সন্তানদের মানুষ করে তোলার জন্য নির্ভরযোগ্য উপদেশ
“আমার বয়স ছিল তখন ১৯ বছর, আমি পরিবারের সকলের কাছ থেকে দূরে থাকতাম এবং সম্পূর্ণরূপে অপ্রস্তুত ছিলাম,” রূৎ তার প্রথম গর্ভাবস্থা সম্বন্ধে বলেন। নিজে একমাত্র সন্তান হওয়ায় একজন মা হওয়ার বিষয়ে তার যথেষ্ট ধারণা ছিল না। নির্ভরযোগ্য উপদেশের জন্য তিনি কোথায় যেতে পারতেন?
অন্যদিকে, এখন দুজন প্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের বাবা জ্যান স্মরণ করে বলেন: “প্রথম প্রথম আমি অনেক আস্থাবান ছিলাম। কিন্তু, কয়েক দিনের মধ্যেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, আমার ব্যবহারিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে।” বাবামারা যদি প্রথম প্রথম অপ্রস্তুত বোধ করে অথবা পরবর্তী সময়ে সন্তান লালনপালনের পদ্ধতির বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে, তা হলে তাদের সন্তান লালনপালন করার জন্য তারা কোথায় সাহায্য খুঁজে পেতে পারে?
আজকে, অসংখ্য বাবামা ইন্টারনেটে সাহায্য খুঁজে থাকে। কিন্তু, আপনি হয়তো ভাবছেন যে, সেখানে প্রাপ্ত উপদেশ কতটা নির্ভরযোগ্য হতে পারে। সতর্ক হওয়ার উত্তম কারণ রয়েছে। আপনি কি আসলেই জানেন যে, অনলাইনে কে উপদেশ দিচ্ছে? নিজেদের সন্তানদের লালনপালন করতে গিয়ে তারা কতটা সফল হতে পেরেছে? কোনো সন্দেহ নেই যে, আপনার পরিবারকে প্রভাবিত করে এমন বিষয়গুলো সম্পর্কে আসলে আপনি সতর্ক হতে চাইবেন। আগের প্রবন্ধে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, কখনো কখনো এমনকি বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে আসা পরামর্শও হতাশাজনক হয়ে থাকে। তা হলে, আপনি কোথায় যেতে পারেন?
সন্তান মানুষ করে তোলা সম্বন্ধে চূড়ান্ত উৎস হলেন পরিবারের উদ্যোক্তা যিহোবা ঈশ্বর। (ইফিষীয় ৩:১৪, ১৫) তিনিই হলেন একমাত্র প্রকৃত বিশেষজ্ঞ। তাঁর বাক্য বাইবেলে তিনি নির্ভরযোগ্য ও ব্যবহারিক নির্দেশনা জুগিয়েছেন, যা সত্যিই কার্যকারী। (গীতসংহিতা ৩২:৮; যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) কিন্তু তা কাজে লাগাব কি না, তা আমাদের নিজেদের ব্যাপার।
বেশ কয়েক জন দম্পতিকে বলতে বলা হয়েছিল যে, তাদের সন্তানদের ভারসাম্যপূর্ণ ও ঈশ্বরভয়শীল প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে মানুষ করে তোলার সময় তারা কোন বিষয়টা শিখতে পেরেছে। তারা বলেছিল যে, মূলত বাইবেলের নীতিগুলো কাজে লাগানোর ফলে তারা সাফল্য লাভ করেছিল। তারা দেখেছে যে, বাইবেলের উপদেশ এটি যখন প্রথম লেখা হয়েছিল, তখন যেমন ছিল এখনও ততটাই নির্ভরযোগ্য।
তাদের সঙ্গে সময় কাটান
দুই সন্তানের মা ক্যাথরিনকে যখন জিজ্ঞেস করা হয়েছিল যে, কোন উপদেশ তার কাছে সবচেয়ে উপকারী ছিল, তখন তিনি সঙ্গে সঙ্গে দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদের কথা উল্লেখ করেছিলেন। সেই পদ বলে: “তোমরা প্রত্যেকে আপন আপন সন্তানগণকে এ সকল [বাইবেলের নীতিগুলো] যত্নপূর্ব্বক শিক্ষা দিবে, এবং গৃহে বসিবার কিম্বা পথে চলিবার সময়ে এবং শয়ন কিম্বা গাত্রোত্থান কালে ঐ সমস্তের কথোপকথন করিবে।” ক্যাথরিন বুঝতে পেরেছিলেন যে, সেই পরামর্শ কাজে লাগাতে হলে তাকে তার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে।
‘এটা বলা যত সহজ, করা তত সহজ নয়,’ আপনি হয়তো ভাবছেন। পরিবারের ভরণপোষণ জোগানোর জন্য যখন বাবামা উভয়কেই চাকরি করতে হয়, তখন কীভাবে ব্যস্ত বাবামারা তাদের সন্তানদের সঙ্গে অধিক সময় কাটাতে পারে? টরলিফ্, যার ছেলে এখন নিজের সন্তানদের মানুষ করে তুলছে, তিনি বলেন যে, গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টা হল দ্বিতীয় বিবরণে পাওয়া উপদেশ অনুসরণ করা। আপনি যেখানেই যান না কেন, আপনার সন্তানদের সঙ্গে নিন আর তা হলে কথা বলার সুযোগ এমনিই চলে আসবে। “আমি ও আমার ছেলে একসঙ্গে ঘরের কাজকর্ম করতাম,” টরলিফ্ বলেন। “আমরা একটা পরিবার হিসেবে একসঙ্গে ভ্রমণ করতাম। আর আমরা একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতাম।” এর ফলে তিনি বলেন, “আমাদের ছেলে সবসময় এইরকম মনে করত যে, সে স্বচ্ছন্দে তার মনের কথা খুলে বলতে পারে।”
কিন্তু, কী হবে যদি খোলাখুলি ভাববিনিময় করা না হয় এবং আলাপআলোচনা করা কঠিন হয়ে পড়ে? সন্তানরা বড় হয়ে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে কখনো কখনো এমনটা ঘটতে পারে। এই ক্ষেত্রেও, তাদের সঙ্গে অধিক সময় কাটানো সাহায্য করতে পারে। ক্যাথরিনের স্বামী কেন্ স্মরণ করেন যে, তাদের মেয়ে যখন কিশোর বয়সে পা দিয়েছিল, তখন সে অভিযোগ করে বলেছিল যে বাবা তার কথা মন দিয়ে শোনে না। প্রায় সব কিশোর-কিশোরীই এইরকম অভিযোগ করে থাকে। তিনি কী করতে পারেন? কেন্ স্মরণ করে বলেন: “আমি শুধুমাত্র তার সঙ্গে অধিক সময় কাটানোর সিদ্ধান্ত নিই, তার চিন্তাভাবনা, অনুভূতি ও হতাশাগুলো নিয়ে আলোচনা করি। আর তা সত্যিই উপকারী হয়েছিল।” (হিতোপদেশ ২০:৫) কিন্তু কেন্ মনে করেন যে, যেকারণে এই পদ্ধতিটা কাজ করেছিল তা হল, তাদের বাড়িতে ভাববিনিময় করা নতুন কিছু ছিল না। “আমার মেয়ে ও আমার মধ্যে সবসময় এক উত্তম সম্পর্ক ছিল,” তিনি বলেন, “তাই সে মনে করত যে, সে আমার সঙ্গে স্বচ্ছন্দে কথা বলতে পারে।”
আগ্রহের বিষয় হল, সাম্প্রতিক সময়ের একটা গবেষণা রিপোর্ট করে, বাবামাদের চেয়ে সন্তানরা সম্ভবত তিন গুণ বেশি এই কথা বলে থাকে যে, বাবামা ও সন্তানরা একসঙ্গে যথেষ্ট সময় কাটায় না। তা হলে, বাইবেলের উপদেশ অনুসরণ করুন না কেন? আপনার সন্তানদের সঙ্গে যতটা সম্ভব সময় কাটান—বিশ্রামের ও কাজের সময়ে, বাড়িতে ও ভ্রমণের সময়ে, সকালে আপনি যখন বিছানা থেকে ওঠেন তখন এবং রাতে যখন বিছানায় ঘুমাতে যান তার আগে। যদি সম্ভব হয়, তা হলে আপনি যেখানেই যান না কেন, তাদেরকে সঙ্গে করে নিয়ে যান। দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৭ পদ যেমন ইঙ্গিত দেয় যে, আপনার সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানোর কোনো বিকল্প নেই।
তাদেরকে উপযুক্ত মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দিন
দুই সন্তানের বাবা মারিও একইভাবে সুপারিশ করেন: “সন্তানদের অনেক ভালবাসুন এবং তাদের সামনে পড়ুন।” কিন্তু, এটা আপনাদের সন্তানদের কেবল মানসিক ক্ষমতাকে উদ্দীপিত করে তোলার বিষয় নয়। আপনাদের তাদেরকে শেখাতে হবে যে, কীভাবে ভুল থেকে সঠিকটা নির্ণয় করতে হয়। মারিও আরও বলেন: “তাদের সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করুন।”
এই উদ্দেশ্যে বাইবেল বাবামাদের উপদেশ দেয়: “তোমাদের সন্তানদের ক্রুদ্ধ করো না বরং তাদেরকে প্রকৃত খ্রিস্টীয় প্রশিক্ষণ ও উপদেশে কোমলভাবে মানুষ করে তোলো।” (ইফিষীয় ৬:৪, ওয়েমাউথ) আজকে অনেক ঘরেই নৈতিক শিক্ষার ওপর তেমন জোর দেওয়া হয় না। কেউ কেউ মনে করে যে, সন্তানরা যখন বড় হবে, তখন কোন মূল্যবোধগুলো গ্রহণ করতে হবে, সেই সম্বন্ধে তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। এটা কি আপনার কাছে যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়? ঠিক যেমন কচি দেহের বলবান ও স্বাস্থ্যবান হয়ে ওঠার জন্য উপযুক্ত পুষ্টির প্রয়োজন, তেমনই কচি মন ও হৃদয়ের জন্য নির্দেশনার প্রয়োজন। আপনার সন্তানরা যদি বাড়িতে আপনার কাছ থেকে নৈতিক মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে না শেখে, তা হলে তারা হয়তো তাদের সহছাত্র-ছাত্রী এবং শিক্ষক-শিক্ষিকা অথবা গণমাধ্যমের ব্যক্তিদের দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে তুলবে।
কীভাবে সঠিক ও ভুলের মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করতে হয়, সেই সম্বন্ধে সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইবেল বাবামাদের সাহায্য করতে পারে। (২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭) জেফ নামে একজন অভিজ্ঞ খ্রিস্টান প্রাচীন, যিনি দুই সন্তানকে মানুষ করে তুলেছেন, তিনি সন্তানদের উপযুক্ত মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইবেল ব্যবহার করার সুপারিশ করেন। তিনি বলেন: “বাইবেল ব্যবহার করা সন্তানদের বুঝতে সাহায্য করে যে, কোনো একটা বিষয়ে কেবল মা ও বাবা নয় কিন্তু সৃষ্টিকর্তা কেমন বোধ করেন। আমরা যা লক্ষ করেছি, তা হল মন ও হৃদয়ে বাইবেলের অদ্বিতীয় প্রভাব। ভুল আচরণ অথবা চিন্তাভাবনার সঙ্গে মোকাবিলা করতে আমরা উপযুক্ত শাস্ত্রপদ খোঁজার জন্য সময় করে নিতাম। এরপর একান্তে আমরা আমাদের সন্তানদের সেই শাস্ত্রপদ পড়তে দিতাম। প্রায়ই এর ফলে তাদের চোখ জলে ভিজে উঠত অথবা তাদের গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ত। আমরা অবাক হতাম। আমরা যা কিছু বলার বা করার কথা ভাবতে পারতাম, এমন যেকোনো কিছুর চেয়ে বাইবেল আরও বেশি প্রভাব ফেলত।”
ইব্রীয় ৪:১২ পদ ব্যাখ্যা করে: “ঈশ্বরের বাক্য জীবন্ত ও কার্য্যসাধক, . . . এবং হৃদয়ের চিন্তা ও বিবেচনার সূক্ষ্ম বিচারক।” তাই, বাইবেলের বার্তা কেবল সেই মানুষদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গি অথবা অভিজ্ঞতাই নয়, যাদেরকে ঈশ্বর তাঁর লেখক হিসেবে ব্যবহার করেছেন। বরং, এটি নৈতিক বিষয়গুলো সম্বন্ধে ঈশ্বরের চিন্তাভাবনাকে তুলে ধরে। এই বিষয়টাই অন্য সমস্ত উপদেশ থেকে এটিকে পৃথক করে। আপনাদের সন্তানদের শিক্ষা দেওয়ার জন্য বাইবেল ব্যবহার করে আপনারা তাদেরকে বিভিন্ন বিষয় সম্বন্ধে ঈশ্বরের মতো মন রাখতে সাহায্য করছেন। আপনাদের প্রশিক্ষণের অনেক প্রভাব রয়েছে আর আপনাদের সন্তানের হৃদয়ে পৌঁছানোর বড় সুযোগ আপনাদের রয়েছে।
পূর্বে উল্লেখিত ক্যাথরিন এর সঙ্গে একমত। তিনি বলেন: “পরিস্থিতি যত বেশি কঠিন হতো আমরা তত বেশি ঈশ্বরের বাক্যের নির্দেশনা খুঁজতাম আর তা সফল হয়েছিল!” কীভাবে সঠিক ও ভুল নির্ণয় করতে হয়, সেই সম্বন্ধে আপনাদের সন্তানদেরকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য আপনারা কি বেশি করে বাইবেল ব্যবহার করতে পারেন?
যুক্তিবাদী হোন
প্রেরিত পৌল আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ নীতির বিষয়ে উল্লেখ করেন, যা সন্তান মানুষ করে তোলার ক্ষেত্রে সাহায্যকারী। তিনি সহখ্রিস্টানদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমাদের শান্ত ভাব [“যুক্তিবাদিতা,” NW] মনুষ্যমাত্রের বিদিত হউক।” (ফিলিপীয় ৪:৫) নিশ্চিতভাবেই এর অন্তর্ভুক্ত আমাদের সন্তানদেরকে দেখতে দেওয়া যে, আমরা যুক্তিবাদী। আর মনে রাখবেন যে, যুক্তিবাদিতা “যে জ্ঞান উপর হইতে আইসে,” সেটাকে প্রতিফলিত করে।—যাকোব ৩:১৭.
কিন্তু, কীভাবে যুক্তিবাদিতা আমাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সঙ্গে যুক্ত? যদিও আমরা তাদেরকে আমাদের যথাসাধ্য সাহায্য করি কিন্তু আমরা তাদের প্রতিটা কাজকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। উদাহরণস্বরূপ, পূর্বে উল্লেখিত মারিও একজন যিহোবার সাক্ষি আর তিনি স্মরণ করে বলেন: “আমরা সবসময় আমাদের সন্তানদেরকে বাপ্তিস্ম, পূর্ণসময়ের পরিচর্যা এবং অন্যান্য আধ্যাত্মিক লক্ষ্য সম্বন্ধে উৎসাহিত করি। কিন্তু, আমরা এই বিষয়টা স্পষ্ট করে দিয়েছিলাম যে, সময় আসলে তাদেরকেই বেছে নিতে হবে।” ফল কী হয়েছিল? তাদের দুই সন্তানই এখন পূর্ণসময়ের সুসমাচার প্রচারক হিসেবে সেবা করছে।
কলসীয় ৩:২১ পদে বাইবেল বাবাদের সাবধান করে: “পিতারা, তোমরা আপন আপন সন্তানদিগকে ক্রুদ্ধ করিও না, পাছে তাহাদের মনোভঙ্গ হয়।” ক্যাথরিন এই পদকে মূল্যবান বলে মনে করেন। বাবামাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেলে তারা সহজেই রেগে যেতে অথবা অতিরিক্ত দাবি করতে পারে। কিন্তু তিনি বলেন, “আপনি নিজের কাছ থেকে যতটা আশা করেন, আপনার সন্তানের কাছে ততটা আশা করবেন না।” ক্যাথরিনও একজন যিহোবার সাক্ষি আর তিনি আরও বলেন: “যিহোবাকে সেবা করা উপভোগ্য করে তুলুন।”
পূর্বে উল্লেখিত জেফ এই ব্যবহারিক মন্তব্য করেছেন: “আমাদের সন্তানরা যখন বড় হয়ে উঠছিল, তখন আমাদের একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমাদেরকে বলেছিলেন, তিনি দেখতে পেয়েছিলেন যে তাকে প্রায়ই তার বাচ্চাদের অনুরোধের জবাবে না বলতে হয়েছিল। সেটা তাদের হতাশ ও নিরাশ করবে। তারা যেন এইরকমটা বোধ না করে, তাই তিনি আমাদের সুপারিশ করেছিলেন, আমরা যেন সন্তানদের হ্যাঁ বলার জন্য বিভিন্ন উপায় খুঁজি।
“আমরা দেখেছি যে, এটা এক উত্তম উপদেশ,” জেফ বলেন। “এরপর, আমরা সেই সুযোগগুলো খুঁজতে থাকি, যাতে আমাদের অনুমোদন রয়েছে এমন পরিস্থিতিতে আমাদের সন্তানরা অন্যদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয় করতে পারে। তাই, আমরা তাদের কাছে যাই ও বলি: ‘তোমরা কি জানো ওমুক ব্যক্তি এটা বা ওটা করছে? তোমরাও তাতে যোগ দেও না কেন?’ অথবা আমাদের বাচ্চারা যদি তাদেরকে কোথাও নিয়ে যেতে বলে, তা হলে আমরা এমনকি ক্লান্ত থাকলেও সেখানে যাওয়ার জন্য নিজেদের তাগাদা দিতাম। আমরা কেবল না বলা এড়ানোর জন্য তা করতাম।” এটা যুক্তিবাদিতার অতি অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য—পক্ষপাতহীন ও বিবেচক হওয়া এবং বাইবেলের নীতিগুলোর ব্যাপারে আপোশ না করে মেনে নেওয়া।
নির্ভরযোগ্য উপদেশ থেকে উপকার লাভ করুন
এদের মধ্যে বেশির ভাগ দম্পতিই এখন ঠাকু-দাদু বা দাদু-দিদিমা। বাইবেলের এই একই নীতিগুলো তাদের সন্তানদের বাবামা হিসেবে সফল হতে সাহায্য করছে দেখে তারা আনন্দিত। আপনি কি বাইবেলের উপদেশ থেকে উপকার লাভ করতে পারেন?
শুরুতেই উল্লেখিত রূৎ যখন একজন মা হন, তখন তিনি এবং তার স্বামী মাঝেমধ্যে অসহায় বোধ করতেন। কিন্তু, তারা অসহায় ছিল না। তাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেলের উৎকৃষ্ট উপদেশ ছিল। যিহোবার সাক্ষিরা অনেক চমৎকার বাইবেল অধ্যয়ন সহায়ক জুগিয়েছে, যেগুলো বাবামাদের সাহায্য করতে পারে। এর অন্তর্ভুক্ত মহান শিক্ষকের কাছ থেকে শেখো (ইংরেজি), আমার বাইবেলের গল্পের বই, যুবক-যুবতীদের জিজ্ঞাস্য—যে-উত্তরগুলো কাজ করে (ইংরেজি) এবং সর্বমহান পুরুষ যিনি কখনও জীবিত ছিলেন। রূতের স্বামী টরলিফ্ বলেন: “আজকে বাবামার হাতের কাছেই প্রচুর বাইবেলভিত্তিক উপদেশ রয়েছে। তারা যদি শুধুমাত্র এর সদ্ব্যবহার করে, তা হলেই সেগুলো সন্তানকে মানুষে করে তোলার জন্য জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে তাদেরকে সাহায্য করতে পারে।”
[৫ পৃষ্ঠার বাক্স/চিত্র]
বিশেষজ্ঞরা যা বলে . . . আর বাইবেল যা বলে
স্নেহ দেখানোর ব্যাপারে:
শিশু ও সন্তানের মানসিক যত্ন (ইংরেজি) (১৯২৮) বইয়ে ডা. জন ব্রডাস ওয়াটসন বাবামাদের জোরালো পরামর্শ দিয়েছিলেন: আপনাদের সন্তানদের “কখনো জড়িয়ে ধরবেন না এবং চুমু দেবেন না।” “তাদেরকে কখনো আপনাদের কোলের ওপর বসতে দেবেন না।” কিন্তু, অতি সম্প্রতি, ডা. ভিরা লেইন এবং ডরথি মলিনো আমাদের সন্তানরা (ইংরেজি) (মার্চ ১৯৯৯) পত্রিকায় বলেন: “গবেষণা ইঙ্গিত দেয় যে, আদর এবং স্নেহ দেখানো থেকে বঞ্চিত ছোট ছেলেমেয়েদের প্রায়ই সঠিকভাবে বিকাশ ঘটে না।”
এর বৈসাদৃশ্যে, যিশাইয় ৬৬:১২ পদ উল্লেখ করে যে, বাবামাদের ভালবাসা প্রকাশের অভিব্যক্তিগুলোর মতো অভিব্যক্তির মাধ্যমে ঈশ্বর তাঁর লোকেদের প্রতি ভালবাসা দেখাচ্ছেন। একইভাবে, যিশুর শিষ্যরা যখন লোকেদেরকে ছোট ছেলেমেয়েদের যিশুর কাছে নিয়ে আসতে বারণ করছিল, তখন যিশু তাদেরকে এই বলে সংশোধন করেছিলেন: “শিশুদিগকে আমার নিকটে আসিতে দেও, বারণ করিও না।” এরপর “তিনি তাহাদিগকে কোলে করিলেন, ও তাহাদের উপরে হস্তার্পণ করিয়া আশীর্ব্বাদ করিলেন।”—মার্ক ১০:১৪, ১৬.
উপযুক্ত মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়ার ব্যাপারে:
১৯৬৯ সালের নিউ ইয়র্ক টাইমস ম্যাগাজিন এর একটা প্রবন্ধে ডা. ব্রুনো বেটলহাইম একটা শিশুর যে “নিজের মতামত নেওয়ার অধিকার” রয়েছে, সেটার ওপর জোর দিয়েছিলেন, “যা [তার বাবামার] কর্তৃত্বমূলক [প্রচারণার] দ্বারা প্রভাবিত হবে না কিন্তু একমাত্র জীবন সম্বন্ধে তার নিজের সরাসরি অভিজ্ঞতার দ্বারাই হবে।” কিন্তু প্রায় ৩০ বছর পর, সন্তানের নৈতিক বুদ্ধিমত্তা (ইংরেজি) (১৯৯৭) বইয়ের গ্রন্থকার ডা. রবার্ট কোলস্ স্বীকার করেছিলেন: “সন্তানদের জীবনে উদ্দেশ্যবোধ ও নির্দেশনার, সমষ্টিগত মূল্যবোধের খুব বেশি প্রয়োজন,” যা তাদের বাবামা ও অন্যান্য প্রাপ্তবয়স্করা অনুমোদন করে থাকে।
হিতোপদেশ ২২:৬ পদ বাবামাকে জোরালো পরামর্শ দেয়: “বালককে তাহার গন্তব্য পথানুরূপ শিক্ষা দেও, সে প্রাচীন হইলেও তাহা ছাড়িবে না।” যে-ইব্রীয় শব্দকে “শিক্ষা” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটি ‘আরম্ভ করাকেও’ বোঝায় আর এখানে শিশুর প্রথম শিক্ষার বিষয়টা আরম্ভ করার ইঙ্গিত দেয়। এভাবে বাবামাদের তাদের সন্তানদেরকে উপযুক্ত মূল্যবোধগুলো সম্বন্ধে একেবারে ছোটবেলা থেকেই শিক্ষা দিতে শুরু করার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। (২ তীমথিয় ৩:১৪, ১৫) এই বাড়ন্ত বছরগুলোতে তারা যা শেখে, তা সম্ভবত তাদের মধ্যে স্থায়ী হয়।
শাসন করার ব্যাপারে:
ডা. জেমস ডবসন দৃঢ়চেতা শিশু (ইংরেজি) (১৯৭৮) বইয়ে লেখেন: “এক প্রেমময় বাবা অথবা মার হাতে পিট্টি খাওয়া হল শিক্ষাদানের এক হাতিয়ার, যেটার দ্বারা ক্ষতিকর আচরণ দমন করা যায়।” অন্যদিকে, বাচ্চা ও শিশুর যত্ন (ইংরেজি) (১৯৯৮) নামক জনপ্রিয় বইয়ের ৭ম সংস্করণের একটা প্রবন্ধে ডা. বেঞ্জামিন স্পোক বলেছিলেন: “পাছায় পিট্টি দেওয়া সন্তানদের শিক্ষা দেয় যে, বড় ও বলবান ব্যক্তির যা খুশি তা-ই করার ক্ষমতা রয়েছে, তা তিনি সঠিক হোন বা না-ই হোন।”
শাসন সম্বন্ধে বাইবেল বলে: “দণ্ড ও অনুযোগ প্রজ্ঞা দেয়।” (হিতোপদেশ ২৯:১৫) কিন্তু, সব সন্তানকে শারীরিক শাস্তি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না। হিতোপদেশ ১৭:১০ পদ আমাদের বলে: “বুদ্ধিমানের মনে অনুযোগ যত লাগে, হীনবুদ্ধির মনে এক শত প্রহারও তত লাগে না।”
[চিত্র]
হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য বাইবেল ব্যবহার করুন
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
বিজ্ঞ বাবামা তাদের সন্তানদের জন্য বিনোদনের ব্যবস্থা করে