মুখোমুখি হয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও, তিনি ভবিষ্যৎ সম্বন্ধে এক ইতিবাচক মনোভাব বজায় রেখেছিলেন।—২ করি. ৪:১৬-১৮.
৪. কীভাবে পুনরুত্থানের প্রত্যাশা বর্তমানে খ্রিস্টানদের আরও শক্তিশালী করেছে? (প্রচ্ছদে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
৪ আমরা এক কঠিন সময়ে বাস করছি। আমাদের কোনো কোনো ভাই অপরাধের শিকার হয়েছে। কিংবা অন্যেরা যুদ্ধ চলছে এমন এলাকাগুলোতে বাস করে, যেখানে তারা নিরাপদ বোধ করে না। আবার অন্যেরা নিজেদের জীবন অথবা স্বাধীনতাকে ঝুঁকির মুখে রেখে এমন জায়গাগুলোতে যিহোবার সেবা করে, যেখানে প্রচার কাজের উপর বিধি-নিষেধ অথবা এমনকী নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তারপরও, এই ভাই-বোনেরা ক্রমাগত যিহোবার সেবা করছে আর এভাবে আমাদের জন্য এক উত্তম উদাহরণ স্থাপন করছে। তারা ভয় পায় না কারণ তারা জানে যে, তারা যদি এখন এমনকী তাদের জীবন হারায়, তবুও যিহোবা ভবিষ্যতে তাদের আরও উত্তম কিছু দেবেন।
৫. কোন বিপদজনক দৃষ্টিভঙ্গি পুনরুত্থানের উপর আমাদের বিশ্বাসকে দুর্বল করে দিতে পারে?
৫ পৌল তার ভাইদের এমন এক বিপদজনক দৃষ্টিভঙ্গি সম্বন্ধে সাবধান করেছিলেন, যে-দৃষ্টিভঙ্গি কারো কারো ছিল: “মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থান যদি না-ই হয়, তা হলে ‘এসো, আমরা খাওয়া-দাওয়া করি, কারণ কাল তো আমরা মারা যাব।’” এইরকম দৃষ্টিভঙ্গি আসলে এমনকী পৌলের সময়ের আগেও ছিল। তিনি হয়তো যিশাইয় ২২:১৩ পদ থেকে উদ্ধৃতি করছিলেন, যেখানে ইজরায়েলীয়দের মনোভাব সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে। ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার পরিবর্তে তারা এক বিলাসী জীবনযাপনের পিছনে ছুটেছিল। মূলত, সেই ইজরায়েলীয়দের মনোভাব ছিল, “যেহেতু যেকোনো সময় জীবন শেষ হয়ে যাতে পারে, তাই এখনই জীবন উপভোগ করা উচিত,” যে-মনোভাব এমনকী বর্তমানেও খুবই সাধারণ। কিন্তু, ইজরায়েল জাতির মন্দ পরিণতি সম্বন্ধে বাইবেলে লিপিবদ্ধ রয়েছে।—২ বংশা. ৩৬:১৫-২০.
৬. বন্ধুবান্ধব বাছাই করার সময় কীভাবে পুনরুত্থানের প্রত্যাশার দ্বারা আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত?
৬ আমরা জানি, যিহোবা মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থিত করবেন। তাই, বন্ধুবান্ধব বাছাই করার সময় এই বিষয়টার দ্বারা আমাদের প্রভাবিত হওয়া উচিত। করিন্থের ভাইদের এমন বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে মেলামেশা করার বিষয়ে সতর্ক থাকতে হয়েছিল, যারা পুনরুত্থানকে অস্বীকার করেছিল। বর্তমানে, আমরা এখান থেকে এক শিক্ষা লাভ করি: আমরা যদি নিয়মিতভাবে এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করি, যারা পরিণতি নিয়ে চিন্তা না করে কেবল আনন্দফুর্তি করতেই ভালোবাসে, তা হলে তা কখনোই উপকারজনক হয় না। একজন খ্রিস্টান যদি এইরকম ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করেন, তা হলে তার প্রকৃত খ্রিস্টীয় দৃষ্টিভঙ্গি ও অভ্যাসগুলো খারাপ হয়ে যেতে পারে। সত্যি বলতে কী, এইরকম ব্যক্তিরা এমনকী তাকে সেই বিষয়গুলো করার জন্য পরিচালিত করতে পারে, যেগুলো ঈশ্বর ঘৃণা করেন। তাই, পৌল দৃঢ়ভাবে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা যা সঠিক, তা করার জন্য সচেতন হও। আর তোমরা পাপ কোরো না।”—১ করি. ১৫:৩৩, ৩৪.
কোন ধরনের দেহ?
৭. পুনরুত্থান সম্বন্ধে অনেকে হয়তো কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে, যেমনটা ১ করিন্থীয় ১৫:৩৫-৩৮ পদে তুলে ধরা হয়েছে?
৭ প্রথম করিন্থীয় ১৫:৩৫-৩৮ পদ পড়ুন। পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দেহ জাগিয়ে তুলতে চায়, এমন একজন ব্যক্তি হয়তো এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করেছে: “মৃত ব্যক্তিদের কীভাবে পুনরুত্থিত করা হবে?” এই ব্যাপারে পৌলের উত্তর নিয়ে বিবেচনা করা আমাদের জন্য উপকারজনক কারণ মৃত্যুর পর কী হয়, তা নিয়ে বর্তমানে অনেকের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। কিন্তু, বাইবেল এই ব্যাপারে কী শিক্ষা দেয়?
৮. কোন দৃষ্টান্ত আমাদের স্বর্গীয় পুনরুত্থান সম্বন্ধে বুঝতে সাহায্য করে?
৮ একজন ব্যক্তি যখন মারা যান, তখন তার দেহ ক্ষয় পেতে শুরু করে। কিন্তু, যিনি নিখিলবিশ্ব সৃষ্টি করেছেন, তিনি সেই ব্যক্তিকে এক উপযুক্ত দেহ দিয়ে পুনরুত্থিত করতে পারেন। (আদি. ১:১; ২:৭) ঈশ্বরের যে কোনো ব্যক্তিকে একই দেহ দেওয়ার প্রয়োজন নেই, সেই বিষয়টা দেখানোর জন্য পৌল একটা দৃষ্টান্ত ব্যবহার করেছিলেন। ‘একটা বীজের’ কথা চিন্তা করুন। শস্যের একটা বীজ যখন ভূমিতে রোপণ করা হয়, তখন সেটা অঙ্কুরিত হয় এবং একটা নতুন চারাগাছে পরিণত হয়। নতুন চারাগাছ সেই ছোট্ট বীজ থেকে অনেক আলাদা। আমাদের সৃষ্টিকর্তা যে “নিজের ইচ্ছামতো দেহ” দিতে পারেন, এটা দেখানোর জন্য পৌল এই তুলনাটা ব্যবহার করেছিলেন।—১ করি. ১৫:৩৮, পাদ.।
৯. প্রথম করিন্থীয় ১৫:৩৯-৪১ পদে দেহের বিষয়ে কোন পার্থক্য তুলে ধরা হয়েছে?
৯ প্রথম করিন্থীয় ১৫:৩৯-৪১ পদ পড়ুন। পৌল উল্লেখ করেছিলেন যে, সৃষ্টির মধ্যে অনেক বৈচিত্র্য রয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ, বিভিন্ন রকমের দেহ রয়েছে, যেমন গবাদি পশুর দেহ, পাখির দেহ এবং মাছের দেহ। তিনি বলেছিলেন, আকাশে আমরা সূর্য ও চাঁদের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পাই। আর তিনি উল্লেখ করেছিলেন, “সৌন্দর্যের দিক দিয়ে একটা নক্ষত্র অন্য নক্ষত্রের চেয়ে আলাদা।” এটা ঠিক, আমরা খালি চোখে এই পার্থক্য দেখতে পাই না। কিন্তু, বিজ্ঞানীরা আমাদের জানায় যে, বিভিন্ন ধরনের নক্ষত্র রয়েছে, কোনোটা বড়ো, কোনোটা ছোটো আবার কোনোটা লাল, কোনোটা সাদা এবং কোনোটা হলুদ রঙের মতো। পৌল এও বলেছিলেন, “স্বর্গীয় দেহ রয়েছে, আবার পার্থিব দেহও রয়েছে।” তিনি কী বুঝিয়েছিলেন? পৃথিবীতে আমাদের মাংসিক দেহ রয়েছে কিন্তু স্বর্গে আত্মিক দেহ রয়েছে, ঠিক যেমনটা স্বর্গদূতদের রয়েছে।
১০. যাদের স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে, তাদের কোন ধরনের দেহ থাকবে?
১০ লক্ষ করুন, পৌল এরপর কী বলেছেন: “মৃত ব্যক্তিদের পুনরুত্থানও সেইরকম। একটা বীজের মতো দেহকে নশ্বর অবস্থায় বোনা হয়, কিন্তু অবিনশ্বর অবস্থায় ওঠানো হয়।” অবশ্য, মারা যাওয়ার পর মানবদেহ ক্ষয় পেতে শুরু করে এবং ধুলোতে মিশে যায়। (আদি. ৩:১৯) তা হলে, কীভাবে এমনটা হতে পারে যে, একটা দেহকে “অবিনশ্বর অবস্থায় ওঠানো হয়?” পৌল এমন কোনো মানুষের বিষয়ে বলছিলেন না, যাকে পৃথিবীতে পুনরুত্থিত করা হয়েছে, যেমন সেই ব্যক্তিরা, যাদের ইলীশায়, এলিয় ও যিশু পুনরুত্থিত করেছিলেন। পৌল এমন একজন ব্যক্তির বিষয়ে বলছিলেন, যাকে ‘স্বর্গীয় দেহে’ পুনরুত্থিত করা হয়েছে।—১ করি. ১৫:৪২-৪৪.
১১-১২. যিশুকে যখন পুনরুত্থিত করা হয়েছিল, তখন তার কোন পরিবর্তন হয়েছিল এবং অভিষিক্ত ব্যক্তিদের কীভাবে একইরকম পরিবর্তন হবে?
১১ যিশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন, তখন তাঁর মাংসিক দেহ ছিল। কিন্তু, তিনি যখন পুনরুত্থিত হন, তখন তিনি “জীবনদায়ী অদৃশ্য প্রাণী হলেন” এবং স্বর্গে ফিরে গেলেন। একইভাবে, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের আত্মিক দেহ দিয়ে পুনরুত্থিত করা হবে। পৌল বলেছিলেন: “আমরা যেমন ধুলো থেকে তৈরি সেই ব্যক্তির মতো হয়েছি, তেমনই স্বর্গ থেকে আসা সেই ব্যক্তির মতোও হব।”—১ করি. ১৫:৪৫-৪৯.
১২ পৌল পুনরুত্থান সম্বন্ধে তার আলোচনার শেষ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছিলেন। এটা মনে রাখা গুরুত্বপূর্ণ যে, যিশুকে মানবদেহ দিয়ে পুনরুত্থিত করা হয়নি। পৌল বলেছিলেন: “রক্ত-মাংসের দেহ ঈশ্বরের” স্বর্গীয় “রাজ্যে প্রবেশ করতে পারে না।” (১ করি. ১৫:৫০) প্রেরিতদের এবং অন্য অভিষিক্ত ব্যক্তিদের রক্ত-মাংসের নশ্বর দেহ দিয়ে স্বর্গে পুনরুত্থিত করা হবে না। কখন তাদের পুনরুত্থিত করা হবে? পৌল বলেছিলেন যে, এই পুনরুত্থান ভবিষ্যতে ঘটবে; এটা এমন বিষয় নয়, যা তারা মারা যাওয়ার সঙ্গেসঙ্গে ঘটবে। পৌল যখন ১ করিন্থীয় বইটি লিখেছিলেন, তখন শিষ্যদের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই ‘মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছিল,’ যেমন প্রেরিত যাকোব। (প্রেরিত ১২:১, ২) অন্য প্রেরিতেরা এবং অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তখনও “মৃত্যুতে ঘুমিয়ে” পড়েনি।—১ করি. ১৫:৬.
মৃত্যুর উপর জয়
১৩. যিশুর উপস্থিতির সময় কী ঘটবে?
১৩ যিশু ও পৌল ইতিহাসের এক বিশেষ সময়ের বিষয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আর সেটা হল খ্রিস্টের উপস্থিতি। সেই উপস্থিতির সময় যুদ্ধ, ভূমিকম্প ও মহামারি হবে এবং পৃথিবীব্যাপী অন্যান্য খারাপ বিষয় ঘটবে। আমরা ১৯১৪ সাল থেকে বাইবেলের এই ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হতে দেখছি। সেই উপস্থিতির সময় আরেকটা উল্লেখযোগ্য বিষয় হবে। যিশু বলেছিলেন, “সমস্ত জাতি যেন” ঈশ্বরের প্রতিষ্ঠিত রাজ্য সম্বন্ধীয় সুসমাচার “জানতে পারে, তাই পুরো পৃথিবীতে এই সুসমাচার প্রচার করা হবে এবং এরপর শেষ আসবে।” (মথি ২৪:৩, ৭-১৪) পৌল বলেছিলেন, “প্রভুর উপস্থিতির সময়” আরও একটা বিষয় ঘটবে আর সেটা হল সেই অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পুনরুত্থান, যারা “মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়েছে।”—১ থিষল. ৪:১৪-১৬; ১ করি. ১৫:২৩.
১৪. খ্রিস্টের উপস্থিতির সময় যে-অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মারা যায়, তাদের প্রতি কী ঘটে?
১৪ এখন যে-অভিষিক্ত ব্যক্তিরা তাদের পার্থিব জীবনধারা শেষ করে, তারা সঙ্গেসঙ্গে স্বর্গে পুনরুত্থিত হয়। ১ করিন্থীয় ১৫:৫১, ৫২ পদে লিপিবদ্ধ পৌলের এই কথাগুলোর মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা হয়েছে: “আমরা সকলে যে মৃত্যুতে ঘুমিয়ে পড়ব, এমন নয়, কিন্তু আমরা সকলে পরিবর্তিত হব, মুহূর্তের মধ্যে, চোখের পলকে, শেষ তূরীধ্বনির সঙ্গেসঙ্গে।” পৌলের এই কথাগুলো এখন পরিপূর্ণ হচ্ছে! পুনরুত্থানের পর খ্রিস্টের এই ভাইয়েরা পরম আনন্দ লাভ করবে; তারা “চিরকাল প্রভুর সঙ্গে” থাকবে।—১ থিষল. ৪:১৭.
১৫. যারা “চোখের পলকে” পরিবর্তিত হবে, তারা কী করবে?
১৫ বাইবেল আমাদের জানায়, যারা “চোখের পলকে” পরিবর্তিত হবে, তারা স্বর্গে কী করবে। যিশু তাদের বলেন: “যে জয় করে এবং শেষ পর্যন্ত আমার আজ্ঞা পালন করে, তাকে আমি জগতের লোকদের উপর শাসন করার অধিকার দেব, ঠিক যেমন আমি আমার পিতার কাছ থেকে লাভ করেছি। আর সে লোহার দণ্ড দিয়ে লোকদের এমনভাবে শাসন করবে যে, তারা মাটির পাত্রের মতো ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।” (প্রকা. ২:২৬, ২৭) তারা যিশুকে অনুসরণ করবে এবং লোহার দণ্ড দিয়ে জাতিগুলোকে শাসন করবে।—প্রকা. ১৯:১১-১৫.
১৬. কীভাবে অগণিত মানুষ মৃত্যুর উপর জয় লাভ করবে?
১৬ স্পষ্টতই, অভিষিক্ত ব্যক্তিরা মৃত্যুর উপর জয় লাভ করবে। (১ করি. ১৫:৫৪-৫৭) তাদের পুনরুত্থান, আসন্ন হর্মাগিদোনের যুদ্ধে পৃথিবীব্যাপী সমস্ত দুষ্টতা দূর করার কাজে সাহায্য করার জন্য তাদের সুযোগ দেবে। লক্ষ লক্ষ খ্রিস্টান পুরুষ ও নারী “মহাক্লেশ পার হয়ে” আসবে এবং নতুন জগতে রক্ষা পাবে। (প্রকা. ৭:১৪) পৃথিবীতে সেই রক্ষাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মৃত্যুর উপর আরেকটা জয়ের—অতীতে মারা গিয়েছে এমন কোটি কোটি লোকের পুনরুত্থানের—চাক্ষুষ সাক্ষি হবে। একটু কল্পনা করুন, যখন সেই চমৎকার ঘটনা ঘটবে, তখন আমরা কতটা আনন্দিত হব! (প্রেরিত ২৪:১৫) আর যারা যিহোবার প্রতি পুরোপুরি অনুগত বলে প্রমাণিত হবে, তারাও উত্তরাধিকারসূত্রে পাওয়া মৃত্যুর উপর জয় লাভ করবে। তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারবে।
১৭. প্রথম করিন্থীয় ১৫:৫৮ পদ আমাদের এখন কী করার জন্য উৎসাহিত করে?
১৭ এখন বেঁচে রয়েছে, এমন প্রত্যেক খ্রিস্টানের পুনরুত্থান সম্বন্ধে করিন্থীয়দের উদ্দেশে পৌল যে-আশ্বাসদায়ক কথাগুলো লিখেছিলেন, সেগুলোর জন্য কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। “প্রভুর সেবায়” পুরোপুরি ব্যস্ত থাকার বিষয়ে পৌল যে-আদেশ দিয়েছেন, সেই আদেশের প্রতি বাধ্য হওয়ার উত্তম কারণ আমাদের রয়েছে। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.) আমরা যদি অনুগতভাবে ও সক্রিয়ভাবে সেই কাজে অংশ নিই, তা হলে আমরা আনন্দে পরিপূর্ণ এক সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য প্রতীক্ষা করতে পারব। সেই ভবিষ্যৎ, আমরা কল্পনা করতে পারি এমন যেকোনো কিছুর চেয়ে আরও বেশি অপূর্ব হবে। এটা নিশ্চিতভাবেই প্রমাণ দেবে, প্রভুর জন্য আমরা যে-পরিশ্রম করে থাকি, তা নিষ্ফল হবে না।
গান সংখ্যা ৫৫ অবশেষে—অনন্ত এই জীবন!
a এই প্রবন্ধে আমরা ১ করিন্থীয় ১৫ অধ্যায় নিয়ে আমাদের আলোচনা শেষ করব, যেখানে পৌল পুনরুত্থান সম্বন্ধে, বিশেষভাবে অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের পুনরুত্থান সম্বন্ধে আলোচনা করেছেন। তবে, পৌল যা লিখেছিলেন, তা আরও মেষের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রবন্ধে তুলে ধরা হবে, কীভাবে পুনরুত্থানের প্রত্যাশার দ্বারা এখন আমাদের জীবন প্রভাবিত হওয়া উচিত এবং কীভাবে এই প্রত্যাশা আমাদের এক সুখী জীবন লাভ করতে সাহায্য করে।
b এই সংখ্যায় দেওয়া “পাঠকদের কাছ থেকে প্রশ্ন” শিরোনামের প্রবন্ধে ১ করিন্থীয় ১৫:২৯ পদে পাওয়া পৌলের মন্তব্য নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।