“ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের” দ্বারা উদ্দীপিত হওয়া
“আমাদের নিজ নিজ ভাষায় উহাদিগকে ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা বলিতে শুনিতেছি।” —প্রেরিত ২:১১.
১, ২. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে কোন্ বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল?
সাধারণ কাল ৩৩ সালের বসন্তকালের শেষ দিকে এক সকালে যিরূশালেমের একটা ঘরে একত্রিত হওয়া যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য, এক দল নারী-পুরুষের প্রতি এক বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছিল। “হঠাৎ আকাশ হইতে প্রচণ্ডবায়ুর বেগের শব্দবৎ একটা শব্দ আসিল, এবং যে গৃহে তাঁহারা বসিয়াছিলেন, সেই গৃহের সর্ব্বত্র ব্যাপ্ত হইল। আর . . . অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা তাঁহাদের দৃষ্টিগোচর হইল . . . তাহাতে তাঁহারা সকলে পবিত্র আত্মায় পরিপূর্ণ হইলেন, . . . এবং . . . অন্য অন্য ভাষায় কথা কহিতে লাগিলেন।”—প্রেরিত ২:২-৪, ১৫.
২ বাড়ির সামনে এক বিরাট জনতা একত্রিত হয়। তাদের মধ্যে ছিল প্রবাসী যিহুদিরা, “ভক্ত লোকেরা” যারা পঞ্চাশত্তমীর উৎসব উদ্যাপন করার জন্য যিরূশালেমে এসেছিলেন। তারা চমৎকৃত হয়ে গিয়েছিলেন কারণ তাদের প্রত্যেকে শুনেছিলেন যে, শিষ্যরা নিজ নিজ ভাষায় “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” বলছেন। যারা কথা বলছিলেন তারা সকলে যেহেতু গালীলীয় ছিলেন, তা হলে কীভাবে তা সম্ভব হয়েছিল?—প্রেরিত ২:৫-৮, ১১.
৩. পঞ্চাশত্তমীর দিনে একত্রিত হওয়া জনতাকে প্রেরিত পিতর কোন্ বার্তা জানিয়েছিলেন?
৩ সেই গালীলীয়দের মধ্যে একজন ছিলেন প্রেরিত পিতর। তিনি ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, কয়েক সপ্তা আগে যীশু খ্রীষ্টকে অধার্মিক লোকেরা হত্যা করেছিল। কিন্তু, ঈশ্বর তাঁর পুত্রকে মৃত্যু থেকে উঠিয়েছিলেন। এরপর, যীশু তাঁর অনেক শিষ্যদের কাছে দেখা দিয়েছিলেন, যার মধ্যে এখানে উপস্থিত পিতর ও অন্যান্যরা ছিলেন। মাত্র দশ দিন আগে যীশু স্বর্গে আরোহণ করেছিলেন। তিনিই তাঁর শিষ্যদের ওপর পবিত্র আত্মা বর্ষণ করেছিলেন। পঞ্চাশত্তমী উদ্যাপনকারীদের কাছে এর কি কোন অর্থ ছিল? হ্যাঁ, অবশ্যই ছিল। যীশুর মৃত্যু তাদের জন্য পাপের ক্ষমা এবং “পবিত্র আত্মারূপ দান” পাওয়ার ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যদি তারা তাঁর ওপর বিশ্বাস অনুশীলন করেন। (প্রেরিত ২:২২-২৪, ৩২, ৩৩, ৩৮) অতএব, ওই লোকেরা “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের কথা” শুনে কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন? আর এই বিবরণ কীভাবে যিহোবার প্রতি আমাদের নিজেদের সেবাকে মূল্যায়ন করার ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারে?
কাজ করতে পরিচালিত হন!
৪. সাধারণ কাল ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যোয়েলের কোন্ ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ হয়েছিল?
৪ পবিত্র আত্মা লাভ করার পর যিরূশালেমের শিষ্যরা সময় নষ্ট না করে সঙ্গে সঙ্গে পরিত্রাণের সুসমাচার অন্যদের কাছে জানিয়েছিলেন, বসন্তকালের এই সকালে যে-জনতা একত্র হয়েছিল, তাদের কাছেই প্রথমে বলেছিলেন। তাদের প্রচার কাজ এক লক্ষণীয় ভবিষ্যদ্বাণী পূর্ণ করেছিল, যে-সম্বন্ধে আটশ বছর আগে পথূয়েলের পুত্র যোয়েল বলেছিলেন: “আমি মর্ত্ত্যমাত্রের উপরে আমার আত্মা সেচন করিব, তাহাতে তোমাদের পুত্ত্রকন্যাগণ ভাববাণী বলিবে তোমাদের প্রাচীনেরা স্বপ্ন দেখিবে, তোমাদের যুবকেরা দর্শন পাইবে; আর তৎকালে আমি দাসদাসীদিগেরও উপরে আমার আত্মা সেচন করিব। . . . সদাপ্রভুর ঐ মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের আগমনের পূর্ব্বে।”—যোয়েল ১:১; ২:২৮, ২৯, ৩১; প্রেরিত ২:১৭, ১৮, ২০.
৫. কোন্ অর্থে প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানরা ভাববাণী বলেছিলেন? (পাদটীকা দেখুন।)
৫ এর মানে কি এই ছিল যে, ঈশ্বর ভাববাদীদের এক বংশ উৎপন্ন করতে অর্থাৎ দায়ূদ, যোয়েল ও দবোরার মতো নারী-পুরুষদের উৎপন্ন করতে চলেছিলেন ও ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো বলার জন্য তাদের ব্যবহার করতে যাচ্ছিলেন? না। খ্রীষ্টান ‘পুত্ত্রকন্যাগণ এবং দাসদাসীগণ’ এই অর্থে ভাববাণী বলবেন যে, যিহোবা যে-‘মহৎ মহৎ কর্ম্ম’ করেছেন এবং আরও করবেন, সেগুলো বলার জন্য তারা যিহোবার আত্মার দ্বারা চালিত হবেন। তাই, তারা সর্বোচ্চ ব্যক্তির জন্য মুখপাত্র হিসেবে সেবা করবেন।a কিন্তু, সেই জনতা কীভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল?—ইব্রীয় ১:১, ২.
৬. পিতরের বক্তৃতা শুনে জনতার মধ্যে অনেকে কী করতে পরিচালিত হয়েছিলেন?
৬ পিতরের ব্যাখ্যা শোনার পর জনতার মধ্যে অনেকে কাজ করতে পরিচালিত হয়েছিলেন। তারা “তাঁহার কথা গ্রাহ্য করিল” এবং “বাপ্তাইজিত হইল; তাহাতে সেই দিন কমবেশ তিন হাজার লোক তাঁহাদের সহিত সংযুক্ত হইল।” (প্রেরিত ২:৪১) জন্মগত যিহুদি ও ধর্মান্তরিত যিহুদি হিসেবে, তাদের ইতিমধ্যেই শাস্ত্র সম্বন্ধে মৌলিক জ্ঞান ছিল। সেই জ্ঞান এবং সেইসঙ্গে পিতরের কাছ থেকে তারা যা শিখেছিলেন তার প্রতি বিশ্বাস, তাদের জন্য সেই ভিত্তি জুগিয়েছিল, যা “পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে” তাদের বাপ্তিস্ম নিতে পরিচালিত করেছিল। (মথি ২৮:১৯) তাদের বাপ্তিস্মের পর, “তাহারা প্রেরিতদের শিক্ষায় . . . নিবিষ্ট থাকিল।” একই সময়ে, তারা তাদের নতুন পাওয়া বিশ্বাস অন্যদের কাছে বলতে শুরু করেছিলেন। সত্যিই, “তাহারা প্রতিদিন একচিত্তে ধর্ম্মধামে নিবিষ্ট থাকিয়া . . . ঈশ্বরের প্রশংসা করিত, এবং সমস্ত লোকের প্রীতির পাত্র হইল।” এই সাক্ষ্যদানের ফলে, “যাহারা পরিত্রাণ পাইতেছিল, প্রভু [“যিহোবা,” NW] দিন দিন তাহাদিগকে তাহাদের সহিত সংযুক্ত করিতেন।” (প্রেরিত ২:৪২, ৪৬, ৪৭) এই নতুন বিশ্বাসীরা যেখানে থাকতেন, এইরকম অনেক জায়গায় দ্রুত খ্রীষ্টীয় মণ্ডলী গঠিত হয়েছিল। কোন সন্দেহ নেই যে, এই বৃদ্ধি কিছুটা হলেও তাদের উদ্যোগী প্রচেষ্টার কারণে হয়েছিল, যখন তারা দেশে ফিরে ‘সুসমাচার’ প্রচার করেছিলেন।—কলসীয় ১:২৩.
ঈশ্বরের বাক্য কার্যসাধক
৭. (ক) আজকে কোন্ বিষয়টা সমস্ত জাতির লোকেদের যিহোবার সংগঠনের প্রতি আকৃষ্ট করে? (খ) সারা পৃথিবীর ও স্থানীয় ক্ষেত্রে আরও বৃদ্ধি পাওয়ার কোন্ সম্ভাবনা আপনি দেখতে পান? (পাদটীকা দেখুন।)
৭ আজকে যারা ঈশ্বরের দাস হতে চান, সেই লোকেদের সম্বন্ধে কী বলা যায়? তাদেরও মন দিয়ে ঈশ্বরের বাক্য অধ্যয়ন করা দরকার। তা করে তারা যিহোবাকে একজন “স্নেহশীল ও কৃপাময় . . . ক্রোধে ধীর এবং দয়াতে ও সত্যে মহান্” ঈশ্বর হিসেবে জানতে পারেন। (যাত্রাপুস্তক ৩৪:৬; প্রেরিত ১৩:৪৮) তারা যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে মুক্তির মূল্যের দয়ালু ব্যবস্থা সম্বন্ধে শেখেন, যাঁর পাতিত রক্ত তাদের সমস্ত পাপ থেকে শুচি করতে পারে। (১ যোহন ১:৭) এ ছাড়াও, তারা “ধার্ম্মিক ও অধার্ম্মিক উভয় প্রকার লোকের পুনরুত্থান” সম্বন্ধে ঈশ্বরের উদ্দেশ্যের প্রতি কৃতজ্ঞ হন। (প্রেরিত ২৪:১৫) যিনি এই “মহৎ মহৎ কর্ম্মের” উৎস, তাঁর প্রতি প্রেমে তাদের হৃদয় ভরে যায় এবং তারা এই মূল্যবান সত্যগুলো প্রচার করার প্রেরণা পান। এরপর তারা ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত, বাপ্তাইজিত দাস হয়ে ওঠেন এবং “ঈশ্বরের তত্ত্বজ্ঞানে বর্দ্ধিষ্ণু” হয়ে চলেন।b—কলসীয় ১:১০খ; ২ করিন্থীয় ৫:১৪.
৮-১০. (ক) কীভাবে একজন খ্রীষ্টান মহিলার উদাহরণ প্রমাণ করে যে, ঈশ্বরের বাক্য “কার্য্যসাধক”? (খ) এই অভিজ্ঞতা থেকে যিহোবা ও তিনি তাঁর দাসদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কী শিখেছেন? (যাত্রাপুস্তক ৪:১২)
৮ ঈশ্বরের দাসেরা বাইবেল অধ্যয়ন করে যে-জ্ঞান অর্জন করেন, তা কোন ওপর ওপর জ্ঞান নয়। এইরকম জ্ঞান তাদের হৃদয়কে উদ্দীপিত করে, তাদের চিন্তাধারাকে পালটে দেয় এবং তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে। (ইব্রীয় ৪:১২) উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ক্যামিল নামে একজন মহিলা বয়স্ক ব্যক্তিদের দেখাশোনা করার চাকরি করতেন। মার্থা নামে তার এক ক্লায়েন্ট একজন যিহোবার সাক্ষি ছিলেন। যেহেতু মার্থা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেছিলেন, তাই তাকে সারাক্ষণ চোখে চোখে রাখতে হতো। তাকে খাওয়ার কথা ও এমনকি তার খাবার গিলে খাওয়ার বিষয় পর্যন্ত মনে করিয়ে দিতে হতো। কিন্তু একটা বিষয় মার্থার মনে স্থায়ীভাবে গেঁথে গিয়েছিল, যে-বিষয়টা আমরা এখন দেখব।
৯ একদিন মার্থা দেখেন যে, ক্যামিল তার ব্যক্তিগত কিছু সমস্যার কারণে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। মার্থা ক্যামিলের কাঁধে হাত রাখেন ও তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করার জন্য আমন্ত্রণ জানান। কিন্তু মার্থার মতো অবস্থার একজন ব্যক্তি কি তার সঙ্গে বাইবেল অধ্যয়ন করতে পারতেন? হ্যাঁ, তিনি পেরেছিলেন! যদিও মার্থা তার জীবনের বেশির ভাগ বিষয়ই ভুলে গিয়েছিলেন কিন্তু তিনি তার মহান ঈশ্বরকে ভুলে যাননি; কিংবা বাইবেল থেকে তিনি যে-মূল্যবান সত্যগুলো শিখেছিলেন, তা তিনি ভুলে যাননি। অধ্যয়নের সময়, ক্যামিলকে মার্থা প্রত্যেকটা অনুচ্ছেদ পড়তে, উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলো দেখতে, পৃষ্ঠার নিচে দেওয়া প্রশ্নটা পড়তে ও তারপর উত্তর দিতে বলতেন। কিছু সময় ধরে এভাবেই চলছিল আর মার্থার সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, ক্যামিল বাইবেলের জ্ঞানে উন্নতি করে চলেছিলেন। মার্থা বুঝতে পেরেছিলেন যে, ক্যামিলের এমন ব্যক্তিদের সঙ্গে মেলামেশা করা দরকার, যারা ঈশ্বরকে সেবা করতে আগ্রহী ছিলেন। সেই বিষয় মনে রেখে, তিনি তার ছাত্রীকে একটা জামা ও এক জোড়া জুতো দেন, যাতে ক্যামিল প্রথমবার কিংডম হলের সভায় যোগ দেওয়ার সময় উপযুক্ত পোশাক পরে যেতে পারেন।
১০ মার্থার প্রেমপূর্ণ আগ্রহ, উদাহরণ এবং দৃঢ়প্রত্যয় দেখে ক্যামিল প্রেরণা পেয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, মার্থা তাকে বাইবেল থেকে যে-বিষয়গুলো শেখানোর চেষ্টা করছিলেন সেগুলো ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ মার্থা শাস্ত্র থেকে যা শিখেছিলেন কেবল সেই বিষয়গুলো ছাড়া আর প্রায় সমস্ত কিছুই তিনি একেবারে ভুলে গিয়েছিলেন। পরে, ক্যামিলকে যখন আরেকটা বৃদ্ধাশ্রমে বদলি করা হয়, তখন তিনি বুঝতে পারেন যে তার এখন পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। প্রথমবারের মতো, তিনি মার্থা তাকে যে-জামা ও জুতো দিয়েছিলেন, সেগুলো পরে কিংডম হলের দিকে রওনা দেন ও সেখানে গিয়ে তাকে বাইবেল অধ্যয়ন করানোর জন্য অনুরোধ করেন। ক্যামিল ভালভাবে উন্নতি করেন এবং পরে বাপ্তিস্ম নেন।
যিহোবার মানগুলোকে প্রতিফলিত করতে উদ্দীপিত
১১. প্রচার কাজে উদ্যোগী হওয়া ছাড়াও, কীভাবে আমরা দেখাতে পারি যে, রাজ্যের বার্তার মাধ্যমে আমরা উদ্দীপিত হয়েছি?
১১ আজকে যিহোবার ষাট লক্ষেরও বেশি সাক্ষি আছেন, যারা মার্থা ও এখন ক্যামিলের মতো সারা পৃথিবীতে “রাজ্যের . . . সুসমাচার” প্রচার করছেন। (মথি ২৪:১৪; ২৮:১৯, ২০) প্রথম শতাব্দীর খ্রীষ্টানদের মতো, তারা “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের” কথা বলার জন্য গভীরভাবে প্রেরণা পান। যিহোবার নাম বহন করতে পারার বিশেষ সুযোগের এবং তিনি তাদের ওপর যে তাঁর আত্মা সেচন করেছেন, তার জন্য তারা কৃতজ্ঞ। ফলে, তারা তাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তাঁর মানগুলোকে কাজে লাগানোর মাধ্যমে “প্রভুর [“যিহোবার,” NW] যোগ্যরূপে সর্ব্বোতোভাবে প্রীতিজনক আচরণ” করতে যথাসম্ভব প্রচেষ্টা করেন। যে-বিষয়গুলোতে তারা ঈশ্বরের মানগুলো কাজে লাগান তার মধ্যে পোশাক ও সাজগোজ সম্বন্ধে তাঁর মানগুলোকে সম্মান করাও রয়েছে।—কলসীয় ১:১০ক; তীত ২:১০.
১২. পোশাক ও সাজগোজ সম্বন্ধে ১ তীমথিয় ২:৯, ১০ পদে আমরা কোন্ নির্দিষ্ট পরামর্শ পাই?
১২ হ্যাঁ, যিহোবা আমাদের ব্যক্তিগত বেশভূষা সম্বন্ধে কিছু মান নির্ধারণ করেছেন। এই বিষয়ে ঈশ্বর যা চান, সেই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল কিছু বিষয় তুলে ধরেছিলেন। “নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।”c এই কথাগুলো থেকে আমরা কী শিখি?—১ তীমথিয় ২:৯, ১০.
১৩. (ক) ‘পরিপাটী বেশ’ কথার মানে কী? (খ) কেন আমরা বলতে পারি যে, যিহোবার মানগুলো যুক্তিসংগত?
১৩ পৌলের কথাগুলো দেখায় যে, খ্রীষ্টানদের ‘পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিত’ করা উচিত। তাদের বেশভূষা অশ্লীল, অগোছালো বা অমার্জিত হওয়া উচিত নয়। সত্যি বলতে কী, প্রত্যেকে এমনকি যাদের তেমন টাকাপয়সা নেই তারাও তাদের পোশাকআশাক পরিপাটী, পরিষ্কার এবং মার্জিত কি না, তা নিশ্চিত করে এইরকম যুক্তিসংগত মানগুলো বজায় রাখতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, দক্ষিণ আমেরিকার একটা দেশে প্রত্যেক বছর সাক্ষিরা জেলা সম্মেলনে যোগ দেওয়ার জন্য অনেক কিলোমিটার পথ জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হেঁটে ও এরপর কয়েক ঘন্টা ডিঙি নৌকায় করে ভ্রমণ করেন। তাই, কারও নদীতে পড়ে যাওয়া বা ঝোপঝাড়ের মধ্যে আটকে পোশাক ছিঁড়ে যাওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। অতএব, সম্মেলনের উদ্দেশে আসা ব্যক্তিরা যখন সম্মেলন স্থলে এসে পৌঁছান, তখন তাদের চেহারা কিছুটা অগোছালো দেখায়। তাই, তারা সম্মেলনে যে-পোশাক পরতে যাচ্ছেন সেটার বোতাম সেলাই করার, জিপার লাগানোর এবং তা ধোয়া ও ইস্ত্রি করার জন্য অনেক সময় দেন। তারা যিহোবার মেজে খাবার খাওয়ার আমন্ত্রণকে উপলব্ধি করেন এবং উপযুক্ত পোশাক পরে তাতে অংশ নিতে চান।
১৪. (ক) “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে” পোশাকআশাক পরার মানে কী? (খ) ‘ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারি লোকেদের মতো’ আমাদের পোশাক পরার সঙ্গে কী কী জড়িত?
১৪ পৌল আরও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে, আমাদের “সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে” পোশাকআশাক পরা উচিত। এর মানে হল আমাদের বেশভূষা জাঁকাল, উদ্ভট, যৌন কামনা উদ্দীপক, শরীরের বেশির ভাগ অংশ দেখা যায় এমন বা অতিরিক্ত ফ্যাশন-সচেতন হওয়া উচিত নয়। এ ছাড়া, আমাদের এমনভাবে পোশাক পরা উচিত, যা “ঈশ্বর-ভক্তি” প্রকাশ করে। এই বিষয়টা আমাদের চিন্তার খোরাক জোগায়, তাই নয় কি? এর মানে শুধু এই নয় যে, আমরা যখন খ্রীষ্টীয় সভাগুলোতে যোগ দেব, কেবল তখনই সঠিক পোশাক পরব এবং অন্য সময়ে এই ব্যাপারে কোন মাথা ঘামাবো না। আমাদের ব্যক্তিগত বেশভূষার মাধ্যমে সবসময় এক ভক্তিপূর্ণ, সম্মানযোগ্য মনোভাব প্রতিফলিত করা উচিত কারণ আমরা দিনের ২৪ ঘন্টাই খ্রীষ্টান এবং পরিচারক। এটা ঠিক যে, আমাদের কাজের পোশাক ও স্কুলের পোশাক আমরা যেধরনের কাজ করি, তার সঙ্গে মানানসই হবে। তবুও, আমাদের সলজ্জ ও মর্যাদাপূর্ণভাবে পোশাক পরা উচিত। আমাদের পোশাক যদি সবসময় ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে, তা হলে আমরা কখনোই আমাদের বেশভূষার কারণে রীতিবহির্ভূত সাক্ষ্য দিতে দ্বিধা করব না।—১ পিতর ৩:১৫.
“তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না”
১৫, ১৬. (ক) পোশাক ও সাজগোজের ক্ষেত্রে জগৎকে অনুকরণ করা এড়িয়ে চলা কেন গুরুত্বপূর্ণ? (১ যোহন ৫:১৯) (খ) কোন্ বাস্তবসম্মত কারণগুলোর জন্য আমাদের পোশাক ও সাজগোজের ক্ষেত্রে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলা এড়িয়ে চলব?
১৫ এ ছাড়া, ১ যোহন ২:১৫, ১৬ পদের পরামর্শেও পোশাক বাছাই ও সাজগোজের বিষয়ে নির্দেশনা পাওয়া যায়। সেখানে আমরা পড়ি: “তোমরা জগৎকে প্রেম করিও না, জগতীস্থ বিষয় সকলও প্রেম করিও না। কেহ যদি জগৎকে প্রেম করে, তবে পিতার প্রেম তাহার অন্তরে নাই। কেননা জগতে যে কিছু আছে, মাংসের অভিলাষ, চক্ষুর অভিলাষ, ও জীবিকার দর্প, এ সকল পিতা হইতে নয়, কিন্তু জগৎ হইতে হইয়াছে।”
১৬ এই পরামর্শটা কতই না সময়োপযোগী! যেকোন সময়ের চেয়ে সঙ্গীসাথিদের চাপ সবচেয়ে বেশি রয়েছে এমন এক সময়ে আমাদের কখনোই পোশাকআশাক বাছাই করার ব্যাপারে আমাদের নিয়ন্ত্রণ করতে জগৎকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। সম্প্রতি বছরগুলোতে পোশাক ও সাজগোজের ধরনে অনেক অবনতি ঘটেছে। এমনকি পোশাক ব্যাবসার নীতিমালা ও পেশাদার লোকেরা, খ্রীষ্টানদের জন্য কোন্টা সঠিক সেই বিষয়ে সবসময় নির্ভরযোগ্য মান জোগায় না। এটা হল আরেকটা কারণ যে, যদি আমরা ঈশ্বরের মান অনুসারে চলতে চাই এবং এর মাধ্যমে “আমাদের ত্রাণকর্ত্তা ঈশ্বরের শিক্ষা সর্ব্ববিষয়ে ভূষিত” করি, তা হলে আমাদের সবসময় ‘এই যুগের অনুরূপ না হওয়া’ সম্বন্ধে সতর্ক হওয়া দরকার।—রোমীয় ১২:২; তীত ২:১০.
১৭. (ক) পোশাক কেনার সময় বা কোন স্টাইল বাছাই করার সময় আমরা কোন্ প্রশ্নগুলো বিবেচনা করতে পারি? (খ) পরিবারের মস্তকদের কেন পরিবারের সদস্যদের বেশভূষার প্রতি নজর দেওয়া উচিত?
১৭ কোন পোশাক কেনার আগে নিজেকে এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করা বিজ্ঞের কাজ হবে: ‘এই স্টাইলটা কেন আমার কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়? এটা কি কোন জনপ্রিয় শিল্পীর স্টাইল, যাকে আমি শ্রদ্ধা করি? এটা কি রাস্তার ছেলেদের বা এইরকম কোন দলের স্টাইল, যারা এক স্বাধীনচেতা ও বিদ্রোহী মনোভাবকে প্রকাশ করে?’ এ ছাড়াও, কোন একটা পোশাকের ক্ষেত্রে আমাদের বিশেষ মনোযোগ দেওয়া উচিত। এটা যদি কোন জামা বা স্কার্ট হয়, তা হলে এটা কি যথেষ্ট লম্বা? জামা বা স্কার্টের কোন জায়গায় যদি কাটা থাকে, তা হলে এটা কি মার্জিত? পোশাকটা কি শালীন, উপযুক্ত এবং মর্যাদাপূর্ণ নাকি খুব আঁটসাঁট, যৌন কামনা উদ্দীপক বা অশ্লীল? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি এই পোশাকটা পরলে কি অন্যেরা বিঘ্ন পাবে?’ (২ করিন্থীয় ৬:৩, ৪) সেটা কেন আমাদের চিন্তার বিষয় হওয়া উচিত? কারণ বাইবেল বলে: “খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।” (রোমীয় ১৫:৩) খ্রীষ্টীয় পরিবারের মস্তককে অবশ্যই পরিবারের সদস্যদের বেশভূষার দিকে নজর দিতে হবে। যাঁকে তারা উপাসনা করেন, সেই মহিমান্বিত ঈশ্বরের প্রতি সম্মান দেখিয়ে পরিবারের মস্তকদের দরকার হলে দৃঢ় অথচ প্রেমপূর্ণ পরামর্শ দিতে ইতস্তত করা উচিত নয়।—যাকোব ৩:১৩.
১৮. কী আপনাকে আপনার পোশাকআশাক ও সাজগোজের প্রতি মনোযোগ দিতে প্রণোদিত করবে?
১৮ আমরা যে-বার্তা বহন করি, তা যিহোবার কাছ থেকে আসে, যিনি মর্যাদা ও পবিত্রতার মূর্ত প্রতীক। (যিশাইয় ৬:৩) বাইবেল “প্রিয় বৎসদের ন্যায়” তাঁকে অনুকরণ করতে আমাদের উৎসাহ দেয়। (ইফিষীয় ৫:১) আমাদের পোশাকআশাক ও সাজগোজ আমাদের স্বর্গীয় পিতার সম্বন্ধে হয় ভাল নতুবা খারাপ ধারণা প্রতিফলিত করতে পারে। আমরা নিশ্চয়ই তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করতে চাই!—হিতোপদেশ ২৭:১১.
১৯. “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের” কথা অন্যদের জানিয়ে কোন্ উপকারগুলো আসে?
১৯ “ঈশ্বরের মহৎ মহৎ কর্ম্মের” বিষয়ে আপনি যা শিখেছেন, সেই সম্বন্ধে আপনি কেমন বোধ করেন? সত্য শিখতে পেরে আমরা কত বড় সুযোগই না পেয়েছি! যেহেতু আমরা যীশু খ্রীষ্টের পাতিত রক্তে বিশ্বাস অনুশীলন করেছি, তাই আমাদের পাপ ক্ষমা করা হয়েছে। (প্রেরিত ২:৩৮) ফলে, ঈশ্বরের সামনে আমরা নির্দ্বিধায় কথা বলতে পারি। যাদের কোন আশা নেই, আমরা তাদের মতো মৃত্যুকে ভয় পাই না। এর বদলে যীশুর আশ্বাস আমাদের রয়েছে যে, একদিন “কবরস্থ সকলে তাঁহার রব শুনিবে, এবং . . . বাহির হইয়া আসিবে।” (যোহন ৫:২৮, ২৯) এই সমস্ত কিছু আমাদের কাছে প্রকাশ করে যিহোবা সদয় হয়েছেন। এ ছাড়া, তিনি আমাদের ওপর তাঁর আত্মা সেচন করেছেন। তাই, এই সমস্ত উত্তম দানগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা আমাদের তাঁর উচ্চ মানগুলোর প্রতি সম্মান দেখাতে এবং উদ্যোগ সহকারে তাঁর প্রশংসা করতে, অন্যদের কাছে এই “মহৎ মহৎ কর্ম্মের” বিষয় ঘোষণা করতে পরিচালিত করবে।
[পাদটীকাগুলো]
a যিহোবা যখন তাঁর লোকেদের পক্ষে ফরৌণের সঙ্গে কথা বলার জন্য মোশি ও হারোণকে নিযুক্ত করেছিলেন, তখন তিনি মোশিকে বলেছিলেন: “আমি ফরৌণের কাছে তোমাকে ঈশ্বরস্বরূপ করিয়া নিযুক্ত করিলাম, আর তোমার ভ্রাতা হারোণ তোমার ভাববাদী হইবে।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (যাত্রাপুস্তক ৭:১) হারোণ একজন ভাববাদী হিসেবে কাজ করেছিলেন, এই অর্থে নয় যে, তিনি ভবিষ্যতের ঘটনাগুলো বলেছিলেন বরং তিনি মোশির মুখপাত্র হিসেবে কাজ করেছিলেন।
b ২০০২ সালে ২৮শে মার্চ অনুষ্ঠিত প্রভুর সান্ধ্যভোজের বার্ষিক উদ্যাপনে যে-অসংখ্য লোক উপস্থিত ছিলেন তাদের মধ্যে লক্ষ লক্ষ লোক এখনও সক্রিয়ভাবে যিহোবার সেবা করছেন না। আমাদের আন্তরিক প্রার্থনা এই যে, এই আগ্রহী ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকে খুব শীঘ্রই সুসমাচারের প্রকাশক হওয়ার বিশেষ সুযোগ লাভ করার জন্য নিজেদের বিলিয়ে দেবেন।
c যদিও পৌলের কথাগুলো খ্রীষ্টান নারীদের উদ্দেশে বলা হয়েছে কিন্তু খ্রীষ্টান পুরুষ ও যুবক-যুবতীদের বেলায়ও একই নীতি প্রযোজ্য।
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
• সাধারণ কাল ৩৩ সালে লোকেরা কোন্ “মহৎ মহৎ কর্ম্মের” কথা শুনেছিলেন এবং তারা কীভাবে সাড়া দিয়েছিলেন?
• একজন ব্যক্তি কীভাবে যীশু খ্রীষ্টের শিষ্য হন এবং শিষ্য হওয়ার সঙ্গে কী কী জড়িত?
• আমাদের পোশাকআশাক ও সাজগোজের প্রতি কেন মনোযোগ দেওয়া গুরুত্বপূর্ণ?
• কোন একটা পোশাক বা স্টাইল উপযুক্ত কি না, তা ঠিক করার সময় কোন্ কোন্ বিষয় বিবেচনা করা উচিত?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
পিতর ঘোষণা করেছিলেন যে, যীশু মৃত্যু থেকে উত্থিত হয়েছেন
[১৭ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
আপনার ব্যক্তিগত বেশভূষা কি যে-ঈশ্বরকে আপনি উপাসনা করেন, তাঁকে উপযুক্তভাবে প্রতিফলিত করে?
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
খ্রীষ্টান বাবামারা অবশ্যই তাদের পরিবারের সদস্যদের বেশভূষার প্রতি নজর দেবেন