এখন পরিত্রাণের দিবস!
“দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।”—২ করিন্থীয় ৬:২.
১. ঈশ্বর এবং খ্রীষ্টের অনুমোদন পাওয়ার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
যিহোবা মানবজাতির বিচারের জন্য একটি দিন ধার্য করেছেন। (প্রেরিত ১৭:৩১) সেই দিনে আমরা যদি পরিত্রাণ পেতে চাই তবে আমাদেরকে তাঁর এবং তাঁর নিযুক্ত বিচারক, যীশু খ্রীষ্টের অনুমোদন লাভ করতে হবে। (যোহন ৫:২২) আর এই অনুমোদন পাওয়ার জন্য আমাদের ঈশ্বরের বাক্য অনুযায়ী চলা দরকার ও এমন বিশ্বাস দেখানো প্রয়োজন যা যীশুর প্রকৃত শিষ্য হতে অন্যদের সাহায্য করার জন্য আমাদের অনুপ্রাণিত করে।
২. কেন মানবজাতির জগৎ ঈশ্বর থেকে দূরে সরে গিয়েছে?
২ উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া পাপের কারণে মানবজাতির জগৎ ঈশ্বরের কাছ থেকে অনেক দূরে সরে গিয়েছে। (রোমীয় ৫:১২; ইফিষীয় ৪:১৭, ১৮) তাই, আমরা যাদের কাছে প্রচার করি তারা একমাত্র ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়ার দ্বারাই পরিত্রাণ লাভ করতে পারেন। করিন্থের খ্রীষ্টানদের কাছে পত্র লেখার সময় প্রেরিত পৌল এই বিষয়টি স্পষ্ট করে বলেছিলেন। আসুন আমরা ২ করিন্থীয় ৫:১০–৬:১০ পদ পর্যন্ত পরীক্ষা করে দেখি যে পৌল বিচার, ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলন এবং পরিত্রাণের বিষয়ে কী বলেছিলেন।
“আমরা মনুষ্যদিগকে বুঝাইয়া লওয়াইতেছি”
৩. কিভাবে পৌল ‘মনুষ্যদিগকে বুঝাইয়াছিলেন’ এবং আজকে কেন আমাদের তা করা উচিত?
৩ পৌল, প্রচার কাজের সঙ্গে বিচারকে যুক্ত করে লিখেছিলেন: “আমাদের সকলকেই খ্রীষ্টের বিচারাসনের সম্মুখে প্রত্যক্ষ হইতে হইবে, যেন সৎকার্য্য হউক, কি অসৎকার্য্য হউক, প্রত্যেক জন আপনার কৃত কার্য্য অনুসারে দেহ দ্বারা উপার্জ্জিত ফল পায়। অতএব প্রভুর ভয় কি, তাহা জানাতে আমরা মনুষ্যদিগকে বুঝাইয়া লওয়াইতেছি।” (২ করিন্থীয় ৫:১০, ১১) সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে প্রেরিত পৌল ‘মনুষ্যদিগকে বুঝাইয়াছিলেন।’ আমাদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? যেহেতু এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থার ধ্বংস খুবই কাছে এসে পড়েছে, তাই আমাদেরও মন-প্রাণ দিয়ে অন্যদেরকে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করা উচিত, যেন তারা যীশুর কাছ থেকে অনুকূল বিচার পাওয়ার এবং পরিত্রাণের উৎস যিহোবা ঈশ্বরের অনুমোদন পাওয়ার জন্য নিজেরা পদক্ষেপ নিতে পারেন।
৪, ৫. (ক) যিহোবার পরিচর্যায় আমরা যা সম্পন্ন করেছি তার জন্য কেন আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত নয়? (খ) কিভাবে পৌল “ঈশ্বরের জন্য” গর্ব করেছিলেন?
৪ ঈশ্বরই আমাদের পরিচর্যায় আশীর্বাদ করেন, কাজেই আমাদের গর্বিত হওয়া উচিত নয়। করিন্থে এই সমস্যা ছিল কারণ সেখানে কেউ কেউ নিজেদের অথবা অন্যদের জন্য গর্বিত হয়েছিলেন, ফলে মণ্ডলীতে বিভক্তির সৃষ্টি হচ্ছিল। (১ করিন্থীয় ১:১০-১৩; ৩:৩, ৪) এই অবস্থার প্রতি ইঙ্গিত করে পৌল লিখেছিলেন: “আমরা পুনরায় তোমাদের কাছে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতেছি না, কিন্তু আমাদের পক্ষে শ্লাঘা করিবার সুযোগ তোমাদিগকে দিতেছি, যেন, যাহারা হৃদয়ে নয়, সাক্ষাতে শ্লাঘা করে, তোমরা তাহাদিগকে উত্তর দিতে পার। কেননা যদি আমরা হতবুদ্ধি হইয়া থাকি, তবে তাহা ঈশ্বরের জন্য; এবং যদি সুবুদ্ধি হই, তবে তাহা তোমাদের জন্য।” (২ করিন্থীয় ৫:১২, ১৩) এই উদ্ধত ব্যক্তিরা মণ্ডলীর একতা ও আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে একেবারেই আগ্রহী ছিলেন না। ঈশ্বরের সামনে এক উত্তম হৃদয় গড়ে তুলতে সহ বিশ্বাসীদেরকে সাহায্য না করে, তারা বাহ্যিক বিষয়ে গর্বিত হতে চেয়েছিলেন। তাই পৌল ওই মণ্ডলীকে তিরস্কার করে বলেছিলেন: “যে শ্লাঘা করে, সে প্রভুতেই শ্লাঘা করুক।”—২ করিন্থীয় ১০:১৭.
৫ পৌল নিজেই কি গর্ব করেননি? পৌল নিজের প্রেরিত পদ সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তাতে হয়ত কিছু জন মনে করতে পারেন যে তিনি গর্ব করছিলেন। কিন্তু তিনি “ঈশ্বরের জন্য” গর্ব করেছিলেন। একজন প্রেরিত হিসাবে পরিচয় দেওয়ার সময় তিনি গর্বিত হয়েছিলেন, যাতে করিন্থীয়েরা যিহোবাকে পরিত্যাগ না করেন। পৌল তাদেরকে ঈশ্বরের প্রতি ফিরিয়ে আনার জন্য তা করেছিলেন কারণ মিথ্যা প্রেরিতেরা তাদেরকে ভুল পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন। (২ করিন্থীয় ১১:১৬-২১; ১২:১১, ১২, ১৯-২১; ১৩:১০) কিন্তু পৌল যিহোবার পরিচর্যায় তিনি নিজে যে কাজ সম্পন্ন করেছিলেন, তার দ্বারা কাউকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছিলেন না।—হিতোপদেশ ২১:৪.
খ্রীষ্টের প্রেম কি আপনাকে বাধ্য করে?
৬. খ্রীষ্টের প্রেম আমাদের কিভাবে প্রভাবিত করে?
৬ একজন সত্য প্রেরিত হিসাবে পৌল যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান সম্বন্ধে অন্যদেরকে শিখিয়েছিলেন। পৌলের নিজের জীবনে এটি প্রভাব ফেলেছিল কারণ তিনি লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে; কেননা আমরা এরূপ বিচার করিয়াছি যে, এক জন সকলের জন্য মরিলেন, সুতরাং সকলেই মরিল; আর তিনি সকলের জন্য মরিলেন, যেন, যাহারা জীবিত আছে, তাহারা আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করে, যিনি তাহাদের জন্য মরিয়াছিলেন, ও উত্থাপিত হইলেন।” (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫) যীশু আমাদের জন্য তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করে কত প্রেমই না দেখিয়েছেন! নিশ্চয়ই তা আমাদের জীবনে এমন এক শক্তি হওয়া উচিত যা আমাদের বাধ্য করে। আমাদের জন্য যীশু তাঁর নিজের জীবন উৎসর্গ করায় তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতাবোধই, আমাদেরকে যিহোবা তাঁর প্রিয় পুত্রের মাধ্যমে যে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন সেই সুসমাচার উদ্যমের সঙ্গে ঘোষণা করতে প্রেরণা দেয়। (যোহন ৩:১৬. গীতসংহিতা ৯৬:২ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) “খ্রীষ্টের প্রেম” কি আপনাকে রাজ্য প্রচার ও শিষ্য তৈরি করার কাজে উদ্যমের সঙ্গে অংশ নিতে বাধ্য করে?—মথি ২৮:১৯, ২০.
৭. “কাহাকেও মাংস অনুসারে জানি না” কথাটির অর্থ কী?
৭ অভিষিক্ত ব্যক্তিরা এমনভাবে জীবনযাপন করেন যে তার থেকে বোঝা যায় যীশু তাদের জন্য যা করেছেন তার জন্য তারা কৃতজ্ঞ। আর সেইজন্য তারা ‘আর আপনাদের উদ্দেশে নয়, কিন্তু তাঁহারই উদ্দেশে জীবন ধারণ করেন।’ পৌল বলেছিলেন, “অতএব এখন অবধি আমরা আর কাহাকেও মাংস অনুসারে জানি না; যদিও খ্রীষ্টকে মাংস অনুসারে জানিয়া থাকি, তথাপি এখন আর জানি না।” (২ করিন্থীয় ৫:১৬) লোকের সম্বন্ধে খ্রীষ্টানদের দৃষ্টিভঙ্গি জগতের মতো হবে না, যেমন জগতে হয়ত পরজাতীয়দের চেয়ে যিহূদীদের কিংবা গরিব লোকেদের চেয়ে ধনীদের বড় করে দেখা হয়। অভিষিক্ত ব্যক্তিরা ‘কাহাকেও মাংস অনুসারে জানেন না,’ কারণ তাদের কাছে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে তাদের আধ্যাত্মিক সম্পর্কই বেশি গুরুত্ব রাখে। যীশু পৃথিবীতে থাকাকালে যারা তাঁকে স্বচক্ষে দেখেছিলেন, তারাই একমাত্র ব্যক্তি নন যারা ‘খ্রীষ্টকে মাংস অনুসারে জানিয়াছিল।’ মশীহের জন্য অপেক্ষা করছিলেন এমন কিছু ব্যক্তি যারা একসময় মানব খ্রীষ্টকে দেখেছিলেন, পরে তারা খ্রীষ্টকে আর মাংস অনুসারে চিন্তা করেননি। কারণ তিনি তাঁর দেহ মুক্তির মূল্য হিসাবে দিয়ে দিয়েছিলেন এবং জীবনদায়ক আত্মা হয়ে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। যারা তাদের মাংসিক দেহ ত্যাগ করে স্বর্গে যাবেন তারা কখনও যীশু খ্রীষ্টকে মাংসিক দেহে দেখেননি।—১ করিন্থীয় ১৫:৪৫, ৫০; ২ করিন্থীয় ৫:১-৫.
৮. কিভাবে কিছু ব্যক্তি ‘খ্রীষ্টে থাকিয়াছেন’?
৮ আবারও অভিষিক্ত ব্যক্তিদের উদ্দেশে পৌল বলেন: “কেহ যদি খ্রীষ্টে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইল; পুরাতন বিষয়গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নূতন হইয়া উঠিয়াছে।” (২ করিন্থীয় ৫:১৭) ‘খ্রীষ্টে থাকার’ অর্থ, তাঁর সঙ্গে একাত্ম হয়ে যাওয়া। (যোহন ১৭:২১) একজন ব্যক্তির সঙ্গে তখনই এই সম্পর্কের সৃষ্টি হয় যখন যিহোবা তাকে তাঁর পুত্রের প্রতি আকর্ষণ করেন ও সেই ব্যক্তিকে পবিত্র আত্মা দিয়ে অভিষিক্ত করেন। সুতরাং এখন ঈশ্বরের আত্মায় অভিষিক্ত পুত্র হয়ে তিনি এক “নূতন সৃষ্টি” হন, যার খ্রীষ্টের সঙ্গে স্বর্গীয় রাজ্যে রাজত্ব করার প্রত্যাশা আছে। (যোহন ৩:৩-৮; ৬:৪৪; গালাতীয় ৪:৬, ৭) এই অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের পরিচর্যা করার এক মহান সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
“ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও”
৯. ঈশ্বর তাঁর নিজের সঙ্গে আবার সম্মিলন করানোর জন্য কী করেছেন?
৯ “নূতন সৃষ্টি”-র প্রতি যিহোবা কতই না খুশি! পৌল বলেন: “সকলই ঈশ্বর হইতে হইয়াছে; তিনি খ্রীষ্ট দ্বারা আপনার সহিত আমাদের সম্মিলন করিয়াছেন, এবং সম্মিলনের পরিচর্য্যা-পদ আমাদিগকে দিয়াছেন; বস্তুতঃ ঈশ্বর খ্রীষ্টে আপনার সহিত জগতের সম্মিলন করাইয়া দিতেছিলেন, তাহাদের অপরাধ সকল তাহাদের বলিয়া গণনা করিলেন না; এবং সেই সম্মিলনের বার্ত্তা আমাদিগকে সমর্পণ করিয়াছেন।” (২ করিন্থীয় ৫:১৮, ১৯) আদমের পাপের পর মানবজাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে পড়েছিল। কিন্তু, প্রেমপূর্ণভাবে যিহোবাই প্রথম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন আর যীশুর বলিদানের মাধ্যমে সম্মিলিত হওয়ার পথ খুলে দিয়েছিলেন।—রোমীয় ৫:৬-১২.
১০. কাদের উপর যিহোবা সম্মিলিত করার দায়িত্ব দিয়েছেন এবং এই কাজ করার জন্য তারা কী করেছেন?
১০ যিহোবা সম্মিলিত করার দায়িত্ব অভিষিক্তদের উপর অর্পণ করেছেন, তাই পৌল বলতে পেরেছিলেন: “অতএব খীষ্টের পক্ষেই আমরা রাজ-দূতের কর্ম্ম করিতেছি; ঈশ্বর যেন আমাদের দ্বারা নিবেদন করিতেছেন; আমরা খ্রীষ্টের পক্ষে এই বিনতি করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।” (২ করিন্থীয় ৫:২০) আগেকার দিনে যুদ্ধবিগ্রহের সময়ে যুদ্ধ বন্ধ করা যায় কি না তা দেখার জন্য রাজদূতদের পাঠানো হতো। (লূক ১৪:৩১, ৩২) যেহেতু পাপী মানবজাতি ঈশ্বরের কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছে, তাই তিনি তাঁর মনোনীত রাজদূতদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন যেন তারা লোকেদেরকে সম্মিলিত হওয়ার শর্তাবলি জানাতে পারেন। খ্রীষ্টের পক্ষ থেকে নিবেদন জানিয়ে অভিষিক্তরা বলেন: “ঈশ্বরের সহিত সম্মিলিত হও।” খুবই দয়ার সঙ্গে এই নিবেদন করা হচ্ছে যেন তারা ঈশ্বরের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করেন এবং খ্রীষ্টের মাধ্যমে তিনি যে পরিত্রাণ দিচ্ছেন তা মেনে নেন।
১১. মুক্তির মূল্যে বিশ্বাসের মাধ্যমে কারা চূড়ান্তভাবে ঈশ্বরের সম্মুখে এক ধার্মিক অবস্থান অর্জন করতে পারবেন?
১১ মুক্তির মূল্যে বিশ্বাস করেন এমন সকলেই ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে পারেন। (যোহন ৩:৩৬) পৌল বলেন: “[যীশু] যিনি পাপ জানেন নাই, তাঁহাকে তিনি [যিহোবা] আমাদের পক্ষে পাপস্বরূপ করিলেন, যেন আমরা তাঁহাতে ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতাস্বরূপ হই।” (২ করিন্থীয় ৫:২১) আদমের সমস্ত বংশধরের জন্য যীশু তাঁর সিদ্ধ জীবন বলি দিয়েছিলেন যেন তারা আদমের থেকে পাওয়া পাপ থেকে মুক্তি পায়। ফলে তারা যীশুর মাধ্যমে “ঈশ্বরের ধার্ম্মিকতাস্বরূপ” হন। এই ধার্মিকতা অর্থাৎ ঈশ্বরের সামনে এই ধার্মিক অবস্থান প্রথমে খ্রীষ্টের ১,৪৪,০০০ জন সহদায়াদ লাভ করেন। তাঁর সহস্র বছরের রাজত্বের সময়, সনাতন পিতা যীশু খ্রীষ্টের পার্থিব সন্তানেরা সিদ্ধ মানুষ হিসাবে এক ধার্মিক অবস্থান লাভ করবেন। তিনি তাদেরকে সিদ্ধতার এক ধার্মিক অবস্থানে নিয়ে যাবেন, যাতে তারা ঈশ্বরের প্রতি বিশ্বস্ত প্রমাণিত হতে পারেন এবং অনন্ত জীবনের দান লাভ করতে পারেন।—যিশাইয় ৯:৬; প্রকাশিত বাক্য ১৪:১; ২০:৪-৬, ১১-১৫.
“সুপ্রসন্নতার সময়”
১২. যিহোবার রাজদূত ও দূতেরা কোন্ গুরুত্বপূর্ণ পরিচর্যা সম্পন্ন করছেন?
১২ পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই পৌলের এই কথার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে: “তাঁহার [যিহোবার] সঙ্গে কার্য্য করিতে করিতে আমরা নিবেদনও করিতেছি, তোমরা ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ করিও না। কেননা তিনি কহেন, ‘আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনা শুনিলাম, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিলাম। দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।’” (২ করিন্থীয় ৬:১, ২) যিহোবার অভিষিক্ত রাজদূতেরা ও তাঁর দূত অর্থাৎ ‘অপর মেষেরা’ ঈশ্বরের অযাচিত করুণাকে বৃথা গ্রহণ করেন না। (যোহন ১০:১৬, NW) এই “সুপ্রসন্নতার সময়” তাদের শুদ্ধ আচার-আচরণ ও উদ্যমী পরিচর্যার মাধ্যমে তারা ঐশিক অনুমোদন পাওয়ার চেষ্টা করেন আর পৃথিবীর সব লোকেদের জানান যে এখনই “পরিত্রাণের দিবস।”
১৩. যিশাইয় ৪৯:৮ পদের মূল বিষয়টি কী এবং প্রথম পরিপূর্ণতা কিভাবে হয়েছিল?
১৩ পৌল যিশাইয় ৪৯:৮ পদ থেকে উদ্ধৃতি করেন যেখানে লেখা আছে: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, আমি প্রসন্নতার সময়ে তোমার প্রার্থনার উত্তর দিয়াছি, এবং পরিত্রাণের দিবসে তোমার সাহায্য করিয়াছি; আর আমি তোমাকে রক্ষা করিব, ও প্রজাবৃন্দের সন্ধিরূপে নিযুক্ত করিব; তাহাতে তুমি দেশের উন্নতি সাধন করিবে, ও ধ্বংসিত অধিকার সকল অধিকারে আনিবে।” এই ভবিষ্যদ্বাণীটি প্রথম পরিপূর্ণ হয়েছিল যখন ইস্রায়েলের লোকেদের বাবিলনের বন্দীত্ব থেকে মুক্ত করা হয়েছিল আর যখন তারা তাদের জনশূন্য জন্মভূমিতে ফিরে এসেছিল।—যিশাইয় ৪৯:৩, ৯.
১৪. যীশুর ক্ষেত্রে কিভাবে যিশাইয় ৪৯:৮ পদটি পরিপূর্ণ হয়েছিল?
১৪ যিশাইয়ের ভবিষ্যদ্বাণীর পরবর্তী পরিপূর্ণতার জন্য, যিহোবা তাঁর “দাস” যীশুকে ‘জাতিগণের দীপ্তিস্বরূপ করিয়াছিলেন, যেন পৃথিবীর সীমা পর্য্যন্ত [ঈশ্বরের] পরিত্রাণস্বরূপ হন।’ (যিশাইয় ৪৯:৬, ৮; যিশাইয় ৪২:১-৪, ৬, ৭; মথি ১২:১৮-২১ পদের সঙ্গে তুলনা করুন।) স্পষ্টত, যীশু যখন পৃথিবীতে ছিলেন তখন তা ছিল ‘প্রসন্নতার সময়’ অথবা “সুপ্রসন্নতার সময়।” তিনি প্রার্থনা করেছিলেন আর ঈশ্বর তাঁর প্রার্থনার “উত্তর” দিয়েছিলেন। আর এটি যীশুর জন্য ‘পরিত্রাণের দিবস’ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছিল কারণ তিনি শেষ পর্যন্ত আনুগত্য বজায় রেখেছিলেন এবং এভাবে “আপনার আজ্ঞাবহ সকলের অনন্ত পরিত্রাণের কারণ হইলেন।”—ইব্রীয় ৫:৭, ৯; যোহন ১২:২৭, ২৮.
১৫. কখন থেকে আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলীয়রা নিজেদেরকে ঈশ্বরের অযাচিত করুণার যোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন এবং কেন?
১৫ পৌল যিশাইয় ৪৯:৮ পদের কথাগুলি আসলে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের জন্য প্রয়োগ করেন। তিনি তাদেরকে অনুরোধ করেন, ঈশ্বরের “সুপ্রসন্নতার সময়” এবং তাঁর মাধ্যমে আসা ‘পরিত্রাণের দিবসে’ যিহোবার অনুমোদন লাভের চেষ্টা না করে তারা যেন ‘ঈশ্বরের অনুগ্রহ বৃথা গ্রহণ না করেন।’ পৌল আরও বলেছিলেন: “দেখ, এখন সুপ্রসন্নতার সময়; দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।” (২ করিন্থীয় ৬:২) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিন থেকে আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলীয়রা নিজেদেরকে ঈশ্বরের অযাচিত করুণার যোগ্য প্রমাণ করার চেষ্টা করেছিলেন, যাতে “সুপ্রসন্নতার সময়” তাদের জন্য এক “পরিত্রাণের দিবস” হয়।
‘ঈশ্বরের পরিচারক বলিয়া আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখানো’
১৬. কোন্ কঠিন পরিস্থিতির মধ্যেও পৌল নিজেকে ঈশ্বরের পরিচারকের যোগ্যপাত্র হিসাবে দেখিয়েছিলেন?
১৬ করিন্থীয় মণ্ডলীর কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে ঈশ্বরের অযাচিত করুণার যোগ্যপাত্র প্রমাণ করেননি। যদিও পৌল তাদের ‘কোন বিষয়ে ব্যাঘাত জন্মাননি,’ তবুও তারা তাকে প্রেরিতপদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টায় তার নিন্দা করেছিলেন। তিনি “বিপুল ধৈর্য্যে, নানা প্রকার ক্লেশে, অনাটনে, সঙ্কটে, প্রহারে, কারাবাসে, উপপ্লবে, পরিশ্রমে, অনিদ্রায়, অনাহারে”-র মধ্যেও নিজেকে প্রশ্নাতীতভাবে ঈশ্বরের পরিচারক হিসাবে যোগ্যপাত্র দেখিয়েছিলেন। (২ করিন্থীয় ৬:৩-৫) পরে পৌল যুক্তি দেখিয়েছিলেন যে তার বিরোধীরা যদি পরিচারক হন তাহলে তিনি তাদের চেয়ে “অধিকতররূপে” যোগ্য ছিলেন কারণ তিনি আরও বেশি কারাবরণ, প্রহার, বিপদ এবং অভাব ভোগ করেছিলেন।—২ করিন্থীয় ১১:২৩-২৭.
১৭. (ক) কোন্ গুণাবলি দেখিয়ে আমরা ঈশ্বরের পরিচারক হিসাবে নিজেদের যোগ্যপাত্র দেখাতে পারি? (খ) “ধার্ম্মিকতার অস্ত্রশস্ত্র” কী?
১৭ পৌল ও তার সঙ্গীদের মতো আমরাও আমাদের নিজেদের ঈশ্বরের যোগ্যপাত্র হিসাবে দেখাতে পারি। কিভাবে? “শুদ্ধতায়,” অর্থাৎ নিষ্কলঙ্ক থেকে এবং বাইবেলের যথার্থ জ্ঞান অনুযায়ী কাজ করার মাধ্যমে। আমরা “চিরসহিষ্ণুতায়” কাজ করতে পারি অর্থাৎ অন্যায় বা উত্তেজনাপূর্ণ পরিস্থিতিতেও ধৈর্যপূর্বক সহ্য করতে পারি এবং “মধুর ভাবে” অন্যদের সাহায্য করে নিজেদের ঈশ্বরের যোগ্যপাত্র হিসাবে দেখাতে পারি। এছাড়াও তাঁর আত্মার দেওয়া নির্দেশনা মেনে, ‘অকপট প্রেম’ প্রদর্শন করে, সত্য কথা বলে এবং পরিচর্যা সম্পন্ন করার জন্য তাঁর শক্তির উপর নির্ভর করে আমরা নিজেদেরকে ঈশ্বরের পরিচারকের যোগ্যপাত্র হিসাবে দেখাই। আগ্রহের বিষয় যে পৌল তার পরিচারকের পদকে “দক্ষিণ ও বাম হস্তে ধার্ম্মিকতার অস্ত্রশস্ত্র দ্বারা” প্রমাণ করেছিলেন। আগেকার দিনে যুদ্ধে, সাধারণত ডান হাতে তলোয়ার এবং বাঁ হাতে ঢাল থাকত। মিথ্যা শিক্ষকদের বিরুদ্ধে আধ্যাত্মিক যুদ্ধ করার সময় পৌল পাপময় মাংসিক—খল, ভণ্ডমি ও প্রতারণায় পূর্ণ অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করেননি। (২ করিন্থীয় ৬:৬, ৭; ১১:১২-১৪; হিতোপদেশ ৩:৩২) বরং যাতে সত্য উপাসনায় অগ্রগতি হয় সেইজন্য তিনি ধার্মিক “অস্ত্রশস্ত্র” অথবা মাধ্যম ব্যবহার করেছিলেন। তাই আমাদেরও একই বিষয় করা উচিত।
১৮. আমরা যদি ঈশ্বরের পরিচারক হয়ে থাকি তবে আমরা কেমন আচরণ করব?
১৮ আমরা যদি ঈশ্বরের পরিচারক হয়ে থাকি তবে আমরা পৌল এবং তার সহকর্মীদের মতো আচরণ করব। আমরা সবসময় খ্রীষ্টানের মতো আচরণ করব তাতে আমরা সম্মান পাই বা না পাই। আমাদের সম্বন্ধে মিথ্যা রটনা শুনলেও আমরা প্রচার কাজকে বন্ধ করে দেব না কিংবা আমাদের সম্বন্ধে ভাল কথা শুনলে আমরা গর্বিত হব না। আমরা সত্য কথা বলে চলব আর এর ফলে হয়ত আমাদের ধার্মিক কাজের জন্য ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করব। শত্রুদের আক্রমণের কারণে যদি আমরা মারাত্মক ঝুঁকির মুখেও পড়ি আমরা যিহোবাতে আস্থা রাখব। আর খুশি মনে যে কোন পরামর্শ গ্রহণ করব।—২ করিন্থীয় ৬:৮, ৯.
১৯. কী করে আধ্যাত্মিকভাবে “অনেকের ধনদাতা” হওয়া সম্ভব?
১৯ সম্মিলিত করার দায়িত্ব সম্বন্ধে আলোচনা শেষ করে পৌল নিজের ও তার সঙ্গীদের সম্বন্ধে বলেছিলেন “দুঃখিতের ন্যায়, কিন্তু সর্ব্বদা আনন্দিত; দীনহীনের ন্যায়, কিন্তু অনেকের ধনদাতা; আমাদের যেন কিছুই নাই, অথচ আমরা সর্ব্বাধিকারী।” (২ করিন্থীয় ৬:১০) যদিও কষ্ট ভোগ করার ফলে ওই পরিচারকদের দুঃখ করার কারণ ছিল তবুও তাদের মনে আনন্দ ছিল। তারা বস্তুগত দিক দিয়ে দরিদ্র ছিলেন কিন্তু আধ্যাত্মিকভাবে “অনেকের ধনদাতা” ছিলেন। প্রকৃতই, তারা “সর্ব্বাধিকারী” ছিলেন কারণ তাদের বিশ্বাস তাদেরকে আধ্যাত্মিক ধন—এমনকি ঈশ্বরের স্বর্গীয় পুত্র হওয়ার প্রত্যাশা দিয়েছিল। আর খ্রীষ্টান পরিচারক হিসাবে তারা অর্থপূর্ণ এবং সুখী জীবনযাপন করতেন। (প্রেরিত ২০:৩৫) তাদের মতো, আমরাও এখন—এই পরিত্রাণের দিবসেই সম্মিলিত করার কাজে অংশ নিয়ে “অনেকের ধনদাতা” হতে পারি!
যিহোবার পরিত্রাণে আস্থা রাখুন
২০. (ক) পৌল মনে-প্রাণে কী চেয়েছিলেন আর কেন নষ্ট করার মতো কোন সময়ই তখন ছিল না? (খ) আমাদের সময়ে কী পরিত্রাণের দিবসকে চিহ্নিত করে?
২০ প্রায় সা.কা. ৫৫ সালে পৌল যখন করিন্থীয়দের প্রতি দ্বিতীয় পত্রটি লেখেন, তখন যিহূদী বিধিব্যবস্থা শেষ হতে মাত্র ১৫ বছর বাকি ছিল। প্রেরিত পৌল মনে-প্রাণে চেয়েছিলেন যেন যিহূদী ও পরজাতীয়রা খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হন। তখন ছিল পরিত্রাণের দিবস আর নষ্ট করার মতো কোন সময়ই তখন ছিল না। ১৯১৪ সাল থেকে আমরাও একইরকম এক বিধিব্যস্থার শেষকালে বাস করছি। বিশ্বব্যাপী এখন যে রাজ্য প্রচার কাজ হচ্ছে তা এই পরিত্রাণের দিবসকে চিহ্নিত করে।
২১. (ক) ১৯৯৯ সালের জন্য কোন্ বার্ষিক শাস্ত্রপদ ঠিক করা হয়েছে? (খ) পরিত্রাণের দিবসে আমাদের কী করে চলা উচিত?
২১ যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বর যে পরিত্রাণের ব্যবস্থা করেছেন তা সমস্ত জাতির লোকেদের শোনা প্রয়োজন। দেরি করার মতো সময় একেবারেই নেই। পৌল লিখেছিলেন: “দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।” ২ করিন্থীয় ৬:২ পদের এই কথাগুলিই যিহোবার সাক্ষীদের ১৯৯৯ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ। এটি কতই না উপযুক্ত, কারণ আমরা যিরূশালেম ও এর মন্দিরের চেয়েও ভয়াবহ আরেকটি ধ্বংসের মুখে রয়েছি! এই সমগ্র বিধিব্যবস্থার ধ্বংস একেবারেই কাছে যার সঙ্গে পৃথিবীর প্রত্যেকে জড়িত। কাজ করার সময়—আজকেই—আগামীকাল নয়। আমরা যদি বিশ্বাস করি যে পরিত্রাণ যিহোবার কাছে, যদি তাঁকে ভালবাসি এবং অনন্ত জীবনকে মূল্যবান মনে করি তবে আমরা ঈশ্বরের অযাচিত করুণাকে বৃথা গ্রহণ করব না। যিহোবাকে সম্মান করার এক আন্তরিক ইচ্ছা নিয়ে আমাদের কথা ও কাজের দ্বারা আমরা প্রমাণ করব যে আমরা এই কথাকে খুবই গুরুত্ব দিই যখন আমরা ঘোষণা করি: “দেখ, এখন পরিত্রাণের দিবস।”
কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হওয়া কেন এত গুরুত্বপূর্ণ?
◻ সম্মিলিত করার পরিচর্যায় রত রাজদূত ও দূত কারা?
◻ আমরা কিভাবে ঈশ্বরের পরিচারক হিসাবে নিজেদের যোগ্যপাত্র দেখাতে পারি?
◻ যিহোবার সাক্ষীদের ১৯৯৯ সালের বার্ষিক শাস্ত্রপদ আপনার জন্য কোন্ অর্থ রাখে?
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
পৌলের মতো আপনিও কি উদ্যোগ নিয়ে প্রচার করছেন ও অন্যদের ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হতে সাহায্য করছেন?
যুক্তরাষ্ট্র
ফ্রান্স
কোট ডিভোর
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
পরিত্রাণের দিবসে যে লক্ষ লক্ষ লোকেরা যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে সম্মিলিত হচ্ছেন, আপনিও কি তাদের সঙ্গে আছেন?