আপনি কি যিহোবার প্রেমময় নির্দেশনা অনুসরণ করবেন?
“আমি . . . সমস্ত মিথ্যাপথ ঘৃণা করি।”—গীত. ১১৯:১২৮.
১, ২. (ক) কোনো গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য নির্দেশনা খোঁজার সময় আপনি হয়তো কোন ধরনের সাবধানবাণীকে উপলব্ধি করবেন এবং কেন? (খ) যিহোবাকে সেবা করে এমন ব্যক্তিদের জন্য তিনি কোন ধরনের সাবধানবাণী দেন এবং কেন?
এই বিষয়টা একটু কল্পনা করুন: আপনাকে একটা নির্দিষ্ট গন্তব্যের উদ্দেশে যাত্রা করতে হবে। নির্দেশনার জন্য আপনি এমন একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধুর কাছে সাহায্য চান, যিনি সেই পথ সম্বন্ধে জানেন। পুঙ্খানুপুঙ্খ নির্দেশনা দেওয়ার সময় তিনি হয়তো এইরকম কিছু বলতে পারেন: “পরবর্তী মোড় নেওয়ার সময় সাবধান থেকো। সেই পথ নির্দেশকারী সংকেত চিহ্নটা বিভ্রান্তিকর। অনেক লোক সেটা অনুসরণ করে শেষপর্যন্ত পথ হারিয়ে ফেলে।” আপনি কি তার আন্তরিক চিন্তাকে উপলব্ধি করে সেই সাবধানবাণীতে মনোযোগ দেবেন না? কিছু ক্ষেত্রে, যিহোবা সেই বন্ধুর মতো। কীভাবে আমাদের অনন্তজীবনের গন্তব্যে পৌঁছানো যায়, সেই বিষয়ে সতর্ক নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি তিনি আমাদেরকে এমন মন্দ প্রভাবগুলো সম্বন্ধেও সাবধান করেন, যেগুলো আমাদেরকে ভুল পথের দিকে পরিচালিত করতে পারে।—দ্বিতীয়. ৫:৩২; যিশা. ৩০:২১.
২ এই প্রবন্ধে ও পরের প্রবন্ধে আমরা এমন কিছু প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করব, যেগুলো সম্বন্ধে আমাদের বন্ধু যিহোবা ঈশ্বর আমাদের সাবধান করেন। আসুন আমরা এই বিষয়টা মনে রাখি যে, যিহোবা আন্তরিক চিন্তা এবং প্রেমের বশবর্তী হয়েই এইরকম সাবধানবাণী দেন। তিনি চান যেন আমরা আমাদের গন্তব্যে পৌঁছাই। মানুষকে মন্দ প্রভাবগুলোর কাছে নতিস্বীকার করতে দেখা এবং পথ হারিয়ে ফেলতে দেখা তাঁকে কষ্ট দেয়। (যিহি. ৩৩:১১) এই প্রবন্ধে আমরা তিনটে নেতিবাচক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করব। প্রথমটা হল বাইরে থেকে আসা চাপ এবং দ্বিতীয়টা হল ভিতর থেকে আসা চাপ। আর তৃতীয়টা এমনকী বাস্তব কোনো কিছু নয়; কিন্তু, সেটা খুবই বিপদজনক। আমাদের জানতে হবে যে, এই প্রভাবগুলো কী এবং সেগুলো প্রতিরোধ করার জন্য কীভাবে আমাদের স্বর্গীয় পিতা আমাদেরকে শিক্ষা দেন। একজন অনুপ্রাণিত গীতরচক যিহোবার উদ্দেশে এই কথা বলেছিলেন: “আমি . . . সমস্ত মিথ্যাপথ ঘৃণা করি।” (গীত. ১১৯:১২৮) আপনিও কি একইরকম অনুভব করেন? আসুন আমরা দেখি যে, কীভাবে আমরা সেইরকম অনুভূতিকে আরও গভীর করতে পারি এবং সেই অনুযায়ী কাজ করতে পারি।
‘বহু লোকের পশ্চাৎ’ অনুসরণ করবেন না
৩. (ক) কোন পথে যেতে হবে, সেই ব্যাপারে আমরা যদি অনিশ্চিত থাকি, তাহলে অন্য ভ্রমণকারীদের অনুসরণ করা কেন বিপদজনক হতে পারে? (খ) যাত্রাপুস্তক ২৩:২ পদে আমরা কোন গুরুত্বপূর্ণ নীতি খুঁজে পাই?
৩ কোনো দীর্ঘ যাত্রা করার সময়, কোন পথে যেতে হবে, সেই ব্যাপারে আপনি যদি অনিশ্চিত থাকেন, তাহলে আপনি কী করবেন? আপনি হয়তো অন্যান্য ভ্রমণকারীকে অনুসরণ করার জন্য প্রলুব্ধ হবেন—বিশেষভাবে আপনি যদি দেখেন যে, অনেকেই তা করা বেছে নিচ্ছে। এই ধরনের কাজ ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ সেই ভ্রমণকারীরা হয়তো আপনি যে-গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন, সেদিকে যাচ্ছে না কিংবা তারাও হয়তো পথ হারিয়ে ফেলতে পারে। এই প্রসঙ্গে, প্রাচীন ইস্রায়েলে প্রদত্ত আইনগুলোর মধ্যে একটা আইনের পিছনে বিদ্যমান নীতিটা বিবেচনা করুন। বিচার সংক্রান্ত বিষয়ে যারা বিচারক অথবা সাক্ষি হিসেবে কাজ করত, তাদেরকে ‘বহু লোকের পশ্চাৎ’ অনুসরণ করার বিপদ সম্বন্ধে সাবধান করা হয়েছিল। (পড়ুন, যাত্রাপুস্তক ২৩:২.) কোনো সন্দেহ নেই যে, অসিদ্ধ মানুষের পক্ষে সঙ্গীসাথির চাপের কাছে নতিস্বীকার করে ন্যায়বিচারকে বিকৃত করে ফেলা খুবই সহজ। কিন্তু, বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ না করার সেই নীতি কি বিচার সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ ছিল? একেবারেই না।
৪, ৫. কীভাবে যিহোশূয় ও কালেব বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করার চাপ অনুভব করেছিল কিন্তু কোন বিষয়টা তাদেরকে সেটা প্রতিরোধ করতে সমর্থ করেছিল?
৪ বাস্তবে, ‘বহু লোকের পশ্চাৎ’ অনুসরণ করার চাপ আমাদেরকে যেকোনো সময়েই প্রভাবিত করতে পারে। এই চাপ হঠাৎ করেই আসতে পারে এবং তা প্রতিরোধ করা খুবই কঠিন হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোশূয় ও কালেব একবার সঙ্গীসাথির কাছ থেকে যে-চাপের মুখোমুখি হয়েছিল, সেই সম্বন্ধে একটু চিন্তা করে দেখুন। তারা সেই ১২ জন ব্যক্তির দলের মধ্যে ছিল, যারা প্রতিজ্ঞাত দেশ নিরীক্ষণ করার জন্য সেখানে গিয়েছিল। ফিরে আসার পর, তাদের মধ্যে ১০ জন খুবই নেতিবাচক ও নিরুৎসাহজনক সংবাদ দিয়েছিল। এমনকী তারা দাবি করেছিল যে, সেই দেশের কিছু অধিবাসী নেফিলিমদের দৈত্যাকৃতি বংশধর ছিল, যে-নেফিলিমরা বিদ্রোহী স্বর্গদূত ও পৃথিবীর নারীদের সন্তান ছিল। (আদি. ৬:৪) কিন্তু, সেই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক ছিল। সেই দুষ্ট সংকরজাতিকে শত শত বছর আগেই জলপ্লাবনের সময় ধ্বংস করা হয়েছিল আর তাদের মধ্যে একজনও রক্ষা পায়নি। তবে এমনকী একেবারে ভিত্তিহীন ধারণাগুলোও বিশ্বাসে দুর্বল এমন ব্যক্তিদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারে। সেই দশ জন গুপ্তচরের কাছ থেকে পাওয়া নেতিবাচক সংবাদ লোকেদের মধ্যে দ্রুত ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে দিয়েছিল। অল্প সময়ের মধ্যে, অধিকাংশ লোক এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, যিহোবার নির্দেশ অনুযায়ী প্রতিজ্ঞাত দেশে প্রবেশ করা ভুল হবে। সেই অস্থির পরিস্থিতিতে, যিহোশূয় ও কালেব কী করেছিল?—গণনা. ১৩:২৫-৩৩.
৫ তারা বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করেনি। যদিও লোকেরা তাদের কথা শুনতে একবারেই পছন্দ করেনি, তবুও সেই দুজন ব্যক্তি সত্য বিষয়টা বলেছিল এবং তাতে স্থির ছিল—এমনকী সেই সময়েও, যখন তাদেরকে পাথর ছুড়ে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছিল! তারা কোথা থেকে এই ধরনের সাহস অর্জন করেছিল? নিঃসন্দেহে, এই ক্ষেত্রে তাদের বিশ্বাস এক বড়ো ভূমিকা পালন করেছিল। বিশ্বাসী লোকেরা মানুষের ভিত্তিহীন দাবি এবং যিহোবা ঈশ্বরের পবিত্র প্রতিজ্ঞাগুলোর মধ্যে পার্থক্যটা স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। যিহোশূয় ও কালেব পরবর্তী সময়ে প্রকাশ করেছিল যে, যিহোবার প্রতিটা প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ করার ব্যাপারে তাঁর নথি সম্বন্ধে তারা কেমন অনুভব করে। (পড়ুন, যিহোশূয়ের পুস্তক ১৪:৬, ৮; ২৩:২, ১৪.) যিহোশূয় ও কালেব তাদের বিশ্বস্ত ঈশ্বরের প্রতি অনুরক্ত ছিল আর তারা অবিশ্বাসী লোকেদের অনুসরণ করার জন্য তাঁকে কষ্ট দেওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারেনি। তাই, তারা দৃঢ় ছিল, বর্তমানে আমাদের জন্য এক চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করেছিল।—গণনা. ১৪:১-১০.
৬. কোন কোন উপায়ে আমরা হয়তো বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করার চাপ অনুভব করতে পারি?
৬ আপনি কি কখনো বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করার চাপ অনুভব করেছেন? যে-লোকেরা যিহোবার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন এবং তাঁর নৈতিক মানগুলোকে অবজ্ঞা করে, নিশ্চিতভাবে তাদেরকে নিয়ে বর্তমানে বহু লোকের এক বিশাল দল গঠিত। যখন আমোদপ্রমোদ ও বিনোদনের বিষয়টা আসে, তখন সেই লোকেরা প্রায়ই ভিত্তিহীন ধারণাগুলো তুলে ধরে। তারা হয়তো দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে পারে যে, টেলিভিশনের অনুষ্ঠান, সিনেমা এবং ভিডিও গেমস্গুলোতে অবাধে প্রদর্শিত অনৈতিকতা, দৌরাত্ম্য ও প্রেতচর্চা ক্ষতিকর নয়। (২ তীম. ৩:১-৫) আপনি যখন নিজের অথবা আপনার পরিবারের জন্য আমোদপ্রমোদ ও বিনোদন বাছাই করেন, তখন আপনি কি অন্যের দুর্বল বিবেকের দ্বারা আপনার বিভিন্ন সিদ্ধান্ত এবং বিবেককে প্রভাবিত হতে দেন? সেটা কি আসলে বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করার মতোই বিষয় নয়?
৭, ৮. (ক) আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল” কীভাবে প্রশিক্ষিত হয় এবং কেন এইরকম প্রশিক্ষণ কঠোর নিয়মের এক বিরাট তালিকা অনুসরণ করার চেয়ে আরও বেশি কার্যকারী? (খ) কেন অনেক অল্পবয়সি খ্রিস্টানের উদাহরণকে আপনার কাছে হৃদয়গ্রাহী বলে মনে হয়?
৭ যিহোবা আমাদেরকে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করার জন্য এক মূল্যবান উপহার—আমাদের “জ্ঞানেন্দ্রিয় সকল”—প্রদান করেছেন। কিন্তু, সেই জ্ঞানেন্দ্রিয়কে “অভ্যাস প্রযুক্ত” পটু বা প্রশিক্ষিত হতে হবে। (ইব্রীয় ৫:১৪) বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করা আমাদের জ্ঞানেন্দ্রিয়কে প্রশিক্ষিত করবে না; আবার অন্যদিকে, বিবেকের বিষয়গুলোতে কঠোর নিয়মের এক বিরাট তালিকাও প্রশিক্ষিত করবে না। উদাহরণস্বরূপ, এই কারণেই যিহোবার লোকেদেরকে কোন ধরনের সিনেমা, বইপত্র ও ইন্টারনেট সাইট এড়িয়ে চলতে হবে, সেই বিষয়ে কোনো তালিকা দেওয়া হয় না। এই জগৎ যেহেতু খুব দ্রুত পরিবর্তিত হয়, তাই সেই ধরনের এক তালিকা তৈরি হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই বাতিল হয়ে যাবে। (১ করি. ৭:৩১) কিন্তু, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে-কারণে অন্যেরা আমাদের হয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বলে আমরা আশা করি না, তা হল আমরা যিহোবাদত্ত আমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে ব্যবহার করতে চাই। যিহোবা চান যেন আমরা বাইবেল যা বলে, তা নিয়ে সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা করি, তাঁর নির্দেশনার জন্য প্রার্থনা করি আর তার পর এমন সিদ্ধান্তগুলো নিই, যেগুলো তাঁকে খুশি করে।—ইফি. ৫:১০.
৮ অবশ্য, আমাদের বাইবেলভিত্তিক সিদ্ধান্তগুলো হয়তো কখনো কখনো আমাদেরকে অন্যদের কাছে অপ্রিয় করে তুলতে পারে। স্কুলপড়ুয়া অল্পবয়সি খ্রিস্টানরা হয়তো অন্য সবাই যা দেখছে ও করছে, তা দেখার এবং করার জন্য বহু লোকের কাছ থেকে কঠিন চাপের মুখোমুখি হতে পারে। (১ পিতর ৪:৪) তাই, এটা দেখা খুবই আনন্দদায়ক যে, খ্রিস্টান অল্পবয়সিরা এবং বয়স্ক খ্রিস্টানরা যিহোশূয় ও কালেবের বিশ্বাস অনুকরণ করে বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করা প্রত্যাখ্যান করে।
‘আপনার হৃদয় ও চক্ষুর’ অনুগমন করবেন না
৯. (ক) কোনো যাত্রা করার সময় শুধুমাত্র নিজের খেয়ালখুশিমতো ও ইচ্ছেমতো এগিয়ে চলা কেন বিপদজনক হতে পারে? (খ) কেন গণনাপুস্তক ১৫:৩৭-৩৯ পদে প্রাপ্ত আইনটা ঈশ্বরের প্রাচীনকালের লোকেদের কাছে তাৎপর্যপূর্ণ ছিল?
৯ আমরা দ্বিতীয় যে-বিপদজনক প্রভাব সম্বন্ধে আলোচনা করব, তা হচ্ছে ভিতর থেকে আসা চাপ। আমরা হয়তো এটাকে এভাবে তুলে ধরতে পারি: আপনি যদি কোনো নির্দিষ্ট গন্তব্যে যাত্রা করতেন, তাহলে আপনি কি আপনার মানচিত্র বাদ দিয়ে শুধুমাত্র নিজের ইচ্ছেমতো—হতে পারে, সুন্দর দৃশ্য রয়েছে বলে মনে হয় এমন সমস্ত পথে মোড় নিয়ে—এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়টা কল্পনা করতে পারতেন? স্পষ্টতই, নিজের ইচ্ছেমতো এগিয়ে চলা আপনাকে আপনার গন্তব্যে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বাধা দেবে। এক্ষেত্রে, প্রাচীন ইস্রায়েলের উদ্দেশে দেওয়া যিহোবার আরেকটা আইন বিবেচনা করুন। বর্তমানে অনেকে হয়তো বস্ত্রের কোণে থোপ দেওয়ার ও নীল সুতো বাঁধার আইনকে বোঝা কঠিন বলে মনে করতে পারে। (পড়ুন, গণনাপুস্তক ১৫:৩৭-৩৯.) কিন্তু, আপনি কি এর তাৎপর্য বুঝতে পেরেছেন? এইরকম আইনের বাধ্য হওয়া ঈশ্বরের লোকেদেরকে তাদের আশেপাশের পৌত্তলিক জাতিগুলো থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র ও পৃথক রাখতে সাহায্য করেছিল। সেই আইন পালন করা অতীব গুরুত্বপূর্ণ ছিল, যদি তারা যিহোবার অনুমোদন লাভ করতে এবং তা বজায় রাখতে চাইত। (লেবীয়. ১৮:২৪, ২৫) তবে, সেই আইন ভিতর থেকে আসা এক বিপদজনক চাপ সম্বন্ধেও প্রকাশ করে, যা আমাদেরকে আমাদের অনন্তজীবনের গন্তব্য থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। কীভাবে?
১০. কীভাবে যিহোবা মানবস্বভাব সম্বন্ধে অন্তর্দৃষ্টি প্রকাশ করেছেন?
১০ লক্ষ করুন যে, এই আইন দেওয়ার পিছনে এক কারণ হিসেবে যিহোবা তাঁর লোকেদের কী বলেছেন: “আপনাদের যে হৃদয় ও চক্ষুর অনুগমনে তোমরা ব্যভিচারী হইয়া থাক, তদনুগমনে ভ্রমণ না কর।” মানবস্বভাব সম্বন্ধে যিহোবার গভীর অন্তর্দৃষ্টি রয়েছে। তিনি ভালোভাবেই জানেন যে, আমাদের হৃদয় অথবা ভিতরের ব্যক্তি কতটা সহজেই আমাদের চোখের মাধ্যমে আমরা যা দেখি, সেগুলোর দ্বারা প্রতারিত হতে পারে। তাই, বাইবেল আমাদের সাবধান করে: “অন্তঃকরণ সর্ব্বাপেক্ষা বঞ্চক, তাহার রোগ অপ্রতিকার্য্য, কে তাহা জানিতে পারে?” (যির. ১৭:৯) তাহলে, আপনি কি বুঝতে পারছেন যে, ইস্রায়েলীয়দের উদ্দেশে যিহোবার সাবধানবাণী কতটা উপযুক্ত ছিল? তিনি ভালোভাবেই জানতেন যে, তারা তাদের আশেপাশের পৌত্তলিক লোকেদের দেখার জন্য উৎসুক হবে এবং যা দেখবে, সেটার দ্বারা প্রতারিত হবে। তারা হয়তো সেই অবিশ্বাসীদের মতো হওয়ার জন্য আর এরপর তাদের মতো চিন্তা, অনুভব ও কাজ করার জন্য প্রলুব্ধ হবে।—হিতো. ১৩:২০.
১১. কীভাবে আমরা হয়তো আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর দ্বারা প্রতারিত হতে পারি?
১১ বর্তমানে, আমাদের বঞ্চক হৃদয় এমনকী আমাদের ইন্দ্রিয়গুলোর দ্বারা আরও সহজেই প্রতারিত হতে পারে। আমরা এমন এক জগতে বাস করছি, যেটার উদ্দেশ্যই হচ্ছে মাংসিক আকাঙ্ক্ষাকে চরিতার্থ করা। তাই, কীভাবে আমরা গণনাপুস্তক ১৫:৩৯ পদের পিছনে পাওয়া নীতিটা কাজে লাগাতে পারি? একটু বিবেচনা করে দেখুন: স্কুলে, কর্মক্ষেত্রে অথবা আপনার এলাকায় আপনার আশেপাশের লোকেরা যদি দিন দিন আরও যৌনউদ্দীপক পোশাক-আশাক পরে থাকে, তাহলে আপনিও কি প্রভাবিত হবেন? আপনি কি ‘আপনার হৃদয় ও চক্ষুর অনুগমন’ করার জন্য প্রলুব্ধ হয়ে আপনি যা দেখেন, সেটার দ্বারা প্রতারিত হবেন? এরপর আপনিও কি সেই একই উপায়ে পোশাক-আশাক পরার মাধ্যমে নিজস্ব মানগুলোকে হালকা করে ফেলবেন?—রোমীয় ১২:১, ২.
১২, ১৩. (ক) আমাদের চোখ যদি সেই জায়গায় বিচরণ করতে চায়, যেখানে করা উচিত নয়, তাহলে আমাদের কী করা উচিত? (খ) কী আমাদেরকে অন্যদের কাছে প্রলোভনের এক উৎস হয়ে ওঠা এড়িয়ে চলার জন্য অনুপ্রাণিত করতে পারে?
১২ আমাদের জরুরি ভিত্তিতে ইন্দ্রিয়দমন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা করতে হবে। আমাদের চোখ যদি সেই জায়গায় বিচরণ করতে চায়, যেখানে করা উচিত নয়, তাহলে আমরা যেন বিশ্বস্ত ব্যক্তি ইয়োবের দৃঢ়সংকল্পের বিষয়ে স্মরণ করি, যিনি তার নিজ চোখের সঙ্গে এক চুক্তি করেছিলেন—তার স্ত্রী নয় এমন নারীর প্রতি রোমান্টিক আগ্রহ প্রকাশ না করার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। (ইয়োব ৩১:১) একইভাবে, রাজা দায়ূদ এই দৃঢ়সংকল্প প্রকাশ করেছিলেন: “আমি কোন জঘন্য পদার্থ চক্ষের সম্মুখে রাখিব না।” (গীত. ১০১:৩) আমাদের শুদ্ধ বিবেককে এবং যিহোবার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে নষ্ট করতে পারে এমন যেকোনো কিছুই হচ্ছে আমাদের জন্য “জঘন্য পদার্থ।” সেটার অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে এমন যেকোনো প্রলোভন, যা আমাদের চোখের কাছে আবেদনময় এবং যা আমাদের হৃদয়কে ভুল কাজ করে প্রতারিত করার ক্ষেত্রে এক হুমকি স্বরূপ।
১৩ অন্যদিকে, আমরা নিশ্চিতভাবেই অন্যদেরকে ভুল কাজ করার জন্য চিন্তা করতে প্রলুব্ধ করার মাধ্যমে তাদের কাছে, এক অর্থে, “জঘন্য পদার্থ” হয়ে উঠতে চাই না। তাই আমরা পরিপাটী ও সলজ্জ পোশাক-আশাক পরার ব্যাপারে বাইবেলের অনুপ্রাণিত পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে থাকি। (১ তীম. ২:৯) সলজ্জভাব বা শালীনতা এমন কোনো বিষয় নয়, যেটাকে আমরা নিজেদের ইচ্ছেমতো নির্ধারণ করব। আমাদেরকে আমাদের আশেপাশের ব্যক্তিদের বিবেক ও আবেগঅনুভূতি বিবেচনা করতে হবে, তাদের মনের শান্তি এবং মঙ্গলকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। (রোমীয় ১৫:১, ২) খ্রিস্টীয় মণ্ডলীতে এমন হাজার হাজার অল্পবয়সি রয়েছে, যারা এই বিষয়ে চমৎকার উদাহরণ স্থাপন করে থাকে। এটা দেখে আমরা কতই না গর্বিত হই যে, তারা ‘আপনাদের হৃদয় ও চক্ষুর অনুগমন’ করতে প্রত্যাখ্যান করে এবং এর পরিবর্তে তাদের সমস্ত কাজে—এমনকী তারা যেভাবে পোশাক-আশাক পরে, তাতেও—যিহোবাকে খুশি করা বেছে নেয়!
“অবস্তুর” অনুগমন করবেন না
১৪. “অবস্তুর” বা অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার ব্যাপারে শমূয়েল কোন সাবধানবাণী দিয়েছিলেন?
১৪ কল্পনা করুন যে, আপনি যাত্রা করতে করতে একটা বিশাল মরুভূমিতে গিয়ে পড়েছেন। আপনি যদি একটা মরীচিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে হঠাৎ পথ পরিবর্তন করেন, তাহলে কী হবে? সেই মরীচিকার পিছনে ছোটা আপনার জীবন কেড়ে নিতে পারে! যিহোবা সেই বিপদ সম্বন্ধে ভালোভাবেই জানেন। একটা উদাহরণ বিবেচনা করে দেখুন। ইস্রায়েলীয়রা তাদের আশেপাশের সেই জাতিগুলোর মতো হতে চেয়েছিল, যারা মানবরাজাদের দ্বারা শাসিত হচ্ছিল। সেইরকম আকাঙ্ক্ষা করা আসলে এক গুরুতর পাপ ছিল কারণ সেটা তাদের রাজা হিসেবে যিহোবাকে প্রত্যাখ্যান করার সমতুল্য। যদিও যিহোবা তাদেরকে একজন মানবরাজা লাভ করার সুযোগ দিয়েছিলেন, কিন্তু তিনি তাঁর ভাববাদী শমূয়েলের মাধ্যমে “অবস্তুর” বা অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার ব্যাপারে এক সুস্পষ্ট সাবধানবাণী দিয়েছিলেন।—পড়ুন, ১ শমূয়েল ১২:২১.
১৫. ইস্রায়েলীয়রা কীভাবে অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছুটেছিল?
১৫ সেই লোকেরা কি এইরকম চিন্তা করেছিল যে, একজন মানবরাজা যিহোবার চেয়ে কোনো না কোনোভাবে আরও বাস্তব, আরও নির্ভরযোগ্য হবেন? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে তারা সত্যিই এক অবাস্তব বিষয়ের পিছনে ছুটছিল! আর তারা শয়তানের অন্যান্য অনেক মরীচিকার পিছনে ছোটার বিপদের মুখে ছিল। মানবরাজারা খুব সহজেই তাদেরকে প্রতিমাপূজার দিকে পরিচালিত করবে। প্রতিমাপূজকরা ভুলভাবে এইরকম চিন্তা করে থাকে যে, দৃশ্যত বস্তুগুলো—কাঠ বা পাথরের তৈরি দেব-দেবী—কোনো না কোনোভাবে সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা অদৃশ্য ঈশ্বর যিহোবার চেয়ে আরও বাস্তব, আরও নির্ভরযোগ্য। কিন্তু, প্রেরিত পৌল যেমনটা বলেছিলেন, প্রতিমাগুলো “কিছুই নয়।” (১ করি. ৮:৪) তারা দেখতে, শুনতে, কথা বলতে অথবা কাজ করতে পারে না। যদিও আপনি হয়তো সেগুলোকে দেখতে ও স্পর্শ করতে পারেন কিন্তু আপনি যদি সেগুলোর মধ্যে কোনো একটার উপাসনা করেন, তাহলে আপনি সত্যিকার অর্থেই এমন এক অবাস্তব বিষয়ের—এক অর্থহীন মরীচিকার—পিছনে ছুটছেন, যা কেবল বিপর্যয় নিয়ে আসবে।—গীত. ১১৫:৪-৮.
১৬. (ক) কীভাবে শয়তান বর্তমানে অনেক লোককে অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার জন্য প্রলুব্ধ করে? (খ) কেন আমরা বলতে পারি যে, বিশেষভাবে যিহোবা ঈশ্বরের সঙ্গে তুলনা করলে, বস্তুগত বিষয়গুলো হচ্ছে অবাস্তব বিষয়?
১৬ শয়তান এখনও লোকেদেরকে অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছোটার জন্য প্ররোচিত করার ব্যাপারে সুনিপুণ। উদাহরণস্বরূপ, সে অসংখ্য লোককে নিরাপত্তা লাভ করার ক্ষেত্রে বস্তুগত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করার জন্য প্রতারিত করেছে। টাকাপয়সা, সহায়সম্পদ ও ভালো বেতনের চাকরি হয়তো বিভিন্ন সুযোগসুবিধা নিয়ে আসতে পারে। কিন্তু, যখন স্বাস্থ্য দুর্বল হয়ে পড়ে, অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দেয় অথবা কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ আঘাত হানে, তখন বস্তুগত বিষয়গুলো কী দেয়? যখন লোকেরা ভিতরে ভিতরে শূন্যতা অনুভব করে এবং কোনো উদ্দেশ্য, নির্দেশনা ও জীবনের আরও গুরুতর প্রশ্নগুলোর উত্তর লাভের প্রয়োজন অনুভব করে, তখন সেগুলো কী দেয়? মৃত্যুর মুখে সেগুলো কোন স্বস্তি প্রদান করে? আমরা যদি আধ্যাত্মিক চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য বস্তুগত বিষয়গুলোর ওপর নির্ভর করি, তাহলে আমরা হতাশ হব। বস্তুগত সহায়সম্পদ কিছুই দেয় না; সেগুলো অবাস্তব বিষয়। শেষপর্যন্ত, সেগুলো এমনকী শারীরিক নিরাপত্তাও দিতে পারে না কারণ মানবজীবনের বর্তমান স্বল্প আয়ু অথবা সম্ভাব্য অসুস্থতা ও মৃত্যুর ওপর সেগুলোর কোনো স্থায়ী প্রভাব নেই। (হিতো. ২৩:৪, ৫) তাই, আমাদের ঈশ্বর যিহোবা আরও কতই না বাস্তব! তাঁর সঙ্গে এক দৃঢ় সম্পর্ক বজায় রাখার দ্বারাই আমরা প্রকৃত নিরাপত্তা লাভ করতে পারি। কতই না চমৎকার এক আশীর্বাদ! আমরা যেন কখনো অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছুটতে গিয়ে তাঁকে পরিত্যাগ না করি।
১৭. আমরা যে-নেতিবাচক প্রভাবগুলোর বিষয়ে আলোচনা করেছি, সেগুলোর ব্যাপারে আপনার দৃঢ়সংকল্প কী?
১৭ জীবনের যাত্রাপথে আমাদের বন্ধু ও নির্দেশক হিসেবে যিহোবাকে পেয়ে আমরা কি আনন্দিত নই? আমরা যদি তিনটে মন্দ প্রভাবের—বহু লোক, নিজ হৃদয় ও অবাস্তব বিষয়গুলোর—বিরুদ্ধে দেওয়া তাঁর প্রেমময় সাবধানবাণীতে ক্রমাগত মনোযোগ দিই, তাহলে আমাদের অনন্তজীবনের গন্তব্যে পৌঁছানোর সম্ভাবনা আরও বেশি থাকবে। পরবর্তী প্রবন্ধে আমরা এমন আরও তিনটে সাবধানবাণী সম্বন্ধে আলোচনা করব, যেগুলো যিহোবা আমাদেরকে সাহায্য করার জন্য জুগিয়েছেন, যাতে আমরা সেই মিথ্যা পথগুলো ঘৃণা করতে ও এড়িয়ে চলতে পারি, যে-পথগুলো অনেক লোককে বিপথে পরিচালিত করেছে।—গীত. ১১৯:১২৮.
আপনি কী মনে করেন?
নীচে উল্লেখিত শাস্ত্রপদগুলোতে যে-নীতি প্রকাশ করা হয়েছে, সেগুলো আপনি কীভাবে ব্যক্তিগতভাবে কাজে লাগাতে পারেন?
• যাত্রাপুস্তক ২৩:২
• গণনাপুস্তক ১৫:৩৭-৩৯
[১১ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি কখনো বহু লোকের পশ্চাৎ অনুসরণ করার জন্য প্রলুব্ধ হয়েছেন?
[১৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
কেন ইচ্ছেমতো এগিয়ে চলা বিপদজনক?
[১৪ পৃষ্ঠার চিত্র]
আপনি কি অবাস্তব বিষয়গুলোর পিছনে ছুটছেন?