“একই সদাপ্রভু” তাঁর পরিবারকে একত্রিত করেন
‘আমি তোমাদিগকে বিনতি করিতেছি, আত্মার ঐক্য রক্ষা কর।’—ইফি. ৪:১, ৩.
আপনি কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন?
ঈশ্বরের বিধানের উদ্দেশ্য কী?
কীভাবে আমরা “আত্মার ঐক্য রক্ষা” করি?
কী আমাদেরকে ‘পরস্পর দয়ালু হইবার’ জন্য সাহায্য করবে?
১, ২. পৃথিবী এবং মানবজাতির জন্য যিহোবার উদ্দেশ্য কী?
পরিবার। এই শব্দটি শুনলে আপনার মনে কোন চিত্র ভেসে ওঠে? উষ্ণতা? আনন্দ? একই লক্ষ্যের দিকে একত্রে কাজ করা? এক নিরাপদ আশ্রয়স্থল, যেখানে বেড়ে ওঠা যায়, শেখা যায় এবং চিন্তাভাবনা ভাগ করে নেওয়া যায়? সম্ভবত, এই বিষয়গুলোই ভেসে ওঠে, যদি আপনি এক যত্নশীল পরিবারের অংশ হয়ে থাকেন। স্বয়ং যিহোবাই পরিবারের উদ্যোক্তা। (ইফি. ৩:১৪, ১৫) তাঁর উদ্দেশ্য এই, যেন স্বর্গে এবং পৃথিবীতে তাঁর সমস্ত সৃষ্টি নিরাপত্তা, পারস্পরিক নির্ভরতা এবং প্রকৃত একতা উপভোগ করে।
২ পাপ করার পর যদিও আদম ও হবা আর ঈশ্বরের সর্বজনীন পরিবারের অংশ ছিল না কিন্তু তাই বলে যিহোবার উদ্দেশ্য ব্যর্থ হয়ে যায়নি। তিনি এই বিষয়টা নিশ্চিত করবেন যেন পরমদেশ পৃথিবী আদম ও হবার বংশধরদের দিয়ে পরিপূর্ণ হয়। (আদি. ১:২৮; যিশা. ৪৫:১৮) এই উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য তিনি সমস্ত প্রস্তুতি নিয়েছেন। এইরকম বেশ কিছু ব্যবস্থা বাইবেলের ইফিষীয় বইয়ে আমাদের মনোযোগে আনা হয়েছে, যেটির মূল বিষয় হল একতা। আসুন আমরা সেই বই থেকে কিছু পদ বিবেচনা করি এবং দেখি যে কীভাবে আমরা তাঁর সৃষ্টিকে একত্রিত করার বিষয়ে যিহোবার যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটার সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি।
বিধান এবং এর কাজ
৩. ইফিষীয় ১:১০ পদে বলা ঈশ্বরের বিধান কী আর এর কাজের প্রথম পর্যায় কখন শুরু হয়েছিল?
৩ মোশি ইস্রায়েলীয়দের বলেছিলেন: “আমাদের ঈশ্বর সদাপ্রভু একই সদাপ্রভু।” (দ্বিতীয়. ৬:৪) যিহোবার কাজ এবং উদ্দেশ্যের মধ্যে সামঞ্জস্য রয়েছে। তাই, ‘কালের পূর্ণতায়’ ঈশ্বর এক “বিধান” কার্যকর করেন—অর্থাৎ তাঁর সমস্ত বুদ্ধিবিশিষ্ট প্রাণীদের সংগ্রহ বা একত্রিত করার ব্যবস্থা করেন। (পড়ুন, ইফিষীয় ১:৮-১০.) এই বিধান দুটো পর্যায়ে এর উদ্দেশ্য সাধন করবে। এর প্রথম পর্যায়, অভিষিক্ত খ্রিস্টানদের মণ্ডলীকে তাদের আধ্যাত্মিক মস্তক হিসেবে যিশু খ্রিস্টের অধীনে স্বর্গীয় জীবনের জন্য প্রস্তুত করে। এই পর্যায় শুরু হয় ৩৩ খ্রিস্টাব্দে, যখন যিহোবা সেই ব্যক্তিদেরকে একত্রিত করতে শুরু করেন, যারা স্বর্গে খ্রিস্টের সঙ্গে শাসন করবে। (প্রেরিত ২:১-৪) যেহেতু অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের ভিত্তিতে জীবনের জন্য ধার্মিক বলে গণ্য করা হয়েছে, তাই তারা সহজেই এই বিষয়টা স্বীকার করে যে, তাদেরকে “ঈশ্বরের সন্তান” হিসেবে দত্তক নেওয়া হয়েছে।—রোমীয় ৩:২৩, ২৪; ৫:১; ৮:১৫-১৭.
৪, ৫. বিধানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ কী?
৪ দ্বিতীয় পর্যায় সেই ব্যক্তিদেরকে প্রস্তুত করে, যারা খ্রিস্টের মশীহ রাজ্যের অধীনে পরমদেশ পৃথিবীতে বাস করবে। এই দলের প্রথম অংশ “বিস্তর লোক” নিয়ে গঠিত। (প্রকা. ৭:৯, ১৩-১৭; ২১:১-৫) হাজার বছরের রাজত্বের সময়, তাদের সঙ্গে আরও কোটি কোটি পুনরুত্থিত ব্যক্তি যোগ দেবে। (প্রকা. ২০:১২, ১৩) এই পুনরুত্থান কীভাবে আমাদের একতাকে আরও বেশি করে প্রদর্শন করার সুযোগ দেবে, তা একটু কল্পনা করে দেখুন! হাজার বছরের শেষে “পৃথিবীস্থ সমস্তই” এক চূড়ান্ত পরীক্ষার মুখোমুখি হবে। যারা বিশ্বস্ত বলে প্রমাণিত হবে, তাদেরকে “ঈশ্বরের” পার্থিব ‘সন্তান’ হিসেবে দত্তক নেওয়া হবে।—রোমীয় ৮:২১; প্রকা. ২০:৭, ৮.
৫ ঈশ্বরের বিধানের দুটো পর্যায়ই বর্তমানে পূর্ণ হচ্ছে—স্বর্গীয় এবং পার্থিব। কিন্তু, আলাদা আলাদা ব্যক্তি হিসেবে কীভাবে আমরা এখন ঈশ্বরের বিধানের সঙ্গে সহযোগিতা করতে পারি?
‘আত্মার ঐক্য রক্ষা কর’
৬. শাস্ত্র কীভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, খ্রিস্টানরা পরস্পরের সঙ্গে মেলামেশা করবে?
৬ শাস্ত্র ইঙ্গিত দেয় যে, খ্রিস্টানদেরকে অবশ্যই আক্ষরিকভাবে একত্রিত হতে হবে। (১ করি. ১৪:২৩; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এর সঙ্গে একই স্থানে একত্রে কিছু সময় কাটানো, যেমনটা লোকেরা মার্কেটে অথবা খেলার স্টেডিয়ামে গিয়ে কাটিয়ে থাকে, সেটার চেয়ে আরও অনেক বেশি কিছু জড়িত। প্রকৃত একতা এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। এই ধরনের একতা আমরা সেই সময়ে অর্জন করতে পারি, যখন আমরা যিহোবার নির্দেশনা কাজে লাগাই এবং ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা দ্বারা নিজেদেরকে গঠিত হতে দিই।
৭. ‘আত্মার ঐক্য রক্ষা করিবার’ অর্থ কী?
৭ যদিও যিহোবা খ্রিস্টের মুক্তির মূল্যের ভিত্তিতে তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তিদেরকে পুত্র হিসেবে ধার্মিক এবং আরও মেষকে বন্ধু হিসেবে ধার্মিক বলে গণ্য করেছেন, কিন্তু আমরা যতদিন পর্যন্ত এই বিধিব্যবস্থায় বেঁচে আছি, ততদিন পর্যন্ত ব্যক্তিত্বের মতপার্থক্য দেখা দেবেই। (রোমীয় ৫:৯; যাকোব ২:২৩) তা না হলে, আমাদেরকে “পরস্পর ক্ষমাশীল” মনোভাব দেখিয়ে চলার অনুপ্রাণিত উপদেশ দেওয়ার কোনো প্রয়োজনই হতো না। কীভাবে সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে একতা অর্জন করা যায়? আমাদেরকে “সম্পূর্ণ নম্রতা ও মৃদুতা” গড়ে তুলতে হবে। অধিকন্তু, পৌল এই জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেন আমরা “শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে” যত্নবান হই। (পড়ুন, ইফিষীয় ৪:১-৩.) এই পরামর্শ কাজে লাগানোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, ঈশ্বরের আত্মার প্রভাবের প্রতি বশীভূত থাকা এবং আত্মাকে আমাদের মধ্যে এর ফল উৎপন্ন করতে দেওয়া। মাংসের কার্য সকল, যা কিনা সবসময়ই বিভেদ সৃষ্টি করে, সেটার বিপরীতে এই ফল ব্যক্তি বিশেষের মধ্যে ফাটল দূর করে দেয়।
৮. কোন অর্থে মাংসের কার্য সকল অনৈক্যের সৃষ্টি করে?
৮ “মাংসের কার্য্য সকল” কীভাবে অনৈক্যের সৃষ্টি করে, তা লক্ষ করুন। (পড়ুন, গালাতীয় ৫:১৯-২১.) বেশ্যাগমন বা ব্যভিচার এমন একজন ব্যক্তিকে যিহোবার এবং মণ্ডলীর কাছ থেকে পৃথক করে দেয়, যিনি তা করেই চলেন আর সেইসঙ্গে পারদারিকতা সন্তানদেরকে বাবা-মায়ের কাছ থেকে এবং নির্দোষ সাথিকে বিবাহসাথির কাছ থেকে নিষ্ঠুরভাবে পৃথক করে দেয়। অশুচিতা একজন ব্যক্তির সঙ্গে ঈশ্বরের ও যারা তাকে ভালোবাসে, তাদের একতাকে নষ্ট করে দেয়। যে-ব্যক্তি আঠা দিয়ে দুটো জিনিসকে জোড়া লাগানোর চেষ্টা করেন, তিনি জানেন যে, এক সঠিক বন্ধন গড়ে তোলার আগে সেই দুটো জিনিসের ওপরিভাগ পরিষ্কার থাকতে হবে। ‘স্বৈরিতায়, [‘নির্লজ্জ আচরণে,’ NW]’ রত হওয়া ঈশ্বরের ধার্মিক আইনগুলোর প্রতি সম্পূর্ণ অবজ্ঞা প্রকাশ করে। মাংসের অন্যান্য প্রত্যেকটা কাজ লোকেদেরকে পরস্পরের এবং ঈশ্বরের কাছ থেকে পৃথক করে দেয়। এই ধরনের আচরণ যিহোবার ব্যক্তিত্বের একেবারে বিপরীত।
৯. কীভাবে আমরা নিজেদেরকে পরীক্ষা করে দেখতে পারি যে, আমরা “আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্” কি না?
৯ তাই, নিজেদেরকে আমাদের জিজ্ঞেস করা উচিত: ‘“শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিবার” ক্ষেত্রে যত্নবান হওয়ার ব্যাপারে আমি কতটা আন্তরিক? সমস্যা দেখা দিলে আমি কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাই? কতিপয় বন্ধুবান্ধবের সমর্থন লাভ করার আশায় আমি কি লোকেদের কাছে আমার অভিযোগের কথা বলে বেড়াই? এক শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক পুনর্স্থাপন করার জন্য নিজে আন্তরিক প্রচেষ্টা করার পরিবর্তে, আমি কি এইরকমটা আশা করি যে, প্রাচীনরা আমার হয়ে কথা বলবে? আমার বিরুদ্ধে অন্যদের যে-কথা আছে, তা যেন তারা মনে করতে না পারে, সেটার জন্য কি আমি তাদেরকে এড়িয়ে চলি এবং হতে পারে আমাদের মধ্যে যথেষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করি?’ এই ধরনের কাজগুলো কি দেখাবে যে, আবারও সমস্তই খ্রিস্টে একত্রিত করার ব্যাপার যিহোবার যে-উদ্দেশ্য রয়েছে, সেটার সঙ্গে আমরা মিল রেখে কাজ করছি?
১০, ১১. (ক) আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে শান্তিতে থাকা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? (খ) কোন কাজগুলো শান্তি ও আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি নিয়ে আসবে?
১০ যিশু বলেছিলেন: “অতএব তুমি যখন যজ্ঞবেদির নিকটে আপন নৈবেদ্য উৎসর্গ করিতেছ, তখন সেই স্থানে যদি মনে পড়ে যে, তোমার বিরুদ্ধে তোমার ভ্রাতার কোন কথা আছে, তবে সেই স্থানে বেদির সম্মুখে তোমার নৈবেদ্য রাখ, আর চলিয়া যাও, প্রথমে তোমার ভ্রাতার সহিত সম্মিলিত হও, পরে আসিয়া তোমার নৈবেদ্য উৎসর্গ করিও। . . . তাহার সহিত শীঘ্র মিলন করিও।” (মথি ৫:২৩-২৫) যাকোব লিখেছিলেন যে, “যাহারা শান্তি-আচরণ করে, তাহাদের জন্য শান্তিতে ধার্ম্মিকতা-ফলের বীজ বপন করা যায়।” (যাকোব ৩:১৭, ১৮) তাই, শান্তি ছাড়া আমরা ধার্মিক আচরণ বজায় রাখতে পারব না।
১১ উদাহরণস্বরূপ, অনুমান করে দেখা গিয়েছে যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত কিছু দেশে ৩৫ শতাংশেরও বেশি জমিতে চাষাবাদ করা যেতে পারত, যদি সেখানে বসবাসকারী লোকেরা মাটির নীচে মাইন লুকানো রয়েছে বলে ভয় না পেত। যখন একটা মাইন বিস্ফোরিত হয়, তখন কৃষকরা জমি ছেড়ে পালিয়ে যায়, গ্রামগুলোতে জীবিকার্জনের আর কোনো উপায় থাকে না এবং শহরগুলোতেও খাদ্যের অভাব দেখা দেয়। একইভাবে, আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোতে আমাদের বৃদ্ধি ব্যাহত হয়, যদি আমাদের এমন ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য থাকে, যা আমাদের ভাইবোনদের সঙ্গে শান্তিকে নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু, দ্রুত ক্ষমা করে দেওয়ার এবং অন্যদের মঙ্গলের জন্য কাজ করার মাধ্যমে আমরা এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করি, যা প্রকৃত সমৃদ্ধি নিয়ে আসে।
১২. কীভাবে প্রাচীনরা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
১২ অধিকন্তু, ‘মনুষ্যদিগের নানা বর’ বা দানরূপ মানুষেরা একতার ক্ষেত্রে এক প্রকৃত চালিকাশক্তি হতে পারে। তাদেরকে এই কারণে দেওয়া হয়েছে, যেন তারা আমাদেরকে ‘বিশ্বাসের ঐক্য পর্যন্ত অগ্রসর’ হতে সাহায্য করতে পারে। (ইফি. ৪:৮, ১৩) প্রাচীনরা যখন পবিত্র সেবায় আমাদের সঙ্গে কাজ করে এবং ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে উপলব্ধিপরায়ণ মন্তব্য করে, তখন তারা আমাদেরকে নতুন মনুষ্য বা ব্যক্তিত্ব পরিধান করার ক্ষেত্রে উন্নতি করতে সহায়তা করে। (ইফি. ৪:২২-২৪) তাদের পরামর্শের মধ্যে আপনি কি তাঁর পুত্রের শাসনাধীনে নতুন জগতে জীবনের জন্য আপনাকে প্রস্তুত করার ব্যাপারে যিহোবার প্রচেষ্টা দেখতে পান? প্রাচীনরা, আপনারা কি এই উদ্দেশ্যের কথা মনে রেখে অন্যদের “সুস্থ [“পুনঃসমন্বয়,” NW]” করেন?—গালা. ৬:১.
‘পরস্পর দয়ালু হও’
১৩. আমরা যদি ইফিষীয় ৪:২৫-৩২ পদে প্রাপ্ত পরামর্শে মনোযোগ না দিতাম, তাহলে এর ফল কী হতো?
১৩ ইফিষীয় ৪:২৫-২৯ পদে এমন কিছু আচরণের কথা বলা আছে, যেগুলো আমাদের বিশেষভাবে এড়িয়ে চলা উচিত। এগুলোর অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে, মিথ্যা বলা, ক্রুদ্ধ অথবা অলস হওয়া এবং সদালাপ ও গেঁথে তোলার মতো কথাবার্তা বলার পরিবর্তে কদালাপ করা। একজন ব্যক্তি যদি এই পরামর্শে মনোযোগ দিতে ব্যর্থ হন, তাহলে তিনি ঈশ্বরের আত্মাকে দুঃখ দেবেন কারণ পবিত্র আত্মা এমন এক চালিকাশক্তি, যা একতাকে বৃদ্ধি করে। (ইফি. ৪:৩০) এর পরে, পৌল যা লিখেছিলেন, সেগুলোর প্রয়োগও শান্তি ও একতার জন্য অপরিহার্য: “সর্ব্বপ্রকার কটুকাটব্য, রোষ, ক্রোধ, কলহ, নিন্দা এবং সর্ব্বপ্রকার হিংসেচ্ছা তোমাদের হইতে দূরীকৃত হউক। তোমরা পরস্পর মধুরস্বভাব [“দয়ালু,” বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন] ও করুণচিত্ত হও, পরস্পর ক্ষমা কর, যেমন ঈশ্বরও খ্রীষ্টে তোমাদিগকে ক্ষমা করিয়াছেন।”—ইফি. ৪:৩১, ৩২.
১৪. (ক) “দয়ালু হও” শব্দগুলো কী ইঙ্গিত দেয়? (খ) কী আমাদেরকে দয়ালু হতে সাহায্য করবে?
১৪ “দয়ালু হও” শব্দগুলো ইঙ্গিত দেয় যে, অন্ততপক্ষে কিছু নির্দিষ্ট ক্ষেত্রে আমরা হয়তো দয়ালু হই না আর সেই ক্ষেত্রে আমাদের হয়তো উন্নতি করা প্রয়োজন। আমাদের জন্য এটা কতই না উপযুক্ত, যেন আমরা নিজেদের অনুভূতির আগে বরং অন্যদের অনুভূতি সম্বন্ধে বিবেচনা করার জন্য নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করি! (ফিলি. ২:৪) হতে পারে যে, আমরা এমন কিছু বলার কথা চিন্তা করছি, যা হাসির উদ্রেক করতে পারে অথবা আমাদেরকে বুদ্ধিমান হিসেবে তুলে ধরতে পারে, কিন্তু সেটা কি দয়ার কাজ হবে? আগে থেকেই বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করা আমাদেরকে ‘দয়ালু হইতে’ সাহায্য করবে।
পরিবারের মধ্যে প্রেম এবং সম্মান দেখাতে শেখা
১৫. ইফিষীয় ৫:২৮ পদে পৌল, মণ্ডলীর সঙ্গে খ্রিস্টের আচরণের কোন দিকটা পরোক্ষভাবে উল্লেখ করেছেন?
১৫ বাইবেল মণ্ডলীর সঙ্গে খ্রিস্টের সম্পর্ককে স্বামী ও স্ত্রীর সম্পর্কের সঙ্গে তুলনা করে। এই বিষয়টা সঙ্গেসঙ্গে আমাদেরকে বৈবাহিক বন্ধনের মধ্যে একজন স্বামীর যে-নির্দেশনা প্রদান করা উচিত এবং যে-প্রেম এবং যত্ন দেখিয়ে চলা প্রয়োজন—ও সেইসঙ্গে একজন স্ত্রীকে যে-বশ্যতা দেখানো উচিত—তা মনে করিয়ে দেয়। (ইফি. ৫:২২-৩৩) পৌল যখন লিখেছিলেন: “এইরূপে স্বামীরাও আপন আপন স্ত্রীকে আপন আপন দেহ বলিয়া প্রেম করিতে বাধ্য,” তখন তিনি ‘এইরূপ’ বা এই উপায় বলতে কী বুঝিয়েছিলেন? (ইফি. ৫:২৮) তার আগের কথাগুলোতে তিনি সেই উপায়টার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করিয়েছেন, যে-উপায়ে ‘খ্রীষ্টও মণ্ডলীকে প্রেম করিলেন, আর তাহার নিমিত্ত আপনাকে প্রদান করিলেন; জলস্নান দ্বারা বাক্যে তাহাকে শুচি করিলেন।’ বস্তুতপক্ষে, আবারও সমস্তই খ্রিস্টে একত্রিত করার ব্যাপারে যিহোবার যে-উদ্দেশ্যে রয়েছে, সেটার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করার জন্য একজন স্বামীকে অবশ্যই তার পরিবারের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য জোগানোর ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।
১৬. বাবা-মায়েরা যখন ঘরে শাস্ত্রীয় দায়িত্বগুলো পালন করে, তখন এর ফল কী হয়?
১৬ বাবা-মাদের মনে রাখা উচিত যে, তারা যিহোবার কাছ থেকে প্রাপ্ত এক কার্যভার পালন করছে। দুঃখের বিষয় হল, বর্তমান জগতে অনেকে “স্নেহরহিত।” (২ তীম. ৩:১, ৩) অনেক বাবা তাদের দায়িত্বগুলোকে এড়িয়ে যায়, যা তাদের সন্তানদের হতাশ করে এবং তাদের ওপর এক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। কিন্তু, পৌল খ্রিস্টান বাবাদেরকে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, বরং প্রভুর [ঈশ্বরের] শাসনে ও চেতনা প্রদানে তাহাদিগকে মানুষ করিয়া তুল।” (ইফি. ৬:৪) পরিবার ছাড়া আর কোথায়-ই বা সন্তানরা প্রেম এবং কর্তৃত্ব সম্বন্ধে প্রথম অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারে? যে-বাবা-মায়েরা এই বিষয়গুলো সফলতার সঙ্গে শিক্ষা দিয়েছে, তারা যিহোবার বিধানের সঙ্গে মিল রেখে কাজ করেছে। আমাদের ঘরে সমস্ত রাগ, ক্রোধ এবং কটুবাক্য পরিত্যাগ করার মাধ্যমে সেটাকে প্রেমের এক আশ্রয়স্থল হিসেবে গড়ে তুলি আর এভাবে আমরা আমাদের সন্তানদেরকে কীভাবে কর্তৃপক্ষের প্রতি প্রেম এবং সম্মান দেখাতে হয়, সেই সম্বন্ধে অতীব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দিই। এটা তাদেরকে ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবনের জন্য প্রস্তুত করবে।
১৭. দিয়াবলের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের কীসের প্রয়োজন?
১৭ আমাদের এটা উপলব্ধি করতে হবে যে, দিয়াবল, যে প্রথম সর্বজনীন শান্তি নষ্ট করেছিল, সে ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার ব্যাপারে আমাদের প্রচেষ্টায় প্রবলভাবে বাধা দেবে। কোনো সন্দেহ নেই যে, শয়তানের উদ্দেশ্য সাধিত হচ্ছে কারণ বিবাহবিচ্ছেদের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, লিভ টু গেদারের নামে বিয়ের ব্যবস্থা বাতিল করে দেওয়া হচ্ছে এবং সমকামী ব্যক্তিদের মধ্যে বিয়েকে প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে। আমরা আমাদের আচরণ বা মনোভাবকে আধুনিক সমাজের মধ্যে যে-ধরনের প্রবণতা দেখা যায়, সেটার মতো হতে দিই না। খ্রিস্ট হচ্ছেন আমাদের আদর্শ। (ইফি. ৪:১৭-২১) তাই, শয়তান ও তার মন্দদূতদের প্রতিরোধ করার জন্য আমাদেরকে ‘ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান করিবার’ উপদেশ দেওয়া হয়েছে।—পড়ুন, ইফিষীয় ৬:১০-১৩.
“প্রেমে চল”
১৮. আমাদের খ্রিস্টীয় একতার চাবিকাঠি কী?
১৮ আমাদের খ্রিস্টীয় একতার মূল চাবিকাঠি হল প্রেম। আমাদের ‘এক প্রভুর’ প্রতি, আমাদের ‘এক ঈশ্বরের’ প্রতি এবং পরস্পরের প্রতি আমাদের হৃদয় প্রেমে পূর্ণ থাকায় আমরা ‘শান্তির যোগবন্ধনে আত্মার ঐক্য রক্ষা করিতে যত্নবান্ হইবার’ জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (ইফি. ৪:৩-৬) যিশু এইরকম প্রেম সম্বন্ধে প্রার্থনা করেছিলেন: “আমি কেবল ইহাদেরই নিমিত্ত নিবেদন করিতেছি, তাহা নয়, কিন্তু ইহাদের বাক্য দ্বারা যাহারা আমাতে বিশ্বাস করে, তাহাদের নিমিত্তও করিতেছি; যেন তাহারা সকলে এক হয়; পিতঃ, যেমন তুমি আমাতে ও আমি তোমাতে, তেমনি তাহারাও যেন আমাদিগেতে থাকে; . . . আর আমি ইহাদিগকে তোমার নাম জানাইয়াছি, ও জানাইব; যেন তুমি যে প্রেমে আমাকে প্রেম করিয়াছ, তাহা তাহাদিগেতে থাকে, এবং আমি তাহাদিগেতে থাকি।”—যোহন ১৭:২০, ২১, ২৬.
১৯. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ?
১৯ আমরা যদি দেখি যে, আমাদের অসিদ্ধতার জন্য আমরা অন্তর্দ্বন্দ্ব ভোগ করছি, তাহলে প্রেম যেন আমাদেরকে গীতরচকের মতো এইরকম প্রার্থনা করতে পরিচালিত করে: “তোমার নাম ভয় করিতে আমার চিত্তকে একাগ্র কর।” (গীত. ৮৬:১১) তাই, আসুন আমরা আমাদের প্রেমময় পিতার কাছ থেকে এবং যাদেরকে তিনি অনুমোদন করেন, তাদের কাছে থেকে আমাদেরকে সরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে দিয়াবলের প্রচেষ্টাকে প্রতিরোধ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। ‘প্রিয় বৎসদের ন্যায় ঈশ্বরের অনুকারী হইবার আর প্রেমে চলিবার’ জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে কাজ করুন আর তা পরিবারে, আমাদের পরিচর্যায় এবং মণ্ডলীতে।—ইফি. ৫:১, ২.
[২৯ পৃষ্ঠার চিত্র]
যজ্ঞবেদির কাছে নৈবেদ্য রেখে তিনি তার ভাইয়ের সঙ্গে শান্তি স্থাপন করার জন্য যান
[৩১ পৃষ্ঠার চিত্র]
বাবা-মায়েরা, সম্মান দেখানোর ব্যাপারে আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা দিন