অনন্ত জীবনের একমাত্র পথ
“আমিই পথ ও সত্য ও জীবন।”—যোহন ১৪:৬.
১, ২. যীশু অনন্ত জীবনের পথকে কিসের সঙ্গে তুলনা করেছিলেন আর তাঁর এই দৃষ্টান্তের অর্থ কী?
যীশু তাঁর বিখ্যাত পার্বত্য উপদেশে, অনন্ত জীবনে যাওয়ার পথকে এমন এক পথের সঙ্গে তুলনা করেন যেখানে একজন ব্যক্তিকে একটা দরজার মধ্যে দিয়ে ঢুকতে হবে। লক্ষ্য করুন যীশু জোর দিয়ে বলেছিলেন যে জীবনে যাওয়ার এই পথ সহজ নয়, তিনি বলেন: “সঙ্কীর্ণ দ্বার দিয়া প্রবেশ কর, কেননা সর্ব্বনাশে যাইবার দ্বার প্রশস্ত ও পথ পরিসর, এবং অনেকেই তাহা দিয়া প্রবেশ করে; কেননা [অনন্ত জীবনে] যাইবার দ্বার সঙ্কীর্ণ ও পথ দুর্গম, এবং অল্প লোকেই তাহা পায়।”—মথি ৭:১৩, ১৪.
২ আপনি কি এই দৃষ্টান্তের অর্থ বুঝতে পেরেছেন? এই কথাটা কি বোঝায় না যে জীবনে যাওয়ার জন্য রাস্তা বা পথ শুধু একটাই আর সেখান থেকে সরে না পড়ার জন্য আমাদের খুবই সাবধান হওয়া দরকার? তাহলে, অনন্ত জীবনে যাওয়ার সেই একমাত্র পথ কোন্টা?
যীশু খ্রীষ্টের ভূমিকা
৩, ৪. (ক) বাইবেল কীভাবে দেখায় যে আমাদের পরিত্রাণে যীশুর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে? (খ) ঈশ্বর প্রথম কখন জানিয়েছিলেন যে মানবজাতি অনন্ত জীবন পেতে পারে?
৩ এটা স্পষ্ট যে জীবনের এই পথে যীশুর এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে, যেমন প্রেরিত পিতর বলেছিলেন: “অন্য কাহারও কাছে পরিত্রাণ নাই; কেননা আকাশের নীচে [যীশু ছাড়া] মনুষ্যদের মধ্যে দত্ত এমন আর কোন নাম নাই, যে নামে আমাদিগকে পরিত্রাণ পাইতে হইবে।” (প্রেরিত ৪:১২) একইভাবে, প্রেরিত পৌল বলেছিলেন: “ঈশ্বরের অনুগ্রহ-দান আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টেতে অনন্ত জীবন।” (রোমীয় ৬:২৩) যীশু নিজে বলেছিলেন যে অনন্ত জীবনে যাওয়ার একমাত্র পথ হলেন তিনি, কারণ তিনি ঘোষণা করেছিলেন: “আমিই পথ ও সত্য ও জীবন।”—যোহন ১৪:৬.
৪ অতএব, অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য যীশুর ভূমিকাকে স্বীকার করা আমাদের জন্য খুবই জরুরি বিষয়। তাই আসুন, আমরা তাঁর ভূমিকাকে আরও কাছ থেকে পরীক্ষা করি। আপনি কি জানেন, আদম পাপ করার পর প্রথম কখন যিহোবা ঈশ্বর জানিয়েছিলেন যে মানবজাতি অনন্ত জীবন পেতে পারে? আদম পাপ করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তা জানিয়েছিলেন। তাহলে আসুন এবার আমরা পরীক্ষা করে দেখি যে মানবজাতির পরিত্রাতা হিসেবে যীশু খ্রীষ্টকে দেওয়ার কথা প্রথমবার কীভাবে বলা হয়েছিল।
প্রতিজ্ঞাত বংশ
৫. আমরা সেই সর্পকে কীভাবে চিনতে পারি যে হবাকে প্রলুব্ধ করেছিল?
৫ যিহোবা ঈশ্বর এই প্রতিজ্ঞাত পরিত্রাতাকে চেনাবার জন্য রূপক ভাষা ব্যবহার করেছিলেন। তিনি সেই সময়ে পরিত্রাতাকে চিনিয়ে দিয়েছিলেন যখন তিনি ‘সর্পকে’ দণ্ড শুনিয়েছিলেন যে হবার সঙ্গে কথা বলেছিল আর নিষিদ্ধ গাছের ফল খেয়ে ঈশ্বরের অবাধ্য হওয়ার জন্য তাকে প্রলুব্ধ করেছিল। (আদিপুস্তক ৩:১-৫) অবশ্যই এই সর্প আক্ষরিক কোন সাপ ছিল না। সে ছিল এক শক্তিশালী আত্মিক প্রাণী যাকে বাইবেলে “আদি সর্প” বলা হয়েছে, “যাহাকে দিয়াবল [অপবাদক] এবং শয়তান [বিপক্ষ] বলা যায়।” (প্রকাশিত বাক্য ১২:৯) হবাকে প্রলুব্ধ করার জন্য শয়তান এই নিম্নশ্রেণীর প্রাণীর মধ্যে দিয়ে কথা বলেছিল। তাই, শয়তানকে দণ্ড শুনানোর সময় ঈশ্বর তাকে বলেছিলেন: আমি তোমাতে ও নারীতে, এবং তোমার বংশে ও তাহার বংশে পরস্পর শত্রুতা জন্মাইব; সে [নারীর বংশ] তোমার মস্তক চূর্ণ করিবে, এবং তুমি তাহার পাদমূল চূর্ণ করিবে।”—আদিপুস্তক ৩:১৫.
৬, ৭. (ক) সেই নারী কে যিনি ‘বংশ’ এর জন্ম দেন? (খ) প্রতিজ্ঞাত বংশ কে আর তিনি কী কাজ করেন?
৬ এই ‘নারী’ কে যার সঙ্গে শয়তানের শত্রুতা অথবা ঘৃণা রয়েছে? প্রকাশিত বাক্য ১২ অধ্যায়ে “আদি সর্প”-কে চিনিয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নারীকেও চিনিয়ে দেওয়া হয়েছে যাকে শয়তান ঘৃণা করে। দেখুন ১ পদ তার জন্য বলে যে “সূর্য্য তাহার পরিচ্ছদ, ও চন্দ্র তাহার পদের নীচে, এবং তাহার মস্তকের উপরে দ্বাদশ তারার এক মুকুট।” এই নারী ঈশ্বরের বিশ্বস্ত দূতেদের স্বর্গীয় সংগঠনকে বোঝায় আর তিনি যে “পুত্ত্রসন্তান” প্রসব করেন তা শাসনকারী রাজা যীশু খ্রীষ্ট সহ ঈশ্বরের রাজ্যকে বোঝায়।—প্রকাশিত বাক্য ১২:১-৫.
৭ তাহলে, আদিপুস্তক ৩:১৫ পদে বলা এই নারীর ‘বংশ’ অথবা সন্তান কে যিনি শয়তানের “মস্তক” চূর্ণ করে তাকে চিরতরে ধ্বংস করবেন? সেই ব্যক্তি হলেন মনুষ্য যীশু, যাঁকে ঈশ্বর কুমারী গর্ভে অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়ার জন্য স্বর্গ থেকে পাঠিয়েছিলেন। (মথি ১:১৮-২৩; যোহন ৬:৩৮) প্রকাশিত বাক্যের ১২ অধ্যায় বলে যে পুনরুত্থিত স্বর্গীয় শাসক হিসেবে এই বংশ, যীশু খ্রীষ্ট, শয়তানকে ধ্বংস করার যুদ্ধে নেতৃত্ব নেবেন আর প্রকাশিত বাক্য ১২:১০ পদ যেমন বলে “রাজত্ব আমাদের ঈশ্বরের, এবং কর্ত্তৃত্ব তাঁহার খ্রীষ্টের অধিকার”-এ ফিরিয়ে আনবেন।
৮. (ক) ঈশ্বর তাঁর আদি উদ্দেশ্য পূর্ণ করার জন্য কোন্ নতুন ব্যবস্থা করেছিলেন? (খ) কারা ঈশ্বরের নতুন সরকারে শাসন করবেন?
৮ যীশু খ্রীষ্টের হাতে এই রাজ্য এক নতুন ব্যবস্থা আর ঈশ্বর এই ব্যবস্থা এইজন্য করেছেন যাতে করে মানুষদের জন্য, পৃথিবীতে অনন্ত জীবন ভোগ করার বিষয়ে তাঁর আদি উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়। শয়তান বিদ্রোহ করার পর, যিহোবা তখনই দুষ্টতাকে শেষ করার জন্য এই নতুন রাজ্য সরকারের ব্যবস্থা করেছিলেন। পৃথিবীতে থাকার সময় যীশু বলেছিলেন যে এই রাজ্য শাসনব্যবস্থায় তিনি একা রাজত্ব করবেন না। (লূক ২২:২৮-৩০) রাজ্য শাসনে অংশ নেওয়ার জন্য মানবজাতির মধ্যে থেকে অন্যদের বেছে নেওয়া হবে আর তারা স্বর্গে যীশুর সঙ্গে রাজত্ব করবেন আর এইভাবে তারা নারীর বংশের এক গৌণ অংশ গঠন করবেন। (গালাতীয় ৩:১৬, ২৯) যীশুর এই সহশাসকদের পৃথিবীর পাপী মানবজাতির মধ্যে থেকে নেওয়া হয়েছে আর বাইবেল বলে যে তাদের সংখ্যা হল ১,৪৪,০০০.—প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৩.
৯. (ক) যীশুর কেন মানুষ হিসেবে পৃথিবীতে আসার দরকার ছিল? (খ) কীভাবে যীশু দিয়াবলের কাজকে ব্যর্থ করে দিয়েছিলেন?
৯ কিন্তু, রাজ্য শাসন শুরু করার আগে বংশের প্রধান অংশ, যীশু খ্রীষ্টের পৃথিবীতে আসা দরকার ছিল। কেন? কারণ ঈশ্বরই তাঁকে নিয়োগ করছিলেন “যেন দিয়াবলের কার্য্য সকল লোপ [অর্থাৎ, ব্যর্থ] করেন।” (১ যোহন ৩:৮) শয়তানের কাজের মধ্যে এটাও একটা ছিল যে সে আদমকে পাপ করার জন্য প্ররোচিত করেছিল আর যার জন্য আদমের সমস্ত সন্তানদের পাপ ও মৃত্যুর দণ্ড দেওয়া হয়েছিল। (রোমীয় ৫:১২) যীশু তাঁর জীবন মুক্তির মূল্য হিসেবে দিয়ে দিয়াবলের এই কাজকে ব্যর্থ করেছিলেন। এভাবে তিনি পাপ ও মৃত্যু থেকে মানবজাতিকে মুক্ত করতে ও তাদের অনন্ত জীবনের পথ খুলে দিতে এক ভিত্তি যুগিয়েছিলেন।—মথি ২০:২৮; রোমীয় ৩:২৪; ইফিষীয় ১:৭.
মুক্তির মূল্য কোন্ কাজ করে
১০. আদম ও যীশু কীভাবে একইরকম ছিলেন?
১০ যীশুর জীবন স্বর্গ থেকে একজন নারীর গর্ভে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল আর তাই তিনি একজন সিদ্ধ মানুষ হিসাবে জন্ম নিয়েছিলেন আর তাই তাঁর মধ্যে পাপ ছিল না। চিরকাল পৃথিবীতে বেঁচে থাকার ক্ষমতা তাঁর ছিল। একইভাবে, আদমকেও পৃথিবীতে অনন্ত কাল বেঁচে থেকে জীবন উপভোগ করার জন্য এক সিদ্ধ মানুষ হিসেবে সৃষ্টি করা হয়েছিল। আদম আর যীশুর মধ্যে এই মিলের কথাই প্রেরিত পৌলের মনে ছিল যখন তিনি লিখেছিলেন: “প্রথম ‘মনুষ্য’ আদম ‘সজীব প্রাণী হইল’ শেষ আদম [যীশু খ্রীষ্ট] জীবনদায়ক আত্মা হইলেন। প্রথম মনুষ্য মৃত্তিকা হইতে, মৃন্ময়, দ্বিতীয় মনুষ্য স্বর্গ হইতে।”—১ করিন্থীয় ১৫:৪৫, ৪৭.
১১. (ক) মানবজাতির জন্য আদম ও যীশু কী করেছিলেন? (খ) যীশুর বলিদানকে আমাদের কীভাবে দেখা উচিত?
১১ পৃথিবীতে আজ পর্যন্ত জন্ম নিয়েছেন এমন সব মানুষের মধ্যে শুধু আদম ও যীশুই সিদ্ধ ছিলেন। এই বিষয়টা বাইবেলের এই কথা থেকে আরও বেশি স্পষ্ট হয় যে, যীশু “সকলের নিমিত্ত [সমরূপ] মুক্তির মূল্যরূপে আপনাকে প্রদান করিয়াছেন।” (১ তীমথিয় ২:৬) যীশু কার সমরূপ ছিলেন? আদমের, যখন তিনি একজন সিদ্ধ মানুষ ছিলেন! প্রথম আদমের পাপ সমস্ত মানব পরিবারের জন্য মৃত্যু নিয়ে এসেছিল। ‘শেষ আদমের’ বলিদান, পাপ ও মৃত্যু থেকে মুক্তির পথ খুলে দেয় যাতে আমরা চিরকাল বেঁচে থাকতে পারি। যীশুর বলিদান কতই না অমূল্য! প্রেরিত পিতর লিখেছিলেন: “তোমরা ক্ষয়ণীয় বস্তু দ্বারা, রৌপ্য বা স্বর্ণ দ্বারা, মুক্ত হও নাই।” বরং তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন: “নির্দ্দোষ ও নিষ্কলঙ্ক মেষশাবকস্বরূপ খ্রীষ্টের বহুমূল্য রক্ত দ্বারা মুক্ত হইয়াছ।”—১ পিতর ১:১৮, ১৯.
১২. মৃত্যুর দায় থেকে মুক্ত হওয়ার বিষয়টা বাইবেল কীভাবে বলে?
১২ বাইবেল খুব সুন্দর করে বলে যে মানব পরিবারকে কীভাবে মৃত্যুর দায় থেকে মুক্ত করা হবে, বাইবেল বলে: “যেমন [আদমের] এক অপরাধ দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে দণ্ডাজ্ঞা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল, তেমনি ধার্ম্মিকতার একটী কার্য্য [যীশুর সমস্ত জীবন ধরে এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত বিশ্বস্ততা] দ্বারা সকল মনুষ্যের কাছে জীবনদায়ক ধার্ম্মিকগণনা পর্য্যন্ত ফল উপস্থিত হইল। কারণ যেমন সেই এক মনুষ্যের [আদমের] অনাজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে পাপী বলিয়া ধরা হইল, তেমনি সেই আর এক ব্যক্তির [যীশুর] অজ্ঞাবহতা দ্বারা অনেককে ধার্ম্মিক বলিয়া ধরা হইবে।”—রোমীয় ৫:১৮, ১৯.
এক চমৎকার আশা
১৩. কেন অনেকে চিরকাল বেঁচে থাকতে চান না?
১৩ আমাদের কতই না খুশি হওয়া উচিত যে ঈশ্বর আমাদের জন্য এইরকম ব্যবস্থা করেছেন! একজন পরিত্রাতার ব্যবস্থা করা হয়েছে জেনে আপনি কি রোমাঞ্চিত নন? আমেরিকার একটা বড় শহরের সংবাদপত্রের করা জরিপে যখন এই প্রশ্নটা জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে “চিরকাল বেঁচে থাকার বিষয়টা কি আপনাকে আকর্ষণ করে?” আপনি জেনে হয়ত আশ্চর্য হবেন যে শতকরা ৬৭.৪ ভাগ লোক উত্তরে বলেছিলেন, “না।” কেন তারা বলেছিলেন যে তারা চিরকাল বেঁচে থাকতে চান না? হয়ত এই জন্য যে আজকে জীবন সমস্যায় একেবারে ভরে গিয়েছে। একজন লোক বলেছিলেন: “২০০ বছর বেঁচে থাকার চিন্তাই আমাকে কষ্ট দেয়।”
১৪. চিরকাল বেঁচে থাকা কেন এক আনন্দের বিষয় হবে?
১৪ কিন্তু, বাইবেল বলে না যে লোকেরা অসুস্থতা, বার্ধক্য ও অন্য দুঃখকষ্টে ভরা এক জগতে চিরকাল বেঁচে থাকবে। এরকম হবে না, কারণ ঈশ্বরের রাজ্যের শাসক, যীশু শয়তানের নিয়ে আসা এইসমস্ত সমস্যা দূর করবেন। বাইবেল অনুসারে, ঈশ্বরের রাজ্য এই জগতের সমস্ত অত্যাচারী সরকারগুলোকে “চূর্ণ ও বিনষ্ট” করবে। (দানিয়েল ২:৪৪) তখন, যীশু তাঁর অনুগামীদের যে প্রার্থনা শিখিয়েছিলেন সেই মতো ঈশ্বরের “ইচ্ছা” যেমন “স্বর্গে তেমনি পৃথিবীতেও প্রতিষ্ঠিত হবে।” (মথি ৬:৯, ১০, আজকের ইংরাজি সংস্করণ) ঈশ্বরের নতুন জগতে, পৃথিবী সমস্ত মন্দতা থেকে পরিষ্কৃত হওয়ার পর লোকেরা যীশুর মুক্তির মূল্যের উপকারিতা পুরোপুরি পাবে। হ্যাঁ, মানুষরা নতুন পৃথিবীতে আবার নিখুঁত স্বাস্থ্য ফিরে পাবে!
১৫, ১৬. ঈশ্বরের নতুন জগতের অবস্থা কেমন হবে?
১৫ ঈশ্বরের নতুন জগতে বসবাসরত ব্যক্তিদের জন্য বাইবেলের এই কথাগুলো খাটবে: “তাহার মাংস বালকের অপেক্ষাও সতেজ হইবে, সে যৌবনকাল ফিরিয়া পাইবে।” (ইয়োব ৩৩:২৫) বাইবেলের আরেকটা প্রতিজ্ঞাও পূর্ণ হবে: “অন্ধদের চক্ষু খোলা যাইবে, আর বধিরদের কর্ণ মুক্ত হইবে। তৎকালে খঞ্জ হরিণের ন্যায় লম্ফ দিবে, ও গোঙ্গাদের জিহ্বা আনন্দগান করিবে; কেননা প্রান্তরে জল উৎসারিত হইবে, ও মরুভূমির নানা স্থানে প্রবাহ হইবে।”—যিশাইয় ৩৫:৫, ৬.
১৬ একবার ভেবে দেখুন: সেই সময় আমাদের বয়স ৮০, ৮০০ কিংবা তার চেয়েও বেশি হোক না কেন, আমাদের সুঠাম স্বাস্থ্য থাকবে। এটা একেবারে বাইবেলের এই প্রতিজ্ঞার মতো হবে: “নগরবাসী কেহ বলিবে না, আমি পীড়িত।” তখন এই প্রতিজ্ঞাও পূর্ণ হবে: “[ঈশ্বর] তাহাদের সমস্ত নেত্রজল মুছাইয়া দিবেন; এবং মৃত্যু আর হইবে না; শোক বা আর্ত্তনাদ বা ব্যথাও আর হইবে না; কারণ প্রথম বিষয় সকল লুপ্ত হইল।”—যিশাইয় ৩৩:২৪; প্রকাশিত বাক্য ২১:৩, ৪.
১৭. ঈশ্বরের নতুন জগতে আমরা কোন্ কোন্ কাজ করার আশা করতে পারি?
১৭ সেই নতুন জগতে, আমরা আমাদের বিস্ময়কর মস্তিষ্ককে এমনভাবে ব্যবহার করতে পারব যেমন আমাদের সৃষ্টিকর্তা চেয়েছিলেন আর যে জন্য তিনি এটাকে শেখার অসীম ক্ষমতা দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন। কেবল কল্পনা করুন যে সেইসময় আমরা কতই না চমৎকার কাজগুলো করতে পারব! এমনকি অসিদ্ধ মানুষেরাও পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদান দিয়ে নানারকম জিনিস বানিয়েছে যেমন, সেলুলার ফোন, মাইক্রোফোন, ঘড়ি, পেজার, কমপিউটার, উড়োজাহাজ ও আরও অনেক অনেক জিনিস। এগুলোর কোনটাই এই বিশ্বের বাইরে থেকে আনা কোন জিনিস দিয়ে বানানো হয়নি। নতুন পৃথিবীতে আমাদের জীবন কখনও শেষ হবে না তাই নতুন নতুন জিনিস বানানোর জন্য আমাদের ক্ষমতা কখনও শেষ হয়ে যাবে না!—যিশাইয় ৬৫:২১-২৫.
১৮. ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবন কেন কখনও একঘেয়ে হবে না?
১৮ জীবন কখনও একঘেয়ে হয়ে পড়বে না। আজও আমরা যদিও ইতিমধ্যেই কয়েক হাজার বার খাবার খেয়েছি, তবুও পরেরবারের খাবারের জন্য আমরা অধীর হয়ে অপেক্ষা করি। যখন আমরা সিদ্ধ হয়ে যাব, আমরা পৃথিবীর সুস্বাদু খাদ্যগুলো বেশি করে উপভোগ করতে পারব। (যিশাইয় ২৫:৬) আর আমরা পৃথিবীর নানা পশুপাখির দেখাশোনা করার ও মনোরম সূর্যাস্ত, পাহাড়, নদী আর উপত্যকাগুলোর সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করতেই থাকব। সত্যিই, ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবন কখনও একঘেয়ে হয়ে উঠবে না!—গীতসংহিতা ১৪৫:১৬.
ঈশ্বরের শর্ত পূরণ করা
১৯. ঈশ্বরের দান অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য তাঁর কিছু শর্ত রয়েছে তা বিশ্বাস করা কেন ঠিক?
১৯ আপনি কি মনে করেন যে কোন কিছু না করেই আপনি এইরকম এক পরমদেশে ঈশ্বরের অপূর্ব দান, এই অনন্ত জীবন পাবেন? এটা কি ঠিক নয় যে ঈশ্বর আমাদের কাছ থেকে কিছু চাইবেন? অবশ্যই তা ঠিক। আসলে, ঈশ্বর এমনি এমনিই আমাদেরকে এই উপহারগুলো একেবারে দিয়ে দেন না। তিনি আমাদের দিকে তা বাড়িয়ে ধরেন কিন্তু আমাদের হাত বাড়াতে হবে ও তা নিতে হবে। আর এজন্য চেষ্টার দরকার। সুতরাং, আপনি হয়ত এই প্রশ্নটা করবেন যে প্রশ্ন যীশুকে একজন যুবক শাসক করেছিলেন: “অনন্ত জীবন পাইবার জন্য আমি কিরূপ সৎকর্ম্ম করিব?” কিংবা আপনি হয়ত ফিলিপীয় কারারক্ষকের মতো এই প্রশ্ন করতে পারেন, যিনি প্রেরিত পৌলকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন: “পরিত্রাণ পাইবার জন্য আমাকে কি করিতে হইবে?”—মথি ১৯:১৬; প্রেরিত ১৬:৩০.
২০. অনন্ত জীবন পাওয়ার জন্য এক জরুরি শর্ত কী?
২০ যীশু তাঁর মৃত্যুর আগের রাতে তাঁর স্বর্গীয় পিতার কাছে প্রার্থনায় বলেছিলেন যে অনন্ত জীবন পেতে হলে আমাদের কী করতে হবে। তিনি বলেছিলেন: “ইহাই অনন্ত জীবন যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় ঈশ্বরকে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, যীশু খ্রীষ্টকে, জানিতে পায়।” (যোহন ১৭:৩) তাই এটা কি ঠিক নয় যে আমরা যিহোবার বিষয়ে জ্ঞান নিই যিনি আমাদের জন্য অনন্ত জীবন সম্ভবপর করেছেন আর যীশু খ্রীষ্টের সম্বন্ধেও, যিনি আমাদের জন্য মারা গিয়েছেন? কিন্তু, শুধু এই জ্ঞান নেওয়ায় সবকিছু নয়।
২১. আমরা কীভাবে দেখাই যে আমরা বিশ্বাস দেখানোর শর্ত পুরণ করছি?
২১ বাইবেল এও বলে: “যে কেহ পুত্ত্রে বিশ্বাস করে সে অনন্ত জীবন পাইয়াছে।” এটা আরও বলে: “যে কেহ পুত্ত্রকে অমান্য করে, সে জীবন দেখিতে পাইবে না, কিন্তু ঈশ্বরের ক্রোধ তাহার উপরে অবস্থিতি করে।” (যোহন ৩:৩৬) আপনি আপনার জীবনে পরিবর্তন এনে ও ঈশ্বরের ইচ্ছার সঙ্গে মিল রেখে কাজ করে দেখাতে পারেন যে আপনি পুত্রে বিশ্বাস দেখাচ্ছেন। আপনি যে অন্যায় কাজ করতেন তা করা আপনাকে ছেড়ে দিতে হবে আর ঈশ্বর যাতে খুশি হন সেইরকম কাজ করতে হবে। প্রেরিত পিতর যা করার আদেশ দিয়েছিলেন আপনার তা করা দরকার: “অতএব তোমরা মন ফিরাও, ও ফির, যেন তোমাদের পাপ মুছিয়া ফেলা হয়, যেন এইরূপে প্রভুর সম্মুখ হইতে তাপশান্তির সময় উপস্থিত হয়।”—প্রেরিত ৩:১৯.
২২. যীশুর পদচিহ্ন অনুযায়ী চলার সঙ্গে কী কী কাজ জড়িত?
২২ আমরা যেন কখনও ভুলে না যাই যে একমাত্র যীশুতে বিশ্বাস দেখানোর দ্বারাই আমরা অনন্ত জীবন পেতে পারি। (যোহন ৬:৪০; ১৪:৬) খুব কাছের থেকে ‘তাঁহার পদচিহ্নের অনুগমন করে’ আমরা দেখাই যে আমরা যীশুতে বিশ্বাস দেখাচ্ছি। (১ পিতর ২:২১) তা করার সঙ্গে কী জড়িত? যীশু ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনায় বলেছিলেন: “দেখ, আমি আসিয়াছি . . . হে ঈশ্বর, যেন তোমার ইচ্ছা পালন করি।” (ইব্রীয় ১০:৭) অতএব, যীশুর মতো ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্য তৈরি থাকা আর আপনার জীবন যিহোবার কাছে উৎসর্গ করা খুবই জরুরি। এরপর আপনার উৎসর্গীকরণকে সবার সামনে ঘোষণা করার জন্য জলে বাপ্তিস্ম নেওয়া দরকার; যীশুও বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন। (লূক ৩:২১, ২২) এইরকম পদক্ষেপ নেওয়া সম্পূর্ণভাবে ঠিক। প্রেরিত পৌল বলেছিলেন যে “খ্রীষ্টের প্রেম আমাদিগকে বশে রাখিয়া চালাইতেছে।” (২ করিন্থীয় ৫:১৪, ১৫) কীভাবে? আমাদেরকে প্রেম করার জন্যই যীশু তাঁর নিজের জীবন আমাদের জন্য দিয়েছেন। এই প্রেম কি আমাদেরকে তাঁর ওপর বিশ্বাস দেখানোর জন্য বাধ্য করে না? হ্যাঁ, এটা আমাদের বাধ্য করে আর তাই আমারা যীশুর পদচিহ্ন অনুযায়ী চলে অন্যদের সাহায্য করার জন্য নিজেকে দান করি। খ্রীষ্ট ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করার জন্যই বেঁচে ছিলেন; আমাদেরও এইরকম করা উচিত, আমাদের নিজেদের জন্য আর আমাদের বেঁচে থাকা উচিত নয়।
২৩. (ক) যারা জীবন লাভ করতে চান তাদের কিসের সঙ্গে সংযুক্ত হতে হবে? (খ) খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর লোকেদের কাছ থেকে কী আশা করা হয়?
২৩ কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বাইবেল বলে যে সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যখন ৩,০০০ জন বাপ্তিস্ম নিয়েছিলেন তখন তারা “সংযুক্ত হইল।” কিসের সঙ্গে তারা সংযুক্ত হয়েছিল? লূক ব্যাখ্যা করেন, “তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় ও সহভাগিতায় . . . নিবিষ্ট থাকিল।” (প্রেরিত ২:৪১, ৪২) হ্যাঁ, তারা বাইবেল অধ্যয়ন ও মেলামেশার জন্য মিলিত হতেন আর এভাবেই খ্রীষ্টীয় মণ্ডলীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছিলেন বা তার এক অংশ হয়ে উঠেছিলেন। প্রাথমিক খ্রীষ্টানেরা আধ্যাত্মিক বিষয়গুলো শিখবার জন্য নিয়মিত সভাগুলোতে যোগ দিতেন। (ইব্রীয় ১০:২৫) যিহোবার সাক্ষীরাও আজকে তা করেন আর তারা তাদের সঙ্গে এই সভাগুলোতে যোগ দেওয়ার জন্য আপনাকেও উৎসাহিত করছেন।
২৪. “প্রকৃতরূপে জীবন” কী আর কীভাবে ও কখন তা পৃথিবীতে ভোগ করা যাবে?
২৪ লক্ষ লক্ষ লোকেরা আজকে জীবনে যাওয়ার পথে চলছেন। এই দুর্গম পথে থাকার জন্য সত্যিই চেষ্টার দরকার! (মথি ৭:১৩, ১৪) পৌল এই কথাগুলো বলার জন্য অন্তর থেকে অনুরোধ করেছিলেন: “বিশ্বাসের উত্তম যুদ্ধে প্রাণপণ কর; অনন্ত জীবন ধরিয়া রাখ; তাহারই নিমিত্ত তুমি আহূত হইয়াছ।” “প্রকৃতরূপে জীবন, . . . ধরিয়া” রাখার জন্য এই যুদ্ধ করা দরকার। (১ তীমথিয় ৬:১২, ১৯) এই জীবন আজকের জীবন নয়, যা আদমের পাপের কারণে ব্যথা, বেদনা ও কষ্টে ভর্তি। বরং, এটা এই বিধিব্যাবস্থাকে শেষ করে আসা ঈশ্বরের নতুন জগতের জীবন যা খুব তাড়াতাড়িই এই পৃথিবীতে ভোগ করা যাবে যখন যারা ঈশ্বর ও তাঁর পুত্রকে ভালবাসেন তাদের সবাই খ্রীষ্টের মুক্তির মূল্যরূপ বলিদান থেকে উপকার পাবে। তাই আমরা সবাই যেন সেই জীবন—“প্রকৃতরূপে জীবন”—ঈশ্বরের গৌরবময় নতুন জগতে অনন্ত জীবন বেছে নিই।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
◻ আদিপুস্তক ৩:১৫ পদের সর্প কে, নারী কে ও বংশ কে?
◻ কীভাবে যীশু আদমের সমরূপ আর মুক্তির মূল্য কী সম্ভবপর করেছিল?
◻ ঈশ্বরের নতুন জগতে জীবনকে উপভোগ্য করে তোলার জন্য আপনি কোন্ বিষয়গুলোর কথা চিন্তা করতে পারেন?
◻ ঈশ্বরের নতুন জগতে বাস করার জন্য আমাদের কী করা দরকার?
[১০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যুবক-বৃদ্ধ সবার জন্য যীশুই হলেন অনন্ত জীবনের একমাত্র পথ
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
ঈশ্বরের নিরূপিত সময়ে বৃদ্ধেরা আবার যুবক হয়ে যাবেন