যিহোবা আমাদের আর্তনাদ শোনেন
“ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।”—গীত. ৩৪:১৫.
১, ২. (ক) আজকে অনেকে কেমন বোধ করে? (খ) কেন আমরা এতে অবাক হই না?
আপনি কি দুর্দশা ভোগ করছেন? যদি করে থাকেন, তাহলে আপনিই একা নন। লক্ষ লক্ষ লোক, এই দুষ্ট বিধিব্যবস্থায় জীবনযাপনের দৈনন্দিন চাপের সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য সংগ্রাম করছে। কারো কারো জন্য এটাকে প্রায় অসহনীয় বলে মনে হয়। তারা অনেকটা গীতরচক দায়ূদের মতো বোধ করে, যিনি লিখেছিলেন: “আমি অবসন্ন ও অতিশয় ক্ষুণ্ণ হইয়াছি, চিত্তের ব্যাকুলতায় আর্ত্তনাদ করিতেছি। আমার হৃদয় ধুক্ ধুক্ করিতেছে, আমার বল আমাকে ত্যাগ করিয়াছে, আমার চক্ষুর তেজও আমাকে ছাড়িয়া গিয়াছে।”—গীত. ৩৮:৮, ১০.
২ খ্রিস্টান হিসেবে আমরা জীবনের দুর্দশাগুলোর জন্য অবাক হই না। আমরা বুঝতে পারি যে, ‘যাতনা’ অথবা দুর্দশা হল যিশুর আগমন বা উপস্থিতির ভবিষ্যদ্বাণীমূলক চিহ্নের অংশ। (মার্ক ১৩:৮; মথি ২৪:৩) যে-মূল শব্দটিকে ‘যাতনা’ হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, তা সন্তান প্রসবের সময়ে অনুভূত তীব্র ব্যথাকে নির্দেশ করে। এটা এই “বিষম” অথবা “ভয়ঙ্কর” সময়ে লোকেদের দুঃখকষ্টের তীব্রতা সম্বন্ধে কত সঠিকভাবেই না বর্ণনা করে!—২ তীম. ৩:১, বাংলা ইজি-টু-রিড ভারসন।
যিহোবা আমাদের দুর্দশাগুলো বুঝতে পারেন
৩. কোন বিষয়ে ঈশ্বরের লোকেরা খুব ভালভাবে অবগত আছে?
৩ যিহোবার লোকেরা খুব ভালভাবে অবগত আছে যে, তারা এই দুর্দশাগুলোর প্রভাব থেকে মুক্ত নয় এবং খুব সম্ভবত প্রতিকূল পরিস্থিতিগুলো আরও মন্দতর হবে। সাধারণ মানবজাতি যা ভোগ করে থাকে, সেগুলো ছাড়াও ঈশ্বরের দাস হিসেবে আমরা ‘বিপক্ষ দিয়াবলের’ সম্মুখীন হই, যে আমাদের বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ। (১ পিতর ৫:৮) দায়ূদের মতো এইরকম বোধ করা কতই না সহজ: “তিরস্কারে আমার মনোভঙ্গ হইয়াছে, আমি অবসন্ন হইলাম, আমি সহানুভূতির অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু তাহা নাই; সান্ত্বনাকারীদের অপেক্ষা করিলাম, কিন্তু কাহাকেও পাইলাম না”!—গীত. ৬৯:২০.
৪. আমরা যখন দুর্দশাগুলো ভোগ করি, তখন কী আমাদের সান্ত্বনা দেয়?
৪ দায়ূদ কি এটা বুঝিয়েছিলেন যে, তার আদৌ কোনো আশা ছিল না? না। সেই গীতে আরও বলা তার এই কথাগুলো লক্ষ করুন: “সদাপ্রভু অভাবীদের কথা শোনেন, তাঁর লোকেরা, যারা বন্দীদশায় আছে, তাদের তিনি নীচু চোখে দেখেন না।” (গীত. ৬৯:৩৩, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) ব্যাপক অর্থে, মাঝে মাঝে আমরা হয়তো এমন অনুভব করতে পারি যেন আমরা আমাদের দুর্দশাগুলো দ্বারা বন্দিকৃত বন্দি। এইরকম মনে হতে পারে যে, অন্যেরা আমাদের পরিস্থিতি আসলেই বুঝতে পারে না—এবং তারা হয়তো বোঝেও না। কিন্তু, দায়ূদের মতো এই বিষয়টা জেনে আমরা সান্ত্বনা পেতে পারি যে, যিহোবা আমাদের দুর্দশাগুলো পুরোপুরিভাবে বোঝেন।—গীত. ৩৪:১৫.
৫. কোন বিষয়ে রাজা শলোমনের আস্থা ছিল?
৫ দায়ূদের ছেলে শলোমন, যিরূশালেমে মন্দির উৎসর্গীকরণের সময় এই বিষয়টা তুলে ধরেছিলেন। (পড়ুন, ২ বংশাবলি ৬:২৯-৩১.) তিনি যিহোবার কাছে এমন প্রত্যেক সৎহৃদয়ের ব্যক্তির প্রার্থনা শোনার জন্য মিনতি করেছিলেন, যিনি “আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যথা” নিয়ে তাঁর কাছে আসেন। এই দুর্দশাগ্রস্ত ব্যক্তি বিশেষদের প্রার্থনার প্রতি ঈশ্বর কেমন প্রতিক্রিয়া দেখাবেন? শলোমন এই আস্থা প্রকাশ করেছিলেন যে, ঈশ্বর যে কেবল তাদের প্রার্থনা শুনবেন, তা-ই নয় কিন্তু সেইসঙ্গে তাদের পক্ষে কাজও করবেন। কেন? কারণ ‘মনুষ্য-সন্তানদের অন্তঃকরণে’ কী রয়েছে, তা তিনি সত্যিই জানেন।
৬. কীভাবে আমরা ভাবনাগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে পারি এবং কেন?
৬ একইভাবে, আমরাও “আপন আপন মনঃপীড়া ও মর্ম্মব্যথা,” অর্থাৎ আমাদের আলাদা আলাদা দুর্দশা নিয়ে প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আসতে পারি। এই বিষয়টা জেনে আমাদের সান্ত্বনা লাভ করা উচিত যে, তিনি আমাদের দুর্দশাগুলো বোঝেন এবং আমাদের জন্য চিন্তা করেন। প্রেরিত পিতর এই বিষয়টা নিশ্চিত করেছিলেন, যখন তিনি বলেছিলেন: “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও; কেননা তিনি তোমাদের জন্য চিন্তা করেন।” (১ পিতর ৫:৭) আমাদের প্রতি যা ঘটে, তা নিয়ে যিহোবা সত্যিই চিন্তা করেন। যিহোবার প্রেমময় চিন্তা সম্বন্ধে যিশু এই বলে জোর দিয়েছিলেন: “দুইটী চড়াই পাখী কি এক পয়সায় বিক্রয় হয় না? আর তোমাদের পিতার অনুমতি বিনা তাহাদের একটীও ভূমিতে পড়ে না। কিন্তু তোমাদের মস্তকের কেশগুলিও সমস্ত গণিত আছে। অতএব ভয় করিও না, তোমরা অনেক চড়াই পাখী হইতে শ্রেষ্ঠ।”—মথি ১০:২৯-৩১.
যিহোবার সাহায্যের ওপর নির্ভর করুন
৭. আমাদের জন্য কোন সমর্থনের নিশ্চয়তা রয়েছে?
৭ নিঃসন্দেহে আমরা এই বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারি যে, যিহোবা সেই সময় আমাদের সাহায্য করতে ইচ্ছুক এবং সমর্থ, যখন আমরা সংকট বা দুর্দশাগুলোর দ্বারা জর্জরিত হই। “ঈশ্বর আমাদের পক্ষে আশ্রয় ও বল। তিনি সঙ্কটকালে অতি সুপ্রাপ্য সহায়।” (গীত. ৩৪:১৫-১৮; ৪৬:১) কীভাবে ঈশ্বর সেই সাহায্য জোগান? ১ করিন্থীয় ১০:১৩ পদ কী বলে, তা বিবেচনা করুন: “ঈশ্বর বিশ্বাস্য; তিনি তোমাদের প্রতি তোমাদের শক্তির অতিরিক্ত পরীক্ষা ঘটিতে দিবেন না, বরং পরীক্ষার সঙ্গে সঙ্গে রক্ষার পথও করিয়া দিবেন, যেন তোমরা সহ্য করিতে পার।” যিহোবা হয়তো আমাদের দুর্দশা দূর করার জন্য বিষয়গুলোকে পরিচালিত করতে পারেন অথবা তিনি হয়তো তা সহ্য করার জন্য আমাদেরকে প্রয়োজনীয় শক্তি দিতে পারেন। কোনো না কোনো উপায়ে আমাদের সাহায্য করা হবে।
৮. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সাহায্য থেকে উপকার লাভ করতে পারি?
৮ কীভাবে আমরা সেই সাহায্য থেকে উপকার লাভ করতে পারি? লক্ষ করুন যে, আমাদের কী করার জন্য পরামর্শ দেওয়া হয়েছে: “তোমাদের সমস্ত ভাবনার ভার তাঁহার উপরে ফেলিয়া দেও।” এর অর্থ হল যে, আমরা আমাদের সমস্ত চিন্তার ভার রূপকভাবে যিহোবার ওপর অর্পণ করি। আমরা দুঃশ্চিন্তা না করার চেষ্টা করি এবং আমাদের চাহিদাগুলোর যত্ন নেওয়ার বিষয়ে ধৈর্য ধরে তাঁর ওপর নির্ভর করি। (মথি ৬:২৫-৩২) এই ধরনের নির্ভরতার জন্য আমাদের নিজেদের শক্তি অথবা প্রজ্ঞার ওপর ভরসা নয় বরং নম্রতার প্রয়োজন। “ঈশ্বরের পরাক্রান্ত হস্তের নীচে” নিজেদেরকে নত করার মাধ্যমে আমরা আমাদের নিচু অবস্থানকে স্বীকার করি। (পড়ুন, ১ পিতর ৫:৬.) ফলে, ঈশ্বর যা কিছুই ঘটার অনুমতি দিন না কেন, এটা আমাদের সেগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করতে সাহায্য করে। আমরা হয়তো তাৎক্ষণিক স্বস্তি লাভের জন্য আকুল আকাঙ্ক্ষা করি কিন্তু আমরা এই বিষয়ে নির্ভর করি যে, কখন এবং কীভাবে কাজ করতে হবে, তা যিহোবা একেবারে সঠিকভাবে জানেন।—গীত. ৫৪:৭; যিশা. ৪১:১০.
৯. দায়ূদকে যিহোবার ওপর কোন ধরনের ভার অর্পণ করতে হয়েছিল?
৯ গীতসংহিতা ৫৫:২২ পদে লিপিবদ্ধ দায়ূদের কথাগুলো স্মরণ করুন: “তুমি সদাপ্রভুতে আপনার ভার অর্পণ কর; তিনিই তোমাকে ধরিয়া রাখিবেন, কখনও ধার্ম্মিককে বিচলিত হইতে দিবেন না।” দায়ূদ যখন এই কথাগুলো লিখেছিলেন, তখন তিনি চরম দুর্দশাগ্রস্ত ছিলেন। (গীত. ৫৫:৪) এটা বোঝা যায় যে, এই গীত সেই সময়ে লেখা হয়েছিল, যখন তার ছেলে অবশালোম তার কাছ থেকে রাজপদ চুরি করার জন্য গোপনে ষড়যন্ত্র করেছিলেন। দায়ূদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য পরামর্শদাতা অহীথোফল সেই চক্রান্তে যোগ দিয়েছিলেন। দায়ূদকে তার জীবন রক্ষার জন্য যিরূশালেমে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। (২ শমূ. ১৫:১২-১৪) এমনকি সেই দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলোতেও দায়ূদ ক্রমাগত ঈশ্বরের ওপর নির্ভর করেছিলেন আর তিনি হতাশ হয়ে পড়েননি।
১০. দুর্দশাগুলোর মুখোমুখি হলে আমাদের কী করতে হবে?
১০ এটা গুরুত্বপূর্ণ যে, আমরা হয়তো যে-দুর্দশাগুলোই ভোগ করি না কেন, সেগুলো নিয়ে আমাদেরও দায়ূদের মতো প্রার্থনায় যিহোবার কাছে আসতে হবে। আসুন আমরা বিবেচনা করি যে, প্রেরিত পৌল এই বিষয়ে আমাদের কী করার জন্য জোরালো পরামর্শ দিয়েছেন। (পড়ুন, ফিলিপীয় ৪:৬, ৭.) এই ধরনের আন্তরিক প্রার্থনার ফল কী হবে? “সমস্ত চিন্তার অতীত যে ঈশ্বরের শান্তি তাহা [আমাদের] হৃদয় ও মন খ্রীষ্ট যীশুতে রক্ষা করিবে।”
১১. কীভাবে “ঈশ্বরের শান্তি” আমাদের হৃদয় ও মানসিক ক্ষমতাকে রক্ষা করে?
১১ প্রার্থনা কি আপনার পরিস্থিতির পরিবর্তন করবে? হয়তো করবে। তবে, আমাদের বোঝা উচিত যে, আমরা হয়তো যে-উপায়ে চাই সেই উপায়ে যিহোবা সবসময় আমাদের প্রার্থনার উত্তর দেন না। তা সত্ত্বেও, প্রার্থনা আমাদের মানসিক ভারসাম্য বজায় রাখতে সাহায্য করে, যাতে দুর্দশাগুলো আমাদের জর্জরিত করে না ফেলে। যখন আমরা দুর্দশামূলক আবেগের দ্বারা ভারগ্রস্ত হই, তখন “ঈশ্বরের শান্তি” আমাদের সুস্থির করতে পারে। শত্রুদের আক্রমণ থেকে নগরকে রক্ষা করার জন্য নিযুক্ত এক রক্ষীবাহিনীর মতো, “ঈশ্বরের শান্তি” আমাদের হৃদয় ও মানসিক ক্ষমতাকে রক্ষা করবে। এ ছাড়া, এটা আমাদের সন্দেহ, ভয় ও নেতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলো কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে এবং কর্কশভাবে ও নির্বোধের মতো প্রতিক্রিয়া দেখানো থেকে বিরত রাখবে।—গীত. ১৪৫:১৮.
১২. একজন ব্যক্তি যেভাবে মনের শান্তি পেতে পারেন, তা উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
১২ দুর্দশাগুলো ভোগ করার সময়ে কীভাবে আমরা মনের শান্তি লাভ করতে পারি? একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন, যা কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমাদের পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মিলে যায়। একজন কর্মচারী হয়তো একজন রূঢ় ম্যানেজারের অধীনে কাজ করতে পারেন। কিন্তু, কোম্পানির মালিক যিনি একজন সদয় ও যুক্তিবাদী ব্যক্তি, তার কাছে সেই কর্মচারীর অনুভূতি প্রকাশ করার সুযোগ রয়েছে। মালিক সেই কর্মচারীকে নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি তার পরিস্থিতি বুঝতে পারছেন এবং তাকে জানান যে, সেই ম্যানেজারকে শীঘ্রই তার পদ থেকে বহিষ্কৃত করা হবে। এর ফলে সেই কর্মচারী কেমন বোধ করবেন? সেই নিশ্চয়তার ওপর বিশ্বাস রাখা এবং কী ঘটতে যাচ্ছে তা জানা তাকে তার কাজ চালিয়ে যেতে শক্তি দেবে, এমনকি যদিও এই সময়ের মধ্যে তাকে আরও কিছু সমস্যা ভোগ করতে হয়। একইভাবে আমরা জানি যে, যিহোবা আমাদের পরিস্থিতি বোঝেন আর তিনি আমাদের আশ্বাস দেন যে, শীঘ্রই “এ জগতের অধিপতি বাহিরে নিক্ষিপ্ত হইবে।” (যোহন ১২:৩১) এটা কতই না সান্ত্বনাদায়ক!
১৩. প্রার্থনা করা ছাড়াও আমাদের আর কী করতে হবে?
১৩ তাহলে, আমাদের সমস্যাগুলোর কথা কেবল যিহোবাকে প্রার্থনায় জানানোই কি যথেষ্ট? না। এর জন্য আরও কিছুর প্রয়োজন। আমাদের প্রার্থনার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করতে হবে। রাজা শৌল যখন দায়ূদকে হত্যা করার জন্য তার ঘরে লোক পাঠিয়েছিলেন, তখন দায়ূদ প্রার্থনা করেছিলেন: “হে আমার ঈশ্বর, আমার শত্রুগণ হইতে আমাকে উদ্ধার কর, আমার বিপক্ষগণ হইতে আমাকে উচ্চে স্থাপন কর। অধর্ম্মাচারীদের হইতে আমাকে উদ্ধার কর, রক্তপাতী মনুষ্যদের হইতে আমাকে রক্ষা কর।” (গীত. ৫৯:১, ২) প্রার্থনা করা ছাড়াও, দায়ূদ তার স্ত্রীর কথা শুনেছিলেন এবং পালানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। (১ শমূ. ১৯:১১, ১২) একইভাবে, আমরাও আমাদের দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতে ও সেগুলো উন্নত করার জন্য সাহায্য করতে ব্যবহারিক জ্ঞান বা প্রজ্ঞার জন্য প্রার্থনা করতে পারি।—যাকোব ১:৫.
যেভাবে আমরা ধৈর্য ধরার শক্তি পেতে পারি
১৪. আমরা যখন দুর্দশার মুখোমুখি হই, তখন কী আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করতে পারে?
১৪ আমাদের দুর্দশাগুলোকে হয়তো তাৎক্ষণিকভাবে দূর করা হয় না। সেগুলো হয়তো এমনকি কিছু সময় ধরে চলতে পারে। যদি তা-ই হয়, তাহলে কী আমাদের ধৈর্য ধরতে সাহায্য করবে? প্রথমত, মনে রাখবেন যে, বিভিন্ন সমস্যা সত্ত্বেও আমরা যখন বিশ্বস্তভাবে যিহোবার সেবা করি চলি, তখন আমরা তাঁর প্রতি আমাদের প্রেমের প্রমাণ দিই। (প্রেরিত ১৪:২২) ইয়োব সম্বন্ধে শয়তানের অভিযোগের কথা মনে রাখুন: “ইয়োব কি এমনি এমনি আপনাকে ভক্তিপূর্ণ ভয় করে? আপনি কি তার চারপাশে এবং তার বাড়ী ও তার যা কিছু আছে তার চারপাশে ঘেরা দিয়ে রাখেননি? আপনি তো তার কাজে আশীর্বাদ করেছেন, সেইজন্য তার পশুপালে দেশ ছেয়ে গেছে। কিন্তু আপনি হাত বাড়িয়ে তার সব কিছুকে আঘাত করুন, সেই নিশ্চয়ই আপনার সামনেই আপনার বিরুদ্ধে অপমানের কথা বলবে।” (ইয়োব ১:৯-১১, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারসন) তার নীতিনিষ্ঠার মাধ্যমে ইয়োব প্রমাণ দিয়েছিলেন যে, সেই অভিযোগ পুরোপুরি মিথ্যা। দুর্দশামূলক পরিস্থিতিগুলোর মধ্যে ধৈর্য ধরার মাধ্যমে আমাদেরও শয়তানকে মিথ্যাবাদী বলে প্রমাণ করার সুযোগ রয়েছে। এর ফলে, আমাদের ধৈর্য আমাদের আশা ও আস্থাকে শক্তিশালী করে।—যাকোব ১:৪.
১৫. কোন উদাহরণগুলো আমাদের শক্তিশালী করতে পারে?
১৫ দ্বিতীয়ত, মনে রাখবেন যে, “জগতে অবস্থিত [আপনাদের] ভ্রাতৃবর্গেও সেই প্রকার নানা দুঃখভোগ সম্পন্ন হইতেছে।” (১ পিতর ৫:৯) হ্যাঁ, “মনুষ্য যাহা সহ্য করিতে পারে, তাহা ছাড়া অন্য পরীক্ষা তোমাদের প্রতি ঘটে নাই।” (১ করি. ১০:১৩) এভাবে আপনি নিজের সমস্যাগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করার পরিবর্তে, অন্যদের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করার মাধ্যমে শক্তি ও সাহস লাভ করতে পারেন। (১ থিষল. ১:৫-৭; ইব্রীয় ১২:১) বেদনাদায়ক দুর্দশাগুলো ভোগ করা সত্ত্বেও, যারা বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরেছে বলে আপনি জানেন, তাদের উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করার জন্য সময় করে নিন। আপনি কি জীবন সম্বন্ধে এমন অভিজ্ঞতাগুলো খুঁজেছেন, যেগুলো প্রকাশ করা হয়েছে এবং সেই ব্যক্তিদের বিবরণ দেখার চেষ্টা করেছেন, যারা আপনার মতো একই পরিস্থিতি ভোগ করেছে? আপনি হয়তো সেগুলোকে অনেক শক্তিশালী হিসেবে দেখতে পাবেন।
১৬. আমরা যখন বিভিন্ন পরীক্ষার মুখোমুখি হই, তখন কীভাবে ঈশ্বর আমাদের শক্তিশালী করেন?
১৬ তৃতীয়ত, মনে রাখবেন যে, যিহোবা হলেন, “করুণা-সমষ্টির পিতা এবং সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বর; তিনি আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে আমাদিগকে সান্ত্বনা করেন, যেন আমরা নিজে ঈশ্বর-দত্ত যে সান্ত্বনায় সান্ত্বনাপ্রাপ্ত হই, সেই সান্ত্বনা দ্বারা সমস্ত ক্লেশের পাত্রদিগকে সান্ত্বনা করিতে পারি।” (২ করি. ১:৩, ৪) এটা এমন যেন আমাদেরকে উৎসাহিত ও শক্তিশালী করার জন্য ঈশ্বর আমাদের পাশে রয়েছেন আর তা শুধু আমাদের বর্তমান ক্লেশের মধ্যেই নয় কিন্তু “আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে।” আর এটা “আমাদের সমস্ত ক্লেশের মধ্যে” অন্যদের সান্ত্বনা দিতে সমর্থ করে। পৌল ব্যক্তিগতভাবে এই কথাগুলোর সত্যতা সম্বন্ধে অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন।—২ করি. ৪:৮, ৯; ১১:২৩-২৭.
১৭. কীভাবে বাইবেল জীবনের দুর্দশাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সাহায্য করতে পারে?
১৭ চতুর্থত, আমাদের কাছে ঈশ্বরের বাক্য বাইবেল রয়েছে, যেটি “শিক্ষার, অনুযোগের, সংশোধনের, ধার্ম্মিকতা সম্বন্ধীয় শাসনের নিমিত্ত উপকারী, যেন ঈশ্বরের লোক [“পূর্ণরূপে,” NW] পরিপক্ব, সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য [“সম্পূর্ণরূপে,” NW] সুসজ্জীভূত হয়।” (২ তীম. ৩:১৬, ১৭) ঈশ্বরের বাক্য কেবল আমাদের “পরিপক্ব” এবং “সমস্ত সৎকর্ম্মের জন্য সুসজ্জীভূত” করে না। এটা আমাদের জীবনের দুর্দশাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করতেও সমর্থ করে। এটা আমাদের “পূর্ণরূপে পরিপক্ব” এবং “সম্পূর্ণরূপে সুসজ্জীভূত” করে। যে-মূল শব্দটিকে “সম্পূর্ণরূপে সুসজ্জীভূত” হিসেবে অনুবাদ করা হয়েছে, সেটার আক্ষরিক অর্থ হল, “প্রস্তুত করা হয়েছে।” এই শব্দটিকে হয়তো প্রাচীনকালে একটা নৌকার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত, যেটাকে কোনো যাত্রার জন্য প্রয়োজনীয় সমস্তকিছু দিয়ে প্রস্তুত করা হয়েছে অথবা এমন কোনো মেশিনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেত, যেটা এর কাছ থেকে প্রত্যাশা করা হয় এমন যেকোনো কিছু সম্পাদন করতে সমর্থ ছিল। একইভাবে, যিহোবা তাঁর বাক্যের মাধ্যমে আমাদের জন্য সেইসমস্ত কিছু জোগান, যা আমরা যা কিছুই ভোগ করি না কেন, সেগুলো মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজন। সেই অনুসারে আমরা বলতে পারি, “ঈশ্বর যদি তা ঘটতে দেন, তাহলে আমি তাঁর সাহায্যে সেটা সফলভাবে সহ্য করতে পারব।”
আমাদের সমস্ত দুর্দশা থেকে উদ্ধার
১৮. কীসের ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করা আমাদেরকে বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরার জন্য আরও সাহায্য করবে?
১৮ পঞ্চমত, সবসময় এই অপূর্ব বিষয়টাতে মনোযোগ কেন্দ্রীভূত রাখবেন যে, শীঘ্রই যিহোবা মানবজাতিকে সমস্ত দুর্দশা থেকে মুক্ত করবেন। (গীত. ৩৪:১৯; ৩৭:৯-১১; ২ পিতর ২:৯) সবশেষে, ঈশ্বরের দ্বারা আমাদের উদ্ধারের অর্থ কেবল বর্তমান দুর্দশাগুলো থেকেই উদ্ধার নয় কিন্তু সেইসঙ্গে অনন্তজীবনের সুযোগও লাভ করা আর হোক তা স্বর্গে যিশুর সঙ্গে অথবা এক পরমদেশ পৃথিবীতে।
১৯. কীভাবে বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরা সম্ভব?
১৯ সেই সময় পর্যন্ত আমাদেরকে ক্রমাগত এই দুষ্ট জগতের দুর্দশামূলক অবস্থাগুলোর সঙ্গে মোকাবিলা করে যেতে হবে। সেই সময়ের জন্য আমরা কতই না আকাঙ্ক্ষা করে আছি, যখন এগুলো আর থাকবে না! (গীত. ৫৫:৬-৮) আসুন আমরা মনে রাখি যে, আমাদের বিশ্বস্তভাবে ধৈর্য ধরা দিয়াবলকে এক মিথ্যাবাদীতে পরিণত করে। আমরা যেন আমাদের প্রার্থনা এবং আমাদের খ্রিস্টীয় ভ্রাতৃসমাজের কাছ থেকে শক্তি লাভ করি, এই কথা মনে রাখি যে, আমাদের ভাইয়েরাও আমাদের মতো একই পরীক্ষাগুলো ভোগ করছে। ঈশ্বরের বাক্যকে কার্যকারীভাবে ব্যবহার করার মাধ্যমে যেন ক্রমাগত পূর্ণরূপে পরিপক্ব ও সম্পূর্ণরূপে সুসজ্জিত থাকি। ‘সমস্ত সান্ত্বনার ঈশ্বরের’ দ্বারা জোগানো প্রেমময় যত্নের ওপর নির্ভর করাকে কখনো বিচলিত হতে দেবেন না। মনে রাখবেন যে, “ধার্ম্মিকগণের প্রতি সদাপ্রভুর দৃষ্টি আছে, তাহাদের আর্ত্তনাদের প্রতি তাঁহার কর্ণ আছে।”—গীত. ৩৪:১৫.
আপনি কি উত্তর দিতে পারেন?
• দায়ূদ যে-দুর্দশাগুলোর মুখোমুখি হয়েছিলেন, সেই সম্বন্ধে তিনি কেমন অনুভব করেছিলেন?
• রাজা শলোমন কোন আস্থা প্রকাশ করেছিলেন?
• যিহোবা যা ঘটতে দেন, সেগুলোর সঙ্গে সফলভাবে মোকাবিলা করার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
শলোমনের এই বিষয়ে আস্থা ছিল যে, যিহোবা তাঁর দুর্দশাগ্রস্ত লোকেদের পক্ষে পদক্ষেপ নেবেন
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
দায়ূদ প্রার্থনায় যিহোবার ওপর তার ভার অর্পণ করেছিলেন এবং এরপর তার প্রার্থনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন