যিহোবা দেরি করবেন না
“[এই দর্শনের] বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।”—হবক্কূক ২:৩.
১. যিহোবার লোকেরা কোন্ সংকল্প দেখিয়েছেন আর এর জন্য তারা কী করেছেন?
“আমি আপন প্রহরী-কার্য্যের স্থানে দাঁড়াইব।” এটাই ছিল ঈশ্বরের ভাববাদী হবক্কূকের সংকল্প। (হবক্কূক ২:১) এই বিংশ শতাব্দীতে যিহোবার সাক্ষিরা এই একই সংকল্প দেখিয়েছেন। তাই, ১৯২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এক উল্লেখযোগ্য সম্মেলনে এই ডাকে তারা উদ্যোগের সঙ্গে সাড়া দিয়েছিলেন: “এই দিনই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। দেখুন, রাজা শাসন করছেন! আপনারা তাঁর প্রচারক। তাই রাজা এবং রাজ্যের বিষয়ে ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন, ঘোষণা করুন।”
২. প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অভিষিক্ত খ্রীষ্টানেরা আবারও সক্রিয় হয়ে কোন্ বিষয় ঘোষণা করেছিলেন?
২ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, যিহোবা অভিষিক্ত অবশিষ্টাংশদের আবার সক্রিয় করে তুলেছিলেন। হবক্কূকের মতো তারা প্রত্যেকে তখন ঘোষণা করেছিলেন: “আমি দুর্গের উপরে অবস্থিত থাকিব; আমার আবেদনের বিষয়ে তিনি আমাকে কি বলিবেন, . . . তাহা দেখিয়া বুঝিব।” ‘দেখা’ এবং ‘প্রহরী’ কথার ইব্রীয় শব্দগুলো অনেক ভবিষ্যদ্বাণীতে বার বার ব্যবহার করা হয়েছে।
“তাহা . . . বিলম্ব করিবে না”
৩. কেন আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে?
৩ আজকে যিহোবার সাক্ষিরা যখন সাবধানবাণী ঘোষণা করেন, তখন তারা নিজেরা সেই দিন ও দণ্ড সম্বন্ধে যীশুর মহান ভবিষ্যদ্বাণীর শেষ কথাগুলো মেনে চলার জন্য সবসময় সজাগ থাকেন: “তোমরা জাগিয়া থাকিও, কেননা গৃহের কর্ত্তা কখন আসিবেন, কি সন্ধ্যাকালে, কি দুই প্রহর রাত্রিতে, কি কুকুড়াডাকের সময়ে, কি প্রাতঃকালে, তোমরা তাহা জান না; তিনি হঠাৎ আসিয়া যেন তোমাদিগকে নিদ্রিত না দেখিতে পান। আর আমি তোমাদিগকে যাহা বলিতেছি, তাহাই সকলকে বলি, জাগিয়া থাকিও।” (মার্ক ১৩:৩৫-৩৭) হবক্কূকের মতো, আমাদেরও সজাগ থাকতে হবে!
৪. আমাদের দিনের অবস্থা কীভাবে সা.কা.পূ. ৬২৮ সালে হবক্কূকের দিনের মতো?
৪ হবক্কূক সম্ভবত সা.কা.পূ. ৬২৮ সালে তার এই ভবিষ্যদ্বাণী লিখেছিলেন, যখন এমনকি বাবিলন প্রধান বিশ্বশক্তি হিসেবে ক্ষমতায়ও আসেনি। অনেক বছর ধরে, ধর্মভ্রষ্ট যিরূশালেমের ওপর যিহোবার বিচার ঘোষণা করা হয়েছিল। কিন্তু, কখন এই বিচার আসবে সে বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলা হয়নি। কে তখন বিশ্বাস করতে পেরেছিল যে এই ধ্বংস আসতে মাত্র ২১ বছর বাকি আছে আর এটা ধ্বংস করার জন্য যিহোবা বাবিলনকে ব্যবহার করবেন? একইভাবে, আজকে আমরাও ‘সেই দিন ও দণ্ড’ সম্বন্ধে জানি না কিন্তু যীশু আগে থেকে আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন: “তোমরাও প্রস্তুত থাক, কেননা যে দণ্ড তোমরা মনে করিবে না, সেই দণ্ডে মনুষ্যপুত্ত্র আসিবেন।”—মথি ২৪:৩৬, ৪৪.
৫. হবক্কূক ২:২, ৩ পদে ঈশ্বরের কোন্ কথাগুলো বিশেষ করে আমাদের উৎসাহ দেয়?
৫ জেগে থাকার জন্য হবক্কূককে দেওয়া যিহোবার এই আদেশ কতই না উপযুক্ত ছিল: “এই দর্শনের কথা লিখ, সুস্পষ্ট করিয়া ফলকে খুদ, যে পাঠ করে, সে যেন দৌড়িতে পারে। কেননা এই দর্শন এখনও নিরূপিত কালের নিমিত্ত, ও তাহা পরিনামের আকাঙ্ক্ষা করিতেছে, আর মিথ্যা হইবে না; তাহার বিলম্ব হইলেও তাহার অপেক্ষা কর, কেননা তাহা অবশ্য উপস্থিত হইবে, যথাকালে বিলম্ব করিবে না।” (হবক্কূক ২:২, ৩) আজকে, সারা পৃথিবীতে দুষ্টতা ও দৌরাত্ম্য এত বেশি ছড়িয়ে পড়ছে যে তা থেকে বোঝা যায় আমরা ‘যিহোবার মহৎ ও ভয়ঙ্কর দিনের’ একেবারে শেষ প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি। (যোয়েল ২:৩১) তাই “বিলম্ব করিবে না,” যিহোবার নিজের এই আশ্বাস বাণী সত্যিই আমাদের উৎসাহ দেয়!
৬. কীভাবে আমরা ঈশ্বরের আসন্ন বিচারদিনে রক্ষা পেতে পারি?
৬ তাহলে, কীভাবে আমরা ঈশ্বরের সেই বিচারদিনে রক্ষা পেতে পারি? ধার্মিক ও অধার্মিকের মধ্যে পার্থক্য দেখিয়ে যিহোবা এর উত্তর দিয়েছেন: “দেখ, তাহার প্রাণ দর্পে স্ফীত, তাহার অন্তর সরল নয়, কিন্তু ধার্ম্মিক ব্যক্তি আপন বিশ্বাস দ্বারা বাঁচিবে।” (হবক্কূক ২:৪) দাম্ভিক ও লোভী শাসকেরা ও লোকেরা লাখ লাখ নিরীহ লোকেদের রক্তে আজকের ইতিহাসের পাতাকে কলঙ্কিত করেছে, বিশেষ করে দুটো বিশ্বযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা এর প্রমাণ দেয়। কিন্তু অন্যদিকে, ঈশ্বরের শান্তিপ্রিয় লোকেরা বিশ্বস্তভাবে সমস্তকিছু সহ্য করেছেন। তারা “বিশ্বস্ততা-পালনকারী ধার্ম্মিক জাতি।” এই জাতি ও তাদের সঙ্গী ‘অপর মেষেরা’ এই উপদেশকে মেনে চলেছে: “তোমরা চিরকাল সদাপ্রভুতে নির্ভর রাখ; কেননা সদাপ্রভু যিহোবাতেই যুগসমূহের শৈল।”—যিশাইয় ২৬:২-৪; যোহন ১০:১৬, NW.
৭. পৌল যেমন হবক্কূক ২:৪ পদ উদ্ধৃত করেছিলেন তার সঙ্গে মিল রেখে আমাদের কী করা উচিত?
৭ ইব্রীয়দের কাছে লেখার সময় প্রেরিত পৌল হবক্কূক ২:৪ পদ উদ্ধৃত করেছিলেন যেখানে যিহোবার লোকেদের জন্য বলা হয়েছে: “ধৈর্য্যে তোমাদের প্রয়োজন আছে, যেন ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করিয়া প্রতিজ্ঞার ফল প্রাপ্ত হও। কারণ ‘আর অতি অল্প কাল বাকী অছে, যিনি আসিতেছেন, তিনি আসিবেন, বিলম্ব করিবেন না। কিন্তু আমার ধার্ম্মিক ব্যক্তি বিশ্বাস হেতুই বাঁচিবে, আর যদি সরিয়া পড়ে, তবে আমার প্রাণ তাহাতে প্রীত হইবে না।’” (ইব্রীয় ১০:৩৬-৩৮) হাত শিথিল করার অথবা শয়তানের জগতের বস্তুবাদিতা, বিলাসিতার পিছনে ছোটার মতো ফাঁদগুলোতে পা দেওয়ার সময় এখন নয়। তাই, সেই “অতি অল্প কাল” ফুরিয়ে যাওয়ার আগে আমাদের কী করা উচিত? যিহোবার পবিত্র জাতি আমরা, পৌলের মতো “সম্মুখস্থ বিষয়ের চেষ্টায় একাগ্র হইয়া” অনন্ত জীবনের ‘লক্ষ্যের অভিমুখে দৌড়াইব।’ (ফিলিপীয় ৩:১৩, ১৪) আর যীশুর মতো আমরাও ‘আমাদের সম্মুখস্থ আনন্দের নিমিত্ত সহ্য করিব।’—ইব্রীয় ১২:২.
৮. হবক্কূক ২:৫ পদে বলা ‘বীর’ কে এবং কেন সে কোনভাবেই সফল হবে না?
৮ অন্য দিকে, হবক্কূক ২:৫ পদ ‘এক বীরের’ বর্ণনা দেয় যে তার লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারে না, এমনকি যদিও সে “পাতালের ন্যায় অপরিমিত লোভী।” এই বীর কে যে “তৃপ্ত হয় না”? হবক্কূকের দিনের আগ্রাসী বাবিলনের মতো, এই ‘বীর’ আজকের রাজনৈতিক শক্তিগুলো, তা সে ফ্যাসিবাদী, নাৎসী, সাম্যবাদী অথবা গণতন্ত্র যাই হোক না কেন, সে নিজের দেশের সীমানা বাড়ানোর জন্য যুদ্ধ করে। এছাড়া সে নির্দোষীদের দিয়ে শিওল অর্থাৎ কবর ভরে। কিন্তু শয়তানের জগতের এই বিশ্বাসঘাতক ‘বীর’ নিজের অভিমানে মত্ত, সে অনর্থক ‘সর্ব্বজাতিকে একত্র করিয়া আত্মসাৎ করার, এবং সর্ব্বলোকবৃন্দকে সংগ্রহ করার’ চেষ্টা করে। একমাত্র যিহোবাই সমস্ত মানবজাতিকে একত্র করতে পারেন আর তিনি তাঁর মশীহ রাজ্যের মাধ্যমে তা করবেন।—মথি ৬:৯, ১০.
পাঁচটা নাটকীয় বিপর্যয়ের মধ্যে প্রথমটা
৯, ১০. (ক) যিহোবা হবক্কূককে দিয়ে আর কী ঘোষণা করান? (খ) আজকে অসৎ উপায়ে ধন উপার্জনের ফল কী হয়েছে?
৯ যিহোবা তাঁর ভাববাদী হবক্কূককে দিয়ে পর পর পাঁচটা বিপর্যয় অর্থাৎ বিচার ঘোষণা করান, যেগুলো পৃথিবীকে ঈশ্বরের বিশ্বস্ত উপাসকদের বসবাসের জন্য তৈরি করতে অবশ্যই আসা দরকার। এই ধার্মিক ব্যক্তিরা ‘পরিহাসজনক প্রবাদ উত্থাপন করে’ যা আসলে যিহোবাই বলেন। হবক্কূক ২:৬ পদে আমরা পড়ি: “ধিক্ তাহাকে, যে পরধনে বর্দ্ধিষ্ণু হয়—কত দিন হইবে?—আর যে বন্ধক দ্রব্যের ভারে ভারী হয়।”
১০ এখানে অসৎ উপায়ে ধন উপার্জনের কথা বলা হচ্ছে। আমাদের চারপাশের এই জগতে, ধনীরাই আরও ধনী হতে থাকে এবং গরিবেরা আরও গরিব হয়ে যায়। মাদক ব্যবসায়ী এবং প্রতারকেরা একদিকে প্রচুর ধন উপার্জন করে আর অন্যদিকে সাধারণ লোকেরা না খেতে পেয়ে মারা যায়। হিসাব দেখায় যে পৃথিবীর জনসংখ্যার এক চতুর্থাংশ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। পৃথিবীর বহু দেশে জীবনযাত্রার মান খুবই নিচু। যারা ধার্মিক পৃথিবীর আকাঙ্ক্ষা করেন, তারা ক্লান্ত হয়ে বলেন: “কত দিন” এই দুর্বৃত্তেরা পরধনে বর্ধিষ্ণু হবে! কিন্তু ধ্বংস খুবই কাছে! কারণ ইতিমধ্যেই ৩ পদের কথাগুলো আমাদের জানিয়েছে যে সেই দর্শনের পূর্ণতা “বিলম্ব করিবে না।”
১১. মানুষের রক্তপাত সম্বন্ধে হবক্কূক কী বলেন এবং আমরা কেন বলতে পারি যে আজকে পৃথিবীতে আমরা প্রচুর রক্তপাত দেখতে পাই?
১১ ভাববাদী দুষ্ট ব্যক্তিকে বলেন: “তুমি অনেক জাতির সম্পত্তি লুট করিয়াছ; এই হেতু জাতিগণের সমস্ত শেষাংশ তোমার সম্পত্তি লুট করিবে; ইহার কারণ মনুষ্যদের রক্তপাত, এবং দেশ, নগর ও তন্নিবাসীদের প্রতি কৃত দৌরাত্ম্য।” (হবক্কূক ২:৮) আজকের পৃথিবীতে আমরা কতই না রক্তপাত দেখতে পাই! যীশু স্পষ্টভাবে জানিয়েছিলেন: “যে সকল লোক খড়গ ধারণ করে, তাহারা খড়গ দ্বারা বিনষ্ট হইবে।” (মথি ২৬:৫২) কেবল এই বিংশ শতাব্দীতেই, রক্তপাতের দোষে দোষী জাতি ও সম্প্রদায়গুলো কোটি কোটি লোকেদের হত্যা করার জন্য দায়ী। যারা এই ব্যাপক রক্তপাত ঘটাচ্ছে তাদের ওপর বিপর্যয় আসবে!
দ্বিতীয় বিপর্যয়
১২. হবক্কূকের বলা দ্বিতীয় বিপর্যয় কী আর আমরা কীভাবে নিশ্চিত হতে পারি যে অসৎ উপায়ে অর্জিত ধন কোন উপকারে আসবে না?
১২ হবক্কূক ২:৯-১১ পদে লেখা দ্বিতীয় বিপর্যয় “যে আপন কুলের নিমিত্ত কুলাভ সংগ্রহ করে, যেন উচ্চে বাসা করিতে পারে, যেন অমঙ্গলের হস্ত হইতে উদ্ধার পাইতে পারে” তার ওপর আসবে। অসৎ উপায়ে অর্জিত ধন কোন উপকারে আসবে না, কারণ গীতরচক স্পষ্ট করে জানান: “তুমি ভীত হইও না, যখন কেহ ধনবান হয়, যখন তাহার কুলের ঐশ্বর্য্য বৃদ্ধি পায়, কেননা মরণকালে সে কিছুই সঙ্গে লইয়া যাইবে না, তাহার ঐশ্বর্য্য তাহার অনুগমন করিবে না।” (গীতসংহিতা ৪৯:১৬, ১৭) অতএব, প্রেরিত পৌলের এই বিজ্ঞ উপদেশও উল্লেখযোগ্য: “যাহারা এই যুগে ধনবান্, তাহাদিগকে এই আজ্ঞা দেও, যেন তাহারা গর্ব্বিতমনা না হয়, এবং ধনের অস্থিরতার উপরে নয়, কিন্তু যিনি ধনবানের ন্যায় সকলই আমাদের ভোগার্থে যোগাইয়া দেন, সেই ঈশ্বরেরই উপরে প্রত্যাশা রাখে।”—১ তীমথিয় ৬:১৭.
১৩. কেন আমাদের ঈশ্বরের সতর্কবার্তা ঘোষণা করে চলা দরকার?
১৩ আজকেও ঈশ্বরের বিচার ঘোষণা করা কতই না জরুরি! যখন ফরীশীরা যীশুকে “রাজা, যিনি প্রভুর নামে আসিতেছেন” বলে সম্ভাষণ জানাতে জনতাকে বারণ করেছিল, তখন যীশু তাদেরকে বলেছিলেন: “আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, ইহারা যদি চুপ করিয়া থাকে, প্রস্তর সকল চেঁচাইয়া উঠিবে।” (লূক ১৯:৩৮-৪০) একইভাবে, আজকে ঈশ্বরের লোকেরা যদি জগতের দুষ্টতাকে প্রকাশ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে “ভিত্তির মধ্য হইতে প্রস্তর কাঁদিবে।” (হবক্কূক ২:১১) তাই আসুন আমরা ঈশ্বরের সতর্কবার্তা ঘোষণা করে চলি!
তৃতীয় বিপর্যয় এবং রক্তপাতের দোষ
১৪. জগতের ধর্মগুলো কোন্ রক্তপাতের দোষে দোষী?
১৪ হবক্কূক তৃতীয় যে বিপর্যয়ের কথা ঘোষণা করেছেন সেটা রক্তপাতের দোষের মীমাংসা করে। হবক্কূক ২:১২ পদ বলে: “ধিক্ তাহাকে, যে রক্তপাত দ্বারা পুরী গাঁথে, যে অন্যায় দ্বারা নগর সংস্থাপন করে।” এই বিধিব্যবস্থায় অধার্মিকতা ও রক্তপাত প্রায়ই একে অন্যের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছে। লক্ষ্য করার মতো বিষয় যে এই জগতের ধর্মগুলোই ইতিহাসের জঘন্য রক্তপাতের জন্য দায়ী। শুধুমাত্র সেই ধর্মযুদ্ধগুলোর কথা বলাই যথেষ্ট যা নামধারী খ্রীষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে হয়েছিল; এছাড়াও স্পেন ও ল্যাটিন আমেরিকার ধর্মীয় বিচারসভা; প্রটেস্টান্ট ও ক্যাথলিকদের মধ্যে ইউরোপের ত্রিশ বছরব্যাপী যুদ্ধ; আর এই সবগুলোকে ছাড়িয়ে যাওয়া রক্তাক্ত দুটো বিশ্বযুদ্ধ আমাদের শতাব্দীতে ঘটেছে। দুটো বিশ্বযুদ্ধই খ্রীষ্টীয়জগতের লোকেরা শুরু করেছিল।
১৫. (ক) গির্জার সমর্থন বা সম্মতিতে জাতিগুলো কী করে? (খ) রাষ্ট্রসংঘ কি এই জগৎকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সজ্জিত করাকে থামাতে পেরেছে?
১৫ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে বীভৎস দিক ছিল নাৎসী হত্যাকাণ্ড, যাতে লাখ লাখ যিহুদি এবং ইউরোপের অন্যান্য নিরীহ ব্যক্তিদের হত্যা করা হয়েছিল। ইদানীং ফ্রান্সের রোমান ক্যাথলিক যাজকবর্গ স্বীকার করেছেন যে নাৎসীর মৃত্যু কক্ষে হাজার হাজার লোককে পাঠানো বন্ধ করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। তারপরও জাতিগুলো গির্জার সমর্থন বা সম্মতিতে রক্তপাত করার জন্য সবসময় তৈরি। রাশিয়ার অর্থোডক্স গির্জার কথা বলতে গিয়ে কিছুদিন আগে টাইম পত্রিকার (আন্তর্জাতিক সংস্করণ) জানিয়েছে: “গির্জা এমন এক ক্ষেত্রেও এর প্রভাব বিস্তার করেছে যার কথা আগে কখনও ভাবা যায়নি আর তা হল রাশিয়ার সামরিক ক্ষেত্র। . . . জঙ্গি বিমান ও সৈনিকদের আশীর্বাদ করা প্রায় নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। গির্জা এমনকি এতদূর পর্যন্ত গিয়েছে যে নভেম্বর মাসে মস্কোর ড্যানিলোভস্কি মঠকে যেটা রাশিয়ার বিশপের বাসভবন ছিল সেটাকে রাশিয়ার পরমাণু অস্ত্র ভাণ্ডার বানিয়েছে।” নতুন নতুন ধ্বংসাত্মক যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে এই জগৎকে সজ্জিত করাকে কি রাষ্ট্রসংঘ থামাতে পেরেছে? কখনোই না! শান্তির জন্য নোবেল পুরস্কার বিজয়ী এক ব্যক্তি ইংল্যান্ড, লন্ডনের দ্যা গার্ডিয়ান সংবাদপত্রে বলেছিলেন: “যে বিষয়টা আমাদের সত্যিই বিচলিত করে তা হল রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচজন স্থায়ী সদস্যই হল পৃথিবীর পাঁচটা বড় অস্ত্র জোগানদাতা রাষ্ট্র।”
১৬. যুদ্ধপ্রিয় জাতিগুলোর ওপর যিহোবা কী নিয়ে আসবেন?
১৬ যিহোবা কি যুদ্ধপ্রিয় এই জাতিগুলোর ওপর বিচার নিয়ে আসবেন? হবক্কূক ২:১৩ পদ বলে: “দেখ, ইহা কি বাহিনীগণের সদাপ্রভু হইতে হয় না যে, লোকবৃন্দ অগ্নির জন্য পরিশ্রম করে, এবং জাতিগণ অলীকতার জন্য ক্লান্ত হয়?” “বাহিনীগণের সদাপ্রভু”! হ্যাঁ, যিহোবার স্বর্গীয় দূতবাহিনী রয়েছে, যাদেরকে তিনি যুদ্ধপ্রিয় লোক ও জাতিদের ধ্বংস করতে ব্যবহার করবেন!
১৭. দৌরাত্ম্যপূর্ণ জাতিগুলোর ওপর যিহোবা বিচার আনার পর যিহোবা বিষয়ক জ্ঞান পৃথিবীতে কতদূর পর্যন্ত পরিপূর্ণ হবে?
১৭ এই দৌরাত্ম্যপূর্ণ জাতিগুলোর ওপর যিহোবা বিচার আনার পর কী হবে? হবক্কূক ২:১৪ পদ এর উত্তর দেয়: “কারণ সমুদ্র যেমন জলে আচ্ছন্ন, তেমনি পৃথিবী সদাপ্রভুর মহিমাবিষয়ক জ্ঞানে পরিপূর্ণ হইবে।” কত বড় এক আশা! হরমাগিদোনের যুদ্ধে, যিহোবার সার্বভৌমত্ব চিরকালের জন্য প্রতিষ্ঠিত হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৬) তিনি আমাদের আশ্বাস দেন যে “তিনি আপন চরণের স্থান” অর্থাৎ আমাদের এই পৃথিবীকে ‘গৌরবান্বিত করবেন।’ (যিশাইয় ৬০:১৩) সমস্ত মানবজাতিকে জীবনে যাওয়ার জন্য ঈশ্বরের পথ সম্বন্ধে শিক্ষা দেওয়া হবে, যাতে করে যিহোবার গৌরবময় উদ্দেশ্য সম্বন্ধে তাদের জ্ঞান সমুদ্রের মতো হয়।
চতুর্থ ও পঞ্চম বিপর্যয়
১৮. হবক্কূক চতুর্থ কোন্ বিপর্যয়ের কথা ঘোষণা করেন আর আজকের জগতের অনৈতিক অবস্থায় তা কীভাবে দেখা যায়?
১৮ হবক্কূক ২:১৫ পদে চতুর্থ বিপর্যয়ের কথা পাওয়া যায়: “ধিক্ তাহাকে, যে আপন প্রতিবাসীকে পান করায়; তুমি ভাণ্ডে তোমার বিষ মিশাইয়া থাক, আবার তাহাকে মত্ত করিয়া থাক, যেন তুমি তাহাদের উলঙ্গতার প্রতি দৃষ্টিপাত করিতে পার।” এটা আজকের এই জগতের অনৈতিক, বিপথগামী অবস্থাকে বোঝায়। এর অনৈতিকতাকে এমনকি ধর্মীয় দলগুলো সমর্থন করে আর তা আগের অবস্থাকে ছাড়িয়ে গেছে। এইডস এবং অন্যান্য যৌন রোগগুলো মহামারীর আকারে দ্রুতবেগে সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়ছে। ‘সদাপ্রভুর মহিমার’ বিষয়ে চিন্তা না করে, আজকের এই আমিত্ব প্রধান প্রজন্ম আরও খারাপ অবস্থার মধ্যে ডুবে যাচ্ছে ও যিহোবার বিচারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ‘সম্মানের স্থানে অপমানেই পরিপূর্ণ হয়ে’ এই দোষী জগৎ যিহোবার ক্রোধের পাত্র থেকে পান করতে চলেছে, যেটা তাঁর ইচ্ছাকে বোঝায়। ‘ইহার গৌরবের উপরে জঘন্য লজ্জা উপস্থিত হইবে।’—হবক্কূক ২:১৬.
১৯. হবক্কূক যে পঞ্চম বিপর্যয় ঘোষণা করেন সেটা কাদের বিরুদ্ধে আর আমাদের দিনেও এই কথাগুলো কেন তাৎপর্যপূর্ণ?
১৯ পঞ্চম বিপর্যয় হল খোদিত প্রতিমাপূজকদের বিরুদ্ধে কঠোর সতর্কবাণী। যিহোবা তাঁর ভাববাদীকে দিয়ে এই কড়া কথাগুলো ঘোষণা করেন: “ধিক্ তাহাকে যে কাষ্ঠকে বলে, তুমি জাগ, অবাক্ প্রস্তরকে বলে, তুমি উঠ। সে কি শিক্ষা দিবে? দেখ, সে সুবর্ণ ও রৌপ্যে মণ্ডিত, তাহার অন্তরে শ্বাসবায়ুর লেশও নাই।” (হবক্কূক ২:১৯) আমাদের দিন পর্যন্ত, খ্রীষ্টীয়জগৎ এবং অন্যান্য ধর্মগুলো ক্রুশ, মরিয়ম, খোদিত প্রতিমা এবং অন্যান্য মানুষ ও জন্তুর মূর্তি করে সেগুলোর কাছে নত হয়েছে। কিন্তু যখন যিহোবা তাদের ওপর বিচার নিয়ে আসবেন তখন এদের কেউই তাদের উপাসকদের রক্ষা করার জন্য জেগে উঠতে পারবে না। অনন্তকালীন ঈশ্বর যিহোবার মহত্ত্ব এবং তাঁর জীবন্ত সৃষ্টির মহিমার কাছে তাদের এই সোনা ও রুপোর চাকচিক্য একেবারে ম্লান হয়ে যাবে। আসুন আমরা তাঁর অতুলনীয় নামকে চিরকালের জন্য উচ্চে তুলে ধরি!
২০. কোন্ মন্দিরে আমরা খুশি মনে উপাসনা করার সুযোগ পেয়েছি?
২০ হ্যাঁ, আমাদের ঈশ্বর যিহোবাই সমস্ত প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য। তাঁর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিয়ে, আসুন আমরা প্রতিমাপূজার বিরুদ্ধে তাঁর কঠোর সতর্কবাণীতে কান দিই। কিন্তু শুনুন! যিহোবা এখনও বলছেন: “সদাপ্রভু আপন পবিত্র মন্দিরে আছেন; সমস্ত পৃথিবী তাঁহার সম্মুখে নীরব থাক।” (হবক্কূক ২:২০) কোন সন্দেহ নেই যে ভাববাদীর মনে যিরূশালেম মন্দিরের কথাই ছিল। কিন্তু আজকে আমাদের এর চেয়েও মহৎ এক আত্মিক মন্দির, যেখানে প্রভু যীশু খ্রীষ্ট মহাযাজক হিসেবে অধিষ্ঠিত সেখানে উপাসনা করার সুযোগ রয়েছে। এই মন্দিরের পার্থিব প্রাঙ্গণে, আমরা মিলিত হই, সেবা করি ও প্রার্থনা করি আর যিহোবাকে সেই সম্মান দিই যা তাঁর গৌরবান্বিত নামের উপযুক্ত। আর আমাদের প্রেমময় স্বর্গীয় পিতাকে অন্তর থেকে উপাসনা করে আমরা কতই না খুশি হই!
আপনার কি মনে আছে?
• যিহোবার এই কথাগুলোকে আপনি কীভাবে দেখেন: “যথাকালে বিলম্ব করিবে না”?
• হবক্কূক যে বিপর্যয়গুলো ঘোষণা করেছেন আজকে সেগুলোর তাৎপর্য কী?
• কেন আমাদের যিহোবার সতর্কবাণী ঘোষণা করে চলা উচিত?
• কোন্ মন্দিরের প্রাঙ্গণে সেবা করার সুযোগ আমাদের আছে?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
হবক্কূকের মতো আজকে ঈশ্বরের দাসেরা জানেন যে যিহোবা দেরি করবেন না
[১৮ পৃষ্ঠার চিত্রগুলো]
যিহোবার আত্মিক মন্দিরের প্রাঙ্গণে যিহোবাকে উপাসনা করার সুযোগ পাওয়ায় আপনি কি কৃতজ্ঞ?
[১৬ পৃষ্ঠার চিত্র সৌজন্যে]
U.S. Army photo