আনন্দ তাদের জন্য সঞ্চিত যারা সত্যের সন্ধান পায়
একজন ফিনিস ব্যক্তি তার চিলেকোঠার ঘরে, যুগের ঐশিক পরিকল্পনা (ইংরাজি) নামক বইটি পায়। সে সঙ্গে সঙ্গে সেটি পড়তে আরম্ভ করে এবং কিছুক্ষণের মধ্যেই সে নিজের কাছে বলতে থাকে, ‘এটাই সত্য; এটাই সত্য।’ চিলেকোঠার থেকে নেমে এসে সে তার স্ত্রীকে বলে, “আমি সত্য ধর্ম পেয়েছি।”
এই ব্যক্তিটি যেভাবে সত্য পায় সেই অভিজ্ঞতাটি অসাধারণ, কিন্তু, অনেক যিহোবার সাক্ষীরা এইধরনের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করতে পারে। প্রত্যেকেই আপনাকে বলবে যে সত্যের সন্ধান পাওয়া কিধরনের আনন্দ আনে। পরবর্তী অভিজ্ঞতাগুলি এটাই আলোকপাত করে।
বাইবেলের সত্য শিক্ষা আনন্দ আনে
মারগারিটা কোনিগার, জার্মানির মিউনিক শহরে ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় বড় হয়ে উঠছিল। বোম পড়া আর ঘর পুড়ে যাওয়া একটা সাধারণ দৃশ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তার ভাই যুদ্ধে মারা যায়। সে যখন ক্যাথলিক গির্জায় যায় সেখানে সে শুনতে পায় যে জার্মান সৈন্যদের এবং নেতা হিটলারের জন্য প্রার্থনা করা হচ্ছে। যুদ্ধের পরে, সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কলেজে তাদের ছাত্র-বিনিময় কার্যসূচীতে যোগদান করার জন্য বৃত্তি পায়। সে লক্ষ্য করে যে লোকেরা সেখানে তার প্রতি বন্ধুত্বভাবাপন্ন, আর তাই সে চিন্তা করতে থাকে যে কোন্ জিনিসটি মানুষকে প্ররোচিত করে যুদ্ধের সময় একে অপরকে অবিশ্বাস ও ঘৃণা করতে, যেখানে তাদের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি হল শান্তিতে বসবাস করা। মিউনিকে ফিরে এসে, তার যিহোবার সাক্ষীদের সাথে যোগাযোগ হয় এবং তাদের সাথে বাইবেল অধ্যয়ন করার মাধ্যমে, সে তার প্রশ্নগুলির উত্তর পায়। সে বলে: “আমাকে বাইবেল থেকে দেখানো হয় যে দুষ্ট আত্মা এর সাথে জড়িত রয়েছে . . . বাইবেল এদেরকে ‘জগৎপতি,’ বলে থাকে এবং বস্তুতপক্ষে, এও বলে যে শয়তান ‘সমস্ত নরলোকের ভ্রান্তি জন্মাচ্ছে।’ . . . জাতিবর্গ ও লোকেদের অনৈশ্বরিক এবং পৈশাচিক কার্যকলাপগুলি বিচার করে দেখলে, এই উত্তরটি কতই না যুক্তিযুক্ত এবং সন্তোষ্টিজনক ছিল!”—ইফিষীয় ৬:১২; প্রকাশিত বাক্য ১২:৯.
মারগারিটা আরও বলে: “পৃথিবীর সমস্যাগুলির সমাধান সম্পর্কে ঈশ্বরের যে ব্যবস্থা সে সম্বন্ধে জ্ঞান আমাকে অনেক আনন্দ দিয়েছে। না, এটা কোন মানুষের চিন্তাধারা অথবা শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমে আসবে না, যা জাগতিক ক্ষেত্রে শিক্ষিত ব্যক্তিরা বলে থাকে। বরঞ্চ, বাইবেল বলে যে নতুন স্বর্গীয় সরকার পৃথিবীর উপর শাসনভার গ্রহণ করবে। . . . যীশু খ্রীষ্ট তাঁর অনুগামীদের প্রার্থনা করতে শিখিয়েছিলেন: ‘তোমার রাজ্য আসুক।’ . . . আমি বুঝতে আরম্ভ করলাম যে এই রাজ্য হল প্রকৃত সরকার এবং কেবলমাত্র এরই মাধ্যমে জগদ্ব্যাপী প্রকৃত শান্তি লাভ করা যাবে।” প্রায় ৩০ বছর ধরে মারগারিটা মিশনারী হিসাবে আফ্রিকার পাঁচটি দেশে কাজ করেছে এবং শেষ ১৯ বছর তার উয়াগাডুগো, বুর্কিনা ফাসো শহরের নম্র লোকেদের কাছে সত্য প্রচার করার কাজে কাটে।
মারগারিটার অভিজ্ঞতাই একমাত্র স্বতন্ত্র নয়। অনেকে এইরকম ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সাড়া দিয়েছে যখন তারা দেখতে পেয়েছে যে খ্রীষ্টজগতের যাজক যুদ্ধে অন্তর্ভুক্ত উভয় দলের জয় কামনা করে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাচ্ছে। সহৃদয় ব্যক্তিরা বাইবেলের এই ব্যাখ্যার যুক্তিটি বুঝতে পারে যে মনুষ্যকৃত যুদ্ধের সঙ্গে ঈশ্বরের কোন সম্পর্ক নেই, কিন্তু এগুলির উৎপত্তি হয় কারণ “সমস্ত জগৎ সেই পাপাত্মার মধ্যে শুইয়া রহিয়াছে।” এই সত্য সন্ধানীরা শেখে যে প্রকৃত খ্রীষ্টানেরা “জগতের নয়” কিন্তু তাদের এবিষয় নিরপেক্ষ থাকতে হবে। যিহোবার সাক্ষীরা এইধরনের মান গ্রহণ করেছে দেখে, এই নব-আগ্রহী ব্যক্তিরা নিশ্চিত হয় যে তারা সত্যের সন্ধান পেয়েছে। তাদের আশা ও আনন্দ বৃদ্ধি পায় যখন তাদের জ্ঞান বাড়তে থাকে বিশেষকরে এই বিষয়ের উপরে যে, ঈশ্বর কেন দুষ্টতার অনুমতি দিয়েছেন এবং কিভাবে তিনি শীঘ্রই তাঁর রাজ্যের মাধ্যমে এই পৃথিবীতে শান্তি ও ধার্মিক পরিস্থিতি নিয়ে আসবেন।—১ যোহন ৫:১৯; যোহন ১৭:১৬; মথি ৬:৯, ১০.
বাইবেলের সত্য মানগুলি আনন্দ আনে
ইকোয়েডারের দানিয়েল রোসেরো ভেবেছিল যে তার জীবন অর্থহীন, তাই সে মদ্যপান করতে আরম্ভ করে। যে গির্জায় সে যোগদান করত সেখানে তাকে শিখানো হয় যে একমাত্র মৃত্যু ও অগ্নিময় নরকের আশাই সে করতে পারে। সে এইভাবে সাড়া দেয়, “আমাকে একদিন পুড়তেই হবে, অতএব আমি মদ্যপান করব!” তার সংসারে আটজন সদস্য ছিল যাদের দেখাশোনা সে করত না এবং সবসময় সে তার স্ত্রী, ডিলিয়ার সাথে ঝগড়া করত। সেই সন্ধিক্ষণ আসে একটি রবিবার সকালে যখন তাদের ঘরে যিহোবার সাক্ষীরা যায় এবং বাইবেল অধ্যয়ন শুরু করে। প্রথমবার দানিয়েল যখন যিহোবার সাক্ষীদের সীমা অধিবেশনে যোগদান করে, সে উপলব্ধি করতে পারে যে সে সত্য পেয়েছে। সে বলে: “সংগঠন আমাকে অভিভূত করে তুলেছিল। একসাথে অনেক লোক মেলামশা করছিল। এই জনতার মধ্যে আপনি প্রেমকে উপলবদ্ধি করতে পারবেন। কেউ ধূমপান করছিল না। কোন কুৎসিত ভাষা সেখানে কেউ ব্যবহার করছিল না। . . . আমার মনে আছে যে আমি ভাবছিলাম যে, ‘এটাই সত্য!’ মৃত্যু অথবা জগতের শেষ সম্বন্ধে যে ভয় তা আমাকে প্ররোচিত করেনি। সংগঠনের যে পরিচ্ছন্নতা তা করেছে।”
রোসেরো পরিবারের সকলে যিহোবার সাক্ষী হয়। তাদের পারিবারিক জীবন ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উন্নতি হয় যতই তারা বাইবেলের মানগুলি প্রয়োগ করতে থাকে। ডিলিয়া রোসেরো বলে: “আমি সমস্ত কিছুর জন্য বাইবেলের যে সত্য তার কাছে ঋণী। কে জানে ঈশ্বরের বাক্য ছাড়া আমার সন্তানেরা কোথায় থাকত? তাদের সাতজনই বাপ্তাইজিত ও দৃঢ়। সত্য আমার জন্য এক সম্পূর্ণ নতুন জীবন, এক নতুন আনন্দের অর্থ রাখে।”
রোসেরো পরিবারের অভিজ্ঞতাটি স্বতন্ত্র নয়। আমাদের দিনে অনেকেই সমস্যায় জর্জরিত। একটি কারণ হল যে বাইবেলের নৈতিক মানকে সাধারণত আর সম্মান করা হয় না, যা আগের বংশের লোকেরা করে থাকত। অধিকাংশ ধর্মই এই প্রথাকে অনুসরণ করতে শুরু করেছে, না হয় প্রশ্রয়ের নাম দিয়ে অথবা তারা মনে করে যে সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পুরনো নৈতিকতাগুলি সেকেলে হয়ে গেছে। অতএব, অন্যদের মতো, রোসেরো পরিবারও বাইবেলের পরিচালনা ছাড়া হাতড়িয়ে বেড়াচ্ছিল। কিন্তু, যখন ওই ধরনের নম্র লোকেরা নৈতিকতা ও পারিবারিক জীবন সম্বন্ধে ঈশ্বরের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে পারে, তারা অনতিবিলম্বে যা শেখে তাই প্রয়োগ করতে থাকে। তাদের অভিজ্ঞতার থেকেই আমরা বুঝতে পারি এগুলি করার উত্তম ফল সম্পর্কে।
আনন্দকে অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে
কিন্তু, এর অর্থ এই নয় যে খ্রীষ্টান হওয়া মানে সবসময় আনন্দ উপভোগ করা। এটা প্রতীয়মান যে, সাধারণ লোকেরা যে ধরনের সমস্যাগুলির সম্মুখীন হয় যেমন বেকারত্ব, অসুস্থতা এবং মৃত্যু, খ্রীষ্টানেরাও এর অন্তর্ভুক্ত। খ্রীষ্টানদেরও নিজেদের অসিদ্ধতা ও দুর্বলতাগুলির সাথে সমানে লড়াই করতে হয়। বাইবেলের বর্ণনা দেখায় যে সদোম নগরে লোট “ধর্ম্মহীনদের স্বৈরাচারে ক্লিষ্ট হইতেন।” বিশ্বস্ত খ্রীষ্টানেরা যখন দুষ্ট পরিস্থিতি দেখে তারাও তখন এইধরনের অনুভূতিকে এড়িয়ে চলতে পারে না।—২ পিতর ২:৭, ৮.
কিন্তু, যারা সত্য পেয়েছে তাদের একটা সুবিধা আছে। উদাহরণস্বরূপ, যখন একজন বিশ্বাসী কোন মৃত ব্যক্তির জন্য শোক প্রকাশ করে তখন তাকে “যাহাদের প্রত্যাশা নাই, সেই অন্য সকল লোকের মত” দুঃখ পেতে হয় না। তার দুঃখ সীমাহীন হবে না। অন্যান্য সমস্যাগুলির ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। যে ব্যক্তি সত্য পেয়েছে সে জানে যে বর্তমান সমস্যাগুলি হল সাময়িক। প্রত্যাশা তাদের সমস্যাগুলির মোকাবিলা করাকে সহজ করে তোলে। ভারসাম্যমূলক জীবনধারাও সাহায্য করে।—১ থিষলনীকীয় ৪:১৩.
পৌল খ্রীষ্টানদের এই উপদেশ দেন: “তোমরা প্রভুতে সর্ব্বদা আনন্দ কর; পুনরায় বলিব, আনন্দ কর।” (ফিলিপীয় ৪:৪) এটা দেখায় যে যদিও আনন্দ আমাদের সকলের নাগালের মধ্যে, কিন্তু এটা না থাকারও সম্ভাবনা রয়েছে। এই পুরনো বিধিব্যবস্থার উদ্বিগ্নতাগুলি এক বাধাস্বরূপ হয়ে দাঁড়াতে পারে। এছাড়াও, বাইবেল আমাদের বলে যে আনন্দকে গড়ে তুলতে হবে যা হল ঈশ্বরের আত্মার একটি ফল। (গালাতীয় ৫:২২) আপনি যদি সর্বদা সত্য সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে থাকেন এবং যে আধ্যাত্মিক ঐশ্বর্য এটি এনেছে ও আনছে তা মনে রাখেন, তাহলে আপনার আনন্দ কখনও হ্রাস পাবে না। এটি আরও দৃঢ় হয়ে উঠবে যতই আমরা সেই দিনের দিকে অগ্রসর হব যখন ঈশ্বর লোকের চোখ থেকে “সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন” এবং যখন “শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও” আর হইবে না।—প্রকাশিত বাক্য ২১:৪.
[Pictures on page 8]
যিহোবার সাক্ষীদের অধিবেশনগুলিতে আনন্দ ও সুসংগঠন দেখে অনেকে অভিভূত হয়েছে