অধ্যায় এগারো
‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা কর’
১. (ক) কেন যীশু তাঁর শ্রোতাদের প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলেন? (খ) আমাদের নিজেদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা উচিত?
এক হাজার নয়শ বছরেরও বেশি আগে গালীলে উপদেশ দেওয়ার সময়ে যীশু, তাঁর শ্রোতাদের পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা প্রথমে রাজ্য ও [ঈশ্বরের] ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর।” কিন্তু এত জরুরি ভিত্তিতে তা করতে বলার কারণ কী ছিল? খ্রীষ্টের রাজ্যের ক্ষমতা পাওয়ার সময় কি তখনও আরও শত শত বছর পরের বিষয় ছিল না? হ্যাঁ, কিন্তু মশীহ রাজ্যের মাধ্যমেই যিহোবা তাঁর সার্বভৌমত্বের ন্যায্যতা প্রতিপাদন করবেন এবং পৃথিবীর জন্য তাঁর মহান উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করবেন। যিনি সত্যিই ওই বিষয়গুলোর গুরুত্ব বোঝেন তিনি তার জীবনে রাজ্যকে প্রথমে রাখবেন। তা যদি প্রথম শতাব্দীতে সত্য হয়, তা হলে আজকে এটা আরও কত বেশি সত্য কারণ এখন খ্রীষ্ট রাজা হিসেবে সিংহাসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন! তাই প্রশ্ন হল, আমি যেভাবে জীবনযাপন করি তা কি দেখায় যে আমি প্রথমে ঈশ্বরের রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করছি?—মথি ৬:৩৩.
২. সাধারণত লোকেরা আগ্রহ নিয়ে কোন বিষয়গুলোর পিছনে ছোটে?
২ বস্তুতপক্ষে, আজকে সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ লোক প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করছে। তাদের জীবনে যিহোবার ইচ্ছা পালনকেই মূল বিষয় করে, তাঁর কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার মাধ্যমে তারা রাজ্যের শাসনের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করছে। অন্যদিকে, বেশির ভাগ মানুষই জাগতিক বিষয়গুলো পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে আগ্রহী। লোকেরা টাকাপয়সা ও ধনসম্পত্তি এবং টাকাপয়সার বিনিময়ে যে-আনন্দ পাওয়া যায়, সেটার পিছনে ছোটে। অথবা কর্মজীবনে আরও উন্নতি করার জন্য তারা তাদের মূল শক্তিকে ব্যবহার করে। তাদের জীবনযাপনের ধরন দেখায় যে, তারা নিজেদের নিয়ে ও সেইসঙ্গে বস্তুগত বিষয় এবং আমোদপ্রমোদ নিয়ে ব্যস্ত। তারা ঈশ্বরকে দ্বিতীয় স্থানে রাখে, যদি আদৌ তারা তাঁকে বিশ্বাস করে থাকে।—মথি ৬:৩১, ৩২.
৩. (ক) যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন ধরনের ধনের বিষয়ে চেষ্টা করার জন্য উৎসাহিত করেছিলেন এবং কেন? (খ) বস্তুগত বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করার দরকার নেই কেন?
৩ কিন্তু, যীশু তাঁর শিষ্যদের এই পরামর্শ দিয়েছিলেন: “তোমরা পৃথিবীতে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় করিও না” কারণ এই ধনসম্পদগুলোর কোনোটাই চিরস্থায়ী নয়। “কিন্তু,” তিনি বলেছিলেন যিহোবাকে সেবা করার মাধ্যমে “স্বর্গে আপনাদের জন্য ধন সঞ্চয় কর।” যীশু তাঁর অনুসারীদের ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার প্রতি মনোযোগ দিয়ে ও শক্তিকে কাজে লাগিয়ে তাদের চোখকে “সরল” রাখার পরামর্শ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের বলেছিলেন, “তোমরা ঈশ্বর এবং ধন উভয়ের দাসত্ব করিতে পার না।” কিন্তু বস্তুগত চাহিদাগুলো যেমন খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থান সম্বন্ধে কী বলা যায়? যীশু পরামর্শ দিয়েছিলেন, “ভাবিত হইও না।” তিনি পাখিদের লক্ষ করতে বলেছিলেন, যাদের খাবার ঈশ্বর জুগিয়ে থাকেন। ফুলের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য যীশু তাঁর অনুসারীদের পরামর্শ দিয়েছিলেন, যেগুলোকে ঈশ্বর সুসজ্জিত করেন। যিহোবার বুদ্ধিমান মানব দাসেরা কি এগুলোর চেয়ে আরও বেশি মূল্যবান নয়? তাই যীশু বলেছিলেন, “কিন্তু তোমরা প্রথমে তাঁহার রাজ্য ও তাঁহার ধার্ম্মিকতার বিষয়ে চেষ্টা কর, তাহা হইলে ঐ সকল [প্রয়োজনীয়] দ্রব্যও তোমাদিগকে দেওয়া হইবে।” (মথি ৬:১৯-৩৪) আপনার কাজ কি দেখায় যে আপনি তা বিশ্বাস করেন?
রাজ্যের সত্যকে চাপা পড়ে যেতে দেবেন না
৪. একজন ব্যক্তি যদি বস্তুগত বিষয়গুলোকে অতিরিক্ত গুরুত্ব দেন, তা হলে এর ফল কী হতে পারে?
৪ নিজের ও পরিবারের বস্তুগত চাহিদাগুলো পূরণ করার জন্য যথেষ্ট আছে কি না, সেই সম্বন্ধে চিন্তা করা উপযুক্ত। কিন্তু, একজন ব্যক্তি যদি বস্তুগত বিষয় নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করেন, তা হলে এর ফল খারাপ হতে পারে। এমনকি রাজ্য সম্বন্ধে বিশ্বাস করেন বলে দাবি করলেও, তিনি যদি মনে মনে অন্য বিষয়গুলোকে প্রথমে রাখেন, তা হলে রাজ্যের সত্য চাপা পড়ে যাবে। (মথি ১৩:১৮-২২) যেমন, একসময় একজন ধনী যুবক শাসক এসে যীশুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন: “অনন্ত জীবনের অধিকারী হইবার জন্য আমি কি করিব?” তিনি নৈতিক দিক দিয়ে শুদ্ধ জীবনযাপন করতেন এবং অন্যদের সঙ্গেও ভাল ব্যবহার করতেন কিন্তু নিজের ধনসম্পদের প্রতি তিনি অতিরিক্ত অনুরক্ত ছিলেন। খ্রীষ্টের একজন অনুসারী হওয়ার জন্য তিনি তার ধনসম্পদকে ছাড়তে পারেননি। ফলে তিনি স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রীষ্টের সঙ্গে থাকার সুযোগকে হাতছাড়া হতে দিয়েছিলেন। যীশু সেই সময় বলেছিলেন: “যাহাদের ধন আছে, তাহাদের পক্ষে ঈশ্বরের রাজ্যে প্রবেশ করা কেমন দুষ্কর!”—মার্ক ১০:১৭-২৩.
৫. (ক) তীমথিয়কে পৌল কোন বিষয়গুলো নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে বলেছিলেন এবং কেন? (খ) শয়তান কীভাবে ‘ধনাসক্তিকে’ ধ্বংসাত্মক ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করে?
৫ বেশ কিছু বছর পর প্রেরিত পৌল, তীমথিয়কে চিঠি লিখেছিলেন, যিনি সেই সময় এক সমৃদ্ধশালী বাণিজ্যিক শহর ইফিষে থাকতেন। পৌল তাকে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন: “আমরা জগতে কিছুই সঙ্গে আনি নাই, কিছুই সঙ্গে করিয়া লইয়া যাইতেও পারি না; কিন্তু গ্রাসাচ্ছাদন পাইলে আমরা তাহাতেই সন্তুষ্ট থাকিব।” নিজের এবং পরিবারের ‘গ্রাসাচ্ছাদনের’ জন্য কাজ করা উপযুক্ত। কিন্তু পৌল সাবধান করেছিলেন: “যাহারা ধনী হইতে বাসনা করে, তাহারা পরীক্ষাতে ও ফাঁদে এবং নানাবিধ মূঢ় ও হানিকর অভিলাষে পতিত হয়, সে সকল মনুষ্যদিগকে সংহারে ও বিনাশে মগ্ন করে।” শয়তান খুবই ধূর্ত। প্রথমে হয়তো সে একজন ব্যক্তিকে ছোট ছোট বিষয়ে প্রলোভন দেখাতে পারে। এরপর সে বড় চাপ নিয়ে আসতে পারে, হয়তো চাকরিতে পদোন্নতির বা আরও ভাল একটা চাকরি পাওয়ার সুযোগ দিতে পারে, যেটাতে বেশি বেতন পাওয়া যাবে ঠিকই কিন্তু আগে আধ্যাত্মিক বিষয়গুলোর জন্য যে-সময় আলাদা করে রাখা ছিল, তা হয়তো রাখা আর সম্ভবপর হবে না। আমরা যদি সাবধান না থাকি, তা হলে “ধনাসক্তি” এর চেয়ে আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যের বিষয়গুলোকে চাপা দিতে পারে। পৌল এটাকে এভাবে বলেছিলেন: “তাহাতে রত হওয়াতে কতক লোক বিশ্বাস হইতে বিপথগামী হইয়াছে, এবং অনেক যাতনারূপ কন্টকে আপনারা আপনাদিগকে বিদ্ধ করিয়াছে।”—১ তীমথিয় ৬:৭-১০.
৬. (ক) বস্তুবাদিতার ফাঁদে পড়া এড়ানোর জন্য আমাদের কী করতে হবে? (খ) আজকে জগতের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতেও আমরা কোন আস্থা রাখতে পারি?
৬ পৌল তার খ্রীষ্টান ভাইয়ের প্রতি সত্যিকারের প্রেম দেখিয়ে তীমথিয়কে পরামর্শ দিয়েছিলেন: “এই সকল হইতে পলায়ন কর” এবং “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর।” (১ তীমথিয় ৬:১১, ১২) আমরা যদি আমাদের চারপাশের জগতের বস্তুবাদী জীবনধারায় গা ভাসিয়ে দেওয়া এড়াতে চাই, তা হলে প্রাণপণ চেষ্টা করা দরকার। তবে আমরা যদি আমাদের বিশ্বাসের সঙ্গে মিল রেখে চেষ্টা করি, তা হলে যিহোবা আমাদের কখনও ছেড়ে দেবেন না। জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়া এবং সব জায়গায় চাকরির অভাব থাকা সত্ত্বেও, আমাদের সত্যিই যা দরকার তা পাওয়ার ব্যবস্থা তিনি করবেন। পৌল লিখেছিলেন: “তোমাদের আচার ব্যবহার ধনাসক্তিবিহীন হউক; তোমাদের যাহা আছে, তাহাতে সন্তুষ্ট থাক; কারণ [ঈশ্বর] বলিয়াছেন, ‘আমি কোন ক্রমে তোমাকে ছাড়িব না, ও কোন ক্রমে তোমাকে ত্যাগ করিব না।’ অতএব আমরা সাহসপূর্ব্বক বলিতে পারি, ‘প্রভু [“যিহোবা,” NW] আমার সহায়, আমি ভয় করিব না; মনুষ্য আমার কি করিবে?’” (ইব্রীয় ১৩:৫, ৬) আর রাজা দায়ূদ লিখেছিলেন: “আমি যুবক ছিলাম, এখন বৃদ্ধ হইয়াছি, কিন্তু ধার্ম্মিককে পরিত্যক্ত দেখি নাই, তাহার বংশকে খাদ্য ভিক্ষা করিতে দেখি নাই।”—গীতসংহিতা ৩৭:২৫.
প্রাথমিক শিষ্যরা উদাহরণ স্থাপন করে
৭. প্রচার সম্বন্ধে যীশু তাঁর শিষ্যদের কোন নির্দেশনা দিয়েছিলেন এবং কেন এগুলো উপযুক্ত ছিল?
৭ যীশু তাঁর প্রেরিতদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর, তাদের তিনি সুসমাচার প্রচার ও এই ঘোষণা করার জন্য ইস্রায়েলে পাঠিয়েছিলেন যে, “স্বর্গ-রাজ্য সন্নিকট হইল।” এটা কতই না রোমাঞ্চকর বার্তা ছিল! মশীহ রাজা, যীশু খ্রীষ্ট, তাদের মাঝে ছিলেন। প্রেরিতরা যেহেতু ঈশ্বরের সেবা করার জন্য নিজেদের উৎসর্গ করেছিল, তাই যীশু তাদের এই আস্থা রাখতে পরামর্শ দিয়েছিলেন যে ঈশ্বর তাদের যত্ন নেবেন। তাই তিনি বলেছিলেন: “পথের জন্য কিছুই লইও না, যষ্টিও না, ঝুলিও না, খাদ্যও না, টাকাও না; দুই দুইটা আঙ্রাখাও লইও না। আর তোমরা যে কোন বাটীতে প্রবেশ কর, তথায় থাকিও, এবং তথা হইতে প্রস্থান করিও।” (মথি ১০:৫-১০; লূক ৯:১-৬) যিহোবা খেয়াল রাখবেন যেন সহ ইস্রায়েলীয়রা তাদের চাহিদাগুলো পূরণ করে কারণ অপরিচিত লোকেদের আতিথেয়তা দেখানো তাদের রীতি ছিল।
৮. (ক) যীশু তাঁর মৃত্যুর কিছুদিন আগে কেন প্রচার সম্বন্ধে নতুন করে নির্দেশনা দিয়েছিলেন? (খ) তখনও যীশুর শিষ্যদের জীবনে কোন বিষয়টা প্রথমে থাকবে?
৮ পরে, যীশু তাঁর মৃত্যুর ঠিক আগে প্রেরিতদের সাবধান করেছিলেন যে, ভবিষ্যতে তারা অন্যরকম পরিস্থিতিতে কাজ করবে। তাদের কাজের প্রতি সরকারি বিরোধিতার ফলে, ইস্রায়েলে হয়তো তাদের প্রতি সহজেই আতিথেয়তা না-ও দেখাতে পারে। এ ছাড়াও, খুব শীঘ্রই তারা পরজাতীয়দের দেশে রাজ্যের বার্তা নিয়ে যাবে। সেই সময় তাদের “থলি” ও খাবারের “ঝুলি” নিতে হবে। তাসত্ত্বেও, যিহোবার রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে তাদের প্রথমে চেষ্টা করতে হবে, এই আস্থা রাখতে হবে যে প্রয়োজনীয় খাবার ও আচ্ছাদন পাওয়ার জন্য তাদের চেষ্টায় ঈশ্বর আশীর্বাদ করবেন।—লূক ২২:৩৫-৩৭.
৯. পৌল তার শারীরিক চাহিদাগুলো মেটানোর পরও কীভাবে রাজ্যকে জীবনে প্রথমে রেখেছিলেন এবং এই বিষয়ে তিনি কোন পরামর্শ দিয়েছিলেন?
৯ যীশুর পরামর্শ কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে প্রেরিত পৌল উত্তম উদাহরণ ছিলেন। পৌল পরিচর্যাকে ঘিরে তার জীবন গড়ে তুলেছিলেন। (প্রেরিত ২০:২৪, ২৫) তিনি যখন একটা এলাকায় প্রচার করতে যেতেন, তখন তিনি তার নিজের বস্তুগত চাহিদাগুলো নিজেই মেটাতেন, এমনকি তিনি তাঁবু বানানোর কাজ করতেন। অন্যেরা তার দেখাশোনা করবে বলে তিনি আশা করেননি। (প্রেরিত ১৮:১-৪; ১ থিষলনীকীয় ২:৯) তবে, অন্যেরা যখন আতিথেয়তা দেখিয়ে ও উপহার দিয়ে তাদের প্রেম দেখিয়েছিল, তখন তিনি তা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে গ্রহণ করেছিলেন। (প্রেরিত ১৬:১৫, ৩৪; ফিলিপীয় ৪:১৫-১৭) প্রচার করার জন্য পারিবারিক দায়িত্বগুলোকে উপেক্ষা করতে নয় বরং বিভিন্ন দায়িত্বগুলোর মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখতে পৌল খ্রীষ্টানদের উৎসাহ দিয়েছিলেন। তিনি তাদের কাজ করতে, তাদের পরিবারকে ভালবাসতে ও অন্যদের সঙ্গে সহভাগিতা করে নিতে পরামর্শ দিয়েছিলেন। (ইফিষীয় ৪:২৮; ২ থিষলনীকীয় ৩:৭-১২) তিনি তাদের ধনসম্পদের ওপর নয় কিন্তু ঈশ্বরের ওপর আস্থা রাখতে এবং তাদের জীবনকে এমনভাবে ব্যবহার করতে পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা দেখাবে যে আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো কী, তা সত্যিই তারা বুঝতে পেরেছে। যীশুর শিক্ষাগুলোর সঙ্গে মিল রেখে, তার মানে ছিল ঈশ্বরের রাজ্য ও তাঁর ধার্মিকতার বিষয়ে প্রথমে চেষ্টা করা।—ফিলিপীয় ১:৯-১১.
রাজ্যকে আপনার জীবনে প্রথমে রাখুন
১০. প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করার মানে কী?
১০ ব্যক্তিগতভাবে আমরা রাজ্যের সুসমাচার সম্বন্ধে অন্যদের কাছে কতখানি বলি? তা কিছুটা আমাদের পরিস্থিতি এবং উপলব্ধিবোধের গভীরতার ওপর নির্ভর করে। মনে রাখবেন যে যীশু বলেননি, ‘যখন তোমার করার কিছুই থাকবে না, তখন রাজ্যের চেষ্টা কর।’ রাজ্যের গুরুত্ব জানার ফলে তিনি তাঁর পিতার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন এই বলে: “তাঁহার রাজ্যের বিষয়ে সচেষ্ট হও।” (লূক ১২:৩১) যদিও নিজেদের ও পরিবারের চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য আমাদের মধ্যে বেশির ভাগকেই চাকরি করতে হয় কিন্তু আমাদের যদি বিশ্বাস থাকে, তা হলে ঈশ্বর যে রাজ্যের কাজ দিয়েছেন সেটাই আমাদের জীবনের মূল বিষয় হবে। একই সময়ে, আমরা আমাদের পারিবারিক দায়িত্বগুলোও পালন করব।—১ তীমথিয় ৫:৮.
১১. (ক) রাজ্যের বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ সবাই যে একই পরিমাণে করতে পারবে না, তা যীশু কীভাবে দেখিয়েছিলেন? (খ) একজন কতখানি করতে পারবে, তা কোন বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করে?
১১ আমাদের মধ্যে কেউ কেউ অন্যদের চেয়ে রাজ্যের সুসমাচার প্রচারে বেশি সময় দিতে পারি। কিন্তু বিভিন্ন রকমের ভূমির দৃষ্টান্তে যীশু দেখিয়েছিলেন যে, যাদের হৃদয় উত্তম ভূমির মতো তারা সবাই ফল উৎপন্ন করবে। কতখানি? একেক জনের পরিস্থিতি একেক রকম। বয়স, স্বাস্থ্য ও পারিবারিক দায়িত্বগুলো হল কয়েকটা কারণ। কিন্তু যেখানে আন্তরিক উপলব্ধিবোধ আছে, সেখানে অনেক কিছু সম্পাদিত হতে পারে।—মথি ১৩:২৩.
১২. যুবক-যুবতীদের কোন গঠনমূলক আধ্যাত্মিক লক্ষ্যের কথা ভেবে দেখার জন্য বিশেষভাবে উৎসাহ দেওয়া হয়?
১২ লক্ষ্য থাকা ভাল, যা আমাদের রাজ্যের পরিচর্যায় আরও বেশি করে অংশ নিতে সাহায্য করবে। যুবক-যুবতীদের, উদ্যোগী খ্রীষ্টান যুবক তীমথিয়ের চমৎকার উদাহরণের কথা গুরুত্বের সঙ্গে চিন্তা করা উচিত। (ফিলিপীয় ২:১৯-২২) পড়াশোনা শেষ করার পর পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা শুরু করার চেয়ে তাদের জন্য ভাল আর কী হতে পারে? বয়স্করাও গঠনমূলক আধ্যাত্মিক লক্ষ্যগুলো স্থাপন করে উপকার পাবে।
১৩. (ক) রাজ্যের সেবায় ব্যক্তিগতভাবে আমরা কতখানি করতে পারি, তা কে ঠিক করে? (খ) আমরা যদি সত্যি সত্যি প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করি, তা হলে আমরা কী প্রমাণ করি?
১৩ অন্যেরা আরও বেশি করতে পারে তা ভেবে তাদের সমালোচনা না করে, আমাদের ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য কাজ করতে বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হওয়া উচিত, যাতে করে আমরা আমাদের নিজেদের পরিস্থিতি যতটা সুযোগ দেয় তার পুরোটা ঈশ্বরের সেবায় কাজে লাগাতে পারি। (রোমীয় ১৪:১০-১২; গালাতীয় ৬:৪, ৫) ইয়োবের বেলায় যেমন হয়েছিল, তেমনই শয়তান তর্ক করে যে ধনসম্পত্তি, আরাম-আয়েশ এবং আমাদের নিজেদের স্বাস্থ্যই হল আমাদের প্রধান আগ্রহের বিষয় আর ঈশ্বরের সেবা করায় আমাদের স্বার্থপর উদ্দেশ্য রয়েছে। কিন্তু আমরা যদি সত্যি সত্যি প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা করি, তা হলে দিয়াবলকে সম্পূর্ণ মিথ্যাবাদী প্রমাণ করায় আমরাও অংশ নিচ্ছি। আমরা প্রমাণ করছি যে, ঈশ্বরের সেবাই আমাদের জীবনের প্রধান বিষয়। কথায় ও কাজে, আমরা এভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের গভীর প্রেম, তাঁর সার্বভৌমত্বের প্রতি আমাদের বিশ্বস্ত সমর্থন ও সহ মানবদের প্রতি আমাদের ভালবাসার প্রমাণ দিই।—ইয়োব ১:৯-১১; ২:৪, ৫; হিতোপদেশ ২৭:১১.
১৪. (ক) ক্ষেত্রের পরিচর্যার জন্য একটা তালিকা থাকা কেন উপকারী? (খ) অনেক সাক্ষিরা ক্ষেত্রের পরিচর্যায় কতখানি অংশ নিচ্ছে?
১৪ আমরা যতখানি করতে পারি, একটা তালিকা আমাদের এর চেয়ে আরও বেশি করার জন্য সাহায্য করতে পারে। তাঁর উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ করার জন্য যিহোবার নিজের ‘নিরূপিত সময়’ রয়েছে। (যাত্রাপুস্তক ৯:৫; মার্ক ১:১৫) যদি সম্ভব হয়, তা হলে প্রতি সপ্তাহে একবার অথবা এরও বেশি নির্ধারিত সময়ে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় অংশ নেওয়া ভাল। সারা পৃথিবীতে লক্ষ লক্ষ যিহোবার সাক্ষি সহায়ক অগ্রগামী হিসেবে নাম লিখিয়েছে, দিনে প্রায় দুঘন্টা সুসমাচার প্রচার করছে। অন্যান্য লক্ষ লক্ষ ব্যক্তি নিয়মিত অগ্রগামী হিসেবে সেবা করে, রাজ্যের বার্তা ঘোষণা করার জন্য দিনে প্রায় আড়াই ঘন্টা ব্যয় করছে। বিশেষ অগ্রগামী ও মিশনারিরা রাজ্যের কাজে আরও বেশি সময় দেয়। এ ছাড়াও, যারা শুনবে তাদের কাছে আমরা যেকোনো সময়ে রাজ্যের আশা জানানোর জন্য সুযোগ খুঁজতে পারি। (যোহন ৪:৭-১৫) আমাদের পরিস্থিতি অনুযায়ী সেই কাজে আমাদের পুরোপুরি অংশ নিতে চাওয়া উচিত কারণ যীশু বলেছিলেন: “সর্ব্ব জাতির কাছে সাক্ষ্য দিবার নিমিত্ত রাজ্যের এই সুসমাচার সমুদয় জগতে প্রচার করা যাইবে; আর তখন শেষ উপস্থিত হইবে।”—মথি ২৪:১৪; ইফিষীয় ৫:১৫-১৭.
১৫. আমাদের পরিচর্যার বিষয়ে, আপনার কেন মনে হয় যে ১ করিন্থীয় ১৫:৫৮ পদের পরামর্শ সময়োপযোগী?
১৫ পৃথিবীর সব জায়গায় যিহোবার সাক্ষিরা একতাবদ্ধভাবে পরিচর্যার এই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে, তা তারা যে-জাতিরই হোক না কেন। তারা অনুপ্রাণিত বাইবেলের পরামর্শ নিজেদের ক্ষেত্রে কাজে লাগায়: “সুস্থির হও, নিশ্চল হও, প্রভুর কার্য্যে সর্ব্বদা উপচিয়া পড়, কেননা তোমরা জান যে, প্রভুতে তোমাদের পরিশ্রম নিষ্ফল নয়।”—১ করিন্থীয় ১৫:৫৮.
পুনরালোচনা
• যীশু যখন ‘প্রথমে রাজ্যের বিষয়ে চেষ্টা’ করে চল বলেছিলেন, তখন কোন বিষয়গুলো দ্বিতীয় স্থানে রাখা উচিত বলে তিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন?
• নিজেদের ও আমাদের পরিবারের শারীরিক চাহিদাগুলো মেটানোর বিষয়ে আমাদের কীরকম দৃষ্টিভঙ্গি থাকা উচিত? ঈশ্বর আমাদের কোন সাহায্য দেবেন?
• রাজ্যের সেবার কোন কোন ক্ষেত্রে আমরা অংশ নিতে পারি?
[১০৭ পৃষ্ঠার চিত্র]
আজকে, যিহোবার সাক্ষিরা শেষ আসার আগে প্রতিটা জায়গায় সুসমাচার প্রচার করছে