অধ্যায় ১১
‘বিবাহ আদরণীয় হউক’
“তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর।”—হিতোপদেশ ৫:১৮.
১, ২. আমরা কোন প্রশ্ন বিবেচনা করব এবং কেন?
আপনি কি বিবাহিত? যদি হয়ে থাকেন, তাহলে আপনার বিয়ে কি সুখের এক উৎস, না কি আপনি গুরুতর বৈবাহিক সমস্যা ভোগ করছেন? আপনি ও আপনার সাথি কি পরস্পরের কাছ থেকে ধীরে ধীরে দূরে সরে যাচ্ছেন? আপনি কি বিবাহিত জীবন টিকিয়ে রাখছেন কিন্তু উপভোগ করছেন না? যদি তা-ই হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সম্ভবত এই ভেবে দুঃখ পাচ্ছেন যে, আপনি একসময় যে-উষ্ণ বৈবাহিক বন্ধন উপভোগ করতেন, তা এখন শীতল হয়ে গিয়েছে। একজন খ্রিস্টান হিসেবে আপনি নিশ্চিতভাবেই চাইবেন যেন আপনার বিয়ে আপনি যে-ঈশ্বরকে ভালোবাসেন, সেই ঈশ্বর যিহোবার গৌরব নিয়ে আসে। তাই, আপনার বর্তমান পরিস্থিতি হয়তো স্পষ্টতই আপনাকে চিন্তিত করে তোলে এবং মনোদুঃখ দেয়। তা সত্ত্বেও, দয়া করে এই উপসংহারে আসবেন না যে, আপনার পরিস্থিতি আশাহীন।
২ বর্তমানে, এমন চমৎকার খ্রিস্টান দম্পতিরা রয়েছে, যারা একসময় পরস্পরের সঙ্গে কোনো দৃঢ় সম্পর্ক ছাড়াই তাদের বিয়েকে কেবল টিকিয়ে রেখেছিল। কিন্তু, তাদের সম্পর্ককে শক্তিশালী করার জন্য তারা একটা উপায় খুঁজে পেয়েছে। আপনিও আপনার বিয়েতে আরও পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারেন। কীভাবে?
ঈশ্বর ও আপনার সাথির আরও নিকটবর্তী হওয়া
৩, ৪. বিবাহিত সাথিরা যদি ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে, তাহলে কেন তারা পরস্পরেরও আরও নিকটবর্তী হবে? উদাহরণের সাহায্যে ব্যাখ্যা করুন।
৩ আপনি ও আপনার সাথি পরস্পরের আরও নিকটবর্তী হতে পারবেন, যদি আপনারা ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কেন? একটা উদাহরণ বিবেচনা করুন: মোচাকৃতি—নীচের দিকে প্রশস্ত ও উপরের দিকে সংকীর্ণ—এক পর্বতের কথা কল্পনা করুন। একজন পুরুষ উত্তরের ঢালের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছেন আর একজন মহিলা এর বিপরীত দিকে অর্থাৎ দক্ষিণের ঢালের পাদদেশে দাঁড়িয়ে আছেন। উভয়েই আরোহণ করতে শুরু করেন। উভয়েই যখন পর্বতের পাদদেশে থাকেন, তখন এক বিরাট দূরত্ব তাদেরকে পৃথক করে রাখে। কিন্তু, প্রত্যেকেই যখন উঁচু থেকে উঁচুতে সংকীর্ণ চূড়ার দিকে উঠতে থাকেন, তখন তাদের মধ্যেকার দূরত্ব ধীরে ধীরে কমতে থাকে। আপনি কি এই দৃষ্টান্তের মধ্যে আশ্বাসজনক কোনো শিক্ষা দেখতে পাচ্ছেন?
৪ যিহোবাকে পূর্ণরূপে সেবা করার জন্য আপনার প্রচেষ্টাকে একটা পর্বতে আরোহণ করার জন্য যে-প্রচেষ্টার প্রয়োজন, সেটার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। আপনি যেহেতু যিহোবাকে ভালোবাসেন, তাই রূপকভাবে বলতে গেলে, আপনি ইতিমধ্যেই আরোহণ করার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা করছেন। কিন্তু, আপনি ও আপনার সাথি যদি ধীরে ধীরে দূরে সরে গিয়ে থাকেন, তাহলে আপনারা হয়তো সেই পর্বতের দু-দিক থেকে আরোহণ করছেন। তবে, আপনি যখন ক্রমাগত আরোহণ করে চলেন, তখন কী ঘটে? এটা ঠিক যে, প্রথমে বেশ কিছু দূরত্ব হয়তো আপনাদেরকে পৃথক করে রাখে। তা সত্ত্বেও, আপনি যতই ঈশ্বরের নিকটবর্তী হওয়ার—উঁচুতে আরোহণ করার—প্রচেষ্টা করেন, ততই আপনি ও আপনার সাথি পরস্পরের নিকটবর্তী হন। বস্তুতপক্ষে, ঈশ্বরের আরও নিকটবর্তী হওয়াই আপনার সাথির আরও নিকটবর্তী হওয়ার চাবিকাঠি। কিন্তু, কীভাবে আপনি আসলে তা করতে পারেন?
প্রয়োগ করা হলে, বাইবেলের জ্ঞানের সেই ক্ষমতা রয়েছে, যা আপনার বিয়েকে শক্তিশালী করতে পারে
৫. (ক) যিহোবা ও নিজের বিবাহসাথির আরও নিকটবর্তী হওয়ার একটা উপায় কী? (খ) বিয়েকে যিহোবা কীভাবে দেখেন?
৫ রূপকভাবে বললে, আপনার ও আপনার সাথির জন্য আরোহণ করার একটা গুরুত্বপূর্ণ উপায় হল, ঈশ্বরের বাক্যে প্রাপ্ত বিয়ে সম্বন্ধীয় পরামর্শে মনোযোগ দেওয়া। (গীতসংহিতা ২৫:৪; যিশাইয় ৪৮:১৭, ১৮) তাই, প্রেরিত পৌলের বলা পরামর্শের একটা নির্দিষ্ট বিষয় বিবেচনা করুন। তিনি বলেছিলেন: ‘সকলের মধ্যে বিবাহ আদরণীয় হউক।’ (ইব্রীয় ১৩:৪) এর অর্থ কী? “আদরণীয়” বা সমাদরণীয় শব্দটা উচ্চমূল্যসম্পন্ন ও মূল্যবান কিছুকে ইঙ্গিত করে। আর বিয়েকে যিহোবা ঠিক এভাবেই দেখে থাকেন—এটাকে তিনি মূল্যবান হিসেবে গণ্য করেন।
আপনার অনুপ্রেরণা —যিহোবার প্রতি আন্তরিক প্রেম
৬. বিয়ে সম্বন্ধে পৌলের পরামর্শের প্রসঙ্গ কী দেখায় আর তা মনে রাখা কেন গুরুত্বপূর্ণ?
৬ অবশ্য, ঈশ্বরের দাস হিসেবে আপনি ও আপনার সাথি ইতিমধ্যেই জানেন যে, বিয়ে হল মূল্যবান ও এমনকী পবিত্র। যিহোবা নিজে বৈবাহিক ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছেন। (পড়ুন, মথি ১৯:৪-৬.) কিন্তু, আপনি যদি বর্তমানে বৈবাহিক সমস্যা ভোগ করে থাকেন, তাহলে আপনার ও আপনার সাথিকে পরস্পরের সঙ্গে প্রেম ও সম্মান সহকারে আচরণ করতে অনুপ্রাণিত করার জন্য শুধু এই বিষয়টা জানাই যথেষ্ট নয় যে, বিবাহ সমাদরণীয়। তাহলে, কী আপনাদের তা করতে পরিচালিত করবে? পৌল সমাদর করার বিষয়টাকে কীভাবে বলেছিলেন, তা ভালো করে লক্ষ করুন। তিনি বলেননি “বিবাহ হল আদরণীয়” বা সমাদরণীয়; বরং তিনি বলেছিলেন, “বিবাহ আদরণীয়” বা সমাদরণীয় “হউক।” পৌল কেবলমাত্র একটা মন্তব্য করছিলেন না; তিনি এক জোরালো পরামর্শ দিচ্ছিলেন।a এই পার্থক্যটা মনে রাখা হয়তো আপনাকে আপনার সাথির প্রতি উচ্চমূল্যকে পুনরুদ্দীপিত করার জন্য আরও অনুপ্রেরণা লাভ করতে সাহায্য করবে। কেন?
৭. (ক) আমরা কোন শাস্ত্রীয় আজ্ঞাগুলো পালন করছি এবং কেন? (খ) বাধ্য হওয়ার মাধ্যমে কোন কোন উত্তম ফল পাওয়া যায়?
৭ অন্যান্য শাস্ত্রীয় আজ্ঞা যেমন, শিষ্য তৈরি করার দায়িত্ব অথবা উপাসনার জন্য একত্রিত হওয়ার উপদেশকে আপনি কীভাবে দেখে থাকেন, তা এক মুহূর্তের জন্য একটু চিন্তা করুন। (মথি ২৮:১৯; ইব্রীয় ১০:২৪, ২৫) এটা ঠিক যে, সেই আজ্ঞাগুলো পালন করা হয়তো মাঝে মাঝে কঠিন হতে পারে। যে-লোকেদের কাছে আপনি প্রচার করেন, তারা হয়তো নেতিবাচকভাবে সাড়া দিতে পারে অথবা আপনার চাকরির কারণে আপনি হয়তো এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন যে, খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। তা সত্ত্বেও, আপনি রাজ্যের বার্তা প্রচার করে চলছেন এবং খ্রিস্টীয় সভাগুলোতে যোগদান করে যাচ্ছেন। কেউই আপনাকে থামাতে পারে না—এমনকী শয়তানও না! কেন? কারণ যিহোবার প্রতি আপনার আন্তরিক প্রেম আপনাকে তাঁর আজ্ঞা সকলের বাধ্য হতে পরিচালিত করে। (১ যোহন ৫:৩) আর এর উত্তম ফল কী হয়? প্রচার কাজে অংশ নেওয়া ও সভাগুলোতে যোগ দেওয়া আপনাকে মনের শান্তি ও গভীর আনন্দ প্রদান করে কারণ আপনি জানেন যে, আপনি ঈশ্বরের ইচ্ছা পালন করছেন। আর এর ফলে, সেই অনুভূতিগুলো আপনার শক্তিকে পুনরুজ্জীবিত করে। (নহিমিয় ৮:১০) এখানে শিক্ষাটা কী?
৮, ৯. (ক) কী আমাদের বিয়েকে সমাদরণীয় করার জোরালো পরামর্শের প্রতি বাধ্য হতে পরিচালিত করতে পারে এবং কেন? (খ) আমরা এখন কোন দুটো বিষয় বিবেচনা করব?
৮ ঠিক যেমন ঈশ্বরের প্রতি আপনার গভীর ভালোবাসা আপনাকে বিভিন্ন বাধা সত্ত্বেও প্রচার করার ও একত্রে মিলিত হওয়ার আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হতে পরিচালিত করে, তেমনই যিহোবার প্রতি আপনার ভালোবাসা “বিবাহ আদরণীয়” বা সমাদরণীয় “হউক,” এই শাস্ত্রীয় পরামর্শের প্রতি বাধ্য হওয়ার জন্য আপনাকে পরিচালিত করতে পারে আর তা এমনকী সেই সময়েও, যখন সেটাকে কঠিন বলে মনে হয়। (ইব্রীয় ১৩:৪; গীতসংহিতা ১৮:২৯; উপদেশক ৫:৪) অধিকন্তু, প্রচার করার ও একত্রে মিলিত হওয়ার ব্যাপারে আপনার প্রচেষ্টা যেমন ঈশ্বরের কাছ থেকে প্রচুর আশীর্বাদ নিয়ে আসে, তেমনই আপনার বিবাহকে সমাদরণীয় করার বিষয়ে আপনার প্রচেষ্টা যিহোবা লক্ষ করবেন এবং তাতে আশীর্বাদ করবেন।—১ থিষলনীকীয় ১:৩; ইব্রীয় ৬:১০.
৯ তাহলে, কীভাবে আপনি আপনার বিয়েকে সমাদরণীয় করে তুলতে পারেন? আপনাকে এমন আচরণ এড়িয়ে চলতে হবে, যা আপনার বিয়েকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। অধিকন্তু, আপনাকে এমন পদক্ষেপগুলো নিতে হবে, যেগুলো বৈবাহিক বন্ধনকে শক্তিশালী করবে।
বিয়েকে অসমাদর করে এমন কথাবার্তা ও আচরণ এড়িয়ে চলুন
১০, ১১. (ক) কোন আচরণ বিয়েকে অসমাদর করে? (খ) আমাদের সাথিদের সঙ্গে আমাদের কোন প্রশ্ন বিবেচনা করা উচিত?
১০ বেশ কিছুদিন আগে একজন খ্রিস্টান স্ত্রী মন্তব্য করেছিলেন: “আমি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করি যেন তিনি আমাকে সহ্য করতে সাহায্য করেন।” কী সহ্য করতে? তিনি ব্যাখ্যা করেন: “আমার স্বামী আমাকে আঘাত দিয়ে কথা বলে। বাইরে দিয়ে দেখলে হয়তো বোঝা যায় না যে, আমি আঘাত পেয়েছি কিন্তু তার ক্রমাগত এই ধরনের তীব্র কটুক্তি যেমন, ‘তুমি একটা বোঝা!’ এবং ‘তুমি কোনো কাজেরই নও!’ আমার হৃদয়কে ক্ষতবিক্ষত করে দিয়েছে।” এই স্ত্রী এক গুরুতর চিন্তার বিষয় সম্বন্ধে উল্লেখ করেন আর তা হল বিয়ের মধ্যে নিন্দনীয় কথাবার্তা।
১১ খ্রিস্টীয় পরিবারগুলোতে সাথিরা যখন পরস্পরকে আক্রমণাত্মকভাবে নির্দয় কথা বলে আর এর মাধ্যমে এমন আবেগগত ক্ষতের সৃষ্টি করে, যা সহজে আরোগ্য হয় না, তখন তা কতই-না দুঃখজনক! স্পষ্টতই, যে-বিয়েতে আঘাতদায়ক কথাবার্তা ব্যবহার করা হয়, তা সমাদরণীয় নয়। এই ক্ষেত্রে আপনার বিয়ে কতটা সফল? তা জানার একটা উপায় হল, নম্রভাবে আপনার সাথিকে এই কথা জিজ্ঞেস করা যে, “আমার কথাবার্তা সম্বন্ধে তোমার কেমন মনে হয়?” আপনার সাথি যদি মনে করে যে, আপনার কথাবার্তা প্রায়ই আবেগগতভাবে কষ্ট দেয়, তাহলে পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য আপনাকে ইচ্ছুক হতে হবে।—গালাতীয় ৫:১৫; পড়ুন, ইফিষীয় ৪:৩১.
১২. কীভাবে একজন ব্যক্তির উপাসনা ঈশ্বরের দৃষ্টিতে নিষ্ফল হয়ে যেতে পারে?
১২ স্পষ্টভাবে মনে রাখবেন যে, বৈবাহিক ব্যবস্থার মধ্যে আপনার জিহ্বাকে আপনি যেভাবে ব্যবহার করেন, তা যিহোবার সঙ্গে আপনার সম্পর্কের উপর প্রভাব ফেলে। বাইবেল বলে: “যে ব্যক্তি আপনাকে ধর্ম্মশীল বলিয়া মনে করে, আর আপন জিহ্বাকে বল্গা দ্বারা বশে না রাখে, কিন্তু নিজ হৃদয়কে ভুলায়, তাহার ধর্ম্ম অলীক।” (যাকোব ১:২৬) আপনার কথাবার্তাকে আপনার ধর্ম বা উপাসনা থেকে পৃথক করা যেতে পারে না। বাইবেল এই ধারণাকে সমর্থন করে না যে, একজন ব্যক্তি যতক্ষণ পর্যন্ত যিহোবাকে সেবা করছে বলে দাবি করে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঘরে যা-ই ঘটুক না কেন, তা বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। দয়া করে নিজেকে প্রতারিত করবেন না। এটা এক গুরুতর বিষয়। (পড়ুন, ১ পিতর ৩:৭.) আপনার হয়তো সামর্থ্য ও প্রবল উৎসাহ থাকতে পারে কিন্তু আপনি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে তীব্র কটুক্তি দ্বারা আপনার সাথিকে আঘাত দেন, তাহলে আপনি বৈবাহিক ব্যবস্থাকে অসমাদর করছেন আর আপনার উপাসনাকে ঈশ্বর হয়তো নিষ্ফল বলে দেখতে পারেন।
১৩. কীভাবে একজন বিবাহসাথি আবেগগত কষ্ট দিতে পারেন?
১৩ এ ছাড়া, বিবাহিত সাথিদের এই বিষয়েও সতর্ক থাকতে হবে যে, তারা যেন পরোক্ষ উপায়গুলোতে আবেগগত কষ্ট না দেয়। দুটো উদাহরণ বিবেচনা করুন: একজন একক মা প্রায়ই উপদেশ চেয়ে মণ্ডলীর একজন বিবাহিত খ্রিস্টান ভাইকে টেলিফোন করেন আর তারা দীর্ঘসময় ধরে কথা বলেন; একজন অবিবাহিত খ্রিস্টান ভাই প্রতি সপ্তাহে ক্ষেত্রের পরিচর্যায় একজন বিবাহিত খ্রিস্টান বোনের সঙ্গে যথেষ্ট সময় ব্যয় করেন। এই উদাহরণগুলোতে বিবাহিত ব্যক্তি-বিশেষদের হয়তো সদুদ্দেশ্য রয়েছে; তা সত্ত্বেও, তাদের আচরণ তাদের নিজ নিজ সাথির উপর কেমন প্রভাব ফেলে? এই ধরনের এক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন এমন একজন স্ত্রী বলেছেন: “আমার স্বামীকে মণ্ডলীর আরেকজন বোনের প্রতি এতটা সময় ও মনোযোগ দিতে দেখা আমাকে কষ্ট দেয়। এতে নিজেকে তুচ্ছ বলে মনে হয়।”
১৪. (ক) আদিপুস্তক ২:২৪ পদে কোন বৈবাহিক বাধ্যবাধকতা সম্বন্ধে তুলে ধরা হয়েছে? (খ) নিজেদেরকে আমাদের কী জিজ্ঞেস করা উচিত?
১৪ এটা বোধগম্য যে, এই সাথি এবং বিয়েতে একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হচ্ছে এমন অন্যান্য ব্যক্তি আঘাত পেয়ে থাকে। তাদের সাথিরা বিয়ের জন্য প্রদত্ত ঈশ্বরের এই মৌলিক নির্দেশনাটা উপেক্ষা করে: “মনুষ্য আপন পিতা মাতাকে ত্যাগ করিয়া আপন স্ত্রীতে আসক্ত হইবে।” (আদিপুস্তক ২:২৪) অবশ্য, যারা বিয়ে করে, তারা তখনও তাদের বাবা-মাকে সম্মান করে; কিন্তু এটা ঈশ্বরেরই ব্যবস্থা যে, তাদের প্রধান বাধ্যবাধকতা হল তাদের সাথিদের প্রতি। একইভাবে, খ্রিস্টানরা তাদের সহবিশ্বাসীদের অনেক ভালোবাসে; তা সত্ত্বেও, তাদের প্রধান দায়িত্ব তাদের সাথিদের প্রতি। তাই, বিবাহিত খ্রিস্টানরা যখন সহবিশ্বাসীদের সঙ্গে, বিশেষভাবে বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে এতটা সময় কাটায় যা অনুপযুক্ত অথবা অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে, তখন তারা বৈবাহিক বন্ধনের উপর চাপ সৃষ্টি করে। এটা কি আপনার বিয়েতে চাপ সৃষ্টি হওয়ার একটা কারণ হতে পারে? নিজেকে জিজ্ঞেস করুন, ‘আমি কি প্রকৃতই আমার সাথিকে সেই সময় ও মনোযোগ দিই এবং সেই অনুরাগ দেখাই, যা উপযুক্তভাবে তারই প্রাপ্য?’
১৫. মথি ৫:২৮ পদ অনুযায়ী কেন বিবাহিত খ্রিস্টানদের বিপরীত লিঙ্গের কোনো ব্যক্তির প্রতি অনুপযুক্ত মনোযোগ দেওয়া এড়িয়ে চলা উচিত?
১৫ অধিকন্তু, যে-বিবাহিত খ্রিস্টানরা তাদের সাথি নয় এমন বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তিদের প্রতি অনুপযুক্ত মনোযোগ দেয়, তারা নির্বোধের মতো নিজেদেরকে ঝুঁকির মুখে ফেলে। দুঃখজনক যে, কিছু বিবাহিত খ্রিস্টান সেই ব্যক্তিদের প্রতি রোমান্টিক অনুভূতি গড়ে তুলেছে, যাদের সঙ্গে তারা অতিরিক্ত ঘনিষ্ঠ হয়েছে। (মথি ৫:২৮) ফল স্বরূপ, এই ধরনের আবেগগত বন্ধন এমন আচরণের দিকে পরিচালিত করেছে, যা বিয়েকে এমনকী আরও বেশি অসমাদর করে। এই বিষয়ে পৌল কী বলেছিলেন, তা বিবেচনা করুন।
‘বিবাহ শয্যা বিমল হউক’
১৬. বিয়ে সম্বন্ধে পৌল কোন আজ্ঞা দিয়েছেন?
১৬ ‘বিবাহ আদরণীয় হউক,’ এই জোরালো পরামর্শ দেওয়ার পর পরই পৌল এই সাবধানবাণী যুক্ত করেছিলেন: “সেই শয্যা বিমল [হউক]; কেননা ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১৩:৪) পৌল যৌনসম্পর্ককে নির্দেশ করার জন্য ‘বিবাহ শয্যা’ শব্দটা ব্যবহার করেছেন। এই ধরনের সম্পর্ক তখনই “বিমল” অথবা নৈতিকভাবে শুদ্ধ হয়ে থাকে, যদি তা কেবল বৈবাহিক ব্যবস্থার মধ্যে উপভোগ করা হয়। তাই, খ্রিস্টানরা এই অনুপ্রাণিত কথাগুলোতে মনোযোগ দেয়: “তুমি আপন যৌবনের ভার্য্যায় আমোদ কর।”—হিতোপদেশ ৫:১৮.
১৭. (ক) কেন পারদারিকতা সম্বন্ধে জগতের দৃষ্টিভঙ্গি দ্বারা খ্রিস্টানদের প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়? (খ) কীভাবে আমরা ইয়োবের দ্বারা স্থাপিত উদাহরণ অনুসরণ করতে পারি?
১৭ যারা তাদের সাথি ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে যৌনসম্পর্ক করে, তারা ঈশ্বরের নৈতিক আইনগুলোর প্রতি চরম অসম্মান দেখায়। এটা ঠিক যে, আজকে অনেকে বেশ্যাগমন বা পারদারিকতাকে একরকম গ্রহণযোগ্য আচরণ বলে মনে করে। তা সত্ত্বেও, অন্য মানুষেরা পারদারিকতা সম্বন্ধে যা-ই মনে করে থাকুক না কেন, তা খ্রিস্টানরা যেভাবে এটাকে দেখে থাকে, তাতে প্রভাব ফেলা উচিত নয়। তারা উপলব্ধি করে যে, পরিশেষে “ব্যভিচারীদের ও বেশ্যাগামীদের বিচার” মানুষ নয় বরং “ঈশ্বর করিবেন।” (ইব্রীয় ১০:৩১; ১২:২৯) তাই, প্রকৃত খ্রিস্টানরা এই বিষয়ে যিহোবার দৃষ্টিভঙ্গি মেনে চলে। (পড়ুন, রোমীয় ১২:৯.) স্মরণ করে দেখুন যে, কুলপতি ইয়োব বলেছিলেন: “আমি নিজ চক্ষুর সহিত নিয়ম করিয়াছি।” (ইয়োব ৩১:১) হ্যাঁ, পারদারিকতার দিকে পরিচালিত করতে পারে এমন পথে এমনকী এক পা বাড়ানোও এড়িয়ে চলার জন্য প্রকৃত খ্রিস্টানরা তাদের চোখকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং কখনো বিপরীত লিঙ্গের এমন কোনো ব্যক্তির প্রতি কামনা সহকারে তাকায় না, যিনি তাদের সাথি নন।—পরিশিষ্টের “বিবাহবিচ্ছেদ ও পৃথক থাকার বিষয়ে বাইবেলের দৃষ্টিভঙ্গি” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখুন।
১৮. (ক) যিহোবার চোখে পারদারিকতা কতটা গুরুতর? (খ) পারদারিকতা ও প্রতিমাপূজার মধ্যে কোন সাদৃশ্য রয়েছে?
১৮ যিহোবার চোখে পারদারিকতা কতটা গুরুতর? মোশির ব্যবস্থা আমাদেরকে এই বিষয়ে যিহোবার অনুভূতি বুঝতে সাহায্য করে। ইস্রায়েলে, পারদারিকতা এবং প্রতিমাপূজাকে সেই অপরাধগুলোর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল, যেগুলোর জন্য মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হতো। (লেবীয় পুস্তক ২০:২, ১০) আপনি কি এই দুটোর মধ্যে কোনো সাদৃশ্য দেখতে পান? এই বিষয়টা বিবেচনা করুন, একজন ইস্রায়েলীয় যদি প্রতিমাপূজা করতেন, তাহলে তিনি যিহোবার সঙ্গে তার নিয়ম বা চুক্তি ভঙ্গ করতেন। একইভাবে, পারদারিকতায় লিপ্ত একজন ইস্রায়েলীয় তার সাথির সঙ্গে তার চুক্তি ভঙ্গ করতেন। দু-জনেই বিশ্বাসঘাতকতার কাজ করতেন। (যাত্রাপুস্তক ১৯:৫, ৬; দ্বিতীয় বিবরণ ৫:৯; পড়ুন, মালাখি ২:১৪.) তাই, বিশ্বস্ত ও নির্ভরযোগ্য ঈশ্বর যিহোবার সামনে উভয়েই নিন্দনীয় ছিল।—গীতসংহিতা ৩৩:৪.
১৯. পারদারিকতা প্রত্যাখ্যান করার জন্য কী একজন ব্যক্তির সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে আর কেন?
১৯ অবশ্য, খ্রিস্টানরা মোশির ব্যবস্থার অধীন নয়। তা সত্ত্বেও, প্রাচীন ইস্রায়েলে পারদারিকতাকে যে এক গুরুতর পাপ হিসেবে দেখা হতো এই বিষয়টা স্মরণ করা হয়তো খ্রিস্টানদেরকে এই ধরনের এক কাজ না করার বিষয়ে তাদের সংকল্পকে শক্তিশালী করতে পারে। কেন? এই তুলনাটা বিবেচনা করুন: আপনি কি কখনো একটা গির্জায় গিয়ে হাঁটু গেড়ে একটা প্রতিমার সামনে প্রার্থনা করবেন? ‘কক্ষনো না!’ আপনি বলবেন। কিন্তু, আপনাকে যদি মোটা অঙ্কের টাকা দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়, তাহলে আপনি কি তা করার জন্য প্রলুব্ধ হবেন? ‘অসম্ভব!’ আপনি উত্তর দেবেন। বস্তুতপক্ষে, প্রতিমাপূজার মাধ্যমে যিহোবার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার ধারণাটাই একজন প্রকৃত খ্রিস্টানের কাছে ঘৃণ্য বিষয়। একইভাবে, পারদারিকতায় লিপ্ত হওয়ার মাধ্যমে তাদের ঈশ্বর যিহোবার ও সেইসঙ্গে তাদের সাথির প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার ধারণাকে খ্রিস্টানদের ঘৃণা করা উচিত—তা সেই পাপ করার পিছনে যে-উদ্দীপকই থাকুক না কেন। (গীতসংহিতা ৫১:১, ৪; কলসীয় ৩:৫) আমরা কখনো এমন কোনো কাজ করতে চাই না, যা শয়তানকে আনন্দিত করবে কিন্তু যিহোবা ও পবিত্র বৈবাহিক ব্যবস্থার প্রতি চরম অসম্মান নিয়ে আসবে।
যেভাবে আপনার বিবাহবন্ধনকে শক্তিশালী করা যায়
২০. কিছু বিয়েতে কী ঘটেছে? উদাহরণের সাহায্য ব্যাখ্যা করুন।
২০ বিয়েকে অসম্মান করে এমন আচরণ এড়িয়ে চলা ছাড়াও, আপনার বিবাহসাথির প্রতি আপনার সম্মানকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য আর কোন কোন পদক্ষেপ আপনি নিতে পারেন? এর উত্তর পাওয়ার জন্য বৈবাহিক ব্যবস্থাকে একটা ঘর হিসেবে চিন্তা করুন। এরপর, বিবাহসাথিরা পরস্পরের প্রতি যে-সদয় কথাবার্তা বলে, যে-বিবেচনাপূর্ণ কাজ করে ও অন্যান্য যে-সম্মাননীয় অভিব্যক্তি দেখায়, সেগুলোকে এমন শোভাবর্ধক সামগ্রী হিসেবে চিন্তা করুন, যেগুলো একটা ঘরের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে তোলে। আপনারা যদি পরস্পরের ঘনিষ্ঠ বলে অনুভব করেন, তাহলে আপনার বিয়ে এমন একটা ঘরের সদৃশ, যা সেই শোভাবর্ধক সামগ্রীগুলো দিয়ে সজ্জিত, যেগুলো ঘরকে বৈচিত্র্যময় করে তোলে ও উষ্ণতা প্রদান করে। আপনার অনুরাগ যদি হ্রাস পায়, তাহলে সেই শোভাবর্ধক সামগ্রীগুলো ধীরে ধীরে অদৃশ্য হয়ে যায় আর আপনার বিয়েকে কোনো শোভাবর্ধক সামগ্রীবিহীন এক ঘরের মতোই শূন্য দেখায়। যেহেতু আপনি “বিবাহ আদরণীয়” বা সমাদরণীয় “হউক,” ঈশ্বরের এই আজ্ঞার প্রতি বাধ্য থাকতে চান, তাই আপনি পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য অনুপ্রাণিত হবেন। বস্তুতপক্ষে, মূল্যবান ও সমাদরণীয় কোনো কিছু পুনর্সংস্করণ বা পুনর্স্থাপনের যোগ্য। কীভাবে আপনি তা করতে পারেন? ঈশ্বরের বাক্য বলে: “প্রজ্ঞা দ্বারা গৃহ নির্ম্মিত হয়, আর বুদ্ধি দ্বারা তাহা স্থিরীকৃত হয়; জ্ঞান দ্বারা কুঠরী সকল পরিপূর্ণ হয়, বহুমূল্য ও মনোরম্য সমস্ত দ্রব্যে।” (হিতোপদেশ ২৪:৩, ৪) এই কথাগুলো কীভাবে একটা বিয়ের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা যেতে পারে, তা বিবেচনা করে দেখুন।
২১. কীভাবে আপনি ধীরে ধীরে আপনার বিয়েকে শক্তিশালী করতে পারেন? (এ ছাড়া, “কীভাবে আমি আমার বিয়েকে উন্নত করতে পারি?” শিরোনামের বাক্সটা দেখুন।)
২১ যে-সমস্ত বহুমূল্য দ্রব্য একটা সুখী ঘরকে পরিপূর্ণ করে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে এই গুণাবলি যেমন, প্রকৃত প্রেম, ঈশ্বরীয় ভয় এবং দৃঢ় বিশ্বাস। (হিতোপদেশ ১৫:১৬, ১৭; ১ পিতর ১:৭) এগুলো বিয়েকে মজবুত করে তোলে। কিন্তু, আপনি কি লক্ষ করেছেন যে, উপরে উদ্ধৃত প্রবাদে কুঠরি বা ঘরগুলো কীভাবে বহুমূল্য দ্রব্যগুলো দ্বারা পূর্ণ? “জ্ঞান দ্বারা।” হ্যাঁ, প্রয়োগ করা হলে বাইবেলের জ্ঞানের সেই ক্ষমতা রয়েছে, যা লোকেদের চিন্তাভাবনাকে রূপান্তরিত করতে এবং পরস্পরের প্রতি তাদের প্রেমকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য পরিচালিত করতে পারে। (রোমীয় ১২:২; ফিলিপীয় ১:৯) তাই, আপনি ও আপনার সাথি যখনই একসঙ্গে বসে বাইবেলের কোনো প্রসঙ্গ যেমন, দৈনিক শাস্ত্রপদ অথবা প্রহরীদুর্গ কিংবা সচেতন থাক! পত্রিকার বিয়ে সম্বন্ধীয় বাইবেলভিত্তিক কোনো প্রবন্ধ শান্তভাবে বিবেচনা করার জন্য সময় করে নেন, তখন তা ঠিক যেন আপনি এমন এক চমৎকার শোভাবর্ধক সামগ্রী পরীক্ষা করছেন, যা আপনার ঘরকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করতে পারে। যিহোবার প্রতি ভালোবাসা যখন আপনাকে সবেমাত্র পরীক্ষিত পরামর্শগুলো আপনার বিয়েতে প্রয়োগ করতে পরিচালিত করে, তখন আপনি রূপকভাবে সেই শোভাবর্ধক সামগ্রী আপনার কুঠরী সকল বা ভিতরের ঘরগুলোতে নিয়ে আসেন। এর ফলে, আপনি আপনার বিয়েতে একসময় যে-বৈচিত্র্য ও উষ্ণতা অনুভব করতেন, সেগুলোর কিছু হয়তো ফিরে আসতে পারে।
২২. আমরা যদি আমাদের বিয়েকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে আমাদের অংশটুকু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করি, তাহলে আমরা কোন পরিতৃপ্তি লাভ করতে পারব?
২২ এটা ঠিক যে, সেই শোভাবর্ধক সামগ্রীগুলোকে একটা একটা করে আবার যথাস্থানে রাখার জন্য যথেষ্ট সময় ও প্রচেষ্টার প্রয়োজন হতে পারে। তবে, আপনি যদি আপনার অংশটুকু করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করেন, তাহলে এটা জেনে আপনি গভীর পরিতৃপ্তি লাভ করবেন যে, আপনি বাইবেলের এই আজ্ঞার প্রতি বাধ্য হচ্ছেন: “সমাদরে এক জন অন্যকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান কর।” (রোমীয় ১২:১০; গীতসংহিতা ১৪৭:১১) সর্বোপরি, আপনার বিয়েকে সমাদরণীয় রাখার জন্য আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টা আপনাকে ঈশ্বরের প্রেমে রক্ষা করবে।
a প্রসঙ্গটা দেখায় যে, বিয়ে সম্বন্ধে পৌলের উপদেশ এক ধারাবাহিক জোরালো পরামর্শের অংশ।—ইব্রীয় ১৩:১-৫.