যিহোবা তাকে “আমার বন্ধু” বলেছিলেন
“হে আমার দাস ইস্রায়েল, আমার মনোনীত যাকোব, আমার বন্ধু অব্রাহামের বংশ।”—যিশা. ৪১:৮.
১, ২. (ক) মানুষ যে ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পারে, তা আমরা কীভাবে জানতে পারি? (খ) এই প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের সকলের ভালোবাসা প্রয়োজন। মানুষের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব প্রয়োজন, শুধু রোমান্টিক প্রেম নয়। তবে, যে-বিষয়টা আমাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন, তা হল যিহোবার কাছ থেকে ভালোবাসা। যেহেতু ঈশ্বর হলেন অদৃশ্য এবং সর্বশক্তিমান, তাই মানুষ যে ঈশ্বরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব উপভোগ করতে পারে, তা অনেকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু আমরা সত্য বিষয়টা জানি!
২ বাইবেল থেকে আমরা জানতে পারি, মানুষেরা ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তুলতে পেরেছে। তাদের উদাহরণ থেকে আমাদের শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। কেন? কারণ ঈশ্বরের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে তোলা আমাদের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এক্ষেত্রে আসুন আমরা অব্রাহামের উদাহরণ বিবেচনা করি। (পড়ুন, যাকোব ২:২৩.) কীভাবে তিনি ঈশ্বরের বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন? ঈশ্বরের সঙ্গে অব্রাহামের ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের ভিত্তি ছিল বিশ্বাস আর তিনি “যাহারা বিশ্বাস করে, . . . তাহাদের সকলের পিতা” হিসেবে সুপরিচিত। (রোমীয় ৪:১১) তার উদাহরণ বিবেচনা করার সময়, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘কীভাবে আমি অব্রাহামের বিশ্বাস অনুকরণ করতে পারি এবং যিহোবার সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব দৃঢ় করতে পারি?’
কীভাবে অব্রাহাম যিহোবার বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন?
৩, ৪. (ক) কোনটা সম্ভবত অব্রাহামের বিশ্বাসের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা ছিল, তা বর্ণনা করুন। (খ) কেন অব্রাহাম ইস্হাককে বলি দেওয়ার ব্যাপারে ইচ্ছুক হয়েছিলেন?
৩ একটু কল্পনা করুন, প্রায় ১২৫ বছর বয়সি অব্রাহাম ধীরে ধীরে একটা পর্বতে উঠছেন।[১] তার ছেলে ইস্হাক তার পিছনে পিছনে হাঁটছেন, যার বয়স প্রায় ২৫ বছর। ইস্হাকের হাতে জ্বালানি কাঠ রয়েছে আর অব্রাহামের কাছে একটা ছুরি ও সেইসঙ্গে আগুন জ্বালানোর প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে। এই যাত্রা সম্ভবত অব্রাহামের জীবনের সবচেয়ে কঠিন যাত্রা। তবে এর কারণ তার বার্ধক্য নয়। এখনও তার প্রচুর শক্তি রয়েছে। এটা এক কঠিন যাত্রা কারণ যিহোবা তাকে তার ছেলেকে বলি দিতে বলেছেন!—আদি. ২২:১-৮.
৪ এটা সম্ভবত অব্রাহামের বিশ্বাসের সবচেয়ে বড়ো পরীক্ষা ছিল। কেউ কেউ বলে থাকে, যেহেতু ঈশ্বর অব্রাহামকে নিজের ছেলেকে বলি দিতে বলেছিলেন, তাই ঈশ্বর নিষ্ঠুর। আবার অন্যেরা বলে থাকে, অব্রাহাম তার ছেলেকে ভালোবাসতেন না আর তাই তিনি তা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। লোকেরা এইরকম কথা বলে কারণ তাদের বিশ্বাস নেই এবং প্রকৃত বিশ্বাস কী অথবা এটা কীভাবে কাজ করে, তা তারা জানে না। (১ করি. ২:১৪-১৬) কিন্তু, অব্রাহাম শুধু অন্ধের মতো অর্থাৎ কোনো কিছু চিন্তা না করেই বাধ্যতা দেখাননি। তিনি বাধ্য হয়েছিলেন কারণ তার প্রকৃত বিশ্বাস ছিল। তিনি জানতেন, যিহোবা তাকে কখনো এমন কিছু করতে বলবেন না, যার ফলে তার স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। অব্রাহাম জানতেন, তিনি যদি বাধ্য হন, তা হলে যিহোবা তাকে এবং তার প্রিয় ছেলেকে আশীর্বাদ করবেন। এই ধরনের দৃঢ়বিশ্বাস বজায় রাখার জন্য অব্রাহামের কী প্রয়োজন ছিল? তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা প্রয়োজন ছিল।
৫. অব্রাহাম হয়তো কীভাবে যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছিলেন আর সেই জ্ঞান তাকে কী করতে অনুপ্রাণিত করেছিল?
৫ জ্ঞান। অব্রাহাম ঊর নামে এক নগরে বড়ো হয়েছিলেন। সেখানকার লোকেরা মিথ্যা দেব-দেবীর উপাসনা করত আর তার বাবাও তা করতেন। (যিহো. ২৪:২) তা হলে, কীভাবে অব্রাহাম যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে পেরেছিলেন? বাইবেল জানায়, নোহের ছেলে শেম অব্রাহামের আত্মীয় ছিলেন। আর অব্রাহামের বয়স যখন প্রায় ১৫০ বছর, তখনও শেম বেঁচে ছিলেন। শেমের গভীর বিশ্বাস ছিল আর তিনি সম্ভবত তার আত্মীয়স্বজনকে যিহোবা সম্বন্ধে বলেছিলেন। যদিও আমরা নিশ্চিতভাবে জানি না, তবে এমন সম্ভাবনা রয়েছে, অব্রাহাম এভাবেই যিহোবা সম্বন্ধে শিখেছিলেন। অব্রাহাম যা শিখেছিলেন, সেটার মাধ্যমে তিনি যিহোবাকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আর এই জ্ঞান তাকে বিশ্বাস গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল।
৬, ৭. কীভাবে অব্রাহামের অভিজ্ঞতাগুলো তার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল?
৬ অভিজ্ঞতা। কীভাবে অব্রাহাম এমন অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, যা যিহোবার প্রতি তার বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল? কেউ কেউ বলে থাকে, চিন্তা করার ফলে অনুভূতি গড়ে ওঠে আর অনুভূতি আমাদের কাজ করতে পরিচালিত করে। ঈশ্বর সম্বন্ধে অব্রাহাম যা শিখেছিলেন, সেটা তার হৃদয়কে নাড়া দিয়েছিল আর তাই তিনি “স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী পরাৎপর ঈশ্বর সদাপ্রভুর” প্রতি গভীর সম্মান গড়ে তুলেছিলেন। (আদি. ১৪:২২) এই ধরনের গভীর সম্মানকে বাইবেলে ‘ঈশ্বরভয়’ বা ঈশ্বরীয় ভয় বলে উল্লেখ করা হয়েছে। (২ করি. ৭:১) আর ঈশ্বরের সঙ্গে এক ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব গড়ে তোলার জন্য আমাদের ঈশ্বরীয় ভয় থাকা প্রয়োজন। (গীত. ২৫:১৪) এটা হচ্ছে সেই গুণ, যা অব্রাহামকে যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করেছিল।
৭ ঈশ্বর অব্রাহাম ও সারাকে তাদের নিজ নগর ঊরে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে বিদেশে চলে যেতে বলেছিলেন। তাদের তখন বয়স হয়ে গিয়েছিল আর জীবনের বাকি সময়টা তাদের তাঁবুতে কাটাতে হবে। অব্রাহাম যদিও জানতেন, সামনে অনেক বিপদ আসতে পারে, কিন্তু তারপরও তিনি যিহোবার বাধ্য হওয়ার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তার বাধ্যতার কারণে ঈশ্বর তাকে আশীর্বাদ করেছিলেন ও তার সুরক্ষা করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, অব্রাহামের সুন্দরী স্ত্রী সারাকে যখন তার কাছ থেকে নিয়ে নেওয়া হয়েছিল এবং অব্রাহামের জীবন ঝুঁকির মুখে ছিল, তখন যিহোবা অলৌকিকভাবে একাধিক বার অব্রাহাম ও সারার সুরক্ষা করেছিলেন। (আদি. ১২:১০-২০; ২০:২-৭, ১০-১২, ১৭, ১৮) সেই অভিজ্ঞতাগুলো অব্রাহামের বিশ্বাসকে শক্তিশালী করেছিল।
৮. কীভাবে আমরা এমন জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি, যা যিহোবার সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব দৃঢ় করবে?
৮ আমরা কি যিহোবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু হতে পারি? অবশ্যই হতে পারি! অব্রাহামের মতো, আমাদেরও যিহোবা সম্বন্ধে শিখতে হবে। আর আমরাও আমাদের জন্য প্রয়োজনীয় জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে পারি। অব্রাহামের যতটুকু জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা ছিল, বর্তমানে আমাদের সেটার চেয়ে আরও বেশি রয়েছে। (দানি. ১২:৪; রোমীয় ১১:৩৩) “স্বর্গমর্ত্ত্যের অধিকারী” যিহোবা সম্বন্ধে বাইবেলে প্রচুর জ্ঞান রয়েছে। তাঁর সম্বন্ধে আমরা যা শিখি, তা আমাদের তাঁকে ভালোবাসতে অনুপ্রাণিত করে এবং তাঁর প্রতি গভীর সম্মান বজায় রাখতে সাহায্য করে। ঈশ্বরের প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান আমাদেরকে তাঁর বাধ্য হতে অনুপ্রাণিত করে। আমরা যখন তাঁর বাধ্য হই, তখন আমরা দেখতে পাই, তিনি কীভাবে আমাদের সুরক্ষা ও আশীর্বাদ করেন আর এভাবেই আমাদের এমন অভিজ্ঞতা হয়, যা আমাদের বিশ্বাসকে আরও দৃঢ় করে। আমরা যখন যিহোবাকে পূর্ণরূপে সেবা করব, তখন আমরা পরিতৃপ্তি, শান্তি ও আনন্দ লাভ করব। (গীত. ৩৪:৮; হিতো. ১০:২২) আমরা যত বেশি জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করব, তাঁর সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বও তত দৃঢ় হবে।
অব্রাহাম যেভাবে ঈশ্বরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব বজায় রেখেছিলেন
৯, ১০. (ক) বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করার জন্য কী প্রয়োজন? (খ) কোন বিষয়টা দেখায় যে, অব্রাহাম যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন ও তা রক্ষা করেছিলেন?
৯ ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব এক মূল্যবান ধনের মতো: আমাদের তা “সর্ব্বসময়ে” রক্ষা করতে হয়। (পড়ুন, হিতোপদেশ ১৭:১৭.) তবে বন্ধুত্ব কোনো দামি ফুলদানির মতো নয়, যা কেনার পর কেবল সাজিয়ে রাখা হয় আর সেটাতে ধুলো পড়ে। বরং বন্ধুত্ব অনেকটা জীবন্ত এক ফুলের মতো, যে-ফুলটা ফোটার জন্য জল ও যত্ন প্রয়োজন। অব্রাহাম যিহোবার সঙ্গে তার বন্ধুত্বকে মূল্যবান বলে গণ্য করেছিলেন ও তা রক্ষা করেছিলেন। কীভাবে তিনি তা করেছিলেন?
১০ অব্রাহাম তার ঈশ্বরীয় ভয় ও বাধ্যতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করেছিলেন। উদাহরণ স্বরূপ, তিনি যখন তার পরিবার ও দাস-দাসী নিয়ে কনানের উদ্দেশে যাত্রা করেছিলেন, তখন ছোটো-বড়ো যেকোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় যিহোবার নির্দেশনা অনুসরণ করেছিলেন। ইস্হাকের জন্মের এক বছর আগে অব্রাহামের বয়স যখন ৯৯ বছর, তখন যিহোবা তাকে তার পরিবারের সকল পুরুষ সদস্যের ত্বকচ্ছেদ করাতে বলেছিলেন। অব্রাহাম কি তখন যিহোবাকে প্রশ্ন করেছিলেন অথবা তাঁর আজ্ঞা পালন না করার জন্য কোনো অজুহাত খুঁজেছিলেন? না, তিনি যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন এবং ‘সেই দিনই’ তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হয়েছিলেন।—আদি. ১৭:১০-১৪, ২৩.
১১. কেন অব্রাহাম সদোম ও ঘমোরার বিষয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন আর কীভাবে যিহোবা তাকে সাহায্য করেছিলেন?
১১ অব্রাহাম যেহেতু ছোটোখাটো বিষয়েও সবসময় যিহোবার বাধ্য হয়েছিলেন, তাই তাদের বন্ধুত্ব দিন দিন দৃঢ় হয়েছিল। তিনি মনে করতেন, যেকোনো বিষয় নিয়ে তিনি যিহোবার সঙ্গে কথা বলতে পারেন আর এমনকী সেই সময়ও সাহায্য চাইতে পারেন, যখন তার মনে বিভিন্ন কঠিন প্রশ্ন আসে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, যিহোবা যখন বলেছিলেন, তিনি সদোম ও ঘমোরা ধ্বংস করে দেবেন, তখন অব্রাহাম চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন। কেন? তিনি ভয় পেয়েছিলেন, এর ফলে হয়তো দুষ্ট লোকেদের সঙ্গে ভালো লোকও মারা যাবে। তিনি সম্ভবত তার ভাইপো লোট ও তার পরিবারের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছিলেন, যারা সদোমে বাস করতেন। অব্রাহাম যেহেতু “সমস্ত পৃথিবীর বিচারকর্ত্তা” যিহোবার উপর নির্ভর করেছিলেন, তাই তিনি নিজের চিন্তার বিষয়টা নিয়ে নম্রভাবে যিহোবার সঙ্গে কথা বলেছিলেন। যিহোবা তাঁর বন্ধুর প্রতি ধৈর্য দেখিয়েছিলেন এবং তাকে বুঝতে সাহায্য করেছিলেন, তিনি করুণাময়। যিহোবা ব্যাখ্যা করেছিলেন, এমনকী বিচার করার সময়ও তিনি ভালো লোকেদের অনুসন্ধান করেন ও তাদের রক্ষা করেন।—আদি. ১৮:২২-৩৩.
১২, ১৩. (ক) কীভাবে অব্রাহামের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা পরবর্তী সময়ে তাকে সাহায্য করেছিল? (খ) কোন বিষয়টা দেখায় যে, যিহোবার উপর অব্রাহামের আস্থা ছিল?
১২ এটা স্পষ্ট, অব্রাহাম যে-জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন, সেটা তাকে যিহোবার সঙ্গে দৃঢ় বন্ধুত্ব বজায় রাখতে সাহায্য করেছিল। তাই পরবর্তী সময়ে, যিহোবা যখন অব্রাহামকে তার ছেলেকে বলি দিতে বলেছিলেন, তখন অব্রাহাম নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা সবসময় ধৈর্যশীল, করুণাময়, নির্ভরযোগ্য ও সুরক্ষাকারী ঈশ্বর। অব্রাহাম পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন, যিহোবা হঠাৎ করে নিষ্ঠুর বা কঠোর হয়ে যাননি! কেন আমরা তা বলতে পারি?
১৩ অব্রাহাম তার দাসদের কাছ থেকে চলে যাওয়ার আগে বলেছিলেন: “তোমরা এই স্থানে গর্দ্দভের সহিত থাক; আমি ও যুবক, আমরা ঐ স্থানে গিয়া প্রণিপাত করি, পরে তোমাদের কাছে ফিরিয়া আসিব।” (আদি. ২২:৫) অব্রাহাম কী বুঝিয়েছিলেন? তিনি ইস্হাককে বলি দেবেন এটা জানা সত্ত্বেও, তিনি কি ফিরে আসার বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছিলেন? না। বাইবেল বলে, অব্রাহাম জানতেন, যিহোবা ইস্হাককে মৃত ব্যক্তিদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত করতে সমর্থ। (পড়ুন, ইব্রীয় ১১:১৯.) অব্রাহাম এটাও জানতেন, তার এবং সারার অনেক বয়স হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও যিহোবা তাদের এক সন্তান লাভ করার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। (ইব্রীয় ১১:১১, ১২, ১৮) তাই তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, কোনো কিছুই যিহোবার অসাধ্য নয়। সেই দিন কী ঘটতে যাচ্ছিল, তা অব্রাহাম জানতেন না। তা সত্ত্বেও, তার এই বিশ্বাস ছিল, যিহোবা তার ছেলেকে পুনরুত্থিত করতে পারেন, যাতে ঈশ্বরের সমস্ত প্রতিজ্ঞা পরিপূর্ণ হয়। এই কারণে, অব্রাহামকে “যাহারা বিশ্বাস করে . . . তাহাদের সকলের পিতা” বলা হয়।
১৪. যিহোবার সেবা করার ক্ষেত্রে আপনি কোন কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হয়ে থাকেন আর অব্রাহামের উদাহরণ কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারে?
১৪ যিহোবা যদিও এখন আমাদেরকে সন্তান বলি দিতে বলেন না, তবে তিনি চান যেন আমরা তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হই। মাঝে মাঝে, এসব আজ্ঞা কেন দেওয়া হয়েছে তা হয়তো আমরা বুঝতে পারি না অথবা সেগুলো পালন করা আমাদের জন্য কঠিন হয়। আপনারও কি কখনো একইরকম অনুভূতি হয়েছে? কারো কারো জন্য প্রচার করা সহজ বিষয় নয়। হয়তো তারা লাজুক স্বভাবের এবং অপরিচিত লোকের সঙ্গে কথা বলা তাদের জন্য কঠিন। অন্যেরা আবার কর্মস্থলে অথবা স্কুলে অন্যদের চেয়ে আলাদা অবস্থান বজায় রাখতে ভয় পায়। (যাত্রা. ২৩:২; ১ থিষল. ২:২) আপনাকে যখন কোনো কঠিন কাজ করতে বলা হয়, তখন অব্রাহামের বিশ্বাস ও সাহসের অসাধারণ উদাহরণ নিয়ে চিন্তা করুন। আমরা যখন বিশ্বস্ত নারী-পুরুষের উদাহরণ নিয়ে ধ্যান করি, তখন তা আমাদেরকে তাদের উদাহরণ অনুকরণ করতে এবং আমাদের বন্ধু যিহোবার নিকটবর্তী হতে সাহায্য করে।—ইব্রীয় ১২:১, ২.
এক বন্ধুত্ব, যা আশীর্বাদ নিয়ে আসে
১৫. যিহোবার প্রতি অনুগত বাধ্যতা দেখানোর কারণে অব্রাহাম যে কখনো আপশোস করেননি, সেই বিষয়ে আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি?
১৫ যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হয়েছিলেন বলে অব্রাহাম কি কখনো আপশোস করেছিলেন? বাইবেল বলে, অব্রাহাম ‘বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু হইয়া শুভ বৃদ্ধাবস্থায় প্রাণত্যাগ করিয়াছিলেন।’ (আদি. ২৫:৮) অব্রাহামের বয়স যখন ১৭৫ বছর ছিল, তখনও তিনি নিজের দীর্ঘজীবন সম্বন্ধে পরিতৃপ্তি সহকারে চিন্তা করতে পেরেছিলেন। কেন? কারণ যিহোবার সঙ্গে বন্ধুত্ব সবসময়ই তার জীবনের প্রধান বিষয় ছিল। তবে আমরা যখন পড়ি অব্রাহাম “বৃদ্ধ ও পূর্ণায়ু” হয়েছিলেন, তখন সেটার অর্থ এই নয়, তার আর বেঁচে থাকার ইচ্ছা ছিল না।
১৬. পরমদেশে অব্রাহাম আনন্দদায়ক কোন বিষয়গুলো উপভোগ করতে পারবেন?
১৬ বাইবেল বলে, অব্রাহাম “ভিত্তিমূলবিশিষ্ট সেই নগরের অপেক্ষা করিতেছিলেন, যাহার স্থাপনকর্ত্তা ও নির্ম্মাতা ঈশ্বর।” (ইব্রীয় ১১:১০) অব্রাহাম এটা বিশ্বাস করতেন, তিনি একদিন সেই নগর অর্থাৎ ঈশ্বরের রাজ্যকে পৃথিবীর উপর শাসন করতে দেখবেন। আর তিনি সত্যিই তা দেখতে পাবেন! অব্রাহাম যখন পরমদেশ পৃথিবীতে বেঁচে থাকবেন এবং ঈশ্বরের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আরও দৃঢ় করবেন, সেই সময়ে তিনি কতটা আনন্দিত হবেন, তা একটু কল্পনা করুন। তার বিশ্বাসের উদাহরণ হাজার হাজার বছর ধরে ঈশ্বরের দাসদের সাহায্য করেছে, এটা জেনে তিনি নিশ্চয়ই আনন্দিত হবেন! পরমদেশে তিনি জানতে পারবেন, মোরিয়া পর্বতের সেই বলিদান আরও মহৎ কিছুকে চিত্রিত করেছিল। (ইব্রীয় ১১:১৯) আর তিনি এটাও জানতে পারবেন, তার ছেলে ইস্হাককে বলি দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেওয়ার সময় তার কেমন কষ্ট লেগেছিল, এই বিষয়টা বুঝতে পেরে লক্ষ লক্ষ বিশ্বস্ত লোক এটা উপলব্ধি করতে পেরেছে, যিহোবা যখন মানবজাতির জন্য তাঁর পুত্র যিশু খ্রিস্টকে বলি দিয়েছেন, তখন তাঁর কত কষ্ট লেগেছে। (যোহন ৩:১৬) অব্রাহামের উদাহরণ আমাদের সবাইকে সর্বকালের সর্বমহৎ প্রেমের কাজ অর্থাৎ মুক্তির মূল্যের প্রতি উপলব্ধি আরও বৃদ্ধি করতে সাহায্য করেছে!
১৭. আপনি কী করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ আর পরের প্রবন্ধে আমরা কী বিবেচনা করব?
১৭ আসুন, আমরা সকলে অব্রাহামের বিশ্বাস অনুকরণ করার জন্য দৃঢ়সংকল্পবদ্ধ হই। তার মতো, আমাদেরও জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। আমরা যখন ক্রমাগতভাবে যিহোবা সম্বন্ধে শিখব ও তাঁর বাধ্য হব, তখন তিনি কীভাবে আমাদের আশীর্বাদ ও সুরক্ষা করেন, তা আমরা দেখতে পাব। (পড়ুন, ইব্রীয় ৬:১০-১২.) যিহোবার সঙ্গে আমাদের এই বন্ধুত্ব যেন চিরকাল বজায় থাকে! পরের প্রবন্ধে আমরা এমন আরও তিন জন বিশ্বস্ত ব্যক্তির উদাহরণ বিবেচনা করব, যারা ঈশ্বরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে উঠেছিলেন।
^ [১] (৩ অনুচ্ছেদ) আগে অব্রাহাম ও সারার নাম ছিল অব্রাম ও সারী। কিন্তু এই প্রবন্ধে, যিহোবা তাদের পরে যে-নাম দিয়েছিলেন, সেগুলো আমরা ব্যবহার করব।