বাইবেল পাঠ থেকে পূর্ণ উপকার লাভ করুন
“আমি ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করি।”—রোমীয় ৭:২২.
এই বিষয়গুলো খুঁজে বের করুন:
“ধ্যান” সহকারে পাঠ করা কীভাবে আপনাকে উপকৃত করবে?
অন্যদের সাহায্য করার জন্য কীভাবে আপনি শাস্ত্রীয় বিষয়গুলোর এক ভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারেন?
মনোযোগের সঙ্গে বাইবেল পাঠ করা আপনাকে কোন সুরক্ষা প্রদান করে?
১-৩. বাইবেল পাঠ করার এবং এটির শিক্ষাগুলো কাজে লাগানোর ফলে কোন উপকারগুলো লাভ করা যায়?
“আমাকে বাইবেল বুঝতে সাহায্য করছেন বলে আমি প্রতিদিন সকালে যিহোবাকে ধন্যবাদ দিই।” একজন বয়স্কা খ্রিস্টান বোন এই উক্তি করেছেন, যিনি ৪০ বারেরও বেশি পুরো বাইবেল পড়ে শেষ করেছেন এবং এখনও পড়ছেন। তার চেয়ে কমবয়সি একজন বোন লিখেছিলেন, বাইবেল পাঠ তাকে এই বিষয়টা দেখতে সাহায্য করেছে যে, যিহোবা হলেন একজন বাস্তব ব্যক্তি। এর ফলে, তিনি তার স্বর্গীয় পিতার আরও নিকটবর্তী হয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, “আমি আগে কখনো এতটা সুখী ছিলাম না!”
২ প্রেরিত পৌল সকলকে ‘[বাক্যের] পারমার্থিক অমিশ্রিত দুগ্ধের লালসা করিবার’ জন্য উৎসাহিত করেছেন। (১ পিতর ২:২) বাইবেল অধ্যয়নের মাধ্যমে যারা সেই আকাঙ্ক্ষা পূরণ করে এবং যারা বাইবেলের শিক্ষাগুলো কাজে লাগায়, তাদের এক শুচি বিবেক ও জীবনের এক উদ্দেশ্য রয়েছে। তারা সেই ব্যক্তিদের সঙ্গে এক স্থায়ী বন্ধুত্ব গড়ে তোলে, যারা সত্য ঈশ্বরকে ভালোবাসে এবং সেবা করে। এই সমস্তকিছুই ‘ঈশ্বরের ব্যবস্থায় আমোদ করিবার’ উপযুক্ত কারণ। (রোমীয় ৭:২২) কিন্তু, এগুলো ছাড়াও আরও উপকার রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু উপকার কী?
৩ যিহোবা ও তাঁর পুত্র সম্বন্ধে আপনি যত বেশি জানবেন, তাঁদের এবং সহমানবদের প্রতি আপনার প্রেম তত বেশি বৃদ্ধি পাবে। সঠিক শাস্ত্রীয় জ্ঞান লাভ করা আপনাকে এই বিষয়টা দেখতে সাহায্য করবে যে, ঈশ্বর শীঘ্র এই মৃতপ্রায় বিধিব্যবস্থা থেকে বাধ্য মানবজাতিকে রক্ষা করবেন। আপনি সুসমাচারের এক ইতিবাচক বার্তা সম্বন্ধে জানেন, যা আপনার পরিচর্যায় লোকেদেরকে আপনি জানাতে পারেন। ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করার মাধ্যমে আপনি যে-বিষয়গুলো শিখেছেন, সেগুলো যখন অন্যদেরকে শেখাবেন, তখন যিহোবা আপনাকে আশীর্বাদ করবেন।
পাঠ করুন এবং গভীরভাবে বিবেচনা করুন
৪. “ধ্যান” সহকারে বাইবেল পাঠ করার অর্থ কী?
৪ যিহোবা চান না যে তাঁর দাসের তাড়াহুড়ো করে তাঁর বাক্য পাঠ করুক। তিনি প্রাচীনকালের যিহোশূয়কে বলেছিলেন: “তোমার মুখ হইতে এই ব্যবস্থাপুস্তক বিচলিত না হউক; . . . তুমি দিবারাত্র তাহা ধ্যান কর।” (যিহো. ১:৮; গীত. ১:২) এই নির্দেশনা অনুযায়ী, আপনাকে কি আদিপুস্তক থেকে প্রকাশিত বাক্য পাঠ করার সময় আক্ষরিকভাবে সমস্ত শব্দ নিচুস্বরে বলতে হবে? না। এর অর্থ হল, আপনার এমন গতিতে পাঠ করা উচিত, যা আপনাকে ধ্যান করার সুযোগ দেবে। আপনি যখন “ধ্যান” সহকারে বাইবেল পাঠ করেন, তখন এটা আপনাকে এমন অংশগুলোর ওপর মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করতে সাহায্য করবে, যেগুলো বিশেষভাবে সেই মুহূর্তে আপনার জন্য কার্যকারী এবং উৎসাহজনক। এই ধরনের বাক্যাংশ, শাস্ত্রপদ অথবা বিবরণগুলো খুঁজে পেলে, সেগুলো ধীরে ধীরে, হতে পারে জিহ্বা এবং ঠোঁট দিয়ে উচ্চারণ করার মাধ্যমে পাঠ করুন। এভাবে, শাস্ত্রীয় কোনো বিষয়বস্তুর গুরুত্ব আপনাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ? কারণ ঈশ্বরের পরামর্শের অর্থ বুঝতে পারা, আপনাকে সেই পরামর্শ কাজে লাগানোর জন্য জোরালো অনুপ্রেরণা জোগায়।
৫-৭. উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন যে, নিচুস্বরে ঈশ্বরের বাক্য পাঠ করা কীভাবে আপনাকে এই বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে, যেমন (ক) নৈতিকভাবে শুচি থাকতে; (খ) অন্যদের সঙ্গে ধৈর্য সহকারে ও সদয়ভাবে আচরণ করতে; (গ) এমনকী কঠিন সময়গুলোতে যিহোবার ওপর নির্ভরতা গড়ে তুলতে।
৫ নিচুস্বরে পাঠ করা সেই সময় কার্যকারী, যখন আপনি বাইবেলের এমন বইগুলো সম্বন্ধে বিবেচনা করেন, যেগুলোর সঙ্গে আপনি ততটা পরিচিত নন। উদাহরণস্বরূপ, তিনটে দৃশ্যপট কল্পনা করুন। প্রথম দৃশ্যপটে একজন অল্পবয়সি খ্রিস্টান ভাই সম্বন্ধে চিন্তা করুন, যে ব্যক্তিগত পাঠের কার্যক্রমের অংশ হিসেবে হোশেয়র ভবিষ্যদ্বাণী পড়তে শুরু করে। ৪ অধ্যায়ের ১১ থেকে ১৩ পদ নিচুস্বরে পাঠ করার পর সে একটু থামে। (পড়ুন, হোশেয় ৪:১১-১৩.) কেন? সেই শাস্ত্রপদগুলো তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে, কারণ স্কুলে সে অনৈতিক চাপগুলোকে প্রতিরোধ করার জন্য লড়াই করছে। সে সেই শাস্ত্রপদগুলো নিয়ে গভীরভাবে বিবেচনা করে এবং চিন্তা করে: ‘লোকেরা এমনকী গোপনে যে-মন্দ বিষয়গুলো করে, সেগুলোও যিহোবা দেখতে পান। আমি তাঁকে অসন্তুষ্ট করতে চাই না।’ সেই ভাই ঈশ্বরের সামনে নৈতিকভাবে শুচি থাকার জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়।
৬ দ্বিতীয় দৃশ্যপটে একজন খ্রিস্টান বোন যোয়েলের ভবিষ্যদ্বাণী পাঠ করতে করতে ২ অধ্যায়ের ১৩ পদে আসেন। (পড়ুন, যোয়েল ২:১৩.) তিনি যখন নিচুস্বরে সেই শাস্ত্রপদ পাঠ করেন, তখন তিনি গভীরভাবে বিবেচনা করেন যে, কীভাবে তার যিহোবাকে অনুকরণ করা উচিত, যিনি “কৃপাময় ও স্নেহশীল ক্রোধে ধীর ও দয়াতে মহান্।” তিনি সেই অপমানজনক এবং উত্তেজনাপূর্ণ বাক্য বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন, যেগুলো তিনি তার স্বামী এবং অন্যদের সঙ্গে কথা বলার সময় মাঝে মাঝে ব্যবহার করেন।
৭ তৃতীয় দৃশ্যপটে একজন খ্রিস্টান বাবার কথা কল্পনা করুন, যিনি তার চাকরি হারিয়েছেন এবং তার স্ত্রী ও সন্তানদের মঙ্গলের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। নহূম ১:৭ পদের এই কথাগুলো তিনি নিচুস্বরে পাঠ করেন, “যাহারা” যিহোবার “শরণ লয়, তিনি তাহাদিগকে জানেন” এবং “সঙ্কটের দিনে” তিনি তাদেরকে ‘দুর্গের’ মতো সুরক্ষা করেন। এই বিষয়টা তাকে সান্ত্বনা প্রদান করে। তিনি যিহোবার প্রেমময় যত্ন অনুভব করতে পারেন এবং অতিরিক্ত উদ্বিগ্ন হওয়া বন্ধ করেন। এরপর তিনি ১৫ পদের কথাগুলো নিচুস্বরে পাঠ করেন। (পড়ুন, নহূম ১:১৫.) আমাদের ভাই দেখেন যে, কঠিন সময়গুলোতে সুসমাচার প্রচার করার মাধ্যমে তিনি দেখিয়েছেন যে, তিনি সত্যিই যিহোবাকে তার দুর্গ হিসেবে মনে করেন। যদিও এই ভাই চাকরি খুঁজছেন কিন্তু তিনি এখন সপ্তাহের মাঝের দিনগুলোতে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় সমর্থন করার জন্যও অনুপ্রাণিত হয়েছেন।
৮. আপনার বাইবেল পাঠের সময় আপনি যে-আধ্যাত্মিক রত্ন খুঁজে পেয়েছেন, তা সংক্ষেপে বলুন।
৮ সবেমাত্র উল্লেখিত উপকারজনক বিষয়গুলো বাইবেলের সেই বইগুলো থেকে নেওয়া হয়েছে, যেগুলোকে কেউ কেউ হয়তো বুঝতে কঠিন বলে মনে করে। জানার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আপনি যখন হোশেয়, যোয়েল এবং নহূম বই পরীক্ষা করেন, তখন আপনি সেগুলো থেকে অন্যান্য শাস্ত্রপদও নিচুস্বরে পাঠ করতে চাইবেন। কল্পনা করুন যে, সেই ভাববাদীদের লেখাগুলোতে আপনার জন্য কত প্রজ্ঞা এবং সান্ত্বনাই না রয়েছে! আর বাইবেলের বাকি অংশ সম্বন্ধে কী বলা যায়? ঈশ্বরের বাক্য এমন এক হিরের খনির মতো, যেখানে প্রচুর পরিমাণে হিরে রয়েছে। সেই খনি ভালোভাবে খনন করুন! হ্যাঁ, ঐশিক নির্দেশনা এবং আশ্বাসের রত্নসমূহ খোঁজার লক্ষ্য নিয়ে পুরো বাইবেল পাঠ করুন।
বোধগম্যতা লাভ করার প্রচেষ্টা করুন
৯. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা সম্বন্ধে আমাদের বোধগম্যতা বৃদ্ধি করতে পারি?
৯ প্রতিদিন বাইবেলের কিছু অংশ পাঠ করা যদিও আপনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু এর পাশাপাশি আপনি বোধগম্যতা এবং অন্তর্দৃষ্টিও লাভ করতে চাইবেন। তাই, পাঠ করার সময় লোকেদের পটভূমি সম্বন্ধে, স্থান সম্বন্ধে এবং ঘটনা সম্বন্ধে গবেষণা করার জন্য যিহোবার সংগঠনের প্রকাশনাদির সদ্ব্যবহার করুন। অথবা বাইবেলের একটা শিক্ষা হয়তো কীভাবে আপনার জীবনকে প্রভাবিত করে, তা যদি আপনি বুঝতে না পারেন, তাহলে আপনি মণ্ডলীর একজন প্রাচীনের কিংবা অন্য কোনো পরিপক্ব খ্রিস্টানের সাহায্য চাইতে পারেন। আমাদের বোধগম্যতাকে বৃদ্ধি করার গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য আসুন আমরা প্রথম শতাব্দীর একজন খ্রিস্টানের উদাহরণ বিবেচনা করি, যিনি ঠিক তা-ই করার প্রচেষ্টা করেছিলেন। তার নাম ছিল আপল্লো।
১০, ১১. (ক) সুসমাচারের একজন পরিচারক হিসেবে উন্নতি করার জন্য আপল্লোকে কীভাবে সাহায্য করা হয়েছিল? (খ) আপল্লোর বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? (“আপনি কি সাম্প্রতিক বোধগম্যতা অনুযায়ী শিক্ষা দিচ্ছেন?” নামক বাক্সটা দেখুন।)
১০ আপল্লো ছিলেন “শাস্ত্রে ক্ষমতাপন্ন” এবং “আত্মাতে উত্তপ্ত” একজন যিহুদি খ্রিস্টান। প্রেরিত বই তার সম্বন্ধে বর্ণনা করে: “তিনি . . . যীশুর বিষয়ে সূক্ষ্মরূপে কথা বলিতেন ও শিক্ষা দিতেন, কিন্তু কেবল যোহনের বাপ্তিস্ম জ্ঞাত ছিলেন।” তিনি বুঝতে পারছিলেন না যে, তিনি বাপ্তিস্ম সম্বন্ধে পুরোনো বোধগম্যতা সম্বন্ধে শিক্ষা দিচ্ছেন। ইফিষে তাকে শিক্ষা দিতে শুনে, প্রিষ্কিল্লা এবং আক্বিল্লা নামে এক খ্রিস্টান দম্পতি “তাঁহাকে . . . ঈশ্বরের পথ আরও সূক্ষ্মরূপে” বুঝিয়ে দিয়েছিল। (প্রেরিত ১৮:২৪-২৬) এই বিষয়টা আপল্লোকে কীভাবে উপকৃত করেছিল?
১১ ইফিষে প্রচার করার পর, আপল্লো আখায়াতে গিয়েছিলেন। “তিনি তথায় উপস্থিত হইয়া, যাহারা অনুগ্রহ দ্বারা বিশ্বাস করিয়াছিল, তাহাদের বিস্তর উপকার করিলেন। কারণ যীশুই যে খ্রীষ্ট, ইহা শাস্ত্রীয় বচন দ্বারা প্রমাণ করিয়া তিনি ক্ষমতার সহিত লোকসাধারণের সাক্ষাতে যিহূদিগণকে একেবারে নিরুত্তর করিলেন।” (প্রেরিত ১৮:২৭, ২৮) সেই সময় থেকে আপল্লো খ্রিস্টীয় বাপ্তিস্মের অর্থ সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করতে পেরেছিলেন। বোধগম্যতার ক্ষেত্রে বৃদ্ধি লাভ করায় তিনি নতুন ব্যক্তিদের সত্য উপাসনায় উন্নতি করার জন্য ‘বিস্তর উপকার করিয়াছিলেন।’ এই বিবরণ থেকে আমরা কী শিখতে পারি? বাইবেল থেকে আমরা যা পাঠ করি, তা বোঝার জন্য আমরাও আপল্লোর মতো প্রচেষ্টা করি। কিন্তু, আমরা কীভাবে আরও কার্যকারী উপায়ে শিক্ষা দিতে পারি, সেই সম্বন্ধে একজন অভিজ্ঞ সহবিশ্বাসী যখন পরামর্শ দেন, তখন আমরা নম্রতা এবং কৃতজ্ঞতা সহকারে সেই সাহায্য গ্রহণ করতে চাই। আমরা যদি তা গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের পবিত্র সেবার গুণগত মান উন্নত হবে।
আপনি যা শেখেন, তা অন্যদের সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করুন
১২, ১৩. কৌশলতার সঙ্গে শাস্ত্র ব্যবহার করা কীভাবে বাইবেল ছাত্রছাত্রীকে উন্নতি করার ব্যাপারে সাহায্য করতে পারে, তা উদাহরণের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করুন।
১২ প্রিষ্কিল্লা, আক্বিল্লা এবং আপল্লোর মতো আমরাও অন্যদের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ হতে পারি। আপনার উৎসাহ যখন একজন আগ্রহী ব্যক্তিকে, তার আধ্যাত্মিক উন্নতির ক্ষেত্রে আসা বাধা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে, তখন আপনি কেমন বোধ করেন? কিংবা একজন প্রাচীন হিসেবে সেই সময় আপনি কেমন বোধ করেন, যখন একজন সহউপাসক আপনাকে এমন শাস্ত্রীয় পরামর্শ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান, যা তাকে এক কঠিন সময়ে সাহায্য করেছিল? কোনো সন্দেহ নেই যে, অন্যদের জীবনকে উন্নত করতে সাহায্য করার জন্য ঈশ্বরের বাক্য ব্যবহার করা, পরিতৃপ্তি এবং আনন্দ লাভ করার একটা উৎস।a আপনি কীভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেন, তা লক্ষ করুন।
১৩ সত্য এবং মিথ্যা উপাসনার বিষয়ে এলিয়ের দিনের অনেক ইস্রায়েলীয় দোদুল্যমান অবস্থায় ছিল। সেই লোকেদের প্রতি দেওয়া এলিয়ের পরামর্শ সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন এমন একজন বাইবেল ছাত্রকে সাহায্য করতে পারে, যিনি আধ্যাত্মিক উন্নতি করার জন্য পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। (পড়ুন, ১ রাজাবলি ১৮:২১.) আরেকটা পরিস্থিতি বিবেচনা করুন: একজন আগ্রহী ব্যক্তি যদি বন্ধুবান্ধব অথবা পরিবারের প্রতিক্রিয়া নিয়ে ভয় পান, তাহলে আপনি হয়তো যিশাইয় ৫১:১২, ১৩ পদের ওপর ভিত্তি করে যুক্তি দেখানোর মাধ্যমে যিহোবাকে উপাসনা করার ব্যাপারে তার সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারেন।—পড়ুন।
১৪. অন্যদের সাহায্য করার জন্য বাইবেলের যে-বাক্যাংশগুলো প্রয়োজন, সেগুলো স্মরণ করার ক্ষেত্রে কী আপনাকে সাহায্য করবে?
১৪ স্পষ্টতই, বাইবেলের মধ্যে এমন অনেক শব্দ রয়েছে, যেগুলো বাইবেল পাঠকদের উৎসাহিত করতে, সংশোধন করতে এবং শক্তিশালী করতে পারে। কিন্তু, আপনি হয়তো জিজ্ঞেস করতে পারেন, ‘প্রয়োজনের সময় কীভাবে আমি শাস্ত্রপদ স্মরণ করতে পারি?’ প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করুন এবং ঈশ্বরের চিন্তাভাবনা নিয়ে ধ্যান করুন। এভাবে, আপনি ঐশিক অভিব্যক্তির এমন এক ভাণ্ডার গড়ে তুলতে পারবেন, যা যিহোবার আত্মা প্রয়োজনের সময় আপনাকে স্মরণ করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে।—মার্ক ১৩:১১; পড়ুন, যোহন ১৪:২৬.
১৫. কী আপনাকে ঈশ্বরের বাক্য আরও পূর্ণরূপে বুঝতে সাহায্য করবে?
১৫ ঈশতান্ত্রিক দায়িত্বগুলো পালন করার সময় রাজা শলোমনের মতো প্রজ্ঞা চেয়ে যিহোবার কাছে প্রার্থনা করুন। (২ বংশা. ১:৭-১০) যিহোবা ও তাঁর ইচ্ছা সম্বন্ধে সঠিক জ্ঞান লাভ করার জন্য প্রাচীনকালের ভাববাদীদের মতো ঈশ্বরের বাক্য “সযত্নে আলোচনা ও অনুসন্ধান” করুন। (১ পিতর ১:১০-১২) প্রেরিত পৌল তীমথিয়কে উৎসাহিত করেছিলেন, যেন তিনি “বিশ্বাসের ও উত্তম শিক্ষার” দ্বারা নিজেকে পুষ্ট রাখেন। (১ তীম. ৪:৬) তা করার মাধ্যমে আপনি অন্যদেরকে আধ্যাত্মিকভাবে সাহায্য করার জন্য এক উত্তম অবস্থানে থাকবেন। একইসঙ্গে, আপনি নিজের বিশ্বাসকেও বৃদ্ধি করতে পারবেন।
ঈশ্বরের বাক্যের ওপর ভিত্তি করে নিশ্চিত সুরক্ষা
১৬. (ক) ‘প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করা’ কীভাবে বিরয়ার লোকেদের উপকৃত করেছিল? (খ) বর্তমানে প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করা আমাদের জন্য কেন অতীব গুরুত্বপূর্ণ?
১৬ মাকিদনীয়ার বিরয়া নগরের যিহুদিদের ‘প্রতিদিন শাস্ত্র পরীক্ষা করিবার’ অভ্যাস ছিল। পৌল যখন সেই যিহুদিদের কাছে সুসমাচার প্রচার করেছিলেন, তখন তারা নিজেদের শাস্ত্রীয় জ্ঞানের সঙ্গে পৌলের কথাগুলো তুলনা করে দেখেছিল। এর ফল কী হয়েছিল? অনেকে এই বিষয়ে দৃঢ়প্রত্যয়ী হয়েছিল যে, তিনি যা শিক্ষা দিচ্ছিলেন, তা সত্য ছিল আর এর ফলে তারা ‘বিশ্বাস করিয়াছিল।’ (প্রেরিত ১৭:১০-১২) এটা দেখায় যে, প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করা যিহোবার প্রতি আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস বৃদ্ধি করে। আমরা যদি ঈশ্বরের নতুন জগতে বেঁচে থাকতে চাই, তাহলে এই ধরনের বিশ্বাস অর্থাৎ “প্রত্যাশিত বিষয়ের নিশ্চয়জ্ঞান” অতীব গুরুত্বপূর্ণ।—ইব্রীয় ১১:১.
১৭, ১৮. (ক) কীভাবে দৃঢ়বিশ্বাস এবং প্রেম একজন খ্রিস্টানের রূপক হৃদয়কে রক্ষা করে? (খ) কীভাবে আশা আমাদেরকে বিপদ থেকে রক্ষা করে?
১৭ উত্তম কারণেই পৌল লিখেছিলেন: “আমরা দিবসের বলিয়া আইস, মিতাচারী হই, বিশ্বাস ও প্রেমরূপ বুকপাটা পরি, এবং পরিত্রাণের আশারূপ শিরস্ত্র মস্তকে দিই।” (১ থিষল. ৫:৮) একজন সৈন্যের হৃদয়কে শত্রুর হাত থেকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন। একইভাবে, একজন খ্রিস্টানের রূপক হৃদয়কে পাপের হাত থেকে সুরক্ষা করা প্রয়োজন। যিহোবার একজন দাস যখন তাঁর প্রতি এবং সহমানবদের প্রতি প্রেম সহকারে ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাগুলোর ওপর দৃঢ়বিশ্বাস দেখায়, তখন কী হয়? এইরকম একজন দাস অতি উন্নতমানের এক আধ্যাত্মিক বুকপাটা পরিধান করেন। তিনি এমন কিছু করবেন না, যার কারণে তিনি ঈশ্বরের অনুগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।
১৮ পৌল “পরিত্রাণের আশারূপ” শিরস্ত্রাণ সম্বন্ধেও উল্লেখ করেছেন। বাইবেলের সময়ের একজন সৈন্য যদি তার মস্তক সুরক্ষিত না করতেন, তাহলে যুদ্ধের সময় সহজেই তিনি তার জীবন হারাতে পারতেন। কিন্তু, এক উত্তম শিরস্ত্রাণ পরিধান করার মাধ্যমে তিনি মস্তকের প্রতি আসা আঘাত সত্ত্বেও, গুরুতরভাবে আহত না হয়েই রক্ষা পেতে পারতেন। যিহোবার বাক্য অধ্যয়ন করার মাধ্যমে আমরা তাঁর সুরক্ষামূলক কাজের ওপর আশা গড়ে তুলি। দৃঢ়আশা আমাদেরকে ধর্মভ্রষ্ট ব্যক্তি ও তাদের বাজে “নিঃসার শব্দাড়ম্বর” প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। (২ তীম. ২:১৬-১৯) আমাদের আশা সেই ব্যক্তিদের না বলার জন্যও শক্তিশালী করবে, যারা আমাদেরকে যিহোবার কাছে নিন্দনীয় এমন আচরণ করার দিকে পরিচালিত করে।
রক্ষা পাওয়ার চাবিকাঠি
১৯, ২০. কেন আমরা ঈশ্বরের বাক্যকে উচ্চমূল্য দিই আর কীভাবে আমরা এই বাক্যের প্রতি উপলব্ধি দেখাই? (“যিহোবা আমাকে ঠিক আমার প্রয়োজনীয় বিষয়টাই দান করেন” নামক বাক্সটা দেখুন।)
১৯ যতই আমরা শেষ সময়ের নিকটবর্তী হচ্ছি, ততই যিহোবার বাক্যের ওপর আমাদের নির্ভর করার প্রয়োজনীয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাক্য থেকে আমরা যে-পরামর্শ পাই, তা আমাদেরকে মন্দ অভ্যাসগুলো দূর করতে এবং আমাদের পাপপূর্ণ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এই বাক্য থেকে প্রাপ্ত উৎসাহ এবং সান্ত্বনার মাধ্যমে আমরা সেই পরীক্ষাগুলোতে উত্তীর্ণ হব, যেগুলো শয়তান এবং তার জগৎ আমাদের ওপর নিয়ে আসে। যিহোবা তাঁর বাক্যে যে-নির্দেশনা জোগান, সেটার মাধ্যমে আমরা জীবনের পথে থাকতে পারব।
২০ মনে করে দেখুন যে, ঈশ্বরের ইচ্ছা এই, যেন “সমুদয় মনুষ্য পরিত্রাণ পায়।” ‘সমুদয় মনুষ্যের’ মধ্যে যিহোবার দাসেরাও রয়েছে। এর মধ্যে সেই ব্যক্তিরাও রয়েছে, যাদেরকে আমরা হয়তো আমাদের প্রচার ও শিক্ষা দেওয়ার কাজের মাধ্যমে সাহায্য করতে পারি। কিন্তু, যারা পরিত্রাণ লাভ করতে চায়, তাদের সকলকে “সত্যের তত্ত্বজ্ঞান” বা সঠিক জ্ঞান লাভ করতে হবে। (১ তীম. ২:৪) তাই, শেষকালে রক্ষা পাওয়ার সঙ্গে বাইবেল পাঠ করা এবং এটির অনুপ্রাণিত নীতিগুলো কাজে লাগানো ওতপ্রোতভাবে জড়িত। হ্যাঁ, আমাদের প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করা দেখায় যে, যিহোবার সত্যের মূল্যবান বাক্যকে আমরা কতটা উচ্চমূল্য দিই।—যোহন ১৭:১৭.
[পাদটীকা]
a অবশ্য, আমরা অন্যদেরকে চাপ অথবা দোষ দেওয়ার জন্য বাইবেলের পরামর্শ ব্যবহার করি না। একজন বাইবেল ছাত্রের প্রতি আমাদের ধৈর্য ও দয়া দেখানো উচিত, যেমনটা যিহোবা আমাদের প্রতি দেখান।—গীত. ১০৩:৮.
[৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
[৯ পৃষ্ঠার বাক্স]
আপনি কি সাম্প্রতিক বোধগম্যতা অনুযায়ী শিক্ষা দিচ্ছেন?
আমরা বাইবেলের সত্যের বিষয়ে সাম্প্রতিক বোধগম্যতা সম্বন্ধে অবগত থাকতে চাই, যেন আমরা অন্যদেরকে সঠিক জ্ঞান জানাতে পারি। এই বিষয়টা মনে রেখে, আপনি কীভাবে নীচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেবেন?
▪ যিশু যখন মথি ২৪:৩৪ পদে উল্লেখিত “এই কালের লোকদের” বিষয়ে বলেছিলেন, তখন তাঁর মনে কাদের কথা ছিল?—প্রহরীদুর্গ, এপ্রিল ১৫, ২০১০, পৃষ্ঠা ১০-১১.
▪ মথি ২৫:৩২ পদে বর্ণিত “ছাগ হইতে মেষ” পৃথকীকরণের কাজ কখন হবে?—প্রহরীদুর্গ, অক্টোবর ১৫, ১৯৯৫, পৃষ্ঠা ২১-২৩.
▪ লূক ২১:২৬ পদ অনুযায়ী কখন “ভয়ে, এবং ভূমণ্ডলে যাহা যাহা ঘটিবে তাহার আশঙ্কায়, মানুষের প্রাণ উড়িয়া যাইবে”?—প্রহরীদুর্গ, ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৯৪, পৃষ্ঠা ২৯-৩০.
মনোযোগের সঙ্গে ব্যক্তিগত অধ্যয়নের পাশাপাশি প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করার কার্যক্রমকে বাড়ানোর মাধ্যমে আমরা সেই ক্রমবর্ধিষ্ণু আলোতে চলার জন্য অন্যদেরকে সাহায্য করতে পারব, যা যিহোবা তাঁর লিখিত বাক্যে বর্ষণ করেন।—হিতো. ৪:১৮.
[চিত্র]
আপল্লোকে তার পরিচর্যার কার্যকারিতাকে উন্নত করার জন্য সাহায্য করা হয়েছিল
[১১ পৃষ্ঠার বাক্স]
‘যিহোবা আমাকে ঠিক আমার প্রয়োজনীয় বিষয়টাই দান করেন’
একজন যুবতী খ্রিস্টান বোন লিখেছিলেন: “যিহোবা প্রদত্ত সমস্ত প্রেমপূর্ণ অনুস্মারকের মধ্যে যে-অনুস্মারকগুলো আমাদেরকে প্রতিদিন বাইবেল পাঠ করার জোরালো পরামর্শ দেয়, সেগুলো আমার জীবনের ওপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আমি যখন হাইস্কুলের শেষ বর্ষে ছিলাম, তখন বাইবেল পাঠ শুরু করেছিলাম আর এটি পড়ে শেষ করতে আমার প্রায় দুই বছর লেগেছিল। সেই সময়ে যিহোবার বাক্যের মধ্যে আমি এমন বিষয়গুলো খুঁজে পেয়েছিলাম, যেগুলো জীবন সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমার প্রয়োজন ছিল। এখন আমি দ্বিতীয় বারের মতো বাইবেল পাঠ করছি। কিন্তু, পাঠ করার সময় এমন মনে হচ্ছে যেন আমি আগে কখনো সেগুলো দেখিনি। বাইবেল পাঠ করা প্রথম বারের মতোই—বরং আরও বেশি—রোমাঞ্চকর বলে মনে হচ্ছে! আমাকে ঠিক আমার প্রয়োজনীয় বিষয়টাই দান করার ব্যাপারে যিহোবার ক্ষমতা দেখে আমি অভিভূত হয়ে গিয়েছি।”