অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৩৬
আমরা আরমাগিদোনের অপেক্ষায় আছি!
“উহারা, ইব্রীয় ভাষায় যাহাকে হর্মাগিদোন বলে, সেই স্থানে তাহাদিগকে একত্র করিল।”—প্রকা. ১৬:১৬.
গান সংখ্যা ৪৯ যিহোবা মোদের আশ্রয়
সারাংশa
১-২. (ক) কেন আরমাগিদোন সম্বন্ধে জেনে আমরা আনন্দিত হই? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কোন প্রশ্নগুলো নিয়ে বিবেচনা করব?
কেউ কেউ বিশ্বাস করে, কোনো পারমাণবিক যুদ্ধ অথবা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এই পৃথিবীকে ধ্বংস করে দেবে। কিন্তু, বাইবেল এই শিক্ষা দেয় না। এর পরিবর্তে বাইবেল শিক্ষা দেয়, শীঘ্রই এমন একটা যুদ্ধ হবে, যেটার ফলাফল খুবই ভালো হবে। এই যুদ্ধকে আরমাগিদোন বলা হয় এবং বাইবেল এই যুদ্ধ সম্বন্ধে যা বলে, সেটা জেনে আমাদের আনন্দিত হওয়া উচিত। (প্রকা. ১:৩) আরমাগিদোনের যুদ্ধ মানবজাতিকে ধ্বংস করবে না বরং রক্ষা করবে! কীভাবে?
২ বাইবেল দেখায়, আরমাগিদোনের যুদ্ধ মানবশাসনের শেষ নিয়ে আসার মাধ্যমে মানবজাতিকে রক্ষা করবে। এই যুদ্ধ দুষ্ট লোকেদের ধ্বংস করার এবং ধার্মিকদের রক্ষা করার মাধ্যমে মানবজাতিকে রক্ষা করবে। আর এটা আমাদের গ্রহকে ধ্বংসের হাত থেকে সুরক্ষিত রাখার মাধ্যমে মানবজাতিকে রক্ষা করবে। (প্রকা. ১১:১৮) এই সত্যগুলোকে আরও ভালোভাবে বোঝার জন্য আসুন, আমরা চারটে প্রশ্ন নিয়ে বিবেচনা করি: আরমাগিদোন কী? আরমাগিদোনের ঠিক আগে কোন ঘটনাগুলো ঘটবে? কীভাবে আমরা সেই ব্যক্তিদের মধ্যে থাকতে পারি, যারা আরমাগিদোনের যুদ্ধ থেকে রক্ষা পাবে? আরমাগিদোন এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে আমরা বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি?
আরমাগিদোন কী?
৩. (ক) “হর্মাগিদোন” শব্দের অর্থ কী? (খ) প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬ পদের উপর ভিত্তি করে কেন আমরা বলতে পারি যে, আরমাগিদোন কোনো আক্ষরিক স্থান নয়?
৩ প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬ পদ পড়ুন। “হর্মাগিদোন” বা আরমাগিদোন শব্দটা শাস্ত্রে কেবল এক বারই এসেছে আর এটা একটা ইব্রীয় অভিব্যক্তি থেকে এসেছে, যেটার অর্থ হল “মগিদ্দো পর্বত।” মগিদ্দো হল প্রাচীন ইস্রায়েলের একটা নগরের নাম। (যিহো. ১৭:১১) কিন্তু, আরমাগিদোন পৃথিবীর কোনো আক্ষরিক স্থানকে নির্দেশ করে না। সত্যি বলতে কী, এটা এমন এক পরিস্থিতিকে নির্দেশ করে, যেখানে ‘জগৎ সমুদয়ের রাজারা’ যিহোবার বিরোধিতা করার জন্য একত্রিত হয়। (প্রকা. ১৬:১৪) তবে, এই প্রবন্ধে আমরা “হর্মাগিদোন” শব্দটা যুদ্ধকে নির্দেশ করার জন্যও ব্যবহার করব, যেটা পৃথিবীর রাজাদের একত্রিত হওয়ার ঠিক পরেই ঘটবে। কীভাবে আমরা জানি যে, আরমাগিদোন একটা প্রতীকী স্থানকে নির্দেশ করে? প্রথমত, মগিদ্দো নামে কোনো আক্ষরিক পর্বত নেই। দ্বিতীয়ত, মগিদ্দো এলাকাটা ‘জগৎ সমুদয়ের রাজা,’ তাদের সৈন্য এবং যুদ্ধের অস্ত্রশস্ত্র ধরার মতো যথেষ্ট বড়ো নয়। তৃতীয়ত, এই প্রবন্ধে পরে আমরা যেমন দেখব, আরমাগিদোনের যুদ্ধ সেইসময়ে শুরু হবে, যখন জগতের ‘রাজারা’ ঈশ্বরের লোকেদের উপর আক্রমণ করবে, যারা সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে রয়েছে।
৪. কেন যিহোবা তাঁর শেষ মহাযুদ্ধের নাম মগিদ্দোর নাম অনুযায়ী দিয়েছিলেন?
৪ কেন যিহোবা তাঁর শেষ মহাযুদ্ধের নাম মগিদ্দোর নাম অনুযায়ী দিয়েছিলেন? বাইবেলের সময়ে, মগিদ্দো ও পার্শ্ববর্তী যিষ্রিয়েল উপত্যকায় অনেক যুদ্ধ হয়েছিল। কখনো কখনো সেই যুদ্ধগুলোতে যিহোবা সরাসরি হস্তক্ষেপ করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, ‘মগিদ্দোর জলতীরস্থে’ সীষরা নামে এক সেনাপতির নেতৃত্বে থাকা কনানীয় সৈন্যদের পরাজিত করার জন্য ঈশ্বর ইস্রায়েলীয় বিচারক বারককে সাহায্য করেছিলেন। তাদের এই চমৎকার বিজয় লাভের জন্য বারক ও ভাববাদিনী দবোরা যিহোবাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। তারা এই গান গেয়েছিলেন: “আকাশমণ্ডল হইতে . . . তারাগণ সীষরার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করিল। কীশোন নদী তাহাদিগকে ভাসাইয়া লইয়া গেল।”—বিচার. ৫:১৯-২১.
৫. বারক যে-যুদ্ধে লড়াই করেছিলেন, সেটার চেয়ে আরমাগিদোনের যুদ্ধ কোন গুরুত্বপূর্ণ দিক দিয়ে আলাদা?
৫ বারক ও দবোরা এই কথাগুলো দিয়ে তাদের গান শেষ করেছিলেন: “হে সদাপ্রভু, তোমার সর্ব্ব শত্রু এইরূপে বিনষ্ট হউক, কিন্তু তোমার প্রেমকারিগণ সপ্রতাপে গমনকারী সূর্য্যের সদৃশ হউক।” (বিচার. ৫:৩১) একইভাবে আরমাগিদোনের সময়ে ঈশ্বরের শত্রুরা ধ্বংস হয়ে যাবে কিন্তু যারা ঈশ্বরকে ভালোবাসে, তারা রক্ষা পাবে। তবে, এই দুটো যুদ্ধের মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। আরমাগিদোনের যুদ্ধে ঈশ্বরের লোকেরা লড়াই করবে না। তাদের কাছে এমনকী যুদ্ধের কোনো অস্ত্রও থাকবে না! তারা ‘সুস্থির থাকিলে’ এবং যিহোবা ও তাঁর স্বর্গীয় সৈন্যের উপর “বিশ্বাস করিলে . . . [তাহাদের] পরাক্রম হইবে।”—যিশা. ৩০:১৫; প্রকা. ১৯:১১-১৫.
৬. কীভাবে যিহোবা আরমাগিদোনের যুদ্ধে তাঁর শত্রুদের পরাজিত করতে পারেন?
৬ কীভাবে ঈশ্বর আরমাগিদোনের যুদ্ধে তাঁর শত্রুদের পরাজিত করবেন? তিনি অনেক উপায়ে তা করতে পারেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি হয়তো ভূমিকম্প, করকা বা শিলাবৃষ্টি ও বজ্রপাত ব্যবহার করতে পারেন। (ইয়োব ৩৮:২২, ২৩; যিহি. ৩৮:১৯-২২) তিনি হয়তো তাঁর শত্রুদের পরস্পরের বিরুদ্ধে লড়াই করাতে পারেন। (২ বংশা. ২০:১৭, ২২, ২৩) আর তিনি হয়তো দুষ্ট লোকদের হত্যা করার জন্য তাঁর স্বর্গদূতদের ব্যবহার করতে পারেন। (যিশা. ৩৭:৩৬) তিনি যে-উপায়ই ব্যবহার করুন না কেন, তিনি বিজয়ী হবেন। তাঁর সমস্ত শত্রু ধ্বংস হয়ে যাবে। আর সমস্ত ধার্মিক ব্যক্তি রক্ষা পাবে।—হিতো. ৩:২৫, ২৬.
আরমাগিদোনের যুদ্ধের ঠিক আগে কোন ঘটনাগুলো ঘটবে?
৭-৮. (ক) প্রথম থিষলনীকীয় ৫:১-৬ পদ অনুযায়ী জগতের নেতারা কোন অদ্ভুত ঘোষণা করবে? (খ) কেন এই ঘোষণা খুবই বিপদজনক এক মিথ্যা হবে?
৭ “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] দিন” আসার আগে “শান্তি ও অভয়” ঘোষণা করা হবে। (পড়ুন, ১ থিষলনীকীয় ৫:১-৬.) ১ থিষলনীকীয় ৫:২ পদে উল্লেখিত “যিহোবার দিন” ‘মহাক্লেশকে’ নির্দেশ করে। (প্রকা. ৭:১৪) কীভাবে আমরা জানতে পারব, কখন সেই ক্লেশ শুরু হতে চলেছে? বাইবেল আমাদের জানায়, খুবই অদ্ভুত এক ঘোষণা করা হবে। আর সেই ঘোষণাই হবে এই চিহ্ন যে, মহাক্লেশ শুরু হতে চলেছে।
৮ ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সেই ঘোষণায় ‘শান্তি ও অভয়ের’ বিষয়ে বলা হবে। কেন জগতের নেতারা তা বলবে? ধর্মীয় নেতারা কি তাদের সঙ্গে যোগ দেবে? সম্ভবত। তবে, সেটা একটা মিথ্যা ঘোষণা হবে কারণ সেটার পিছনে মূলত মন্দদূতদের হাত থাকবে। এই মিথ্যা খুবই বিপদজনক হবে কারণ লোকেরা মানবইতিহাসের সবচেয়ে বড়ো ক্লেশের মুখোমুখি হওয়ার ঠিক আগেই এই ঘোষণা তাদের সুরক্ষার বিষয়ে ভুল ধারণা দেবে। হ্যাঁ, ‘যেমন গর্ব্ভবতীর প্রসববেদনা উপস্থিত হইয়া থাকে, তেমনি’ তাদের উপর ‘আকস্মিক বিনাশ উপস্থিত হইবে।’ যিহোবার অনুগত দাসদের বিষয়ে কী বলা যায়? আকস্মিকভাবে যিহোবার দিন শুরু হওয়ায় তারা হয়তো অবাক হবে কিন্তু তারা সেটার জন্য প্রস্তুত থাকবে।
৯. যিহোবা কি শয়তানের বিধিব্যবস্থাকে একেবারে ধ্বংস করবেন? ব্যাখ্যা করুন।
৯ যিহোবা শয়তানের সমস্ত জগৎকে একেবারে ধ্বংস করবেন না, ঠিক যেমনটা তিনি নোহের দিনে করেছিলেন। এর পরিবর্তে, তিনি এটাকে দুটো পর্যায়ে ধ্বংস করবেন। প্রথম পর্যায়ে তিনি মহতী বাবিলকে অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যকে ধ্বংস করবেন। আর দ্বিতীয় পর্যায়ে তিনি শয়তানের জগতের বাকি অংশকে ধ্বংস করবেন যার অন্তর্ভুক্ত হল রাজনৈতিক, সামরিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থা। এখন আসুন, আমরা এই দুটো গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা সম্বন্ধে আরও ভালোভাবে জানার চেষ্টা করি।
১০. প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ৬ ও ১৮:২৪ পদ অনুযায়ী কেন যিহোবা মহতী বাবিলকে ধ্বংস করবেন?
১০ ‘মহাবেশ্যার বিচারসিদ্ধ দণ্ড।’ (পড়ুন, প্রকাশিত বাক্য ১৭:১, ৬; ১৮:২৪.) মহতী বাবিল ঈশ্বরের নামের উপর অনেক নিন্দা নিয়ে এসেছে। সে ঈশ্বর সম্বন্ধে বিভিন্ন মিথ্যা শিক্ষা দিয়েছে। মানবসরকারগুলোকে সমর্থন করার মাধ্যমে সে এক বেশ্যার মতো যিহোবার প্রতি অবিশ্বস্ত হয়ে গিয়েছে। সে তার ক্ষমতা ও প্রভাবকে কাজে লাগিয়ে তার অনুসারীদের ঠকিয়েছে। আর সে অনেক লোককে হত্যা করেছে, যার মধ্যে ঈশ্বরের দাসেরাও রয়েছে। (প্রকা. ১৯:২) কীভাবে যিহোবা মহতী বাবিলকে ধ্বংস করবেন?
১১. ‘সিন্দূরবর্ণ পশু’ কাকে চিত্রিত করে এবং ঈশ্বর কীভাবে এটাকে মহতী বাবিলের বিরুদ্ধে ব্যবহার করবেন?
১১ যিহোবা “দশ শৃঙ্গ” বিশিষ্ট ‘সিন্দূরবর্ণ পশুকে’ ব্যবহার করে সেই ‘মহাবেশ্যাকে’ ধ্বংস করবেন। সেই রূপক পশু জাতিসংঘ বা রাষ্ট্রসংঘকে (ইউনাইটেড নেশনস্) চিত্রিত করে। দশ শৃঙ্গ এই সংগঠনের সমর্থনকারী বর্তমান রাজনৈতিক শক্তিগুলোকে চিত্রিত করে। ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে সেই শক্তিগুলো মহতী বাবিলকে আক্রমণ করবে। তারা তার বিশাল সম্পদ লুঠ করার এবং সবার সামনে তার দুষ্টতা প্রকাশ করার মাধ্যমে “তাহাকে অনাথা ও নগ্না করিবে।” (প্রকা. ১৭:৩, ১৬) এই ধ্বংস এতটাই দ্রুত হবে যে, মনে হবে যেন কেবল “একই দিনে” এটা ঘটেছে। তাই, মহতী বাবিলের সমর্থনকারীরা হতবাক হয়ে যাবে কারণ সেই মহাবেশ্যা প্রায়ই বড়াই করে বলত: “আমি রাণীর মত সিংহাসনে বসিয়া আছি, বিধবা নহি, কোন মতে শোক দেখিব না।”—প্রকা. ১৮:৭, ৮.
১২. যিহোবা জাতিগুলোকে কী করার অনুমতি দেবেন না এবং কেন?
১২ মিথ্যা ধর্মের ধ্বংসের সময়ে ঈশ্বর জাতিগুলোকে তাঁর লোকেদের ধ্বংস করার অনুমতি দেবেন না। তাঁর লোকেরা গর্বের সঙ্গে তাঁর নাম বহন করে এবং তারা মহতী বাবিল থেকে বের হয়ে আসার বিষয়ে তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হয়েছে। (প্রেরিত ১৫:১৬, ১৭; প্রকা. ১৮:৪) এ ছাড়া, তারা অন্যদেরও সেখান থেকে বের হয়ে আসতে সাহায্য করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করেছে। তাই, যিহোবার দাসেরা “উহার আঘাত সকল . . . প্রাপ্ত” হবে না। তা সত্ত্বেও, তাদের বিশ্বাস পরীক্ষিত হবে।
১৩. (ক) গোগ কে? (খ) যিহিষ্কেল ৩৮:২, ৮ ও ৯ পদ অনুযায়ী কোন বিষয়টা গোগকে আরমাগিদোন নামক প্রতীকী স্থানে নিয়ে আসবে?
১৩ গোগের আক্রমণ। (পড়ুন, যিহিষ্কেল ৩৮:২, ৮, ৯.) যিহোবা যখন সমস্ত মিথ্যা ধর্মকে ধ্বংস করে দেবেন, তখন সারা পৃথিবীতে কেবল একটাই ধর্ম থাকবে। একমাত্র যিহোবার দাসেরা অবশিষ্ট থাকবে। কোনো সন্দেহ নেই, শয়তান এতে ক্রুদ্ধ হয়ে যাবে। সে যিহোবার দাসদের উপর আক্রমণ করার জন্য “অশুচি আত্মা” অর্থাৎ মন্দদূতদের অপপ্রচারকে ব্যবহার করে সমস্ত জাতির জোটকে প্ররোচিত করার মাধ্যমে ক্রোধ প্রকাশ করবে। (প্রকা. ১৬:১৩, ১৪) সমস্ত জাতির সেই জোটকে ‘মাগোগ দেশীয় গোগ’ বলা হয়। সেই জাতিগুলো যখন যিহোবার লোকেদের উপর আক্রমণ করবে, তখন আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হবে।—প্রকা. ১৬:১৬.
১৪. গোগ কী বুঝতে পারবে?
১৪ গোগ তার ‘মাংসময় বাহুর’ অর্থাৎ সামরিক শক্তির উপর আস্থা রাখবে। (২ বংশা. ৩২:৮) আমরা আমাদের ঈশ্বর যিহোবার উপর আস্থা রাখব আর এই পদক্ষেপকে সেই জাতিগুলো বোকামি হিসেবে দেখবে। কেন? কারণ মহতী বাবিল অনেক শক্তিশালী ছিল কিন্তু তার দেবতারা তাকে সেই ‘পশু’ ও সেটার ‘দশ শৃঙ্গের’ হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি! (প্রকা. ১৭:১৬) তাই গোগ মনে করবে যে, সে খুব সহজেই আমাদের ধ্বংস করে দেবে। সে “মেঘের ন্যায় দেশ আচ্ছাদন করিবার” মতো করে যিহোবার লোকেদের উপর আক্রমণ করবে। (যিহি. ৩৮:১৬) কিন্তু, শীঘ্রই গোগ বুঝতে পারবে, সে আটকা পড়ে গিয়েছে। সূফসাগরে ফরৌণের মতোই গোগ বুঝতে পারবে, সে যিহোবার বিরুদ্ধে লড়াই করছে।—যাত্রা. ১৪:১-৪; যিহি. ৩৮:৩, ৪, ১৮, ২১-২৩.
১৫. আরমাগিদোনের যুদ্ধে যিশু কী করবেন?
১৫ খ্রিস্ট ও তাঁর স্বর্গীয় সৈন্য ঈশ্বরের লোকেদের রক্ষা করবেন এবং গোগ ও তার সৈন্যদের সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করবেন। (প্রকা. ১৯:১১, ১৪, ১৫) কিন্তু, যিহোবার প্রধান শত্রু শয়তানের কী হবে, যার অপপ্রচার সেই জাতিগুলোকে আরমাগিদোনের যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করবে? যিশু তাকে ও তার মন্দদূতদের অগাধলোকে ফেলে দেবেন, যেখানে তাদের হাজার বছরের জন্য আটকে রাখা হবে।—প্রকা. ২০:১-৩.
কীভাবে আপনি আরমাগিদোনের যুদ্ধ থেকে রক্ষা পেতে পারেন?
১৬. (ক) কীভাবে আমরা দেখাতে পারি, আমরা ‘ঈশ্বরকে জানি’? (খ) কেন যিহোবাকে জানা আরমাগিদোনের যুদ্ধের সময়ে আশীর্বাদ হিসেবে প্রমাণিত হবে?
১৬ আমরা যতদিন ধরেই সত্যে থাকি না কেন, আরমাগিদোনে রক্ষা পাওয়ার জন্য আমাদের অবশ্যই দেখাতে হবে যে, আমরা ‘ঈশ্বরকে জানি’ এবং “আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ” হই। (২ থিষল. ১:৭-৯) আমরা ঈশ্বরের পছন্দ, অপছন্দ ও মানগুলো জানার মাধ্যমে দেখাই যে, আমরা ‘ঈশ্বরকে জানি।’ এ ছাড়া, আমরা যখন তাঁকে ভালোবাসি, তাঁর বাধ্য হই এবং তাঁকে আমাদের একাগ্র ভক্তি প্রদান করি, তখন আমরা দেখাই যে, আমরা তাঁকে জানি। (১ যোহন ২:৩-৫; ৫:৩) আমরা যখন দেখাই যে, আমরা ঈশ্বরকে জানি, তখন “তাঁহার জানা লোক” হওয়ার সম্মান লাভ করি, যেটা আরমাগিদোনের যুদ্ধে আমাদের জীবন রক্ষা করবে! (১ করি. ৮:৩) কেন? কারণ “তাঁহার জানা লোক” হওয়ার অর্থ হল ঈশ্বরের অনুমোদন লাভ করা।
১৭. “আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ” হওয়ার অর্থ কী?
১৭ “আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের” অন্তর্ভুক্ত হল ঈশ্বরের বাক্যে পাওয়া সেইসমস্ত সত্য, যেগুলো যিশু শিখিয়েছেন। আমরা যখন সেই সুসমাচারকে জীবনে প্রয়োগ করি, তখন আমরা সেটার আজ্ঞাবহ হই বা সেটার প্রতি বাধ্যতা দেখাই। এই বাধ্যতার অন্তর্ভুক্ত হল রাজ্যের বিষয়গুলোকে ক্রমাগত জীবনের প্রথম স্থানে রাখা, ঈশ্বরের ধার্মিক মান অনুযায়ী জীবনযাপন করা এবং ঈশ্বরের রাজ্য সম্বন্ধে ঘোষণা করা। (মথি ৬:৩৩; ২৪:১৪) এ ছাড়া, এর অন্তর্ভুক্ত হল খ্রিস্টের অভিষিক্ত ভাইয়েরা যখন তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে, তখন তাদের সমর্থন করা।—মথি ২৫:৩১-৪০.
১৮. ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসদের সমর্থন জোগানোর জন্য “আরও মেষ” যা-কিছু করেছে, সেগুলোর জন্য অভিষিক্ত দাসেরা কীভাবে তাদের পুরস্কৃত করবে?
১৮ ঈশ্বরের অভিষিক্ত দাসদের সমর্থন জোগানোর জন্য “আরও মেষ” যা-কিছু করেছে, সেগুলোর জন্য অভিষিক্ত দাসেরা শীঘ্রই তাদের পুরস্কৃত করবে। (যোহন ১০:১৬) কীভাবে? আরমাগিদোনের যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তির সবাইকে অমর আত্মিক ব্যক্তি হিসেবে স্বর্গে উত্থিত করা হবে। তারা তখন স্বর্গীয় সৈন্যের অংশ হবে, যেটা গোগকে ধ্বংস করবে এবং মেষতুল্য ব্যক্তিদের এক ‘বিস্তর লোককে’ রক্ষা করবে। (প্রকা. ২:২৬, ২৭; ৭:৯, ১০) যিহোবার অভিষিক্ত দাসেরা যখন পৃথিবীতে ছিল, তখন তাদের সমর্থন করতে পেরেছিল বলে বিস্তর লোক কতই-না আনন্দিত হবে!
শেষ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে আমরা বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি?
১৯-২০. আরমাগিদোনের যুদ্ধ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে আমরা পরীক্ষা ভোগ করা সত্ত্বেও বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি?
১৯ শেষকালের এই কঠিন সময়ে যিহোবার লোকেদের মধ্যে অনেকে পরীক্ষা ভোগ করছে। তারপরও, আমরা আনন্দের সঙ্গে ধৈর্য ধরতে পারি। (যাকোব ১:২-৪) একটা যে-বিষয় আমাদের অনেক সাহায্য করবে, সেটা হল হৃদয় উজাড় করে প্রার্থনায় নিবিষ্ট থাকা। (লূক ২১:৩৬) আর প্রার্থনা করার পাশাপাশি আমরা যেন প্রতিদিন ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করি ও সেইসঙ্গে সেটি নিয়ে ধ্যান করি, যার অন্তর্ভুক্ত হল আমাদের সময় সম্বন্ধে করা চমৎকার ভবিষ্যদ্বাণীগুলো। (গীত. ৭৭:১২) এই কাজগুলো আর সেইসঙ্গে পরিচর্যায় পূর্ণরূপে অংশ নেওয়া আমাদের বিশ্বাস ও আশাকে দৃঢ় রাখবে!
২০ চিন্তা করুন, মহতী বাবিল ধ্বংস হয়ে যাওয়ার এবং আরমাগিদোনের যুদ্ধ শেষ হয়ে যাওয়ার পর আপনি কতই-না রোমাঞ্চিত হবেন! এ ছাড়া কল্পনা করুন, সবাই যখন ঈশ্বরের নামের প্রতি এবং তাঁর শাসন করার অধিকারের প্রতি সম্মান দেখাবে, তখন আপনি কতই-না আনন্দিত হবেন! (যিহি. ৩৮:২৩) হ্যাঁ, এই কারণেই যারা ঈশ্বরকে জানে, তাঁর পুত্রের বাধ্য হয় এবং শেষ পর্যন্ত ধৈর্য ধরে, তারা আরমাগিদোনের অপেক্ষায় আছে।—মথি ২৪:১৩.
গান সংখ্যা ৩২ সুস্থির হও, নিশ্চল হও!
a যিহোবার লোকেরা দীর্ঘদিন ধরে আরমাগিদোনের অপেক্ষায় আছে। এই প্রবন্ধে আমরা আলোচনা করব, আরমাগিদোন কী, আরমাগিদোনের ঠিক আগে কোন ঘটনাগুলো ঘটবে এবং শেষ এগিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে কীভাবে আমরা বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে পারি।
b ছবি সম্বন্ধে: আমাদের চারপাশে বিভিন্ন নাটকীয় ঘটনা ঘটবে। আমরা (১) যতদিন পর্যন্ত সম্ভব, পরিচর্যায় অংশ নেব, (২) আমাদের অধ্যয়নের তালিকা বজায় রাখব এবং (৩) ঈশ্বরের সুরক্ষার উপর ক্রমাগত আস্থা রাখব।
c ছবি সম্বন্ধে: পুলিশরা একটা বাড়িতে জোর করে ঢুকতে যাচ্ছে। সেই বাড়িতে থাকা খ্রিস্টীয় পরিবারের এই আস্থা রয়েছে, চারিদিকে যা-কিছু ঘটছে, সেই বিষয়ে যিশু ও তাঁর দূতেরা অবগত আছেন।