দুষ্টদের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার আসবে
“তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও।”—আমোষ ৪:১২.
১, ২. কেন আমরা আস্থা রাখতে পারি যে, ঈশ্বর দুষ্টতাকে শেষ করবেন?
যিহোবা কি কখনও এই পৃথিবীর দুষ্টতা ও দুঃখকষ্ট শেষ করবেন? একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে, এই প্রশ্ন অন্য যেকোনো সময়ের চেয়ে আরও বেশি উপযুক্ত। আমরা যেদিকেই তাকাই না কেন, সর্বত্র মানুষের প্রতি মানুষের অমানবিক আচরণ দেখতে পাই। দৌরাত্ম্য, সন্ত্রাস এবং কলুষতামুক্ত এক জগতের জন্য কত অধীরভাবেই না আমরা অপেক্ষা করে আছি!
২ তবে সুখবরটা হচ্ছে, আমরা সম্পূর্ণ আস্থা রাখতে পারি যে যিহোবা দুষ্টতাকে শেষ করবেন। ঈশ্বরের গুণাবলি এই বিষয়টা নিশ্চিত করে যে, তিনি দুষ্টদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবেন। যিহোবা একজন ধার্মিক ও ন্যায়পরায়ণ ঈশ্বর। গীতসংহিতা ৩৩:৫ পদে তাঁর বাক্য আমাদের বলে: “তিনি ধার্ম্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন।” আরেকটা গীত বলে: “দৌরাত্ম্যপ্রিয় লোক [সদাপ্রভুর] প্রাণের ঘৃণাস্পদ।” (গীতসংহিতা ১১:৫) নিশ্চিতভাবেই, সর্বশক্তিমান ঈশ্বর যিহোবা, যিনি ধার্মিকতা ও ন্যায়বিচার ভালবাসেন, তিনি যা কিছু ঘৃণা করেন সেগুলোকে চিরকাল সহ্য করবেন না।
৩. আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীর আরও আলোচনায় কোন বিষয়টার ওপর জোর দেওয়া হবে?
৩ যিহোবা যে দুষ্টতাকে দূর করে দেবেন, তা আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি সেটার আরেকটা কারণ বিবেচনা করুন। তাঁর অতীত আচরণের নথি এই সম্বন্ধে নিশ্চয়তা দেয়। দুষ্ট লোকেদের সঙ্গে যিহোবা যেভাবে আচরণ করেন, সেই বিষয়ে তাঁর লক্ষণীয় উদাহরণগুলো বাইবেলের আমোষ বইয়ে পাওয়া যায়। আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী আরও আলোচনা করলে তা থেকে আমরা ঐশিক বিচার সম্বন্ধে তিনটে বিষয় শিখতে পারব। প্রথমত, এটা সবসময় উপযুক্ত। দ্বিতীয়ত, এটা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। আর তৃতীয়ত, এটা শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য হয়, যারা এটার উপযুক্ত কারণ যিহোবা অন্যায়কারীদের ওপর বিচার নিয়ে আসেন কিন্তু অনুতপ্ত ও সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন লোকেদের প্রতি দয়া বা করুণা দেখান।—রোমীয় ৯:১৭-২৬.
ঐশিক বিচার সবসময় উপযুক্ত
৪. যিহোবা আমোষকে কোথায় পাঠিয়েছিলেন এবং কোন উদ্দেশ্যে?
৪ আমোষের দিনে, ইস্রায়েলীয়রা ইতিমধ্যেই দুটো রাজ্যে বিভক্ত হয়েছিল। একটা ছিল দক্ষিণে দুই বংশের যিহূদা রাজ্য। অন্যটা ছিল উত্তরে দশ বংশের ইস্রায়েল রাজ্য। যিহোবা আমোষকে ভাববাদী হিসেবে সেবা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন, তাকে তার নিজ শহর যিহূদা থেকে ইস্রায়েলে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে আমোষ ঐশিক বিচার ঘোষণা করার জন্য ঈশ্বরের দ্বারা ব্যবহৃত হবেন।
৫. কোন জাতিগুলোর বিরুদ্ধে আমোষ প্রথমে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আর একটা কারণ কী ছিল যেজন্য তারা প্রতিকূল ঐশিক বিচার লাভ করার উপযুক্ত ছিল?
৫ আমোষ ইস্রায়েলের স্বেচ্ছাচারী উত্তর রাজ্যের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার ঘোষণা করে তার কাজ শুরু করেননি। এর পরিবর্তে, তিনি পার্শ্ববর্তী ছয়টা জাতির বিরুদ্ধে প্রতিকূল ঐশিক বিচার ঘোষণা করার দ্বারা শুরু করেছিলেন। সেই জাতিগুলো ছিল অরাম, পলেষ্টিয়া, সোর, ইদোম, অম্মোন এবং মোয়াব। কিন্তু তারা কি সত্যিই ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচার লাভ করার উপযুক্ত ছিল? অবশ্যই! একটা কারণ হচ্ছে, তারা যিহোবার লোকেদের চির শত্রু ছিল।
৬. কেন ঈশ্বর অরাম, পলেষ্টিয়া এবং সোরের ওপর ধ্বংস আনতে যাচ্ছিলেন?
৬ উদাহরণস্বরূপ, অরামীয়রা “গিলিয়দকে মর্দ্দন করিয়াছে” বলে যিহোবা তাদের ভর্ৎসনা করেছিলেন। (আমোষ ১:৩) অরামীয়রা গিলিয়দ থেকে দূরবর্তী এলাকা—যর্দন নদীর পূর্বপারে অবস্থিত ইস্রায়েলের একটা অঞ্চল—দখল করেছিল এবং সেখানে ঈশ্বরের লোকেদের গুরুতর ক্ষতি করেছিল। পলেষ্টিয়া ও সোরের বিষয়ে কী বলা যায়? পলেষ্টীয়রা ইস্রায়েলীয়দের নির্বাসনে বা বন্দিত্বে নিয়ে যাওয়ার এবং তাদেরকে ইদোমীয়দের কাছে বিক্রি করে দেওয়ার দোষে দোষী ছিল আর কিছু ইস্রায়েলীয় সোরের দাস ব্যবসায়ীদের অধীনে চলে গিয়েছিল। (আমোষ ১:৬, ৯) চিন্তা করতে পারেন—ঈশ্বরের লোকেদের দাসত্বে বিক্রি করে দেওয়া! তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, যিহোবা অরাম, পলেষ্টিয়া এবং সোরের ওপর ধ্বংস আনতে যাচ্ছিলেন।
৭. ইস্রায়েলের সঙ্গে ইদোম, অম্মোন এবং মোয়াবের কোন বিষয়ে মিল ছিল কিন্তু তারা ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে কেমন আচরণ করেছিল?
৭ ইস্রায়েলের এবং একে অন্যের সঙ্গে ইদোম, অম্মোন ও মোয়াবের একটা বিষয়ে মিল ছিল। তিনটে জাতিই ইস্রায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত ছিল। ইদোমীয়রা যাকোবের যমজ ভাই এষৌর মাধ্যমে অব্রাহামের বংশ থেকে এসেছিল। তাই, এক অর্থে তারা ইস্রায়েলের ভাই ছিল। অম্মোনীয়রা ও মোয়াবীয়রা অব্রাহামের ভাইপো লোটের বংশধর ছিল। কিন্তু, ইদোম, অম্মোন ও মোয়াব কি তাদের ইস্রায়েলীয় আত্মীয়দের সঙ্গে ভাইয়ের মতো আচরণ করেছিল? একেবারেই না! ইদোম নিষ্ঠুরভাবে ‘আপন ভ্রাতার’ বিরুদ্ধে অস্ত্র উঠিয়েছিল এবং অম্মোনীয়রা ইস্রায়েলীয় বন্দিদের প্রতি নৃশংস আচরণ করেছিল। (আমোষ ১:১১, ১৩) যদিও আমোষ ঈশ্বরের লোকেদের প্রতি মোয়াবের খারাপ আচরণ সম্বন্ধে সরাসরি কিছু উল্লেখ করেননি কিন্তু ইস্রায়েলের বিরোধিতা করার ক্ষেত্রে মোয়াবীয়দের বিরাট ইতিহাস ছিল। ওই তিন আত্মীয় জাতির শাস্তি হবে চরম। যিহোবা তাদের ওপর এক অগ্নিময় ধ্বংস পাঠাবেন।
ঐশিক বিচার থেকে রেহাই পাওয়া যায় না
৮. কেন ইস্রায়েলের পার্শ্ববর্তী ছয়টা জাতির বিরুদ্ধে ঈশ্বরের বিচার থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায়ই ছিল না?
৮ কোনো সন্দেহ নেই যে, আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীতে উল্লেখিত এই ছয়টা জাতির প্রতিকূল ঐশিক বিচার লাভ করা উপযুক্ত ছিল। এ ছাড়া, এটা থেকে রেহাই পাওয়ার কোনো উপায়ই তাদের ছিল না। আমোষ ১ অধ্যায় ৩ পদ থেকে ২ অধ্যায় ১ পদ পর্যন্ত যিহোবা ছয় বার বলেন: “আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না।” যিহোবা তাঁর কথা মতো, সেই জাতিগুলোর বিরুদ্ধে তাঁর হস্ত নিবৃত্ত করেননি। লিপিবদ্ধ ইতিহাস প্রমাণ করে যে, ওই জাতিগুলোর প্রত্যেকে পরে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এদের মধ্যে অন্তত চারটে জাতি—পলেষ্টিয়া, মোয়াব, অম্মোন ও ইদোম—শেষ পর্যন্ত বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল!
৯. যিহূদার অধিবাসীরা কী লাভ করার উপযুক্ত ছিল এবং কেন?
৯ আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী এরপর সপ্তম জাতির—তার নিজের এলাকা যিহূদার—ওপর কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যে তার শ্রোতারা হয়তো আমোষকে যিহূদা রাজ্যের বিরুদ্ধে বিচার ঘোষণা করতে শুনে অবাক হয়ে গিয়েছিল। কেন যিহূদার অধিবাসীরা প্রতিকূল বিচার লাভ করার উপযুক্ত ছিল? “কেননা তাহারা সদাপ্রভুর ব্যবস্থা অগ্রাহ্য করিয়াছে,” আমোষ ২:৪ পদ বলে। যিহোবা তাঁর ব্যবস্থার প্রতি এইরকম স্বেচ্ছাচারী অসম্মানকে হালকাভাবে নেননি। আমোষ ২:৫ পদ অনুসারে, তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন: “আমি যিহূদার উপরে অগ্নি নিক্ষেপ করিব, তাহা যিরূশালেমের অট্টালিকা সকল গ্রাস করিবে।”
১০. কেন যিহূদা বিপর্যয় থেকে রেহাই পেতে পারত না?
১০ অবিশ্বস্ত যিহূদা আসন্ন বিপর্যয় থেকে রেহাই পেতে পারত না। সপ্তম বারের মতো যিহোবা বলেছিলেন: “আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না।” (আমোষ ২:৪) সা.কা.পূ. ৬০৭ সালে বাবিলীয়দের দ্বারা জনশূন্য হওয়ার মাধ্যমে যিহূদা ভবিষ্যদ্বাণীকৃত শাস্তি লাভ করেছিল। আরেকবার আমরা দেখতে পাই যে, ঐশিক বিচার থেকে দুষ্টদের রেহাই নেই।
১১-১৩. আমোষ মূলত কোন জাতির বিরুদ্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন আর সেখানে কোন ধরনের অত্যাচার বিরাজ করছিল?
১১ ভাববাদী আমোষ সবেমাত্র সাতটা জাতির ওপর যিহোবার বিচার ঘোষণা করেছেন। কিন্তু, যেকেউ মনে করেছিল যে তিনি তার ভবিষ্যদ্বাণী বলা শেষ করেছেন, সে ভুল করেছিল। আসলে আমোষের ঘোষণা তখনও শেষ হয়নি! তাকে মূলত ইস্রায়েলের উত্তর রাজ্যের বিরুদ্ধে চরম বিচারের বার্তা ঘোষণা করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। আর ইস্রায়েলের প্রতিকূল ঐশিক বিচার লাভ করা উপযুক্ত ছিল কারণ ওই জাতির নৈতিক ও আধ্যাত্মিক অধঃপতন অত্যন্ত শোচনীয় ছিল।
১২ আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী সেই অত্যাচারকে প্রকাশ করেছিল, যা ইস্রায়েল রাজ্যে সাধারণ বিষয় হয়ে উঠেছিল। এই বিষয়ে আমোষ ২:৬, ৭ পদ বলে: “সদাপ্রভু এই কথা কহেন, ইস্রায়েলের তিনটা অধর্ম্ম প্রযুক্ত ও চারিটা প্রযুক্ত আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না; কেননা তাহারা রৌপ্যের বিনিময়ে ধার্ম্মিককে, ও এক যোড়া পাদুকার বিনিময়ে দরিদ্রকে বিক্রয় করিয়াছে। তাহারা দীনহীন লোকদের মস্তকে ভূমির ধূলির আকাঙ্ক্ষা করে, ও নম্র লোকদের পথ বক্র করে।”
১৩ ধার্মিক লোকেদের নিছক “রৌপ্যের বিনিময়ে” বিক্রি করা হচ্ছিল, সম্ভবত এর অর্থ হল, বিচারকরা ঘুস হিসেবে রুপো গ্রহণ করে নির্দোষ ব্যক্তিদের শাস্তি দিচ্ছিল। পাওনাদাররা “এক যোড়া পাদুকার” মূল্যের বিনিময়ে, হয়তো সামান্য কিছু ঋণের কারণে দরিদ্রদের দাস হিসেবে বিক্রি করে দিচ্ছিল। নিষ্ঠুর ব্যক্তিরা “দীনহীন লোকদের” এতটাই নিচে নামাতে ‘আকাঙ্ক্ষা’ বা উৎসুকভাবে চেষ্টা করেছিল, যাতে দরিদ্র লোকেরা দুর্দশা, শোক বা অবমাননার এক চিহ্ন হিসেবে তাদের নিজেদের মাথায় ধুলো দেয়। দুর্নীতি এতটাই পরিব্যাপ্ত ছিল যে, ‘নম্র লোকেরা’ কোনো ন্যায়বিচারের আশাই করতে পারত না।
১৪. ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যে কাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হচ্ছিল?
১৪ লক্ষ করুন যে, কাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা হয়েছিল। তারা ছিল সেই দেশের ধার্মিক, দরিদ্র, দীনহীন এবং নম্র অধিবাসীরা। ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যিহোবার ব্যবস্থা চুক্তিতে আদেশ দেওয়া হয়েছিল যে, দুর্বল ও অভাবীদের প্রতি করুণা দেখাতে হবে। কিন্তু, ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যে এই ব্যক্তিদের অবস্থা এতটা খারাপ ছিল যে, এর চেয়ে খারাপ আর কিছু হতে পারত না।
“তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও”
১৫, ১৬. (ক) কেন ইস্রায়েলীয়দের সতর্ক করা হয়েছিল, “তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও”? (খ) আমোষ ৯:১, ২ পদ কীভাবে দেখায় যে, দুষ্টেরা ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞা কৌশলে এড়াতে পারত না? (গ) সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে ইস্রায়েলের দশ বংশের রাজ্যের কী হয়েছিল?
১৫ যেহেতু ইস্রায়েলে অনৈতিকতা এবং অন্যান্য পাপ প্রচুর পরিমাণে পরিব্যাপ্ত ছিল, তাই উপযুক্ত কারণেই ভাববাদী আমোষ সেই বিদ্রোহী জাতিকে সতর্ক করেছিলেন: “তুমি আপন ঈশ্বরের সহিত সাক্ষাৎ করিতে প্রস্তুত হও।” (আমোষ ৪:১২) অবিশ্বস্ত ইস্রায়েল আসন্ন ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞা থেকে রেহাই পেতে পারত না কারণ অষ্টম বারের মতো যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “আমি তাহার দণ্ড নিবারণ করিব না।” (আমোষ ২:৬) দুষ্ট লোকেরা যারা হয়তো নিজেদের লুকানোর চেষ্টা করতে পারে তাদের সম্বন্ধে ঈশ্বর বলেছিলেন: “তাহাদের মধ্যে এক জনও পলাইতে পারিবে না, এক জনও রক্ষা পাইতে পারিবে না। তাহারা পাতাল পর্য্যন্ত খুঁড়িয়া গেলেও তথা হইতে আমার হস্ত তাহাদিগকে ধরিয়া আনিবে, এবং আকাশ পর্য্যন্ত উঠিলেও আমি তথা হইতে তাহাদিগকে নামাইব।”—আমোষ ৯:১, ২.
১৬ দুষ্টেরা “পাতাল পর্য্যন্ত” খুঁড়লেও, যা রূপকভাবে পৃথিবীর একেবারে নিচের অংশে গিয়ে লুকানোর প্রচেষ্টাকে ইঙ্গিত করে, তাদের ওপর যিহোবার বিচারের দণ্ডাজ্ঞা কৌশলে এড়াতে পারত না। এ ছাড়া, তারা “আকাশ পর্য্যন্ত উঠিলেও” অর্থাৎ উচ্চ পর্বতে আশ্রয় খোঁজার চেষ্টা করলেও ঐশিক বিচার থেকে রেহাই পেতে পারত না। যিহোবার সাবধানবাণী স্পষ্ট ছিল: লুকানোর এমন কোনো জায়গাই নেই, যা তাঁর নাগালের বাইরে। ঐশিক ন্যায়বিচার অনুযায়ী ইস্রায়েল রাজ্যকে এর মন্দ কাজের জন্য নিকাশ দিতে হবে। আর সত্যি সত্যিই সেই সময় এসেছিল। সা.কা.পূ. ৭৪০ সালে—আমোষ তার ভবিষ্যদ্বাণী লিপিবদ্ধ করার প্রায় ৬০ বছর পর—ইস্রায়েল রাজ্য অশূরীয়দের কাছে পরাজিত হয়েছিল।
ঐশিক বিচার শুধু তাদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা এটার যোগ্য
১৭, ১৮. আমোষ ৯ অধ্যায় ঈশ্বরের করুণা সম্বন্ধে কী প্রকাশ করে?
১৭ আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী আমাদের দেখতে সাহায্য করেছে যে, ঐশিক বিচার সবসময় উপযুক্ত এবং তা থেকে কোনোভাবেই রেহাই পাওয়া যায় না। কিন্তু, বাইবেলের আমোষ বইটি এও ইঙ্গিত করে যে, যিহোবার বিচার শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা এটার যোগ্য। দুষ্টরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, ঈশ্বর তাদের খুঁজে বের করতে ও বিচার করতে পারেন। এ ছাড়া, অনুতপ্ত এবং ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদেরও—যাদের তিনি করুণা দেখাতে চান—তিনি খুঁজে বের করতে পারেন। আমোষ বইয়ের শেষ অধ্যায়ে এই বিষয়টা চমৎকারভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
১৮ আমোষ ৯ অধ্যায় ৮ পদ অনুসারে, যিহোবা বলেছিলেন: ‘আমি যাকোবের কুলকে একেবারে উচ্ছিন্ন করিব না।’ ১৩ থেকে ১৫ পদে যেমন উল্লেখ করা হয়েছে, যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি তাঁর লোকেদের ‘বন্দি-দশা ফিরাইবেন।’ তাদের প্রতি করুণা দেখানো হবে এবং তারা নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি উপভোগ করবে। “হালবাহক শস্যচ্ছেদকের সহিত . . . মিলিবে,” যিহোবা প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। কল্পনা করুন—শস্য এত প্রচুর পরিমাণে হবে যে, পরের বার চাষ করার ও বীজ বপনের সময় পর্যন্ত তখনও এর কিছু অংশ সংগ্রহ করা শেষ হবে না!
১৯. ইস্রায়েল ও যিহূদা থেকে ফিরে আসা এক অবশিষ্টাংশের কী হয়েছিল?
১৯ যিহূদা ও ইস্রায়েল উভয় জায়গার দুষ্টদের বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার, যারা এটার যোগ্য শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য হয়েছিল কারণ অনুতপ্ত এবং সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের প্রতি করুণা দেখানো হয়েছিল। আমোষ ৯ অধ্যায়ে লিপিবদ্ধ পুনর্স্থাপনের ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতাস্বরূপ, ইস্রায়েল ও যিহূদা থেকে এক অনুতপ্ত অবশিষ্টাংশ সা.কা.পূ. ৫৩৭ সালে বাবিলীয় বন্দিত্ব থেকে ফিরে এসেছিল। তাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে ফিরে এসে তারা সত্য উপাসনাকে পুনর্স্থাপিত করেছিল। এ ছাড়া, তারা নিরাপদে তাদের ঘরবাড়ি পুনর্নিমাণ ও দ্রাক্ষালতা বপন করেছিল এবং বাগান তৈরি করেছিল।
যিহোবার প্রতিকূল বিচার আসবেই!
২০. আমোষের দ্বারা ঘোষিত বিচারের বার্তাগুলোর বিবেচনা আমাদের কোন আশ্বাস দেওয়া উচিত?
২০ আমোষের দ্বারা ঘোষিত ঐশিক বিচারের বার্তাগুলোর বিবেচনা আমাদের এই আশ্বাস দেওয়া উচিত যে, যিহোবা আমাদের সময়ের দুষ্টতাকে শেষ করবেনই করবেন। কেন আমরা তা বিশ্বাস করতে পারি? প্রথমত, দুষ্টদের সঙ্গে যিহোবার আচরণের এই অতীত উদাহরণগুলো ইঙ্গিত করে যে, আমাদের সময়ে তিনি কীরকম পদক্ষেপ নেবেন। দ্বিতীয়ত, ইস্রায়েলের ধর্মভ্রষ্ট রাজ্যের ওপর ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞা এই বিষয়টাকে নিশ্চিত করে যে, “মহতী বাবিল” অর্থাৎ মিথ্যা ধর্মের বিশ্ব সাম্রাজ্যের সবচেয়ে নিন্দনীয় অংশ, খ্রিস্টীয়জগতের ওপর যিহোবা ধ্বংস নিয়ে আসবেন।—প্রকাশিত বাক্য ১৮:২.
২১. কেন খ্রিস্টীয়জগৎ ঈশ্বরের প্রতিকূল বিচার পাওয়ার যোগ্য?
২১ খ্রিস্টীয়জগৎ যে প্রতিকূল ঐশিক বিচার লাভ করার উপযুক্ত সেই বিষয়ে কোনো সন্দেহই নেই। এর জঘন্য ধর্মীয় ও নৈতিক অবস্থাগুলোই সেই বিষয়ে কথা বলে। খ্রিস্টীয়জগতের—এবং শয়তানের জগতের বাকি অংশের—বিরুদ্ধে যিহোবার বিচার উপযুক্ত। এ ছাড়া, এটা থেকে রেহাই পাওয়া যায় না কারণ বিচারের দণ্ডাজ্ঞার সময় আমোষ ৯ অধ্যায় ১ পদের কথাগুলো প্রযোজ্য হবে: “তাহাদের মধ্যে এক জনও পলাইতে পারিবে না, এক জনও রক্ষা পাইতে পারিবে না।” হ্যাঁ, দুষ্টেরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, যিহোবা তাদের খুঁজে বের করবেন।
২২. দ্বিতীয় থিষলনীকীয় ১:৬-৮ পদে ঐশিক বিচার সম্বন্ধে কোন বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়েছে?
২২ ঐশিক বিচার সবসময় উপযুক্ত, এর থেকে রেহাই পাওয়া যায় না এবং শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য যারা এটার যোগ্য। এটা প্রেরিত পৌলের কথাগুলো থেকে দেখা যেতে পারে: “ঈশ্বরের কাছে ইহা ন্যায্য যে, যাহারা তোমাদিগকে ক্লেশ দেয়, তিনি তাহাদিগকে প্রতিফলরূপে ক্লেশ দিবেন, এবং ক্লেশ পাইতেছ যে তোমরা, তোমাদিগকে আমাদের সহিত বিশ্রাম দিবেন, [ইহা তখনই হইবে] যখন প্রভু যীশু স্বর্গ হইতে আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন, এবং যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা আমাদের প্রভু যীশুর সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না, তাহাদিগকে সমুচিত দণ্ড দিবেন।” (২ থিষলনীকীয় ১:৬-৮) যারা তাঁর অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ওপর ক্লেশ আনার কারণে প্রতিকূল বিচার লাভ করার উপযুক্ত তাদের প্রতিফল দেওয়া “ঈশ্বরের কাছে . . . ন্যায্য।” সেই বিচার থেকে রেহাই পাওয়া যাবে না কারণ যখন ‘যীশু আপনার পরাক্রমের দূতগণের সহিত জ্বলন্ত অগ্নিবেষ্টনে প্রকাশিত হইবেন,’ তখন দুষ্টেরা রক্ষা পাবে না। এ ছাড়া, এই অর্থে ঐশিক বিচার শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য হবে, যারা এটার যোগ্য কারণ যিশু সেই লোকেদের ওপর প্রতিশোধ নিয়ে আসবেন “যাহারা ঈশ্বরকে জানে না ও যাহারা . . . সুসমাচারের আজ্ঞাবহ হয় না।” আর ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞা সেই ঈশ্বর ভয়শীল লোকেদের জন্য সান্ত্বনা নিয়ে আসবে, যারা ক্লেশ ভোগ করে।
ন্যায়নিষ্ঠ ব্যক্তিদের জন্য আশা
২৩. আমোষের বই থেকে কোন আশা ও সান্ত্বনা পাওয়া যেতে পারে?
২৩ আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীতে সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জন্য আশার এক চমৎকার বার্তা ও সান্ত্বনা রয়েছে। আমোষ বইতে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, যিহোবা তাঁর প্রাচীন সময়ের লোকেদের পুরোপুরিভাবে নির্মূল করে দেননি। তিনি শেষ পর্যন্ত ইস্রায়েল ও যিহূদার বন্দি ব্যক্তিদের পুনরায় সংগ্রহ করেছিলেন, তাদের মাতৃভূমিতে তাদেরকে ফিরিয়ে এনেছিলেন এবং প্রচুর নিরাপত্তা ও সমৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেছিলেন। আমাদের দিনের জন্য এর অর্থ কী? এটা আমাদের নিশ্চিত করে যে, ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞার সময় দুষ্টরা যেখানেই লুকিয়ে থাকুক না কেন, যিহোবা তাদের খুঁজে বের করবেন আর যাদেরকে তিনি তাঁর করুণা পাওয়ার যোগ্য বলে মনে করেন, তারা এই পৃথিবীর যেখানেই থাকুক, তাদের অবস্থানকে বের করবেন।
২৪. কোন উপায়গুলোতে যিহোবার আধুনিক দিনের দাসেরা আশীর্বাদ পেয়েছে?
২৪ দুষ্টদের বিরুদ্ধে যিহোবার আসন্ন বিচারের জন্য অপেক্ষা করার সময় তাঁর বিশ্বস্ত দাস হিসেবে আমাদের অভিজ্ঞতা কী? যিহোবা আমাদের উপচে পড়া আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধি দিয়ে আশীর্বাদ করেন! আমরা এমন এক পদ্ধতিতে উপাসনা করি, যা সেই সমস্ত মিথ্যা ও বিকৃত বিষয়গুলো থেকে মুক্ত, যেগুলো খ্রিস্টীয়জগতের মিথ্যা শিক্ষাগুলো থেকে এসেছে। এ ছাড়া, যিহোবা আমাদের প্রচুর পরিমাণে আধ্যাত্মিক খাদ্য দিয়েও আশীর্বাদ করেছেন। তবে, মনে রাখবেন যে, যিহোবার এই প্রচুর আশীর্বাদের সঙ্গে এক বিরাট দায়িত্বও আসে। ঈশ্বর চান আমরা যেন তাঁর আসন্ন বিচার সম্বন্ধে অন্যদের সাবধান করি। যারা “অনন্ত জীবনের জন্য নিরূপিত [“সঠিক প্রবণতাসম্পন্ন,” NW],” তাদের খুঁজে বের করতে আমরা আমাদের যথাসাধ্য করতে চাই। (প্রেরিত ১৩:৪৮) হ্যাঁ, আমরা এখন যা উপভোগ করছি সেই আধ্যাত্মিক সমৃদ্ধিতে অংশ নেওয়ার জন্য যত বেশি লোককে সম্ভব সাহায্য করতে চাই। আর আমরা চাই তারা যেন দুষ্টদের ওপর ঐশিক বিচারের দণ্ডাজ্ঞা থেকে রক্ষা পায়। অবশ্য, এই আশীর্বাদগুলোর অংশী হতে চাইলে আমাদের হৃদয়ের অবস্থা সঠিক হতে হবে। পরের প্রবন্ধে আমরা যেমন দেখতে পাব যে, এই বিষয়টাও আমোষের ভবিষ্যদ্বাণীতে তুলে ধরা হয়েছে।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• আমোষের ভবিষ্যদ্বাণী কীভাবে দেখায় যে, যিহোবার প্রতিকূল বিচার সবসময় উপযুক্ত?
• ঐশিক বিচার থেকে যে রেহাই পাওয়া যায় না, তা দেখানোর জন্য আমোষ কোন প্রমাণ জোগান?
• আমোষ বইটি কীভাবে দেখায় যে, ঈশ্বরের বিচার শুধুমাত্র সেই লোকেদের প্রতি প্রযোজ্য, যারা এটার যোগ্য?
[১৬, ১৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
ইস্রায়েল রাজ্য ঐশিক বিচার থেকে রেহাই পায়নি
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্র]
সাধারণ কাল পূর্ব ৫৩৭ সালে ইস্রায়েল ও যিহূদার এক অবশিষ্টাংশ বাবিলীয় বন্দিত্ব থেকে ফিরে এসেছিল