আপনার পোশাক-আশাকের ধরন কি ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করে?
“সকলই ঈশ্বরের গৌরবার্থে কর।”—১ করি. ১০:৩১.
১, ২. কেন পোশাক-আশাকের বিষয়ে যিহোবার সাক্ষিদের উপযুক্ত মান রয়েছে? (শুরুতে দেওয়া ছবিটা দেখুন।)
গির্জার ধর্মীয় নেতারা তাদের একটা সভায় যে-ধরনের পোশাক-আশাক পরেছিল, সেই বিষয়ে ডাচ ভাষার একটা সংবাদপত্রে বর্ণনা করা হয়েছিল। সেই সংবাদপত্র বলেছিল: “আপনারা অনেক ব্যক্তিকে ক্যাজুয়াল পোশাক-আশাক পরতে দেখেছেন, বিশেষভাবে যখন গরম ছিল।” কিন্তু সেই একই পত্রিকা বলেছিল, যিহোবার সাক্ষিরা তাদের সম্মেলনে এই ধরনের পোশাক-আশাক পরেনি। এই সংবাদপত্র উল্লেখ করেছিল, সেখানে ছেলে ও পুরুষরা সুট-টাই পরেছিল এবং মেয়ে ও মহিলারা আধুনিক স্টাইলের তবে মার্জিত দৈর্ঘ্যের স্কার্ট পরেছিল। যিহোবার সাক্ষিরা যে-ধরনের পোশাক-আশাক পরে থাকে, সেটার জন্য প্রায়ই তাদের প্রশংসা করা হয়। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, খ্রিস্টানদের পোশাক-আশাক যেন “সলজ্জ” বা মার্জিত হয় ‘ও সুবুদ্ধিভাব’ বা উত্তম বিচারবুদ্ধি প্রকাশ করে আর তা ঈশ্বরের দাসদের জন্য উপযুক্ত। (১ তীম. ২:৯, ১০) যদিও পৌল নারীদের বিষয়ে বলছিলেন কিন্তু এই নীতি খ্রিস্টান পুরুষদের জন্যও প্রযোজ্য।
২ যিহোবার লোক হিসেবে আমাদের কাছে পোশাক-আশাকের এক উত্তম মান থাকা গুরুত্বপূর্ণ আর এই মান আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর কাছেও গুরুত্বপূর্ণ। (আদি. ৩:২১) বাইবেল স্পষ্টভাবে জানায়, নিখিলবিশ্বের সার্বভৌম প্রভু যিহোবা তাঁর দাসদের জন্য পোশাক-আশাকের বিষয়ে মান দিয়েছেন। তাই, আমরা যে-সমস্ত পোশাক-আশাক বেছে নিই, সেগুলো যেন শুধু আমাদের খুশি না করে বরং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, সেগুলো যেন সার্বভৌম প্রভু যিহোবাকে খুশি করে।
৩. ইস্রায়েলীয়দের উদ্দেশে দেওয়া ঈশ্বরের ব্যবস্থা থেকে আমরা কী শিখতে পারি?
৩ মোশির ব্যবস্থায় এমন নিয়মকানুন ছিল, যেগুলো ইস্রায়েলীয়দেরকে তাদের আশেপাশের বিভিন্ন জাতির চরম অনৈতিক জীবনধারা থেকে সুরক্ষা করেছিল। ব্যবস্থা প্রকাশ করেছিল, নারী-পুরুষের মধ্যে স্পষ্ট পার্থক্য তুলে ধরে না এমন পোশাক-আশাক পরিধানের বিরুদ্ধে যিহোবার অনুভূতি দৃঢ় ছিল। বর্তমানে, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই পরতে পারে এমন স্টাইলের পোশাক-আশাককে ইউনিসেক্স ফ্যাশন বলা হয়। (পড়ুন, দ্বিতীয় বিবরণ ২২:৫.) ব্যবস্থা থেকে আমরা জানতে পারি, যিহোবা এমন পোশাক-আশাক দেখে খুশি হন না, যা পরলে একজন পুরুষকে নারীর মতো দেখায়, একজন নারীকে পুরুষের মতো দেখায় অথবা নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য করা কঠিন হয়ে পড়ে।
৪. খ্রিস্টানদের কেমন পোশাক-আশাক পরা উচিত, সেই বিষয়ে কী তাদের সাহায্য করতে পারে?
৪ আমাদের কেমন পোশাক-আশাক পরা উচিত, সেই বিষয়ে উত্তম সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য বাইবেলের বিভিন্ন নীতি আমাদের সাহায্য করতে পারে। আমরা যে-দেশে কিংবা যে-আবহাওয়াতেই বাস করি না কেন অথবা আমাদের সংস্কৃতি যা-ই হোক না কেন, আমরা এই নীতিগুলো কাজে লাগাতে পারি। কোন পোশাক গ্রহণযোগ্য ও কোনটা গ্রহণযোগ্য নয়, সেই বিষয়ে আমাদের যে এক দীর্ঘ তালিকার প্রয়োজন এমন নয়। বরং, আমাদের শুধু শাস্ত্রীয় নীতি অনুসরণ করতে হবে আর এই নীতি অনুসরণ করেও আমরা নিজেদের পছন্দমতো পোশাক-আশাক পরতে পারি। আসুন আমরা বাইবেলের কিছু নীতি বিবেচনা করি, যেগুলো আমাদেরকে “ঈশ্বরের ইচ্ছা . . . যাহা উত্তম ও প্রীতিজনক ও সিদ্ধ,” তা বুঝতে সাহায্য করতে পারে।—রোমীয় ১২:১, ২.
“ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া . . . আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি”
৫, ৬. আমাদের পোশাক-আশাক অন্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলতে পারে?
৫ প্রেরিত পৌল একটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি উল্লেখ করার জন্য অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন, যা আমরা ২ করিন্থীয় ৬:৪ পদে দেখতে পাই। (পড়ুন।) আমাদের বেশভূষা অন্যদের কাছে আমাদের সম্বন্ধে এক বার্তা প্রকাশ করে আর এর উপর ভিত্তি করেই অনেক লোক আমাদের সম্বন্ধে ধারণা গড়ে তোলে। (১ শমূ. ১৬:৭) আমরা যেহেতু ঈশ্বরের দাস, তাই পোশাক পরার সময় কোনটা আরামদায়ক অথবা কোনটা আমরা পছন্দ করি, শুধু সেটা চিন্তা করলেই হবে না। আমরা যখন বাইবেলের বিভিন্ন নীতি কাজে লাগাই, তখন আমরা এমন পোশাক-আশাক পরা এড়িয়ে চলার জন্য সাহায্য লাভ করতে পারি, যেগুলো খুব আঁটসাঁট, খোলামেলা অথবা যৌন কামনা উদ্দীপক। এর অর্থ হচ্ছে আমরা এমন পোশাক-আশাক পরা এড়িয়ে চলব, যা পরলে আমাদের দেহের গোপন অঙ্গ অনাবৃত হয়ে পড়বে অথবা অন্যদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। আমরা যে-ধরনের পোশাক-আশাক পরি, তা দেখে অন্যেরা যেন বিব্রতবোধ না করে অথবা অন্য দিকে তাকাতে বাধ্য না হয়।
৬ আমাদের পোশাক-আশাক যখন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, পরিপাটি ও মার্জিত হয়, তখন লোকেরা হয়তো সার্বভৌম প্রভু যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের প্রতি আরও বেশি সম্মান গড়ে তোলে। তারা হয়তো আমরা যে-ঈশ্বরের উপাসনা করি, তাঁর ব্যাপারে আরও আগ্রহী হয়, আমাদের সংগঠনের প্রতি তাদের সম্মান বৃদ্ধি পায় এবং সম্ভবত আমাদের জীবনরক্ষাকারী বার্তার প্রতি আরও বেশি মনোযোগ দেয়।
৭, ৮. বিশেষভাবে কখন আমাদের উপযুক্ত পোশাক-আশাক পরতে হবে?
৭ আমরা আমাদের পবিত্র ঈশ্বর, খ্রিস্টান ভাই-বোন এবং অন্য লোকেদের সামনে এমনভাবে পোশাক-আশাক পরার জন্য দায়বদ্ধ, যা যিহোবার ও আমাদের প্রচারিত বার্তার প্রতি সম্মান নিয়ে আসে। (রোমীয় ১৩:৮-১০) বিশেষভাবে আমরা যখন খ্রিস্টীয় সভাতে যাই অথবা প্রচার করি, তখন আমরা কোন ধরনের পোশাক-আশাক পরি, তা গুরুত্বপূর্ণ। সেই সময়ে আমাদের এমনভাবে পোশাক-আশাক পরা উচিত, যা ঈশ্বরের উপাসকদের জন্য উপযুক্ত। (১ তীম. ২:১০) অবশ্য, যে-পোশাক এক জায়গায় উপযুক্ত, তা অন্য জায়গায় উপযুক্ত না-ও হতে পারে। তাই, আমরা যেখানেই বাস করি না কেন, যিহোবার দাস হিসেবে আমাদের এমন পোশাক-আশাক পরা এড়িয়ে চলা উচিত, যা অন্যদের বিরক্ত করে।
৮ প্রথম করিন্থীয় ১০:৩১ পদ পড়ুন। আমরা যখন সম্মেলনে যাই, তখনও আমাদের পোশাক-আশাক উপযুক্ত ও মার্জিত হতে হবে। আমাদের চরম ধরনের পোশাক-আশাকের স্টাইল অনুকরণ করা উচিত নয়, যেগুলো জগতে খুব সাধারণ। এমনকী সম্মেলনের কার্যক্রম শুরু হওয়ার আগে ও পরে এবং হোটেলে রুম ভাড়া নেওয়ার অথবা হোটেল ছেড়ে চলে যাওয়ার সময়ও আমাদের খেয়াল রাখা উচিত, যেন আমাদের পোশাক-আশাক অতিমাত্রায় ক্যাজুয়াল বা ঘরোয়া কিংবা অগোছালো না হয়। এর ফলে আমরা নিজেদেরকে যিহোবার সাক্ষি হিসেবে পরিচয় দিতে গর্ববোধ করব এবং যেকোনো সময়ে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকব।
৯, ১০. কেন ফিলিপীয় ২:৪ পদ আমরা যা পরি, সেটার উপর প্রভাব ফেলবে?
৯ ফিলিপীয় ২:৪ পদ পড়ুন। আমাদের পোশাক-আশাক খ্রিস্টান ভাই-বোনদের উপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে কেন আমাদের চিন্তা করা উচিত? একটা কারণ হল, ঈশ্বরের লোকেরা এই পরামর্শ অনুসরণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করে: “অতএব তোমরা পৃথিবীস্থ আপন আপন অঙ্গ সকল মৃত্যুসাৎ কর, যথা, বেশ্যাগমন, অশুচিতা, মোহ [“দেহলালসা,” জুবিলী বাইবেল]।” (কল. ৩:২, ৫) আমাদের কোনো কোনো ভাই-বোন অনৈতিক জীবনযাপন করা পরিত্যাগ করেছেন, তবে তাদের হয়তো এখনও মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয়। আমরা যদি সতর্ক না থাকি, তা হলে আমরা যেভাবে পোশাক-আশাক পরি, সেটার কারণে তাদের জন্য বাইবেলের পরামর্শ অনুসরণ করা এবং সেই মন্দ আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধে লড়াই করা আরও কঠিন হয়ে উঠতে পারে। (১ করি. ৬:৯, ১০) আমরা কি তাদের লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলতে চাই? অবশ্যই না।
১০ আমরা যখন আমাদের ভাই-বোনদের সঙ্গে থাকি, তখন আমরা এমন লোকেদের কাছ থেকে নিরাপদ থাকি, যারা অনৈতিকতাকে উসকে দেয়। আমরা যেভাবে পোশাক-আশাক পরি, সেটা যেন শুচি পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করে, তা আমরা সভাতে কিংবা ঘরোয়া পরিবেশে, যেখানেই থাকি না কেন। যদিও আমরা কী পরব তা বাছাই করার স্বাধীনতা আমাদের রয়েছে, কিন্তু সেইসঙ্গে আমাদের এমন পোশাক-আশাক পরার দায়িত্বও রয়েছে, যার ফলে অন্যেরা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তাদের চিন্তাভাবনা, কথাবার্তা ও আচরণ শুচি রাখতে পারে। (১ পিতর ১:১৫, ১৬) প্রকৃত প্রেম “অশিষ্টাচরণ করে না, স্বার্থ চেষ্টা করে না।”—১ করি. ১৩:৪, ৫.
উপযুক্ত সময় ও স্থানের জন্য উপযুক্ত পোশাক-আশাক
১১, ১২. কীভাবে উপদেশক ৩:১, ১৭ পদ আমাদের যুক্তিবাদী হতে সাহায্য করতে পারে?
১১ ঈশ্বরের দাসেরা কী পরবে, সেই বিষয়ে তাদের যখন সিদ্ধান্ত নিতে হয়, তখন তারা এটা মনে রাখে, “সকল বিষয়েরই সময় আছে, ও . . . সমস্ত ব্যাপারের কাল আছে।” (উপ. ৩:১, ১৭) ভিন্ন আবহাওয়া, ঋতু, জীবনযাত্রার মান ও পরিস্থিতি হয়তো আমরা যা পড়ি, সেটার উপর প্রভাব ফেলে। কিন্তু যিহোবার মান সবসময় একই থাকে।—মালাখি ৩:৬.
১২ বিশেষভাবে গরম আবহাওয়ায়, আমাদের পোশাক-আশাক শালীন ও মার্জিত রাখা আরও কঠিন হয়ে পড়তে পারে। তাই আমরা যখন এমন পোশাক পরি, যা খুব আঁটসাঁট নয় অথবা এতটা ঢিলেঢালা নয় যে শরীর অনেকটা দেখা যায়, তখন আমাদের ভাই-বোনেরা সেটার প্রশংসা করে। (ইয়োব ৩১:১) এ ছাড়া, আমরা যখন সমুদ্র সৈকতে অথবা সুইমিং পুলে থাকি, তখনও আমাদের সাঁতারের পোশাক মার্জিত হওয়া উচিত। (হিতো. ১১:২, ২০) যদিও জগতে অনেকে অশালীন সাঁতারের পোশাক পরে থাকে, কিন্তু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যেন আমাদের বাছাইকৃত পোশাক পবিত্র ঈশ্বর যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে।
১৩. কেন ১ করিন্থীয় ১০:৩২, ৩৩ পদে প্রাপ্ত পরামর্শ আমাদের পোশাক-আশাক বাছাইয়ের উপর প্রভাব ফেলে?
১৩ আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নীতি আমাদের পোশাক-আশাক বাছাইয়ের উপর প্রভাব ফেলে। আমাদের সতর্ক থাকতে হবে যেন আমরা অন্যদের বিবেকে আঘাত না দিই। (পড়ুন, ১ করিন্থীয় ১০:৩২, ৩৩.) আমাদের এমন পোশাক-আশাক পরা এড়িয়ে চলার দায়িত্ব রয়েছে, যা হয়তো আমাদের ভাই-বোন ও সেইসঙ্গে যিহোবার সেবা করে না এমন লোকেদেরও বিরক্ত করতে পারে। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক।” এর কারণ হিসেবে পৌল বলেছিলেন: “খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।” (রোমীয় ১৫:২, ৩) ব্যক্তিগত পছন্দের চেয়ে যিশুর মতো ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করা ও অন্যদের সাহায্য করা আমাদের কাছে আরও গুরুত্বপূর্ণ হওয়া উচিত। তাই, আমরা এমন স্টাইলের পোশাক-আশাক পরা বেছে নেব না, যা আমরা পছন্দ করি কিন্তু তা হয়তো অন্যদেরকে আমাদের বার্তা শোনা থেকে বিরত করে।
১৪. সন্তানরা যাতে পোশাক-আশাকের মাধ্যমে ঈশ্বরকে গৌরবান্বিত করতে পারে, সেইজন্য বাবা-মায়েরা কীভাবে তাদের প্রশিক্ষণ দিতে পারেন?
১৪ খ্রিস্টান বাবা-মায়েদের তাদের সন্তানদেরকে বাইবেলের নীতি অনুসরণ করার জন্য শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। তারা এবং তাদের সন্তানরা যেন মার্জিত পোশাক-আশাক ও বেশভূষার মাধ্যমে ঈশ্বরকে খুশি করে, সেই বিষয়ে খেয়াল রাখাও এই দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত। (হিতো. ২২:৬; ২৭:১১) কীভাবে বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে আমাদের পবিত্র ঈশ্বর ও তাঁর মানের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারেন? সন্তানদের জন্য বাবা-মায়েদের এক উত্তম উদাহরণস্থাপন করা উচিত। আর সন্তানরা কোথায় ও কীভাবে উপযুক্ত পোশাক-আশাক খুঁজে পেতে পারে, সেই বিষয়ে প্রেমের সঙ্গে বাবা-মায়েদের শিক্ষা দেওয়া উচিত। সন্তানদের শুধুমাত্র নিজেদের পছন্দ অনুযায়ী পোশাক বাছাই করা উচিত নয় বরং এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, তাদের এমন পোশাক বাছাই করা উচিত, যা যিহোবার সম্মান নিয়ে আসে কারণ তারা তাঁর প্রতিনিধিত্ব করছে।
আপনার স্বাধীনতাকে বিজ্ঞতার সঙ্গে ব্যবহার করুন
১৫. কী আমাদেরকে বিজ্ঞতাপূর্ণ বাছাই করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে?
১৫ বাইবেল হচ্ছে এক ব্যাবহারিক নির্দেশক আর এটা আমাদের এমন বিজ্ঞতাপূর্ণ বাছাই করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে, যা ঈশ্বরের সম্মান নিয়ে আসে। তা সত্ত্বেও, আমরা যা পরি, সেটা আমাদের ব্যক্তিগত রুচিকে প্রতিফলিত করে। আমরা যে-ধরনের স্টাইল পছন্দ করি ও আমাদের যে-ধরনের পোশাক-আশাক কেনার সামর্থ্য রয়েছে, তা অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে পারে। কিন্তু, আমাদের পোশাক-আশাক সবসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, মার্জিত, বিভিন্ন উপলক্ষ্যের জন্য উপযুক্ত এবং স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য হওয়া উচিত।
১৬. উত্তমভাবে পোশাক-আশাক পরার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টা কেন সার্থক হয়?
১৬ কোনো কোনো জায়গায়, মার্জিত ও উপযুক্ত পোশাক-আশাক খুঁজে পাওয়া সবসময় সহজ না-ও হতে পারে। অনেক দোকানে কেবল জনপ্রিয় স্টাইলের পোশাক-আশাক বিক্রি করা হয়। তাই মার্জিত স্কার্ট, জামা ও ব্লাউজ খুঁজে পাওয়ার জন্য অথবা অতিরিক্ত আঁটসাঁট নয় এমন সুট-প্যান্ট বাছাই করার জন্য বেশি সময় ও প্রচেষ্টা প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমরা যখন এমন পোশাক-আশাক পরি, যা একইসঙ্গে আকর্ষণীয় ও উপযুক্ত, তখন আমাদের ভাই-বোনেরা তা লক্ষ করবে এবং সেটার প্রশংসা করবে। আর আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতাকে গৌরবান্বিত করে এমন পোশাক-আশাক পরার মাধ্যমে আমরা গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করি। এই পরিতৃপ্তি পোশাক-আশাক বাছাই করার ব্যাপারে যেকোনো ত্যাগস্বীকারের ক্ষতি পুষিয়ে দেয়।
১৭. একজন ভাই দাড়ি রাখবেন কি না, সেই সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে কোন বিষয়গুলো প্রভাব ফেলতে পারে?
১৭ ভাইদের জন্য দাড়ি রাখা কি উপযুক্ত? মোশির ব্যবস্থায় পুরুষদের দাড়ি রাখার নিয়ম ছিল। কিন্তু, খ্রিস্টানরা মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই বা তাদের সেটা পালন করতে হয় না। (লেবীয়. ১৯:২৭; ২১:৫; গালা. ৩:২৪, ২৫) কোনো কোনো সংস্কৃতিতে, পরিপাটিভাবে ছেঁটে রাখা দাড়ি হয়তো গ্রহণযোগ্য ও শোভন হতে পারে আর এই কারণে লোকেরা হয়তো আমাদের বার্তা শোনা থেকে বিরত হয় না। আসলে, দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো কোনো ভাইয়ের দাড়ি রয়েছে। তা সত্ত্বেও, কোনো কোনো ভাই হয়তো দাড়ি না রাখার সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। (১ করি. ৮:৯, ১৩; ১০:৩২) কোনো কোনো সংস্কৃতিতে অথবা জায়গায়, দাড়ি রাখার প্রথা নেই আর যিহোবার সাক্ষিদের জন্য তা রাখা গ্রহণযোগ্য বলে বিবেচিত হয় না। তাই, দাড়ি রাখার কারণে একজন ভাই হয়তো ঈশ্বরের গৌরব নিয়ে আসার ও “অনিন্দনীয়” থাকার ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে পারেন।—১ তীম. ৩:২, ৭; রোমীয় ১৫:১-৩.
১৮, ১৯. মীখা ৬:৮ পদ কীভাবে আমাদের সাহায্য করে?
১৮ কোন ধরনের পোশাক-আশাক ও বেশভূষা গ্রহণযোগ্য এবং কোনগুলো গ্রহণযোগ্য নয়, সেই ব্যাপারে যিহোবা আমাদের দীর্ঘ তালিকা দেননি বলে আমরা অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। এর পরিবর্তে, তিনি বাইবেলের নীতির উপর ভিত্তি করে যুক্তিসংগত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা আমাদের দিয়েছেন। তাই, এমনকী আমাদের পোশাক-আশাক ও বেশভূষার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়ও আমরা এটা দেখাতে পারি, আমরা ঈশ্বরের সেবা করি বলে বিনয়ী ও নম্র হতে চাই।—মীখা ৬:৮.
১৯ আমরা বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করি যে, যিহোবা হলেন শুদ্ধ ও পবিত্র এবং তাঁর মান আমাদের জন্য সর্বোত্তম নির্দেশক। আমরা যদি বিনয়ী ও নম্র হতে চাই, তা হলে নিজেদের জীবনে আমরা তাঁর মান অনুসরণ করব। এ ছাড়া, বিনয়ী মনোভাব আমাদেরকে অন্যদের অনুভূতি ও মতামতের প্রতি সম্মান দেখাতে সাহায্য করবে।
২০. আমাদের পোশাক-আশাক ও বেশভূষা অন্যদের উপর কেমন প্রভাব ফেলে?
২০ আমাদের পোশাক-আশাক যেন অত্যন্ত স্পষ্টভাবে প্রকাশ করে, আমরা হলাম যিহোবার দাস। যিহোবার উচ্চ মান রয়েছে আর তা অনুসরণ করে আমরা আনন্দিত। আমাদের ভাই-বোনেরা সাধারণত তাদের বেশভূষা ও উত্তম আচরণের জন্য প্রশংসা লাভের যোগ্য। আর তাদের এই ধরনের বেশভূষা ও উত্তম আচরণ আন্তরিক ব্যক্তিদেরকে বাইবেলের জীবনরক্ষাকারী বার্তার প্রতি আকৃষ্ট করে এবং যিহোবাকে গৌরবান্বিত ও আনন্দিত করে। আমরা কী পরব, সেই বিষয়ে বিজ্ঞতাপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মাধ্যমে আমরা ক্রমাগত সেই ব্যক্তির গৌরব নিয়ে আসব, যিনি “প্রভা ও প্রতাপ” পরিহিত।—গীত. ১০৪:১, ২.