আপনার কি সবসময়ই বাইবেলের আদেশের প্রয়োজন আছে?
আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন আপনার বাবামা সম্ভবত আপনাকে অনেক নিয়মকানুন দিয়েছিল। আপনি যখন বড় হয়েছেন, তখন উপলব্ধি করতে পেরেছেন যে, তারা আপনার মঙ্গল চেয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক হিসেবে, আপনি যদিও এখন আর তাদের কর্তৃত্বের অধীনে নন কিন্তু তবুও আপনি হয়তো এখনও নির্দিষ্ট কিছু নীতি মেনে জীবনযাপন করেন, যেগুলো তারা আপনার মধ্যে গেঁথে দিয়েছিল।
আমাদের স্বর্গীয় পিতা যিহোবা তাঁর বাক্য বাইবেলের মাধ্যমে আমাদের সরাসরি বেশ কয়েকটা আদেশ দেন। উদাহরণস্বরূপ, তিনি প্রতিমাপূজা, ব্যভিচার, পারদারিকতা ও চুরি করাকে নিষেধ করেন। (প্রেরিত ১৫:২৮, ২৯; ১ করিন্থীয় ৬:৯, ১০) আমরা যতই আধ্যাত্মিকভাবে ‘সর্ব্ববিষয়ে বৃদ্ধি পাই’ ততই আমরা উপলব্ধি করি যে, যিহোবা আমাদের মঙ্গল চান এবং তাঁর আদেশগুলো অত্যধিক কড়াকড়ি নয়।—ইফিষীয় ৪:১৫; যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮; ৫৪:১৩.
কিন্তু, এমন অনেক পরিস্থিতি রয়েছে যেগুলোর ক্ষেত্রে সরাসরি কোনো আদেশ দেওয়া নেই। তাই, কেউ কেউ মনে করে যে বাইবেলে সরাসরি কোনো আদেশ না থাকায়, তারা যা খুশি তা-ই করতে পারে। তারা এই যুক্তি দেখায় যে, ঈশ্বর যদি প্রয়োজন বলে মনে করতেন, তা হলে তিনি সরাসরি এক আদেশের রূপে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতেন।
যারা এভাবে চিন্তা করে তারা প্রায়ই অবিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে থাকে, যেগুলোর জন্য পরে তারা প্রচণ্ডভাবে আপশোস করে। তারা এটা দেখতে ব্যর্থ হয় যে, বাইবেলে শুধুমাত্র বিভিন্ন নিয়মই দেওয়া নেই কিন্তু সেইসঙ্গে ঈশ্বরের চিন্তাধারা সম্বন্ধেও কিছু ইঙ্গিত রয়েছে। আমরা যখন বাইবেল অধ্যয়ন করি এবং বিষয়গুলো সম্বন্ধে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি জানতে পারি, তখন আমরা বাইবেলের দ্বারা শিক্ষিত এক বিবেক গড়ে তুলি এবং সেই বিষয়গুলো বাছাই করার জন্য সাহায্য পাই, যেগুলো তাঁর চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে। আর তা করে আমরা তাঁর হৃদয়কে আনন্দিত করি এবং বিজ্ঞ সিদ্ধান্তগুলো নেওয়ার ফলে আসা উপকারগুলো লাভ করি।—ইফিষীয় ৫:১.
বাইবেলের কয়েকটা উল্লেখযোগ্য উদাহরণ
আমরা যখন বাইবেল থেকে ঈশ্বরের প্রাচীনকালের দাসদের কিছু বিবরণ লক্ষ করি, তখন আমরা এমন কিছু পরিস্থিতি পাই, যেখানে এমনকি যদিও তারা কোনো সরাসরি আদেশের অধীনে ছিল না, তবুও তারা যিহোবার চিন্তাধারাকে বিবেচনা করেছিল। যোষেফের উদাহরণ বিবেচনা করুন। তিনি যখন পোটীফরের স্ত্রীর অনৈতিক প্রস্তাবগুলোর মুখোমুখি হচ্ছিলেন, সেই সময়ে পারদারিকতা সম্বন্ধে ঐশিকভাবে অনুপ্রাণিত কোনো লিখিত নিয়ম ছিল না। তবুও, সরাসরি কোনো নিয়ম না থাকলেও যোষেফ উপলব্ধি করেছিলেন যে, পারদারিকতা শুধুমাত্র তার নিজের বিবেকের বিরুদ্ধে পাপ নয় কিন্তু সেইসঙ্গে “ঈশ্বরের বিরুদ্ধে” পাপ। (আদিপুস্তক ৩৯:৯) স্পষ্টতই, যোষেফ উপলব্ধি করেছিলেন যে পারদারিকতা ছিল ঈশ্বরের চিন্তাধারা ও ইচ্ছাকে লঙ্ঘন করা, যেমন এদনে প্রকাশ পেয়েছিল।—আদিপুস্তক ২:২৪.
আরেকটা উদাহরণ বিবেচনা করুন। প্রেরিত ১৬:৩ পদ থেকে আমরা জানতে পারি যে, পৌল তীমথিয়কে তার খ্রিস্টীয় যাত্রাগুলোতে সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়ার আগে, তাকে ত্বক্ছেদ করিয়েছিলেন। কিন্তু ৪ পদে আমরা পড়ি যে, এরপর পৌল ও তীমথিয় নগরে নগরে ভ্রমণ করেছিল এবং “যিরূশালেমস্থ প্রেরিতগণের ও প্রাচীনবর্গের নিরূপিত নিয়মাবলী” ঘোষণা করেছিল। সেই নিয়মাবলীর মধ্যে একটা সিদ্ধান্ত ছিল যে, খ্রিস্টানরা ত্বক্ছেদ করার ব্যাপারে আর ব্যবস্থার অধীনে ছিল না! (প্রেরিত ১৫:৫, ৬, ২৮, ২৯) তা হলে, পৌল কেন মনে করেছিলেন যে, তীমথিয়ের ত্বক্ছেদ করার প্রয়োজন রয়েছে? “ঐ সকল স্থানের যিহূদীদের নিমিত্ত . . . কেননা [তীমথিয়ের] পিতা যে গ্রীক, ইহা সকলে জানিত।” পৌল অযথা বিরক্তি সৃষ্টি করতে বা বিঘ্ন জন্মাতে চাননি। তিনি চিন্তিত ছিলেন যে, খ্রিস্টানরা যেন ‘ঈশ্বরের সাক্ষাতে মনুষ্যমাত্রের সংবেদের কাছে আপনাদিগকে যোগ্যপাত্র দেখাইতে’ থাকে।—২ করিন্থীয় ৪:২; ১ করিন্থীয় ৯:১৯-২৩.
এই ধরনের চিন্তাধারা ছিল পৌল ও তীমথিয়ের বৈশিষ্ট্য। রোমীয় ১৪:১৫, ২০, ২১ এবং ১ করিন্থীয় ৮:৯-১৩; ১০:২৩-৩৩ পদগুলো পড়ুন এবং দেখুন যে, পৌল অন্যদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের বিষয়ে কত গভীরভাবে চিন্তিত ছিলেন, বিশেষ করে তাদের জন্য যারা হয়তো এমন কিছুতে বিঘ্ন পেত যেগুলো আসলে ভুল ছিল না। আর পৌল তীমথিয়ের সম্বন্ধে লিখেছিলেন: “আমার কাছে এমন সমপ্রাণ কেহই নাই যে, প্রকৃতরূপে তোমাদের বিষয় চিন্তা করিবে। কেননা উহারা সকলে যীশু খ্রীষ্টের বিষয় নয়, কিন্তু আপন আপন বিষয় চেষ্টা করে। কিন্তু তোমরা ইহাঁর পক্ষে এই প্রমাণ জ্ঞাত আছ যে, পিতার সহিত সন্তান যেমন, আমার সহিত ইনি তেমনি সুসমাচারের নিমিত্ত দাস্যকর্ম্ম করিয়াছেন।” (ফিলিপীয় ২:২০-২২) আজ আমাদের জন্য এই দুজন খ্রিস্টান পুরুষ কী এক উত্তম উদাহরণই না স্থাপন করেছে! নির্দিষ্ট ঐশিক আদেশের অধীনে না থাকার সময় ব্যক্তিগত সুযোগসুবিধা বা পছন্দকে বেছে না নিয়ে বরং তারা তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তগুলো কীভাবে অন্যদের হয়তো আধ্যাত্মিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে তা বিবেচনা করার দ্বারা যিহোবা ও তাঁর পুত্রের ভালবাসাকে অনুকরণ করেছিল।
আমাদের মুখ্য উদাহরণ যিশু খ্রিস্টকে বিবেচনা করুন। তাঁর পর্বতে দত্ত উপদেশে তিনি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন যে, একজন ব্যক্তি যিনি ঈশ্বরের নিয়মগুলোর মূল নীতিকে বুঝতে পারেন, তিনি সেগুলোর সম্বন্ধে কোনো নির্দিষ্ট আদেশ বা নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও এগুলোর বাধ্য হবেন। (মথি ৫:২১, ২২, ২৭, ২৮) যিশু, পৌল, তীমথিয় বা যোষেফ কেউই এভাবে যুক্তি করেনি যে, নির্দিষ্ট কোনো ঐশিক নিয়ম না থাকলে একজন ব্যক্তি যা খুশি তা করতে পারেন। ঈশ্বরের চিন্তাধারার সঙ্গে মিল রাখার জন্য এই লোকেরা, যিশু যে-দুটো আদেশকে—ঈশ্বরকে প্রেম করা এবং সহমানবকে প্রেম করা—সমস্ত নিয়মের মধ্যে মহৎ বলে চিহ্নিত করেছিলেন, সেগুলো অনুযায়ী জীবনযাপন করেছিল।—মথি ২২:৩৬-৪০.
বর্তমানে খ্রিস্টানদের বিষয়ে কী বলা যায়?
এটা স্পষ্ট যে, একজন এক আইন পুস্তককে যে-দৃষ্টিতে দেখে থাকেন সেই দৃষ্টিতে আমাদের বাইবেলকে দেখা—প্রত্যেকটা বাধ্যবাধকতা বিস্তারিতভাবে বর্ণিত থাকবে, এমনটা আশা করা—উচিত নয়। আমরা যিহোবার হৃদয়কে প্রচুর আনন্দিত করি, যখন আমরা তাঁর চিন্তাধারাকে প্রতিফলিত করে এমন বিষয়গুলো করা বেছে নিই, এমনকি যখন আমাদের পদক্ষেপগুলো নির্দেশ করার মতো নির্দিষ্ট কোনো নিয়মও না থাকে। আরেক কথায়, আমরা কী করি বলে ঈশ্বর চান, সেই বিষয়ে প্রত্যেকটা ব্যাপারে ঈশ্বরের কাছ থেকে সরাসরি আদেশ পাওয়ার পরিবর্তে, আমরা ‘প্রভুর [“যিহোবার,” NW] ইচ্ছা কি, তাহা বুঝিতে’ পারি। (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (ইফিষীয় ৫:১৭; রোমীয় ১২:২) কেন এটা যিহোবাকে খুশি করে? কারণ এটা দেখায় যে, আমরা আমাদের ব্যক্তিগত পছন্দ ও অধিকারগুলোর চেয়ে বরং তাঁকে খুশি করতে বেশি চিন্তিত। এটা এও দেখায় যে, আমরা তাঁর প্রেমের জন্য এতটাই কৃতজ্ঞ যে, আমরা তা অনুকরণ করতে চাই আর এই ধরনের প্রেমকে আমাদের প্রেরণা শক্তি করতে চাই। (হিতোপদেশ ২৩:১৫; ২৭:১১) এ ছাড়া, শাস্ত্রে যা ইঙ্গিত করা হয়েছে সেটার ওপর ভিত্তি করে নেওয়া পদক্ষেপগুলো আধ্যাত্মিক এবং প্রায়ই শারীরিক স্বাস্থ্যের ক্ষেত্রে অবদান রাখে।
আসুন আমরা দেখি যে, ব্যক্তিগত বিষয়গুলোতে এই নীতিটা কীভাবে কাজে লাগানো যেতে পারে।
আমোদপ্রমোদ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে
একজন যুবকের কথা বিবেচনা করুন যে এক নির্দিষ্ট মিউজিক অ্যালবাম কিনতে চায়। সে সেই অ্যালবাম থেকে যা শুনেছে তা খুবই আকর্ষণীয় কিন্তু সে কিছুটা চিন্তিত কারণ অ্যালবামের খাপের পিছনের লেখাগুলো ইঙ্গিত করে যে, গানের কথাগুলো যৌনতাকে খোলাখুলিভাবে বর্ণনা করে এবং সেগুলো অশ্লীল। এ ছাড়া, সে এও অবগত যে, শিল্পীর গানগুলোর বেশিটাই ক্রোধপূর্ণ ও আগ্রাসী মনোভাবে পূর্ণ। যিহোবার একজন প্রেমিক হিসেবে এই যুবক ব্যক্তি এই ব্যাপারে যিহোবার চিন্তাধারা ও অনুভূতিগুলোর ব্যাপারে আগ্রহী। এই ব্যাপারে ঈশ্বরের ইচ্ছা কী, তা সে কীভাবে বুঝতে পারে?
গালাতীয়দের কাছে লেখা তার চিঠিতে প্রেরিত পৌল মাংসের কাজগুলো এবং ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলোর তালিকা দেন। আপনি সম্ভবত জানেন যে, ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলোর সঙ্গে কী অন্তর্ভুক্ত: প্রেম, আনন্দ, শান্তি, দীর্ঘসহিষ্ণুতা, মাধুর্য্য, মঙ্গলভাব, বিশ্বস্ততা, মৃদুতা, ইন্দ্রিয়দমন। কিন্তু কোন কাজগুলো মাংসের কার্যসকল গঠন করে? পৌল লেখেন: “আবার মাংসের কার্য্য সকল প্রকাশ আছে; সেগুলি এই—বেশ্যাগমন, অশুচিতা, স্বৈরিতা, প্রতিমাপূজা, কুহক, নানা প্রকার শত্রুতা, বিবাদ, ঈর্ষা, রাগ, প্রতিযোগিতা, বিচ্ছিন্নতা, দলভেদ, মাৎসর্য্য, মত্ততা, রঙ্গরস ও তৎসদৃশ অন্য অন্য দোষ। এই সকলের বিষয়ে আমি তোমাদিগকে অগ্রে বলিতেছি, যেমন পূর্ব্বে বলিয়াছিলাম, যাহারা এই প্রকার আচরণ করে, তাহারা ঈশ্বরের রাজ্যে অধিকার পাইবে না।”—গালাতীয় ৫:১৯-২৩.
এই তালিকার সবচেয়ে শেষের কথাগুলো লক্ষ করুন—“তৎসদৃশ অন্য অন্য দোষ।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) যে-কাজগুলোকে মাংসের কার্য বলে বিবেচনা করা যায় সেগুলোর এক পূর্ণ তালিকা পৌল দেননি। এটা এই ইঙ্গিত করে না যে, একজন ব্যক্তি এভাবে যুক্তি করতে পারে, ‘মাংসের কার্যগুলো সম্বন্ধে পৌলের তালিকায় যেগুলোর উল্লেখ নেই, সেগুলো করার ব্যাপারে আমার শাস্ত্রীয়ভাবে অনুমতি রয়েছে।’ এর পরিবর্তে, পাঠকদের তাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে ব্যবহার করার দরকার হবে, যাতে তারা সেই বিষয়গুলোকে শনাক্ত করতে পারে যেগুলো হয়তো তালিকায় নেই কিন্তু “তৎসদৃশ।” যারা অনুতাপহীনভাবে সেই কাজগুলো করে থাকে, যেগুলোর বিষয়ে উল্লেখ নেই কিন্তু যেগুলো “তৎসদৃশ,” তারা ঈশ্বরের রাজ্যের আশীর্বাদগুলো পাবে না।
তাই, আমাদের বোঝা বা নির্ণয় করা দরকার যে, কোনটা যিহোবার দৃষ্টিতে অসন্তোষজনক। তা করা কি কঠিন? ধরুন আপনার ডাক্তার আপনাকে বেশি করে ফলমূল ও শাকসবজি খাওয়ার পরামর্শ দেন কিন্তু রসগোল্লা, আইসক্রিম ও তৎসদৃশ অন্যান্য খাবারগুলো খাওয়া এড়িয়ে চলতে বলেন। তা হলে এটা নির্ণয় করা কি কঠিন হবে যে, কেক কোন ধরনের খাদ্যতালিকার মধ্যে পড়ে? এখন আবার ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলো এবং মাংসের কার্যগুলোর দিকে নজর দিন। ওপরে উল্লেখিত মিউজিক অ্যালবামটা কোন তালিকার মধ্যে পড়ে? এটা নিশ্চিতভাবেই প্রেম, মঙ্গলভাব, ইন্দ্রিয়দমন বা ঈশ্বরের আত্মার ফলগুলোর সঙ্গে জড়িত অন্যান্য গুণগুলোকে প্রতিফলিত করে না। একজনের এটা বোঝার জন্য সরাসরি এক নিয়মের দরকার নেই যে, এই ধরনের সংগীত ঈশ্বরের চিন্তাধারার সঙ্গে মিল রাখে না। পাঠ্যপুস্তক, চলচ্চিত্র, টেলিভিশনের বিভিন্ন অনুষ্ঠান, কমপিউটার গেমস্, ওয়েব সাইটস্ এবং অন্যান্য বিষয়গুলোর প্রতি একই নীতি প্রযোজ্য।
গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিগত বেশভূষা
এ ছাড়া, বাইবেলে সেই নীতিগুলোও রয়েছে যেগুলো পোশাকআশাক ও সাজগোজের ব্যাপারগুলোর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো প্রত্যেক খ্রিস্টানকে উপযুক্ত ও মনোরম ব্যক্তিগত বেশভূষা করে যাওয়ার জন্য পরিচালিত হতে সমর্থ করে। এই ব্যাপারেও যিহোবার একজন প্রেমিক নিজেকে খুশি করার জন্য নয় কিন্তু তাঁর স্বর্গীয় পিতা যেটাতে আনন্দিত হবেন, তা করতে এটাকে এক সুযোগ বলে মনে করে। আমরা যেমন ইতিমধ্যেই দেখেছি যে, কোনো ব্যাপারে যিহোবা যদি নির্দিষ্ট নিয়মাবলি না দিয়ে থাকেন সেটার অর্থ এই নয় যে, তাঁর লোকেরা কী করে না করে, সেটার প্রতি তিনি কোনো গ্রাহ্যই করেন না। বিভিন্ন জায়গার সাজপোশাকের স্টাইল আলাদা আর এমনকি একই জায়গাতেও মাঝে মধ্যে এগুলো পালটাতে থাকে। কিন্তু, ঈশ্বর কিছু মৌলিক নীতি দিয়েছেন, যেগুলো তাঁর লোকেদেরকে সবসময় ও সব জায়গায় পরিচালনা দেবে।
উদাহরণস্বরূপ, ১ তীমথিয় ২:৯, ১০ পদ বলে: “সেই প্রকারে নারীগণও সলজ্জ ও সুবুদ্ধিভাবে পরিপাটী বেশে আপনাদিগকে ভূষিতা করুক; বেণীবদ্ধ কেশপাশে ও স্বর্ণ বা মুক্তা বা বহুমূল্য পরিচ্ছদ দ্বারা নয়, কিন্তু—যাহা ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী নারীগণের যোগ্য—সৎক্রিয়ায় ভূষিতা হউক।” তাই, খ্রিস্টীয় নারীদের—ও পুরুষদের—মনোযোগপূর্বক বিবেচনা করা উচিত যে, তাদের এলাকার লোকেরা “ঈশ্বর-ভক্তি অঙ্গীকারিণী” এমন লোকদের কাছ থেকে কী ধরনের বেশভূষা আশা করে। একজন খ্রিস্টানের এটা বিবেচনা করা বিশেষ করে যথার্থ যে, তার বেশভূষা তিনি বাইবেলের যে-বার্তা বহন করেন, সেটা সম্বন্ধে অন্যেরা কেমন বোধ করবে। (২ করিন্থীয় ৬:৩) একজন উদাহরণযোগ্য খ্রিস্টান তার নিজস্ব পছন্দ বা সম্ভাব্য অধিকারগুলো সম্বন্ধে অতিরিক্ত চিন্তিত হবেন না বরং অন্যদের জন্য যাতে ব্যাঘাত বা বিঘ্নের উৎস না হন, সেই বিষয়ে চিন্তিত হবেন।—মথি ১৮:৬; ফিলিপীয় ১:১০.
একজন খ্রিস্টান যখন দেখেন যে তার ব্যক্তিগত বেশভূষায় এক বিশেষ ধরনের সাজপোশাক অন্যদের অসন্তুষ্ট করেছে বা বিঘ্ন জন্মিয়েছে, তা হলে তিনি তার ব্যক্তিগত পছন্দগুলোকে আগে না রেখে অন্যদের আধ্যাত্মিক মঙ্গলের কথা চিন্তা করে প্রেরিত পৌলকে অনুকরণ করতে পারেন। পৌল বলেছিলেন: “যেমন আমিও খ্রীষ্টের অনুকারী, তোমরা তেমনি আমার অনুকারী হও।” (১ করি. ১০:৩৪) আর যিশু সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “খ্রীষ্টও আপনাকে তুষ্ট করিলেন না।” সমস্ত খ্রিস্টানের জন্য পৌলের পরামর্শটা স্পষ্ট: “কিন্তু বলবান যে আমরা, আমাদের উচিত, যেন দুর্ব্বলদিগের দুর্ব্বলতা বহন করি, আর আপনাদিগকে তুষ্ট না করি। আমাদের প্রত্যেক জন যাহা উত্তম, তাহার জন্য, গাঁথিয়া তুলিবার নিমিত্ত, প্রতিবাসীকে তুষ্ট করুক।”—রোমীয় ১৫:১-৩.
আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে তীক্ষ্ণ করা
কীভাবে আমরা নিজেদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে বৃদ্ধি করতে পারি, যাতে আমরা জানি যে কীভাবে যিহোবাকে খুশি করা যায়, এমনকি যখন তিনি কোনো ব্যাপারে নির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা না-ও দিয়ে থাকেন? যদি আমরা প্রতিদিন তাঁর বাক্য পড়ি, নিয়মিতভাবে তা অধ্যয়ন করি এবং যা আমরা পড়েছি, তা নিয়ে ধ্যান করি, তা হলে আমরা নিজেদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে বৃদ্ধি পেতে দেখব। এই ধরনের বৃদ্ধি দ্রুত হয় না। একটি বাচ্চার শারীরিক বৃদ্ধির মতো আধ্যাত্মিক বৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে হয় আর সেটা সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় না। তাই ধৈর্যের দরকার আর যদি আমরা সঙ্গে সঙ্গেই কোনো উন্নতি না দেখতে পাই, তা হলে আমাদের হতাশ হয়ে পড়া উচিত নয়। অন্যদিকে, শুধু সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয় আপনাআপনি তীক্ষ্ণ হয়ে উঠবে না। এই সময়গুলোতে অবশ্যই নিয়মিতভাবে ঈশ্বরের বাক্যকে বিবেচনা করা দরকার, যেমন ওপরে উল্লেখ করা হয়েছে এবং সেই বাক্যকে আমাদের জীবনে কাজে লাগানোর জন্য অবশ্যই আমাদের যথাসাধ্য করতে হবে।—ইব্রীয় ৫:১৪.
এটা বলা যেতে পারে যে, ঈশ্বরের নিয়মগুলো যেমন আমাদের বাধ্যতার পরীক্ষা নেয়, তেমনই তাঁর নীতিগুলো আমাদের আধ্যাত্মিকতার গভীরতা এবং তাঁকে খুশি করার বিষয়ে আমাদের ইচ্ছাকে পরীক্ষা করে। আধ্যাত্মিকভাবে যত আমরা বৃদ্ধি পাব, যিহোবা ও তাঁর পুত্রকে অনুকরণ করার বিষয়ে আমরা তত বেশি জোর দেব। আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তগুলোকে ঈশ্বরের চিন্তাধারার ওপর ভিত্তি করে নেওয়ার জন্য তৎপর থাকব যেমন শাস্ত্র ইঙ্গিত করে। আমরা যা কিছুই করি তাতে যখন আমরা আমাদের স্বর্গীয় পিতাকে খুশি করি, তখন আমরা দেখব যে আমাদের নিজস্ব আনন্দও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
বিভিন্ন জায়গার সাজপোশাকের স্টাইল আলাদা কিন্তু বাইবেলের নীতিগুলোর আমাদের বাছাই করাকে নির্দেশিত করা উচিত