যিহোবা অনেক পুত্রকে প্রতাপে আনয়ন করেন
“ইহা [ঈশ্বরের] উপযুক্ত ছিল যে, তিনি অনেক পুত্ত্রকে প্রতাপে আনয়ন সম্বন্ধে তাহাদের পরিত্রাণের আদিকর্ত্তাকে দুঃখভোগ দ্বারা সিদ্ধ করেন।”—ইব্রীয় ২:১০.
১. আমরা কেন নিশ্চিত হতে পারি যে মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য পরিপূর্ণ হবেই?
যিহোবা, সিদ্ধ মানব পরিবারের জন্য অন্তহীন জীবন উপভোগ করতে পৃথিবীকে এক চিরস্থায়ী গৃহরূপে সৃষ্টি করেছিলেন। (উপদেশক ১:৪; যিশাইয় ৪৫:১২, ১৮) এটি সত্য যে, আমাদের পূর্বপুরুষ আদম পাপ করেছিল আর এইভাবে পাপ ও মৃত্যুকে তার বংশধরদের মধ্যে প্রবাহিত করেছিল। কিন্তু মানবজাতির জন্য ঈশ্বরের উদ্দেশ্য তাঁর প্রতিজ্ঞাত বংশ, যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে পরিপূর্ণ হবে। (আদিপুস্তক ৩:১৫; ২২:১৮; রোমীয় ৫:১২-২১; গালাতীয় ৩:১৬) মানবজাতির জগতের প্রতি প্রেমই যিহোবাকে পরিচালিত করেছিল ‘আপনার একজাত পুত্ত্রকে দান করিতে, যেন, যে কেহ তাঁহাতে বিশ্বাস করে, সে বিনষ্ট না হয়, কিন্তু অনন্ত জীবন পায়।’ (যোহন ৩:১৬) আর প্রেম, যীশুকে “অনেকের পরিবর্ত্তে আপন প্রাণ মুক্তির মূল্যরূপে দিতে” প্রণোদিত করেছিল। (মথি ২০:২৮) এই ‘মুক্তির মূল্য’ আদম কর্তৃক হারানো অধিকার ও প্রত্যাশাগুলিকে পুনরায় ক্রয় করে এবং অনন্ত জীবন সম্ভবপর করে।—১ তীমথিয় ২:৫, ৬; যোহন ১৭:৩.
২. যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রয়োগ কিভাবে ইস্রায়েলের বাৎসরিক প্রায়শ্চিত্ত-দিনে চিত্রিত হত?
২ যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রয়োগ বাৎসরিক প্রায়শ্চিত্ত-দিনে চিত্রিত হত। সেই দিনে, ইস্রায়েলের মহাযাজক পাপের বলিদান হিসাবে একটি গোবৎস বলি দিতেন ও এটির রক্ত প্রথমে সমাগমতাম্বুর অতি পবিত্র স্থানের সিন্দুকে ও পরে মন্দিরে উৎসর্গ করতেন। তার নিজের, তার পরিবারের ও লেবীর বংশের জন্য এটি সম্পন্ন করা হত। অনুরূপভাবে যীশু খ্রীষ্ট, ঈশ্বরের কাছে তাঁর রক্তের মূল্য প্রথমত তাঁর আত্মিক “ভ্রাতৃগণের” পাপ আচ্ছাদন করার জন্য উপস্থিত করেছিলেন। (ইব্রীয় ২:১২; ১০:১৯-২২; লেবীয় পুস্তক ১৬:৬, ১১-১৪) প্রায়শ্চিত্ত-দিনে, মহাযাজক পাপের বলিদান হিসাবে একটি ছাগও বলি দিতেন ও এটির রক্ত অতি পবিত্র স্থানে উৎসর্গ করতেন আর এভাবেই ইস্রায়েলের ১২টি অযাজকীয় বংশের পাপের জন্য প্রায়শ্চিত্ত করা হত। একইভাবে, মহাযাজক, যীশু খ্রীষ্ট তাঁর জীবনরক্ত বিশ্বাস অনুশীলনকারী মানবজাতির পাপ দূর করার জন্য প্রয়োগ করবেন।—লেবীয় পুস্তক ১৬:১৫.
প্রতাপে আনীত হন
৩. ইব্রীয় ২:৯, ১০ পদ অনুসারে ১,৯০০ বছর ধরে ঈশ্বর কী করে এসেছেন?
৩ ১৯০০ বছর ধরে ঈশ্বর, যীশুর “ভ্রাতৃগণের” বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কিছু করে এসেছেন। এই সম্বন্ধে প্রেরিত পৌল লিখেছিলেন: “দূতগণ অপেক্ষা যিনি অল্পই ন্যূনীকৃত হইলেন, সেই ব্যক্তিকে অর্থাৎ যীশুকে দেখিতেছি, তিনি মৃত্যুভোগ হেতু প্রতাপ ও সমাদর-মুকুটে বিভূষিত হইয়াছেন, যেন ঈশ্বরের অনুগ্রহে সকলের নিমিত্ত মৃত্যুর আস্বাদ গ্রহণ করেন। কেননা যাঁহার কারণ সকলই ও যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে, ইহা তাঁহার [যিহোবা ঈশ্বরের] উপযুক্ত ছিল যে, তিনি অনেক পুত্ত্রকে প্রতাপে আনয়ন সম্বন্ধে তাহাদের পরিত্রাণের আদিকর্ত্তাকে দুঃখভোগ দ্বারা সিদ্ধ করেন।” (ইব্রীয় ২:৯, ১০) পরিত্রাণের আদিকর্তা হলেন যীশু খ্রীষ্ট, যিনি পৃথিবীতে একজন মানুষ হিসাবে থাকাকালীন দুঃখভোগের দ্বারা সম্পূর্ণ বাধ্যতা শিখেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:৭-১০) ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে, যীশুই প্রথমে জাত হয়েছিলেন।
৪. কখন এবং কিভাবে যীশু ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র হিসাবে জাত হয়েছিলেন?
৪ যীশুকে তাঁর আত্মিক পুত্র হিসাবে জন্ম দিয়ে স্বর্গীয় প্রতাপে আনার জন্য, যিহোবা তাঁর পবিত্র আত্মা বা কার্যকারী শক্তি ব্যবহার করেছিলেন। যীশু যখন যোহন বাপ্তাইজকের সাথে একা ছিলেন, তিনি নিজেকে ঈশ্বরের কাছে সমর্পণের প্রতীকস্বরূপ সম্পূর্ণরূপে জলে নিমজ্জিত হয়েছিলেন। লূকের সুসমাচারের বিবরণ বলে: “যখন সমস্ত লোক বাপ্তাইজিত হয়, তখন যীশুও বাপ্তাইজিত হইয়া প্রার্থনা করিতেছেন, এমন সময়ে স্বর্গ খুলিয়া গেল, এবং পবিত্র আত্মা দৈহিক আকারে, কপোতের ন্যায়, তাঁহার উপরে নামিয়া আসিলেন, আর স্বর্গ হইতে এই বাণী হইল, ‘তুমি আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।’” (লূক ৩:২১, ২২) যোহন পবিত্র আত্মাকে যীশুর উপর আসতে দেখেছিলেন এবং যিহোবা যে তাঁকে তাঁর প্রিয় পুত্র হিসাবে প্রকাশ্যে অনুমোদন করেছিলেন, তা শুনেছিলেন। সেই সময় ও পবিত্র আত্মার মাধ্যমে যিহোবা যীশুকে ‘প্রতাপে আনয়ন করার অনেক পুত্রের’ প্রথম হিসাবে জন্ম দিয়েছিলেন।
৫. যীশুর বলিদান থেকে প্রথমে কারা উপকার লাভ করেছেন এবং তাদের সংখ্যা কত?
৫ তাঁর বলিদানের উপকারিতা প্রথমে যীশুর ‘ভ্রাতৃগণ’ লাভ করেছেন। (ইব্রীয় ২:১২-১৮) দর্শনে প্রেরিত যোহন ইতিমধ্যেই তাদের মেষশাবক, পুনরুত্থিত প্রভু যীশু খ্রীষ্টের সাথে স্বর্গীয় সিয়োন পর্বতে প্রতাপান্বিত অবস্থায় দেখেছিলেন। যোহন তাদের সংখ্যাও ব্যক্ত করেছিলেন, এই কথা বলে: “আমি দৃষ্টি করিলাম, আর দেখ, সেই মেষশাবক সিয়োন পর্ব্বতের উপরে দাঁড়াইয়া আছেন, এবং তাঁহার সহিত এক লক্ষ চোয়াল্লিশ সহস্র লোক, তাহাদের ললাটে তাঁহার নাম ও তাঁহার পিতার নাম লিখিত। . . . ইহারা ঈশ্বরের ও মেষশাবকের নিমিত্ত অগ্রিমাংশ বলিয়া মনুষ্যদের মধ্য হইতে ক্রীত হইয়াছে। আর ‘তাহাদের মুখে কোন মিথ্যা কথা পাওয়া যায় নাই; তাহারা নির্দ্দোষ।’” (প্রকাশিত বাক্য ১৪:১-৫) অতএব, স্বর্গে ‘প্রতাপে আনয়ন করার অনেক পুত্রের’ সংখ্যা সর্বমোট মাত্র ১,৪৪,০০১ জন—যীশু ও তাঁর আত্মিক ভাইরা।
“ঈশ্বর হইতে জাত”
৬, ৭. কারা “ঈশ্বর হইতে জাত” এবং এটি তাদের জন্য কী অর্থ রাখে?
৬ যিহোবার দ্বারা জন্মকৃত ওই ব্যক্তিরা “ঈশ্বর হইতে জাত।” এই ব্যক্তিদের উদ্দেশে প্রেরিত যোহন লিখেছিলেন “যে কেহ ঈশ্বর হইতে জাত, সে পাপাচরণ করে না, কারণ তাঁহার [যিহোবার] বীর্য্য তাহার অন্তরে থাকে; এবং সে পাপ করিতে পারে না, কারণ সে ঈশ্বর হইতে জাত।” (১ যোহন ৩:৯) এই “বীর্য্য” হল ঈশ্বরের পবিত্র আত্মা। এটি তাঁর বাক্যের সাথে সংযুক্তভাবে কাজ করে ১,৪৪,০০০ জনের প্রত্যেককে, এক স্বর্গীয় আশায় “পুনর্জন্ম” দিয়েছে।—১ পিতর ১:৩-৫, ২৩.
৭ তাঁর মানব জন্ম থেকেই যীশু ঈশ্বরের পুত্র ছিলেন, ঠিক যেমন সিদ্ধ ব্যক্তি আদম “ঈশ্বরের পুত্ত্র” ছিলেন। (লূক ১:৩৫; ৩:৩৮) কিন্তু, যীশুর বাপ্তিস্মের পর এটি তাৎপর্যপূর্ণ ছিল যা যিহোবা ঘোষণা করেছিলেন: “তুমিই আমার প্রিয় পুত্ত্র, তোমাতেই আমি প্রীত।” (মার্ক ১:১১) পবিত্র আত্মার প্রবাহসহ এই ঘোষণার দ্বারা এটি স্পষ্ট হয়েছিল যে ঈশ্বর তাঁকে তখন থেকে তাঁর আত্মিক পুত্র হিসাবে আনয়ন করেছিলেন। যীশুকে যেন আর একবার স্বর্গে ঈশ্বরের একজন আত্মিক পুত্র হিসাবে জীবন লাভের অধিকারসহ “পুনর্জন্ম” দেওয়া হয়েছিল। তাঁর মত, তাঁর ১,৪৪,০০০ জন আত্মিক ভাইরা “নূতন জন্ম” নিয়েছেন। (যোহন ৩:১-৮; প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), নভেম্বর ১৫, ১৯৯২, এর পৃষ্ঠা ৩-৬ দেখুন।) এছাড়া যীশুর মত তারা ঈশ্বরের দ্বারা অভিষিক্ত ও সুসমাচার ঘোষণা করার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়েছেন।—যিশাইয় ৬১:১, ২; লূক ৪:১৬-২১; ১ যোহন ২:২০.
জাত হওয়ার প্রমাণ
৮. আত্মায়-জন্ম নেওয়ার কোন্ প্রমাণ ছিল (ক) যীশুর ক্ষেত্রে (খ) তাঁর প্রাথমিক শিষ্যদের ক্ষেত্রে?
৮ যীশু যে আত্মায়-জাত হয়েছিলেন তাঁর প্রমাণ ছিল। যোহন বাপ্তাইজক আত্মাকে যীশুর উপরে নেমে আসতে দেখেছিলেন এবং নতুন অভিষিক্ত মশীহের আত্মিক পুত্রাধিকার সম্বন্ধে ঈশ্বরের ঘোষণাটি শুনেছিলেন। কিন্তু কিভাবে যীশুর শিষ্যেরা জানতে পেরেছিলেন যে তারা আত্মায়-জাত ছিলেন? তাঁর স্বর্গারোহণের দিন যীশু বলেছিলেন: “যোহন জলে বাপ্তাইজ করিতেন বটে, কিন্তু তোমরা পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত হইবে, বেশী দিন পরে নয়।” (প্রেরিত ১:৫) সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যীশুর শিষ্যেরা “পবিত্র আত্মায় বাপ্তাইজিত” হয়েছিলেন। সেই আত্মার সেচনের সাথে ‘আকাশ হইতে প্রচণ্ডবায়ুর বেগের শব্দের মত একটা শব্দ’ হয়েছিল এবং প্রত্যেক শিষ্যের উপর “অনেক অগ্নিবৎ জিহ্বা” দৃষ্টিগোচর হয়েছিল। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়টি ছিল “আত্মা তাঁহাদিগকে যেরূপ বক্তৃতা দান করিলেন, তদনুসারে অন্য অন্য ভাষায় কথা” বলার জন্য শিষ্যদের সক্ষমতা। সুতরাং, খ্রীষ্টের অনুগামীদের জন্য স্বর্গীয় প্রতাপে ঈশ্বরের পুত্র হওয়ার পথ যে খুলে গিয়েছিল এর দৃশ্যত ও শ্রবণযোগ্য সাক্ষ্য ছিল।—প্রেরিত ২:১-৪, ১৪-২১; যোয়েল ২:২৮, ২৯.
৯. কোন্ প্রমাণ ছিল যে শমরীয়রা, কর্ণীলিয় ও প্রথম শতাব্দীর অন্যান্য খ্রীষ্টানেরা আত্মায়-জাত হয়েছিলেন?
৯ এর অল্প সময় পর, সুসমাচার প্রচারক ফিলিপ শমরীয়াতে প্রচার করেছিলেন। যদিও শমরীয়রা তার বার্তা গ্রহণ করেছিল ও বাপ্তাইজিত হয়েছিল কিন্তু ঈশ্বর যে তাঁর পুত্র হিসাবে তাদের জন্ম দিয়েছিলেন সেই সম্বন্ধে তাদের সাক্ষ্যের অভাব ছিল। যখন প্রেরিত পিতর ও যোহন বিশ্বাসীদের জন্য প্রার্থনা করেছিলেন ও তাদের উপর হস্তার্পণ করেছিলেন “তাহারা পবিত্র আত্মা পাইল” আর যে কোন প্রকারেই হোক তা দর্শকদের কাছে স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছিল। (প্রেরিত ৮:৪-২৫) বিশ্বাসী শমরীয়রা যে ঈশ্বরের পুত্র হিসাবে আত্মায়-জাত হয়েছিলেন এটিই তার প্রমাণস্বরূপ ছিল। একইভাবে, সা.কা. ৩৬ সালে কর্ণীলিয় ও অন্যান্য পরজাতীয়েরা ঈশ্বরের সত্য গ্রহণ করেছিলেন। পিতর ও তার সহযোগী যিহূদী বিশ্বাসীরা “চমৎকৃত হইলেন, কারণ পরজাতীয়দের উপরেও পবিত্র আত্মারূপ দানের সেচন হইল; কেননা তাঁহারা উহাঁদিগকে নানা ভাষায় কথা কহিতে ও ঈশ্বরের মহিমা কীর্ত্তন করিতে শুনিলেন।” (প্রেরিত ১০:৪৪-৪৮) প্রথম শতাব্দীর অনেক খ্রীষ্টান ‘আত্মিক বর’ লাভ করেছিলেন, যেমন বিভিন্ন ভাষায় কথা বলার ক্ষমতা। (১ করিন্থীয় ১৪:১২, ৩২) এই ব্যক্তিবিশেষদের তাই স্পষ্ট সাক্ষ্য ছিল যে তারা আত্মায়-জাত ছিলেন। কিন্তু পরবর্তী খ্রীষ্টানেরা কিভাবে জানবেন যে তারা আত্মায়-জাত ছিলেন কি না?
আত্মার সাক্ষ্য
১০, ১১. রোমীয় ৮:১৫-১৭ পদের ভিত্তিতে আপনি কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন যে যারা খ্রীষ্টের সহদায়াদ তাদের সাথে আত্মাই সাক্ষ্য দেয়?
১০ ১,৪৪,০০০ জন অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের সকলের নিশ্চিত সাক্ষ্য রয়েছে যে তাদের ঈশ্বরের আত্মা আছে। এই সম্বন্ধে পৌল লিখেছিলেন: “তোমরা . . . দত্তকপুত্ত্রতার আত্মা পাইয়াছ, যে আত্মাতে আমরা আব্বা, পিতা, বলিয়া ডাকিয়া উঠি। আত্মা আপনিও আমাদের আত্মার সহিত সাক্ষ্য দিতেছেন যে, আমরা ঈশ্বরের সন্তান। আর যখন সন্তান, তখন দায়াদ, ঈশ্বরের দায়াদ ও খ্রীষ্টের সহদায়াদ—যদি বাস্তবিক আমরা তাঁহার সহিত দুঃখভোগ করি, যেন তাঁহার সহিত প্রতাপান্বিতও হই।” (বাঁকা অক্ষরে মুদ্রণ আমাদের।) (রোমীয় ৮:১৫-১৭) অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের তাদের স্বর্গীয় পিতার প্রতি এক সন্তানোচিত মনোভাব, পুত্রাধিকারের প্রতি এক দৃঢ় অনুভূতি রয়েছে। (গালাতীয় ৪:৬, ৭) তারা সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিত যে স্বর্গীয় রাজ্যে খ্রীষ্টের সাথে সহদায়াদ হিসাবে আত্মিক পুত্রাধিকারে, তারা ঈশ্বরের দ্বারা জাত হয়েছেন। এই ক্ষেত্রে, যিহোবার পবিত্র আত্মা এক নির্দিষ্ট ভূমিকা রাখে।
১১ ঈশ্বরের পবিত্র আত্মার প্রভাবাধীনে অভিষিক্ত ব্যক্তিদের আত্মা বা দৃঢ় মনোভাব, স্বর্গীয় আশা সম্বন্ধে ঈশ্বরের বাক্য যা বলে তার প্রতি এক ইতিবাচক উপায়ে সাড়া প্রদানের জন্য তাদের অনুপ্রাণিত করে। উদাহরণস্বরূপ, যিহোবার আত্মিক সন্তানদের সম্বন্ধে শাস্ত্র যা বলে সেই সম্বন্ধে যখন তারা পড়েন, তারা স্বতঃস্ফূর্তভাবে স্বীকার করেন যে এই বাক্যগুলি তাদের প্রতি প্রযোজ্য। (১ যোহন ৩:২) তারা জানেন যে তারা “খ্রীষ্ট যীশুর উদ্দেশে বাপ্তাইজিত” এবং সেই সাথে তাঁর মৃত্যুর উদ্দেশেও। (রোমীয় ৬:৩) তাদের দৃঢ়প্রত্যয় হল যে তারা হলেন ঈশ্বরের আত্মিক পুত্র, যারা মারা যাবেন ও যীশুর মত স্বর্গীয় প্রতাপে পুনরুত্থিত হবেন।
১২. অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের মধ্যে ঈশ্বরের আত্মা কী উৎপাদন করেছে?
১২ আত্মিক পুত্রাধিকারে জাত হওয়া কোন অনুশীলিত আকাঙ্ক্ষা নয়। আত্মায়-জাত ব্যক্তিরা পৃথিবীর বর্তমান দুঃখকষ্টজনিত বিপর্যয়ের কারণে স্বর্গে যেতে চান না। (ইয়োব ১৪:১) বরঞ্চ, যিহোবার আত্মা, প্রকৃত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সেই আশা ও আকাঙ্ক্ষা উৎপন্ন করেছে, যা সাধারণ মানুষের কাছে অপরিচিত। এইপ্রকারে জাত ব্যক্তিরা জানেন যে সুখী পরিবার ও বন্ধুবান্ধব দিয়ে পরিবেষ্টিত, পরমদেশ পৃথিবীতে মানব সিদ্ধতায় অনন্ত জীবন চমকপ্রদ হবে। কিন্তু, এইধরনের জীবন তাদের হৃদয়ের মুখ্য আকাঙ্ক্ষা নয়। অভিষিক্ত ব্যক্তিদের এত দৃঢ় এক স্বর্গীয় আশা রয়েছে যে তারা স্বেচ্ছায় সমস্ত পার্থিব প্রত্যাশা ও আসক্তিকে জলাঞ্জলি দেন।—২ পিতর ১:১৩, ১৪.
১৩. ২ করিন্থীয় ৫:১-৫ পদ অনুসারে, পৌলের “আকাঙ্ক্ষা” কী ছিল আর আত্মায়-জাত ব্যক্তিদের সম্বন্ধে এটি কী ইঙ্গিত দেয়?
১৩ এই ব্যক্তিদের কাছে ঈশ্বর-দত্ত স্বর্গীয় জীবনের আশা এতই দৃঢ় যে তাদের অনুভূতি পৌলের মত, যিনি লিখেছিলেন: “আমরা জানি, যদি আমাদের এই তাম্বুরূপ পার্থিব বাটী ভাঙ্গিয়া যায়, তবে ঈশ্বরদত্ত এক গাঁথনি আমাদের আছে, সেই বাটী অহস্তনির্ম্মিত, অনন্তকালস্থায়ী ও স্বর্গে স্থিত। কারণ বাস্তবিক আমরা এই তাম্বুর মধ্যে থাকিয়া আর্ত্তস্বর করিতেছি, ইহার উপরে স্বর্গ হইতে প্রাপ্য আবাস-পরিহিত হইবার আকাঙ্ক্ষা করিতেছি; পরিহিত হইলে পর আমরা ত উলঙ্গ থাকিব না। আর বাস্তবিক এই তাম্বুতে থাকিয়া আমরা ভারাক্রান্ত হওয়াতে আর্ত্তস্বর করিতেছি; কেননা আমরা পরিচ্ছদ-বিহীন হইতে বাঞ্ছা করি না, কিন্তু ইহার উপরে পরিহিত হইতে বাঞ্ছা করি, যেন যাহা মর্ত্ত্য, তাহা জীবনের দ্বারা কবলিত হয়। আর যিনি আমাদিগকে ইহারই নিমিত্ত প্রস্তুত করিয়াছেন, তিনি ঈশ্বর, তিনি আমাদিগকে আত্মা বায়না দিয়াছেন।” (২ করিন্থীয় ৫:১-৫) পৌলের এক অমর আত্মিক প্রাণী হিসাবে স্বর্গে পুনরুত্থিত হওয়ার “আকাঙ্ক্ষা” ছিল। মানব দেহ সম্বন্ধে উল্লেখ করতে গিয়ে তিনি গোটানো তাঁবুর রূপক ব্যবহার করেছিলেন, যা একটি ঘরের তুলনায় ভঙ্গুর ও অস্থায়ী বাসস্থান। পৃথিবীতে এক মরণশীল, মাংসিক দেহে বাস করলেও, যে খ্রীষ্টানদের আসন্ন স্বর্গীয় জীবনের বায়না হিসাবে আত্মা রয়েছে, তারা “ঈশ্বরদত্ত এক গাঁথনি,” এক অমর, অক্ষয় আত্মিক দেহের জন্য প্রতীক্ষা করেন। (১ করিন্থীয় ১৫:৫০-৫৩) পৌলের মত তারাও ঐকান্তিকভাবে বলতে পারেন: “আমরা সাহস করিতেছি, এবং [মানব] দেহ হইতে দূরে প্রবাস ও [স্বর্গে] প্রভুর কাছে নিবাস করা অধিক বাঞ্ছনীয় জ্ঞান করিতেছি।”—২ করিন্থীয় ৫:৮.
বিশেষ চুক্তিগুলির অন্তর্ভুক্ত
১৪. স্মরণার্থক উদ্যাপন প্রতিষ্ঠা করার সময়ে কোন্ চুক্তির বিষয়ে যীশু প্রথমে উল্লেখ করেছিলেন আর আধ্যাত্মিক ইস্রায়েলীয়দের বিষয়ে এটি কোন ভূমিকা রাখে?
১৪ আত্মায়-জাত খ্রীষ্টানেরা নিশ্চিত যে তাদের দুটি বিশেষ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তাঁর আসন্ন মৃত্যুর স্মরণার্থক প্রতিষ্ঠা করার জন্য যখন তিনি তাড়ীশূন্য রুটি ও দ্রাক্ষারস ব্যবহার করেছিলেন তখন তিনি এগুলির একটি সম্বন্ধে উল্লেখ করেছিলেন ও পানপাত্র সম্বন্ধে বলেছিলেন: “এই পানপাত্র আমার রক্তে নূতন নিয়ম [“চুক্তি,” “NW”], যে রক্ত তোমাদের নিমিত্ত পাতিত হয়।” (লূক ২২:২০; ১ করিন্থীয় ১১:২৫) এই নতুন চুক্তির সংশ্লিষ্ট পক্ষের ব্যক্তিরা কারা? যিহোবা ঈশ্বর এবং আত্মিক ইস্রায়েলের সদস্যগণ—যাদের যিহোবা স্বর্গীয় প্রতাপে আনয়ন করার জন্য উদ্দেশ্য করেন। (যিরমিয় ৩১:৩১-৩৪; গালাতীয় ৬:১৫, ১৬; ইব্রীয় ১২:২২-২৪) যীশুর পাতিত রক্তের দ্বারা সক্রিয় হয়ে নতুন চুক্তি, যিহোবার নামের জন্য জাতিগুলির মধ্য থেকে লোকেদের গ্রহণ ও এই আত্মায়-জাত খ্রীষ্টানদের অব্রাহামের ‘বংশের’ অংশ করে। (গালাতীয় ৩:২৬-২৯; প্রেরিত ১৫:১৪) নতুন চুক্তি স্বর্গে অমর জীবনে পুনরুত্থিত করার মাধ্যমে সকল আত্মিক ইস্রায়েলীয়দেরকে প্রতাপে আনয়ন করার ব্যবস্থা করে। “অনন্তকালস্থায়ী নিয়ম [“চুক্তি,” “NW”]” হওয়ার কারণে এর উপকারিতাগুলি চিরকাল স্থায়ী হবে। এই চুক্তি সহস্র বছরের রাজত্বের সময়ে ও তারপরও কোন ভূমিকা রাখবে কি না তা ভবিষ্যতে জানা যাবে।—ইব্রীয় ১৩:২০.
১৫. লূক ২২:২৮-৩০ পদের সাথে সংগতি রেখে যীশুর অভিষিক্ত অনুগামীদের অন্য কোন্ চুক্তির অন্তর্ভুক্ত করা শুরু হয়েছিল এবং কখন?
১৫ “অনেক পুত্ত্রকে” যাদের যিহোবা ‘প্রতাপে আনয়ন করতে’ উদ্দেশ্য করেছিলেন, তাদের পৃথক পৃথকভাবে এক স্বর্গীয় রাজ্য চুক্তির অন্তর্ভুক্তও করা হয়েছে। তাঁর ও তাঁর পদচিহ্ন অনুসরণকারীদের মধ্যে বিদ্যমান এই চুক্তি সম্বন্ধে যীশু বলেছিলেন: “তোমরাই আমার সকল পরীক্ষার মধ্যে আমার সঙ্গে সঙ্গে বরাবর রহিয়াছ; আর আমার পিতা যেমন আমার জন্য নিরূপণ করিয়াছেন, আমিও তেমনি তোমাদের জন্য এক রাজ্য নিরূপণ করিতেছি, যেন তোমরা আমার রাজ্যে আমার মেজে ভোজন পান কর; আর তোমরা সিংহাসনে বসিয়া ইস্রায়েলের দ্বাদশ বংশের বিচার করিবে।” (লূক ২২:২৮-৩০) রাজ্য চুক্তি সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে যীশুর শিষ্যেরা যখন পবিত্র আত্মার দ্বারা অভিষিক্ত হয়েছিলেন, তখন উন্মোচিত হয়েছিল। সেই চুক্তি খ্রীষ্ট ও তাঁর সহযোগী রাজাদের মধ্যে চিরকাল সক্রিয় থাকবে। (প্রকাশিত বাক্য ২২:৫) তাই, আত্মায়-জাত খ্রীষ্টানেরা নিশ্চিত যে তারা নতুন চুক্তি এবং রাজ্য চুক্তির অন্তর্ভুক্ত। তাই, প্রভুর সান্ধ্যভোজের উদ্যাপনগুলিতে, এখনও পৃথিবীতে স্থিত অবশিষ্ট তুলনামূলকভাবে অল্পসংখ্যক অভিষিক্ত ব্যক্তিরা যীশুর নিষ্পাপ মানব দেহকে প্রতিনিধিত্বকারী রুটি ভোজন ও তাঁর সিদ্ধ রক্তকে চিহ্নিতকারী দ্রাক্ষারস পানে অংশগ্রহণ করেন, যা মৃত্যুর মাধ্যমে পাতিত হয় এবং নতুন চুক্তিকে বৈধতা প্রদান করে।—১ করিন্থীয় ১১:২৩-২৬; প্রহরীদুর্গ (ইংরাজি), ফেব্রুয়ারি ১, ১৯৮৯, এর পৃষ্ঠা ১৭-২০ দেখুন।
আহূত, মনোনীত ও বিশ্বস্ত
১৬, ১৭. (ক) প্রতাপে আনীত হওয়ার জন্য ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিদের সকলের ক্ষেত্রে কোন্ বিষয়টি সত্য হতে হবে? (খ) “দশ রাজা” কারা এবং খ্রীষ্টের “ভ্রাতৃগণের” পার্থিব অবশিংষ্টাংশদের সাথে তারা কেমন আচরণ করছেন?
১৬ যীশুর মুক্তির মূল্যরূপ বলিদানের প্রথম প্রয়োগ ১,৪৪,০০০ জন ব্যক্তিদের স্বর্গীয় জীবনের জন্য আহূত ও ঈশ্বরের দ্বারা আত্মায়-জাত হওয়ার জন্য মনোনীত হওয়া সম্ভবপর করেছে। তাদের প্রতাপে আনীত হওয়ার জন্য অবশ্যই ‘তাহারা যে আহূত ও মনোনীত তাহা নিশ্চয় করিতে অধিক যত্ন করিতে’ হবে এবং তাদের অবশ্যই মৃত্যু পর্যন্ত নিজেদের বিশ্বস্ত হিসাবে প্রমাণ দিতে হবে। (২ পিতর ১:১০; ইফিষীয় ১:৩-৭; প্রকাশিত বাক্য ২:১০) পৃথিবীতে স্থিত অভিষিক্ত ব্যক্তিদের ক্ষুদ্র অবশিষ্টাংশেরা, “দশ রাজা” যা রাজনৈতিক শক্তিগুলিকে চিত্রিত করে, তাদের বিরোধিতা সত্ত্বেও তাদের আনুগত্য রক্ষা করে চলেছেন। “তাহারা মেষশাবকের সহিত যুদ্ধ করিবে,” একজন দূত বলেছিলেন “আর মেষশাবক তাহাদিগকে জয় করিবেন, কারণ ‘তিনি প্রভুদের প্রভু ও রাজাদের রাজা;’ এবং যাঁহারা তাঁহার সহবর্ত্তী, আহূত ও মনোনীত ও বিশ্বস্ত, তাঁহারাও জয় করিবেন।”—প্রকাশিত বাক্য ১৭:১২-১৪.
১৭ “রাজাদের রাজা” যীশুর বিরুদ্ধে মানব শাসকেরা কিছুই করতে পারেন না কারণ তিনি স্বর্গে রয়েছেন। কিন্তু তারা, পৃথিবীতে এখনও স্থিত তাঁর “ভ্রাতৃগণের” অবশিষ্টাংশের প্রতি শত্রুতা প্রদর্শন করেন। (প্রকাশিত বাক্য ১২:১৭) তা ঈশ্বরের যুদ্ধ হর্মাগিদোনে শেষ হবে যখন “রাজাদের রাজা” ও তাঁর ‘ভ্রাতৃগণ’—“যাহারা . . . আহূত ও মনোনীত ও বিশ্বস্ত,” তাদের বিজয় নিশ্চিত হবে। (প্রকাশিত বাক্য ১৬:১৪, ১৬) এই মধ্যবর্তী সময়ে, আত্মায়-জাত খ্রীষ্টানেরা অত্যন্ত ব্যস্ত। যিহোবার দ্বারা প্রতাপে আনীত হওয়ার পূর্বে এখন তারা কী করছেন?
আপনার উত্তর কী?
◻ ঈশ্বর কাদের ‘স্বর্গীয় প্রতাপে আনয়ন করেন’?
◻ “ঈশ্বর হইতে জাত” হওয়ার অর্থ কী?
◻ কিছু খ্রীষ্টানদের সাথে কিভাবে ‘আত্মা সাক্ষ্য দেন’?
◻ আত্মায়-জাত ব্যক্তিদের কোন্ চুক্তিগুলির অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে?
[১৫ পৃষ্ঠার চিত্র]
সা.কা. ৩৩ সালের পঞ্চাশত্তমীর দিনে স্বর্গীয় প্রতাপের পথ যে খোলা হয় তার সাক্ষ্য প্রদান করা হয়েছিল