বিশ্বাস আমাদের কার্যে পরিচালিত করে!
“তুমি দেখিতেছ, [অব্রাহামের] বিশ্বাস তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল, এবং কর্ম্মহেতু বিশ্বাস সিদ্ধ হইল।”—যাকোব ২:২২.
১, ২. যদি আমাদের বিশ্বাস থাকে তাহলে আমরা কিভাবে কার্য করব?
অনেকেই বলে থাকেন যে তাদের ঈশ্বরে বিশ্বাস আছে। কিন্তু, কেবলমাত্র তথাকথিত বিশ্বাসের দাবি মৃতদেহের মতই প্রাণহীন। “বিশ্বাসও কর্ম্মবিহীন হইলে আপনি একা বলিয়া তাহা মৃত,” শিষ্য যাকোব লিখেছিলেন। তিনি আরও বলেছিলেন যে ঈশ্বর ভয়শীল অব্রাহামের বিশ্বাস ছিল যা “তাঁহার ক্রিয়ার সহকারী ছিল।” (যাকোব ২:১৭, ২২) এইধরনের বাক্যগুলি আমাদের জন্য কী তাৎপর্য রাখে?
২ যদি আমাদের প্রকৃত বিশ্বাস থাকে, তাহলে আমরা খ্রীষ্টীয় সভাগুলিতে যা শুনি তা কেবলমাত্র মেনে নেব না। আমরা বিশ্বাসের প্রমাণ দেব কারণ আমরা যিহোবার সক্রিয় সাক্ষী। হ্যাঁ, বিশ্বাস আমাদের ঈশ্বরের বাক্য জীবনে প্রয়োগ করতে প্রণোদিত করবে আর আমাদের কার্যে পরিচালিত করবে।
পক্ষপাতিত্ব বিশ্বাসের পাশাপাশি থাকার যোগ্য নয়
৩, ৪. অন্যদের সাথে আমরা যেভাবে ব্যবহার করি, সেই ক্ষেত্রে বিশ্বাসের কিধরনের প্রভাব থাকা উচিত?
৩ যদি আমাদের ঈশ্বর এবং খ্রীষ্টের প্রতি অকৃত্রিম বিশ্বাস থাকে, আমরা পক্ষপাতিত্ব দেখাব না। (যাকোব ২:১-৪) যাকোব যাদের উদ্দেশ্যে লিখেছিলেন তাদের মধ্যে কয়েকজন, সত্য খ্রীষ্টানদের কাছ থেকে যেমন আশা করা হয়ে থাকে তদ্রূপ পক্ষপাতশূন্যতা প্রদর্শন করছিলেন না। (রোমীয় ২:১১) সুতরাং, যাকোব বলেন: “তোমরা আমাদের প্রভু যীশু খ্রীষ্টের— প্রতাপের প্রভুর—বিশ্বাস মুখাপেক্ষার [“পক্ষপাতের,” NW] সহিত ধারণ করিও না।” যদি স্বর্ণময় অঙ্গুরীয় ও উৎকৃষ্ট পোশাক পরিহিত কোন অবিশ্বাসী সভায় আসত আর একইভাবে কোন অবিশ্বাসী “মলিন বস্ত্র পরিহিত . . . দরিদ্রও” আসত তাদের উভয়কেই আন্তরিক স্বাগত জানানো উচিত ছিল, কিন্তু ধনবানদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেখানো হয়েছিল। তাদের জন্য “উত্তম স্থানে” বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল কিন্তু দরিদ্র অবিশ্বাসীদের দাঁড়িয়ে অথবা একজনের পায়ের কাছে মেঝেতে বসতে বলা হত।
৪ যিহোবা যেমন ধনীদের জন্য তেমনই দরিদ্রদের জন্যও যীশু খ্রীষ্টের মাধ্যমে মুক্তির মূল্য যুগিয়েছিলেন। (২ করিন্থীয় ৫:১৪) যদি আমরা ধনী লোকেদের প্রতি আনুকূল্য দেখাই, তাহলে আমরা খ্রীষ্টের প্রতি বিশ্বাস থেকে সরে পড়ছি যিনি ‘দরিদ্র হইলেন, যেন আমরা তাঁহার দরিদ্রতায় ধনবান্ হই।’ (২ করিন্থীয় ৮:৯) আসুন আমরা যেন কখনও এইভাবে লোকেদের মূল্যায়ন না করি—যেটি ভুল অভিপ্রায় নিয়ে মনুষ্যদের সম্মান করা। ঈশ্বর পক্ষপাতিত্ব দেখান না কিন্তু আমরা যদি পক্ষপাতিত্ব দেখাই তাহলে আমরা “মন্দ বিতর্কে লিপ্ত” হব। (ইয়োব ৩৪:১৯) ঈশ্বরকে সন্তুষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা নিয়ে নিশ্চিতভাবেই আমরা পক্ষপাতিত্ব দেখানোর প্রলোভনে আচ্ছন্ন হব না অথবা নিজস্ব ‘লাভার্থে মনুষ্যদের তোষামোদ করব’ না।—যিহূদা ৪, ১৬.
৫. “বিশ্বাসে ধনবান্” হওয়ার জন্য ঈশ্বর কাদের নির্বাচন করেছেন এবং বস্তুগতভাবে ধনীরা প্রায়ই কিভাবে প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে থাকে?
৫ যাকোব প্রকৃত ধনবানদের শনাক্ত করেন ও সকলের প্রতি পক্ষপাতশূন্যভাবে প্রেম দেখানোর জন্য উৎসাহ দেন। (যাকোব ২:৫-৯) ‘যাহারা দরিদ্র, ঈশ্বর তাহাদিগকে মনোনীত করেছেন, যেন তাহারা বিশ্বাসে ধনবান্ হয়, রাজ্যের অধিকারী হয়।’ এর কারণ হল দরিদ্রেরা প্রায়ই সুসমাচারের প্রতি বেশি প্রতিক্রিয়াশীল হয়ে থাকে। (১ করিন্থীয় ১:২৬-২৯) একটি শ্রেণী হিসাবে, বস্তুগতভাবে ধনী ব্যক্তিরা ঋণ, মজুরি ও আইনগত কার্যকলাপের ক্ষেত্রে অন্যদের পীড়ন করে থাকে। তারা খ্রীষ্টের নামে খারাপ কথা বলে ও আমাদের উপর তাড়না নিয়ে আসে যেহেতু আমরা তাঁর সাক্ষ্য বহন করি। কিন্তু “রাজকীয় ব্যবস্থা” পালন করা আমাদের দৃঢ়সংকল্প হোক যেটি প্রতিবেশীর প্রতি প্রেমকে দাবি করে—ধনী ও দরিদ্র উভয়ের প্রতি সমরূপ প্রেমপূর্ণ হওয়া। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৮; মথি ২২:৩৭-৪০) ঈশ্বর এটি চান, যেহেতু পক্ষপাতিত্ব দেখানোর অর্থ ‘পাপাচরণ করা।’
“দয়াই বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে”
৬. যদি আমরা অন্যদের সাথে দয়ালু ব্যবহার না করি, তাহলে কিভাবে আমরা ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারী হব?
৬ যদি আমরা নির্দয়ভাবে পক্ষপাতিত্ব দেখাই, আমরা ব্যবস্থা লঙ্ঘনকারী। (যাকোব ২:১০-১৩) এইক্ষেত্রে এক ভুল পদক্ষেপ নিয়ে আমরা ঈশ্বরের সমস্ত ব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিপক্ষে পরিণত হই। যে সমস্ত ইস্রায়েলীয়রা ব্যভিচার করেনি কিন্তু চুরি করেছিল, তারা মোশির ব্যবস্থার লঙ্ঘনকারীতে পরিণত হয়েছিল। খ্রীষ্টান হিসাবে আমরা “স্বাধীনতার ব্যবস্থা”—নতুন চুক্তির আধ্যাত্মিক ইস্রায়েল ও তাদের হৃদয়ে লিপিবদ্ধ নিয়ম—দ্বারা বিচারিত হয়েছি।—যিরমিয় ৩১:৩১-৩৩.
৭. যারা ক্রমাগত পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে চলে তারা কেন ঈশ্বরের দয়া প্রত্যাশা করতে পারে না?
৭ যদি আমরা দাবি করি যে আমাদের বিশ্বাস আছে কিন্তু পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েই চলি, তাহলে আমরা বিপদের মধ্যে রয়েছি। যারা প্রেমহীন ও নির্দয়, দয়াহীনভাবেই তাদের প্রতি বিচার সম্পন্ন হবে। (মথি ৭:১, ২) যাকোব বলেন: “দয়াই বিচারজয়ী হইয়া শ্লাঘা করে।” যদি আমরা আমাদের সমস্ত ব্যবহারে দয়া দেখানোর দ্বারা যিহোবার পবিত্র আত্মার নির্দেশনা গ্রহণ করি, তাহলে আমরা যখন বিচারিত হব সেই সময় আমরা তিরস্কৃত হব না। বরঞ্চ, আমরা দয়া অভিজ্ঞতা করব আর কঠোর ন্যায় অথবা প্রতিকূল বিচারের সময় উল্লসিত হব।
বিশ্বাস উত্তম কাজ উৎপন্ন করে
৮. সেই ব্যক্তির অবস্থা কেমন যে বলে যে তার বিশ্বাস আছে কিন্তু তা কর্মবিহীন?
৮ আমাদের প্রেমপূর্ণ ও দয়ালু হতে সাহায্য করা ছাড়াও বিশ্বাস আরও উত্তম কাজ উৎপন্ন করে। (যাকোব ২:১৪-২৬) অবশ্যই, তথাকথিত বিশ্বাস যেটি কর্মবিহীন আমাদের রক্ষা করবে না। এটি সত্য যে, আমরা ব্যবস্থার কার্য দ্বারা ঈশ্বরের সামনে এক ধার্মিক অবস্থান অর্জন করতে পারি না। (রোমীয় ৪:২-৫) যাকোব সেই কাজের কথা বলছিলেন যা ব্যবস্থা সংকলন দ্বারা নয় কিন্তু বিশ্বাস ও প্রেম দ্বারা পরিচালিত। যদি আমরা এইধরনের গুণাবলি দ্বারা পরিচালিত হই, আমরা কেবলমাত্র এক অভাবী সহউপাসকের প্রতি দয়াপূর্ণ শুভেচ্ছাই প্রকাশ করব না। আমরা বস্ত্রহীন অথবা ক্ষুধিত এক ভাই অথবা বোনকে বস্তুগত সাহায্যও প্রদান করব। যাকোব জিজ্ঞাসা করেন: ‘যদি আপনি এক অভাবী ভাইকে বলেন: কুশলে যাও, উষ্ণ ও তৃপ্ত হও কিন্তু প্রয়োজনীয় বস্তু না দেন, তবে তাহাতে কি ফল দর্শিবে?’ কিছুই না। (ইয়োব ৩১:১৬-২২) এইপ্রকার “বিশ্বাস” প্রাণহীন!
৯. কী দেখায় যে আমাদের বিশ্বাস আছে?
৯ আমরা হয়ত ঈশ্বরের লোকেদের সাথে একটি নির্দিষ্ট সীমা পর্যন্ত মেলামেশা করছি কিন্তু কেবলমাত্র পূর্ণ হৃদয়ের কাজই আমাদের বিশ্বাস আছে এই দাবিকে সমর্থন করতে পারে। এটি উত্তম যে যদি আমরা ত্রিত্ব মতবাদকে প্রত্যাখ্যান করেছি ও মেনে নিয়েছি যে, একজন মাত্র সত্য ঈশ্বর আছেন। তবুও, কেবলমাত্র মেনে নেওয়াই বিশ্বাস নয়। “ভূতেরাও তাহা বিশ্বাস করে” এবং তারা ভয়ে “কাঁপে” কারণ তাদের জন্য ধ্বংস অপেক্ষা করছে। যদি সত্যই আমাদের বিশ্বাস থাকে, এটি আমাদের সুসমাচার প্রচার করা ও অভাবী সহউপাসকদের জন্য বস্ত্র ও খাদ্য সরবরাহের মত কাজ করতে পরিচালিত করবে। যাকোব জিজ্ঞাসা করেন: “হে অসার মনুষ্য [যে ঈশ্বর সম্বন্ধে যথার্থ জ্ঞান দ্বারা পূর্ণ নয়], তুমি কি জানিতে চাও যে, কর্ম্মবিহীন বিশ্বাস কোন কাজের নয়?” হ্যাঁ, বিশ্বাস কাজ দাবি করে।
১০. কেন অব্রাহামকে ‘যাহারা বিশ্বাস করে, তাহাদের সকলের পিতা’ বলা হয়?
১০ বিশ্বাস, ধার্মিক কুলপতি অব্রাহামকে কার্যে পরিচালিত করেছিল। “যাহারা বিশ্বাস করে, . . . তাহাদের সকলের পিতা” হিসাবে তিনি “যজ্ঞবেদির উপরে আপন পুত্ত্র ইস্হাককে উৎসর্গকরণ হেতু, . . . ধার্ম্মিক গণিত” হয়েছিলেন। (রোমীয় ৪:১১, ১২; আদিপুস্তক ২২:১-১৪) কী হত যদি অব্রাহামের এই বিষয়ে বিশ্বাসের অভাব থাকত যে ঈশ্বর ইস্হাককে পুনরুত্থিত করতে ও তার মাধ্যমে বংশ সম্বন্ধীয় প্রতিজ্ঞাকে পরিপূর্ণ করতে পারেন? তাহলে অব্রাহাম কখনই তার পুত্রকে উৎসর্গ করতে পারতেন না। (ইব্রীয় ১১:১৯) এটি ছিল অব্রাহামের বাধ্য কার্য যার দ্বারা “বিশ্বাস সিদ্ধ হইল,” অথবা সম্পূর্ণ হয়েছিল। সুতরাং, “এই শাস্ত্রীয় বচন [আদিপুস্তক ১৫:৬] পূর্ণ হইল, ‘অব্রাহাম ঈশ্বরে বিশ্বাস করিলেন, এবং তাহা তাঁহার পক্ষে ধার্ম্মিকতা বলিয়া গণিত হইল।’” ইস্হাককে উৎসর্গ করতে যাওয়া সম্বন্ধীয় অব্রাহামের কার্য ঈশ্বরের পূর্ববর্তী ঘোষণাকে নিশ্চিত করেছিল যে অব্রাহাম ধার্মিক ছিলেন। বিশ্বাসের কার্য দ্বারা তিনি ঈশ্বরের প্রতি তার প্রেম দেখিয়েছিলেন এবং “ঈশ্বরের বন্ধু” এই নামে আখ্যাত হয়েছিলেন।
১১. রাহবের ক্ষেত্রে বিশ্বাসের কোন্ প্রমাণ আমাদের কাছে আছে?
১১ অব্রাহাম প্রমাণ করেছিলেন যে “কর্ম্মহেতু মনুষ্য ধার্ম্মিক গণিত হয়, সুধু বিশ্বাসহেতু নয়।” এটি যিরিহোর এক বেশ্যা, রাহবের ক্ষেত্রেও সত্য ছিল। সে “কর্ম্মহেতু ধার্ম্মিক গণিতা হইল . . . সে ত [ইস্রায়েলীয়] দূতগণকে অতিথি করিয়াছিল, এবং অন্য পথ দিয়া বাহিরে পাঠাইয়া দিয়াছিল,” যাতে করে তারা তাদের কনানীয় শত্রুদের কৌশলে এড়াতে পারেন। ইস্রায়েলীয় গুপ্তচরদের সাথে সাক্ষাৎ হওয়ার আগে সে যিহোবাকে সত্য ঈশ্বর হিসাবে শনাক্ত করেছিল আর তার পরবর্তী বাক্যগুলি ও বেশ্যবৃত্তি পরিত্যাগ করা তার বিশ্বাসের প্রমাণ দিয়েছিল। (যিহোশূয় ২:৯-১১; ইব্রীয় ১১:৩১) কার্য দ্বারা সমর্থিত বিশ্বাসের এই দ্বিতীয় উদাহরণটি দেখানোর পরে যাকোব বলেন: “বাস্তবিক যেমন অত্মাবিহীন দেহ মৃত, তেমনি কর্ম্মবিহীন বিশ্বাসও মৃত।” যখন এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়, তখন তার মধ্যে কোন সঞ্জীবনী শক্তি অথবা “আত্মা” থাকে না আর সে কিছুই সম্পাদন করতে পারে না। কেবলমাত্র তথাকথিত বিশ্বাস এক মৃতদেহের মতই জীবনহীন এবং অব্যবহার্য। তাই, যদি আমাদের প্রকৃত বিশ্বাস থাকে, এটি আমাদের ঈশ্বরীয় কার্যে পরিচালিত করবে।
জিহ্বাকে সংযত করুন!
১২. মণ্ডলীতে প্রাচীনদের কোন্ বিষয়টি করা উচিত?
১২ কথা বলা ও শিক্ষা দান করাও বিশ্বাসের প্রমাণ দিতে পারে কিন্তু সেখানে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয়তা আছে। (যাকোব ৩:১-৪) মণ্ডলীতে শিক্ষক হিসাবে প্রাচীনদের এক গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে ও ঈশ্বরের কাছে বৃহৎ নিকাশ দেওয়ার দরকার আছে। সুতরাং, তাদের নম্রভাবে নিজেদের উদ্দেশ্য ও যোগ্যতার পরীক্ষা করা উচিত। জ্ঞান ও ক্ষমতা ছাড়াও এই ব্যক্তিদের অবশ্যই ঈশ্বর ও সহবিশ্বাসীদের প্রতি গভীর প্রেম থাকা দরকার। (রোমীয় ১২:৩, ১৬; ১ করিন্থীয় ১৩:৩, ৪) অবশ্যই, শাস্ত্র হবে প্রাচীনদের পরামর্শের ভিত্তি। যদি একজন প্রাচীন তার শিক্ষাদানে ভুল করেন আর ফলস্বরূপ এটি অন্যদের জন্য সমস্যা নিয়ে আসে, তিনি খ্রীষ্টের মাধ্যমে ঈশ্বরের দ্বারা প্রতিকূলভাবে বিচারিত হবেন। সুতরাং, প্রাচীনদের বিশ্বস্তভাবে ঈশ্বরের বাক্যের প্রতি অনুগত হয়ে নম্র ও অধ্যবসায়ী ছাত্র হতে হবে।
১৩. কেন আমরা বাক্যে উছোট খাই?
১৩ এমনকি উৎকৃষ্ট শিক্ষকেরাও—বস্তুতপক্ষে, আমরা সকলে—অসিদ্ধতার কারণে “অনেক প্রকারে উছোট খাই।” বাক্যে উছোট খাওয়া একটি অন্যতম প্রচলিত ও সম্ভাব্য ক্ষতিকারক ত্রুটি। যাকোব বলেন: “যদি কেহ বাক্যে উছোট না খায়, তবে সে সিদ্ধ পুরুষ, সমস্ত শরীরকেই বল্গা দ্বারা বশে রাখিতে সমর্থ।” যীশু খ্রীষ্টের বিপরীতে, আমাদের জিহ্বার উপর সম্পূর্ণ সংযম নেই। যদি আমাদের তা থাকত, তাহলে আমরা আমাদের দেহের অন্যান্য অঙ্গগুলিকেও সংযত করতে পারতাম। সর্বোপরি, বল্গা ও লাগাম একটি ঘোড়াকে, আমরা যেখানে নির্দেশিত করি সেখানে যেতে পরিচালিত করে এবং একটি ছোট হাইলের মাধ্যমে এমনকি একটি বৃহৎ নৌকা প্রচণ্ড বাতাসেও চালকের ইচ্ছানুযায়ী অগ্রসর হতে পারে।
১৪. জিহ্বাকে সংযত করার জন্য আমাদের প্রচেষ্টার প্রয়োজনের উপর যাকোব কিভাবে জোর দেন?
১৪ আমাদের সকলকে অবশ্যই সততার সাথে স্বীকার করতে হবে যে জিহ্বাকে সংযত করার জন্য প্রকৃত প্রচেষ্টার প্রয়োজন। (যাকোব ৩:৫-১২) একটি ঘোড়ার তুলনায় একটি বল্গা অত্যন্ত ছোট; সেইরকমই একটি জাহাজের তুলনায় সেটির হাল। আর যখন মনুষ্য দেহের সাথে তুলনা করা হয় জিহ্বা অতি ক্ষুদ্র অঙ্গ “কিন্তু মহাদর্পের কথা কহে।” যেহেতু শাস্ত্র স্পষ্ট করে যে গর্ব করা ঈশ্বরকে অসন্তুষ্ট করে, আসুন আমরা এটি থেকে বিরত থাকার জন্য তাঁর সাহায্যের অন্বেষণ করি। (গীতসংহিতা ১২:৩, ৪; ১ করিন্থীয় ৪:৭) উত্তেজনার সময়ে আমরা যেন আমাদের জিহ্বাকে দমন করি, এটি স্মরণে রেখে যে একটি সম্পূর্ণ বনকে প্রজ্বলিত করার জন্য একটিমাত্র অগ্নিস্ফুলিঙ্গই যথেষ্ট। যেমন যাকোব ইঙ্গিত করেন, “জিহ্বাও অগ্নি” যেটি বিরাট ক্ষতি সাধন করার ক্ষমতা রাখে। (হিতোপদেশ ১৮:২১) যে কারণে এক অশাসিত জিহ্বা “অধর্ম্মের জগৎ হইয়া রহিয়াছে”! এই ঈশ্বরবিহীন জগতের প্রত্যেকটি মন্দ বৈশিষ্ট্য অসংযত জিহ্বার সাথে সম্বন্ধযুক্ত। এটি অপবাদ রটান ও মিথ্যা শিক্ষার মত ক্ষতিকারক বিষয়গুলির জন্য দায়ী। (লেবীয় পুস্তক ১৯:১৬; ২ পিতর ২:১) আপনি কী মনে করেন? আমাদের জিহ্বাকে সংযত করতে আমাদের বিশ্বাসের কি কঠোর পরিশ্রম করার জন্য আমাদের পরিচালিত করা উচিত নয়?
১৫. বল্গাবিহীন জিহ্বার দ্বারা হয়ত কী ক্ষতি হতে পারে?
১৫ এক বল্গাবিহীন জিহ্বা সম্পূর্ণভাবে ‘আমাদের কলঙ্কিত করে।’ উদাহরণস্বরূপ, যদি আমরা বারংবার মিথ্যা কথা বলে ধরা পড়ি, আমরা হয়ত এক মিথ্যাবাদী হিসাবে পরিচিত হব। কিন্তু, কিভাবে এক অশাসিত জিহ্বা “প্রকৃতির চক্রকে প্রজ্বলিত করে”? জীবনকে এক কদর্য অভ্যাসপূর্ণ চক্রে পরিণত করে। একটি অসংযত জিহ্বার কারণে হয়ত একটি সম্পূর্ণ মণ্ডলী বিপর্যস্ত হতে পারে। যাকোব “গিহেন্না” হিন্নোম উপত্যকা সম্বন্ধে উল্লেখ করেন। একসময় যেটি সন্তান উৎসর্গের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হত, পরে যিরূশালেমের জঞ্জাল পোড়ানোর জন্য আবর্জনা-স্তূপে পরিণত হয়েছিল। (যিরমিয় ৭:৩১) সুতরাং গিহেন্না সম্পূর্ণ ধ্বংসের প্রতীক। এক অর্থে, গিহেন্না অশাসিত জিহ্বা বিশিষ্টদের উপর এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা প্রয়োগ করবে। যদি আমরা আমাদের জিহ্বাকে বল্গা দ্বারা বশে না রাখি, তাহলে আমরা নিজেরাই সেই অগ্নিচ্ছটার শিকার হতে পারি, যেটি আমরাই শুরু করেছি। (মথি ৫:২২) আমরা হয়ত কাউকে তীব্র গালাগালি করার জন্য এমনকি মণ্ডলী থেকে বহিষ্কৃত হতে পারি।—১ করিন্থীয় ৫:১১-১৩.
১৬. এক অশাসিত জিহ্বার দ্বারা যে ক্ষতি হতে পারে তার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের কী করা উচিত?
১৬ ঈশ্বরের বাক্য পড়ার দ্বারা আপনি হয়ত জানেন যে যিহোবা অনুশাসন দিয়েছিলেন, মানুষ পশু সৃষ্টিকে বশীভূত করবে। (আদিপুস্তক ১:২৮) আর সমস্ত প্রকার প্রাণীদের পোষ মানানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, প্রশিক্ষিত বাজপাখিদের শিকারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। যে ‘সরীসৃপদের’ সম্বন্ধে যাকোব উল্লেখ করেন, হয়ত সেই সমস্ত সর্পগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করতে পারে যেগুলি সাপুড়েদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। (গীতসংহিতা ৫৮:৪, ৫) মানুষ এমনকি বৃহদাকার তিমিকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারে কিন্তু পাপপূর্ণ মানুষ হিসাবে আমরা আমাদের জিহ্বাকে সম্পূর্ণ বশে রাখতে পারি না। তবুও, আমাদের কলুষিত, আঘাতজনক অথবা অপবাদমূলক মন্তব্য করাকে এড়িয়ে চলা উচিত। এক অশাসিত জিহ্বা মৃত্যুজনক বিষে পূর্ণ একটি বিপদজনক যন্ত্র হতে পারে। (রোমীয় ৩:১৩) দুঃখজনকভাবে, মিথ্যা শিক্ষকদের জিহ্বা কিছু প্রাথমিক খ্রীষ্টানদের ঈশ্বরের থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছিল। সুতরাং, আসুন আমরা যেন কখনও কথিত অথবা লিখিত কোন প্রকার বিষাক্ত ধর্মভ্রষ্ট অভিব্যক্তিকে আমাদের উপর জয়ী হতে অনুমতি না দিই।—১ তীমথিয় ১:১৮-২০; ২ পিতর ২:১-৩.
১৭, ১৮. যাকোব ৩:৯-১২ পদে কোন্ অসংগতির কথা নির্দেশ করা হয়েছে এবং এই বিষয়ে আমাদের কী করা উচিত?
১৭ ঈশ্বরে বিশ্বাস ও তাঁকে সন্তুষ্ট করার আকাঙ্ক্ষা আমাদের ধর্মভ্রষ্টতা থেকে সুরক্ষিত এবং অসংগতভাবে আমাদের জিহ্বাকে ব্যবহার করাকে প্রতিরোধ করতে পারে। কিছুজনের অসংগত ব্যবহার সম্বন্ধে নির্দেশ করে যাকোব বলেন যে ‘জিহ্বার দ্বারাই আমরা প্রভু [“যিহোবা,” NW] পিতার ধন্যবাদ করি, আবার উহার দ্বারাই ঈশ্বরের সাদৃশ্যে জাত মনুষ্যদিগকে শাপ দিই।’ (আদিপুস্তক ১:২৬) যিহোবা আমাদের পিতা এই অর্থে যে তিনিই “সকলকে জীবন ও শ্বাস ও সমস্তই দিতেছেন।” (প্রেরিত ১৭:২৪, ২৫) তিনি আধ্যাত্মিক অর্থেও অভিষিক্ত খ্রীষ্টানদের পিতা। মানসিক ও নৈতিক গুণাবলির ক্ষেত্রে আমরা সকলে “ঈশ্বরের সাদৃশ্যে জাত” যার অন্তর্ভুক্ত প্রেম, ন্যায় এবং প্রজ্ঞা যা আমাদের পশুদের থেকে পৃথক করে। তাহলে, যদি আমাদের যিহোবার উপর বিশ্বাস থাকে, আমাদের কিভাবে কাজ করা উচিত?
১৮ যদি আমরা লোকেদের শাপ দিই সেটি বোঝাবে যে আমরা তাদের উপর মন্দ কিছু আহ্বান করছি অথবা নিয়ে আসছি। যেহেতু আমরা একজনের উপর মন্দ নিয়ে আসার জন্য কর্তৃত্বসম্পন্ন ঐশিক অনুপ্রাণিত ভাববাদী নই, তাই এইধরনের কথা ঘৃণার প্রমাণ দেবে যা আমাদের প্রতি ঈশ্বরের আশীর্বাদকে ব্যর্থ করবে। একই মুখ থেকে “ধন্যবাদ [“আশীর্বাদ,” NW] ও শাপ” উভয়ই নির্গত হওয়া উপযুক্ত নয়। (লূক ৬:২৭, ২৮; রোমীয় ১২:১৪, ১৭-২১; যিহূদা ৯) সভাগুলিতে ঈশ্বরের প্রশংসাগান করা ও তারপর সহবিশ্বাসীদের সম্বন্ধে মন্দ কথা বলা কতই না পাপপূর্ণ হবে! একই উনুই থেকে মিষ্ট ও তিক্ত জল উৎসারিত হতে পারে না। যেমন ‘ডুমুরগাছে জিতফল, অথবা দ্রাক্ষালতায় ডুমুরফল ধরিতে পারে না’, তেমনই লোনা জল মিষ্ট জল উৎপন্ন করতে পারে না। আমরা যাদের শুধু যা কিছু উত্তম সে সম্বন্ধেই বলা উচিত, যদি ক্রমাগতভাবে তিক্ত শব্দ উচ্চারণ করতে থাকি তাহলে বোঝা যায় যে আধ্যাত্মিকভাবে কিছু ভুল আছে। যদি আমাদের এইরকম করা অভ্যাসে পরিণত হয়, আসুন আমরা এইভাবে কথা বলা বন্ধ করার জন্য যিহোবার সাহায্য চেয়ে প্রার্থনা করি।—গীতসংহিতা ৩৯:১.
উপর থেকে আসা প্রজ্ঞা দ্বারা কাজ করা
১৯. যদি আমরা স্বর্গীয় প্রজ্ঞা দ্বারা নির্দেশিত হই, আমরা কিভাবে অন্যদের প্রভাবিত করতে পারি?
১৯ যাদের বিশ্বাস আছে তাদের উপযুক্ত কথা বলা ও কাজ করার জন্য আমাদের সকলের প্রজ্ঞার প্রয়োজন। (যাকোব ৩:১৩-১৮) যদি আমাদের ঈশ্বরের প্রতি শ্রদ্ধামিশ্রিত ভয় থাকে, তিনি জ্ঞানকে সঠিকভাবে ব্যবহার করার জন্য আমাদের স্বর্গীয় প্রজ্ঞা অনুমোদন করবেন। (হিতোপদেশ ৯:১০; ইব্রীয় ৫:১৪) তাঁর বাক্য আমাদের ‘জ্ঞানের মৃদুতা’ কিভাবে প্রদর্শন করতে হয় তা শেখায়। আর যেহেতু আমরা নম্র, আমরা মণ্ডলীর শান্তি বৃদ্ধি করি। (১ করিন্থীয় ৮:১, ২) যে কেউ সহবিশ্বাসীদের মধ্যে বড় শিক্ষক হওয়ার দম্ভ করে তারা ‘খ্রীষ্টীয় সত্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা কহে’ যেটি তাদের আমিত্বকে নিন্দিত করে। (গালাতীয় ৫:২৬) তাদের “জ্ঞান” “পার্থিব”—ঈশ্বর থেকে বিচ্ছিন্ন পাপপূর্ণ মনুষ্যদের বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। এটি “প্রাণিক,” মাংসিক প্রবণতাগুলির ফল যার অর্ন্তগত। কারণ এটি এমনকি “পৈশাচিক” যেহেতু দুষ্ট আত্মারা গর্বিত! (১ তীমথিয় ৩:৬) তাহলে, আসুন আমরা প্রজ্ঞা ও নম্রতার সাথে কার্য করি, যেন আমরা এমন কোন আবহাওয়ার সৃষ্টি করার জন্য কোন অবদান না রাখি যেখানে এইধরনের “দুষ্কর্ম্ম” যেমন অপবাদ রটানো ও পক্ষপাতিত্ব পরিব্যাপ্ত হতে পারে।
২০. স্বর্গীয় প্রজ্ঞার বর্ণনা আপনি কিভাবে দেবেন?
২০ “যে জ্ঞান [“প্রজ্ঞা,” NW] উপর হইতে আইসে, তাহা প্রথমে শুচি,” যেটি আমাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিকভাবে শুদ্ধ করে। (২ করিন্থীয় ৭:১১) এটি “শান্তিপ্রিয়,” যা আমাদের শান্তির অনুধাবন করতে পরিচালিত করে। (ইব্রীয় ১২:১৪) স্বর্গীয় প্রজ্ঞা আমাদের গোঁড়া ও আদানপ্রদান করা কঠিন এমন ব্যক্তি নয় কিন্তু “ক্ষান্ত” হতে সাহায্য করে। (ফিলিপীয় ৪:৫) উপর থেকে যে প্রজ্ঞা আসে তা “সহজে অনুনীত,” যেটি ঐশিক শিক্ষার প্রতি বাধ্যতা ও যিহোবার সংগঠনের সাথে সহযোগিতাকে বৃদ্ধি করে। (রোমীয় ৬:১৭) এছাড়াও উপর থেকে আসা প্রজ্ঞা আমাদের দয়ালু ও সহানুভূতিশীল করে তোলে। (যিহূদা ২২, ২৩) “উত্তম উত্তম ফলে পরিপূর্ণ” হওয়ায়, এটি অন্যদের জন্য উদ্বিগ্ন হওয়ার ক্ষেত্রে ও মঙ্গলভাব, ধার্মিকতা ও সত্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে কাজ করতে আমাদের সক্রিয় করে। (ইফিষীয় ৫:৯) আর শান্তি সৃষ্টিকারী হিসাবে আমরা ‘ধার্ম্মিকতা-ফল’ উপভোগ করি যা শান্তিপূর্ণ অবস্থায় সজীব হয়ে ওঠে।
২১. যাকোব ২:১–৩:১৮ পদ অনুসারে ঈশ্বরের প্রতি আমাদের বিশ্বাসের কোন্ কার্যের প্রতি পরিচালিত করা উচিত?
২১ তাহলে, স্পষ্টতই বিশ্বাস আমাদের কার্যে পরিচালিত করে। এটি আমাদের পক্ষপাতহীন, দয়ালু এবং উত্তম কার্যের জন্য সক্রিয় করে। বিশ্বাস আমাদের জিহ্বাকে সংযত করতে ও স্বর্গীয় প্রজ্ঞা দ্বারা কার্য করতে সাহায্য করে। কিন্তু এটিই সমস্ত কিছু নয়, যা আমরা এই পত্রটি থেকে শিখতে পারি। এরপরেও যাকোব আমাদের পরামর্শ দিয়েছেন যা আমাদের এমনভাবে আচরণ করতে সাহায্য করতে পারে যেটি যাদের যিহোবার উপর বিশ্বাস আছে তাদের জন্য উপযুক্ত।
আপনি কিভাবে উত্তর দেবেন?
◻ কেন পক্ষপাতিত্ব দেখানো ভুল?
◻ কিভাবে বিশ্বাস ও কার্য সম্বন্ধযুক্ত?
◻ জিহ্বাকে সংযত করা কেন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ?
◻ স্বর্গীয় প্রজ্ঞা কিসের তুল্য?