খ্রীষ্ট তাঁর মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন
“দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৮:২০.
১, ২. (ক) শিষ্য তৈরি করার আদেশ দেওয়ার সময় পুনরুত্থিত যীশু তাঁর অনুসারীদের কাছে কোন্ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন? (খ) কীভাবে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে যীশু সক্রিয়ভাবে সাহায্য করেছিলেন?
স্বর্গে যাওয়ার আগে আমাদের পুনরুত্থিত নেতা যীশু খ্রীষ্ট তাঁর শিষ্যদেরকে দেখা দিয়ে বলেছিলেন: “স্বর্গে ও পৃথিবীতে সমস্ত কর্ত্তৃত্ব আমাকে দত্ত হইয়াছে। অতএব তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।”—মথি ২৩:১০, NW; ২৮:১৮-২০.
২ যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে শুধু আরও শিষ্য তৈরির জীবন রক্ষাকারী কাজই দেননি কিন্তু তিনি তাদের সঙ্গে সঙ্গে থাকবেন বলেও প্রতিজ্ঞা করেছেন। বাইবেলে প্রেরিতদের কার্যবিবরণীতে লেখা প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টধর্মের ইতিহাস নিঃসন্দেহে দেখায় যে, খ্রীষ্টকে যে-কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে, তা তিনি নতুন গঠিত মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তাঁর প্রতিজ্ঞা অনুসারে “সহায়” অর্থাৎ পবিত্র আত্মা পাঠিয়েছেন, যাতে তা তাঁর অনুসারীদেরকে শক্তি এবং তাদের কাজগুলোতে নির্দেশনা দেয়। (যোহন ১৬:৭; প্রেরিত ২:৪, ৩৩; ১৩:২-৪; ১৬:৬-১০) পুনরুত্থিত যীশু তাঁর শিষ্যদেরকে সাহায্য করার জন্য তাঁর আদেশ পালন করতে দূতেদের ব্যবহার করেছিলেন। (প্রেরিত ৫:১৯; ৮:২৬; ১০:৩- ৮, ২২; ১২:৭-১১; ২৭:২৩, ২৪; ১ পিতর ৩:২২) এছাড়া, যোগ্য ব্যক্তিদেরকে পরিচালক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করতে দিয়ে আমাদের নেতা মণ্ডলীকে নির্দেশনা দেন।—প্রেরিত ১:২০, ২৪-২৬; ৬:১-৬; ৮:৫, ১৪-১৭.
৩. এই প্রবন্ধে কোন্ প্রশ্নগুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে?
৩ কিন্তু, আমাদের এই ‘যুগান্তের’ সময় সম্বন্ধে কী বলা যায়? আজকে, যীশু খ্রীষ্ট কীভাবে খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন? আর আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, আমরা এই নেতৃত্ব মেনে নিয়েছি?
প্রভুর এক বিশ্বস্ত দাস আছে
৪. (ক) “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস” কাদের নিয়ে গঠিত? (খ) প্রভু দাসদের ওপর কোন্ দায়িত্ব দিয়েছেন?
৪ যীশু তাঁর উপস্থিতির চিহ্ন সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করার সময়ে বলেছিলেন: “এখন, সেই বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস কে, যাহাকে তাহার প্রভু নিজ পরিজনের উপরে নিযুক্ত করিয়াছেন, যেন সে তাহাদিগকে উপযুক্ত সময়ে খাদ্য দেয়? ধন্য সেই দাস, যাহাকে তাহার প্রভু আসিয়া সেইরূপ করিতে দেখিবেন। আমি তোমাদিগকে সত্য কহিতেছি, তিনি তাহাকে আপন সর্ব্বস্বের অধ্যক্ষ করিবেন।” (মথি ২৪:৪৫-৪৭) আমাদের নেতা যীশু খ্রীষ্ট হলেন “প্রভু” এবং তিনি “বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাস”-কে—পৃথিবীতে অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদেরকে—তাঁর পার্থিব সমস্ত কাজের জন্য নিযুক্ত করেছেন।
৫, ৬. (ক) প্রেরিত যোহন যে-দর্শন পেয়েছিলেন সেই দর্শনে “সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ” এবং “সপ্ত তারা” বলতে কী বোঝায়? (খ) যীশুর দক্ষিণ বা ডান হাতে যে-“সপ্ত তারা” আছে সেটা দিয়ে কী বোঝায়?
৫ বাইবেলের প্রকাশিত বাক্য বই দেখায় যে, বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাস সরাসরি যীশু খ্রীষ্টের পরিচালনার অধীনে রয়েছেন। ‘প্রভুর দিনের’ এক দর্শনে প্রেরিত যোহন “সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ, ও সেই সকল দীপবৃক্ষের মধ্যে ‘মনুষ্যপুত্ত্রের ন্যায় এক ব্যক্তিকে’” দেখেছিলেন, যার “দক্ষিণ হস্তে সপ্ত তারা আছে।” যোহনের কাছে সেই দর্শন সম্বন্ধে ব্যাখ্যা করার সময় যীশু বলেছিলেন: “আমার দক্ষিণ হস্তে যে সপ্ত তারা দেখিলে, তাহার নিগূঢ়তত্ত্ব এবং সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ এই; সেই সপ্ত তারা ঐ সপ্ত মণ্ডলীর দূত, এবং সেই সপ্ত দীপবৃক্ষ ঐ সপ্ত মণ্ডলী।”—প্রকাশিত বাক্য ১:১, ১০-২০.
৬ “সপ্ত সুবর্ণ দীপবৃক্ষ” বলতে “প্রভুর দিনে” যে-খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীগুলো আছে সেগুলোকে বোঝায় আর প্রভুর দিন ১৯১৪ সাল থেকে শুরু হয়েছে। কিন্তু “সপ্ত তারা” সম্বন্ধে কী বলা যায়? প্রথমত, সেগুলো আত্মায়-জাত সমস্ত অভিষিক্ত অধ্যক্ষদেরকে বোঝায় যারা প্রথম শতাব্দীর এই মণ্ডলীগুলোকে দেখাশোনা করতেন।a এই অধ্যক্ষরা যীশুর দক্ষিণ বা ডান হাতে অর্থাৎ তাঁর পরিচালনা এবং নির্দেশনার অধীনে রয়েছেন। হ্যাঁ, খ্রীষ্ট যীশু যৌথ দাস শ্রেণীকে নেতৃত্ব দেন। কিন্তু, এখন এই অভিষিক্ত অধ্যক্ষরা সংখ্যায় খুবই অল্প। কীভাবে সারা পৃথিবীর যিহোবার সাক্ষিদের ৯৩,০০০রেরও বেশি মণ্ডলীতে খ্রীষ্টের নেতৃত্ব রয়েছে?
৭. (ক) সারা পৃথিবীর মণ্ডলীগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য যীশু কীভাবে পরিচালক গোষ্ঠীকে ব্যবহার করেন? (খ) কেন বলা যেতে পারে যে, খ্রীষ্টান অধ্যক্ষরা পবিত্র আত্মার দ্বারা নিযুক্ত?
৭ প্রথম শতাব্দীর মতো অভিষিক্ত অধ্যক্ষদের মধ্যে থেকে ছোট একদল যোগ্য ব্যক্তি এখন পরিচালক গোষ্ঠী হিসেবে কাজ করছেন, যারা যৌথ বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান দাসকে প্রতিনিধিত্ব করে। আত্মায় অভিষিক্ত হোন বা না হোন, স্থানীয় মণ্ডলীগুলোতে যোগ্য ব্যক্তিদেরকে প্রাচীন হিসেবে নিযুক্ত করার জন্য আমাদের নেতা এই পরিচালক গোষ্ঠীকে ব্যবহার করেন। এই ক্ষেত্রে যিহোবা যীশুকে যে-পবিত্র আত্মা ব্যবহার করার কর্তৃত্ব দিয়েছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (প্রেরিত ২:৩২, ৩৩) সবচেয়ে প্রথমে, এই অধ্যক্ষদের পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা ঈশ্বরের বাক্যে যে-চাহিদাগুলো রয়েছে সেগুলো পূরণ করতে হবে। (১ তীমথিয় ৩:১-৭; তীত ১:৫-৯; ২ পিতর ১:২০, ২১) প্রার্থনা করে এবং পবিত্র আত্মার নির্দেশনার মাধ্যমে সুপারিশ এবং নিযুক্ত করা হয়। এছাড়া, যাদেরকে নিযুক্ত করা হয় তারা প্রত্যেকে আত্মার ফল উৎপন্ন করার প্রমাণ দেন। (গালাতীয় ৫:২২, ২৩) তাই অভিষিক্ত হোন বা না হোন, পৌলের পরামর্শ সমস্ত প্রাচীনদের বেলায় খাটে: “তোমরা আপনাদের বিষয়ে সাবধান, এবং পবিত্র আত্মা তোমাদিগকে অধ্যক্ষ করিয়া যাহার মধ্যে নিযুক্ত করিয়াছেন, সেই সমস্ত পালের বিষয়ে সাবধান হও।” (প্রেরিত ২০:২৮) এই নিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিচালক গোষ্ঠীর কাছ থেকে নির্দেশনা পান এবং স্বেচ্ছায় মণ্ডলীর যত্ন নেন। এভাবেই খ্রীষ্ট এখন আমাদের সঙ্গে আছেন এবং সক্রিয়ভাবে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
৮. খ্রীষ্ট তাঁর অনুসারীদেরকে পরিচালনা দেওয়ার জন্য কীভাবে দূতেদের ব্যবহার করেন?
৮ এছাড়াও যীশু তাঁর অনুসারীদেরকে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য দূতেদের ব্যবহার করেন। গোম এবং শ্যামাঘাসের দৃষ্টান্ত অনুসারে শস্যচ্ছেদনের সময় হল “যুগান্ত।” শস্যচ্ছেদনের জন্য প্রভু কাদেরকে ব্যবহার করবেন? খ্রীষ্ট বলেছিলেন: “ছেদকেরা স্বর্গদূত।” তিনি আরও বলেছিলেন: “মনুষ্যপুত্ত্র আপন দূতগণকে প্রেরণ করিবেন; তাঁহারা তাঁহার রাজ্য হইতে সমস্ত বিঘ্নজনক বিষয় ও অধর্ম্মাচারীদিগকে সংগ্রহ করিবেন, এবং তাহাদিগকে অগ্নিকুন্ডে ফেলিয়া দিবেন।” (মথি ১৩:৩৭-৪১) এছাড়া, একজন স্বর্গদূত যেমন ইথিওপীয় ব্যক্তিকে খুঁজে বের করার জন্য ফিলিপকে নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তেমনই আজকে এমন অনেক প্রমাণ রয়েছে যে, আন্তরিক ব্যক্তিদেরকে খুঁজে বের করার জন্য সত্য খ্রীষ্টানদেরকে নির্দেশনা দিতে খ্রীষ্ট দূতেদের ব্যবহার করেন।—প্রেরিত ৮:২৬, ২৭; প্রকাশিত বাক্য ১৪:৬.
৯. (ক) কীসের মাধ্যমে খ্রীষ্ট আজকে মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন? (খ) খ্রীষ্টের নেতৃত্ব থেকে উপকার পেতে চাইলে আমাদেরকে কোন্ প্রশ্ন বিবেচনা করতে হবে?
৯ এটা জেনে কত আশ্বাস পাওয়া যায় যে, বর্তমানে যীশু খ্রীষ্ট পরিচালক গোষ্ঠী, পবিত্র আত্মা এবং দূতেদের মাধ্যমে তাঁর শিষ্যদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন! এমনকি তাড়না বা এইরকম অন্যান্য কারণে যিহোবার কিছু উপাসক যদি কিছু সময়ের জন্য পরিচালক গোষ্ঠীর কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকেন, তাহলেও খ্রীষ্ট পবিত্র আত্মা এবং দূতেদের সাহায্যে নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু, একমাত্র তখনই আমরা তাঁর নেতৃত্ব থেকে উপকার পাই যখন আমরা তা মেনে নিই। আমরা কীভাবে দেখাতে পারি যে, আমরা খ্রীষ্টের নেতৃত্ব মেনে নিই?
“আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও”
১০. মণ্ডলীতে নিযুক্ত প্রাচীনদের প্রতি আমরা কীভাবে সম্মান দেখাতে পারি?
১০ আমাদের নেতা মণ্ডলীতে “দানরূপ মানুষদের” (NW) অর্থাৎ “কয়েক জনকে সুসমাচার-প্রচারক ও কয়েক জনকে পালক ও শিক্ষাগুরু” করে নিযুক্ত করেছেন। (ইফিষীয় ৪:৮, ১১, ১২) তাদের প্রতি আমাদের আচরণ ও কাজ পরিষ্কারভাবে প্রকাশ করে যে আমরা খ্রীষ্টের নেতৃত্ব মেনে নিই নাকি নিই না। খ্রীষ্ট আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে যে-সমস্ত যোগ্য ব্যক্তিদের দিয়েছেন, তাদের প্রতি আমাদের ‘কৃতজ্ঞ হওয়া’ উপযুক্ত। (কলসীয় ৩:১৫) এছাড়া, তারা আমাদের সম্মান পাওয়ার যোগ্য। প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন, “যে প্রাচীনেরা উত্তমরূপে শাসন করেন, . . . তাঁহারা দ্বিগুণ সমাদরের যোগ্য গণিত হউন।” (১ তীমথিয় ৫:১৭) মণ্ডলীতে প্রাচীন ব্যক্তিদের অর্থাৎ প্রাচীন ও অধ্যক্ষদের প্রতি আমরা কীভাবে কৃতজ্ঞতা এবং সম্মান দেখাতে পারি? পৌল উত্তর দেন: “তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও।” (ইব্রীয় ১৩:১৭) হ্যাঁ, আমাদেরকে তাদের কথা মানতে হবে এবং বশ্যতাস্বীকার করে তাদের প্রতি বশীভূত থাকতে হবে।
১১. প্রাচীন ব্যবস্থার প্রতি সম্মান দেখানো কেন আমাদের বাপ্তিস্মের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করার অংশ?
১১ আমাদের নেতা হলেন সিদ্ধ। কিন্তু তিনি আমাদের নানা বর হিসেবে যে-মনুষ্যদেরকে দিয়েছেন, তারা সিদ্ধ নন। তাই তারা মাঝে মাঝে ভুল করতে পারেন। কিন্তু, খ্রীষ্টের ব্যবস্থার প্রতি নিষ্ঠাবান থাকা আমাদের জন্য জরুরি। আসলে, আমাদের উৎসর্গীকরণ এবং বাপ্তিস্মের যোগ্যরূপে জীবনযাপন করার মানে হল যে আমরা মণ্ডলীতে আত্মায় অভিষিক্ত কর্তৃত্বের বৈধ্যতাকে স্বীকার করি এবং স্বেচ্ছায় এর বশীভূত হই। সকলের সামনে “পবিত্র আত্মার নামে” বাপ্তিস্ম নেওয়ার অর্থ হল, আমরা পবিত্র আত্মাকে এবং যিহোবার উদ্দেশ্য পূরণে এটা যে-ভূমিকা পালন করে তা স্বীকার করি। (মথি ২৮:১৯) এইধরনের বাপ্তিস্ম দেখায় যে আমরা পবিত্র আত্মার সঙ্গে সহযোগিতা করি এবং এমন কিছু করা এড়িয়ে চলি, যাতে খ্রীষ্টের অনুসারীদের মধ্যে এটা কাজ করা বন্ধ করে না দেয়। প্রাচীনদের সুপারিশ এবং নিযুক্ত করতে পবিত্র আত্মা যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, তাই আমরা যদি মণ্ডলীতে প্রাচীন ব্যবস্থার সঙ্গে সহযোগিতা করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আসলেই কি আমরা আমাদের উৎসর্গীকরণের প্রতি বিশ্বস্ত থাকতে পারি?
১২. কর্তৃত্বের প্রতি অসম্মানের বিষয়ে যিহূদা কোন্ উদাহরণগুলো তুলে ধরেছেন এবং সেগুলো আমাদেরকে কী শেখায়?
১২ শাস্ত্রে এমন অনেক উদাহরণ রয়েছে, যা আমাদেরকে বাধ্য ও বশীভূত হওয়ার গুরুত্ব সম্বন্ধে শিক্ষা দেয়। মণ্ডলীর নিযুক্ত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে যারা আজেবাজে কথা বলে তাদের সম্বন্ধে বলতে গিয়ে শিষ্য যিহূদা সর্তক করার মতো তিনটে উদাহরণ তুলে ধরেছিলেন: “ধিক্ তাহাদিগকে! কারণ তাহারা কয়িনের পথে চলিয়া গিয়াছে, এবং বেতনের লোভে বিলিয়মের ভ্রান্তি-পথে গিয়া পড়িয়াছে, এবং কোরহের প্রতিবাদে বিনষ্ট হইয়াছে।” (যিহূদা ১১) কয়িন যিহোবার প্রেমময় নির্দেশনা অগ্রাহ্য করেছিল এবং স্বেচ্ছায় হত্যার মতো ঘৃণার কাজ করেছিল। (আদিপুস্তক ৪:৪-৮) ঈশ্বরের কাছ থেকে বারবার সাবধানবাণী পাওয়া সত্ত্বেও, বিলিয়ম টাকার লোভে ঈশ্বরের লোকেদেরকে অভিশাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল। (গণনাপুস্তক ২২:৫-২৮, ৩২-৩৪; দ্বিতীয় বিবরণ ২৩:৫) ইস্রায়েলের মধ্যে সম্মানজনক দায়িত্ব থাকা সত্ত্বেও কোরহ তা নিয়ে খুশি ছিল না। সে ঈশ্বরের দাস মোশির বিরোধিতা করেছিল, যিনি ভূমণ্ডলের মধ্যে সবচেয়ে মৃদুশীল ছিলেন। (গণনাপুস্তক ১২:৩; ১৬:১-৩, ৩২, ৩৩) কয়িন, বিলিয়ম এবং কোরহের ওপর বিপর্যয় নেমে এসেছিল। এই উদাহরণগুলো কত চমৎকারভাবে শেখায় যে, যিহোবা যাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন, তাদের পরামর্শ শুনতে এবং তাদেরকে সম্মান দেখাতে হবে!
১৩. যে-ব্যক্তিরা প্রাচীন ব্যবস্থার প্রতি বশীভূত হন, তাদের জন্য ভাববাদী যিশাইয় কোন্ কোন্ আশীর্বাদ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন?
১৩ আমাদের নেতা খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীতে দেখাশোনা করার জন্য যে-মহান ব্যবস্থা করেছেন, তা থেকে কে না উপকার পেতে চায়? ভাববাদী যিশাইয় এই আশীর্বাদ সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “দেখ, এক রাজা ধার্ম্মিকতায় রাজত্ব করিবেন, ও শাসনকর্ত্তৃগণ ন্যায়ে শাসন করিবেন। যেমন বাত্যা হইতে আচ্ছাদন, ও ঝটিকা হইতে অন্তরাল, যেমন শুষ্ক স্থানে জলস্রোত ও শ্রান্তিজনক ভূমিতে কোন প্রকাণ্ড শৈলের ছায়া, এক জন মনুষ্য তদ্রূপ হইবেন।” (যিশাইয় ৩২:১, ২) প্রত্যেক প্রাচীন সেইরকম এক সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার ‘স্থান’ হবেন। এমনকি কর্তৃত্বের প্রতি বশীভূত হওয়া আমাদের কাছে কঠিন বলে মনে হলেও আসুন আমরা প্রার্থনাপূর্বক মণ্ডলীতে ঈশ্বর নিযুক্ত কর্তৃত্বের প্রতি বাধ্য এবং বশীভূত হওয়ার জন্য চেষ্টা করি।
প্রাচীনরা যেভাবে খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত থাকেন
১৪, ১৫. মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব দেন, তারা কীভাবে দেখান যে তারা খ্রীষ্টের নেতৃত্বের প্রতি বশীভূত?
১৪ প্রত্যেক খ্রীষ্টান বিশেষ করে প্রাচীনরা খ্রীষ্টের নেতৃত্ব অনুসরণ করবেন। অধ্যক্ষ বা প্রাচীনদের কিছুটা হলেও মণ্ডলীতে কর্তৃত্ব রয়েছে। কিন্তু ‘সহ বিশ্বাসীদের’ জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করে তারা ‘তাহাদের বিশ্বাসের ওপর প্রভুত্ব’ করেন না। (২ করিন্থীয় ১:২৪) প্রাচীনরা যীশুর কথায় মনোযোগ দেন: “তোমরা জান, পরজাতীয়দের অধিপতিরা তাহাদের উপরে প্রভুত্ব করে, এবং যাহারা মহান্, তাহারা তাহাদের উপরে কর্ত্তৃত্ব করে। তোমাদের মধ্যে সেরূপ হইবে না।” (মথি ২০:২৫-২৭) প্রাচীনরা তাদের দায়িত্ব পালন করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যদের সেবা করার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করেন।
১৫ খ্রীষ্টানদেরকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “তোমাদের সেই নেতাদিগকে স্মরণ কর, এবং তাঁহাদের আচরণের শেষগতি আলোচনা করিতে করিতে তাঁহাদের বিশ্বাসের অনুকারী হও।” (ইব্রীয় ১৩:৭) প্রাচীনরা নেতা বলে যে তাদেরকে অনুকরণ করতে হবে তা নয়। যীশু বলেছিলেন: “তোমাদের আচার্য্য [“নেতা,” NW] এক জন, তিনি খ্রীষ্ট।” (মথি ২৩:১০) প্রাচীনদের বিশ্বাস অনুকরণ করতে হবে কারণ তারা আমাদের প্রকৃত নেতা খ্রীষ্টকে অনুকরণ করেন। (১ করি. ১০:৩৪) কিছু উপায় বিবেচনা করুন, যে-উপায়গুলোতে প্রাচীনরা মণ্ডলীর অন্যদের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে খ্রীষ্টের মতো হওয়ার চেষ্টা করেন।
১৬. কর্তৃত্বের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও, যীশু তাঁর অনুসারীদের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিলেন?
১৬ যীশু সমস্ত দিক দিয়ে অসিদ্ধ মানুষদের থেকে শ্রেষ্ঠ এবং তাঁর পিতার কাছ থেকে অতুলনীয় কর্তৃত্ব পাওয়া সত্ত্বেও, তিনি তাঁর শিষ্যদের সঙ্গে নম্র আচরণ করেছিলেন। তিনি জ্ঞানের মাধ্যমে লোকেদেরকে তাক লাগিয়ে দেননি। যীশু তাঁর অনুসারীদের প্রতি সহানুভূতি ও করুণা এবং তাদের মাংসিক চাহিদাগুলোর প্রতি বিবেচনা দেখাতেন। (মথি ১৫:৩২; ২৬:৪০, ৪১; মার্ক ৬:৩১) তিনি তাঁর শিষ্যদের কাছ থেকে সাধ্যের অতিরিক্ত কিছুই চাইতেন না এবং অতিরিক্ত বোঝা চাপিয়ে দিতেন না। (যোহন ১৬:১২) তিনি “মৃদুশীল ও নম্রচিত্ত” ছিলেন। তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, অনেকে তার কাছে এসে সতেজ হতো।—মথি ১১:২৮-৩০.
১৭. মণ্ডলীর ভাইবোনদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে প্রাচীনদের কীভাবে খ্রীষ্টের মতো নম্রতা দেখানো উচিত?
১৭ নেতা খ্রীষ্ট যদি নম্রতা দেখাতে পারেন, তাহলে মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব দেন তাদের আরও কত বেশি নম্রতা দেখাতে হবে! হ্যাঁ, আস্থা নিয়ে তাদেরকে যে-কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে সেটার অপব্যবহার না করার জন্য তারা সাবধান থাকেন। আর “বাক্যের কি জ্ঞানের উৎকৃষ্টতা অনুসারে” তারা অন্যদেরকে প্রভাবিত করেন না। (১ করিন্থীয় ২:১, ২) বদলে তারা সহজ এবং আন্তরিকভাবে শাস্ত্রীয় সত্যের বাক্য বলার চেষ্টা করেন। এছাড়া, প্রাচীনরা অন্যদের ব্যাপারে যুক্তিবাদী হয়ে তাদের কাছ থেকে খুব বেশি আশা করেন না এবং তাদের চাহিদাগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা দেখান। (ফিলিপীয় ৪:৫) সবার সীমাবদ্ধতা আছে তা জেনে তারা প্রেম দেখিয়ে তাদের ভাইদের সঙ্গে সেইমতো আচরণ করেন। (১ পিতর ৪:৮) নম্র এবং মৃদুশীল প্রাচীনরা কি সত্যিই সতেজ করেন না? সত্যিই তারা তা করেন।
১৮. শিশুদের সঙ্গে যীশুর আচরণ থেকে প্রাচীনরা কী শিখতে পারেন?
১৮ এমনকি ছোটরাও যীশুর কাছে আসত। লোকেরা “কতকগুলি শিশুকে তাঁহার নিকটে আনিল” দেখে শিষ্যরা তাদেরকে যে ভর্ৎসনা করেছিলেন তার উত্তরে যীশু কী বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন। যীশু বলেছিলেন, “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।” পরে “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।” (মার্ক ১০:১৩-১৬) যীশু আন্তরিক ও দয়ালু ছিলেন এবং অন্যেরা তাঁর কাছে আসত। লোকেরা যীশুকে ভয় পেত না। তাঁর উপস্থিতিতে এমনকি ছোটরাও স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করত। প্রাচীনদের কাছেও লোকেরা আসে এবং তারা যখন অন্যদের প্রতি আন্তরিক অনুভূতি এবং দয়া দেখান, তখন এমনকি ছেলেমেয়েরাও তাদের কাছে আসতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
১৯. “খ্রীষ্টের মন” থাকার সঙ্গে কী জড়িত এবং এর জন্য কোন্ চেষ্টার প্রয়োজন?
১৯ প্রাচীনরা যীশুকে কতটা অনুকরণ করতে পারেন, তা নির্ভর করে তারা কতটা ভালভাবে যীশুকে জানেন তার ওপর। পৌল জিজ্ঞেস করেছিলেন: “কে প্রভুর মন জানিয়াছে যে, তাঁহাকে উপদেশ দিতে পারে?” এরপর তিনি আরও বলেছিলেন: “কিন্তু খ্রীষ্টের মন আমাদের আছে।” (১ করিন্থীয় ২:১৬) খ্রীষ্টের মন থাকার মানে হল, তাঁর চিন্তাভাবনা এবং ব্যক্তিত্বের সমস্ত দিক জানা যাতে আমরা জানতে পারি যে, একটা নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে তিনি কী করতেন। আমাদের নেতাকে আরও ভালভাবে জানার কথা কল্পনা করুন! হ্যাঁ, এর জন্য সুসমাচারের বিবরণগুলোতে ভালভাবে মনোযোগ দিতে হবে এবং যীশুর জীবন ও উদাহরণ দিয়ে আমাদের মনকে রোজ ভরিয়ে রাখতে হবে। আর প্রাচীনরা যখন খ্রীষ্টের গুণাবলি এভাবে অনুকরণ করার চেষ্টা করেন, তখন মণ্ডলীর অন্যেরাও তাদের বিশ্বাস অনুকরণ করার জন্য আরও প্রেরণা পায়। আর অন্যেরা যখন নেতার পদচিহ্ন অনুকরণ করে, তখন প্রাচীনরা তা দেখে পরিতৃপ্ত হন।
সবসময় খ্রীষ্টের নেতৃত্বের অধীনে থাকুন
২০, ২১. প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতের দিকে তাকিয়ে আমাদের দৃঢ় সংকল্প কী হওয়া উচিত?
২০ আমাদের সবার খ্রীষ্টের নেতৃত্বের অধীনে থাকা জরুরি। যতই আমরা এই বিধিব্যবস্থার শেষের দিকে যাচ্ছি ততই আমাদের পরিস্থিতি সা.কা.পূ. ১৪৭৩ সালে মোয়াব তলভূমির ইস্রায়েলীয়দের মতো হচ্ছে। তারা প্রতিজ্ঞাত দেশের একেবারে দোরগোড়ায় ছিল এবং ভাববাদী মোশীর মাধ্যমে ঈশ্বর ঘোষণা করেছিলেন: “সদাপ্রভু ইহাদিগকে যে দেশ দিতে ইহাদের পিতৃপুরুষদের কাছে দিব্য করিয়াছেন, সেই দেশে এই লোকদের সহিত তুমি [যিহোশূয়] প্রবেশ করিবে।” (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:৭, ৮) যিহোশূয় ছিলেন নিযুক্ত নেতা। প্রতিজ্ঞাত দেশে ঢোকার জন্য ইস্রায়েলীয়দেরকে যিহোশূয়ের নেতৃত্ব মেনে নিতে হয়েছিল।
২১ বাইবেলে আমাদেরকে বলে: “তোমাদের নেতা এক জন, তিনি খ্রীষ্ট।” একমাত্র খ্রীষ্ট আমাদেরকে প্রতিজ্ঞাত নতুন জগতে নিয়ে যাবেন, যেখানে ধার্মিকতা থাকবে। (২ পিতর ৩:১৩) তাই আসুন জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে তাঁর নেতৃত্বের বশীভূত থাকার জন্য সংকল্পবদ্ধ হই।
[পাদটীকা]
a “তারা” বলতে এখানে সত্যিকারের দূতেদেরকে বোঝায় না। অদৃশ্য আত্মিক প্রাণীদের জানানোর জন্য তথ্য লিপিবদ্ধ করতে যীশু কখনও একজন মানুষকে ব্যবহার করবেন না। তাই “তারা” বলতে মণ্ডলীগুলোর মনুষ্য অধ্যক্ষ বা প্রাচীনদেরকে বোঝায়, যাদেরকে যীশুর বার্তাবাহক হিসেবে দেখা হয়। তাদের সংখ্যা সাত হওয়ার দ্বারা ঈশ্বরের মান অনুযায়ী পরিপূর্ণতাকে বোঝায়।
আপনি কি মনে করতে পারেন
• প্রথম শতাব্দীর মণ্ডলীকে খ্রীষ্ট কীভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন?
• আজকে খ্রীষ্ট কীভাবে তাঁর মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন?
• মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব দেন, তাদের প্রতি কেন আমাদের বশীভূত হওয়া উচিত?
• প্রাচীনরা কীভাবে দেখাতে পারেন যে, খ্রীষ্ট হলেন তাদের নেতা?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
খ্রীষ্ট তাঁর মণ্ডলীকে নেতৃত্ব দেন এবং অধ্যক্ষরা তাঁর ডান হাতে রয়েছেন
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
“তোমরা তোমাদের নেতাদিগের আজ্ঞাগ্রাহী ও বশীভূত হও”
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
যীশু আন্তরিক ছিলেন এবং লোকেরা সহজেই তাঁর কাছে আসতে পারত। খ্রীষ্টান প্রাচীনরাও তাঁর মতো হওয়ার জন্য চেষ্টা করেন