আপনি কি ঈশ্বরের প্রতি আপনার সমস্ত কর্তব্য পালন করছেন?
“ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।”—উপদেশক ১২:১৪.
১. যিহোবা তাঁর লোকেদের সাহায্য করার জন্য কী কী ব্যবস্থা করেছেন?
যিহোবা তাদের সাহায্য করেন যারা তাঁকে তাদের মহান সৃষ্টিকর্তা বলে সবসময় স্মরণ করেন। তিনি তাঁর অনুপ্রাণিত বাক্যে বলেন যে তাঁকে সম্পূর্ণ খুশি করার জন্য তাদের কী করা দরকার। ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা তাদেরকে তাঁর ইচ্ছা পালন করার এবং “সমস্ত সৎকর্ম্মে ফলবান্” হওয়ার জন্য শেখায়। (কলসীয় ১:৯, ১০) এছাড়াও, যিহোবা ‘বিশ্বস্ত ও বুদ্ধিমান্ দাসদের’ মাধ্যমে আত্মিক খাদ্য এবং ঐশিক নির্দেশনা জোগান। (মথি ২৪:৪৫-৪৭) অতএব, ঈশ্বরের লোকেরা যখন যিহোবাকে সেবা করেন এবং রাজ্যের সুসমাচার প্রচারের জরুরি কাজ করেন তখন যিহোবা তাদের প্রচুর সাহায্য করেন।—মার্ক ১৩:১০.
২. যিহোবার পরিচর্যার বিষয়ে কোন্ প্রশ্নগুলো উঠতে পারে?
২ সত্য খ্রীষ্টানেরা যিহোবার পবিত্র পরিচর্যা করতে পেরে সুখী। তবুও কেউ কেউ হয়তো নিরুৎসাহিত হতে পারেন এবং মনে করতে পারেন যে তারা অনর্থকই কঠোর পরিশ্রম করছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মাঝে মধ্যে উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানেরা হয়তো ভাবতে পারেন যে ঈশ্বরকে সেবা করার জন্য তারা তাদের মনপ্রাণ ঢেলে যেসব কাজ করছেন তার আসলেই কোন মূল্য আছে কি না। পরিবারের একজন মস্তকের মনে হয়তো পারিবারিক অধ্যয়ন ও অন্যান্য কাজগুলো সম্বন্ধে এই প্রশ্ন আসতে পারে: ‘আমরা যা কিছু করছি তাতে কি যিহোবা সত্যিই খুশি? আমরা কি যিহোবার প্রতি আমাদের সমস্ত কর্তব্য পালন করছি?’ উপদেশকের জ্ঞানের কথা এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পেতে সাহায্য করতে পারে।
সমস্তকিছুই কি অসার?
৩. উপদেশক ১২:৮ পদের সঙ্গে মিল রেখে কী সবচেয়ে বেশি অসার?
৩ কেউ কেউ হয়তো ভাবতে পারেন যে জ্ঞানী ব্যক্তির কথাগুলো যুবক বা বৃদ্ধ কাউকেই উৎসাহ দেওয়ার বদলে বরং নিরাশ করে দেয়। কারণ “উপদেশক কহিতেছেন, অসারের অসার, সকলই অসার।” (উপদেশক ১২:৮) আসলে, একজন ব্যক্তি যদি তার যৌবনকালে মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ না করেন, তাঁকে সেবা না করে সারা জীবন কাটিয়ে দিয়ে বুড়ো বয়সের মুখ দেখেন, তাহলে এর চেয়ে বেশি অসার আর কিছু নেই। এইরকম এক ব্যক্তির জন্য সমস্তকিছুই অসার বা মিথ্যে হয়ে যায় এমনকি যদিও তিনি এই জগতের ধন ও খ্যাতি নিয়ে মারা যান, যা শয়তান দিয়াবল অর্থাৎ পাপাত্মার মধ্যে শুয়ে আছে।—১ যোহন ৫:১৯.
৪. কেন বলা যেতে পারে যে সমস্তকিছুই অসার নয়?
৪ কিন্তু, যিহোবার বিশ্বস্ত দাসদের জন্য, যারা স্বর্গে ধন সঞ্চয় করেন, তাদের সমস্তকিছুই অসার নয়। (মথি ৬:১৯, ২০) তারা প্রভুর কাজে অনেক কিছু করেন আর তাদের এই পরিশ্রম কখনই নিষ্ফল হয় না। (১ করিন্থীয় ১৫:৫৮) কিন্তু আমরা যদি উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টান হয়ে থাকি, তাহলে এই শেষকালে ঈশ্বর আমাদের যে কাজ দিয়েছেন তা কি আমরা সবসময় করে চলেছি? (২ তীমথিয় ৩:১) কিংবা আমরা কি এমনভাবে জীবনযাপন করছি যা দেখে মনে হয় না যে আমাদের ও আমাদের প্রতিবেশীদের মধ্যে তেমন কোন পার্থক্য আছে? তারা হয়তো তাদের নিজেদের ধর্মগুলো মেনে উপাসনা করেন, তারা হয়তো কিছুটা ধর্মপ্রাণও আর সেইজন্য তারা নিয়মিত তাদের উপাসনালয়ে যান, তাদের উপাসনার জন্য যা যা করা দরকার নিখুঁতভাবে তা করেন। কিন্তু তারা রাজ্যের বার্তা প্রচার করেন না। এটাই যে “শেষকাল” সেই সম্বন্ধে তাদের কোন সঠিক জ্ঞান নেই আর আমরা যে সময়ে বাস করছি তা যে কতটা জরুরি সেই বিষয়েও তারা কিছুই জানেন না।—দানিয়েল ১২:৪.
৫. রোজকার জীবনের কাজগুলোই যদি আমাদের কাছে প্রধান হয়ে দাঁড়ায়, তাহলে আমাদের কী করা উচিত?
৫ যীশু খ্রীষ্ট আমাদের এই কঠিন সময় সম্বন্ধে বলেছিলেন: “বাস্তবিক নোহের সময়ে যেরূপ হইয়াছিল, মনুষ্যপুত্ত্রের আগমনও তদ্রূপ হইবে। কারণ জলপ্লাবনের সেই পূর্ব্ববর্ত্তী কালে, জাহাজে নোহের প্রবেশ দিন পর্য্যন্ত, লোকে যেমন ভোজন ও পান করিত, বিবাহ করিত ও বিবাহিতা হইত, এবং বুঝিতে পারিল না, যাবৎ না বন্যা আসিয়া সকলকে ভাসাইয়া লইয়া গেল; তদ্রূপ মনুষ্যপুত্ত্রের আগমন হইবে।” (মথি ২৪:৩৭-৩৯) বেঁচে থাকার জন্য আমাদের খাওয়াদাওয়া করা দরকার আর বিয়ের ব্যবস্থা ঈশ্বর নিজেই করেছিলেন। (আদিপুস্তক ২:২০-২৪) কিন্তু আমরা যদি বুঝি যে রোজকার জীবনের কাজগুলোই আমাদের কাছে প্রধান হয়ে দাঁড়িয়েছে, তাহলে এই বিষয়ে প্রার্থনা করি না কেন? যিহোবা আমাদের রাজ্যকে প্রথমে রাখতে, ঠিক কাজ করতে এবং তাঁর প্রতি আমাদের কর্তব্যকে পালন করতে সাহায্য করবেন।—মথি ৬:৩৩; রোমীয় ১২:১২; ২ করিন্থীয় ১৩:৭.
উৎসর্গীকরণ এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের কর্তব্য
৬. কিছু বাপ্তিস্মিত সাক্ষি কীভাবে ঈশ্বরের প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করছেন না?
৬ কিছু বাপ্তিস্মিত খ্রীষ্টানদের অন্তর থেকে প্রার্থনা করা দরকার কারণ তারা তাদের কর্তব্যগুলো ঠিকমতো পালন করছেন না, যা তারা ঈশ্বরের কাছে নিজেদের উৎসর্গ করার সময় করবেন বলে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। বেশ কিছু বছর ধরে প্রতি বছর ৩,০০,০০০ জনেরও বেশি লোক বাপ্তিস্ম নিচ্ছেন কিন্তু সেই অনুপাতে সক্রিয় যিহোবার সাক্ষিদের মোট সংখ্যা বাড়ছে না। কিছু বাপ্তিস্মিত প্রকাশকেরা প্রচার করা বন্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু, বাপ্তিস্ম নেওয়ার আগেই একজনের খুবই উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার করতে হবে। তবেই তিনি যীশু তাঁর সমস্ত শিষ্যদের যে কাজ দিয়েছিলেন সেই সম্বন্ধে ভালভাবে জানতে পারবেন: “তোমরা গিয়া সমুদয় জাতিকে শিষ্য কর; পিতার ও পুত্ত্রের ও পবিত্র আত্মার নামে তাহাদিগকে বাপ্তাইজ কর; আমি তোমাদিগকে যাহা যাহা আজ্ঞা করিয়াছি সে সমস্ত পালন করিতে তাহাদিগকে শিক্ষা দেও। আর দেখ, আমিই যুগান্ত পর্য্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি।” (মথি ২৮:১৯, ২০) বাপ্তিস্মিত ব্যক্তির যদি স্বাস্থ্য বা অন্য কোন বড় সমস্যা না থাকে, যার সমাধান তার হাতের বাইরে আর সেই ব্যক্তি যদি ঈশ্বর ও খ্রীষ্টের বিষয়ে উদ্যোগের সঙ্গে প্রচার না করেন, তাহলে তিনি আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার পুরো কর্তব্য পালন করছেন না।—যিশাইয় ৪৩:১০-১২.
৭. উপাসনার জন্য কেন আমাদের নিয়মিত মিলিত হওয়া উচিত?
৭ প্রাচীন ইস্রায়েল ঈশ্বরের কাছে উৎসর্গীকৃত একটা জাতি ছিল এবং ব্যবস্থার অধীনে এই জাতির লোকেদের যিহোবার প্রতি বিভিন্ন কর্তব্য পালন করতে হতো। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, প্রত্যেক পুরুষকে বছরে তিনটে উৎসব পালন করার জন্য একসঙ্গে মিলিত হতে হতো আর কেউ যদি ইচ্ছা করে নিস্তারপর্ব্ব পালন না করত, তবে তাকে “উচ্ছিন্ন” করা হতো। (গণনাপুস্তক ৯:১৩; লেবীয় পুস্তক ২৩:১-৪৩; দ্বিতীয় বিবরণ ১৬:১৬) ঈশ্বরের উৎসর্গীকৃত লোক হিসেবে তাঁর প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করতে ইস্রায়েলীয়দের উপাসনার জন্য একসঙ্গে মিলিত হতে হতো। (দ্বিতীয় বিবরণ ৩১:১০-১৩) ব্যবস্থায় কোথাও বলা হয়নি যে ‘যদি তোমার কোন অসুবিধা না হয় তবে এটা কর।’ আজকে যারা যিহোবার কাছে নিজেদের উৎসর্গ করেছেন তাদেরও একসঙ্গে মিলিত হওয়া উচিত। পৌল লিখেছিলেন: “আইস, আমরা পরস্পর মনোযোগ করি, যেন প্রেম ও সৎক্রিয়ার সম্বন্ধে পরস্পরকে উদ্দীপিত করিয়া তুলিতে পারি; এবং আপনারা সমাজে সভাস্থ হওয়া পরিত্যাগ না করি—যেমন কাহারও কাহারও অভ্যাস—বরং পরস্পরকে চেতনা দিই; আর তোমরা সেই দিন যত অধিক সন্নিকট হইতে দেখিতেছ, ততই যেন অধিক এ বিষয়ে তৎপর হই।” (ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) হ্যাঁ, বিশ্বাসী ভাইবোনদের সঙ্গে নিয়মিত মিলিত হওয়া একজন উৎসর্গীকৃত খ্রীষ্টানের ঈশ্বরের প্রতি কর্তব্য।
ভাল করে তোমার সিদ্ধান্তগুলো নিয়ে ভেবে দেখো!
৮. কেন একজন উৎসর্গীকৃত যুবক বা যুবতীর প্রার্থনা করে তার পবিত্র পরিচর্যা নিয়ে ভেবে দেখা দরকার?
৮ তুমি হয়তো যিহোবার কাছে উৎসর্গীকৃত একজন যুবক বা যুবতী। তুমি যদি রাজ্যকে জীবনে প্রথম স্থানে রাখ, তবে প্রচুর আশীর্বাদ পাবে। (হিতোপদেশ ১০:২২) প্রার্থনা এবং খুব চিন্তাভাবনা করে পরিকল্পনা করলে তুমি হয়তো অন্তত তোমার যৌবনকালে কোন না কোন ধরনের পূর্ণ-সময়ের পরিচর্যা করতে পারবে আর এটা তুমি যে তোমার মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ কর তা দেখানোর এক চমৎকার উপায়। নতুবা জগতের ধনসম্পদ ও অন্যান্য বিষয় তোমার সময় ও মনোযোগ কেড়ে নিতে শুরু করতে পারে। অন্যান্য লোকেদের মতো, তুমিও হয়তো কম বয়সে বিয়ে করে ফেলতে পার এবং বিভিন্ন জিনিস কেনার জন্য দেনায় ডুবে যেতে পার। অনেক পয়সা আয় করা যায় এমন কোন কাজে তোমার বেশির ভাগ সময় ও শক্তি চলে যেতে পারে। তোমার যদি ছেলেমেয়ে হয়, তবে বছরের পর বছর ধরে তোমাকে পরিবারের দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। (১ তীমথিয় ৫:৮) তুমি হয়তো তোমার মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাওনি কিন্তু এটা বোঝা বুদ্ধিমানের কাজ যে আগে থেকে করা পরিকল্পনা বা পরিকল্পনার অভাব, তোমার পরবর্তী জীবনের ওপর ছাপ ফেলে। বুড়ো বয়সে তুমি হয়তো পিছনে ফিরে তাকাবে এবং আফশোস করবে যে অন্তত তোমার যৌবনকালটা যদি আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার পবিত্র পরিচর্যা করে কাটত। এখনই কেন প্রার্থনা করে তোমার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাগুলো ভেবে দেখ না, যাতে তুমি তোমার যৌবনকালে যিহোবার পবিত্র পরিচর্যা করে পরিতৃপ্তি পেতে পার?
৯. সেই ভাইরা এখন কী করতে পারেন যারা বৃদ্ধ হয়ে গেছেন এবং একসময় মণ্ডলীতে বড় বড় দায়িত্ব পালন করতেন?
৯ অন্য আরেকটা পরিস্থিতির কথা চিন্তা কর, একজন ভাই একসময় ‘ঈশ্বরের পালের’ পালক হিসেবে সেবা করতেন। (১ পিতর ৫:২, ৩) কিন্তু কিছু কারণে তিনি স্বেচ্ছায় এই বিশেষ সুযোগকে ছেড়ে দিয়েছিলেন। এখন তার বয়স হয়ে গেছে, তাই ঈশ্বরের পরিচর্যা করে যাওয়া তার জন্য হয়তো খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। কিন্তু তিনি কি আবারও মণ্ডলীর বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে পারেন? অবশ্যই কারণ এইরকম একজন ভাই যদি মণ্ডলীতে আবারও বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করতে শুরু করেন, তাহলে তা অন্যদের জন্য কতই না আশীর্বাদের বিষয় হবে! আর যেহেতু কেউই শুধু নিজের জন্য বেঁচে থাকে না, তাই তিনি যদি তার পরিচর্যাকে আরও বাড়িয়ে ঈশ্বরের গৌরব করেন, তাহলে তার বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনেরা কত খুশি হবেন। (রোমীয় ১৪:৭, ৮) সবচেয়ে বড় কথা হল যে যিহোবা তাঁর সেবকদের ভুলে যান না। (ইব্রীয় ৬:১০-১২) সুতরাং, আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার জন্য কী আমাদের সাহায্য করতে পারে?
আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার জন্য যে বিষয়গুলো আমাদের সাহায্য করে
১০. আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার জন্য যে সমস্ত নির্দেশনা দরকার তা জোগানোর জন্য কেন উপদেশক সঠিক ব্যক্তি ছিলেন?
১০ আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণ করার জন্য আমাদের যে সমস্ত নির্দেশনা দরকার তা জোগানোর জন্য উপদেশক ছিলেন সঠিক ব্যক্তি। যিহোবা তাকে অগাধ জ্ঞান দিয়ে তার অন্তর থেকে করা প্রার্থনার উত্তর দিয়েছিলেন। (১ রাজাবলি ৩:৬-১২) শলোমন মানুষের জীবনের সমস্তকিছু খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। এছাড়াও তিনি যা কিছু খুঁজে পেয়েছিলেন সেগুলো যেন অন্যদের উপকারে আসে তাই ঈশ্বর সেগুলো লিখে রাখার জন্য তাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন: “শেষ কথা, উপদেশক জ্ঞানবান ছিলেন; তাই তিনি লোকদিগকে জ্ঞান শিক্ষা দিতেন, এবং মনোনিবেশ ও বিবেচনা করিতেন, অনেক প্রবাদ বিন্যাস করিতেন। উপদেশক মনোহর বাক্য, এবং যাহা সরলভাবে লিখিত হইয়াছে, অর্থাৎ সত্যের বাক্য, প্রাপ্ত হইবার জন্য অনুসন্ধান করিতেন।”—উপদেশক ১২:৯, ১০.
১১. আমাদের কেন শলোমনের বিচক্ষণ পরামর্শ শোনা উচিত?
১১ গ্রিক সেপ্টুয়াজিন্ট এই কথাগুলোকে এভাবে অনুবাদ করে: “এছাড়াও, উপদেশক জ্ঞানী ছিলেন এবং লোকেদের জ্ঞান দান করতেন; দৃষ্টান্তগুলো থেকে যাতে লোকেরা ভাল কিছু পেতে পারে, তাই উপদেশক সুন্দর সুন্দর কথা এবং যা সরলভাবে লিখিত হয়েছে অর্থাৎ সত্যের বাক্য পাওয়ার জন্য অধ্যবসায়ের সঙ্গে অনুসন্ধান করতেন”। (দ্যা সেপ্টুয়াজিন্ট বাইবেল, চার্লস থমসন দ্বারা অনূদিত) শলোমন সত্যিকারের আগ্রহজনক এবং উপকারী বিষয়গুলো বলেছেন ও তার পাঠকদের হৃদয়ে পৌঁছানোর জন্য সুন্দর সুন্দর শব্দ ব্যবহার করেছিলেন। যেহেতু বাইবেলে পাওয়া তার কথাগুলো পবিত্র আত্মার অনুপ্রেরণায় লেখা হয়েছে, তাই আমরা নির্দ্বিধায় তার কথা এবং বিচক্ষণ পরামর্শ শুনতে পারি।—২ তীমথিয় ৩:১৬, ১৭.
১২. উপদেশক ১২:১১, ১২ পদে শলোমন যা বলেছিলেন তা আপনি কীভাবে নিজের ভাষায় বলবেন?
১২ যদিও শলোমনের সময়ে আজকের মতো মুদ্রণযন্ত্র ছিল না কিন্তু তবুও সেই সময় বইপুস্তকের কোন অভাব ছিল না। এই বইপুস্তককে কোন্ চোখে দেখা ঠিক ছিল? তিনি বলেছিলেন: “জ্ঞানবানদের বাক্য সরল অঙ্কুশস্বরূপ, ও সভাপতিগণের [বাক্য] পোতা গোঁজস্বরূপ, তাহারা একই পালক দ্বারা দত্ত হইয়াছে। আর শেষ কথা এই, হে বৎস, তুমি এই সকল হইতে উপদেশ গ্রহণ কর; বহুপুস্তক রচনার শেষ হয় না, এবং অধ্যয়নের আধিক্যে শরীরের ক্লান্তি হয়।”—উপদেশক ১২:১১, ১২.
১৩. যাদের ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা রয়েছে তাদের কথা কীভাবে সরল অঙ্কুশের মতো এবং কারা “পোতা গোঁজস্বরূপ”?
১৩ যাদের ঈশ্বরীয় প্রজ্ঞা রয়েছে তাদের কথা সরল অঙ্কুশের মতো। কীভাবে? সেগুলো পাঠক বা শ্রোতাদের প্রেরণা দেয় যাতে করে তারা যে জ্ঞানের কথাগুলো পড়েছেন বা শুনেছেন সেই মতো কাজ করেন। এছাড়াও, যারা ‘সভাপতিগণের বাক্যে’ বা সত্যিকারের বিচক্ষণ ও উপকারী নীতিকথায় মনোযোগ দেন তারা “পোতা গোঁজস্বরূপ” বা খুব শক্তভাবে আটকানো। এটা এইজন্য হতে পারে কারণ এই ব্যক্তিদের সুন্দর কথাগুলো যিহোবার প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে আর তাই তা পাঠক বা শ্রোতাদের স্থির রাখতে ও সাহায্য করতে পারে। আপনি যদি একজন ঈশ্বরভয়শীল বাবা কিংবা মা হন, তাহলে আপনি কি এইরকম প্রজ্ঞা আপনার ছেলেমেয়েদের মনে ও হৃদয়ে গেঁথে দেওয়ার জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করবেন না?—দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪-৯.
১৪. (ক) কোন্ ধরনের বই ‘অধিক অধ্যয়ন করা’ উপকারী নয়? (খ) কোন্ ধরনের বইয়ের দিকে আমাদের বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত এবং কেন?
১৪ তাহলে শলোমন বই সম্বন্ধে যা বলেছিলেন তা কেন বলেছিলেন? কারণ যিহোবার বাক্যের সঙ্গে তুলনা করলে এই জগতের অগণিত বইপুস্তক শুধুই মানুষের যুক্তিতর্কে ভরা। এর বেশির ভাগ চিন্তাধারাই শয়তান দিয়াবলের চিন্তাধারাকে প্রকাশ করে। (২ করিন্থীয় ৪:৪) তাই এইরকম জাগতিক বিষয়বস্তু ‘অধিক অধ্যয়ন করে’ খুব কমই উপকার পাওয়া যায়। আসলে, এগুলো নিয়ে অনেক বেশি মেতে থাকলে তা আধ্যাত্মিকভাবেও ক্ষতিকর হতে পারে। শলোমনের মতো, আসুন আমরা ঈশ্বরের বাক্য জীবন সম্বন্ধে যা বলে তা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করি। এটা আমাদের বিশ্বাসকে দৃঢ় করবে এবং যিহোবার আরও কাছে নিয়ে যাবে। অন্য বই বা শিক্ষার উৎসগুলোর দিকে বেশি বেশি মনোযোগ দিলে আমরা ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারি। বিশেষ করে যখন এই বইগুলো জগতের যুক্তি দিয়ে লেখা হয় যা ঈশ্বরের প্রজ্ঞার বিপরীত, তখন এগুলো অস্বাস্থ্যকর এবং ঈশ্বর ও তাঁর উদ্দেশ্যগুলোর ওপর বিশ্বাসকে নষ্ট করে দেয়। তাই, আসুন আমরা মনে রাখি যে শলোমনের দিনের ও আমাদের দিনের সেই বইগুলোই সবচেয়ে বেশি উপকারী যা “একই পালক” যিহোবা ঈশ্বরের প্রজ্ঞাকে প্রকাশ করে। তিনি আমাদের জন্য পবিত্র শাস্ত্রের ৬৬টা বই দিয়েছেন যেগুলোতে আমাদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ দিতে হবে। বাইবেল এবং ‘বিশ্বস্ত দাসদের’ দেওয়া সাহায্যকারী বইপত্রিকাগুলো আমাদের “ঈশ্বরবিষয়ক জ্ঞান” লাভ করতে সাহায্য করে।—হিতোপদেশ ২:১-৬.
ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত কর্তব্য
১৫. (ক) “সকল মানুষের কর্ত্তব্য” সম্বন্ধে শলোমনের কথাগুলোকে আপনি কীভাবে বর্ণনা করবেন? (খ) ঈশ্বরের প্রতি আমাদের কর্তব্য পালন করার জন্য আমাদের কী করতে হবে?
১৫ তার সমস্ত পরীক্ষানিরীক্ষা শেষে উপদেশক শলোমন বলেন: “আইস, আমরা সমস্ত বিষয়ের উপসংহার শুনি; ঈশ্বরকে ভয় কর, ও তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন কর, কেননা ইহাই সকল মনুষ্যের কর্ত্তব্য। কারণ ঈশ্বর সমস্ত কর্ম্ম এবং ভাল হউক, কি মন্দ হউক, সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।” (উপদেশক ১২:১৩, ১৪) আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি উপযুক্ত ভয় বা শ্রদ্ধা আমাদেরকে এবং আশা করা যায় যে আমাদের পরিবারকে বোকার মতো জীবনযাপন করা, যা আমাদের ও আমাদের প্রিয়জনদের জন্য অবর্ণনীয় দুঃখ ও ঝামেলা নিয়ে আসতে পারে, তার থেকে রক্ষা করবে। ঈশ্বরের প্রতি স্বাস্থ্যকর ভয় শুচি এবং প্রজ্ঞা ও জ্ঞানের আরম্ভ। (গীতসংহিতা ১৯:৯; হিতোপদেশ ১:৭) আমাদের যদি ঈশ্বরের অনুপ্রাণিত বাক্য থেকে পাওয়া বুদ্ধি থাকে আর এর পরামর্শ যদি আমরা সমস্ত বিষয়ে কাজে লাগাই, তাহলে আমরা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত “কর্ত্তব্য” পালন করছি। না, এর মানে কর্তব্যগুলোর একটা তালিকা তৈরি করা বোঝায় না। বরং এর মানে জীবনের সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য আমাদের বাইবেল দেখতে হবে এবং সবসময় ঈশ্বর যেভাবে চান সেভাবে কাজ করতে হবে।
১৬. বিচার সম্বন্ধে যিহোবা কী করবেন?
১৬ আমাদের মনে রাখা উচিত যে কোন কিছুই আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তার নজর এড়ায় না। (হিতোপদেশ ১৫:৩) তিনি “সমস্ত গুপ্ত বিষয়, বিচারে আনিবেন।” হ্যাঁ, মহান ঈশ্বর সমস্তকিছুর বিচার করবেন যার মধ্যে মানুষের চোখে পড়ে না এমন বিষয়ও থাকবে। এই বিষয়গুলো সম্বন্ধে সচেতন থাকলে তা ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলো পালন করতে প্রেরণা দিতে পারে। কিন্তু আমাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি ভালবাসাই সবচেয়ে বড় প্রেরণা হওয়া উচিত কারণ প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন: “ঈশ্বরের প্রতি প্রেম এই, যেন আমরা তাঁহার আজ্ঞা সকল পালন করি; আর তাঁহার আজ্ঞা সকল দুর্ব্বহ নয়।” (১ যোহন ৫:৩) আর যেহেতু আমাদের চির মঙ্গল নিয়ে আসাই হল ঈশ্বরের আজ্ঞাগুলোর উদ্দেশ্য, তাই এগুলো পালন করা শুধু উপযুক্তই নয় কিন্তু সত্যিকারের বুদ্ধিমানের মতো কাজ। যারা মহান সৃষ্টিকর্তাকে ভালবাসেন এটা তাদের জন্য কোন বোঝা নয়। তারা তাঁর প্রতি তাদের কর্তব্য পালন করতে চান।
আপনার সমস্ত কর্তব্য পালন করুন
১৭. আমরা যদি ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত কর্তব্য পালন করতে চাই, তাহলে কী করব?
১৭ আমরা যদি বুদ্ধিমান হই এবং ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত কর্তব্য সত্যিই পালন করতে চাই, তবে তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করা ছাড়াও তাঁকে অসন্তুষ্ট না করার সশ্রদ্ধ ভয় আমাদের থাকবে। সত্যিই “সদাপ্রভুর ভয় প্রজ্ঞার আরম্ভ” এবং যারা তাঁর আজ্ঞাগুলো পালন করেন তাদের “সুবুদ্ধি” থাকে। (গীতসংহিতা ১১১:১০; হিতোপদেশ ১:৭) তাই আসুন আমরা বুদ্ধিমানের মতো কাজ করি এবং সমস্তকিছুতে ঈশ্বরের বাধ্য হই। বিশেষ করে আজকে এটা বেশি জরুরি কারণ রাজা যীশু খ্রীষ্ট উপস্থিত এবং ঈশ্বরের নিযুক্ত বিচারক হিসেবে তাঁর বিচারের দিন একেবারে কাছে।—মথি ২৪:৩; ২৫:৩১, ৩২.
১৮. আমরা যদি যিহোবা ঈশ্বরের প্রতি আমাদের সমস্ত কর্তব্য পালন করি, তাহলে আমাদের জন্য এর ফল কী হবে?
১৮ এখন ঈশ্বর আমাদের প্রত্যেকের ওপরই নজর রাখছেন। আমরা কি আধ্যাত্মিকমনা নাকি আমরা জাগতিক প্রভাবগুলোকে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ককে দুর্বল করে দিতে দিই? (১ করিন্থীয় ২:১০-১৬; ১ যোহন ২:১৫-১৭) তাই আসুন আমরা যুবক বৃদ্ধ যাই হই না কেন, আমাদের মহান সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করার জন্য প্রাণপণ করি। আমরা যদি যিহোবার বাধ্য থাকি ও তাঁর আজ্ঞা পালন করে চলি, তবে আমরা পুরনো জগতের বয়ে চলা অসার বিষয়গুলোকে ত্যাগ করব। তবেই আমরা ঈশ্বরের প্রতিজ্ঞাত নতুন বিধিব্যবস্থায় অনন্ত জীবন পাওয়ার আশা রাখতে পারব। (২ পিতর ৩:১৩) যারা ঈশ্বরের প্রতি তাদের সমস্ত কর্তব্য পালন করেন তাদের জন্য কতই না অপূর্ব ভবিষ্যৎ!
আপনি কীভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কেন আপনি বলবেন যে সমস্তকিছুই অসার নয়?
◻ কেন একজন খ্রীষ্টান যুবক বা যুবতীর প্রার্থনা করে তার পবিত্র পরিচর্যা নিয়ে ভাবা উচিত?
◻ কোন্ ধরনের বই ‘অধিক অধ্যয়ন করা’ উপকারজনক হবে না?
◻ “সকল মানুষের কর্ত্তব্য” কী?
[২০ পৃষ্ঠার চিত্র]
যারা যিহোবাকে সেবা করেন তাদের জন্য সমস্তকিছুই অসার নয়
[২৩ পৃষ্ঠার চিত্র]
এই জগতের অগণিত বইপুস্তকের তুলনায় ঈশ্বরের বাক্য সতেজতাদায়ক ও উপকারী