কীভাবে আধ্যাত্মিক দুর্বলতাগুলো চেনা ও দূর করা যায়
গ্রিক পুরাণ অনুযায়ী ট্রয় নগরের বিরুদ্ধে ত্রোযান যুদ্ধে অ্যাকিলেস ছিলেন সবচেয়ে সাহসী গ্রিক যোদ্ধা। পুরাণে আরও বলা হয়েছে যে অ্যাকিলেস যখন শিশু ছিলেন তখন তার মা তাকে তার গোড়ালি ধরে স্টিক্স নদীর জলের মধ্যে চুবিয়েছিলেন যার ফলে শুধু গোড়ালি ছাড়া আর দেহের বাকি অংশ অমর হয়ে গিয়েছিল। এইজন্য ট্রয় নগরের রাজা প্রিয়ামের পুত্র প্যারিস অ্যাকিলেসের ঠিক গোড়ালিতেই তীর মেরে তাকে হত্যা করেছিলেন।
খ্রীষ্টানেরা খ্রীষ্টের সৈন্য আর তারা আধ্যাত্মিক যুদ্ধে রত। (২ তীমথিয় ২:৩) “আমাদের মল্লযুদ্ধ হইতেছে,” প্রেরিত পৌল বলেছিলেন, “রক্তমাংসের সহিত নয়, কিন্তু আধিপত্য সকলের সহিত, কর্ত্তৃত্ব সকলের সহিত, এই অন্ধকারের জগৎপতিদের সহিত, স্বর্গীয় স্থানে দুষ্টতার আত্মাগণের সহিত।” হ্যাঁ, আমাদের শত্রু শয়তান দিয়াবল ও মন্দদূতেরা ছাড়া আর কেউ নয়।—ইফিষীয় ৬:১২.
সত্যিই এই যুদ্ধ এক-তরফা হতো যদি এতে আমরা যিহোবার কাছ থেকে সাহায্য না পেতাম যাঁকে “যুদ্ধবীর” হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ১৫:৩) আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা দেওয়া হয়েছে যাতে আমরা এই ক্ষতিকারক শত্রুর হাত থেকে নিজেদের রক্ষা করাতে পারি। সেইজন্য পৌল পরামর্শ দিয়েছিলেন: “ঈশ্বরের সমগ্র যুদ্ধসজ্জা পরিধান কর, যেন দিয়াবলের নানাবিধ চাতুরীর সম্মুখে দাঁড়াইতে পার।”—ইফিষীয় ৬:১১.
কোন সন্দেহই নেই যে যিহোবা ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত যুদ্ধসজ্জা খুবই উন্নত মানের যা দিয়ে যে কোনরকমের আধ্যাত্মিক আক্রমণের সামনা করা যায়। আপনি পৌল যে তালিকা দিয়েছেন তাতে একটু নজর দিন: সত্যের কটিবন্ধনী, ধার্মিকতার বুকপাটা, সুসমাচারের সুসজ্জতার পাদুকা, বিশ্বাসের ঢাল, পরিত্রাণের শিরস্থান এবং আত্মার খড়গ। এর চেয়ে ভাল যুদ্ধসজ্জা কি আর থাকতে পারে? এইরকম যুদ্ধসজ্জা পরে একজন খ্রীষ্টান সৈনিকের জয়ী হওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা থাকে তা সে বিপদ যত ভীষণই হোক না কেন।—ইফিষীয় ৬:১৩-১৭.
যদিও যিহোবার কাছ থেকে আসা আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা সবচেয়ে ভাল মানের আর আমাদের জন্য সুরক্ষার উৎস, তাই বলে আমরা এটাকে অবশ্যই হালকাভাবে নেব না। আমাদের মনে রাখা দরকার যে অ্যাকিলেসের যেমন হয়েছিল আমাদের জন্য যেন তা না ঘটে। এমন কি হতে পারে যে অ্যাকিলেসের দুর্বল জায়গার (গোড়ালি) মতো আমাদেরও কোন আধ্যাত্মিক দুর্বলতা আছে? আর হঠাৎই যদি সেই জায়গায় আক্রমণ করা হয় তাহলে তা মৃত্যুজনক বলে প্রমাণিত হতে পারে।
আপনার আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা পরীক্ষা করুন
দুবার অলিম্পিক স্বর্ণ পদক জয়ী একজন আইস-স্কেটার, যাকে দেখে মনে হতো যে তার স্বাস্থ্য খুবই ভাল, একদিন হঠাৎ শরীরচর্চা করার সময় অজ্ঞান হয়ে যান ও মারা যান। এর অল্প কিছু সময় পরে দ্যা নিউ ইয়র্ক টাইমস্ এক টুকরো খবর ছাপিয়েছিল যা ভাবিয়ে তোলার মতো: “প্রত্যেক বছর প্রায় তিন লক্ষ আমেরিকাবাসী হৃদরোগে আক্রান্ত হন আর তাদের মধ্যে অর্ধেকেরই কোন পূর্ব লক্ষণ দেখা যায় না।” তাহলে এর থেকে স্পষ্ট বোঝা যায় যে আমরা এখন কেমন বোধ করছি তার থেকে আমাদের স্বাস্থ্যের অবস্থা কিরকম তা ঠিক করা যায় না।
ঠিক এই কথাই আমাদের আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের বিষয়েও সত্যি। বাইবেলের পরামর্শ হল: “যে মনে করে, আমি দাঁড়াইয়া আছি, সে সাবধান হউক, পাছে পড়িয়া যায়।” (১ করিন্থীয় ১০:১২) আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা উন্নতমানের কিন্তু তবুও আমরা দুর্বল হয়ে পড়তে পারি। আর এর কারণ হল আমরা পাপে জন্মেছি আর আমাদের পাপী ও অসিদ্ধ স্বভাব সহজেই আমাদের ওপর কর্তৃত্ব করতে পারে আর ঈশ্বরের ইচ্ছা মেনে চলার জন্য আমাদের দৃঢ়তাকে নষ্ট করে দিতে পারে। (গীতসংহিতা ৫১:৫) আমাদের ভাল ইচ্ছাগুলো থাকা সত্ত্বেও, আমাদের প্রবঞ্চক হৃদয় মন ভোলানো যুক্তি অথবা অজুহাত দেখিয়ে আমাদের ধোকা দিতে পারে যাতে আমরা খুব সহজেই আমাদের দুর্বলতাগুলোকে উপেক্ষা করি আর নিজেদেরকে এই বলে ভুলাই যে সবকিছু ভালভাবেই চলছে।—যিরমিয় ১৭:৯; রোমীয় ৭:২১-২৩.
এছাড়াও আমরা এমন এক জগতে বাস করছি যেখানে ন্যায় ও অন্যায়ের মধ্যে পার্থক্য করা খুবই মুশকিল হয়ে পড়ে। কোন কিছু ন্যায় অথবা অন্যায় তা ঠিক করা হয় একজন ব্যক্তি নিজে সে বিষয়ে কী মনে করেন তার ওপর ভিত্তি করে। আর এইরকম মনোভাবকে বাড়িয়ে তোলার জন্য বিজ্ঞাপন, জনপ্রিয় মনোরঞ্জন আর বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমগুলো ইন্ধন যোগায়। সত্যিই সতর্ক না হলে, আমরাও এতে জড়িয়ে পড়তে পারি আর যার ফলে আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা দুর্বল হয়ে যেতে শুরু করতে পারে।
এইরকম বিপদজনক পরিস্থিতির মধ্যে পড়ার আগেই আমাদের বাইবেলের পরামর্শ শোনা উচিত: “আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।” (২ করিন্থীয় ১৩:৫) এইরকম করে আমরা দেখতে পাব যে আমাদের মধ্যে কোন দুর্বলতা গড়ে উঠছে কি না আর তাহলেই আমরা আমাদের শত্রু আমাদের দুর্বলতা দেখে ফেলা ও সেই জায়গায় আক্রমণ করার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে সেগুলোকে সারিয়ে তুলতে পারব। কিন্তু, কীভাবে আপনি এইরকম পরীক্ষা করবেন? কিছু লক্ষণ কী হতে পারে যা আমরা পরীক্ষা করার সময় নিজেদের মধ্যে দেখতে পারি?
লক্ষণগুলো চেনা
একটা সাধারণ লক্ষণ যার থেকে আধ্যাত্মিক দুর্বলতাকে বোঝা যায় তা হল আমাদের ব্যক্তিগত অধ্যয়নের অভ্যাসকে অবহেলা করতে শুরু করা। কেউ কেউ মনে করেন যে এটা করা খুবই দরকার কিন্তু কিছু না কিছু এসেই যায় যেজন্য ঠিক সময় হয়ে ওঠে না। আজকালকার এই ব্যস্ত জীবনে খুব সহজেই এইরকম খারাপ পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে যাওয়া যায়। আর এর চেয়েও খারাপ বিষয় হল লোকেরা প্রায়ই যুক্তি দেখিয়ে থাকেন যে তারা দুর্বল হয়ে পড়েননি কারণ তারা সময় পেলে বাইবেলের প্রকাশনাগুলো পড়েন আর কিছু খ্রীষ্টীয় সভায়ও যোগ দেন।
এইরকম চিন্তা করার মানে হল একভাবে নিজেকে ধোকা দেওয়া। এটা এইরকম এক লোকের মতো হবে যিনি মনে করেন যে তিনি এতই ব্যস্ত যে তার বসে ঠিকমতো একটু খাওয়ারও সময় নেই, তাই তিনি তাড়াহুড়ো করে একাজ ওকাজ করতে করতে একটু খেয়ে নিলেন। তিনি হয়ত খাওয়ার অভাবে মরে যাবেন না কিন্তু আজ নয় তো কাল তার শারীরিক সমস্যা হবেই। একইভাবে, নিয়মিতভাবে পুষ্টিকর আধ্যাত্মিক খাদ্য না খেলে আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জা দুর্বল হয়ে পড়তে পারে। জগতের চিন্তাধারা ও মনোভাব আমাদের ওপর একটানা হামলা করায় আমরা সহজেই শয়তানের চরম আক্রমণের সামনে হার মেনে ফেলতে পারি।
আধ্যাত্মিক দুর্বলতার আরেকটা লক্ষণ হল, আধ্যাত্মিক যুদ্ধে সবসময় সজাগ না থাকা। শান্তির সময়ে একজন সৈনিক যুদ্ধের চিন্তা ও বিপদ নিয়ে ভাবেন না। সেইজন্য তিনি মনে করতে পারেন যে তৈরি থাকার দরকার নেই। তাই তাকে যদি হঠাৎ করে ডাকা হয়, তাহলে তখন তিনি হয়ত একেবারেই তৈরি নন। আধ্যাত্মিকভাবেও এই একই কথা বলা যায়। যদি আমরা সবসময় তৈরি না থাকি, তাহলে হয়ত আমাদের ওপর এসে পড়া আক্রমণকে ঠেকানোর জন্য আমরা প্রস্তুত থাকব না।
কিন্তু, আমরা কি করে জানব যে আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি? আমরা নিজেদেরকে কিছু প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি যা হয়ত আমাদের পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা বলে দিতে পারে: প্রচারে যেতে কি আমি ততটাই ভালবাসি যতটা কি না আমি বেড়াতে যেতে ভালবাসি? সভার প্রস্তুতি করতে কি আমার ততটাই ভাললাগে যতটা ভাল আমার কেনাকাটা করতে বা টিভি দেখতে লাগে? একজন খ্রীষ্টান হওয়ায় যে জিনিস বা সুযোগগুলো আমি ছেড়ে এসেছি আজ সেগুলোর কথা ভেবে আমি কি দুঃখ করি? এইগুলো হল খোঁজ করার মতো প্রশ্ন আর এর সঙ্গে এগুলো আমাদের এটাও ধরে ফেলতে সাহায্য করবে যে আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার কোথায় কোন দুর্বলতা এসে পড়ছে কি না।
যেহেতু আমাদের রক্ষা করার জন্য যুদ্ধসজ্জা আধ্যাত্মিক, তাই অবশ্যই ঈশ্বরের আত্মার আমাদের জীবনে পুরোপুরিভাবে কাজ করা দরকার। আর এটা আমাদের সমস্ত কাজে ঈশ্বরের আত্মার ফল কতদূর পর্যন্ত প্রকাশ পাচ্ছে তার থেকে দেখা যায়। আপনার পছন্দ নয় এমন কিছু যদি কেউ করেন বা বলেন, আপনি কি খুব সহজেই রেগে যান বা একেবারে বদমেজাজি হয়ে ওঠেন? পরামর্শ মেনে নেওয়াকে কি আপনি কঠিন বলে মনে করেন বা আপনি ভাবেন যে অন্যেরা সবসময় শুধু আপনার দোষই খুঁজে বেড়ায়? আপনি কি অন্যদের ভাল হলে বা অন্যের সাফল্যে হিংসা করেন? আপনার কি অন্যদের সঙ্গে বিশেষ করে আপনার সঙ্গীসাথিদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে মুশকিল হয়? সৎভাবে নিজেকে পরীক্ষা করা আমাদের দেখতে সাহায্য করবে আমাদের জীবন ঈশ্বরের আত্মার ফলে ভরে গিয়েছে না কি মাংসের কাজ চুপি-চুপি আমাদের জীবনে এসে দেখা দিতে শুরু করেছে।—গালাতীয় ৫:২২-২৬; ইফিষীয় ৪:২২-২৭.
আধ্যাত্মিক দুর্বলতাকে দূর করার জন্য জরুরি পদক্ষেপগুলো
আধ্যাত্মিক দুর্বলতার লক্ষণগুলোকে চেনা এক কথা আর সেগুলোর মোকাবিলা করতে করতে সেগুলোকে দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া আর এক কথা। দুঃখের কথা হল যে অনেক লোকেদের এমন স্বভাব আছে যে তারা অজুহাত দেখান, যুক্তি খাড়া করেন, সমস্যাকে ছোট করে দেখানোর চেষ্টা করেন আর হয়ত বা মানতেই চান না যে সত্যিই কোন সমস্যা রয়েছে। এটা কতই না বিপদজনক—এটা যেন ঠিক যুদ্ধসজ্জার কিছু কিছু হাতিয়ার ছাড়াই যুদ্ধে যাওয়ার মতো! আমাদের এইরকম ভুল শয়তানকে আমাদের ওপর হামলা করার সুযোগ দেবে। তাই যখনই আমরা আমাদের ভিতর কোন দুর্বলতা দেখতে পাই তখনই আমাদের সেটাকে দূর করার জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। আমরা কী করতে পারি?—রোমীয় ৮:১৩; যাকোব ১:২২-২৫.
যেহেতু আমরা আধ্যাত্মিক যুদ্ধ করে চলেছি,—এই যুদ্ধে খ্রীষ্টানের মন ও হৃদয়কে নিয়ন্ত্রণে রাখা দরকার—এই কারণে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে রক্ষা করার জন্য আমরা যা পারি তার সবটুকু করার চেষ্টা করা উচিত। মনে রাখুন যে আমাদের আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার মধ্যে রয়েছে “ধার্ম্মিকতার বুকপাটা,” যা আমাদের হৃদয়কে রক্ষা করে আর “পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ,” আমাদের মনকে রক্ষা করে। এখন আমরা কতটা নিপুণভাবে এই হাতিয়ারগুলো ব্যবহার করতে শিখছি তার ওপর আমাদের জিত ও হার নির্ভর করবে।—ইফিষীয় ৬:১৪-১৭; হিতোপদেশ ৪:২৩; রোমীয় ১২:২.
“ধার্ম্মিকতার বুকপাটা,” পরার জন্য প্রয়োজন রয়েছে যে আমরা আমাদের নিজেদেরকে পরীক্ষা করে চলি যে আমরা ধার্মিকতাকে প্রেম ও দুষ্টতাকে ঘৃণা করে চলছি কিনা। (গীতসংহিতা ৪৫:৭; ৯৭:১০; আমোষ ৫:১৫) জগতের সঙ্গে সঙ্গে আমাদের মানও কি নিচে নেমে চলেছে? এখন কি আমরা সেই বিষয়গুলোতে আনন্দ পেতে শুরু করেছি একসময় যেগুলোকে আমরা খারাপ বলে মনে করতাম বা পছন্দ করতাম না, সেগুলো আমাদের জীবনের ঘটনাই হোক বা টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের পর্দায় দেখানো হোক আর বই বা ম্যাগাজিনেই আমরা দেখি না কেন? ধার্মিকতার জন্য প্রেম আমাদের দেখতে সাহায্য করবে যে জগতে যাকে স্বাধীনতা ও আধুনিকতা বলে দেখা হয় তা আসলে উচ্ছৃঙ্খলতা ও অহংকার ছাড়া আর কিছুই নয়।—রোমীয় ১৩:১৩, ১৪; তীত ২:১২.
“পরিত্রাণের শিরস্ত্রাণ” পরার মানে হচ্ছে আমরা সেই অপূর্ব আশীর্বাদকে আমাদের মনে তরতাজা করে রাখি যেগুলো খুব শীঘ্রিই আমরা পাব। আমরা যেন এই জগতের জাঁকজমক ও মায়া-মোহের মাঝে নিজেদের হারিয়ে না যেতে দিই। (ইব্রীয় ১২:২, ৩; ১ যোহন ২:১৬) এই দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের বস্তুবাদ ও ব্যক্তিগত লাভকে আধ্যাত্মিক বিষয়ের আগে না রাখতে সাহায্য করবে। (মথি ৬:৩৩) এইজন্য, আমাদের দেখা দরকার যে যুদ্ধসজ্জার এই হাতিয়ারটা আমরা ঠিক করে পরেছি কিনা আর আমাদের অবশ্যই নিজেদেরকে সৎভাবে প্রশ্ন করা উচিত: আমার জীবনে কী পাওয়ার জন্য আমি চেষ্টা করছি? আমার কি কিছু নির্দিষ্ট আধ্যাত্মিক লক্ষ্য আছে? সেগুলোতে পৌঁছানোর জন্য আমি কী করছি? আমরা অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের অবশিষ্টাংশই হই বা বিপুলসংখ্যক ‘বিস্তর লোকের’ ভাগই হই, আমাদের পৌলকে নকল করা উচিত, যিনি বলেন: ‘আমি যে তাহা ধরিয়াছি, আপনার বিষয়ে এমন বিচার করি না; কিন্তু একটী কাজ করি, পশ্চাৎ স্থিত বিষয় সকল ভুলিয়া গিয়া সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়িতেছি।’—প্রকাশিত বাক্য ৭:৯; ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪.
আধ্যাত্মিক যুদ্ধসজ্জার বিষয়ে পৌলের বর্ণনা এই পরামর্শ দিয়ে শেষ হয়: “সর্ব্ববিধ প্রার্থনা ও বিনতি সহকারে সর্ব্বসময়ে আত্মাতে প্রার্থনা কর, এবং ইহার নিমিত্ত সম্পূর্ণ অভিনিবেশ ও বিনতিসহ জাগিয়া থাক, সমস্ত পবিত্র লোকের জন্য।” (ইফিষীয় ৬:১৮, ১৯ক) এটা দেখায় যে কোন আধ্যাত্মিক দুর্বলতা দূর করা বা তার থেকে বাঁচার জন্য দুটো সঠিক পদক্ষেপ আছে: যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে এক উত্তম সম্পর্ক গড়ে তোলা আর আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনেদের সঙ্গে এক অটুট বন্ধনে নিজেকে বাঁধা।
যখন যিহোবার কাছে “সর্ব্ববিধ” ভাবে (আমাদের পাপ স্বীকার করে, ক্ষমা পাওয়ার জন্য বিনতি করে, নির্দেশনা চেয়ে, আশীর্বাদের জন্য ধন্যবাদ দিয়ে, হৃদয় থেকে প্রশংসা করে) আর “সর্ব্বসময়ে” (সবার সামনে, একান্তে, ব্যক্তিগতভাবে ও খুশি মতো) প্রার্থনা করা আমাদের অভ্যাসে দাঁড়ায় তখন আমরা যিহোবার অনেক কাছে আসি। আর এটা আমাদের সবচেয়ে বেশি সুরক্ষা যোগায়।—রোমীয় ৮:৩১; যাকোব ৪:৭, ৮.
অন্যদিকে, আমাদেরকে “সমস্ত পবিত্র লোকের জন্য” অর্থাৎ আমাদের খ্রীষ্টান ভাইবোনদের জন্য প্রার্থনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা হয়ত আমাদের প্রার্থনায় অনেক দূর দেশে থাকেন এমন ভাইদের কথা মনে করতে পারি যারা তাড়না বা অন্যান্য কষ্ট ভোগ করছেন। কিন্তু সেই ভাইবোনদের বিষয়ে কী যাদের সঙ্গে আমরা কাজ করি ও প্রত্যেকদিন যাদের সঙ্গে আমাদের দেখা হচ্ছে? তাদের জন্যও আমাদের প্রার্থনা করা উচিত যেমন যীশু তাঁর শিষ্যদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন। (যোহন ১৭:৯; যাকোব ৫:১৬) এইরকম প্রার্থনা আমাদেরকে ভাইবোনদের আরও কাছে নিয়ে আসে আর আমাদের শক্তি যোগায় যাতে আমরা “মন্দ লোকদের” আক্রমণকে ঠেকাতে পারি।—২ থিষলনীকীয় ৩:১-৩.
শেষে, প্রেরিত পিতরের প্রেমপূর্ণ পরামর্শ আমাদের মনে রাখা দরকার: “সকল বিষয়ের পরিণাম সন্নিকট; অতএব সংযমশীল হও, এবং প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক। সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কেননা ‘প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।’” (১ পিতর ৪:৭, ৮) আমাদের নিজেদের ও অন্যদের দুর্বলতাগুলো খুব সহজেই আমাদের চোখে পড়ে, আমাদের হৃদয়ে ও মনে বসে যায় আর তা আমাদের বাধা ও বিঘ্নের কারণ হতে পারে। শয়তান মানুষের এই দুর্বলতার কথাটা খুব ভাল করে জানে। তার একটা জঘন্য চাল হল বিভেদ জন্মানো আর জিত পাওয়া। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই এই পাপগুলোকে একে অপরের জন্য গভীর প্রেম দিয়ে ঢেকে দেওয়া দরকার যাতে আমরা “দিয়াবলকে স্থান” না দিই।—ইফিষীয় ৪:২৫-২৭.
এখন আধ্যাত্মিকভাবে সবল থাকুন
আপনি যখন দেখেন যে আপনার চুল খারাপ হয়ে গিয়েছে বা আপনার টাইটা ঠিক নেই, আপনি কী করেন? বেশিরভাগ সময়ই এমনটাই হয় যে আপনি যত তাড়াতাড়ি পারেন সেগুলো ঠিক করে নেওয়ার চেষ্টা করেন। খুব কম লোকেরাই আছেন যারা এতে মন দেন না এই ভেবে যে এইরকম বিষয়গুলো নিয়ে কে চিন্তা করে। তাহলে যখন আমাদের আধ্যাত্মিক দুর্বলতার বিষয় আসে তখনও আমাদের এইরকমভাবেই তাতে মন দেওয়া উচিত। দৈহিক খারাপ বিষয়গুলোতে নজর না দিলে হয়ত লোকেরা আমাদের পছন্দ করবে না কিন্তু আধ্যাত্মিক দোষগুলোকে দূর না করলে যিহোবা আমাদের পছন্দ না করতে পারেন।—১ শমূয়েল ১৬:৭.
যে কোন আধ্যাত্মিক দুর্বতাকে সমূলে নষ্ট করার জন্য আমাদের যা কিছু দরকার যিহোবা প্রেমের সঙ্গে আমাদের তা দিয়েছেন আর তা আমাদের আধ্যাত্মিকভাবে সবল থাকতেও সাহায্য করে। খ্রীষ্টীয় সভাগুলো, বাইবেলের প্রকাশনা, পরিপক্ব ও যত্নবান খ্রীষ্টান ভাইবোনদের মাধ্যমে তিনি সবসময় আমাদের মনে করিয়ে দেন যে আমাদের অবশ্যই কী করতে হবে। তাই তাদের দেওয়া পরামর্শ শোনা ও সেগুলোকে কাজে লাগান আমাদের দায়িত্ব হয়ে দাঁড়ায়। এটা করার জন্য চেষ্টা ও নিজেকে শাসন করা দরকার। মনে রাখুন যে প্রেরিত পৌল খুবই আন্তরিকতার সঙ্গে কী বলেছিলেন: “আমি এরূপে দৌড়িতেছি যে বিনালক্ষ্যে নয়; এরূপে মুষ্ঠিযুদ্ধ করিতেছি যে শূন্যে আঘাত করিতেছি না। বরং আমার নিজ দেহকে প্রহার করিয়া দাসত্বে রাখিতেছি, পাছে অন্য লোকদের কাছে প্রচার করিবার পর আমি আপনি কোন ক্রমে অগ্রাহ্য হইয়া পড়ি।”—১ করিন্থীয় ৯:২৬, ২৭.
সতর্ক হোন এবং কখনও অ্যাকিলেসের গোড়ালির মতো কোনরকম আধ্যাত্মিক দুর্বলতাকে আপনার ভিতরে গড়ে উঠতে দেবেন না। বরঞ্চ, আসুন আমরা নম্রতা ও সাহসের সঙ্গে এখনই নিজেদের পরীক্ষা করি আর দেখি যে আমাদের মধ্যে কোন আধ্যাত্মিক দুর্বলতা আছে কিনা আর থাকলে সেগুলোকে চেনা ও দূর করার জন্য যা কিছু করা দরকার তাই করি।
[১৯ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“আপনাদের পরীক্ষা করিয়া দেখ, তোমরা বিশ্বাসে আছ কি না; প্রমাণার্থে আপনাদেরই পরীক্ষা কর।”—২ করিন্থীয় ১৩:৫.
[২১ পৃষ্ঠার ব্লার্ব]
“প্রার্থনার নিমিত্ত প্রবুদ্ধ থাক। সর্ব্বাপেক্ষা পরস্পর একাগ্র ভাবে প্রেম কর; কেননা ‘প্রেম পাপরাশি আচ্ছাদন করে।’”—১ পিতর ৪:৭, ৮.
[২০ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
নিজেকে প্রশ্ন করুন...
◆সভার প্রস্তুতি করতে কি আমি ততটাই সময় দিতে রাজি যতটা আমি কেনাকাটা করতে বা টিভি দেখতে দিতে চাই?
◆জগতে অন্যেরা উন্নতি করছে দেখে আমি কি ভিতরে ভিতরে জ্বলি?
◆আমি পছন্দ করি না এমন কিছু যখন কেউ করেন বা বলেন, আমি কি তখন সহজেই রেগে যাই?
◆পরামর্শ মেনে নেওয়াকে কি আমি খুব কঠিন বলে মনে করি বা আমি ভাবি যে অন্যেরা সবসময় শুধু আমার ভুল ধরছে?
◆আমার কি অন্যদের সঙ্গে মিলেমিশে থাকতে মুশকিল হয়?
◆জগতের সঙ্গে সঙ্গে আমার মানও কি নিচে নেমে গিয়েছে?
◆আমার কি নির্দিষ্ট কোন আধ্যাত্মিক লক্ষ্য আছে?
◆আধ্যাত্মিক লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমি কী করছি?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্য]
অ্যাকিলেস: From the book Great Men and Famous Women; Roman soldiers and page 21: Historic Costume in Pictures/Dover Publications, Inc., New York