অধ্যয়ন প্রবন্ধ ৪২
আপনি কি “বাধ্য হতে প্রস্তুত”?
‘যে-প্রজ্ঞা স্বর্গ থেকে আসে, তা বাধ্য হতে প্রস্তুত।’—যাকোব ৩:১৭.
গান ১০১ একতায় সেবা করি
সারাংশa
১. কেন অন্যদের বাধ্য হওয়া আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে?
আপনার কি কখনো এমনটা মনে হয়েছে, ‘অন্যদের বাধ্য হওয়া আমার জন্য কঠিন?’ রাজা দায়ূদেরও এমনটা মনে হয়েছিল। এই কারণে তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন: “তোমার বাধ্য হওয়ার ইচ্ছুক মন দিয়ে তুমি আমাকে সবল কর।” (গীত. ৫১:১২, বাংলা কমন ল্যাঙ্গুয়েজ ভারশন) দায়ূদ যিহোবাকে অনেক ভালোবাসতেন, কিন্তু তারপরও তাঁর আজ্ঞার বাধ্য হওয়া দায়ূদের জন্য কখনো কখনো কঠিন বলে মনে হত। আজ আমাদেরও হয়তো অনেকসময় যিহোবার আজ্ঞার বাধ্য হওয়া কঠিন বলে মনে হয়। কেন? প্রথমত, জন্ম থেকেই আমাদের মধ্যে অবাধ্য হওয়ার প্রবণতা থাকে। দ্বিতীয়ত, শয়তান সবসময় চেষ্টা করে যেন আমরা যিহোবার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করি, যেমনটা সে করেছিল। (২ করি. ১১:৩) তৃতীয়ত, আমরা এমন এক জগতে বাস করি, যেখানে বেশিরভাগ লোকই বিদ্রোহ করে থাকে। তাদের মধ্যে ‘বাধ্য না হওয়ার মনোভাব’ রয়েছে। (ইফি. ২:২) তাই, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যেন আমরা আমাদের মধ্যে থাকা খারাপ কাজ করার প্রবণতার বিরুদ্ধে লড়াই করি এবং শয়তান আর এই জগতের মতো বিদ্রোহ না করি। এর পরিবর্তে, আমরা যেন যিহোবা এবং তিনি যাদের কর্তৃত্ব দিয়েছেন, তাদের আজ্ঞার প্রতি বাধ্যতা দেখানোর প্রচেষ্টা করে চলি।
২. “বাধ্য হতে প্রস্তুত” থাকার মানে কী? (যাকোব ৩:১৭)
২ যাকোব ৩:১৭ পদ পড়ুন। যাকোবের মাধ্যমে যিহোবা লিখিয়েছিলেন, যে-লোকেরা বুদ্ধিমান হয়, তারা “বাধ্য হতে প্রস্তুত” থাকে। এর মানে হল, যিহোবা যাদের কিছু কর্তৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের খুশিমনে তাদের বাধ্য হওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকা উচিত। কিন্তু, তারা যদি এমন কিছু করতে বলে, যেটা যিহোবার আজ্ঞার বিরুদ্ধে, তা হলে যিহোবা চান না যেন আমরা তাদের বাধ্য হই।—প্রেরিত ৪:১৮-২০.
৩. কেন আমাদের সেই ব্যক্তিদের বাধ্য হওয়া উচিত, যাদের কর্তৃত্ব দেওয়া হয়েছে?
৩ আমাদের যিহোবার বাধ্য হওয়া সহজ বলে মনে হতে পারে, কিন্তু মানুষের বাধ্য হওয়া কঠিন লাগতে পারে। কেন? কারণ যিহোবা সবসময় সঠিক নির্দেশনা দেন। (গীত. ১৯:৭) কিন্তু, কর্তৃত্ব রয়েছে এমন মানুষের ক্ষেত্রে এটা প্রযোজ্য নয়, কারণ তারা অসিদ্ধ। তারপরও, যিহোবা বাবা-মায়েদের, সরকারি কর্তৃপক্ষদের এবং মণ্ডলীতে প্রাচীনদের কিছুটা কর্তৃত্ব দিয়েছেন। (হিতো. ৬:২০; ১ থিষল. ৫:১২; ১ পিতর ২:১৩, ১৪) আমরা যখন তাদের বাধ্য হই, তখন আমরা আসলে যিহোবার বাধ্য হই। কিন্তু, অনেকসময় তারা হয়তো আমাদের এমন কিছু করতে বলে, যেটার সঙ্গে আমরা একমত নই অথবা যেটা আমরা করতে চাই না। আসুন দেখি, সেইসময়েও কীভাবে আমরা তাদের বাধ্য হতে পারি।
তোমার বাবা-মায়ের বাধ্য হও
৪. কেন আজ অনেক অল্পবয়সি তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হয় না?
৪ আজ আমাদের অল্পবয়সি সন্তানেরা এমন অল্পবয়সিদের মাঝে রয়েছে, যারা তাদের “বাবা-মায়ের অবাধ্য” হয়। (২ তীম. ৩:১, ২) কেন তারা অবাধ্য হয়? তারা মনে করে, ‘আমার বাবা-মা আমাকে যা করতে বলে, সেগুলো তো তারা নিজেরাই করে না, তা হলে তারা আমাকে কেন বলে?’ আবার কিছু ছেলে-মেয়ে মনে করে, ‘এখন সময় বদলে গিয়েছে, বাবা-মায়েরা যে-পরামর্শ দেয়, সেগুলো আজ কোনো কাজের নয়’ কিংবা ‘তারা একটু বেশিই কঠোর।’ তুমি যদি একজন অল্পবয়সি হয়ে থাক, তা হলে তোমারও কি কখনো এমনটা মনে হয়েছে? অনেক সন্তানেরই যিহোবার এই আজ্ঞার বাধ্য হওয়া কঠিন বলে মনে হয়েছে: “সন্তানেরা, তোমরা ঈশ্বরের ইচ্ছা অনুযায়ী নিজ নিজ বাবা-মায়ের বাধ্য হও, কারণ ঈশ্বরের দৃষ্টিতে তা সঠিক।” (ইফি. ৬:১) কীভাবে তুমি যিহোবার এই আজ্ঞার বাধ্য হতে পার?
৫. বাবা-মায়ের বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে কেন যিশুর উদাহরণ সবচেয়ে ভালো? (লূক ২:৪৬-৫২)
৫ বাধ্য হওয়ার ক্ষেত্রে যিশু আমাদের জন্য সবচেয়ে ভালো উদাহরণ স্থাপন করেছেন। (১ পিতর ২:২১-২৪) তুমি তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পার। যিশু সিদ্ধ ছিলেন, কিন্তু তাঁর বাবা-মা অসিদ্ধ ছিলেন। অনেকসময় তারা ভুল করেছিলেন এবং তারা তাঁকে ভুল বুঝেছিলেন। কিন্তু তারপরও, যিশু সবসময় তাদের সমাদর করেছিলেন। (যাত্রা. ২০:১২) একটা ঘটনার প্রতি মনোযোগ দিন। এটা সেই সময়কার কথা, যখন যিশুর বয়স ১২ বছর ছিল। (পড়ুন, লূক ২:৪৬-৫২.) তাঁর পরিবার জেরুসালেমে একটা উৎসব পালন করতে গিয়েছিলেন। তারা যখন সেখান থেকে ফিরে আসছিলেন, তখন যিশু জেরুসালেমেই থেকে গিয়েছিলেন। কিন্তু পরে, যখন তারা যিশুকে খুঁজে পান, তখন মরিয়ম যিশুকে দোষ দিতে শুরু করেন এবং তাঁকে বলেন যে, তাঁর কারণেই তাদের এত দুশ্চিন্তার মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আসলে, যোষেফ ও মরিয়মেরই এই বিষয়টা খেয়াল রাখা উচিত ছিল যেন তাদের বাচ্চারা তাদের সঙ্গে থাকে। তাই, যিশু চাইলে বলতে পারতেন, ‘এতে আমার কোনো দোষ নেই, তোমাদেরই দোষ।’ কিন্তু, যিশু এমনটা বলেননি। যিশু খুবই অল্প কথায় এবং সম্মানের সঙ্গে তাদের উত্তর দিয়েছিলেন। যদিও যোষেফ ও মরিয়ম ‘সেটার অর্থ বুঝতে’ পারেননি, কিন্তু তারপরও যিশু তাদের “বাধ্য” ছিলেন।
৬-৭. কোন বিষয়গুলো অল্পবয়সিদের তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হতে সাহায্য করতে পারে?
৬ অল্পবয়সিরা, তোমার বাবা-মা যখন কোনো ভুল করে কিংবা তোমাকে ভুল বোঝে, তখন তাদের বাধ্য হওয়া কি তোমার কঠিন বলে মনে হয়? যদি মনে হয়, তা হলে কোন বিষয়টা তোমাকে সাহায্য করতে পারে? প্রথমত চিন্তা করো, তুমি যদি তোমার বাবা-মায়ের বাধ্য হও, তা হলে যিহোবার কেমন লাগবে। বাইবেলে লেখা রয়েছে, সন্তানেরা যখন বাবা-মায়ের বাধ্য হয়, তখন “প্রভুর দৃষ্টিতে তা প্রীতিজনক।” (কল. ৩:২০) যিহোবা জানেন, অনেকসময় তোমার বাবা-মা তোমাকে পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারে না অথবা তারা হয়তো এমন নিয়ম স্থির করে, যেটা মেনে চলা কঠিন হতে পারে। তারপরও, তুমি যখন তাদের বাধ্য হও, তখন তুমি যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত কর।
৭ দ্বিতীয়ত চিন্তা করো, তুমি যদি তোমার বাবা-মায়ের বাধ্য হও, তা হলে তাদের কেমন লাগবে। তারা খুশি হবে এবং তোমার উপর আস্থা রাখতে শুরু করবে। (হিতো. ২৩:২২-২৫) এ ছাড়া, তাদের বাধ্য হলে তাদের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে। অ্যালেক্সান্ড্রে নামে একজন ভাই, যে বেলজিয়ামে থাকে, সে বলে: “আমি দেখেছি, আমি যখন বেশি করে বাবা-মায়ের বাধ্য হয়েছি, তখন আমাদের সম্পর্ক আরও ভালো হয়ে গিয়েছে। আমরা একে অন্যের আরও ঘনিষ্ঠ হয়েছি এবং আমরা আগের চেয়ে অনেক খুশি।”b তৃতীয়ত চিন্তা করো, তুমি যদি এখন থেকেই বাবা-মায়ের বাধ্য হও, তা হলে পরবর্তী সময়ে তুমি কোন কোন উপকার পাবে। ব্রাজিলে থাকা পাওলো নামে একজন ভাই বলে: “যখন থেকে আমি বাবা-মায়ের বাধ্য হতে শুরু করেছি, তখন থেকে যিহোবা এবং অন্যদের বাধ্য হওয়া আমার জন্য আরও সহজ হয়ে গিয়েছে।” বাইবেলে বাবা-মায়ের বাধ্য হওয়ার এক উপযুক্ত কারণ দেওয়া রয়েছে। এটিতে লেখা রয়েছে: ‘তুমি উত্তম জীবন লাভ করতে পারবে এবং পৃথিবীতে দীর্ঘসময় বেঁচে থাকতে পারবে।’—ইফি. ৬:২, ৩.
৮. অনেক অল্পবয়সি কেন তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হয়?
৮ অনেক অল্পবয়সি দেখেছে যে, তারা যখন তাদের বাবা-মায়ের বাধ্য হয়, তখন তারা নিজেরাই উপকৃত হয়। ব্রাজিলে থাকা লুইজা নামে একজন বোন বলে, তার বাবা-মা যখন তাকে নিজের একটা মোবাইল ফোন নেওয়ার ক্ষেত্রে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে বলে, তখন সে বুঝতে পারছিল না, কেন তারা এমনটা করছে। কারণ তার বয়সি অন্যান্য ছেলে-মেয়ের কাছে তাদের নিজেদের ফোন ছিল। কিন্তু পরে সে বুঝতে পারে, তার বাবা-মা তার সুরক্ষার জন্য তা করেছিলেন। এখন সে এমনটা মনে করে না, তার বাবা-মা যে-নিয়ম স্থির করেন, সেটার জন্য তার স্বাধীনতা হারিয়ে গিয়েছে কারণ সে জানে, তাদের বাধ্য হলে সে নিজেই উপকার পাবে। এলিজাবেত নামে আমেরিকায় থাকা একজন অল্পবয়সি বোনের কখনো কখনো তার বাবা-মায়ের বাধ্য হওয়া কঠিন বলে মনে হয়। সে বলে: “অনেকসময় আমি পুরোপুরিভাবে বুঝতে পারি না, বাবা-মা কেন কোনো নিয়ম স্থির করেছেন। সেইসময় আমি চিন্তা করি, আগে যখন আমি তাদের বাধ্য হয়েছিলাম, তখন কীভাবে সেটা আমাকে সুরক্ষা জুগিয়েছিল।” এ ছাড়া, আর্মেনিয়ায় থাকা মনিকা বলে, সে যখন তার বাবা-মায়ের বাধ্য হয়েছে, তখন সে আরও বেশি উপকার পেয়েছে।
“ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের” বাধ্য হোন
৯. সরকারের নিয়ম মেনে চলার বিষয়ে অনেক লোক কী মনে করে?
৯ বাইবেলে সরকারগুলোকে ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলা হয়েছে। অনেক লোক মনে করে, সরকার কিংবা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ থাকলে ভালো এবং তাদের দেওয়া অন্ততপক্ষে কিছু নিয়ম তো মেনে চলতেই হবে। (রোমীয় ১৩:১) কিন্তু, সরকারের কোনো নিয়ম যদি ঠিক বলে মনে না হয় কিংবা মানতে ইচ্ছে না করে, তা হলে সেই লোকেরাই তা মানার ক্ষেত্রে গড়িমসি করে থাকে। ট্যাক্স দেওয়ার কথাই ধরুন। ইউরোপের একটা দেশে সার্ভে করা হয়েছিল আর দেখা গিয়েছে, প্রতি চার জনের মধ্যে এক জন মনে করে, ‘সরকার যদি বেশি ট্যাক্স চায়, তা হলে আমরা ট্যাক্স দেব না আর এটা কোনো ভুল নয়।’ তাই এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই যে, সেই দেশের সমস্ত নাগরিক সরকারকে পুরো ট্যাক্স দেয় না, শুধুমাত্র তিন ভাগের দু-ভাগ (প্রায় ৬৫ শতাংশ) ট্যাক্স দেয়।
১০. সরকারের কোনো নিয়ম মানতে যদি আমাদের কঠিন লাগে, তারপরও কেন আমরা তা মেনে চলি?
১০ বাইবেল স্বীকার করে যে, মানুষের সরকারগুলোর কারণে লোকদের অনেক দুঃখকষ্ট ভোগ করতে হয় কারণ সেগুলো শয়তানের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আর খুব শীঘ্রই, এই সরকারগুলোকে ধ্বংস করে দেওয়া হবে। (গীত. ১১০:৫, ৬; উপ. ৮:৯; লূক ৪:৫, ৬) কিন্তু, এটিতে এও লেখা রয়েছে: “যে-কেউ কর্তৃপক্ষের বিরোধিতা করে, সে ঈশ্বরের ব্যবস্থারই বিরোধিতা করে।” যিহোবা কিছুসময়ের জন্য এই সরকারগুলোকে থাকতে দিয়েছেন, যাতে সমস্ত কিছু সুসংগঠিতভাবে হয়। আর তিনি চান যেন আমরা তাদের আজ্ঞা মেনে চলি। তাই, ‘যার যা প্রাপ্য, তাকে তা দেওয়া’ উচিত। এই কারণে আমরা ট্যাক্স দিই, সরকারি কর্তৃপক্ষের সম্মান করি এবং তাদের বাধ্য হই। (রোমীয় ১৩:১-৭) সরকারের কোনো নিয়ম হয়তো আমাদের সঠিক বলে মনে হয় না অথবা সেটা মানার ফলে আমরা হয়তো সমস্যায় পড়তে পারি কিংবা আমাদের টাকা চলে যেতে পারে। তারপরও, আমরা সেগুলো মেনে চলি কারণ যিহোবা চান, আমরা যেন সরকারের বাধ্য হই। তবে, সরকার যদি আমাদের এমন কিছু করতে বলে, যেটা যিহোবার আইনের বিরুদ্ধে, তা হলে আমরা তাদের বাধ্য হব না।—প্রেরিত ৫:২৯.
১১-১২. যদিও যোষেফ ও মরিয়মের জন্য সরকারের একটা আইন মেনে চলা কঠিন ছিল, তারপরও তারা কী করেন এবং এর ফলাফল কী হয়? (লূক ২:১-৬) (ছবিগুলোও দেখুন।)
১১ আমরা যোষেফ ও মরিয়মের কাছ থেকে অনেক কিছু শিখতে পারি। তারা সেইসময়ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাধ্য হয়েছিলেন, যখন তা করা তাদের জন্য কঠিন ছিল। (পড়ুন, লূক ২:১-৬.) এটা সেই সময়কার কথা, যখন মরিয়ম ন-মাসের গর্ভবতী ছিলেন। রোমের সম্রাট আগস্ত একটা আইন জারি করেছিলেন যে, সমস্ত লোক যেন তাদের নাম লেখানোর জন্য সেই নগরে যায়, যেখানে তাদের জন্ম হয়েছিল। সরকারের এই আজ্ঞার বাধ্য হওয়া যোষেফ ও মরিয়মের জন্য হয়তো অনেক কঠিন ছিল। কারণ তাদের ১৫০ কিলোমিটার দূরে বেথলেহেমে যেতে হত আর তা-ও আবার পাহাড়ি এলাকার মধ্য দিয়ে। এই যাত্রা করা বিশেষ করে মরিয়মের জন্য হয়তো অনেক কঠিন ছিল। তারা দু-জনেই হয়তো গর্ভে থাকা সন্তানের জন্য চিন্তা করছিলেন। তারা হয়তো চিন্তা করছিলেন, মরিয়মের যদি রাস্তায় প্রসব বেদনা শুরু হয়, তা হলে তারা কী করবে। মরিয়মের গর্ভে যে-সন্তান রয়েছে, সে পরবর্তী সময়ে মশীহ হবে। এইসমস্ত কিছু চিন্তা করে তারা কি সরকারের অবাধ্য হয়েছিলেন?
১২ যোষেফ ও মরিয়মের পরিস্থিতি কঠিন হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারের বাধ্য হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর যিহোবা তাদের সিদ্ধান্তের উপর আশীর্বাদ করেছিলেন। মরিয়ম সুরক্ষিতভাবে বেথলেহেমে পৌঁছেছিলেন আর সেখানে তিনি এক সুস্থসবল সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন। এভাবে, বাইবেলের এক গুরুত্বপূর্ণ ভবিষ্যদ্বাণী পরিপূর্ণ হয়েছিল!—মীখা ৫:২.
১৩. আমরা যখন সরকারের নিয়ম মেনে চলি, তখন কীভাবে আমাদের ভাই-বোনেরা উপকৃত হয়?
১৩ আমরা যখন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের বাধ্য হই, তখন আমরা নিজেরা উপকৃত হই এবং অন্যেরাও উপকৃত হয়। কীভাবে? একটা বিষয় হল, সরকারের বাধ্য হলে আমাদের বিনা কারণে কোনো শাস্তি পেতে হয় না। (রোমীয় ১৩:৪) এ ছাড়া, আমরা যখন সরকারের নিয়ম মেনে চলি, তখন তারা দেখতে পায় যে, যিহোবার সাক্ষিরা অনেক ভালো লোক। এমনই একটা উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। অনেক বছর আগে নাইজেরিয়ায় একটা সভা চলাকালীন কিছু সৈন্য আমাদের কিংডম হলে ঢুকে পড়ে। আসলে তারা এমন লোকদের খুঁজছিল, যারা ট্যাক্স দিতে চাইছিল না আর এই কারণে তারা দাঙ্গাহাঙ্গামা করছিল। কিন্তু, সৈন্যদের অফিসার তাদের সেখান থেকে চলে যেতে বলেন। তিনি বলেন: “যিহোবার সাক্ষিরা এমন লোক নয়। তারা সবসময় ট্যাক্স দেয়।” তাই, আপনি যখন সরকারের কোনো নিয়ম মেনে চলবেন, তখন কর্তৃপক্ষেরা যিহোবার লোকদের আরও সম্মান করবে। আর একদিন হতে পারে, এই কারণে আমাদের ভাই-বোনেরা সুরক্ষা লাভ করবে।—মথি ৫:১৬.
১৪. একজন বোন কোন কারণগুলোর জন্য সরকারি কর্তৃপক্ষের “বাধ্য হতে প্রস্তুত” ছিলেন?
১৪ আজ্ঞা মেনে চলার অনেক উপকার রয়েছে। কিন্তু, তা সত্ত্বেও সবসময় সরকারের নিয়ম মেনে চলতে আমাদের হয়তো ইচ্ছে করে না। আমেরিকায় থাকা জোয়ানা নামে একজন বোন বলেন: “কর্তৃপক্ষের বাধ্য হওয়া আমার খুবই কঠিন বলে মনে হত কারণ তারা আমার পরিবারের কিছু সদস্যের প্রতি অবিচার করেছে।” কিন্তু, জোয়ানা কর্তৃপক্ষের বিষয়ে তার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার জন্য কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। প্রথমত, তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন কিছু পোস্ট পড়া বন্ধ করে দিয়েছিলেন, যাতে তিনি কর্তৃপক্ষের ব্যাপারে খারাপ চিন্তাভাবনা না করেন। (হিতো. ২০:৩) দ্বিতীয়ত, তিনি যিহোবার কাছে প্রার্থনা করেছিলেন, যাতে তিনি তাঁর উপর নির্ভর করেন আর এইরকমটা চিন্তা না করেন যেন সরকার পরিবর্তন হয়ে যায়। (গীত. ৯:৯, ১০) তৃতীয়ত, তিনি নিরপেক্ষতার বিষয়ে আমাদের প্রকাশনায় দেওয়া কিছু প্রবন্ধ পড়েছিলেন। (যোহন ১৭:১৬) এখন জোয়ানা বলেন, কর্তৃপক্ষের প্রতি সম্মান দেখানোর এবং তাদের বাধ্য হওয়ার ফলে তিনি এমন “মনের শান্তি” লাভ করেছেন, যেটা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।
যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলুন
১৫. যিহোবার সংগঠনের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলা কেন আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে?
১৫ যিহোবা বলেছেন, আমরা যেন মণ্ডলীতে ‘যারা নেতৃত্ব নেন, তাদের বাধ্য’ হই। (ইব্রীয় ১৩:১৭) আমাদের নেতা যিশু হলেন সিদ্ধ, কিন্তু তিনি যাদের এই পৃথিবীতে নেতৃত্ব নেওয়ার জন্য নিযুক্ত করেছেন, তারা সবাই অসিদ্ধ। তাই, অনেকসময় তাদের বাধ্য হওয়া আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে, বিশেষ করে সেইসময় যখন তারা আমাদের এমন কিছু করতে বলে, যেটা করতে আমাদের ভালো লাগে না। একবার প্রেরিত পিতরের প্রতিও এমনই কিছু হয়েছিল। একজন স্বর্গদূত তাকে এমন কিছু পশুর মাংস খেতে বলেছিলেন, যেগুলো মোশির ব্যবস্থায় অশুচি ছিল। পিতর কখনো কোনো অশুচি পশুর মাংস খাননি, তাই এই নির্দেশনা তার সঠিক বলে মনে হচ্ছিল না। এই কারণে পিতর না করে দিয়েছিলেন আর তা-ও আবার তিন বার। (প্রেরিত ১০:৯-১৬) পিতরের একজন সিদ্ধ স্বর্গদূতের বাধ্য হওয়া কঠিন বলে মনে হয়েছিল। তাই স্বাভাবিকভাবেই, অসিদ্ধ মানুষের বাধ্য হওয়া আমাদের আরও কঠিন বলে মনে হতে পারে।
১৬. পৌলকে যখন এমন একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যেটা তার অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারত, তারপরও তিনি কী করেছিলেন? (প্রেরিত ২১:২৩, ২৪, ২৬)
১৬ এখন প্রেরিত পৌলের উদাহরণের উপর মনোযোগ দিন। একবার তাকে এমন একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যেটা তার অযৌক্তিক বলে মনে হতে পারত। কিন্তু তা সত্ত্বেও, তিনি “বাধ্য হতে প্রস্তুত” ছিলেন। আসলে, যিহুদি খ্রিস্টানেরা পৌলের বিষয়ে কিছু গুজব শুনেছিল। তারা শুনেছিল যে, পৌল লোকদের ‘মোশির ব্যবস্থা পরিত্যাগ করতে শিক্ষা দিচ্ছেন’ আর এভাবে তিনি মোশির ব্যবস্থার প্রতি অসম্মান দেখাচ্ছেন। (প্রেরিত ২১:২১) তখন জেরুসালেমের খ্রিস্টীয় মণ্ডলীর বয়স্ক ব্যক্তিরা পৌলকে একটা নির্দেশনা দিয়েছিল। তারা তাকে চার জন ব্যক্তিকে নিয়ে মন্দিরে যেতে এবং ব্যবস্থা অনুযায়ী নিজেকে শুচি করতে বলেছিল, যাতে সবাই জানতে পারে যে, তিনি ব্যবস্থা মেনে চলেন। কিন্তু পৌল জানতেন, খ্রিস্টানেরা এখন আর মোশির ব্যবস্থার অধীনে নেই এবং তিনি কোনো ভুল করেননি। তা সত্ত্বেও, পৌল সঙ্গেসঙ্গে ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করেছিলেন। “পরের দিন পৌল সেই লোকদের নিয়ে তাদের সঙ্গে নিজেকেও রীতিগতভাবে শুচি করলেন।” (পড়ুন, প্রেরিত ২১:২৩, ২৪, ২৬.) পৌলের বাধ্যতার কারণে ভাইদের মধ্যে একতা বজায় ছিল।—রোমীয় ১৪:১৯, ২১.
১৭. বোন স্টেফানির অভিজ্ঞতা থেকে আপনি কী শিখেছেন?
১৭ এখন আসুন দেখি, বোন স্টেফানির প্রতি কী ঘটেছিল। তিনি এবং তার স্বামী অন্য ভাষার এক দলের সঙ্গে সেবা করছিলেন এবং তারা দু-জনেই অনেক খুশি ছিলেন। কিন্তু হঠাৎই, তাদের দেশের শাখা অফিস সেই দল বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাদের বলা হয়, তারা যেন নিজেদের ভাষার মণ্ডলীতে ফিরে গিয়ে সেখানে সেবা করে। বোন স্টেফানি বলেন, সেই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া তার খুবই কঠিন বলে মনে হয়েছিল। তিনি বলেন, “আমি অনেক দুঃখ পাই। আমি এটা একদমই মেনে নিতে পারছিলাম না যে, আমাদের ভাষার মণ্ডলীতে বেশি প্রয়োজন রয়েছে।” তা সত্ত্বেও, তিনি ভাইদের কাছ থেকে পাওয়া নির্দেশনা মেনে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি বলেন, “পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে, তাদের সিদ্ধান্ত একদম সঠিক ছিল। আমরা নিজেদের মণ্ডলীতে অনেক কিছু করতে পারছিলাম। আমরা এমন অনেক ভাই-বোনের কাছে বাবা-মায়ের মতো হয়ে গিয়েছি, যারা সত্যে একা রয়েছে। আর এখন আমি এমন একজন বোনকে অধ্যয়ন করাচ্ছি, যিনি আবারও সভায় আসা এবং প্রচার করা শুরু করেছেন। এখন আমার কাছে ব্যক্তিগত অধ্যয়ন করার জন্য যথেষ্ট সময় থাকে। আর আমি এক শুদ্ধ বিবেক নিয়ে সেবা করতে পারছি কারণ আমি ভাইদের বাধ্য হওয়ার জন্য সম্পূর্ণ চেষ্টা করেছি।”
১৮. বাধ্য থাকার ফলে আমরা কীভাবে উপকৃত হই?
১৮ আমরা বাধ্য হতে শিখতে পারি। বাইবেল বলে, যিশুও “বাধ্যতা শিখেছিলেন” আর তিনি এমনটা ভালো পরিস্থিতিতে নয় বরং “কষ্টভোগের মাধ্যমে” শিখেছিলেন। (ইব্রীয় ৫:৮) যিশুর মতো আমরাও অনেকসময় কঠিন পরিস্থিতিতে বাধ্য হতে শিখি। যেমন আপনার হয়তো মনে আছে, যখন কোভিড-১৯ অতিমারি শুরু হয়েছিল, তখন আমাদের বলা হয়েছিল যেন আমরা কিংডম হলে সভার জন্য একত্রিত না হই এবং কিছুসময়ের জন্য ঘরে ঘরে গিয়ে প্রচার না করি। আপনার কি সেইসময় বাধ্য হওয়া কঠিন বলে মনে হয়েছিল? আপনার হয়তো কঠিন বলে মনে হয়েছিল, তারপরও আপনি বাধ্য হয়েছিলেন। এই কারণে আপনি সুরক্ষিত ছিলেন, মণ্ডলীতে একতা বজায় ছিল আর আপনি যিহোবাকে খুশি করেছিলেন। সেইসময় আমরা সবাই বাধ্য হয়েছিলাম, তাই এখন বাধ্য হওয়া আমাদের জন্য আগের চেয়ে কিছুটা সহজ হয়ে গিয়েছে। মহাক্লেশের সময়ে আমাদের যেকোনো নির্দেশনা দেওয়া হোক না কেন, আমরা তা মেনে চলতে পারব। হতে পারে, সেই নির্দেশনা মেনে চলার ফলে আমাদের জীবন রক্ষা পাবে!—ইয়োব ৩৬:১১.
১৯. কেন আপনি বাধ্য হতে চান?
১৯ এই প্রবন্ধে আমরা শিখেছি যে, বাধ্য হলে প্রচুর আশীর্বাদ লাভ করা যায়। কিন্তু, আমরা বিশেষ করে এই কারণে যিহোবার বাধ্য হই কারণ আমরা তাঁকে ভালোবাসি এবং তাঁকে খুশি করতে চাই। (১ যোহন ৫:৩) যিহোবা আমাদের জন্য যা-কিছু করেছেন, সেই ঋণ কখনোই আমরা শোধ করতে পারব না। (গীত. ১১৬:১২) তবে, আমরা একটা কাজ অবশ্যই করতে পারি: আমরা তাঁর এবং তিনি আমাদের উপর যাদের কিছুটা কর্তৃত্ব করার অধিকার দিয়েছেন, তাদের বাধ্য থাকতে পারি। আমরা যদি বাধ্য হই, তা হলে এটা প্রমাণিত হবে যে, আমরা জ্ঞানবান। আর যারা জ্ঞানবান হয়, তারা যিহোবার হৃদয়কে আনন্দিত করে।—হিতো. ২৭:১১.
গান ১২৩ আমরা যিহোবার ও তাঁর সংগঠনের বশীভূত থাকি
a আমরা সবাই অসিদ্ধ। তাই, অনেকসময় অন্যদের বাধ্য হওয়া আমাদের জন্য কঠিন হয়। কখনো কখনো যারা আমাদের কোনো আজ্ঞা দেয়, তাদের সেটা দেওয়ার অধিকার থাকে। তারপরও, তাদের বাধ্য হওয়া আমাদের কঠিন বলে মনে হতে পারে। এই প্রবন্ধে বোঝানো হবে, আমরা যখন বাবা-মায়ের, “ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের” এবং মণ্ডলীতে যারা নেতৃত্ব নেন, তাদের বাধ্য হই, তখন আমরা কোন কোন উপকার লাভ করি।
b তোমার যদি বাবা-মায়ের তৈরি করা কোনো নিয়ম মানতে কঠিন লাগে, তা হলে jw.org ওয়েবসাইটে “কীভাবে আমি বাবা-মায়ের সঙ্গে ভাববিনিময় করতে পারি?” শিরোনামের প্রবন্ধটা দেখতে পার। সেখানে তুমি কিছু ভালো পরামর্শ পেতে পার।
c ছবি সম্বন্ধে বর্ণনা: যোষেফ ও মরিয়ম সম্রাটের আজ্ঞার বাধ্য হয়েছিলেন এবং বেথলেহেমে তাদের নাম লেখাতে গিয়েছিলেন। আজ খ্রিস্টানেরা সরকারি কর্তৃপক্ষের আজ্ঞার বাধ্য হয় এবং ট্র্যাফিক নিয়ম মেনে চলে, ট্যাক্স দেয় এবং স্বাস্থ্যের বিষয়ে সরকারের দেওয়া নিয়ম মেনে চলে।